আমার একটাই যে তুই - পর্ব ১১ - সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি - ধারাবাহিক গল্প


পূর্ণিমা রাত!
চাঁদের আলো ঘরের ভিতর প্রবেশ করছে, সাথে স্ব স্ব বাতাসে দক্ষিণার পাশের জানালার পাতলা পর্দা উলোট পালোট হয়ে উড়চ্ছে! হারিকেনে জালানো টিমটিমে আলো জ্বল জ্বল করছে! আলোর আলোড়ন পড়চ্ছে পুরো ঘর জুড়ে! ইউসুফ ভাইয়া নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে আছি। চোখে তার মোহনীয় চাহনি।এই চাহনি যেন আমাকে হাজার কিছু বলে যাচ্ছে নিস্তব্ধে। আমি স্থীর দাঁড়িয়ে তার দিকে। নড়ার শক্তিটুকু যে নেই আমার!!তখনবুড়ি আমাকে ঠেলে ঠুলে ভিতরে ঢুকিয়ে দিতেই দেখি  উল্টো পিঠ করে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছেন। স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম।কিন্তু তা বেশীক্ষনের জন্য স্থায়ী রইলো না। কারণ আমার ভিতরের আসার শব্দে তিনি কথা বলতে বলতে পিছে তাকালেন! আমাকে দেখে যেন স্তব্ধ হয়ে গেলেন। মুখে ওপার প্রানতে থাকা মানুষটিকে বললেন,,

--"কল ইউ লেটার! "

সেই তখন থেকেই তিনি তাকিয়ে ছিলেন আমার দিকে! এবার ধীমি পায়ে এগিয়ে আসতেই আমি সরে যেতে নি তখনি চেচিয়ে বললেন,

--"ডোন্ট মুভ! বাবুইপাখি!  বলছি না নড়বি না তুই!"

তার এভাবে চেঁচিয়ে উঠাতে ভয় পেয়ে গেলাম।নড়বার আর সাহস হলো না। তিনি ঠিক আমার বরাবর এসে দাঁড়ালেন!  একদম কাছে! এতটা কাছে যে একে ওপরের  শ্বাস প্রশ্বাস পড়চ্ছে একে অপরের উপরে! উনি আমার মুখে তার দু হাত রাখলেন। মুখে তার মৃদু হাসি! সেই হাসির রেশ আরো ঢেলে স্লো ভয়েসে বললেন,,

--" বাবুইপাখি! তোরে বউ বউ লাগচ্ছে!"

আমি লজ্জা পেয়ে মাথা নত করে ফেললাম। তিনি আমার মুখ আবার উঁচু করে হেসে বললেন,,

--" আমার বউ মনে হচ্ছে তোকে! "

আমি "আমার বউ শুনতেই চকিতে তাকালাম তার দিক! আমি কি আঁদ ঠিক শুনচ্ছি! আচ্ছা তিনি কি আমাকে প্রপোজ করলেন!  তাই বুঝতে চেষ্ট করছি তার মুখ মণ্ডল দেকে।তিনি হাসচ্ছেন মিটমিটিয়ে!হয়তো আমার ছোট মাথায় এলো মেলো প্রশ্নের আন্দাজ করতে পেরেছেন! তিনি এবার আমার আরো কাছে এসে আমার কঁপালে কঁপাল ঠেকিয়ে বললেন,,

--" ঠিক শুনেছিস বাবুইপাখি! তোকে আমার বউ বউ লাগচ্ছে! মাই বেটার হাফ!

আমি তার কথায় অবাক! এতটাই যে কি বলবো  ভাষা খুঁজে পাচ্ছিনা।  শুধু ভিতর থেকে ঠেলে ঠুলে কান্নার দমক আসচ্ছে! যা আটকে রাখতে পারেনি আমার নয়নমনি। বন্যা ভাসিয়ে দিলো সাথে সাথে।একি সত্যি শুনচ্ছি আমি! আমার একতরফা ভালবাসা সত্যি তার পূর্ণতা পেতে চলেছে! আমার যে খুশি লাগচ্ছে! এতটাই খুশি আমি! যে ইউসুফ ভাইকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দিলাম। ইউসুফ ভাইও হকচকিয়ে গিয়ে আমাকে সামলে সামলে বললেন,,

--" কি হয়েছে! বাবুইপাখি!  কান্না করছিস কেন? কেন আমায়! আচ্ছা এখানে বস!  এবার বল কি হয়েছে বল আমায়! কেন কাঁদচ্ছি বাবুইপাখি?"

