মায়াবতী (পর্ব ১৭)


৩৩!! 

ভ্যানে চেপে নীল দিগন্তে রিসোর্টের মেইন গেইটের সামনে পৌঁছতে রাহাত আর দিহানের প্রায় আধা ঘন্টার মতো সময় লাগলো। বিশাল এই রিসোর্টটা নীপবন, তরুছায়া, মোহনা, অস্তাচল, উদয়াচল আর ছায়াবীথি নামের কয়েকটা কটেজের আকারে ভাগ করা। প্রায় ৪৫ টির মতো রুমের মধ্যে ৩০ টি রুমই আজ মিহানের বিয়ে উপলক্ষে বুকিং করা হয়েছে। প্রত্যেকটা রুমেই ৪ জন করে থাকতে পারে। সেই হিসেবে মিহানদের গেস্টের চেয়ে রুম বেশিই বুকিং করা হয়েছে। তাই শেষ মূহুর্তে দিহান আর রাহাতের থাকা নিয়ে চিন্তায় পড়তে হলো না। রিসেপশনে এসে দিহান মিহানকে কল করে নিজেদের আসার খবর দিতেই মিহানও পাঁচ মিনিটের মধ্যে সেখানে এসে হাজির হলো। রাহাতকে দেখে মিহান কতটা খুশি হয়েছে সেটা তার চোখ মুখের উজ্জ্বলতা দেখেই রাহাত বুঝতে পারলো। তবু কেন জানি এই সুন্দর পরিবেশ, উৎসবমুখর মহল কিছুই রাহাতকে স্পর্শ করতে পারছে না। কোনোমতে অনিচ্ছাকৃত একটা হাসি ঠোঁটের কোণে ঝুলিয়ে রেখে মিহান আর দিহানের সাথে হাঁটতে শুরু করেছে রিসোর্টের ভিতরের দিকে। পাশ থেকে দিহান আর মিহান নিজেদের মধ্যে কথা বলতে বলতে কিছু একটা নিয়ে হাসাহাসি করছে সেসবও কেমন একটা বিরক্তিকর লাগছে রাহাতের। নিজেকে এই পরিবেশে অনেকটাই বেখাপ্পা লাগছে ওর কাছে। এর চেয়ে বাইরে থেকে কিছুক্ষণ ঘুরে আসতে পারলে বেশ ভালোই হতো। 

-কি রে মিহান? আজ থেকেই তোদের অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে নাকি? এতো সাজ সাজ রব চারিদিকে? 

-আর বলিস না। আজকে নাকি হলুদ সন্ধ্যা৷ সন্ধ্যা থেকে সবাই মিলে একটু পর পর সুযোগ পেলেই একেবারে হলুদ দিয়ে চোরের মতো বানিয়ে দিচ্ছে। এই নিয়ে চারবার চেইঞ্জ করতে হয়েছে। শালার ডেস্টিনেশন ওয়েডিং এ এমন হাল হবে জানলে ভুলেও রাজি হতাম না। 

-সে কি রে! তা ভাবির কি অবস্থা? উনাকে তো তাহলে চিনতেও পারবো না। মেকাপের বদলে কি হলুদ মেখে ঘুরছে নাকি? 

-ওর আর কি? সেন্টমার্টিনে কেউ ডেসটিনেশন ওয়েডিং করতে আসে? তার উপরে আত্মীয় স্বজন সবাইকে নিয়ে নাকি এক সপ্তাহ আগে থেকে এসে এসব করতে হবে। শালার কেন যে মরতে প্রেম করে বিয়ে করছি সেটা ভেবেই নিজেকে গালি দিতে ইচ্ছে করছে। 

-হা হা হা। তোর করুণ মুখটা দেখেও ভাবির মন গলে নি?

-আরে ধুর। উল্টো ওর করুণ মুখ দেখে আমি গলে আইসক্রিমের ঘোলের মতো হয়ে গেছি। ক্লোজ রিলেটিভস আর ক্লোজ ফ্রেন্ডসদের নিয়ে ডেসটিনেশন ওয়েডিং হওয়ার কথা। এখানে ওর প্রায় ৭০+ ফ্রেন্ড আছে যাদেরকে ও নিজে চিনে কি না বলা মুশকিল। 

-হা হা হা। জীবনের মতো আক্কেল হয়ে গেছে তাহলে তোর। কি বলিস?

