০১!!
বোর্ড রুমের বিশাল টেবিলের চারদিকে সাজানো গোছানো ২৮ টা চেয়ারে বসা ২৮ জন মানুষ। তাদের মধ্যে থেকেই একজন ২৫-২৬ বছরের তরুণ সাবলীলভাবে উঠে এসে দাঁড়ালো প্রজেক্টর স্ক্রিনের বাম পাশে। সাদা শার্টের উপরে কালো কোট-প্যান্ট। ঝকঝকে কালো বুট আর সাথে মানানসই কালো টাই গলায় বাঁধা। খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি মুখটায় একটা বিশেষত্ব এনে দিয়েছে তরুণের। আর পিছন দিকে ব্রাশ করা সেট করা চুলগুলো চোখে মুখে ফুটিয়ে তুলেছে এক ধরনের আত্মবিশ্বাস। সবার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে মুখে ছোট্ট করে একটু হাসি টানলো তরুণ। তারপর পকেট থেকে কিছু একটা বের করতে করতে নিজের বক্তব্য শুরু করলো।
-হ্যালো জেন্টেলম্যান। আমি আয়ান আহমেদ, দিবাশা কোম্পানির পক্ষ থেকে 'সেইফটি ফর উইমেন' প্রেজেক্টে আমাদের রিসার্চ টুলস নিয়ে কথা বলতে এসেছি আজকে।
একবিংশ শতাব্দীর এই সময়টা মেয়েদের জন্য ঠিক কতোটা রিস্কি সেটা আর নতুন করে নাই বা বললাম৷ আর বিপদে পড়লে পরিবার পরিজনের কাছেও তৎক্ষণাৎ সেই খবর পৌঁছে দিতেও আমাদের নির্ভর করতে হয় কোন না কোন গ্যাজেটের উপর। আবার বাই এনে হাউ খবর পৌঁছানো গেলেও এই গেজেটের কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে আমরা গন্তব্যে পৌঁছতে পারি না। একটু সহজভাবে ভাবা যাক।
ধরুন, আপনার মেয়ে সকালে কলেজে যাওয়ার জন্য বের হলো। রাস্তায় যে কোন ভাবে কোন বিপদে পড়লো, আপনাকে কল করে জানাবে? ফোনে চার্জ শেষ বা ব্যালেন্স ইস্যু--অথচ আপনি জানতেও পারলেন না। অথবা মেয়েটি বিপদে পড়লো বা আপনাকে কল করে জানালো কোন বিপদ ঘটতে যাচ্ছে-লোকেশন জানাোর আগেই কল ডিসকানেক্টেড হয়ে গেল--। আপনি নিজের মেয়ের লোকেশন পর্যন্ত ট্রেস করতে পারবেন না। অসহায় হয়ে পরবর্তী খবরের অপেক্ষায় বসে থাকা ছাড়া আর কিছু করার নেই আপনার।
আয়ানের কথা শুনে সবাই মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো। আসলেই তো এমন মূহুর্তে কি করার থাকে!
-ডোন্ট ওয়ারি---। আমার কোম্পানি এটা নিয়ে প্রায় এক বছর ধরে কাজ করে একটা সলুশন বের করেছে। দা সলুশন ইজ দা ব্রেসলেট!
-হোয়াট! ব্রেসলেট! সিরিয়াসলি মিস্টার আয়ান!
-ইয়েস স্যার--। ব্রেসলেট--। আমাদের এই ব্রেসলেটটিতে ইন্সটল করা হয়েছে মাইক্রো ট্যাকার, স্যাটেলাইট সিগনাল ক্যাচার, আর কিছু ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর।
-আম! এসব একটা ব্রেসলেটে ফিট করবে কি করে?
