আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

অচেনা অতিথি - পর্ব ২০ - সিজন ২ - নাফিসা মুনতাহা পরী - ধারাবাহিক গল্প


তিতির রুমে আসতেই মাহাদ ওর চোখ মুখের দিকে চেয়ে দেখে তিতিরের চোখ মুখ যেন ভয়ে চুপসে গেছে। মাহাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য গোলাবকে জোড়ে একটা ধমক দিয়ে বলল-

~" এই ওখানে কি করছিস! এখানে আয়....!"

মাহাদের ধমকের সাথে সাথে গোলাবও মাহাদকে হাউ হাউ করে জানিয়ে দিল সে এখন কিছুতেই যাবেনা। এদিকে তিতির চোখ বড় বড় করে ভয়ার্ত কণ্ঠে বলে উঠলো-

~" ও এমন করছে কেন মাহাদ?"

মাহাদ নিজেও বিশ্ময় হয়ে গেছে ওর আচরনে। মাহাদ একটু চুপ থেকে ওর চোখের দিকে তাকাতেই ও চোখ দু'টি স্থির করে মাহাদের দিকে কিছুক্ষন চেয়ে রইলো। তারপর অতিথীর কাছ থেকে উঠে মাহাদের কাছে গিয়ে ওর গা ঘেঁসে বসে পড়লো। গোলাবের গলায় হাত বুলিয়ে দিয়ে মাহাদ আদুরে স্বরে বলে উঠলো-

~" এমন করছিস কেন বাবা!"

মাহাদের মুখ থেকে কথা বের হতে সময় লাগল কিন্তু গোলাবের উঠতে দেরী হলোনা। এক দৌড়ে সাদের রুমের দিকে চলে গেল। তিতিরও ওর পিছে পিছে গিয়ে দেখলো ও সাদের রুমেও যায়নি। ডাইনিংরুমের দরজা সামান্য খোলা ছিল। সেই ফাঁক দিয়েই গোলাব ছুটে বাহিরে চলে গেল। তিতির দ্রুত ডাইনিংরুম পেরিয়ে দরজার কাছে যেতেই দেখলো, গোলাব আবছা অন্ধকারের মধ্য পা দিয়ে মাটি খুড়ছে। তিতির দৌড়ে ওর কাছে গিয়ে দাড়িয়ে রইলো।

মাস খানেক হল, কামরান সাহেব নিজের হাতে এখানে একটা বকুল ফুলের গাছ লাগিছেন। ঝাপড়া ঝোপড়া গাছটি অন্ধকারের বুক চিরে দাড়িয়ে আছে। তার নিচে হন্তদন্ত হয়ে গোলাব তার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তিতির  নিচু হয়ে গোলাবের গায়ে হাত বুলাতেই ও থেমে গেল। তারপর অদ্ভুদ ভাবে কয়েকবার ডাক দিয়েই আবার মাটি খুড়তে লাগলো। গোলাব চলে আয় বলে তিতির উঠে বাসার দিকে আসতেই মনে হল ওর কাপড় কেউ পিছন দিক থেকে টেনে ধরে আছে। তিতির পিছন ফিরে দেখলো গোলাব ওর কামিজ কামড়ে ধরে আছে। কি হয়েছে তোর বলতেই গোলাব আবার দৌড়ে গিয়ে মাটি খুড়তে লাগলো। এবার তিতির বেশ রেগে গিয়ে ওকে টেনে বাসার ভিতর নিয়ে এল। পুরো  শরীর মাটি দিয়ে মাখিয়ে ফেলেছে। তাই ওকে বাথরুমে নিয়ে গিয়ে পরিষ্কার করে  টাওয়াল দিয়ে মুছে  বের করে দিতেই ও দৌড়ে বাতাসি বিবির রুমের কাছে গিয়ে দরজা খোলার চেষ্টা করতে লাগলো। নান্নুর মাকে ডেকে তিতির গোলাবকে নিয়ে যেতে বলল। তারপর বাতাসির রুমের জানালা দিয়ে উকি দিতেই ওর চোখ স্থির হয়ে গেল। 

কুসুম ওর ব্যাগ থেকে নানান শিকড় বাকড় বের করছে। সাথে একটা চুঙ্গার মত জিনিস বের করে বাতাসির দিকে চেয়ে মুচকি হেঁসে উঠলো। কি দাদী আপনি রেডী তো! চিল্লাচাটি করবেন না তো!