ইউসুফ ভাইয়া আমাকে খাটের কোনে বসিয়ে আমার সামনে হাটু গেড়ে বসে কথা গুলো বলতে লাগেন! আমি তো কান্না করে চলেছি! আমাকে থামতে না দেখে ধমকে উঠলেন তিনি! সাথে সাথে বন্ধ আমার! তিনি তখন আবার বললেন,,

--" বল এবার কানছো কেন?"

আমি কান্না থামিয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললাম,,

--" বাই এনি চান্স আপনি কি আমাকে প্রপোজ করেছেন!

ইউসুফ ভাই তখন হো হো করে হেসে উঠে এসে ধপ করে আমার পাশে বসে বলতে লাগেন,,

--" না বাবুইপাখি। বাই এনি চান্স না আমি ডিরেক্টলি তোমাকে প্রপোজ করেছি ।  পাগলী আমার। বলে গাল টিপে দিয়ে আবার হেসে দিলেন!"

এবার লজ্জা জেকে বসেছিল শতভাগ। লজ্জায় গাল দুটি লাল হয়ে গেল আমার। ইউসুফ তখন হাসি থামিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বললেন,,

--"তুমি কি জানো! বাবুইপাখি?  আজ কতটা পাগল করে দিচ্ছো আমাকে! নিজেকে কন্ট্রোল করতে কষ্ট হচ্ছে যে!"

তার এমন কথায় কান গরম হয়ে গেল আমার। কি বলছেন তিনি এসব! বুকটা যে এখন দুরু দুরু করছে! আমি নার্ভাস হয়ে পড়ছি।  যার ফলে হাত মুচড়াচ্ছি! আড় চোখে ইউসুফ ভাইকে দেখলাম।খুব কাছে তিনি আমার।  নেশাকাতর চাহনীতে তাকিয়ে তিনি! আমি সাথে সাথে  চোখ নামিয়ে নিলাম।উনি আমার আরো কাছে এসে হাতের উপর হাত রেখে কানের মাঝে ফিস ফিস করে বললেন,,

--"বাবুইপাখি!  এই অবাধ্য মন তোমাকে কাছে পেতে চাইছে! খুব কাছে! নিজের সাথে লেপ্টে নিতে চাইছে! আই নিড ইউ! আই নিড ইউ ডিপলি!"

বলে মুখ গুজে দিলেন আমার ঘাড়ে!এদিকে তার হঠাৎ এমন আক্রমণে শক্ড আমি! সারা শরীরে কারেন্ট খেল গেল যেন আমার। সাথে সাথে সরে আসতে নিতেই তিনি আমার হাত ধরে হেচকা টান দিয়ে নিজের সাথে লেপ্টে নিলেন। আর গলায় মুখ গুজতেই আমার মুখ দিয়তেই "আহ্" করে আর্তনাদ করে উঠি। সঙ্গে সঙ্গে হন্তদন্ত হয়ে জিগ্যেস করে উঠলেন,,

--"কি হয়েছে বাবুইপাখি! এভাবে চিতকার করলে কেন? ব্যাথা পাইছো? দেখি কোথায়! একি গলায় এটা কিসের ক্ষত বাবুইপাখি! এতটা চোট কিভাবে পেলে!"

লাষ্ট কথা গুলো গম্ভীর শুনালো তার!কিন্তু তাকে কিভাবে বলি এটা কিসের চোট! তাহলেতো লিয়াকে না মেরেই ফেলেন!তাই শুকনো ঢোক গিলে হাসার চেষ্টা করে বললাম,,

--"তততখন পপপাহড় থেকে পপড়ে গেছিলাম না। ততখন ব্যথা পাইচ্ছি!"