-ব্রেসলেটের মাইক্রো চিপে মিনিমাম তিনটি নাম্বার এ্যাড করা যাবে স্যার। কোন বিপদ মনে হলে পার্টিকুলার একটা কি তে প্রেস করলেই সেই তিনটি নাম্বারে এস ও এস মেসেজ চলে আসবে উইথ স্যাটেলাইটে কানেক্ট করে লোকেশনও আসবে সেই মেসেজে। আর যেহেতু জিনিসটা ব্রেসলেটের ডিজাইন করা আর ক্যারিএবল-সেক্ষেত্রে যে কোন বয়সী নারী-ইভেন যে কেউ এই গ্যাজেটটি ইউজ করতে পারবে--।
-হোয়াট এ ব্রিলিয়ান্ট আইডিয়া--।
-থ্যাংক ইউ স্যার--। 'সেইফটি ফর উইমেন' প্রেজেক্টের জন্য এটিই ছিল আমাদের দিবাশা কোম্পানি থেকে নতুন থিম। আপনাদের যদি থিমটা ভালো লাগে তবে আমরা এটা নিয়ে আগে কাজ করতে পারি। ধন্যবাদ সকলকে।
আয়ান নিজের চেয়ারে এসে বসলো। তার আপাতত কাজ শেষ। প্রজেক্টটা ওরা পেলে হয়তো সামনে বেশ ব্যস্ত সময় আসতে চলেছে। আর না পেলে! ভাবতে ভাবতেই 'সেইফটি ফর উইমেন' এর চেয়ারম্যান জিহাদ চৌধুরী উঠে দাঁড়ালেন। সবাই প্রজেক্টের উইনার কোম্পানির নাম শোনার জন্য অধীর আগ্রহে বসে রইলো।
-হ্যালো জেন্টেলম্যানস--। আমাদের আজকের মিটিংয়ে সবার আইডিয়া, থিম অনেক সুন্দর আর ক্রিয়েটিভ ছিল সেটা স্বীকার করতেই হবে। তবে সবার আইডিয়া নিয়ে ভেবে আমার দিবাশা কোম্পানির থিমটা কিছুটা আলাদা লাগলো। থিমটা কাজে লাগাতে পারলে হয়তো অনেক পরিবার তাদের সন্তান ঘরের বাইরে গেলে তাদেরকে নিয়ে একটু হলেও নিশ্চিত থাকতে পারবে। তাই আগামী ১ বছরের মধ্যে প্রজেক্টের একটা দৃশ্যমান নতুন জমা করতে হবে দিবাশা কোম্পানিকে৷ সেটা করতে না পারলে প্রজেক্টটি অন্য কাউকে দিয়ে দেয়া হবে। সো কংগ্রাচুলেশনস মিস্টার আয়ান এন্ড কোম্পানি দিবাশা। অল দা ভেরি ভেরি বেস্ট।
আয়ানকে সবাই একে একে এসে কনগ্রাচুলেট করলো। সবার সাথে সৌজন্য শেষ করে আয়ান গাড়িতে এসে বসলো। প্রজেক্টের কাজটা পেয়ে যেমন খুশি লাগছে তেমনি আরিশার উপরে রাগও হচ্ছে। মেয়েটার আজকে আয়ানের পাশে থাকার কথা ছিল। অথচ সে নিশ্চয়ই লম্বা একটা ঘুম দিয়েছে। মনে চাচ্ছে বাসায় গিয়ে মেয়েটার মাথায় এক বালতি পানি ঢেলে দিতে। এতো ঘুম কাতুরে হয় কি করে একটা মানুষ!
আয়ান পকেট থেকে মোবাইলটা বের করতেই দেখলো তিথি, মানে আয়ানের বোনের নাম্বার থেকে প্রায় ৫-৭ টা কল এসেছে। এই মেয়েটা এতো কল দেয় কেন কাজের সময়! আয়ান বিরক্ত হয়েই তিথির নাম্বারে কল করতেই প্রায় সাথে সাথেই রিসিভ হলো কল।
-হ্যাঁ তিথি? বল--।
-ওই? তোকে কত বার কল করছি? রিসিভ করিস না কেন হ্যাঁ?
-আমি কি তোর মতো সারাদিন আটা ময়দা মেখে বাসায় বসে থাকি? ফাজিল মেয়ে- কি বলবি তাড়াতাড়ি বল--।
-ভাইয়া? আমি একটু সাজি বলে তুই সবসময় এমন বলিস কেন আমাকে? তোর বউটা আরো বেশি সাজুনিবালা হবে যা--অভিশাপ দিলাম তোকে---। এ্যাঁ--।
-তিথি? কি বলবি বল--। আমার তাড়া আছে-।
-এই শোন না? আজকে ১২ঃ৩০ টায় একটা দাওয়াতে যাবো সবাই--। তুই ঠিক ১২ টায় বাসায় আসবি--। দুপুরে দাওয়াত কিন্তু---।
-তিথি? আমি কি অফিসে প্রতিদিন নাটক করতে আসি?