বাতাসি ঢোক গিলে ভয়ে ভয়ে বলল-

~" হ্যা রে সাবিনা! থুরি সাবিনার নাম লই ক্যান! হেইতো মইরা ভূত হইয়া গেছেগা। তা কুসুম অ্যার বাতের ব্যাদনা কি ভালা হইয়া যাবো! আর সাবিনার ভুতও কি অ্যারে আর জ্বালাইতে আইবোনা!"

না না দাদী কি কন! অ্যাই এই বিষয়ে সেই স্পেশালিষ্ট। দেখেন কি করি। কাল থাইকা সিঁড়ি দিয়ে দৌড়াবেন আর ঝাপ মারবেন বলে কুসুম বাতাসির পায়ে হাত দিলো।

সাথে সাথে বাতাসি ওর পরনের শাড়ী খানা একটু উচুতে তুলে ধরতেই কুসুম নতুন ধারালো ব্লেট দিয়ে বাতাসির পায়ের পিছন দিকে সামান্য কেটে দিয়ে তাতে চঙ্গা লাগিয়েই জোড়ে চোষক দিল কুসুম। পাক্কা বাইদান্নি এই মাইয়া বলেই বাতাসি আধা চিক্কুর দিয়া বলতে লাগলো-

~" ঐ মাইয়া অ্যারে মাইরা ফেলবি নাকি? এত লাগতেছে ক্যান!"

~" অারে দাদী খাড়ান। কথা কইয়েন না তো?"

এবার বাতাসি বিবি চুপ হয়ে ঘাপটি মেরে চেয়ে রইলো কুসুমের পানে।

তিতির সেটা দেখেই দরজা ধাক্কাইতে লাগলো। এই মেয়ে দরজা খোল বলছি। তুমি দাদীর সাথে কি করছো! খোল বলছি দরজা খোল?

কুসুম আর বাতাসি দু'জনই হতবম্ভ হয়ে যায় তিতিরের ডাকে। কুসুম ভয়ে উঠতে গিয়ে ওর হাতে থাকা ধারালো নতুন ব্লেটের ফোচ লেগে অনেক খানি জায়গা কেটে গিয়ে রক্ত পড়তে লাগলো বাতাসির। কুসুম ভয়ে দরজা খুলে চুপ করে দাড়িয়ে রইলো। আর এদিকে বাতাসি বিবি শাড়ী একটু উচু করে ওভাবেই দাড়িয়ে আছে। তিতির দ্রুত একটা কাপড় নিয়ে গিয়ে বাতাসির কাটা যায়গাটা চেঁপে ধরলো। তারপর চেঁচিয়ে বলল-

~" এই মেয়ে, দাদীর সাথে তুমি এতক্ষন ধরে কি করছিলে? তোমার এত সাহস কি করে হয় দাদীকে আঘাত করার!"

কুসুম তিতিরকে যমের মত ভয় পায়। ও নিজেও ভয়ে কাঁপতেছিল। তিতিরের চিৎকারে প্রথমে গোলাব ছুটে এসে কুসুমকে শাসন করতে লাগলো। কুসুমতো ভয়ে এক লাফে সোফায় দাড়িয়ে পড়লো। গোলাবের চিৎকারে মৌ উঠে এসে দেখলো তিতির বাতাসির পা ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছে। নানী কি হইছে আপনার বলেই মৌ কাছে আসলো। এত কিছু হয়ে যাচ্ছে কিন্তু বাতাসি একপাও নড়তে রাজি না। কুসুম ওকে স্থির হয়ে দাড়িয়ে থাকতে বলেছিল। তাই কুসুমের কথার নড়চড় করেনা সে।

তিতির ওরে যতই সরাতে চায় বাতাসি ততই শক্তি প্রয়োগ করে নিজের জায়গায় দাড়িয়ে থাকে। শেষে তিতির বাধ্য হয়েই বলল-

~" মাহাদরে কি ডাকতে হবে?"

