৩১!!
তামান্না চোখ মুখে একটু পানি দিয়ে মুখটা টাওয়ালে মুছে ওয়াশরুমের দরজাটা খুলে একটু উঁকি দিলো। নাহ। মানুষটা এখন রুমে নেই৷ তামান্না তাই তাড়াতাড়ি ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে একবার ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় নিজেকে দেখে শাড়িটা ঠিক আছে কিনা দেখে নিলো। সব ঠিক ঠাকই আছে৷ এখন ভদ্রলোক এসে পড়ার আগেই পালাতে পারলেই বাঁচে তামান্না। এসব ভেবে তামান্না কয়েক পা এগোতেই বিছানার দিকে চোখ পড়লো। বিছানার উপরে একটা প্যাকেট রাখা৷ এটা কি ওরা যখন রুমে এসেছিল তখনও এখানেই ছিল? খেয়াল করে নি। তাই মনে পড়লো না তামান্নার। প্যাকেটটায় কি আছে দেখার কৌতূহল আর চেপে রাখতে পারলো না তামান্না। বেশ মোটাসোটা প্যাকেটটা। খুলতে একটু বেগ পেতে হলো ওকে। আর প্যাকেট খুলে আরো একবার হা হয়ে গেল তামান্না।
প্যাকেটটায় একটা লাল টুকটুকে বেনারসি। শাড়িটা মেলে ধরে একেবারে যারপরনাই মুগ্ধ হয়ে গেল তামান্না। সোনালী সুতোর পান পাতা খাঁজ আঁকা পুরো বেনারসি জুড়ে। আর মোটা সোনালী পাড়ের সাথে সোনালী আঁচলটা যেন একটা বিশেষত্ব ফুটিয়ে তুলেছে শাড়িটায়। একদম বিয়ের দিনের মতো অনুভূতি হচ্ছে তামান্নার। ইচ্ছে করছে এক্ষুনি শাড়িটা পড়তে। বেনারসির সাথে ম্যাচিং করা ব্লাউজ আছে প্যাকেটে। তামান্না আর ভাবনায় না গিয়ে ওয়াশরুম থেকে আগের শাড়িটা বদলে ব্লাউজ পড়তে চলে গেল। এতোক্ষণ যে তাড়াটা ছিল নিচে ছোটার, সেটা বেমালুম ভুলেই গেছে মেয়েটা।
শাড়িটার এক কোণা কোমড়ের কাছে গুঁজতে গুঁজতে ভাবতে লাগলো তামান্না। এই শাড়িটা কে রেখেছে? আসলেই ওর জন্যই রাখা তো? নাকি? নাহ!, সেরকম হলে এভাবে এই রুমে রাখতো না নিশ্চয়ই। কিন্তু রাখলো টা কে শাড়িটা? কিশোর? সে তো বলেছিল আরো সারপ্রাইজ বাকি আছে৷ এটাই কি তবে তার সারপ্রাইজ? নাকি মা রেখেছে? অবশ্য মা রাখলে তো বলে দিতো! তাহলে আর কে রাখতে পারে?
এসব ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ কোমড়ে হেঁচকা টানে তামান্না একটু আঁতকে উঠে মানুষটার দিকে তাকালো। কিশোর এক মনে নিজের কাজে ব্যস্ত৷ মানে তামান্নাকে শাড়িটায় পড়ানোয় ব্যস্ত। কিন্তু সেসব তামান্নার এবার খেয়াল নেই। তামান্না মুগ্ধ হয়ে কিশোরকে দেখছে। কিশোর একেবারে রেডি হয়ে এসেছে। লাল খয়েরী রঙা একটা পাঞ্জাবি পড়নে কিশোরের। পাঞ্জাবির পুরোটা জুড়ে গোল্ডেন কালারের রেশমি সুতো দিয়ে ডিজাইন করা। পড়নে গোল্ডেন পাজামা আর গলায় ঝুলছে হালকা বর ওড়না টাইপের কিছু একটা। তামান্না সব ভুলে হা করে কিশোরের দিকেই তাকিয়ে আছে। লোকটাকে বিয়ের দিনের মতে আজও ভিষণ সুন্দর লাগছে৷ আর তার ঠোঁটের কোণের সেই ঘায়েল করা হাসি! তামান্না তো তাতেই কাবু!!
-হায় রে! শাড়িটা ঠিক করে গুঁজতেও পারে না--। একে নিয়ে যে কি করি আমি? আমি কি সবসময় শাড়ি পড়িয়ে দেয়ার জন্য থাকবো নাকি?
