১৭!!
কিশোর এতো হাইপার হয়ে কাকে কল করছে বা কেন এখন এমন গুম হয়ে বসে আছে তার কিছুই তামান্না বুঝতে পারছে না। দীপ্তিও সমানে কিশোরকে নাড়িয়ে ধাক্কা দিয়ে এটা ওটা জিজ্ঞেস করছে। তাতেও কিশোরের কোন হুঁশ নেই দেখে তামান্নাও কিশোর পাশে বসে পড়লো। দীপ্তি ঠোঁট ফুলিয়ে তামান্নার কোলে এসে মুখ লুকিয়ে কান্না শুরু করেছে। তামান্না দীপ্তির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে কিশোরের দিকে তাকালো।
-ও মিস? আমি কি করেছি? বাবাই আবার আমার সাথে কথা বলছে না কেন?
-কাঁদে না বাবুসোনা। মিস দেখছি। তুমি এক দৌঁড়ে গিয়ে দেখে এসো তো দিম্মা কি করছে---। এসেই দেখবে বাবাই আবার আদর করবে কেমন?
-সত্যি?
-হ্যাঁ মামনি। তিন সত্যি--।
-প্রমিস?
-হ্যাঁ বাবা। প্রমিস---।
-ইয়েএএ। আমি এক্ষুণি দেখে আসছি----।
দীপ্তি তামান্নার কোল থেকে এক লাফে উঠে গিয়ে ছুটতে ছুটতে ফালেহা চৌধুরীকে খুঁজতে চলে গেল। তামান্না কিশোরের কাঁধে হালকা করে হাত রাখলো।
-শুনছেন? কি হয়েছে৷ বলবেন প্লিজ?
-হুম?
-আপনি কথা বলছেন না দেখে দীপ্তি তো কাঁদতে কাঁদতেই চলে গেল--।
-কোথায়? কোথায় গেল আমার দীপ্তি?? দীপ্তি? দীপ্তি মামনি??
-আরে! এমন করছেন কেন? ওকে ম্যাডাম কি করছে দেখতে পাঠিয়েছি। এক্ষুণি চলে আসবে--। আপনার কি হয়েছে বলুন তো? কিসের চিঠি এসেছিল?
-ও আমার দীপ্তিকে নিয়ে যাবে--। আমি-আমি-আমি কি করবো এখন?
-কিসব বলছেন? নিবে কিভাবে? বাড়ি ভর্তি এতো মানুষ আমরা। নিতে চাইলেই হলো নাকি---।
-সুপ্তিকে এখন আর গায়ের জোরে আটকানো সম্ভব না মিস তামান্না। ও দীপ্তির কাস্টাডি চেয়ে কেইস করেছে---।
-সে কি!? আপনি লইয়ারের সাথে কথা বলুন----।
-কেইসটা কালই কোর্টে উঠছে তামান্না। আর অনেক চেষ্টা করেছি। কেউই এই শেষ মূহুর্তে রাজি হচ্ছে না--।
-এখন কি হবে!!
-কি আর হবে? চোখের সামনে দীপ্তিকে ওই ডাইনিটা নিয়ে চলে যাবে।-----আমি মানতে পারছি না এটা---। কেন কেন কেন?? কি অন্যায় করেছি আমি? আমার সাথেই কোন এমনটা হবে? কেন আমি আমার মেয়েটাকে ------।
-স্যার? বড় আপাকে একবার বলে দেখবো? উনিও ওকালতি নিয়েই পড়েছেন। অনেক বছর প্রাকটিস ও ছিল। দীপশিখার কারণে পরে আর তেমন সময় দেয়া হয়না ওকালতিতে--। কিন্তু----।
-উনি রাজি হবে বলে আপনার মনে হয়?
-----উমমম। চেষ্টা করে দেখতে পারি আমি। বড় আপা আমার কথা ফেলতেই পারবেন না। আমাকে নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসেন উনি---।।
-তাহলে শেষ একবার চেষ্টা করে দেখুন। আমি আর কিছুই ভাবতে পারছি না---।
কিশোর তামান্নার দিকে নিজের মোবাইলটা বাড়িয়ে দিলে তামান্না বড় আপার নাম্বারে কল দিলো। কলটা কয়েকবার বেজেই কেটে গেল। তামান্না কিছু একটা ভেবে দীপশিখার অফিসের নাম্বারে কল দিলো। আর প্রায় সাথে সাথেই কলটা রিসিভও হলো। তামান্না বড় আপাকে সবটা বুঝিয়ে বলতে শুরু করলো। এর মধ্যেই দীপ্তিও আবার ছুটে এসে কিশোরের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। কিশোর মেয়েকে টেনে কোলে বসিয়ে আদর করে দিল।
-বাবাইয়ের উপরে রাগ হয়েছে মামনি? সরি----।
-না তো বাবাই--। রাগ করি নি তো। তুমি কাঁদছ কেন? তুমি কাঁদলে আমার কষ্ট হয় না? জানো না?