মাহাদের নাম শুনেই বাতাসি কুসুমের দিকে চাইলো। কুসুমও সাথে সাথে মাথা নেড়ে অনুমতি দিতেই বাতাসি খাটে বসেই বলল-

~" ডাক্তর,,,,,, ডাক্তর ডাক। আই মনে হয় মইরা যাইতাছি। অ্যার মরনের দায় কিন্তু তোরে নিতে হবে তিতির! সাবিনা আজ অ্যারে ছাড়বেই না। ঘাড় মটকাবেই।"

মৌ ডাক্তার কে কল দিয়ে দ্রুত বাসায় আসতে বলল। আর এদিকে বাতাসির চিৎকারে আরো অনেকে আসলো। নাহ্ এভাবে হবেনা। মাহাদকে ডাকতেই হবে বলতেই তিতিরের মুখের দিকে চেয়ে বাতাসি কইলো-

~" অ্যারে ভয় দেহাস? আই কাউরে ভয় পাইনা।"

সেটা দেখাই যাবে বলে তিতির সেখান থেকে চলে আসবে আর সাথে সাথে বাতাসি তিতিরের হাতটা শক্ত করে ধরে বলল-

~" খামোকা, অ্যারে ভয় দেহাস ক্যান। আই কি কইছি এগুলো করুম না!"

এইতো লাইনে আসছেন। কোন রোগের কি ঔষুধ দিতে হয় সেটা আমার ভালোই জানা আছে।
কিছুক্ষন পর ডাক্তার এলো। মোট ৬টা সেলাই পড়লো বাতাসির আলাদা আলাদা কাটা জায়গায়। শেষে বাতাসি কুসুমকে ধুয়ে দিয়ে বলল-

~" তোরে যেন অ্যার ঘরে না দেহি! তুই ঝাড়োনের নাম কইরা অ্যার পা কাইটা দিবি তাই বলে। তোরে যেন আর বাড়িত আর না দেহি!"

~" দাদী, আমারে যা কইছেন কন কিন্তু আমার বিদ্যা সম্পর্কে কিছু কইবেন না। ভালো হবেনা কিন্তু!"

~" এই মেয়ে চুপ! এত কথা বলো কেন? তোমাকে কবরাজীগুলো কে করতে বলেছে? এখনই যদি কিছু হয়ে যেত, তার দায়ভার কে নিতো! তুমি নিতা?"

মৌয়ের কথা শুনে কুসুম আর কিছু বলার সাহস পেলোনা। সেদিনের মত রুপালী বাতাসি বিবির সাথে ঘুমালো। 

গোলাবকে সাদের রুমে পাঠিয়ে দিয়ে তিতির রুমে এসে দেখলো অতিথী ঘুমিয়ে পড়েছে। আর মাহাদ ল্যাপটপে কাজ করছে। তিতির কাপড় চেঞ্জ এবং অযু করে মাহাদের কাছে আসতেই মাহাদ জিঙ্গাসা করলো-

~" বাসায় এত চিৎকার চেচামিচি কেন? কিছু কি হয়েছে তিতির?"

অনেক কাজ হয়েছে আপনার বলে মাহাদের কাছ থেকে তিতির ল্যাপটপটা জোড় করে কেড়ে নিয়ে বন্ধ করে জায়গা মত রাখতেই মাহাদ বিরক্তির সুরে কপালে ভাজ টেনে বলল-

~" বৌ জরুরী কাজ আছে তো! এক্ষুনি ল্যাপটপটা দাও....!"

~" নাহ্ কোন কাজ নয়। যা কাজ আছে সকালে করবেন। এখন ওঠেন, চুপচাপ ঘুমাবেন চলেন। ওয়াশরুমে যাবেন?"