-হাসিস না তো। কিসের কি বিয়ে হচ্ছে? আজ হলুদ হবে, কাল মেহেদী, এর পরেরদিন সংগীত। একদিনের একটা ফাংশনকে টেনে তিনদিন লম্বা করা আর কি। এদিকে শালার কাজী খুঁজে পেতে গিয়ে বেহাল দশা। সেন্টমার্টিনে আসে মানুষে ঘুরবে, বেড়াবে, সাগরে নামবে। তা না। আমি এই গুষ্ঠির সবাইকে একবার একদিকে খুঁজে খুঁজেই মরছি। যার যদিকে ইচ্ছে চলে যাচ্ছে। আর শালার যারা বউ নিয়ে এসেছে বা গার্লফ্রেন্ড নিয়ে এসেছে তাদের কথা আর কি বলবো। না আমি বিয়েটা এন্জয় করতে পারছি, না বঙ্গোপসাগরের টিপের সৌন্দর্যটা।

-হা হা হা। তো ভাবিকে বলে দিলেই তো পারিস। এতো প্যারা না নিয়ে নিজেদের মতো করে কিছুটা সময় কাটা না? সবাই যে যার মতো করে ঘুরবে। এসব উদ্ভট রিচুয়াল মানতে কে বলছে? জাস্ট ইগনোর কর। অহেতুক বিরক্তি বাড়ানোর তো দরকার নেই---।

-অহেতুক না রে। করছি ওর ঠোঁটের কোণের এই হাসিটা দেখার জন্য। এই হাসিটার জন্য আমি শুধু রিসোর্ট কেন দুনিয়ার সবচেয়ে বোরিং কোনো জায়গাতেও গিয়ে থাকতে পারি। ওর ছোটোবেলার স্বপ্ন নাকি এভাবে সাগরের মাঝে বিয়ে করবে। ওর সবকটা স্বপ্ন পূরণ করবো বলে ওর হাতটা ধরেছি। এই সামান্য স্বপ্নটা পূরণ করতে না পারলে কি করে হবে বল? এই টিনের চালা দেয়া কটেজটা ওকে যে খুশিটা দিতে পেরেছে সেটা হয়তো ঢাকা শহরের নামি-দামি কোনো ফাইভ স্টার হোটেলও দিতে পারতো না। বাকি সব অপ্রয়োজনের মাঝেও ওর এই খুশি থাকাটাই আমার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন রে দিহান।

হাঁটতে হাঁটতে রিসোর্টের সামনের খোলা একটা জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছিল ওরা তিনজন। সামনে ছোটোখাটো অনুষ্ঠানের মতো হচ্ছে। সেদিকেই তাকিয়ে দিহানকে কথাগুলো বলছিল মিহান। ছেলেটার মুখে ফুটে আছে অদ্ভুত একটা শান্তির ছায়া। প্রিয় মানুষটার জন্য ভালোবাসাটা বুঝি এমনই হয়। মিহানের দৃষ্টি লক্ষ্য করে সেদিকেই তাকিয়ে সেই ভাগ্যবতী হবু বধূটিকে দেখার চেষ্টা করলো রাহাত। অবশ্য সামনের দিকে তাকিয়েই রাহাতের সমস্ত শরীরটা অবশ হয়ে আসতে শুরু করেছে। হলুদের হলদেটে রঙে নিজেকে রাঙিয়ে আছে একটা হলদে পরী, রাহাতের মায়াবতী। দৃশ্যটা বাস্তব কি কল্পনা বুঝতেই কয়েক মিনিট লাগলো রাহাতের। হলুদ সাদা কম্বিনেশনের ভারি লেহেঙ্গার সাথে ম্যাচিং করতেই যেন গালে হলুদের ভারি প্রলেপ মেখে দেয়া হয়েছে মায়াবতীটাকে। মেয়েটার এই রূপ আরেকবার যেন অপ্সরাদেরকেও হার মানিয়ে দিলো। কিছু একটা নিয়ে পাশেই থাকা মানুষটার সাথে হাসিতে লুটিয়ে পড়ার দশা হয়েছে মেয়েটার সেটা দেখেও অবাক হয়ে গেছে রাহাত। মানুষটা ওরই মায়াবতী সেই ব্যাপারে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই রাহাতের। কিন্তু এই সাজে এই রিসোর্টে কি করছে মেয়েটা? এই মানুষটার কথাই কি মিহান এতোক্ষণ ধরে বলছিল দিহানের কাছে?

-বাহ! ভাবিকে তো দেখতে দারুণ সুন্দর লাগছে। এতো হলুদে মাখামাখি অবস্থা তবু চেইঞ্জ না করে এন্জয় করছে। আর তুই আছিস চারবার চেইঞ্জ করতে হয়েছে। ধুর ব্যাটা। চল আরেকবার গায়ে হলুদের আয়োজন করি----।

-মাথা খারাপ নাকি আমার? হলুদ মাখাতে হয় তোদের ভাবিকে গিয়ে লাগা। আমাকে আজকের মতো ছেড়ে দে ভাই।

-সেসব তো শুনছি না জানেমান। হলুদ তো তোকে আজকে লাগিয়েই ছাড়বো। শুধু লাগাবো না। হলুদ দিয়ে গোসল করাবো। দরকার হলে সেই হলুদ খেয়ে ফেলবি একটু বেশি হয়ে গেলে----।