-সরি মা। আর কাঁদবো না। তুমি বাবাইকে ছেড়ে কক্খনো কোত্থাও যাবে না বলো?
-স্কুলেও যাবো না?
দীপ্তির কথায় কিশোর হেসে ফেললো। মেয়ের কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে রাখলো কিশোর। কাল কি হবে সেটা কিশোর জানে না। তবে দীপ্তিকে ও কিছুতেই সুপ্তির কাছে যেতে দিবে না। দীপ্তি কিশোরের বুকের মধ্যে থেকে তামান্নার দিকে বারবার তাকাচ্ছে। তামান্নাও খেয়াল করলো ব্যাপারটা। চোখের ইশারায় জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে। দীপ্তি কিশোরের কোল থেকে উঠে গিয়ে তামান্নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
-ও মিস? খিদে লেগেছে তো?
তামান্না তাড়াতাড়ি করে উঠে দাঁড়িয়ে কিশোরকে মোবাইলটা ধরিয়ে দিয়ে দীপ্তির হাত ধরে হাঁটা ধরলো।
-স্যার। আপাকে বাকিটা আপনি বলে দিন। আমি দীপু খাইয়ে দিই--।
কিশোর বড় আপাকে সুপ্তি আর দীপ্তির সবকিছু খুলে বললো। আর বড় আপাও সবটা শুনে কিশোরকে আশ্বস্ত করলেন যে তিনি কেইসটা লড়বেন পরের দিন। আর যাবতীয় ফর্মালিটি সকালেই করে নিবেন। আপাতত কিশোরের পক্ষ থেকে কেইসটা নিচ্ছেন তিনি। কলটা কাটতেই কিশোরের বুক চিরে একটা বড় দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। উকিলের ব্যবস্থা তো হলো। কিন্তু সুপ্তি নিশ্চয়ই কেইসটা জেতার জন্য আটঘাট বেঁধেই নেমেছে। নইলে এভাবে লাস্ট মিনিটে কেইসের নোটিশটা কিশোরকে পাঠিয়ে নিজের ক্ষমতা দেখাতো না। দীপ্তিকে নিজের কাছে নিতে আর কি কি করতে পারে সুপ্তি সেটাই একমনে ভাবার চেষ্টা করছে কিশোর।
১৮!!
পরের গোটা একটা সপ্তাহ কিশোর, তামান্না আর দীপ্তির উপর দিয়ে মোটামুটি ঝড় বয়ে গেছে। এই ছোট্ট মেয়েটাকেও প্রতিদিন আদালতে যেতে হয়েছে। যে মানুষটাকে ও চিনে পর্যন্ত না, জন্মের পর একবার মুখটা পর্যন্ত দেখে নি, সেই মহিলাই আজ ওর কাস্ট্রাডি দাবি করছে। তার চেয়ে বড় কথা হলো দীপ্তি জানেই না এখানে হচ্ছেটা কি। এক একদিন এক এক সময়ে দীপ্তি কিশোরের বা তামান্নার কোলে চেপে আদালতে আসে। এতো ভিড়, ধাক্কাধাক্কি দেখে মেয়েটা ভয়ে চুপসে যায়। কখনো তামান্নার শাড়ির আঁচলে মুখ লুকিয়ে চুপটি করে বসে থাকে। কখনো ফুঁপিয়ে কান্না করে। আর কিশোর আর তামান্না দুজনেই অপারগ হয়ে এই ছোট্ট ফুলের মতো বাচ্চাটার দিন দিন ভেঙ্গে পড়া দেখে। কি করবে! তাদের হাতে সুপ্তির বিরুদ্ধে তো কোন প্রমাণই নেই।
