আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

অস্পষ্ট প্রেমাবেগ - পর্ব ১৯ - সুলতানা পারভীন - ধারাবাহিক গল্প


৩৭!! 

সকালে কিশোর তামান্নাকে ধূসর রঙা একটা শাড়ি পড়িয়ে দিচ্ছে এক মনে। তামান্না অবশ্য অনেকক্ষণ ধরে মানা করেও কোন লাভ হয়নি৷ কিশোর নিজের কাজ করায় ব্যস্ত৷ দীপ্ত সকালে নাস্তা খাওয়া হতেই বায়না করেছে আজ সে দীপশিখায় যাবে৷ স্কুল বন্ধ। তাই দীপ্তি তার নতুন বন্ধুদের সবার সাথে গিয়ে খেলবে সারাদিন। আর তাই কিশোর, তামান্না আর দীপ্তি তিনজনে দীপশিখায় যাওয়ার জন্যই প্রস্তুতি নিচ্ছে। দীপ্তি আগেই রেডি হয়ে তার দিম্মাকে বেড়াতে যাওয়ার খবর শোনাতে ছুটেছে৷ আর এই সুযোগে কিশোরও তামান্নার কোমড় পেঁচিয়ে শাড়ি পড়ানোয় লেগে গেছে৷ আর তামান্না বেচারি লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে। মেয়েটা হুট করে চলে এলে কি একটা কান্ড হবে ভেবে তামান্নার মুখের রঙ বদলাচ্ছে সেকেন্ডে সেকেন্ডে। 

কিশোর তামান্নাকে শাড়িটা পড়িয়ে হালকা করে চোখে কাজল টেনে দিয়ে কপালে ছোট্ট একটা কালো টিপ পড়িয়ে দিয়ে তামান্নাকে বিছানায় বসিয়ে দিলো। তারপর তামান্নার সামনেই ফ্লোরে বসে পড়ে তামান্নার পায়ের উপর থেকে শাড়িটা একটু সরিয়ে দিয়ে কিছু একটা পড়িয়ে দিলো। তামান্না একটু চমকে গেল পায়ে শীতল কিছুর স্পর্শে। তামান্না একটু আড়ষ্ট হয়ে পা সরানোর চেষ্টা করতেই কিশোর ভ্রু কুঁচকে তাকালো তামান্নার দিকে৷ তারপর আবার নিজের কাজে মন দিলো।

-তমা? এতো নাচানাচি করো কেন সবসময় বলো তো? একটা কাজ করছি দেখছো তবুও তোমার---?

-কি করছ?

-নূপুর পড়াচ্ছি। বলেছিলাম না সেদিন-। নূপুরের কথা খেয়াল ছিল না---।

-নূপুর!

-হুম--। কেমন হয়েছে দেখে বলো তো?

-কি দরকার ছিল------।

-এতো দরকার ভেবে তোমার কাজ নেই---। আমার বউকে আমি দিয়েছি। তুমি এতো কথা বলো কেন? এখন দেখো তো পছন্দ হয়েছে কিনা।

তামান্না বিছানা থেকে নেমে পায়ের নূপুর জোড়া ভালো করে নেড়ে চেড়ে ঝুমঝাম শব্দ করে হাসল। কিশোর নিজেও হেসে উঠে বিছানায় বসে তামান্নাকে নিজের উপরে টেনে নিয়ে শুয়ে পড়লো। 

-পছন্দ হয়েছে?

-ভিষণ----।

-তাহলে আমার পাওনাটা বুঝিয়ে দাও----।

-কিসের?

-বারে আমি তোমার পছন্দের একটা জিনিস দিলাম--। তুমি বিনিময়ে কিছু দিবা না? তা কি হয় বলো?

-আমি কি দিবো?

-সব কি বলে দিতে হবে? নিজে থেকে কি কিছুই দেওয়ার নেই? 