-দিহান----। তোকে তো আমি--।

দিহান আর মিহান রীতিমতো ছুটোছুটি শুরু করে দিয়েছে। কে কাকে তাড়া করছে সেটা বোঝার জো নেই যদিও। ওদের ছুটোছুটি দেখে রাহাত আবার সামনের দিকে তাকাতেই এবারে মায়া আর রাহাতের চোখাচোখি হয়ে গেল। কয়েক সেকেন্ডের জন্য মায়াও অবাক হয়ে রাহাতের দিকে তাকিয়ে রইলো। মানুষটাকে হয়তো এখানে একদমই আশা করে নি মায়া। রাহাতও গুটিগুটি পায়ে মায়ার দিকে এগিয়ে এলো। কোনোমতে মায়ার দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করলো।

-হ্যালো। কংগ্রাচুলেশনস। উইশ ইউ মেনি মেনি হ্যাপি ম্যারেড লাইফ। 
 

রাহাতের কথাটা শুনেই মায়ার মুখটা নিমিষেই মলিন হয়ে গেল। রাহাতও বহুকষ্টে হ্যান্ডশেইক করার জন্য হাত এগিয়ে দিচ্ছে দেখে মায়া রাহাতের পিছনে কাউকে খোঁজার চেষ্টা করলো। 

-মিহান ভাইয়া? উনি কি তোমার গেস্ট?

মায়ার কথাটা শুনে রাহাত থমকে দাঁড়িয়ে কিছু একটা চিন্তা করে মায়ার পাশের মেয়েটার দিকে তাকালো। অনেকটা মায়ার মতোই সাজ মেয়েটার। ভারি লেহেঙ্গা, ভারি দোপাট্টা কোমড়বন্ধ দিয়ে সুন্দর করে শরীরের সাথে শাড়ির মতো করে আটকানো। ঠিক যেমনটা মায়ার ওড়নাটা সেট করা সেভাবেই। পিছন থেকে ততক্ষণে মিহান আর দিহান এসে রাহাতের পাশে দাঁড়িয়েছে। আর মায়ার পাশের মেয়েটাও এতোক্ষণে অবাক হয়ে রাহাতের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা বোঝার চেষ্টা করলো। এদিকে রাহাত মায়ার কথাটার মানে খুঁজে করার আগেই দিহান এসে রাহাতের কাঁধে হাত ঝুলিয়ে পাশে দাঁড়ালো। 

-আপনি মিহানের কাজিন মায়া রাইট? আগে একবার দেখা হয়েছিল আপনার সাথে। চিনতে পেরেছেন?

-জি ভাইয়া চিনতে পেরেছি।

মিহান এবারে মায়ার মাথায় ছোট্ট করে একটা গাট্টা দিলো।

-কি রে মায়া? এভাবে হলুদ মেখে দুজনে ভূত হয়ে আছিস কেন? আমার বন্ধু বেচারা তোদেরকে দেখে তো ঘাবড়ে গেছে বলে মনে হচ্ছে। আর এই দিহান টা ও না? আমাকে রাহাতের সাথে ওদের পরিচয় করিয়ে দেয়ার সময়টুকুও দিলো না। রাহাত? এই দুই ললনার একজন আমার হবু বউ, দিয়া। আরেকজন হলো মায়া। আমার পিচ্চি বোন। আসল রূপে সামনে এলে চোখ ফেরাতে পারবি না। তাই দোস্ত এই জংলী হলুদ মাখা চেহারা দেখে শাঁকচুন্নি ভেবে ভুল করিস না। 

-ভাইয়া? 

-আরে চেঁচাস কেন এভাবে? রাতের দশটা বাজে। আর কতক্ষণ এভাবে সং সেজে থাকবি দুজনে? যান চেইঞ্জ করে নিজের আসল চেহারায় ফিরে আসুন দুজনে। আমি ততক্ষণ আমার দুজন ব্যাচেলর ফ্রেন্ডের কাছে আপনার কিছু গুণকীর্তন করে ফেলি। যাতে আগামী চারদিনের মধ্যে ওদের অন্তত একজন তোকে--।

-ছয়মাস পিছনে ঘুরঘুর করার পর পাত্তা দেয় নি এখন নাকি চারদিনে কেউ একেবারে মরে যাবে আমার জন্য---।

-এই? এমন বিড়বিড় করে কি বলছিস? একটু জোরে বল, আমরাও শুনি---।

-বলছি যে উনি তো আমাদের গেস্ট না। উনি হলো দিয়া আপুর সাইডের গেস্ট, মিস্টার রাহাত মাহবুব চৌধুরী। ব্যাপারটা হয়তো এখনও জানো না তুমি। আমি আঙ্কেলকে খবর দিচ্ছি, তাহলেই বুঝতে পারবে।

-মানে কি! আমার ফ্রেন্ডরা আবার দিয়ার গেস্ট হয় কি করে! বোন তুই কি সন্ধ্যা নামতেই নেশা টেশা করেছিস নাকি?