দীপ্তির কাস্টাডি কেইসের আজ সপ্তম দিন। বড় আপা সুপ্তির ধুরন্ধর উকিলের সামনে একয়দিন একেবারে নাকানিচুবানি খেয়েছেন বলা চলে। সুপ্তির উকিল বিভিন্ন কাগজপত্র দেখিয়ে, ডাক্তারের সার্টিফিকেট দেখিয়ে আদালতে এটা প্রমাণ করে দিয়েছে যে সুপ্তির মানসিক কিছু সমস্যার কারণে কোন এক মানসিক হাসপাতালে ভর্তি ছিল। এতো বছর ডাক্তারদের অক্লান্ত পরিশ্রম আর চিকিৎসার কারণে সুস্থ হয়েছে ও। আর সুস্থ হতেই প্রথমেই ছুটে এসেছে নিজের স্বামী সন্তানের খোঁজে। অসাধারণ গল্প এবং তার এতো বছরের হাসপাতালে থাকার প্রমাণও আছে সুপ্তির কাছে৷ তাই বড় আপা কিছুতেই এটা প্রমাণ করতে পারলেন না যে এই মহিলা ইচ্ছে করে নিজের সদ্যজাত সন্তানকে রেখে চলে গিয়েছিল।
যা হোক। কিশোর দীপ্তিকে কোলে করে আদালতে বসে আছে। তামান্না এখনো এসে পৌঁছায় নি। জজ আসার পর দু পক্ষের জেরা পাল্টা জেরা শুরু হলো। আজ সুপ্তির উকিল কিশোরকে কাঠগড়ায় ডাকালেন। কিশোর দীপ্তিকে চেয়ারে বসিয়ে এসে নিজে কাঠগড়ায় এসে দাঁড়িয়েছে। শপথ বাক্য পাঠের পর সুপ্তির উকিল কিশোরের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের একটা হাসি দিলেন।
-তা কিশোর চৌধুরী? আপনার মিথ্যে রটানো গল্পটার পিছনের সত্যিটা কি আপনি নিজে বলবেন নাকি আমি আদালতের সামনে বলবো সবাই?
-মানে?
-ওহ! বুঝেন নি না? কি ইনোসেন্ট! সুপ্তির নিজের সন্তানকে রেখে চলে যাওয়ার পিছনের গল্পটা আপনি বলবেন নাকি আমি বলবো?
-আপনিই বলুন। আমি নাহয় শুনি-৷
-ইউর অনার। এই যে এখন ভালোমানুষের মতো দাঁড়িয়ে থাকা লোকটিকে দেখছেন? তার কারণেই আমার ক্লাইন্ট নিজের সদ্যজাত সন্তানকে রেখে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিল--। কারণ সুপ্তির কনসিভের নিউজটা জানার পর উনি চান নি এতো তাড়াতাড়ি অর্থাৎ বিয়ের এক বছরের মাথায়ই উনি সন্তানের সো কলড দায়িত্ব নিতে চান নি---।
-হোয়াট??
-ইয়েস। আর আমার ক্লাইন্ট মিসেস সুপ্তিকে ফোর্স করেন বাচ্চাটা এবোর্ট করার জন্য। এই অমানবিক জঘন্য কাজটায় রাজি না হওয়ায় উনি আমার ক্লাইন্টের উপরে অকথ্য নির্যাতন শুরু করেন। শেষে এমনই একদিন জনাব কিশোর সাহেব সুপ্তিকে জোর করে হসপিটালে নিয়ে যান এবোরশন করার জন্য। আমি মাননীয় আদালতের কাছে হসপিটালে কিশোরের এবোরশনের জন্য ডক্টরের এপয়নমেন্টের প্রমাণপত্র আগেই পেশ করেছি--।
-মিথ্যে বলছেন আপনি----।
-চিৎকার করবেন না মিস্টার কিশোর। ইওর অনার, কথায় আছে, যাকে রাখে সাঁই মার সাকে না কোয়ি। তেমনটাই ঘটেছে দীপ্তির কেইসটায়। সুপ্তির প্রেগনেন্সির থার্ড মান্থ রানিং ছিল বিধায় ডাক্তাররাও এবোরশনের অনুমতি দেয় নি। আর সেইজন্যই আজ এই শিশু দীপ্তি পৃথিবীর আলো দেখতে পেয়েছে। কেমন বাবা আপনি? নিজের সন্তানকে খুন করতে চেয়েছিলেন আপনি? এরপরের ঘটনা আরো মর্মান্তিক ইওর অনার৷ কিশোর সাহেব সুপ্তিকে সন্তানকে জন্ম দিতে দিলেও এতোটা প্রেশারের মধ্যে রেখেছিলেন যে-----?