ইউসুফ ভাই তখন তাকালেন আমার দিক পূর্ণ দৃষ্টিতে। শীতল সেই চাহনী! দেখেই শরীরের লোম দাঁড়িয়ে গেল আমার! তাই আবার সাফাই দিতে বললাম,,

--"স...সত্যি! সত্যি বলছি!"

--"মিথ্যা কেন বলছিস! এটি আজকের চোট না! ১/২ দিন আগের। সত্যি বল কারণ কাল সন্ধ্যা পর্যন্ত তোর গলায় কোনো চোট ছিল না! ইনফ্যাক্ট ক্যাম্প ফায়ারের পরও ছিল না! কিন্তু সকাল থেকে তুই বন্ধ গলার ড্রেস পরে ঘুড়ে বেড়াচ্ছিস।এ জন্যই তো?? "চোখ মুখ শক্ত করে ঠান্ডা গলায় বললেন!"

--"ওহো হে! ভ...ভুলে গেছিলাম!  স..ত্যি মাথা থেকে চলে গেছিলো! কাল ক্যাম্প ফায়ার পর ঘুমাতে যাওয়ার সময় টয়লেটে পড়ে গেছিলাম!" আমতা আমতা করে বললাম।

ইউসুফ ভাইয়া তখন আপনি দৃষ্টিতে তাকিয়ে ধমকে বললেন,,

--"আবার মিথ্যে বলছিস তুই! দেখেই বুঝা যাচ্ছে কেও তোর গলায় ধরালো কিছু দিয়ে চট দিয়েছে! আর আমাকে মিথ্যা বলছিস??"

আমি এবার চুপ রইলাম! তাতে যেন তার রাগ বাড়লো।  আমাকে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বলল,,

--" কি হলো! মুখে তালা দিছিস তুই! নাকি বোবা হয়ে গেছিস কথা বল বেদ্দপ মেয়ে!"

আমি ভয়ে কেঁদে দিলাম হু হু করে। তাতে তিনি তেতে উঠলেন আরো বেশী! আমার গাল টিপে ধরে ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল,,

--" মুখ খুলচ্ছিস না কেন? হুম! কেন রাগাচ্ছিস আমায়! সত্যি বল! নয়তো তোকে এখন সেই জঙ্গলে ফেলে চলে আসবো! আমি জানতে চাইছি কুহু! তে এমন করেছে!কে আমার বউয়ের গায়ে হাত দিচ্ছে! টেল মি ডেম ইট!" লাষ্ট কথাটা খুব জোড়েই বলল।

যাতে আমার অন্তর আত্মা কেঁপে উঠলো!আমি ভয়ে মুখ তখনো না খুলতে দেখে ইউসুফ ভাইয়া আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন,,

--" বুঝতে পেড়েছি! কার এত বড় স্পর্ধা!  যে আমার বাবুইপাখিকে টার্চ করেছে! ওর এমন হাল করবো! যে নিজকে চিন্তেই ভয় পাবে ও! আর তুই! একদম ামার সামনে আসবি না।  একদম না।"

বলে রুমে থাকা অ্যাটাচ ব্যালকনিতে চলে গেলেন। এদিকে খাটে দপ করে বসে কান্না করতে লাগলাম আমি! এ জন্যই তো বলি নি কাউকে! কিন্তু আমার যে খেয়ালী ছিল না এটির কথা নয়তো লুকতে পারতাম। আমি চাই না আর ঝামেলা হোক। আমার জন্য উনাদের ফ্যামিলিতে আর ঝামেলা হোক! কিন্তু না চাইতে তাই হলো! যেটা ভয় পেয়ে ছিলাম আমি!

______________________________________________

কিছুক্ষন আগে বুড়ি এসে খাবার দিয়ে গেলেন। ইউসুফ ভাই তখনো ব্যালকনিতে! ডাকবো কি ডাকবো না সাহস পাচ্ছি না। কিন্তু তার নির্ঘাত খুদা পাইছে! আমার তো পেটে ইদুর দৌঁড়াচ্ছে। কি করি? এসব দিধা দন্ড ভুলে এক রাশ সাহস জুগিয়ে গেলাম তার কাছে। তিনি পা দুটো টেবিলে মেলে চোখে উপর এক হাত দিয়ে চেয়ারে হেলে বসে  আছেন! আমি ভয়ে ভয় ডাক দিলাম,,

--"ভাইয়া! ইউসুফ ভাইয়া!  শুনচ্ছেন?"