-আমি নেশা করেছি কি না সেটা না ভেবে তোমার বন্ধুটিকেই জিজ্ঞেস করো উনি দিয়া আপুর বিয়ে এটেন্ড করতে এসেছেন কি না। আর স্যার? আপনি দয়া করে উনাদেরকে ঘটনাটা বলুন, আমি ততক্ষণে শওকত ভাইয়া আর আঙ্কেলকে খবর দিয়ে আসি। বায়। ভাবি তুমিও এসো কথা বলে। আমি যাই। 

রাহাত মায়ার কথায় থতমত খেয়ে গেছে। এই দিয়া যে স্মৃতির ছোটো বোন কথাটা কল্পনাও করতে পারে নি রাহাত। মায়াকে খোঁজার চক্করে দিয়ার বিয়ের ব্যাপারটা মাথাতেই ছিল না একদম রাহাতের। এখন এই এতোদূরে রাহাত যে শুধু মায়াকেই খুঁজতে এসেছে সেটাই বা মেয়েটাকে বোঝাবে কি করে? দিয়া এবারে রাহাতের মুখের দিকে তাকিয়ে প্রায় কেঁদে ফেললো। 

-মৌনি আপুর মুখে আপনার কথা কতো শুনেছি সেটা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না। আপু কক্সবাজার ট্যুর থেকে ফেরার পর থেকে আপনার কথা বলতে বলতে আমার মাথা খারাপ করে দিয়েছিল। ওর আয়ারল্যান্ডে যাওয়ার কারণটাও শুধু আমিই জানতাম। সেখানে গিয়েও প্রতিদিন আপনার কথা বলতো আমাকে কল করে। ভাবতে পারছেন কেমন পাগল ছিল আমার আপুটা আপনার জন্য? সবাই বলেছিল আপনিই নাকি আপুকে-আপুকে মেরে ফেলেছেন। আমি একদমই বিশ্বাস করি নি জানেন ভাইয়া? মায়া কি করে কি প্রমাণ করেছে আমি জানি না। তবে ওর জন্য আপনি যে নির্দোষ সেটা সবাই জানতে পেরেছে। পাঁচটা বছর পরে হলেও সবাই জেনেছে যে আমার আপুটা কোনো ভুল মানুষকে ভালোবাসে নি। বাবা আপনাকে বিয়েতে ইনভাইট করেছে শুনে কি যে খুশি হয়েছিলাম ভাইয়া বলে বোঝাতে পারবো না। আপনি আসায় মনে হচ্ছে আমার আপুও আজ আমার বিয়েতে এসেছে। থ্যাংক ইউ ভাইয়া। থ্যাংক ইউ সো মাচ।

দিয়ার কথাগুলো শেষ হওয়ার আগেই রিসোর্টের ভিতরের দিক থেকে আহমাদ খান আর শওকত সাহেব বেরিয়ে এসে রাহাতের কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। রাহাত উনাদের সাথে হ্যান্ডশেইক করে কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে চারদিকে তাকিয়ে মায়াকে খোঁজার চেষ্টা করছে। মায়াবতীটাকে খুঁজে পেয়েছে ঠিকই, কিন্তু তবে রাহাতের কেন যেন মনে হচ্ছে পেয়েও পাওয়া হলো না মায়াবতীটাকে। কিছু একটার কমতি, কিছু জমানো অভিমান, কিছু ছেলেমানুষি এখনো পথ আগলে দাঁড়িয়ে দুজনের। এবারে মায়াবতীটা আবার কি পাগলামি করে সেটাই দেখার অপেক্ষায় আছে রাহাত। আবার মেয়েটার সেই পাগলামি ভরা ভালোবাসায় হারাতে চায় রাহাত। ফিরে পেতে চায় ওর আগের সেই মায়াবতীটাকে। কিন্তু এখন প্রশ্ন হলো সেটা হবেটা কিভাবে!

৩৪!! 

-চার দিন পরে বিয়ে। আর উনি এখনই এসে বসে আছে। তার যেন দুনিয়াতে আর কোনো কাজকর্ম ছিল না এই বিয়েতে এটেন্ড করা ছাড়া। অবশ্য থাকবে কি করে? বিয়েটা তো তার ভালোবাসার মানুষটার ছোটো বোনের, মানে উনারও তো বোন। উনি আসবে না। আসুক তাতে আমার কি? আমার জন্য তো আর আসে নি। আমার কপালটা এমন কেন? হে আল্লাহ! কেন আমার জীবনের সবকটা জায়গায় উনি চলে আসে? ভাগ্যে যদি নাই দিবে উনাকে, এতোবার চোখের সামনে আনো কেন? তার জীবনে যদি আমার কোনো অস্তিত্বই না থাকে, তাহলে আমার চারদিকে কেন তাকে ছায়ার মতো সঙ্গী করে দিয়েছ? কেন কেন কেন? 