-যে তিনি নিজের সদ্যজাত সন্তানকে রেখে পালিয়ে যান। তাও আবার একটা চিঠি লিখে? রাইট মাই ডিয়ার লার্নেড ফ্রেন্ড??
এতোক্ষণে বড় আপা উঠে দাঁড়িয়ে মুখ খুলেছেন। ইশারায় কিশোরকে ভরসা দিয়ে একবার পিছনের দিকে তাকিয়ে তামান্নাকেও দেখে নিলেন। লাস্টের রো তে তামান্না এসে বসেছে। আর কেউ একজন এসে বড় আপার হাতে কিছু কাগজ এনে দিয়েছেন। বড় আপা একবার চোখ বুলিয়ে সেটা পেস্কারের হাত দিয়ে জজের কাছে দিলেন।
-আমরা এ কয়দিন যাবৎ এক তরফা একটা গল্প শুনলাম। সুন্দর ছিলো গল্পটা। তবে সমস্যা হলো এটা আদালত এখানে গল্প শুনে নষ্ট করার মতো সময় নিশ্চয়ই মাননীয় জজসাহেবের হাতে নেই। তাই ভনিতায় না গিয়ে সরাসরি ঘটনায় আসছি। আমার বিজ্ঞ বন্ধুর উদ্দ্যেশ্যে বলছি। আজ থেকে আনুমানিক ছয় বছর আগে সেইদিন হসপিটালে কি ঘটেছিল সেটা জানাতে সুপ্তির গাইনোকোলজিস্ট নিজে আজ আমাদের মাঝে এসেছেন। কাঠগড়ায় উনাকে ডাকার অনুমতি চেয়ে নিচ্ছি মাননীয় আদালতের কাছে---।
-অনুমতি দেয়া হলো----।
-ধন্যবাদ ইওর অনার---।
তামান্নার পাশ থেকে ডক্টর মহিলাটি যখন উঠে কাঠগড়ায় এলো তখন তাকে দেখেই সুপ্তির মুখটা কেমন ফ্যাকাশে হয়ে গেল। কিশোর খানিকটা শান্ত হয়ে এসে দীপ্তির পাশে এসে বসলো। বড় আপা সুপ্তির ডাক্তারের কাঠগড়ার সামনে এসে দাঁড়ালেন।
-আপনি আমাদেরকে যা যা বলেছেন তা যদি আরেকবার আদালতে সবার সামনে বলতেন--। আপনি ঠিক কি করে আমার ক্লাইন্ট কিশোর চৌধুরী আর সুপ্তিকে চিনেন?
-সুপ্তি মানে মিসেস কিশোর চৌধুরী আমার পেশেন্ট ছিলেন। সেও আজ থেকে ছয়-সাত বছর আগের ঘটনা। উনার কনসিভ থেকে ডেলিভারি পর্যন্ত কেইসটা আমিই হেন্ডেল করেছিলাম---।
-এতোবছর পরও আপনার উনাদের চিনতে একটুও বেগ পেতে হলো না? তা কেন?
-কিছু কিছু হয়ই এমন--। কেইসটা স্পেশাল ছিল। কারণ সাধারণত সব ক্ষেত্রেই স্বামীরা মেয়ে সন্তান বলে চেকআপের পর বাচ্চা এবোর্ট করে দিতে চায়। আর স্ত্রীরা সেটা জন্য যতটুকু সম্ভব প্রতিবাদ করে--। আর এই কেইসে--। মিসেস সুপ্তি চৌধুরী নিজের ফিগার মেনটেইন করার জন্য সন্তানই নিতে চান নি--।
-এসব কথা আপনাকে মিস্টার কিশোর বলেছিলেন?
-জি না--। সুপ্তির প্রেগ্ন্যাসির টুয়েলভথ উইক মানে তৃতীয় মাসে উনারা আমার হসপিটালে আসেন। তখন সুপ্তি নিজের মুখে এবোরশনের কথাটা আমাকে বলেন। আমরা উনাকে অনেক বুঝিয়েছি। আমি, আমার নার্স, ইভেন আমার সামনে কিশোর সাহেবও উনাকে অনেকবার বলেছেন---। কিন্তু মিসেস সুপ্তি এতোটাই জেদ ধরেছিলেন এবোরশনের জন্য যে আমরা শেষ পর্যন্ত হাল ছেড়ে দিয়েছি---।
-তাহলে শেষ পর্যন্ত এবোরশনটা হলো না কেন?