তামান্না মুখটা নিচু করে ফেলেছে দেখে কিশোর একহাত দিয়ে তামান্নার চিবুকটা একটু তুলে ধরে তামান্নার লজ্জা রাঙা মুখটা দেখলো কিছুক্ষণ। তারপর আলতো করে তামান্নার কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে নিজের ঠোঁট দুটো ডুবিয়ে দিলো। একটু পরে সরে এসে আবার তামান্না মুখটা তুলে ধরলো কিশোর।

-আর কতদিন এভাবে আমি জোর করে আদর নিবো? নিজে থেকে তুমি আগাবা না একটুও--? তাহলে তো আমার মনে হবে আমি জোর করেই সবসময়--।

তামান্না এবারও কিছু না বলে লাজুক হেসে কিশোরের ঠোঁটে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে আবার কিশোরের বুকে মুখ লুকালো। কিশোর হেসে তামান্নাকে বুকে জড়িয়ে ধরলো। 

-বাহ! দারুণ তো! এভাবে একটু ছোঁয়া দিয়ে লুকিয়ে গেলে কেন? লজ্জা পেলে-----?

-আমরা বের হবো-----।

-এখন তো মনে হচ্ছে প্ল্যান চেইঞ্জ করতে হবে---। এভাবে পাগল করলে তো আর কোথাও যাওয়ার মুড থাকে না গো বউটা----।

-কিসব বলে সবসময়? মুখে কিছু আটকায় না?

-উঁহু--। এই শোনো না তমা? আজকে------।

কিশোর কিছু একটা বলা শুরু করতেই নিচে ড্রইংরুম থেকে বেশ জোর চেঁচামেচির শব্দ ভেসে এলো। কিশোর তামান্না দুজনেই মুখ চাওয়াচাওয়ি করে উঠে রুম থেকে বেরিয়ে নিচে এলো। এতো চিৎকার চেঁচামেচি চৌধুরী ম্যানশনে কখনোই হয় না। নিচে এসে কিশোর ভ্রু কুঁচকে দুজন মানুষের দিকে তাকালো। এদের দুইজনই কিশোরের পরিচিত। একজন হলেন কিশোরের প্রতিদ্বন্দ্বী বিজনেসম্যান আহমাদ খান। আর অপরজন হলো সুপ্তি। তামান্না আহমাদ খানকে চিনতে পারলো না৷ কিন্তু সুপ্তিকে দেখে একটু ভয় পেয়ে কিশোরের কাছে সরে এলো। কিশোর তামান্নার একটা হাত হালকা করে ধরে চোখের ইশারায় শান্ত থাকতে বললো। তামান্না একবার ঢোক গিলে সামনের দিকে তাকালো। ততক্ষণে আহমাদ খান ওদের দিকে এগিয়ে এসেছে।

-কি চান আপনারা? আপনি কে?

-তামান্না মা! মা আমি তোর বাবা৷ 

-বাবা!! মানে? কিসের বাবা!

-মা রে আমিই তোর হতভাগ্য বাবা৷ তোকে বাধ্য হয়ে অনাথ আশ্রমে রেখে এসেছিলাম সেদিন--। বিশ্বাস কর মা আমি তোকে অনাথ আশ্রমে পাঠাতে চাই নি----।

তামান্না পুরো থ হয়ে গেছে আহমাদ খানের কথায়। কিশোর এবার তামান্নার কাঁধে হাত দিয়ে নিজের সাথে হালকা করে জড়িয়ে ধরলো। আহমাদ খান একবার জ্বলজ্বলে চোখে কিশোরের দিকে তাকিয়ে আরেক পা তামান্নার দিকে বাড়ালো। কিশোর হাত উঠিয়ে আহমাদ খানকে বাধা দিলো।

-ওখানেই থামুন মিস্টার খান। নিজের মেয়েকে নিয়ে আবার কোন নাটক করতে এসেছেন এখানে? আমার বাড়ি কোন নাটকের মঞ্চ নয় যে যখন ইচ্ছে এসে নাটক করবে--।

-কিশোর? মুখ সামলে কথা বলো। আমি তামান্নার বায়োলজিকাল ফাদার---। আমার মেয়ের সাথে কথা বলার অধিকার আমার আছে।

-এক মেয়েকে দিয়ে কাজ হয় নি বলে এখন তামান্নাকে নিজের মেয়ে বানাতে লেগে গেছেন? বাহ! অবশ্য আপনার মতো লোকের কাছ থেকে এর চেয়ে বেশি কিইবা আশা করা যায়!