-তোর আর আরুআপ্পিরই তো অফিস--। আজকে নাহয় আপুকে সামলে নিতে বল না?
-হুহ--। ওই মেয়ে আর অফিস সামলাবে---। ওরে পেলে তো আমি----। আহহহহ।
-এই ভাইয়া শোন না?
-কি!
-তোকে না ওয়াট্সএ্যাপে একটা পিক পাঠিয়েছি। দেখ না?
-কার পিক? আচ্ছা দেখে কল করছি-----।
-এই না না না---। লাইনে থাক না--? দেখে বল-।
-ওক্কে----।
অায়ান কল না কেটেই ওয়াট্সএ্যাপ থেকে তিথির দেয়া পিকটা ওপেন করলো। পিকটা দেখেই আয়ানের যেন দুনিয়াটা থমকে গেল। একটা মেয়ের ছবি। নেভি ব্লু রঙা একটা তাঁতের শাড়ি পড়নে মেয়েটার, চোখের নিচে কাজল টানা, ঠোঁটে হালকা রঙা লিপস্টিক, আর কপালে ছোট্ট একটা নীল টিপ। কালো কাজলটানা চোখের দিক থেকে আয়ান যেন কিছুতেই চোখ ফেরাতে পারছে না। মেয়েটার চোখ দুটোয় আলতো কাঁপন যেন আয়ান ছবির ভেতরেও টের পাচ্ছে। আয়ান থমকে মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে টেরই পেল না কখন তিথি কলটা কেটে দিয়েছে। মোবাইলে রিংটোন বেজে উঠতে চমকে কলটা রিসিভ করলো আয়ান।
-হ্যাঁ---। হ্যাঁ তিথি বল?
-কি রে ভাইয়া? ছবি দেখেই হারিয়ে গেলি নাকি? কতক্ষণ ধরে ডাকছি সাড়াই দিচ্ছিস না?
- না মানে! এটা কার পিক পাঠালি?
-আপুটার নাম মায়রা। তোর রিএ্যাকশন দেখে মনে হচ্ছে এবার একটা ভাবি পাবো---।
-তিথি?
-ও আচ্ছা? পছন্দ হয় নি না? তাহলে মা বাবাকে বলে দিচ্ছি তুই আসবি না--। আর আপুকে দেখতেও যেতে পারবি না। পছন্দ হয় নি---।
-বেশি কথা বলিস কেন? বলেছি আমি পছন্দ হয় নি?
-ওহো! তাহলে পছন্দ হয়েছে?
-তিথিইইইই!
-হি হি-----। ওই ভাইয়া শোন তোকে এতো মিষ্টি একটা আপুর ছবি আগেভাগে দেখিয়ে দিলাম এইজন্য আসার সময় এক বক্স কিটক্যাট নিয়ে আসবি--। ওকে?
-ঘুষ চাইছিস?
-হুম---। বলা যায়--।
-আচ্ছা রে নিয়ে আসবো----।
-আর তাড়াতাড়ি আসবি ভাইয়া। অলরেডি ১১ টা বাজে--। পরে দেখা যাবে তুই লেইট করে আসলি আর ওদিকে আপুটাকে কেউ উঠিয়ে নিয়ে চলে গেল---।
-তোর চকলেট চাই না রে?
-এই এই ভাইয়ু---? চাই তো। আচ্ছা তাড়াতাড়ি আস। বায়--।
তিথি কলটা কাটতেই আয়ান মোবাইলের স্ক্রিনে মায়রার ছবির দিকে তাকালো। এই মেয়েটা ওকে এতো টানছে কেন! কি আছে এর মাঝে! আর কেমনই বা হবে মেয়েটা! হবে কি ওর মনের মতো? আয়ান আবার কললিস্টে গিয়ে আরিশাকে কল করলো। দুটো খুশির খবরই এই পাগলীটাকে না দেয়া পর্যন্ত আয়ানের বোধ হয় খাবার হজম হবে না আজকে। এই দুনিয়ায় এই একটা মানুষই আছে যার কাছে আয়ান কোন রাখঢাক ছাড়াই সব কথা শেয়ার করতে পারে। আজকে কেন শেয়ার করবে না? মেয়েটা না শুনতে চাইলেও সারাজীবন এভাবে সবকথা ওর সাথে শেয়ার করবে আয়ান। জোর করে হলেও। ভাবতে ভাবতেই মুচকি হেসে আয়ান আরিশাকে কল করে মোবাইল কানে লাগালো।
০২!!