-হলো না বললে ভুল হবে। একচুয়েলি আমরা এবোরশনটা হতে দিই নি। এমন একজন স্বেচ্ছাচারিতা মহিলার জন্য একটা ফিটাসকে তো আমরা মেরে ফেলতে পারি না--। তাই আমি আর আমার নার্স ইচ্ছে করেই বলেছিলাম এবোরশন সম্ভব নয়। যদিও উনার হাসবেন্ড এসব কিছুই জানতেন না। যে মহিলা ফিজিকাল ফিটনেসের কথা ভেবে নিজের সন্তানকে মেরে ফেলতে চাইছিলেন তিনি নিশ্চয়ই নিজের শরীরের ক্ষতি করে বাচ্চাটা মেরে ফেলবেন না--।
-এসব মিথ্যে কথা। সব--সব এদের বানানো ষড়যন্ত্র---। আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে---।
সুপ্তি হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠে কথাটা বলতেই সবাই ওর দিকে ফিরলো। ডাক্তার এতোক্ষণে সুপ্তিকে দেখে একটু হাসলো।
-কিছুদিন আগে উনি আবার আমার কাছে এসেছিলেন। অনেক ইনিয়ে বিনিয়ে বুঝাতে চাইলেন যে, তখন উনার মেনটাল কন্ডিশন ভালো ছিল না। তাই এমনটা করেছেন। উনি ইচ্ছে করে বেবিকে হসপিটালে ফেলে যান নি। রোগের কারণে নাকি চলে গেছেন। এরকম একটা যেন প্রেসক্রিপশন করে দিই তার জন্য--।
-তারপর? আপনি কি করলেন?
-নিজের হাতে বাচ্চাটাকে পৃথিবীর আলো বাতাস দেখিয়েছি আমি। জন্মের পর বেশ অসুস্থই ছিল। মিস্টার কিশোর আর উনার মা, আমরা ডাক্তার নার্স সবাই মিলে শুধু কি করে বাচ্চাটা বাঁচানো যায় সেই কাজেই লেগে ছিলাম। টানা ২৪ ঘন্টার মতো পর বাচ্চাটা স্টেবল হয়। ----। আর বাচ্চার মা একটা চিঠি ছেড়ে ততক্ষণে চলে গেছে। চিঠিটা আমিও দেখেছিলাম। আর একজন মেন্টাল পেশেন্ট কি লিখতে পারে না পারে সেটা খুব ভালো করেই জানা আছে আমার---।
-তার মানে আপনি বলতে চাচ্ছেন উনি মেন্টালি ডিস্টার্ব ছিলেন না??
-না-----।
ডাক্তারের শেষ উত্তরটা শুনে সুপ্তি ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়ে কান্না শুরু করলো।
-ওরা সবাই মিলে আমার কাছ থেকে আমার মেয়েটাকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। কিশোরের কাছ থেকে তো অনেক আগেই দূর করেছে। আর এখন আমার মেয়েটা যখন আমার কাছে থাকতে চাইছে তখনও---। ও তো আমাকে একেবারে ছেড়ে না দিয়েও আরেকজনকে নিয়ে সুখেই আছে। তবে আমার মেয়েটাকে কেন আমায় দিয়ে দিচ্ছে না? বিশ্বাস করুন জজ সাহেব আমি আর কিছু চাই না। আমার মেয়েকে নিয়ে অনেক দূরে চলে যাবো। ওদের কাউকে একটুও জ্বালাবো না---।
সুপ্তির কথা শুনে পুরো কোর্ট সুদ্ধ মানুষ থ হয়ে নিজেরা কথা বলাবলি করতে শুরু করেছে। কিশোর, তামান্না আর বড় আপা তিনজনেই থমকে গেছে। আর জজ 'অর্ডার অর্ডার' চেঁচিয়ে যাচ্ছেন। সেদিকে হুঁশ নেই সুপ্তির। সে ফ্লোরে বসে কেঁদেই চলেছে। আপাতত কান্নাই যে তার শেষ আর একমাত্র অস্ত্র।