তিনি সাথে সাথে চোখ মেলে তাকালেন। তার চোখ দেখে চমকে উঠলাম। রক্তের মতো লাল হয়ে আছে। ভয় লাগচ্ছে খুব তাও  মিনমিন করে বললাম,,

--"বুড়ি খাবার দিয়ে গেছে! আসুন খাবেন!"

তিনি অাবার চোখ দুটে বুজে বললেন,,

--"খাবো না!"

আমি একটু সাহস পেলাম। তাই বললাম,,

--" কেন খাবেন না চলুন খাবেন!"

এবার আর ইউসুফ ভাইয়ার কোনো নাড়া পাওয়া গেল না!চুপ সে! আমি সাহস করে এবার হাত ধরে টান দিতেই তিনি খেঁকিয়ে উঠলেন,,

--" বলছি না খাবো না! কথা কানে যায় না তোর! যা ভাগ এখান থেকে!"

এবার রাগ উঠলো আমার! কি করছি আমি রাগ কেন দেখচ্ছে হুদাই আমার উপর! হোয়াই! আমার কি রাগ নেই!  হুম আমি কম কিসে! আমিও নাছড় বান্দা তাকে তাই  ধুম করে তার কোলে বসে পড়লাম আমি! তা দেখে তিনি অবাক হয়ে বললেন,,

--"তোর সাহস তো কম না! তুই আমার অনুমিত ছাড়া কোলে বসিস! উঠ! জলদি উঠ!"

--"উঠবো না!"

--"উঠ"

--"বললাম না উঠবো না! কি করবেন করুন!  হুহ্ ভয় পাই না আপনাকে!"

উনি দুষ্ট হেসে বললেন,,

--" সত্যি ভয় পাস না!"

আমি বুঝতে পেরেও ভাবলেশহীন বললাম,,

--" মোটেও না!"

তখনি তিনি আমার কোমর চেপে তার কাছে নিতেই হুরমুর করে উঠে দাঁড়লাম। তখনি ইউসুফ ভাই হাসতে হাসতে বললেন,,

--"তুই না ভয় পাস না! উঠে গেলি কেন তাহলে! আয় কাছে আয়!" 

বলে এগুতে লাগলেন আমার দিক মুখ দুষ্ট হাসি নিয়ে! আর আমি পিছাতে লাগলাম।আর ঠিক তখনি...!

—————

আর ঠিক তখনি  দরজার সাথে পিঠ ঠেকে  গেল আমার! আর ইউসুফ আমার দু পাশে দু হাত দিয়ে আটকে আমায় বন্দি করে নিলেন।পরে আমার দিকে ঝুকে বলল,,

--"তুই না ভয় পাশ না আমাকে! পালাচ্ছিস কেন তাহলে!"

আমি লাজুক হাসে এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে বললাম,,

--" হুম পাই না তো!"

তিনি আরেকটু ঝুঁকে এসে বললেন,,

--" আচ্ছা! তা নজর এদিক ওদিক করে কেন বলছিস! আমার দিকে তাকিয়ে বল! আমি দেখি তোর সাহসীকতা!"

আমি নিচের ঠোঁট কামড়ে তার দিক  তাকালাম। তিনি নিশব্দে হাসচ্ছেন! তার এই হাসিতে আমার ভেতরে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে! তাও নিজেকে সামলে তার চোখে চোখ রেখে বললাম,,

--" এই যে চোখে চোখ রেখে বললাম! ভয় পাই না আপনাকে!"

ইউসুফ ভাই তার ঠোঁটের হাসি চড়া করে বললেন,,

--"বাহ্ সত্যি তো সাহসী হয়ে গেছিস! এবার তোকে সাহসীকতার পরীক্ষা দিতে হবে!"