আহমাদ খান আর শওকতকে রাহাতের আসার খবরটা দিয়েই মায়া উদয়াচল কটেজে নিজের রুমটায় চলে এলো। রুমটায় আপাতত দিয়া আর মায়া দুজনেই থাকছে৷ মায়া রাহাতের কথা ভাবতে ভাবতে রাগে গজগজ করতে করতে রুমে এসে ধুম করে দরজাটা বন্ধ করে দিলো। উদয়াচলের কটেজের দুটো রুম পরস্পর কানেক্টেড। অবশ্য মায়াদের পাশের রুমটায় কেউ ওঠে নি বলে মায়ার এমন রাগ করে দরজা বন্ধ করার জন্য কেউ বিরক্তও হলো না। মায়া নিজের লাগেজ থেকে একটা জামা বের করে নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো। সবাই মিলে এমন হলুদ লাগিয়েছে যে ভালো করে শাওয়ার না নিলে হয়তো হলুদের রঙ মুখটাকে হলদেটে করে দিবে। ওয়াশরুমের আয়নায় নিজেকে দেখে নিজেই রীতিমতো ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো মায়া। হলুদের পেস্ট মুখে, চুলে আর হাতে লেগে যাচ্ছেতাই অবস্থা। একটু সময় নিয়েই শুকিয়ে আসা হলুদগুলো ভালো করে ঘষে ঘষে তুললো মায়া। বিপত্তি বাঁধলো লেহেঙ্গার দোপাট্টাটা খুলতে গিয়ে। দোপাট্টার শেষ প্রান্তটা লেহেঙ্গার সাথে কুঁচি করে পিনআপ করে শাড়ির মতো করে পড়েছিল মায়া। সেই ছোট্ট পিনটা এমনভাবে দোপাট্টা আর লেহেঙ্গার সাথে পেঁচিয়ে গেছে যে সেটা খোলা মায়ার পক্ষে সম্ভব হলো না। এদিকে পিঠের কাছে দোপাট্টার অংশটা ব্লাউজের হুকে আটকে গেছে। সব মিলিয়ে বিচ্ছিরি একটা অবস্থা। দোপাট্টা খুলতে না পেরে হাঁসফাঁস করতে করতে কোনোরকমে রুমে চলে এসেছে মায়া। ওয়াশরুমের ভিতরে আর কয়েক মিনিট থাকলে হয়তো দম আটকে যেত মেয়েটার। পুরো রুমটা পায়চারি করতে করতে হুক থেকে দোপাট্টাটা ছোটানোর জন্য রীতিমতো যুদ্ধ করতে লাগলো মায়া। ঠিক সেই সময় পিছন থেকে দরজা খোলার শব্দে একটু চমকে উঠলেও একটু যেন স্বস্তি পেল মায়া। 

-ভাবী ভাবী ভাবী! চলে এসেছ? একটু হেল্প করো না প্লিজ? দেখো না দোপাট্টা হুকের সাথে আটকে গেছে। আর লেহেঙ্গার পিনটা কেমন মুচড়ে গেছে, খুলছেই না। একটু হেল্প করো না প্লিজ? শাওয়ার নিতেই পারি নি এখনো----।

মায়া পিছনের দিকে না ফিরেই বকবক করতে করতে খেয়ালই করে নি মানুষটা এক পা দু পা করে মায়ার পিছনে এসে দাঁড়িয়ে আলতো হাতে হুক থেকে দোপাট্টা খোলায় মন দিয়েছে। মায়া কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে আবার নিজের মতো করে বকবক করা শুরু করেছে।

-ভাবি? তোমার গেস্টের খাওয়া দাওয়া হয়ে গেছে? না মানে আসলে--। সেন্টমার্টিনে আসতে তো অনেক সময় লেগেছে। আসার পথে রাস্তায় কি খেয়েছে না খেয়েছে--। তাই বলছিলাম আর কি---।

-এতোই যখন চিন্তা হচ্ছে তাহলে নিজেই গিয়ে খোঁজ নিলে পারতে। অন্তত এটা বলেও মনকে শান্তনা দিতে পারতাম যে একজন হলেও আমার ভালোমন্দের খোঁজটুকু অন্তত রাখছে---।

-আ-আপ-আপনি! আপনি এখানে কি করছেন?

রাহাতের কণ্ঠস্বর শুনেই মায়া চমকে পিছনে ফিরতেই হুকের সাথে টান লেগে দোপাট্টার অংশটা খুলে গেল। সাথে কাঁধের কাছে পিন দিয়ে দোপাট্টাটা আটকানো ছিল, সেটাও খুলে এলো। মায়া তাড়াতাড়ি দোপাট্টা সামলে নিয়ে কিছুটা পিছিয়ে গিয়ে দেয়ালের কাছে সরে আসলো। আর সেটা দেখে রাহাতও ধীর পায়ে ওর দিকে এগিয়ে আসতে শুরু করেছে। রাহাতের এমন এগিয়ে আসা দেখেও মায়া কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে দু হাতে দোপাট্টাটা শক্ত করে ধরে পিছাতে লাগলো আবার। 

-আপনি এই রুমে কি করে এলেন? আমি তো দরজা-দরজা বন্ধ করেছিলাম---।

-এসেছি আর কি ম্যাজিক করে। তা দিয়া মনে করে তো আমার খাওয়ার খোঁজ নিচ্ছিলে, এখন তো আমি সামনেই আছি। তবু জিজ্ঞেস করছ না। ব্যাপার কি? 