-কেন? কোথায় যাবেন আপনি?
-যাবো যেদিকে দুচোখ যায়--।
-কেন!!?? আমি কি দোষ করেছি?
-আপনার দোষ করার কি আছে? দোষ তো আমার--। তাইতো কেউ আমার কথার উত্তরটা এখন পর্যন্ত দেয় নি---। হুহ----।
প্রশ্নের উত্তরের কথাটা শুনে তামান্নার হুঁশ হলো। বেচারি তাড়াতাড়ি মুখ নামিয়ে নিয়ে লজ্জায় কুঁকড়ে যাওয়ার দশা হলো। এতোক্ষণে টের পেয়েছে যে কিশোর ওর কুঁচি গুছিয়ে দিচ্ছে এই মূহুর্তে। কিন্তু উনি তো রুমে ছিলেনই না। আর রেডি হলেনই বা কোথায়!!
-আপনি?
-হায় রে! কি ভুলো মন বউটার! হ্যাঁ ম্যাডাম আমি-। কোন দুনিয়ায় থাকেন যে আমার আসাও টের পান না?
-হুহ--। আপনি এমন কেন করেন বলুন তো? এভাবে হুটহাট আসেন কেন? আর আমাকেই বা এভাবে চমকে দেন কেন?
-কারণ তোমাকে চমকে দিতে আমি ভালোবাসি---। এই যে চমকে গেলে চোখ দুটো একেবারে মার্বেলের মতো গোল গোল করে তাকিয়ে থাকো? সেই অবাক চাহনিটা দেখতে বারবার চমকে দিতে চাই তোমাকে--।
-আমিও মোটেও চোখ গোল গোল করে তাকাই না---।
কিশোর তামান্নার কথাট জবাব না দিয়ে হেসে কুঁচিগুলো তামান্নার পেটের কাছে গুঁজে দেয়ার কাজে মন দিলো। আর কাজটা করতে গিয়ে কিশোরের হাতের স্পর্শ ছুঁইয়ে যাচ্ছে তামান্নার পেটে। তামান্না কেঁপে উঠে শাড়ির কুঁচিগুলো সহ কিশোরের হাত চেপে ধরলো।
-আমি করে নিবো----।
-সেটা হচ্ছে না। এতোক্ষণ ধরে এতো কষ্ট করে খুঁজে খুঁজে শাড়ি কিনলাম আমি--। আমাকে এতো সুন্দর করে শাড়ি পড়িয়ে দিলাম আমি--। এখন তুমি কুঁচিগুলো নিজে গুঁজে নিয়ে পুরো ক্রেডিটটা নিজে নিতে চাও! উহু--। সেটা হচ্ছে না। এতোক্ষণ যখন আমি পড়েয়েছি, তখন বাকিটাও আমিই পড়াবো--। এতে কারো মতামত আমি শুনবো না। তোমারও না--। বুঝেছ?
-দেখুন আমি কোন ক্রেডিট চাই না। আপনার ক্রেডিট আপনিই নিন--। শুধু এই কাজটুকু আমাকে করতে দিন? প্লিজ??
কিশোর ভ্রু কুঁচকে তামান্নার দিকে তাকালো। তামান্না লজ্জায় লাল নীল হচ্ছে দেখে কিশোর বেশ মজা পেল। তাই সেও নাছোড়বান্দার মতো মাথা নাড়লো।
-উঁহু --। সেটা তো হবে না। আর ক্রেডিট কিভাবে নিবো বলো? নিচে গিয়ে সবাইকে কি বলে দিবো যে, বউ শাড়ি পড়তেই পারে না। আমি প্রতিদিন তাকে আদর করে শাড়ি পড়া শিখাই? কিন্তু সে এতো দুষ্টু একটুও শিখে না---। বললে কেমন হয় কথাটা বলো তো তমা?
-কি বলছেন এসব?
তামান্নার গলা দিয়ে আর একটাও শব্দ বের হলো না। কিশোরও তাই আরো একটু তামান্নাকে ছুঁয়ে দিয়ে তারপর শাড়ির আঁচলটা সেট করায় মন দিলো। শাড়িটা ঠিক করে পড়িয়ে দেয়া শেষ হলে কিশোর তামান্নাকে ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে টুলটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে সেটায় বসিয়ে দিয়ে আলমারি থেকে কিছু বের করতে গেল।
-কি করছেন? সবাই নিচে অপেক্ষা করছে--।
-তুমি চুপটি করে ওখানে বসে থাকো। আর সবাই খাওয়া দাওয়া করছে। সুতরাং সেই সময়টুকু তোমাকে একটু আমার পছন্দ মতো সাজিয়ে দেখি কেমন মানায়---।
-কিন্তু-----।
-যতক্ষণ তর্ক করবা, ততক্ষণে আমার কাজও শেষ হয়ে যাবে---।
-ধ্যাত----।
-আর তাছাড়া আজ তো আর সময় পাবো না। অন্য কাজ থাকবে পরে-। তাই এখনই না হয় বউকে মন ভরে দেখে নিই---।
-কি কাজ!