বলে আমাকে ছেড়ে চেয়ারে গিয়ে আগের মতো বসে পড়লেন চোখ বুজে!আমি তখন ভ্রু কুচকে বললাম,,

--"কি পরীক্ষা ভাইয়া!"

উনি সাথে সাথে চোখ খুলে এক বাজখাঁই ধমক দিয়ে বললেন,,

--" ভাই ডাকবি না! ভাই ডাকলে আবার সেই জঙ্গলে ফেলে আসবো বেদ্দপ!"

তার এমন বাজখাঁই ধমকে পিলে চমকে গেল আমার। মিনমিন করে বললাম,,

--" তো কি ডাকবো! ভাই কে ভাই না ডেকে!"

ইউসুফ ভাই ভ্রু কুঁচকে বললেন,,

--"তাইলে ভাই ডাক! আমার বউ করবো না তোকে!কখনো না। ডাক আর বেশি বেশি,,!"

ইউসুফ ভাইয়ার কথায় চমকালাম আমি! এই লোকটির আজ কি হলো! এ কেমন কথা বার্তা? তাকে ভাই না ডাকলে ডাকবো টা কি আমি!তাই এক  ভ্রু উঁচু করে বললাম,,

--" ভাই না ডাকলে কি ডাকবো!"

উনি এবার হাসলেন।  লাজ্জুক হাসি! হেসে হেসেই বললেন,,

--"বউ যা বরকে ডাকে! তাই ডাকবি!"

আমি  গোল গোল চোখে তাকিয়ে বললাম,,

--"কি ডাকে! বউ তার বরকে!"

ইউসুফ ভাই চোখ মুখে বিরক্তি নিয়ে বললেন,,

--"উফ! এটা জানিস না তুই! হুম!"

আমি মাথা নাড়ালাম।এদিক ওদিক মানে জানি না!
তিনি ছোট শ্বাস ফেলে বললেন,,

--"আমারি শিখাতে হবে! হু! আচ্ছা শোন! তুই আমাকে ডাকবি! ওগো শুনচ্ছো! এদিকে এসো! এভাবে ডাকবি! কি বুঝলি!"

ইউসুফ ভাইয়ার "ওগো শুনচ্ছো" কথাটি শুনে ভিষন রকম হাসি পাচ্ছে! কি সুন্দর অভিনয় করে বলছেন কথা গুলো! হাসি আটকাতে না পেরে হেসে দিলাম আমি!তখন তিনি ধমকে বললেন,,

--" হাসচ্ছিস কেন! হাসার মতো কি বললাম!"

তার ধমকে চুপ আমি! নিজেকে সামলে বললাম,,

--" আচ্ছা ডাকবো!"

ইউসুফ ভাই আবার চোখ বুজে রইলেন! কি করি এখন  খুদাও পেয়েছে বড্ড! তাই তাকে তার কথা মতোই ডাকার সিদ্ধান্ত নিলাম। বললাম,,

--"এই যে শুনচ্ছেন! না না ওগো শুনচ্ছেন! খুদা লাগচ্ছে চলুন না প্লীজ খাবো!"

ইউসুফ ভাইয়া পিটপিট করে তাকিয়ে বললেন,,

--" এটা কেমন ভাবে ডাকলি মনে হচ্ছে তিতা করলা।মধু মিশ্রিত করে ডাক!"

--" শুনুন আমার এসবে অভ্যাস নেই তো! আস্তে আস্তে হবে আরকি! প্লীজ চলুন খাবো!"

ইউসুফ ভাই তখন আরাম করে বসে চোখ বুঝে বললেন,,

--"তা ঠিক আছে! বাট তোর সাহসীকতার পরীক্ষা এখনো বাকি! আগে পরীক্ষা দে পড়ে সব!"

আমি আবাক হয়ে বললাম,,

--" কি পরীক্ষা! "

তখন তিনি চকি এমন একটি কথা বললেন।  যা শুনে হতভম্ব আমি! তিনি বললেন,,

--" কিস মি!"

আমি চমকে বললাম,,

--"কি?"

ইউসুফ ভাই হাত দুটো টান টান করে আড়মোড়া নিতে নিতে বলল,,

--"কিস কর আমাকে!"