-মাইন্ড ইউর ল্যাঙ্গুয়েজ মিস্টার কিশোর চৌধুরী----।

-ইউ জাস্ট শাট আপ মিস সুপ্তি। এখানে আমার ওয়াইফকে নিয়ে কথা হচ্ছে। এতোগুলো বছর পর কোথা থেকে কে এসে বলবে সে নাকি ওর বাবা আর আমিও সেটা মেনে নিব! তাও আবার তোমার ফ্যামেলির কাহিনীগুলো! ইম্পসিবল।

-তুমি বিশ্বাস করো না করো--। তামান্না আমার ছোট বোন--। হতে পারে স্টেপ সিস্টার-বাট স্টিল--। আমি গতকালই জানতে পারলাম আমার একটা ছোট বোন আছে--।

-হা হা হা৷ ওয়েল প্লেইড---। তা তোমার নিজের নাটকটা কাজে লাগে নি বলে এটা নতুন নাটক করছ তাই না? এটাও কোনো কাজে দিবে না। আসতে পারো---।

-আমি কোন নাটক করি নি কিশোর--।

-ওহ! সিরিয়াসলি! আমি তখন এতো বোকা ছিলাম যে অনেক কিছুই খেয়াল করিনি-। এখন সবটা খোঁজ খবর নিয়ে সবটা ক্লিয়ার আমার কাছে মিস সুপ্তি। সেদিন কি করে হঠাৎ মাঝ রাস্তায় আপনি আমার গাড়ির সামনে এসে পড়লেন-। কি করে বিয়ে হলো। কি করে বিয়ের পরও নিজের পরিবারের সাথে কোন যোগাযোগটাও রাখেন নি আপনি-। আর কি করে একটা মেয়ে নিজের ফিগার মেনটেইনের দোহাই দিয়ে নিজের বাচ্চা এবোর্ট করতে চায় --। আর কি করে হুট করে হসপিটাল থেকে গায়েব হয়ে যায় সবটা এখন ক্লিয়ার আমার কাছে--।

-কিশোর?

-কি ভেবেছিলে বলো তো? এভাবে আমাকে ভেঙ্গেচুরে শেষ করে দিয়ে নিজেদের বিজনেসটা এগিয়ে নিয়ে যাবে। আমি তো গাধার মতো মাতাল হয়ে আজীবন কাটিয়ে দিবো! আসলেই অসাধারণ প্ল্যানিং। বলতেই হবে----। তোমার মতো একটা মিন মাইন্ডের মেয়ের জন্য আমার লাইফের ছ সাতটা বছর নষ্ট হলো। নিজেদের প্ল্যানিংয়ে অনেকটাই সফলও হয়েছ তোমরা। বাট আর না।

আহমাদ খান এতোক্ষণ রাগী টকটকে লাল চোখে কিশোরের দিকে তাকিয়ে সুপ্তির সাথে ওর কথাগুলো শুনছিল। শুধুমাত্র তামান্নাকে যে কোন মূল্যে নিতে চায়, তাই একটাও কথা বলে নি লোকটা৷ এখন কিশোরের সাথে অযথা তর্কে জড়িয়ে সামনের প্ল্যানিংটার বারোটা বাজানোর কোন ইচ্ছেই আহমাদ খানের নেই। তাই বিরক্ত হয়ে একবার সুপ্তিকে ধমক দিলেন। সুপ্তিও রাগে ফোঁসফোঁস করতে লাগলো বাবার ধমক খেয়ে। নেহাত প্রয়োজন বলে তামান্নার মতো একটা মেয়েকে বোনের পরিচয় দিতে হবে ওকে, ভাবতেই রাগে সুপ্তির কান মুখ লাল হয়ে গেল। তবে দিন তো তারও আসবে৷ তখন এর হিসেবটাও সুদ আসলে নিয়ে নিবে সুপ্তি। এসব ভেবে নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করলো সুপ্তি। এসব নাটক দেখে কতোক্ষণ শান্ত পারবে সেটাই ওর এখন ভাবনা।

৩৮!! 