-তমা!! তুমি এতো প্রশ্ন করো বাবা!!
-আর আপনি আমার প্রশ্নের কখনো জবাব দেন না---।
-তুমি আমার প্রশ্নের জবাব দিলে আমিও তোমার সব প্রশ্নের জবাব দিয়ে দিবো--। ওকে?
কিশোর আবার একটা বক্স নিয়ে এসে তামান্নাকে সাজানোয় মন দিলো। কানে একটু ভারি এক জোড়া ঝুমকো, গলায় সোনার নেকলেস, হাতে বেশ কগাছা চুড়ি। এসব পড়ানো শেষ হলে কিশোর বেশ যত্ন করে তামান্নার চোখে মোটা করে কাজল টানলো, ঠোঁট টুকটুকে লাল লিপস্টিকে ফুটিয়ে তুললো আর কপালের মাঝখানে মাঝারি একটা টিপ বসিয়ে দিলো। তারপর দু মিনিট চিন্তা করে মাথা চুলকালো কিশোর।
-তমা? চুলগুলো একটা খোঁপা করো সুন্দর করে--। এই কাজটা আমি পারি না---।
-বাহ! তা জনাব কিশোর চৌধুরী অন্তত একটি কাজ পারেন না--।
-জি। তবে শিখে নিবো--। আর হ্যাঁ ম্যাডাম--। খোঁপা করে দিতে না পারলেও খোঁপায় ফুলের মালা গুঁজে দিতে বেশ ভালোই পারি--। তাড়াতাড়ি করুন এখন---।
-হুম---।
তামান্না একটু হেসে আয়নার দিকে ফিরে চিরুনি নিয়ে চুলটা একটু ঠিক করে নিয়ে হাতে পেঁচিয়ে খোঁপা করা শুরু করলো। আর তামান্না কাজটা করতে করতেই আয়নায় কিশোরের মুখটা লক্ষ করছে। কিশোর ভ্রু কুঁচকে তামান্নার হাতের পেঁচানো খোঁপা করা দেখছে। সম্ভবত আজই সে খোঁপা করার কৌশল রপ্ত করবে, আর কাল থেকে তামান্নাকে নিজের হাতে খোঁপাও করতে দিবে না। কথাটা ভাবতেই অজান্তেই একটা হাসি ফুটে উঠলো তামান্নার ঠোঁটের কোণে। এতোটা পাগলও মানুষ হয়!
৩২!!
তামান্নার খোঁপায় একটা বেলি ফুলের মালা সুন্দর করে জড়িয়ে দিয়েছে কিশোর। তারপর আরেকবার তামান্নার মাথা থেকে পা পর্যন্ত চোখ বুলিয়ে দেখে নিলো কিশোর। তারপর একটু ভাবুক ভঙ্গিতে মাথা নাড়লো। কিশোরের এমন চিন্তিত ভঙ্গি দেখে তামান্নাও নিজেকে একবার আয়নায় দেখে নিলো। বেশ ভালোই দেখাচ্ছে ওকে৷ টুকটুকে লাল বেনারসি আর হালকা সাজে একেবারে নতুন বউয়ের মতো লাগছে। হয়তো বিয়ের দিনের মতো ভারি মেকাপ করলে ব্রাইডাল একটা লুক আসতো। এইটুকুই শুধু পার্থক্য। কিন্তু সাজটা কি কিশোরের মন মতো হয় নি! ভাবতেই মনটা একটু খারাপ হয়ে গেল তামান্নার। কিশোরকে কিছু জিজ্ঞেস করবে কি না সেটাই বুঝতে পারলো না বেচারি।
-উঁহু৷ ইশ! একটা জিনিসের ঘাটতি রয়ে গেছে। একটুও খেয়াল ছিল না আমার। শিট!!
-কি!!
-পরের বার মনে করে নিয়ে আসবো নি--। এখন চলো?
-কিসের কথা বলছিলেন?