মাহাদ জোড়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নরম গলায় বলল-

~" কাজটা খুব জরুরি। "

~" না, এখন তো কোন কাজই না। ডাক্তারের নিষেধ আছে। আগে পুরোপুরি সুস্থ হোন তারপর যতখুশি তত কাজ করবেন। এখন আপাতত ঘুম। ওঠেন ওঠেন....।"

বাতাসির কি হয়েছে তিতির! কথাটি গম্ভীরমুখে বলে উঠলো মাহাদ।

তিতির মাহাদের কথার জবাব না দিয়ে প্রশ্ন ছুড়ে মারলো মাহাদের দিকে। এই কুসুম মেয়েটিকে আপনি কোথায় থেকে পেয়েছেন বলেন তো! ওকে মেয়ে বললেও ভুল হবে। সে দাদীর উপর তার কবিরাজী খাটাইতে গেছে বলে সব কিছু খুলে বলল তিতির।

তিতিরের সব কথা শুনে মাহাদ মুচকি হেঁসে বলল-

~" কুসুমদের পূর্বপুরুষ সাপুড়ে ছিল। যাদের পেশাই সাপ ধরা আর মানুষদের চিকিৎসা করা। ও যেটা করেছে সেটা ওদের রীতিতে একধরনের চিকিৎসা।"

~" অনেক কবিরাজ দেখা হয়ে গেছে আমার। আপনি জানেন! দাদীর কতটা পা কেটে গেছে? আপনি দেখলে আর এসব কথা বলতে পারতেন না।"

আমি যা জানি তোমাকে ততটুকুই জানালাম বলে মাহাদ শুয়ে পড়লো। মাহাদের এমন নিরব ব্যবহার তিতিরের কাছে ভালো ঠেকলোনা। তাই ও বেডে না গিয়ে দাড়িয়ে রইলো।
মাহাদ এবার পাশ ফিরে ঘুমিয়ে পড়লো। তিতির আরও কিছুক্ষন অপেক্ষা করে বিছানায় গিয়ে কেবল সুয়েছে এমন সময় চট করে পলট ফিরেই তিতিরকে জাপটে ধরলো মাহাদ। তিতির এটারই ভয় করছিল। আজ যদি মাহাদ ওকে ধরে তাহলে বিদ্ধস্ত করে ছাড়বে। কারন ওকে ওর কাজ করতে দেওয়া হয়নি।

মাহাদ ও তিতির দুজন দুজনকে সীমাহীন ভালোবাসে। সেটা ওদের চোখের ভাষায় বারবার প্রমানিত হয়।
কিন্তু আজ ওরা কেউই সামনা সামনি বলছেনা ভালোবাসার কথা। কিছু কিছু সম্পর্ক বোধ হয় এরকমই হয়। যেখানে ভালোবাসি কথাটা বলার প্রয়োজন হয়না। কিন্তু একে অপরের প্রতি থাকে শ্রদ্ধা ও অপার ভালোবাসা।

মাহাদ তিতিরের কপালে একের পর এক ভালোবাসার চিহ্ন আকতে লাগলো। তারপরই তিতিরের ঠোট দুটো ওর ঠোটে মিশে যায়। মাহাদ যখন তিতিরের কাপড় খুলতে ব্যস্ত ছিল তখন তিতির মাহাদকে থামিয়ে দিয়ে বলল-

~♥ আপনি জানেন! আমাদের নগ্নতা হতে বেঁচে থাকা উচিত! কেননা আমাদের সাথে এমন সঙ্গী আছেন 
"কিরামান কাতিবীন", যারা প্রশাব-পায়খানা ও স্বামী-স্ত্রীর একত্রে মিলন হওয়া ছাড়া তারা অন্য কোন সময় আমাদের হতে আলাদা হন না। সুতরাং আমাদের তাদের লজ্জা করা উচিত এবং সম্মান করা উচিত। তার থেকে বড় কথা আমাদের আল্লাহ্কে লজ্জা করা উচিত। তাই আমাদের কখনো নির্জনেও উলঙ্গ হওয়া উচিত নয়। এটা সুন্নতের পরীপন্থী। আর শোনেন, লজ্জা করার ব্যাপারে আল্লাহ্ তালাই সবচেয়ে বেশি হকদার।♥

কথা গুলো শুনে মাহাদ থেমে যায়। এ ব্যাপারে সে অনেক পারদর্শী। কিন্তু বেশিক্ষণ থেমে থাকলোনা। চাদর দ্বারা নিজেদের আবৃত করে নিল মাহাদ.......।