তার কথা শুনে ভয়ে মুখ চুপসে গেল আমার। অসহায় ভাবে বললাম,,

--"এসব কি বলছেন! আমি পারবোনা! "

ইউসুফ ভাই তাচ্ছিল্যের স্বরে বললেন,,

--"এই তোর সাহসীকতা! বলতে না বলতেই ফুস করে চুপসে গেলি! আবার বলে ভয় পায় না!"

ইউসুফ ভাইয়ার তাচ্ছিল্য নিয়ে কথা বলায়। রাগ উঠলো আমার। আমি মোটেও তাকে ভয় পাই না! পাই না,  পাই না! ব্যস! সে কি বাঘ নাকি ভাল্লুক! যে ভয় পেতে হবে হুহ! সামন্য একটা কিসিই তো! ভয় পাওয়ার তি আছে! কুহু তুই পাড়বি!  সব পাড়িস তুই! গো এহেড! ইউসুফ চোখ বুজে ছিলেন! সেই সুযোগে! হা-ডু-ডু খেলার মতো দৌড়ে টুপ করে গালে চুমু খেয়ে আবার দৌড়ে রুমে চলে আসলাম। এতে ইউসুফ ভাই বিসম খেয়ে বসে আছেন যা জানালা উঁকি দিয়ে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি তার বিস্মিত মুখখানা। এবার বুঝুক আমি সব পাড়ি! হুম!

____________________________________________

খাবার খেতে বসেছি! অধিবাসীদের খাবার! বুড়ি আজকে বাঁশ রান্না করেছে কচি বাঁশ। এটা পাহাড়ি এলাকার অধিবাসীদের প্রিয় খাবার বললেও চলে! আমি প্রথমে খাবার দেখে নাক ছিটকালেও। ইউসুফ ভাই খেয়ে যাচ্ছে দিব্বি! আর থেকে থেকে মুখের এমন ভঙ্গিমা করছে যেন এই খাবার থেকে সুস্বাদু খাবার আর একটি নেই দুনিয়াতে! তার খাবারের স্টাইল দেখে  আমারো লোভ লাগলো! আমিও মুখে দিলাম। সত্যি মজা! আর মজা করে খেতেও লাগলাম খুব করে!

খাবার শেষে খাটের এক পাশে শুয়ে পড়লাম আমি ইউসুফ ভাই  এসে আমার ওপর প্রাণ্তে শুয়ে আমাকে কাছে টেনে নিতে নিতে বললেন,,

--" দূরে কেন তুই! আজ থেকে আমার বুতে থাকবি!  ককনো দূরে থাকবি না এক ইঞ্চিও না!"

আমি কি বলবো! বুঝলাম না! আবার সরলাম না তার বুক থেকে চুপটি করে তার বুকের বাম পামের ডিপ ডিপ করে হৃদছন্দ শুনচ্ছিল। আর ইউসুফ ভাই চোখে বুজে মাথায় হাত বুলাতে লাগলেন।আমার এখন লজ্জা ভয় কিছু লাগচ্ছে না। লাগচ্ছে তো এক রাশ ভাললাগা, সুখ।

হারিকেন নিভানো। তাই বাহির থেকে চাঁদের আলো পড়চ্ছে ঘরটিতে। এমন এক পরিবেশে দিজন এতো কাছে ভাবতেই চোখের কোনে জল জমে উঠলো আমার। খুশির জল! আমি মাথা উঁচু করে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বললাম,,

--"একটা কথা জিগ্যেস করি!"

তিনি চোখ বুজে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলল,,

--"হুম!"

--"আপনি আমাকে বাবুইপাখি কেন ডাকেন?"

--"কেন ডাকি! "

--"তাই তো জানতে চাইছি!"