-এতোক্ষণ না নাচানাচি করছিলে মা রাগ করবে, সবাই কি ভাববে--। এখন দেরি হচ্ছে না?
-আপনি আমার কোন কথার উত্তর দিবেন না বলে ঠিক করেছেন যখন দিতে হবে না। হুহ। অহেতুক এসব তাহলে আমাকে শোনাতেও আসবেন না--। আপনি থাকুন। আমি গেলাম--।
-আরে তমা? রাগ করে কই যাও? কি মুশকিল!! আরে শোনো না?
-কি?
-তোমাকে একদম নতুন বউয়ের মতো লাগছে। সেদিনও তোমার এই নতুন বউয়ের মায়াময়ী রূপটা আমাকে একেবারে মন্ত্রমুগ্ধ করে দিয়েছিল। ঘোরটা কিছুতেই কাটছিল না--। আজও মনে হয় ঘোর লেগে যাবে তোমার এই সৌন্দর্যে---।
-কি সব বলছেন?
-আর তোমার এই লজ্জা মাখা মুখটা দেখতে কি যে মিষ্টি লাগে৷ আর এই যে হুটহাট রেগে লাল হয়ে যায় মুখটা তখন ইচ্ছে করে----।
-আপনি??
-আমার সামনে এতো রূপের ঢালি মেলে এসো না প্লিজ--। আমি না কোনদিন পাগল হয়ে যাই---।
-সাজটা তো হয়নি ঠিক করে--।
-কে বললো? তোমার সাজে ঘাটতি আছে সেটা তো বলি নি পাগলি। আরেকটা জিনিস লাগতো আমাকে আমার মন মানসী রূপে সাজাতে৷ কিন্তু কপাল মন্দ। জিনিসটার কথা আমার একটুও খেয়ালই ছিল না।
-কি?
-সেটা আপাতত সারপ্রাইজই থাক। পরে নিয়ে আসবো---।
-ওহ----। এটাও সারপ্রাইজ!
-জি---। এখন চলো চলো? সবাই অপেক্ষা করছে---।
-হুম----।
কিশোর আর তামান্না দুজনে একসাথে নেমে এলো নিচে। ফালেহা চৌধুরী কিশোরকে ধমক লাগাতে গিয়েও তামান্নার সাজগোজ দেখে আর ধমক না দিয়ে মেহমানদের সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। মেহমানরাও সবাই তামান্নার অনেক প্রশংসা করে একে একে বিদায় নিলো। সবাই চলে গেলে তারপর কিশোর, তামান্না, দীপ্তি, ফালেহা চৌধুরী সবাই মিলে খেতে বসলো। খাওয়ার সময়ও দীপ্তি ফালেহা চৌধুরীর সাথে এটা ওটা বলেই চলেছে। সারাদিন যা যা করেছে তার সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ব্যাখ্যা বলছে দীপ্তি৷ আর সেসব শুনে তামান্নার লজ্জায় লাল হচ্ছে এক মিনিট পর পর। কোনমতে খাওয়া শেষ করেই তাই তামান্না ডাইনিং রুম থেকে এক প্রকার পালিয়ে চলে এলো রুমে।
তামান্না রুমে এসে বিছানাটা ভালো করে গুছিয়ে দিতে দিতে চিন্তা করতে লাগলো। কিশোরও আজ থাকবে। গতকাল তো ঘুমের ঘোরে মানুষটার উপস্থিতি একেবারে স্বপ্নের মতো লেগেছিলো ওর কাছে। কিন্তু আজ কিশোরের শোয়ার ব্যবস্থা কোনদিকে কিভাবে করবে সেটাই তামান্নার মাথায় আসছে না। তিনজনের পক্ষে খাটটা একটু ছোটই হয়। কিন্তু গতকাল রাতের মতো করে থাকলে অবশ্য---। কথাটা ভাবতেই তামান্নার মুখে আবার লজ্জার আভা খেলা করে গেল। তামান্নার মনে হলো সত্যিই কিশোর গতকাল রাতের মতোই পিছন থেকে আলতো করে ওকে জড়িয়ে ধরেছে। কি সব ভাবছে ও নিজেই বুঝতে পারছে না।
-বাহ! তোমার হাসিটা তো চমৎকার! একেবারে হৃদয়ে গেঁথে গেছে--৷ তা নিজে নিজে হাসছো কি মনে করে?
-আপনি!!
-আবার ভুলে গেছ কে আমি!! হায় রে!!
-আপনি এখানে কি করেছেন?