এক সপ্তাহ পর,
মাহাদ প্রায় পুরোপুরি সুস্থ। শরীরের শেষবার চেকাপ করার জন্য আবার তাকে দেশের বাহিরে যেতে হবে। সকাল থেকে তিতির নানা কাজে ব্যস্ত। মাহাদের কি লাগবে না লাগবে সেগুলো গোছাচ্ছে সে। মাহাদ ওর মেয়েকে কোলে নিয়ে আদর করছে। অতিথী অবশ্যই ঘুমিয়ে আছে। মাহাদ একের পর এক কিস করে ঘুমন্ত মেয়েকে আদর করছে। যেতে মন চায়না কিন্তু না গিয়ে কোন উপায়ও নেই। এমনি দীর্ঘ সময় ধরে বাসায় বসে থাকার কারনে বিজনেসের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। এখন তাই সেটা পুষানোর জন্য কাজের ধকলও বেড়ে গেছে। 

এমন সময় বাসায় হৈ হুল্লোড়ের শব্দে মেয়েকে বেডে সুয়ে দিয়ে বাহিরে গেল সে। সাথে তিতিরও গেল। বাসায় আসেপাশের প্রতিবেশি সহ কয়েকজন আত্বীয়-স্বজন এসেছে। তাদের সবার মুখে একই কথা। বাতাসি বিবি নাকি মারা গেছেন। এমন মিথ্যা খবর যে কে রটালো আল্লাহ্ ভালো জানেন।

তাদের এমন কথা শুনে বাতাসি রুম থেকে বের হয়ে সবার সামনে এসে গলার জোর বাড়িয়ে দিয়ে বলল-

~" ঐ তোগো কাম নাই, তাই উল্টাপাল্টা খবর শুনে শোক করবার আইসু! অ্যারে কোন দিক থাইকা মনে হয় আই মরছি! অ্যার ফয়তা খাবা আইচু তোরা! ব্যার হ কইচি অ্যার বাড়িত থাইকা।"

বাতাসি বিবির প্রতিবেশি এক ভাসুরের বৌ ছমিরন বিবি বাতাসির সামনে এসে ভালো করে দেখে গায়ে হাত দিয়ে বলল-

~" ও বাতাসি, তুই মানুষ না ভুত রে! তুই তো দেখচি মরোস নাই। তাইলে এত বড় ডাহা মিথ্যা কথা কেডাই কইল আমাগো! অ্যার লাতী আইসা কইলো তুই নাকি মরছোস। আইতো কাজ কাম ফেইলা আইলাম তোরে শেষ দেখনের লাইগা।"

~" তা তো আইবেনই। অ্যাই মরলে পূব পাড়ের পুকুর খানা তো গিলে ফেলবেন। অ্যার পুত বোকা দেইহা আপনাগো কিচ্চু কয়না। তয় আই চুপ থাকুম না। জমি লইয়া দম নিমু।"

এই কথা সেই কথা নিয়ে অতগুলো মানুষের মধ্য বাতাসি আর ছমিরনের মধ্য বিশাল ঝগড়া লেগে গেল। এর মধ্য আগুনে ঘি ঢালতে বুবু বলে এক লম্বা চিক্কুর দিয়া বাসাতে বুদুনের আগমন ঘটলো। বাতাসি তখন লোকজনের আড়ালে ছিল। রুপালীকে দেখে বুদুন ঢুকরে উঠে বলল-

~" মাও যে মরছে হেই খবর তোরা অ্যারে দিছোস? শ্যাষ ম্যাষ তোর আনিসুর চাচার কাছ থাইকা খবর পাইয়া জাহান ফেলে দৌড়ে আনু। তোর মা কই! তারে ধোহান হইছে?"

বাতাসি মরেনি বলে যে যার বাসায় চলে যেতে লাগলো। আর এদিকে বাতাসি চোখ গরম করে বুদনের দিকে চেয়ে আছে। বুদুন তো এক ডোকরনে আছে। রুপালী ইশারায় বার বার মামাকে থামতে বলছে কিন্তু বুদুন বুঝতে না পেরে রুপালীকে ধমক দিয়ে বলল-

~" বোনডা মরছে আর তুই অ্যারে কানবার দিতে চাস না! বুবু তো ঠিকি কইতো শত্রু পয়দা করছে হেই।" 

মামু জুতাপেটা না খাইতে চাইলে এখুনি ভাগেন। আম্মাজানের দিকে একবার চেয়ে দেখেন। সে আসলো বলে। কথাগুলো রুপালী বলতেই বুদুন হিসহিস করে উঠে বলল-

~" বেহুদ্দা মাইয়া। মরা মাওক লিয়ে অ্যার সাথ মশকরা করোস!"

ও বুবু অ্যারে ছাইড়া তুমি কই গেলা। কথাটা কেবল বলেছে বুদুন এমন সময় বাতাসি বিবি সামনে এসে বলল-

~" ভাই অ্যারে ডাকোস তুই! কব্বর দেওয়নের লাইগা আইছোস? তা তগো বউরা আসেনি!"

বাতাসিকে দেখে বুদুন ভুত দেখার মত চমকে উঠলো। এ্যা, এডা আমি কারে দেখনু! ও রুপালী তোর মা এত তাড়াতাড়ি ভুত হইয়া গেল?

ঐ নান্নুর মায়, ঝাড়ুডা আনতো! হারামজাদা, বাইনঞ্চুত তাইতো কই ঐ আনিসউল্লা অ্যার বাড়ীর এত খবর ক্যামনে পায়। তুই সব কতা ওরে কস তাই লয়। ১০দিন আগে অ্যারে রাস্তায় পাইয়া কত কতা কইলো। এত কতা হেই পাইলো কইত থাইকা কথাগুলা চিন্তা করতে করতে অ্যার মাথার চুল যেকনা কাঁচা ছিল সেকনাও পাইকা গেছে। কুত্তা তোরে সেদিন এত্ত শায়েস্তা করছি তাও সোজা হইলিনা। তুই অ্যার শত্রুর সাথ হাত মিলাইছোস। খাড়া, ক্যারে নান্নুর মাও কথা শুনতে পাসনি, ঝাটা কই ঝাটা! আজ এরে দশের কান্দত তুলুম।
বাতাসি আজ ভয়ানক ভাবে বুদুনরে পাকড়াও করেছে। শেষে এসব দেখে মাহাদ নিচে ছুটে যেতেই বুদুন মাহাদরে জড়িয়ে ধরে বলল-

~" বাঁচা ভাই অ্যারে। তোর দাদী এত্ত বজ্জাত মহিলা হেইডা আই জানতাম না। ভালোর জন্য আইলাম আর এহন অ্যারেই মারে। আনসুর ভাই তাইলে অ্যারে মিথ্যা কতা কইয়া এমন ফাসান ফাসাবো!"

মাহাদ বাতাসিকে ধরে শান্ত গলায় বলল-

~" দাদী, আজ আমি বাহিরে যাচ্ছি আর তুমি ঝগড়া শুরু করে দিলা। এটা কি ঠিক! বাসা থেকেই যদি বের হই এত ঝামেলা শুনে তাহলে বাহিরে সাফল্য আসবে!"

কথাগুলো শুনে বাতাসি চুপ করে গেল। তারপর গলা বাড়িয়ে বলল-

~" অ্যার সোয়ামীর জন্য আজ তুই বাইচা গেলি বুদুইন্না। তয় আইছোস যহন তহন ভাত গিলা যা।"

বুদুন যেন হাঁফ ছেড়ে বাচলো। সে মাহাদকে জিঙ্গাসা করলো, কই যাস ভাই? অ্যারেও বাড়িত থাইকা বাড় হওয়া অবদি তোর সাথে রাখ। তোর দাদীর যা ভিমরতি। আজ অ্যারে কয় দশের কান্দত তুলবে নাকি! এডা কোন কতা কইলো বুবু।  বলে চোখ মুছলো বুদুন।

আরে দাদা এত চিন্তা করছেন কেন, আমি আছিনা! মা দাদাকে খাবার দাওতো বলেই মাহাদ উপরে চলে গেল। সাদের স্কুল আছে তাই সাদ সকালে বেরিয়ে গেছে। বাসার সবাইকে বিদায় জানিয়ে মাহাদ গাড়ীতে উঠলো। সাথে তিতির, অতিথী, গোলাব, ফুয়াদ সহ মিল্টন আর সাজিত ইয়ারপোর্ট অবদি গেল।

সেলিব্রেটিরা কোথায় যায় কি করে সব যেন মিডিয়ার লোক আগে থেকেই খোজ নিয়ে রাখে। গাড়ী থেকে অতিথীকে নিয়ে নামতেই একদল সাংবাদিক মাহাদকে ঘিরে ধরলো। তারপর প্রশ্ন করতে শুরু করলো। কোথায় যাচ্ছে কি করছে। সাবিনার ব্যাপারে সহ অনেক প্রশ্ন। এমন সময় অতিথী ওর বাবার দিকে চেয়ে বাবা, বাবা বলে ডেকে উঠলো। মাহাদ সাথে সাথে মেয়ের দিকে চেয়ে মুচকি হেঁসে কপালে কয়েকবার কিস করতেই একজন বলে উঠলো-

~" স্যার আপনার মেয়ের নাম?"

~" অতিথী বিনতে মাহাদ।"

মিল্টন আর সাজিত ভিড় ঠেলে মাহাদকে নিয়ে গেল অন্যদিকে। মাহাদ অতিথীকে পাজা কোল করে ওর গালে বার বার কিস করতে লাগলো। বাবার এত আদর যে সেটাই অতিথীর জন্য শেষ আদর ছিল সেটা কেউই জানতোনা। ও নিজরও জানেনা ওর প্রিয় বাবাটাকে আর সে ছুতে পারবেনা কোনদিনই।

একটু পর ফুয়াদ আর তিতির আসলে মাহাদ অতিথীকে কোলে দেওয়ার পর গোলাব মাহাদের কাছে আসলো। ইদানিং সে অতিথীর কাছে একদমই আসেনা। মাহাদের হাতের সাথে নিজের মুখ দিয়ে বার বার ঘেঁষে কিছু বলতে চায়। কিন্তু মাহাদ ব্যাপারটাকে এত গুরুত্ব না দিয়ে ওকে আদর করে চলে গেল।

গোলাব আবার ছুটে গেল মাহাদের কাছে। মাহাদ ওখানেই থেমে গেল। তারপর নিচু হয়ে গোলাবের মাথায় আদরের পরশ বুলিয়ে বলল-

~" আমার পরিবারকে দেখে রাখিস বাবা। ওরা প্রত্যেকে আমার জিবন।"

কথাগুলো বলে মাহাদ তিতিরদের দিকে একবার চেয়ে  তারপর চলে গেল। মাহাদ যেতেই তিতির আর অতিথীকে গাড়ীতে তুলে দিয়ে গোলাবকে নিয়ে অফিসে রওনা দিল। কোন এক কাজে গোলাবকে দরকার তাই ফুয়াদ ওকে নিয়ে গেল ওর সাথে।  কিন্তু গোলাব ছটপট করতে লাগলো। ফুয়াদ ওকে শান্ত করে রাখতে পারছেনা। শেষে গোলাবকে কোলে তুলে নিল।


তিতিরদের গাড়ী চলছে। অতিথী ওর মায়ের কোলে ঘুমিয়ে পড়েছে। হঠাৎ রাস্তায় অনেকগুলো বেলুন দেখে তিতির গাড়ী থামাতে বলল। সাদ বেলুন খুব পছন্দ করে। এমনি অভিমান করে সে স্কুলে গেছে। আজ সে কিছুতেই স্কুলে যেতে চাইছিলোনা। বাবার সাথে যাবে বলে। ক্লাস টেষ্ট এক্সাম আছে বলে ওকে জোড় করেই স্কুলে পাঠানো হয়েছে। বেলুনগুলো নিলে ছেলের যদি মন ভালো হয়! রাস্তার ধারে গাড়ী পার্ক করতেই তিতির কেবল দরজা খুলে নেমেছে এমন সময় কোথা হতে এক গাড়ী এসে ওদের গাড়ীতে এত জোড়ে ধাক্কা দিল যে তিতির অতিথীকে নিয়েই ছিটকে পড়ে গেল। স্পটেই ৩জন ডেড.......।
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।