-আম--। আমি আপনার কথা জিজ্ঞেস করছিলাম নাকি? আপনি কি একাই ভাবির-গেস্ট নাকি? অদ্ভুত তো! আর আমিইবা কেন আপনার খোঁজ নিতে যাবো? আমার কি আর কাজ নেই নাকি?

-না বলে চলে এলে কেন মায়াবতী? তোমাকে ঠিক কতোটা পাগলের মতো পুরো শহরটা খুঁজেছি বিশ্বাস করবে?

-খুঁজেছেন বলেই এখানে এসেছেন? দিয়া আপুর বিয়েতে?

-অদ্ভুত কথা বলো তো তুমি? তুমি এখানে থাকলে তোমাকে খুঁজতে  আমি অন্য কোথাও যাবো নাকি? তুমি এখানে দিয়ার বিয়েতে না এসে অন্য কোথাও থাকলে আমিও তোমাকে সেখান থেকেই খুঁজে বের করতাম---।

-সেখান থেকেই খুঁজে বের করতাম! উনি বলবে আর আমি বিশ্বাস করবো আর কি! আমি জানি আপনি দিয়া আপুর বিয়ে এটেন্ড করতেই এসেছেন। সরুন সামনে থেকে। আর এই রুম থেকে বেরিয়ে যান এক্ষুণি।

-বিয়ে এটেন্ড করতে এসেছি কথাটা একেবারে ভুলও বলো নি। তুমি সেন্টমার্টিনে আছো জানতাম, কিন্তু ঠিক কোন হোটেলে বা রিসোর্টে সেটা জানতাম না। তাই তোমাকে খুঁজতে আর মিহানের----।

-ওই একই কথা হলো। আমি বাচ্চা না যে আপনি যা ইচ্ছে আমাকে বুঝিয়ে দিবেন। সরুন সামনে থেকে। 

-তাই নাকি? আমি সামনে থেকে সরে গেলে কি হবে? তোমার সামনে না এলে কি তোমার মনে আসতে পারবো? বলো?

-আমার মনে আসার কি দরকার আপনার? আর আপনি-আপনি এভাবে সামনে এগিয়ে আসছেন কেন?

-তুমি এভাবে পিছিয়ে যাচ্ছ বলে। তুমি যত পালাতে চাইবে ততই আমাকে তোমার দিকে এগিয়ে যেতে হবে। তাই না পালিয়ে নিজে থেকে ধরা দাও।

পিছাতে পিছাতে এবারে দেয়ালের পিঠ ঠেকে গেল মায়ার। রাহাতও এগিয়ে এসে দেয়ালের দু পাশে হাত ঠেকিয়ে মায়ার সরে যাওয়ার পথ আটকালো। মায়া থতমত খেয়ে রাহাতের মুখের দিকে তাকালো। রাহাতের ঠোঁটের কোণে ফুটে থাকা হাসিটা দেখে মায়া নড়তেও ভুলে গেল কয়েক সেকেন্ডের জন্য। রাহাত হেসে মায়ার মুখের উপরে আসা ভেজা চুলগুলো কানের পিছনে গুঁজে দিয়ে আলতো করে গালে হাত ছুঁইয়ে দিলো।

-মন তবু যে তোমাতে হারাবে
তাকে বেধে রাখা কি আর যাবে?
শুধু যাব না তোমার কাছে এই আমি
পড়বে না ভালবাসাতে ক্ষত
তুমি রবে যে আগেরই মতো
এই আমার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে দামী।

-কি?

-আপনার চিরকুটের জবাব ম্যাডাম। তা আপনি নাকি আমাকে ভালোবাসেন? ভালোবাসলে অভিমান করে চলে যায় নাকি? মানলাম আমি তোমাকে আটকাই নি। তাই বলে এভাবে ছেড়ে চলে আসবে? এটা কেমন ভালোবাসা বলতে পারো?

-ভালোবাসা? ভালোবাসার কথাটা আপনি বলছেন? আপনি তো কখনোই আমাকে ভালোবাসেন নি। এখনও কি বাসেন? ভালোবাসলে না সেটা দেখাতে হয়। যেদিন আপনি স্বেচ্ছায় অন্যের নামের হলুদ ছুঁইয়ে দিয়েছিলেন সেদিনই আপনার নামটাও মন থেকে মুছে ফেলেছি। যার মনে আমার অস্তিত্বই নেই জোর করে তাকে আটকে রাখার চেষ্টা করবো বলুন? 

-মায়াবতী?