-রাতের প্রায় সাড়ে এগারোটা বাজে। এসময় মানুষ বোধ করি নিজের বেডরুমে এলে এমন অযৌক্তিক প্রশ্ন করাটা মোটেও উচিত কাজ না--।
-কি?
-কি মানে কি!!
-দীপু কোথায়?
-ও মায়ের সাথে গল্পে মেতে আছে--।
-ওকে না নিয়েই চলে এলেন যে? আমি নিয়ে আসছি--।
-জি না ম্যাডাম। আজকে দীপু তার দিম্মার সাথেই থাকবে----।
-সে কি!!
-কেন? কোন সমস্যা?
- না মানে--। সমস্যা হবে কেন? দীপু!! দীপু তো আমাকে ছাড়া ঘুমাতে পারে -- পারে না--৷ আমি একটু দেখে আসি ---।
-পালানোর ধান্দা না? সেটা হচ্ছে না।
-মানে!!
-তমা? চলো একটু ছাদে যাই---।
-হুম---।
-১২ টা বাজতে কিন্তু বেশি দেরি নেই--। সেটাও মাথায় রেখো---। চলো?
তামান্নাকে নিয়ে কিশোর ছাদে এলো। হালকা করে তামান্নার হাতটা ধরে রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে চাঁদের আলো উপভোগ করছে দুজনে। যদিও পূর্ণিমা নয়, তবু চাঁদের আলোটা বেশ উজ্জ্বল। ফকফকা চাঁদের আলোয় সবকিছু একটু আবছা হলেও বেশ ভালোই দেখা যাচ্ছে। ছাদে এসে আরেকটা সারপ্রাইজ পেয়েছে তামান্না। ছাদের মাঝখানটায় একটা বেডিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। শুয়ে শুয়ে চন্দ্রবিলাসের সুন্দর ব্যবস্থা। তামান্না নিজের মনের অবস্থাটা প্রকাশ করার মতো কোন ভাষা পাচ্ছে না। মানুষটা একটা প্রশ্নের উত্তর শুনতে চায়। সেটাই বা কি করে দিবে সেটাও খুঁজে পাচ্ছে না তামান্না। সব কথা কি মুখে বলা যায়? লোকটা কেন যে বুঝে না?
এদিকে তামান্না চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে দেখে কিশোরও আর কথা না বাড়িয়ে চুপ করেই আছে৷ মেয়েটা মন থেকে ওকে চায় কথাটা কিশোরও বোঝে। কিন্তু তার তো তামান্নার মুখ থেকেই উত্তর শোনা চাই। একটু পরে কিশোর তামান্নার হাতটা একটু ছেড়ে দিয়ে একটু পিছনে ফেরার চেষ্টা করতেই তামান্না কিশোরের পাঞ্জাবিটা পিছন থেকে এক হাতে খামচে ধরলো। তামান্না ভেবেছে কিশোর হয়তো সত্যি সত্যিই চলে যাচ্ছে। কিশোরও একবার মুখ টিপে হেসে পরেই আবার মুখে গাম্ভীর্য ফিরিয়ে এনে তামান্নার দিকে তাকালো।
-কোথায় যাচ্ছেন?
-দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তোমার চাঁদ দেখা দেখতে দেখতে আমার পায়ে ধরে গেছে বাপু। একটু হাত পা ছড়িয়ে বসে দেখি---।
-কি??
কিশোর একটু হেসে তামান্নার হাত ধরে টেনে নিয়ে ফোমের বেডিংটার উপরে বসিয়ে নিজে তামান্নার কোলে মাথা রেখে শুয়ে গেল। তামান্না একটু অবাক হলেও কিশোরের মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিলো। কিছুক্ষণ কেটে গেল আবার নিরবতায়। একটু পরে কিশোর তামান্নার কোলে শুয়ে থেকেই হাত বাড়িয়ে তামান্নার মুখটা ছুঁইয়ে দিলো।
-তমা? ১২ টা তো বেজে গেল। আমিও আমার প্রশ্নের উত্তরটাও পেলাম না এখনো--। আমি কি ধরে নিবো তুমি চাইছো না আর এগুতে? তাহলে কালই কি চলে যাবো একেবারের জন্য??
-না------।
তামান্নার গলা দিয়ে 'না' শব্দটা ছাড়া আর কিছুই বের হলো না। ও কিশোরকে অনেক কথাই তো বলতে চায়। কিন্তু কোথায় একটা কুণ্ঠা থেকেই যায়। কিন্তু তামান্না তো চায় মানুষটা ওর সাথেই থাকুক। কিন্তু এই মানুষটাকে সেসব বোঝাবে কে?