তামান্না অবাক অবাক চোখে একবার একজনের দিকে তাকাচ্ছে। আহমাদ খান ওর বাবা সেটা ও আগে থেকেই জানতো। ঠিক জানতো বললে ভুল বলা হবে। বাবা নামের লোকটার ছবি ও দেখেছে৷ এতোগুলো বছরেও লোকটার মুখের আদলের তেমন একটা পরিবর্তন হয়নি। তাই তামান্না সহজেই চিনতে পেরেছে এই বাবা নামের মানুষটাকে। কিন্তু সুপ্তিও ওই লোকটার মেয়ে জেনে খানিকটা অবাক হলো। তাহলে সুপ্তি তামান্নার বোন! আর এই লোকটা কিশোরের জীবনটা নষ্ট করবে বলে এতো নাটক সাজিয়েছে! ভাবতেই তামান্না বিস্ময়ে, লজ্জায়, রাগে একটা কথাও বলতে পারলো না। 

রাতের বেলা দীপ্তির কথা বলা বন্ধ হওয়ার আরো মিনিট পাঁচেক পর কিশোর একটু মাথা উঁচু করে দীপ্তির মুখের কাছে এগিয়ে এসে উঁকি দিয়ে দেখে নিলো মেয়েটা ঘুমিয়েছে কি না৷ যখন বুঝতে পারলো দীপ্তি একেবারে ঘুমে কাদা হয়ে গেছে তখন  কিশোর দীপ্তির পাশে নিজের বালিশটা রাখলো যাতে ঘুমের ঘোরে পাশ ফিরে মেয়েটা পড়ে না যায়। তারপর বিছানা ঘুরে তামান্নার পাশে এসে শুয়ে তামান্নাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। তামান্না এতোক্ষণ ধরে কিশোরের ছেলেমানুষি দেখে চুপ থাকলেও এবারে হেসে ফেললো। তারপর দীপ্তির দিকে একটু সাবধানে এগিয়ে শুয়ে কিশোরকে ভালো করে শোয়ার জন্য জায়গা করে দিলো। কিশোরও ততক্ষণে তামান্নাকে জড়িয়ে ধরে কানে ঠোঁট বুলিয়ে, গলায়, ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে দুষ্টুমিতে মেতেছে৷ আর তামান্না কিশোরের প্রতিটা স্পর্শে কেঁপে উঠছে। 

-কি করছো?

-এতোক্ষণ খুব তো হাসছিলে না? এখন বোঝাবো মজা দাঁড়াও৷ আমাকে জ্বালানোর মজা টের পাবে আজকে---।

-আরে! আমি কি করলাম!? দীপ্তিই তো জেদ করেছে আমাদের দুজনের মাঝখানে শোবে বলে। আর সেটা শুনে একজন ভদ্রলোকের মুখের যা অবস্থা হলো---। হি হি---।

-আবার হাসছো না? আমার কষ্টটা তো বুঝলেই না-উল্টো মজা করে হাসছো! আজকে তমা তোমার---।

-এই? আস্তে। দীপু জেগে যাবে---।

-হুম হুম। হাসো হাসো। তোমার আর কি! আমার তো তোমাকে বুকে জড়িয়ে ধরতে না পারলে দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার জোগাড় হয়, ঘুমই আসতে চায় না। কিন্তু তোমার কি? তুমি তো বেশ মজায় আছো মেয়েকে মাঝখানে শুইয়ে দিয়ে---। হুহ--। বুঝি তো আমি---।

-আরে! মেয়েটা এতো আবদার করে বাবা মায়ের মাঝে শুতে চেয়েছে। ওকে কি বারণ করা যায়?

-বারণ করতে তো বলিনি--৷ আমার সমস্যা হলো তুমি আমার থেকে দূরে গিয়েও বেশ মজা পাচ্ছিলে---।

-আরে!! কি সব বলছেন?

-তমা???

-আমি সত্যি এজন্য হাসছিলাম না। সত্যি--। আপনার থেকে দূরে গিয়ে কি---।

-কি বললে বুঝি নি-। একটু জোরে বললে ভালো হতো---।

-তুমি আরেকটু এগিয়ে এসো না? পড়ে যাবে তো?

-পড়বো না৷ খাটটা বড় করেই বানানো যাতে আরো একজন এ্যাড হলেও আরাম করে ঘুমানো যায়--সবাই মিলে--। বুঝেছ?

তামান্না এবার একটু লজ্জা পেয়ে চুপ করতেই কিশোর তামান্নার কোমড় পেঁচিয়ে টেনে নিজের বুকের উপরে তুলে নিয়ে তামান্নার বালিশে শুয়ে পড়লো কিশোর। তামান্না একবার কেঁপে উঠে কিশোরের বুকের উপরে মাথা রেখে কিশোরের মুখের দিকে তাকালো। কিশোর একটু হেসে তামান্নার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে নাকে নাক ঘষলো। 

-এই তমা? আমাদের নতুন একজন অতিথি আসা দরকার কি বলো? কবে আসবে সে বলো তো? আমার কিন্তু একটা পুঁচকে তমা চাই--। তোমার মতো-। কিউট কিউট লাল টুকটুকে গাল--।

-কিসব বলো?

-আহা! লজ্জা রাঙা মুখটা দেখলেই তো ইচ্ছে করে একেবারে খেয়ে ফেলি--। তোমার এই টুকটুকে লাল মুখ, ঠোঁট----।

-যাও--।

তামান্না কিশোরের বুকে মুখ লুকিয়ে নিতেই কিশোর দুহাতে তামান্নাকে বুকে জড়িয়ে নিলো শক্ত করে। 

-জানো তমা? আজকে আমি অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম-। তুমি যদি সত্যি ওদের সাথে চলে যেতে--। আমি যে কি করতাম নিজেও হয়তো জানি না-। 

-কেন যাবো উনাদের সাথে? উনারা কে আমার? কেউ না --।

-তমা??

কিশোর তামান্নাকে বুকে আরো শক্ত করে বেঁধে নিতেই সকালের ঘটনাটা যেন ওর চোখের সামনে আবার জীবন্ত হয়ে ফুটে উঠলো। কিশোর সুপ্তির সাথে যখন কথা বলছিলো এর মধ্যে আহমাদ খান তামান্নার সামনে গিয়ে কান্না করে তামান্নার একটা হাত চেপে ধরেন।

-মা রে? বাবা অনেক অন্যায় করেছি তোর সাথে। আমাকে ক্ষমা করে দিয়ে ফিরে চল বাবার সাথে, তোর নিজের বাড়িতে ফিরে চল মা। তোকে তোর যোগ্য সম্মানটা আমি ফিরিয়ে দিতে চাই৷ দেখ আজ তোর বাবা আর তোর বোন তোকে নিয়ে যেতে এসেছে--। যাবি না মা তুই? বল?

আহমাদ খানের কান্নায় ভেঙ্গে পড়া দেখে তামান্নার কেমন একটা তীব্র কষ্ট হওয়া শুরু করছিল বুকের মধ্যে। যত যাই করুক মানুষটা তো ওর বাবা। তাই বাবা নামের লোকটার চোখে পানি দেখে কয়েক সেকেন্ডের জন্য তামান্না খেঁই হারিয়ে ফেলেছিল। খুব করে ইচ্ছে করছিল বাবার বুকে মুখ লুকিয়ে একটু কেঁদে হালকা হতে। আহমাদ খানও তামান্নার আবেগি মূহুর্তটাকে নিজের কাজে লাগাতে একটুও ভুল করলেন না। তামান্নার চুলে হাত বুলিয়ে দিয়ে আবার একবার মেকি কান্না করে চোখ মুখ ভাসিয়ে নিলেন।

-জানি মা তুই ছোটবেলা থেকে অনেক কষ্ট পেয়েছিস। তবে আর না। আর এমন কষ্টের, অপমানের জীবন নয়৷ এবার থেকে রাণীর হালে রাখবে তোকে তোর বাবা। তুই চল বাবার সাথে মা। চল। 

তামান্নার হাত ধরে আহমাদ খান দরজার দিকে পা বাড়িয়েছেন৷ আর তামান্নাও বিহ্বলের মতো সেদিকে হেঁটে যাচ্ছে দেখে কিশোরের পায়ের নিচ থেকে যেন মাটি সরে যাচ্ছিলো। কোনমতে এসে তামান্নার অন্য হাতটা শক্ত করে চেপে ধরলো। আর কিশোরের স্পর্শেই যেন তামান্নার ঘোর কাটলো। 

-তমা? কোথায় যাচ্ছো তুমি? এই লোকটার সাথে? ভুলে গেছো এই লোক তোমার মায়ের সাথে যা করেছে? হয়তো শেষমেশ কখনো জানতে পারবে তোমার মা কে ও হয়তো এই লোকটাই মেরে ফেলেছে।

-খবরদার কিশোর চৌধুরী। আমার মেয়েকে আমার নামে একটাও বাজে কথা বলবে না তুমি৷ আমার মেয়ে আজ আমার সাথে ফিরবে---।

-যদিও আমি জানি না আপনি আসলেই তামান্নার বাবা কি না। যদি আপনি তামান্নার বাবা হয়েও থাকেন তবু আমি আপনাকে আমার ওয়াইফকে নিয়ে যাওয়ার পারমিশন কখনোই দিবো না। আপনার আর আপনার মেয়ের মতো মানুষের মুখোশধারী লোকেরা আর যাই হোক কারো আত্মীয় হওয়ার যোগ্য না৷ নিজের স্বার্থের জন্য আপনারা সব করতে পারেন--। আর এমন মানুষরূপী অমানুষদের সাথে নিজের স্ত্রীকে আমি কখনোই যেতে দিতে পারবো না---।

-কিশোর!! তামান্না মা এই ছেলেটার কথা শুনিস না মা। তুই বাবার সাথে চল। তোকে কষ্ট করে এদের বাড়িতে চাকরের মতো থেকে বাঁচতে হবে না---। তুই আমার মেয়ে। আহমাদ খানের মেয়ে। তুই মাথা উঁচু করে বাঁচবি---।

তামান্না আহমাদ খানের হাত থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে কিশোরের পাশে এসে দাঁড়ালো। 

-আপনারা চলে যান। দয়া করে এই বাড়িতে আর আসবেন না। ঠিক কি কারণে এতোগুলো বছর পর আমাকে আপনার বা আপনাদের মনে পড়লো সেটা আমার জানা নেই। তবে যে বাড়িতে আমার মা শান্তিতে বাঁচতে পারে নি, সে বাড়িতে আমি তো ফিরবো না। কখনোই না। আর এটা আমার শ্বশুর বাড়ি। একটা ভদ্রলোকের বাড়ি। এখানে এমন অযথা নাটক করবেন না। আমি এখানে খুব সুখে শান্তিতে আছি। দয়া করে আমার সুখের সংসারে অশান্তির আগুন লাগাবেন না। আপনারা এখন আসতে পারেন---। কিশোর? আজকে না যাই আমরা আশ্রমে? অন্যদিন যাই--। কেমন? দীপুকে----।

-তুমি রুমে যাও তমা। দীপুকে আমি দেখছি---।

আহমাদ খান আর সুপ্তি চলে যেতেই কিশোর দীপ্তিকে কোলে করে রুমে এসে দেখলো তামান্না ফ্লোরে বসে বিছানায় মাথা রেখে কাঁদছে। তামান্নাকে সামলাতেই কিশোর আর দীপ্তির সারা দিনটা কেটে গেছে। তাই দীপশিখায়ও যাওয়া হয়নি ওদের। 

তামান্নাকে বুকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে চুলে বিলি কেটে দিতে দিতে ভাবনায় মগ্ন কিশোর। আহমাদ খান সত্যিই তামান্নার বাবা, কথাটা তামান্নার কাছ থেকে আর দীপশিখায় খবর নিয়ে কনফার্ম হয়েছে কিশোর। কিন্তু হঠাৎ তাদের তামান্নাকে এতো প্রয়োজন পড়লো কেন সেটাই ভাবছে কিশোর। শুধু তামান্না কিশোরের ওয়াইফ বলে? নাকি আরো কোন রহস্য আছে! তেমনটাই যদি হয় তবে ওদের পরের প্ল্যানিং কি হতে চলেছে?
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।