বেশ কয়েকবার কল যাওয়ার পর আরিশা কল রিসিভ করলো।
-হ্যালো আয়ান? কংগ্রাচুলেশনস।
-হোয়াট!
-'সেইফি ফর উইমেন'এর প্রজেক্টটা পেয়ে গেছি না আমরা?
------------------------------
-তুই না বললেও আমি জানি প্রজেক্টটা আমরাই পেয়ে গেছি। তুই প্রজেক্টে হাত দিবি আর সেটা হবে না! টোটালি ইম্পসিবল ইয়ার। কি রে? কথা বল?
-তোকে আমি সকালে ৯ টার মধ্যে অফিসে আসতে বলেছিলাম। আর সেখান থেকে বোর্ড মিটিংয়ে! আর তুই এই ১১ টা বাজেও বাসায় পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিস?
-হি হি। আমি জানি আমি না গেলেও তুই সবটা সামলে নিতে পারবি৷ আর গতকাল অনেক রাত জেগেছিলাম--।
-কেন? রাত জেগে প্রেম করেছিলি?
-হুহ---। আমি করবো প্রেম!
-তো! কি করলি?
-তাওহীদ কল করেছিল---।
-ওহো! তুমি তো প্রেম করো না--। ভুলেই গেছিলাম--। তুমি তাওহীদ ভাইয়ের সাথে রাত জেগে----।
-ওই পোলা! আজাইরা কথা বলবি না। ওই প্যারা একটা মাথা খারাপ দিসে রাতে--। এখন তুই শুরু করবি না।
-আচ্ছা মেরি মা--। কিছু বলবো না। তো তাওহীদ ভাই কবে আসবে দেশে?
-আমি কি জানি! আজব!
-ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করিস নি?
-আমার যেন কোন দুনিয়ার ঠেকা পড়সে---।
-আরিশা-----! নিজেকে কি রোবট প্রমাণ করতে চাস? অসহ্য!
-হুহ---।
-তুই আধা ঘন্টার মধ্যে অফিসে আস--। কথা আছে তোর সাথে--। আর আমি ১২ টা করে বের হবো--।
-আজকেই যেতে হবে! আমার ঘুম ধরছে প্রচন্ড----।
-আরিশা? বেশি বাড়াবাড়ি করলে বাসায় এসে ধরে নিয়ে যাব বলে দিলাম---।
-উফফফ---। আসছি---। ওয়েট কর----।
আরিশার সাথে কথা বলে আয়ান নিজেও অফিসে এলো। পিয়নকে কফি দিতে বলায় পিয়ন কফি দিয়ে গেছে। সেটা নিয়ে বসে থাকতে থাকতেই আয়ান বারবার ঘড়ি দেখছে। এই মেয়েটা কখন আসবে! কখন আয়ান বাসায় যাবে! কখন রেডি হবে! কখন ---! নিজের তাড়াহুড়োয় নিজেই হেসে ফেললো আয়ান। মায়রা নামের মিষ্টি মেয়েটাকে দেখার তর সইছে না কেন জানি। কেন জানি মনে হচ্ছে এই মেয়েটাকে উপরওয়ালা শুধু আয়ানের জন্য স্পেশাল করেই বানিয়ে পাঠিয়েছেন। আয়ান নিজের চিন্তায় এতোই মগ্ন ছিল যে আরিশার উপস্থিতিও টের পায় নি। আরিশা ২ মিনিট আয়ানের মতিগতি বোঝার চেষ্টা করে আয়ানের চোখের সামনে আঙুল দিয়ে তুড়ি বাজালো।
-কি রে? কাকে ভেবে এভাবে মিটিমিটি হাসছিস? হুম হুম? কে এলো আর আমি জানতেই পারলাম না!
-এই তোর আসার সময় হলো! অলরেডি পোনে ১২ টা বাজে--। উফফফ---।
-ওরে বাবা! জনাব আয়ান আহমেদের আজ এতো তাড়া! তা কিসের তাড়া জনাব! গার্লফ্রেন্ড ওয়েট করছে?