ইউসুফ ভাই হেসে ফেললেন আর বললেন,,

--"কারণ তুই সবার মনে নিজের জায়গা নিজে তৈরি করে ফেলিস! যেমনটি করে একটি বাবুইপাখি!  অন্য সব পাখিদের মতো না সে ভিন্ন সে থাকে নিজের তৈরি করা ঘরে! যার জন্য বিন্দু মাত্র অহংকার নেই তার। ঠিক তেমনি তুই! সবার মনে বাসা করে নিস অল্পতেই!আর তার জন্য কোনো অহংকার নেই তোর মনে! তাই তুই আমার বাবুইপাখি! "

ইউসুফ ভাইয়ার কথায় ছলছল করে তাকিয়ে আছি তার দিক! তা দেখে তিনি তার বুকে শক্ত করে আকড়ে ধরে বলে উঠে,,

--কাঁদিস না ঘুমো এবার..!"

আমিও চোখের জল মুছে তার বুকের সাথে লেপ্টে  ঘুমিয়ে গেলাম।শান্তির ঘুম।

____________________________________________

সকাল হতেই খাওয়া-দাওয়ার পাঠ চুকিয়ে আমরা তৈরি হয়ে নিলাম। বুড়া সি এন জি এনে  হাজির। তাদের কাছ থেকে বিদেয়  নিয়ে চলে এলাম খাগড়াছড়ি বাস স্ট্যান্ড  ঘন্টা খানেকের মাঝে!এর মাঝে ইউসুফ ভাইয়ার সাথে নানান কথা হলো তার মাঝে একটি কথায় লজ্জায় সি এন জি থেকে লাফ দিতে ইচ্ছে করলো আমার। কিন্তু তিনি তখন নির্বিকার ভাবে বলে গেলেন,,

--"বাবুইপাখি! আমরা কিন্তু বিয়ের পর হানিমুন টা এই বুড়ো বুড়ির বাড়িতেই সারবো বুঝলি!  এখনে নো কম্প্রোমাইজ। "

আমি তখন তার কথায় লাল-নীল হতে লাগলাম লজ্জায়। তা খুব বুঝতে পেরে নানা ভাবে টিপুনি কাঁটেই গেলেন আমাকে! তার দুষ্ট-মিষ্টি কথার মাঝে আফসোস করতেও দেখা গেল।  তিনি তখন বললেন,,,

--" সাজেক থেকে ফিরে যাচ্ছি আজ! কত কিছু ভেবে ছিলাম আমি! তোর দু হাতে মেঘকে স্পর্শ করাবো! মেঘ তখন লজ্জা পেয়ে তার পানিতে ভিজিয়ে দিবে! আরো কত জায়গা ঘুড়ার ছিল! কিন্তু হলো না। সমস্যা নেই বেঁচে থাকলে আবার আসবো।  ইনশাআল্লাহ। "

আমি শুধু তাহার কথা শুনেই গেছি! বাসস্ট্যান্ডে আসতেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো তিথি, নুশরা, বুশরা আমাকে জড়িয়ে ধরে।  তাকে সামলে বললাম,,

--" ঠিক আছি আমি কান্না করিস না তোরা।"

তখন পিছন থেকে রিয়া অপরাধীর শুরে বলল,,

--" কুহু! আপুর হয়ে আমি ক্ষমা চাইছি! সে যা করেছে তা ক্ষমা করার মতো না। আমি সত্যি লজ্জিত।"

আমি রিয়াকে জড়িয়ে ধরে বললাম,,

--" তুমি ক্ষমা চাইছো কেন পাগল মেয়ে! আমার কারো উপর কোনো ক্ষোভ নেই!"

রিয়া মিষ্টি হেসে জড়িয়ে ধরে আমাকে বলল,,

--"তুমি সত্যি খুব ভাল!  আসি আমি!"

রিয়া বিদেয় নিয়ে চলে গেল! আর এদিকে মেসদাকও বিদেয় নিয়ে চলে গেল। তিথির মুখটা তখন ছোট হয়ে গেল। মেসদাকও মন খারাপ করে চলে গেছে।এরপর আমরাও রওনা দিলাম নিজের গন্তব্য। 

ময়মনসিংহে পৌঁছাতে রাত হয়ে যায় আমাদের।  বাড়ির ভিতর প্রবেশ করতেই! আচমকা আমার কেউ ঠাস করে চড় বসিয়ে দিল! সামনে তাকিয়ে দেখি...!

★[জায়েদের নাম পরিবর্তন করে মেসদাক দেওয়া হয়েছে]★

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন