২৩!!
দেখতে দেখতে আরো কয়েকটা দিন কেটে গেল। আয়ান মায়রার দিনগুলো বেশ কাটছে। সবাই মিলে এদিক ওদিক ঘুরাঘুরি করছে কখনো। আবার কখনো শুধু ওরা দুজন। এখন আর মায়রাকে আগের মতো বাসায় অপমান বা অত্যাচারের মুখে পড়তে হয় না। এর পুরো ক্রেডিটটা অবশ্য তিয়াশের। আর তিয়াশ আর তিথির প্রেমকাহিনীও চলছে পুরো দমে। ওরা যদিও ভাবে সবাইকে ফাঁকি দিয়ে প্রেম করছে, কিন্তু আয়ান ওদের সব কিছুরই খেয়াল রাখে। মাঝে মাঝে মায়রাকে বললে মায়রা আয়ানের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে।
আজও মায়রাদের কলেজের সামনে ওয়েট করছে আয়ান। মায়রা আর তিথিকে একসাথে আসতে দেখে হাসিমুখে ওদের দিকে এগিয়ে গেল আয়ান।
-তিথুমনি? আজকে একটু একা একা বাসায় ফিরতে পারবি? আমি একটু মায়রাকে নিয়ে বের হবো--।
-পারবো ভাইয়া। তুই ভাবির সাথে চলে যা---।
-হুম---। বাড়ি থেকে ড্রাইভারকেও তো আসতে বলি নি। একা কি করে যাবি?
-রিকশায় চলে যাবো-। আমি যেতে পারব তো ভাইয়া।
-বেশি পাকনামি করিস না তো। ওয়েট--। একটা কল করি--।
-আরে ভাইয়ু? গাড়ি লাগবে না তো?
আয়ান চোখ গরম করে তিথির দিকে তাকালে তিথি চুপ করে গেল। মনটাই খারাপ হয়ে গেল বেচারির। ভেবেছিল আয়ান মায়রা চলে গেলে তিয়াশের সাথে একটু ঘুরাঘুরি করবে। তারপর বাসায় ফিরবে। ফাজিল ছেলেটা তিথির প্ল্যানে পানি ঢেলে দিল। ধুর ধুর।
আয়ানও তিথির দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললো। মোবাইলটা কানে লাগিয়ে ওয়েট করলো রিসিভ করার জন্য।
-হ্যালো? ভাইয়া? কেমন আছেন?
-এইতো ভালো। আপনি?
-এইতো আছি। আপনি কোথায় এখন?
-অফিসে--।
-বিজি?
-আরে না না--। বলুন না?
-একটু তিথির কলেজ থেকে ওকে নিয়ে যেতে পারবেন? আসলে আমি আর মায়রা একটু বের হচ্ছি----।
-------------------------------
-হ্যালো ভাইয়া? ব্যস্ত হলে আসতে হবে না--।
-আরে না না-। আয়ান ভাই। আমি আসছি--। এই ধরুন পাঁচ মিনিট মতো সময় লাগবে---।
-ওকে---।
আয়ান কল কেটে দিয়ে তিথির দিকে তাকালো।
-তিথু? ভাইয়া এসে নিয়ে যাবে বাসায়---।
-ওই ওই? তুই তোর মতো যা তো। আমি তোর ওই ভাইয়ের সাথে যেতে পারবো না। অসহ্য। চিনি না জানি না। আমার যেন খেয়ে দেয়ে আর কাজ নেই--। হুহ।
-মানা করে দিবো?
-তো কি বলছি আমি তোকে?
-ওকে তোর ফোনটা দে।
-কেন?
-কল করে মানা করে দিই।
-কেন? তোর ফোনে কি হয়েছে?
-আমার লজ্জা লাগছে এখন মানা করতে। ভাইয়া কত খুশি হয়ে আসছে তোকে রিসিভ করতে---।
-আরে ধুর।
-আচ্ছা যা। এই মায়রা? তুমিই ভাইয়াকে কল করে বলো না আসতে। তোমার ভাই তোমার কথা নিশ্চয়ই ফেলতে পারবে না----।
-এই এই এই? ওয়েট ওয়েট! ভাবির ভাই মানে! কে আসছে যে আমাকে নিতে?
-আপনার বেয়াই সাহেব ম্যাডাম।
-কি! সত্যি!
-তুইই তো রাজি হচ্ছিস না। আচ্ছা আমিই মানা করে দিই---।
-না না না। ভাইয়া মানা করিস না--।
-কতবার কতরকমের কথা বলিস রে বোন তুই? এতোক্ষণ কারো সাথে যাবি না বলে গোঁ ধরলি। আর এখন তিয়াশ ভাইয়া আসছে শুনে খুশিতে নাচানাচি লাগাচ্ছিস--। কাহিনী কি বলতো?
-ওই? ওই? আমি নাচানাচি করছি?
-তো কি করছিস? ভাইয়ার জন্যই ওয়েট করছিলি মনে হচ্ছে----?
-ভাইয়া? তোকে আমি-----।
তিথি কিছুক্ষণ আয়ানকে মারার জন্য ছুটলো। আর মায়রা গাড়িতে হেলান দিয়ে ওদের দু ভাই বোনের পাগলামি দেখছে। ওদের ছুটোছুটি চলতে চলতেই তিয়াশও চলে এলো।
-ওই তো তিয়াশ ভাই--। উফফ। শয়তান মেয়ে। এতো দৌঁড় করালি না? পরে দেখে নিব তোকে-।
তিয়াশ এগিয়ে এসে আয়ানের সাথে হ্যান্ডশেক করলো। তারপর একবার তিথির দিকে তাকিয়ে হাসলো।
-ভাই? চলুন কোথাও বসে একটু নাস্তা করি--?
-এই এই? ভাইয়া? তোমরা না কোথায় যাচ্ছিলে! যাও যাও---। ভাবির আবার বাসায় ফিরতে দেরি হয়ে যাবে----।
-হুম---। আচ্ছা। তিথি আমি কিন্তু ৩ টা সাড়ে ৩ টা করে বাসায় চলে আসবো। ততক্ষণে কিন্তু বাসায় চলে যাবি---।
-আচ্ছা------।
-ওকে ভাইয়া--। বায়। বায় তিথি।
আয়ান আর মায়রা দুজনে তিয়াশ তিথির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো। আয়ান আরেকবার ওদেরকে বায় বলে গাড়ি ছোটালো সামনের দিকে। আয়ানের গাড়িটা চোখের আড়াল হতেই তিয়াশ তিথির দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে হাসলো। তিথিও হাসলো। তিয়াশ এতোক্ষণ ধরে খেয়াল করছিল একটা ছেলে বেশ খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে তিথির দিকে তাকিয়ে আছে। এতোক্ষণ সেটা হজম করেছিল তিয়াশ। এখন আর পারল না। ছেলেটার দিকে এগিয়ে যেতে লাগলেই তিথি ওর হাতটা টেনে ধরলো।
-এই? কই যাও?
-নাহ---। এসো? উঠো গাড়িতে?
-হুম?
-আসুন মহারাণী?
তিয়াশ গাড়ির দরজা খুলে দিলে তিথি উঠে বসলো। তিয়াশ এক নজর চারদিকে তাকিয়ে ছেলেটাকে খোঁজার চেষ্টা করলো। কাউকে দেখতে না পেয়ে গাড়িতে এসে বসলো। আস্তে আস্তে গাড়িটা স্টার্ট দিলো তারপর। তিয়াশ একমনে ভাবার চেষ্টা করছে ছেলেটা কে যে তিথিকে ফলো করছে! তিথিকে জিজ্ঞেস করবে ব্যাপারটা?
-এই? কি ভাবো?
-হুম? কই নাহ। কিছু না--। কোথায় যাবা বলো? বাসায় দিয়ে আসবো?
-বাসায় দিয়ে আসার জন্য মরে যাচ্ছো মনে হচ্ছে? আমি আরো ভাবলাম আজকে কি হয়েছে সেটা তোমাকে বলব-। আর তুমি কিনা। ধুর-।
-আচ্ছা বলো পিচ্চি---।
তিয়াশ গাড়ি চালাচ্ছে আর তিথির বকবকনি শুনছে। তিথি সারাদিনের সব কথা বলছে। কখনো হাসছে কখনো রেগে যাচ্ছে। সেটা দেখে তিয়াশও হেসে ফেলছে।
-জানো? আজকে কি হয়েছে? আজকে আরিয়ান সবার সামনে বউ বউ করে করে পাগল করে দিচ্ছিলো। হি হি।
-কি বলেছে?
-বলেছে, বউ আমারে রাইখা তুমি যাইয়ো না-। হি হি-----।
তিয়াশ হুট করে গাড়িটা ব্রেক করতেই তিথি চমকে উঠলো। তিয়াশ রাগী চোখে তিথির দিকে তাকিয়ে হাত টেনে বুকে শক্ত করে চেপে ধরলো।
-তোমাকে কেউ বউ বলবে কেন? আমি খুন করে ফেলব ওই ছেলেকে। কে ও হ্যাঁ?
-আরে--? ও তো আরিয়ান। আমার ফ্রেন্ড---।
-ফ্রেন্ড হলে ফ্রেন্ড---। বউ বলবে কেন? আর তুমিও শুনবে কেন? কষিয়ে একটা থাপ্পড় লাগালে না কেন? আবার কেন দাঁত কেলিয়ে হাসছো আমার সামনে!
-আরে? দুষ্টুমি করে বলেছে তো? তুমি এতো রাগ করছ কেন?
তিয়াশ রাগ করে তিথিকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলো। রাগ লাগছে প্রচন্ড। তিথি তিয়াশের কাছ থেকে সরে না এসে আরো শক্ত করে লোকটাকে জড়িয়ে ধরলো। মানুষটার রাগ দেখে তিথির উল্টো হাসি পাচ্ছে। কি যে শুরু করলো লোকটা!
২৪!!
আয়ানের পাশে বসে মায়রা আজ মনের খুশিতে বাইরের আধভেজা প্রকৃতি দেখছে। কখনো বা বুক ভরে বৃষ্টির ঘ্রাণ নিচ্ছে, আবার কখনো আয়ানের দিকে একবার তাকিয়ে জানলা দিয়ে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বৃষ্টি ছুঁয়ে দিচ্ছে। ভিষণ খুশি খুশি দেখাচ্ছে মায়রাকে। তাই আয়ানও আর কিছু বলছে না। যদিও এভাবে গাড়ির বাইরে হাত বের করে দেয়াটা অনেক রিস্কি হয়ে যাচ্ছে তবু পাগলিটার হাসিমুখটা দেখে মানাও করতে পারছে না আয়ান। আয়ান একটু পর পর মায়রার হাসিটা দেখছে। এতোটা প্রাণবন্ত হাসি মেয়েটার খুব কমই দেখেছে আয়ান। সারাক্ষণ মেয়েটার চোখেমুখে কিসের যেন একটা ভীতি খেলা করে। আজকে সেটা নেই দেখে ভালো লাগছে আয়ানের।
মায়রাও আজ আসলেই অনেক খুশি। আজ নিশ্চিন্ত মনে মানুষটার সাথে ঘুরে বেড়াতে পারবে ও। বাসায় ফিরতে আধ ঘন্টা দেরি হলেও এতোদিনের মতো কয়েকটা চড় থাপ্পড় খেতে হবে না। বা মানুষটার নামেও কোন বাজে কথা শুনতে হবে না। কথাটা ভাবতেই ভিষণ খুশি লাগছে মায়রার।
আয়ান একটা বড় শপিং মলের পার্কিং এরিয়ায় গাড়িটা পার্ক করে মায়রার জন্য দরজা খুলে ধরলো। মায়রা অবাক হয়ে বিশাল পার্কিং এরিয়াটা দেখছে। আয়ান ভ্রু নাচিয়ে হাসলো। মায়রাও হেসে আয়ানের সাথে শপিং মলের ভিতরের দিকে পা বাড়ালো। আর সব জিনিস অবাক চোখে দেখতে লাগলো। খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া মায়রা কখনো তেমন শপিংমল টাইপের জায়গাগুলোতে যায় নি। আর এতো বড় শপিংমলে ও সম্ভবত স্বপ্নেও কখনো আসে নি। তাই কৌতূহল নিয়ে সব জিনিস দেখছে।
লিফ্টের সিঁড়ি দেখে মায়রার মুখ হা হয়ে গেল। সিঁড়ি আপনাআপনি উপরের দিকে যাচ্ছে তো যাচ্ছেই। থামছেই না। কতগুলো সিঁড়ি গুনে শেষ করতেও পারছে না বেচারি।
-এতো সিঁড়ি দিয়ে কই যায়? আজব!
-হুম? কিছু বললে মায়রু?
-আম---। না বলছিলাম যে এতোগুলো সিঁড়ি কেন? এতো সিঁড়ি পেরিয়ে কোথায় যায়?
-স্বর্গে---। যাবা?
-কি!
-ওয়েট এ সেক--। চলো আমরা উপরে যাই। উপরে কি আছে নিজের চোখেই দেখো---।
-হুম? সত্যি?
-জি ম্যাম--। আসুন---।
আয়ান মায়রার হাত ধরে সিঁড়ির একদম প্রথম ধাপের কাছে নিয়ে গেল। আরো কাছ থেকে সিঁড়ির উপরের দিকে যাওয়া দেখে মাথা ঘুরতে লাগলো মায়রার। মনে হচ্ছে পা দিলেই কেউ পা সুদ্ধ টান দিয়ে ভিতরে নিয়ে ফেলবে।
-এই না না। আমি-আমি যাবো না।
-কেন? মাত্র না জানতে চাইছিলে উপরে কি আছে।
-এখানে পা-পা দিলেই চোরাবালির মতো তলিয়ে গেলে! কিংবা পা আটকে গেলে! আমি তো বের হতে পারবো না আর----।
-হা হা হা---। পাগলিটা।
-হুহ--। কারো ভয়-দুর্বলতা এসব নিয়ে মোটেও হাসা ঠিক না। আমি যাবোই না আর----।
-আপনাকে যেতে হবে না ম্যাডাম। আমিই ব্যবস্থা করছি---।
-হুম?
মায়রা কিছু বুঝে উঠার আগেই আয়ান মায়রাকে পাঁজাকোলা করে তুলে নিলো। তারপর লিফ্টের প্রথম ধাপে পা রাখলো। মায়রা চমকে উঠে আয়ানের গলা জড়িয়ে ধরে চোখ বড় বড় করে কি হচ্ছে সেটা দেখতে লাগলো। কেমন করে যেন শূন্যে ভেসে ভেসে উপরের দিকে উঠে যাচ্ছে। কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারলো না বেচারি কিছুক্ষণ। কিন্তু আশেপাশে তাকাতেই লজ্জা পেল৷ চারপাশের মানুষগুলো হা করে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। মায়রা লজ্জায় লাল নীল হতে লাগলো। কোনমতেই গলা দিয়ে একটা শব্দও বের হচ্ছে না। আর মায়রার লজ্জামাখা মুখটা দেখে আয়ান ভিষণ মজা পাচ্ছে।
দেখতে দেখতেই ওরা উপরের তলায় চলে এলো। মায়রা কোন রকমের চোখ খুলে তাকিয়ে যখন দেখলো আর উপরের দিকে যাচ্ছে না তখন আবার আয়ানের মুখের দিকে তাকালো।
-আর সিঁড়ি নেই? সবগুলো পার করে ফেলেছি এতো তাড়াতাড়ি?
-হ্যাঁ মিস লাজুক পরী।
মায়রা আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো নিচতলাটা পুরো কসমেটিকসে ভরা ছিলো। আর এই তলাটা কাপড়ের দোকানে ভর্তি। কত রকমের বাহারি সব পোশাক সাজানো দোকানগুলোয়। চারপাশ দেখতে দেখতে মায়রার হুঁশ হলো এখনও সবাই হা করে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে৷ আয়ান ওকে এখনও নিচে নামায় নি। মায়রা আরেকবার লজ্জা পেয়ে আয়ানের দিকে তাকালো।
-নামান না?
-এভাবে থাকতে খারাপ লাগছে?
-নাহ--। কিন্তু সবাই দেখছে--।
-তো? দেখুক।
-উহু--। নাহ। নামান না প্লিজ?
-ওকে ম্যাডাম।
আয়ান মায়রাকে নামিয়ে একটা হাত ধরে হাঁটতে লাগলো। একটা কাপড়ের দোকানের ঢুকে আয়ান কয়েকটা শাড়ি হাতে নিয়ে মায়রার দিকে ইশারা করলো।
-কেমন শাড়িগুলো?
-সুন্দর।
-পছন্দ হয়েছে?
-জি?
-বলছি শাড়ি পছন্দ হয়েছে?
-------------------------------
-তোমার প্রিয় কালার কি বলো তো মায়রু?
-সেভাবে কখনো ভেবে দেখি নি। সব কালারই সুন্দর----।
-এটাও?
আয়ান হাতের কাছে একটা পাতলা মেটে রঙের জর্জেটের শাড়ি পেয়ে সেটাই মায়রার দিকে এগিয়ে ধরলো। মায়রা কি বলবে ভাবছে। শাড়িটা একটুও পছন্দ হয়নি ওর। কিন্তু সেটা বললে কেমন হয়ে যায় না ব্যাপারটা! মায়রার নত মুখ একহাতে উপরে তুলে দিল আয়ান।
-শোনো? সব কালার তো পছন্দ হবে এমনও না। যেটা ভালো লাগবে বলবে। আর যেটা ভালো লাগবে না সেটাও আমাকে বলবে৷ নইলে দেখা যাবে আমি এমন কিছু নিবো যেটা তোমার একদমই পছন্দ হবে না। ব্যাপারটা কেমন হবে?
-আপনার সব পচ্ছন্দই আমার সবসময় পছন্দ হবে।
-তাই? এই যে এই শাড়িটাও?
-হি হি। এটা তো আপনারও পছন্দ হয় নি।
-হা হা। সেটাও ঠিক। চলো তোমাকে কয়েকটা শাড়ি কিনে দেই। বিয়ের বেনারসি কেনার জন্য মা আসবে। বাকি আরো কিছু শাড়ি তো লাগবে তোমার---।
-কিন্তু এভাবে! আপনিই বা কেন কিনে----?
-দেখো। ভার্সিটিতে ভর্তির সময়ই বাবা বলে দিয়েছে বিয়ে করবা নিজের টাকায়। বউকে শাড়ি, চুড়ি, গয়না সব নিজের টাকায় কিনে দিতে পারলেই বিয়ে করবা। আর বাপের টাকায় ভুলেও প্রেম করতে যাবা না। হা হা। তাই নিজের টাকায় বউয়ের জন্য শপিং করতে এলাম।
মায়রা হা করে আয়ানের দিকে তাকালো। এদের পুরো পরিবারটা আসলেই মানুষ নাকি এলিয়েন সেটাই মায়রার মাঝে মাঝে মাথায় ঢুকে না। এরা সবার থেকে এতো আলাদা কেন কে জানে! মায়রা ভাবছে আর এদিকে আয়ান মায়রার জন্য বেশ কয়েকটা শাড়ি সিলেক্ট করছে। একটু পরে মায়রার সামনে মোটামুটি শাড়ির হাট বসে গেল। টকটকে লাল রঙ থেকে কাঁচা হলুদ, ভারি রেশমি সুতোর শাড়ি থেকে হালকা জামদানি সব রকমের প্রায় ১০-১২ টা শাড়ি সামনে মায়রার। মায়রা একবার শাড়ি দেখছে আর একবার আয়ানকে।
-এতো শাড়ি কেন?
-ওমা! গায়ে হলুদের জন্য এই লাল পাড়ের হলুদ শাড়িটা, তারপর বিয়ের জন্য রেডি হওয়ার জন্য নরমাল এই পিংক কালারের শাড়িটা, তারপর বিয়ের পর আমাদের বাসায় এসে কি ভারি বেনারসি পড়ে থাকবা নাকি? বিয়ের পর শাড়ি পড়ে থাকতে হবে বেশ অনেকটা সময়। কমফোর্টেবল না হলে ঘুমানোর সময় কামিজ পড়তে পারো। কিন্তু দিনের বেলা অন্তত সপ্তাহ খানেক তো শাড়ি সামলাতেই হবে ম্যাডাম-। অন্য একদিন এসে হালকা কিছু সালোয়ার কামিজ নিয়ে নিবো না হয়।
-না না। আমি শাড়ি পড়তে পারি। সমস্যা নেই। কামিজ লাগবে না।
-আচ্ছা দেখা যাবে সেসব। এখন দেখো কোনোটা পছন্দ হয়নি এমন আছে কিনা।
মায়রা কি বলবে বুঝতে পারছে না। সবগুলো শাড়িই ওর ভিষণ পছন্দ হয়েছে। কিন্তু এতোগুলো শাড়ির কি দরকার ছিল সেটাই বেচারি বুঝতে পারছে না। এসব ভাবতে ভাবতেই কয়েকটা দোকান পরের একটা শো রুমের বাইরে রাখা পুতুলের দিকে নজর পড়লো। পুতুলটার পড়নে সুন্দর রয়েল ব্লু কালারের একটা জামদানি শাড়ি। শাড়িটা এতো সুন্দর যে মায়রা দু মিনিট সেটার দিকেই তাকিয়ে রইলো মুগ্ধ হয়ে। শাড়িটার জন্যই মনে হচ্ছে পুতুলটার সৌন্দর্য ১০০ গুণ বেড়ে গেছে। একটু পরেই মায়রা সেদিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নিল। এতোগুলো শাড়ি সামনে নিয়ে অন্য দিকে চোখ দিয়ে রাখলে মানুষটা হয়তো ভাববে শাড়িগুলো ওর পছন্দই হয়নি। সেটা তো আর হতে দেয়া যাবে না। আয়ানের কেনা শাড়িগুলো তো ওর ভিষণ পছন্দ হয়েছে। তবুও বারবার চোখ চলে যাচ্ছে শাড়িটার দিকে।
-এই যে ম্যাডাম? কি ভাবছেন?
-হুম? কিছু না। সবগুলো শাড়িই ভিষণ সুন্দর।
-পছন্দ হয়েছে তাহলে?
-হুম। ভিষণ পছন্দ হয়েছে।
-আর কিছু নিবেন ম্যাম? শাড়ি পছন্দ হয়েছে কিনা দেখো আশেপাশে?
-উহু--। এতেই অনেক---।
-সিউর?
-হুম---।
-ওকে। তাহলে তুমি একটু প্যাকিং ঠিক মতো হচ্ছে কিনা দেখে নাও। আমি বিল দিয়ে আসছি। কোথাও যাবা না কিন্তু ---।
-আচ্ছা----।
-হুম-----।
আয়ান ক্যাশ কাউন্টারের দিকে যাচ্ছে দেখে মায়রা দোকানের স্টাফদের প্যাকিং দেখতে লাগলো। লোকগুলো কি সুন্দর করে সাবলীল হাতে শাড়িগুলো ভাঁজ করছে৷ এতোগুলো শাড়ি একজনেই কয়েক মিনিটের মধ্যে প্যাকেটে ভরে রেডি করে দিলো। মায়রা এদিক ওদিক তাকিয়ে সবার কাজকর্ম দেখছে আর আয়ানের অপেক্ষা করছে। এতো সময় হয়ে গেল লোকটা আসে না কেন কে জানে!