-না রে! হবু বউ ওয়েট করছে--।
-হোয়াট! আমাকে না জানিয়ে সব ফাইনাল! কি হারামি রে তুই!
-নাটক কম করবি---৷ ধর দেখ--। কিছুই ফাইনাল হয় নি--। একটু পরে ওদের বাসায় যাচ্ছি--। তোর কেমন লাগলো বল---।
আরিশা মোবাইলটা নিয়ে ছবিটা দেখায় মন দিলো৷ মনোযোগ দিয়ে দেখলো ছবির মেয়েটাকে। আয়ানের যেমন পছন্দ তেমনই সাদামাটা একটা মেয়ে। চোখে কাজল, ঠোঁটে হালকা রঙা লিপস্টিক আর কপালে ছোট্ট একটা টিপ। অথচ এই সিম্পল মুখটাতেও যেন কিসের একটা মায়া খেলা করছে। যেন রাজ্যের অভিমান, কৌতূহল জমা হয়ে আছে চোখে মুখে। আরিশা মুচকি হাসলো। আয়ানকে মোবাইলটা ফিরত দিয়ে আয়ানের মুখের দিকে তাকালো। ছেলেটার মুখে আজকে অন্যরকম একটা চাঞ্চল্য খেলা করছে।
-আয়ান? তোকে দেখে তো মনে হচ্ছে এবার বিয়েটা করে ফেলবি!
-আমারও তেমনই মনে হচ্ছে---। মনে মনে যেমন একজনকে কল্পনা করেছি মায়রা হুবহু তেমন---।
-আচ্ছা? ম্যাডামের নাম তাহলে মায়রা?
-হুম---।
-তোর সাথে মানাবে বেশ--৷ দেখিস আবার ওকে পেয়ে আমাকে ভুলে যাস না---।
আয়ান হেসে আরিশার মাথায় একটা গাট্টা মারলো।
-হ-। তোরে তো ভুলেই যাব--। মায়রাকে কেমন লাগলো?
-বেশ মিষ্টি মেয়েটা--। ভিষণ পছন্দ হয়েছে আমার৷ আর একেবারে তোর মনের মতো--। নেচারাল বিউটি--। কাজল, টিপ, লিপস্টিক-এসব ছাড়া আর কোন সাজ নেই--। অথচ কি মায়া লাগছে মুখটা---।
-হুম---। কথাবার্তা পাকা হলে কার্ড দিতে বাসায় যাবো--। আন্টি আর তোকে কিন্তু আসতেই হবে আমার বিয়েতে-। কাজ টাজ করবি সব। হাজার হোক পাত্র পক্ষ তো---।
-ওই? খুন করে ফেলবো বাসায় আম্মুকে কার্ড দিতে গেলে--। তোর বিয়ে হবে শুনলে আমার উপর দিয়ে তুফান, সাইক্লোন, সিডর সব একসাথে যাবে---।
-ঠিকই হবে। এবার অন্তত বিয়েটা কর? কম তো বয়স হয় নি?
-কাকে বিয়ে করবো? তুইও তো তোর স্বপ্নের নায়িকা পেয়ে গেলি! মা তো চাইছিল যদি তুই আমাকে বিয়েটা করতি---?
-হুম--। তোকেও বিয়ে করা যায়---। তুই দেখতেও মাশাল্লাহ! কারো থেকে কম যাস না--। কিন্তু আমার কি কপাল দেখ! আমার মতো হ্যান্ডসাম একটা ছেলেকেও তোর বিয়ে করতে ইচ্ছে হয় না--।
-আয়ানইয়্যা----। মারি ফেলবো একদম বাজে কথা বললে---। আর বাচ্চু? আমাকে বিয়ে করলে তোমার মায়রা ম্যাডাম কোথায় যাবে?
-দুইটারে নিয়ে থাকবো আর কি--। হা হা হা---।
-যা তো ফাজিল----। বয়েই গেছে আমার তোকে বিয়ে করতে।। হুহ।। আর ওই? তুই না ১২ টায় বের হবি? এখন কয়টা দেখ?
-ওহ শিট--। সব তোর দোষ হারামি--। দশ মিনিট লেইট--। এই শোন? প্রজেক্টটা তো পেয়ে গেছি--। তুই ব্রেসলেটের ডিজাইন আর ফিঙ্গারপ্রিন্টের দিকটা সামলা। বাকিগুলো আমি দেখবো-। আসছি রে--। বায়?
-আয়ান? শোন না? মায়রা ভাবিকে আমার তরফ থেকে একটা মেসেজ দিস---।
-কি?
-দিবাশা কোম্পানির পক্ষ থেকে ম্যাডামকে অনেক অনেক অভিনন্দন নতুন জীবনের। অর্নামেন্ট আর ইনস্ট্রুমেন্টের এক অদ্ভুত মেলবন্ধন-দিবাশা---।
-কোম্পানির ট্যাগ লাইন শোনাবো ওকে?
-হুম--। যদি আমাদের জয়েন করে আর কি কখনো---।
-হা হা হা--। ওকে। শুনিয়ে দিবো।
আয়ান বাসায় ফিরে ফরমাল গেটআপ ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে রেডি হতে একটু দেরি হয়ে গেল। সাদা শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে ড্রইং রুমে এসে একেবারে হা হয়ে গেল আয়ান। মা, বাবা, তিথি- তিনজনই একেবারে রেডি হয়ে বসে আছে।
-ও মাই গড! এটা কি সম্ভব! মা? তিথি! বাবা! সবাই সময়ের মধ্যে রেডি! স্ট্রেঞ্জ!
-ভাইয়া? তোকে মাইরা লাগাবো--। এতো দেরি করলি কেন? আমি সেই কখন থেকে বসে আছি ভাবি দেখতে যাবো---।
-তিথি?
-ওই ওই? তিথি তিথি করবি না একদম---৷ আমার ওই মিষ্টি মেয়েটাকেই ভাবি করে চাই মানে চাই---।
-বাব্বাহ! ছবি দেখেই এতো পছন্দ!
-আরে না তো---। তোর তো নাকি মেয়ে পছন্দ হয় না---। তাই তোর ডায়েরি পড়ে জানলাম কেমন মেয়ে পছন্দ--। তারপর এই আপুটাকে পিপীলিকাতে সার্চ করে খুঁজে বের করেছি---। আর সেদিন আপুটা আমাকে ফুসকা খাইয়েছে জানিস?
-তবে রে শয়তান মেয়ে?
আয়ান তিথিকে ধরার জন্য এগুতেই তিথি মুখ ভেংচি দিয়ে ছুটে একবার মায়ের একবার বাবার পিছনে লুকাতে লাগলো। আয়ানও তিথিকে ধরার জন্য ছোটাছুটি করছে। কিন্তু এই পিচ্চিকে ধরা কি আর চারটি খানি কথা! কলেজে পড়ছে। অথচ মেয়েটার বাচ্চামিগুলো আজও গেল না৷ তিথিকে ধরতে না পেরে বেচারা আয়ান ক্ষান্ত দিয়ে সোফায় বসে হাঁফাতে লাগলো।
-এই? ভাইয়া ভাইয়া? শোন না?
-হুম---। বল।
-আমি বুঝসিস ভাবিকে একেবারে পার্লারের মতো করে সাজার ট্রেনিং দিয়ে দিবো--। কেমন?
-তিথিনিইইইই?
-হি হি হি------।
-এই তোরা দুটো থাম তো? ১ টা বেজে যাচ্ছে সেদিকে হুঁশ নেই? চল না বাবা? ওরা কখন থেকে কল করছে!
-মা? একে মানা করো আমার সাথে লাগতে---।
-আয়ান---। চুপ---। চল তাড়াতাড়ি--।
-হুম----।
আয়ান গাড়িতে বসে ড্রাইভ করতে লাগলো। আর পাশে বসে তিথি মহা আনন্দে রাস্তা বলে যাচ্ছে। আর সাথে মায়রার সাথে দেখা হওয়ার ঘটনা। আয়ান অবাক হয়ে তিথির কাছে মায়রার ঘটনা শুনছে৷ আর কল্পনা করার চেষ্টা করছে। পিছনের সিটে আয়ান তিথির বাবা মা হাতে হাত রেখে ছেলে মেয়ের পাগলামিগুলো উপভোগ করছেন।