রাহাত কিছু বলার আগেই মায়া রাহাতের সামনে থেকে সরে আসার চেষ্টা করতেই রাহাত মায়াকে টেনে আবার দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো। মায়া চোখ বড় বড় রাহাতের দিকে তাকিয়ে রইলো। লোকটা কি করতে চাইছে কিছুই মেয়েটার মাথায় ঢুকছে না। রাহাতও মায়ার মুখটা তুলে ধরে কয়েক মিনিট দেখে আলতো করে মায়ার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো।

-যখন বার বার ইগনোর করছিলাম তখন তো ঠিকই আমার পথ চেয়ে বসে ছিলে। তাহলে এখন যখন আমি নিজে থেকে আত্মসমর্পণ করছি তোমার কাছে তখন এমন করে দূরে ঠেলে দিতে চাইছ কেন? মানছি ভুল করেছি। ভুল করেছি নিজের অনুভূতিগুলো বুঝতে পারি নি বলে, ভুল করেছি আমার মায়াবতীটাকে আগলে না রেখে, ভুল করেছি তাকে বারবার ফিরিয়ে দিয়ে। তুমি ও কেন একই ভুলটা করতে চাইছ মায়াবতী? 

-ভুল করতে চাইছি না বলেই নিজেকে সংযত করতে চাইছি। যদি আমার কাছেই ফিরতেন তাহলে একটু আগে যে বাইরে কনগ্রাচুলেট করতে চাইছিলেন সেটা কিসের জন্য? কি ভেবেছেন আমি এটাও বুঝতে পারবো না? খুব সাধারণ একটা পরিবার থেকে উঠে এসেছি। তাই মানুষের চোখের কোনটা সন্দেহ, কোনটা অবিশ্বাস আর কোনটা ভরসা সেটা সহজেই বুঝতে পারি স্যার। 

-মায়া? আসলে-----।

-কি ভেবেছিলেন আপনি? তিনটা দিন যেতে না যেতেই সবার কন্টাকের বাইরে এসে কাউকে বিয়ে করে ফেলছি? হয়তো সত্যিই আপনি দিয়া আপুর বিয়ে এটেন্ড করতে আসেন নি, হয়তো সত্যিই আপনি আমাকে খুঁজতেউ এতদূর এসেছেন। কিন্তু তারপর? একটা সম্পর্ক তৈরি করতে যে নূন্যতম ভরসাটুকু থাকা প্রয়োজন আমার প্রতি সেই সামান্য বিশ্বাসটুকু কি আছে আপনার? থাকলে কি গায়ে হলুদের রঙ দেখেই ধরে নিতে পারতেন যে আমি অন্য কাউকে--।

-মায়া। আম রিয়েলি সো সরি। তোমাকে এমন হলুদের সাজে দেখে আমার মাথায় কি চলছিল নিজেও জানি না। সরি মায়াবতী। আর কখনো ভুল করবো না। 

-একটা কথা বলুন তো? কি চান কি আপনি? যখন প্রতিটা মূহুর্ত আপনার আসার অপেক্ষায় ছিলাম তখন তো আসেন নি? তাহলে এখন কেন এসেছেন? কি ভেবেছেন কি আপনি? আপনি চাইলেই আপনার কাছে ফিরবো আমি? কক্খনো না। আপনার জন্য আমার অনুভূতিগুলো সেদিন হলুদের ছোঁয়ার সাথেই মুছে দিয়েছি আজীবনের মতো। বিয়েতে এটেন্ড করতে চাইলে করুন। তারপর নাহয় নিজের জগতে ফিরে যাবেন। এই মায়াবতী আপনার মায়াজালে আর ধরা দিবে না। কিছুতেই না।

-তোমাকে নিজের মায়াজালে আটকানোর ক্ষমতা তো আমার নেই মায়াবতী। আমি তো তোমার মায়াজালে বন্দী হতে এসেছি। তোমাকে হারিয়ে বুঝতে পেরেছি যে তোমাকে ছেড়ে বাঁচার ক্ষমতা আমার নেই। ভালোবেসে বুঝতে পেরেছি, তোমায় ভালো না বাসার শক্তিও আমার নেই। তোমাকে কাছে না টেনে জেনেছি তোমায় উপেক্ষা করার ক্ষমতা ওই উপরওয়ালা আমাকে দেন নি। মায়াবতী, তোমাকে ভুলে যাওয়ার সাহস আমার নেই। কারণ তোমাকে ধরে রাখার অধিকারটুকু আজো পাই নি। তোমাকে শুধু নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসতে চাই। আর ভালোবাসতে অনুমতির প্রয়োজন নেই। তাই তুমি মানো আর না মানো, এবারে তোমাকে হারাতে দিবো না দেখে নিও।

-সরুন। ভালোবাসতে চান। বাসেন তো না। যখন ভালোবাসতে পারবেন তখন এই ডায়লগ বলতে আসিয়েন। 

-ভালোবাসতে তো ভুলে গেছি। তাই তো তোমার কাছে এসেছি ভালোবাসা শিখবো বলে।

-হ্যাঁ আমি তো ভালোবাসার উপরে পিএইচডি করে এখন টিউশন করিয়ে বেড়াচ্ছি সবাইকে।

রাগের মাথায় মায়া কি বলছে নিজেও জানে না। আর মায়ার কথা শুনে রাহাত নিজেই হা হা করে হেসে ফেললো। মেয়েটা খেপে আছে সেটা ভালোই বুঝতে পারছে রাহাত। মেয়েটার রাগ কমাতে কি করবে সেটা ভাবছে এমন সময় মায়ার রুমের দরজায় কেউ নক করলো। মায়া রাহাতের সামনে থেকে সরে আসার চেষ্টা করতেই রাহাত মায়ার ঠোঁটে আঙ্গুল ছুঁইয়ে দিয়ে চুপ করে থাকার ইশারা করলো। মায়া ভ্রু কুঁচকে রাহাতের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে এর মধ্যে আবার দরজায় নক হলো। এবারে দরজার বাইরে থেকে দিয়ার কণ্ঠস্বর ভেসে আসতেই মায়া ঠোঁটের উপর থেকে রাহাতের আঙ্গুলটা সরিয়ে দিলো।

-মায়া? শুনছ? তোমার শাওয়ার নেয়া হয়ে গেছে?

-হ্যাঁ ভাবি। এইতো দাঁড়াও আমি- আসছি-- দু মিনিট।

-আরে না না। তুমি চেইঞ্জ করে নাও। আমি আর তোমার ভাইয়া একটু বীচের দিকে যাচ্ছি। আমরা খেয়ে নিয়েছি তুমিও খেয়ে ঘুমিও। আমাদের ফিরতে একটু রাত হবে।

-আচ্ছা ভাবি। 

-আর মায়া? একটা কাজ করতে পারবে? 

-হ্যাঁ ভাবি বলো না?

-রাহাত ভাইয়ারও তো এখনও কিছু খাওয়া হয় নি। একটু কষ্ট করে উনার রুমে খাবারটা দিয়ে দিও প্লিজ? অনেক জার্নি করেছে তো। তাই হয়তো টায়ার্ড হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। কয়েকবার দরজায় নক করলাম উনার। সাড়া পেলাম না।

-ওহ! আচ্ছা ভাবি।

মায়া রাহাতের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে কোনোমতে কথাটা বললো। রাহাত ঠোঁটের কোণে আবার হাসি ঝুলিয়ে মায়া রাগে লাল মুখটা দেখছে। মায়াবতীটার রাগী টুকটুকে মুখটাও মায়াবী লাগছে রাহাতের আজকে।

-আমাদের পাশের রুমটাতেই উঠেছে ভাইয়া৷ তুমি প্লিজ একটু খাবারটা দিয়ে দিও ভাইয়াকে। আসছি আমি মায়া। সাবধানে থেকো। 

-হ্যাঁ ভাবি। দিয়ে দিবো। আর তিনি তো আমার রুমেই আছেন। জার্নি করে টায়ার্ড তো মনে হচ্ছে না। উল্টো আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। এই যে? নিজের রুমে যান হ্যাঁ? আমি শাওয়ার নিয়ে তারপর আপনার ডিনারটা দিয়ে আসবো।

দিয়া চলে গেছে বুঝতে পেরে মায়া রাহাতকে কথাগুলো বলেই সরে এলো রাহাতের সামনে থেকে। রাহাতও একবার মায়ার মুখের দিকে তাকিয়ে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো।

-গত কয়টা দিন খিদে, ঘুম কি জিনিস ভুলেই গিয়েছিলাম। এখন দেখি ঘুম আর খিদে দুটোই একসাথে হানা দিয়েছে। যাই আমিও ফ্রেশ হয়ে নিই। নইলে দেখা যাবে শাওয়ারে ঢুকে সেখানেই ঘুমিয়ে পড়বো। আর তোমার সাথে বাকি হিসেব পরে করছি। তুমিও শাওয়ার নিয়ে নাও। 

রাহাত নিজের রুমে চলে যেতেই মায়া রুম দুটোর মাঝের কানেক্টিং ডোরটা আটকে সেটায় পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে নিজের মনেই হাসলো। রাহাত এতোটা পথ শুধু মায়াকে ফিরিয়ে নিতেই এসেছে। ভাবতেই অন্যরকম একটা প্রশান্তি খেলা করে গেল মায়ার মনে। কিন্তু এতো সহজে তো সেটা রাহাতকে বুঝতে দেয়া যাবে না। রাহাত মায়াকে ফিরে পেতে কি করতে পারে সেটাও তো দেখতে হবে মায়াকে৷ তাছাড়া নিজের মুখে 'ভালোবাসি' না বললে মায়া মানবেই বা কেন? এতোদিন মায়া অপেক্ষা করেছিল তার, এবার নাহয় রাহাত সেই প্রহর গুনুক।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন