সাইকো ইজ ব্যাক - পর্ব ০২ - সিজন ২ - সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি - ধারাবাহিক গল্প

ঘুমিয়ে আছে কুহু!
চুপিচুপি রুমে ঢুকে ইউসুফ।।হাতে তার একটি গিফট বক্স।।
ইউসুফ পা টিপে টিপে কুহুর বেডের কাছে বসল আর মাথা হাত বুলিয়ে দিতে লাগল।।
কুহু গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।।

ইউসুফ মুচকি হেসে বলতে লাগে,,
----আমার ঘুম কাতর বাবুইপাখি!!  

কঁপালে চুমু এঁঁকে দিল সে!! 

আবার বলতে লাগে,,

---ছোট থেকেই তোর প্রতি দুর্বল ছিলাম।।তুই জানিস তোর বাচ্চামো গুলো কতটা ভালবাসি!! আমার পিচ্চি কুহু কবে বড় হবি তুই?? তাড়াতড়ি হয়ে যা।। তোর জন্য ওয়েট করছি যে আমি।। দেখ আজ ও প্রতিবারের মত সবার প্রথম তোর বার্থডে উইশ করছি।। হেপি বার্থ ডে কুহু।।
বলে আবার কপালে চুমু একে বের হয়ে যায় ইউসুফ রুম থেকে।। 

নিজের রুমের বেলকনিতে চলে আসে সে।।
দূর আকাশের এক চিলতে চাঁদ দেখা যাচ্ছে।।
ইউসুফের কাছে মনে হচ্ছে চাঁদ তাকে দেখে হাসচ্ছে আর বলছে,,
-----কিরে পাগল ১৩ বছর বয়সী বাচ্চা মেয়ের মাঝে কি পেলি? যে এমন পাগল পাগল হয়ে উঠেছিস??

ইউসুফ হাসলো!!
কখন ভালবাসা হয়ে যায় বুঝার উপায় নেই।।কখন কার চোখে কে আঁটকে পড়ে সে কি কারো জানা..!! তেমনি তার হয়েছে...!!
তেমনি আটকে গেছিল তার মনে তার আট বছর বয়সে, ১ বছরের বাচ্চার উপর।।

ইউসুফ মৃদু কন্ঠে বলে উঠে,,
----- যে পাগল দিন দিন তুমি আমায় করে চলেছ বাবুই পাখি...এ পাগলের সুস্থ হওয়ার মেডিসিন ও তুমি।।

_____________♣
খাবার টেবিলে বসে আছে সবাই কুহু বাদে।।কারণ কুহু ঘুম.....!!!!

তখন ইউসুফের দাদু বলে উঠেন,,
------কদিন থাকবি??

ইউসুফ মুখে খাবার পুরে বলতে লাগে,,
------এইতো আর কিছুদিন দাদু।।

------তোর পড়াশুনা কত দূর বাকি? 

-------এইতো তিন বছর।।

-------আরো তিন বছর দূর থাকতে হবে তোকে আমাদের থেকে?

------হে দাদু! তোত দিন আমার বাবুইপাখিকে দেখে রেখ!!নেক্সট যখন দেখে ফিরবো ওকে আমি বিয়ে করে নিজের করে নিব!!

তখন ইউসুফ বাবা বলতে লাগে,,
------আগে তুমি বড় হও!!

ইউসুফ বলল,,
-----আমি যথেষ্ট বড় বাবা,, ২১ বছর চলছে আমার।।আর তিন বছর পর আমি ওল রেডি ২৪ হবো।।এবং বিয়ের বয়সও হয়ে যাবে তখন।।

ইউসুফের মা বলল,,
-----তোর মতো বুড় ছেলের কাছে আমার মেয়েকে বিয়ে দেব না।।আর ও বড় হতে এখন অনেক দেড়ি!! তার উপর তার পছন্দর একটা বেপার সেপার আছে তো নাকি??

মায়ের কথায়, ইউসুফ কপাট রাগ দেখিয়ে হাতের সামনের গ্লাস চেপে ধরে ভেঙ্গে ফেলে সাথে  সাথে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হতে লাগে যা দেখে সবাই ভয় পেয়ে যায়।।

তখন চিল্লিয়ে বলতে লাগে,,
-----কুহু শুধু আমার!!  কেউ চাইলেও না চাইলেও।।সে কুহু নিজেই হোক না কেন।।
বলে সেখান থেকে চলে যায়।।
উপস্থিত সবাই হতভম্ব হয়ে গেল।।
আর তারা বুঝেও গেল আর যাই হোক ইউসুফ কুহুকে ছাড়বে না।।

ইউসুফের বাবা হতাশ দৃষ্টিতে চেয়ে বলে উঠেন তার স্ত্রীকে,
-----কেন এমন বলতে গেলে!!
ইউসুফের মা মিলা বললেন,,
-----আমিতো মজার ছলে বলে ছিলাম।।
____________

ঘুম থেকে চোখ ঢলতে ঢলতে উঠে বসি।।
মাথার কাছে গিফট দেখে খুশিতে লাফাতে লাগি।।
আজও ঘুম থেকে উঠে গিফট পেলাম।।প্রতিবার আমার বার্থডে তে এমন একটি গিফট পাই।।

গিফটি খুলে আমি হা হয়ে গেলাম।।সাথে সাথে দিলাম এক চিৎকার।।আমার চিৎকারে নানুমা, আর মামী দৌড়ে রুমে আসলেন আর বলতে লাগেন এক সাথে,,

------কি হয়েছে কুহু?

আমি খুশিতে নানুমা আর মামীকে জড়িয়ে ধরে থ্যাংকস বলতে  লাগলাম একনাগাড়ে।।

মামী বলল,,
------থ্যাংকস কেন?? আর এত জোরে চিৎকার করলি কেন তুই??

মামী আর নানুমাকে গিফট বক্স দেখিয়ে বলতে লাগি,,
------আমাকে সিনড্রেলা ড্রেস গিফট করার জন্য।।

মামী আর নানুমা একে ওপরকে কিছু ইশারা করলেন।।
পরে মামী বলতে লাগেন,,
-----ওয়েলকাম বাচ্চা!!  এখন রেডি হয়ে জলদি নিচে আসো।।শুভ জন্মদিন বাচ্চা।।

-------ধন্যবাদ মামী।।

-------হে রে বুড়ি ড্রেসটি  আমাদের পরে দেখাবি না।। যা যা জলদি পরে নিচে।।

আমি খুশিতে গদগদ হয়ে ওয়াশরুমে দৌড় লাগাই।।

রেডি হয়ে নিচে নামতেই আমার ফ্রেন্ড ইনা, মিনা, টিনা, রিনাকে দেখে এক চিৎকারে গ্রুপ হাগ করলাম সবাই।।
তারা এক সাথে বলল,,
------হ্যাপি বার্থ ডে কুহু!!!!

সন্ধ্যায় বড় করে পার্টির আয়োজন করা হয়।।বড় একটি কেক আনা হয়।।তেকের মাঝে ১৪ টা মম দিয়ে সাজানো হয়।।মানে আজকে কুহুর ১৪ বছরে পা দিল।।
কুহুকে তার মামী সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছেন।।তার বড় চুল গুলো খুব সুন্দর সেট করে দিয়েছেন।।

দেখতে দেখতে কেক কাটার সময় হয়ে যায়।।
সবাইকে কেক খাওয়াই দিছি ইউসুফ ও সামনে হাজির হা করে বলল,,
------আমাকে ভুলে গেলি?? দে খাইয়ে দে....!!

আমি কোনো কিছু না ভেবে খাইয়ে দিতে নিলাম।।আর উনি হুট করে কেক সহ আমার আঙ্গুল তার মুখে পুরে নিল।।তার ঠোঁটে আমার আঙ্গুল স্পর্শ করতেই কারেন্টের শক্ড খেলাম মনে হল।।আমি সাথে সাথে বের করতে নিতেই তিনি আমার   হালকা কামুড় বসিয়ে দিল।।আমি তো চোখ বড় বড় করে তার দিক তাকিয়ে।।তিনি আমার হাত ছেড়ে দিয়ে,  তার সামনের চুল গুলো পিছে ঠেলে দিয়ে বললতে লাগে,,
-----নাইস টেষ্ট।।বলে মুচকি হাসতে হাসতে চলে গেলেন।।

কি হলো বুঝলামি হাত ধরে বসে রইলাম।।
_________
পরেরদিন বিকেলে গাছে পানি দিচ্ছিলাম।।
তখন পাশের ছাদ থেকে কেউ ডাকে।।

-----হাই কুহু!!  হেপি বার্থ ডে!!
আমি পিছনে ফিরে দেখি রিয়াজ ভাইয়া।।উনি আমাদের স্কুলের ১০ শ্রেনীতে পরে।।এবং আমাদের স্কুলে ক্রাশ।।আমি হাসি মুখে বললাম,,
------ধন্যবাদ ভাইয়া।।
ভাইয়া ডাক কেন জানি রিয়াজ ভাইয়া শুনতে চান না।।কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পরেন তিনি।।তখন তাকে দেখতে সেই লাগে।।তাই আমি বার বার এমন করি,, হি হি।।
রিয়াজ বলল,,
-----কুহু আমাকে ভাইয়া না বললে হয় না??
------ভাইয়া না বললে কি বলব??
------নাম ধরে ডাকতে পার?
------না না ভাইয়া বড়দের নাম ধরে ডাকতে নেই।।ভাইয়া ডাক পছন্দ না হলে আমি আপনাকে চাচা ডাকতে পারি, মামা ডাকতে পারি??কোনটা ডাকবো??
রিয়াজ ছোট একটি শ্বাস ফেলে হতাশ ভঙ্গিতে বলতে লাগে,,
-----থাক কুহু ভাইয়াই ডেকো!!
বলে চলে গেলেন।।আর আমি হাসতে হাসতে শেষ।।বরাবরই তিনি এমন করেন।।তার কথাতে বুঝাতে চান।।
হি লাইকস মি!!! বাট আমি এত জলদি কারো কাছে ধরা দিচ্ছি না।।

হাসতে হাসতে যেই না পিছনে ফিরলাম,,,
----ঠাসসসসসসসসসসসস!!!!!

—————

কোন এক খামবার সাথে বেজে নিচে পরে গেলাম।।সাথে সাথে চেচিয়ে বলে উঠলাম,,
------কোন গাচ্ছা ইন্দুররে......!!!
বলে সামনে তাকাতেই ভয়ে চুপসে গেলাম।।কারণ সামনে আর কেউ না সাইকো দাড়িয়ে।।তাউ আবার রাগে কটমট করে তার বিলাই চোখের সাদা খানি লাল লাল করে মারবেলের মতো গোল গোল করে তাকিয়ে আছে।।এই বুঝি টুপ করে পানি ছাড়া গিলে ফেলবেন।।
আমি ভয়ে ভয়ে ঢোক গিললাম আর বললাম,,
----সরি ভাইয়া আমি আপনাকে দেখিনি।।
উনি আমার কথার উপেক্ষা করে দাঁতে দাঁত চাপে বলতে লাগে,,
-----ছেলেটি কে ছিল???
আমি আমতা আমতা করে বললাম,,
----ভাইয়া উনি আমাদের স্কুলে পরেন সিনিয়র।।
তিনি আমার দিকে আরো দু কদম গিয়ে বলে উঠেন,,
---- কি কথা বলছিলি??
-----উনি আমার বার্থডে উইশ করছিল...!!
-----বাহ্!!  পাড়ার সবাই জানে কুহু রানির বার্থ ডের কথা হুম!!!
আমি কিছু বললাম না পাশ কাটিয়ে চলে আসতে নেই তখনি তিনি আমার বাহুতে চেপে ধরে তার বরাবর দাড় করায়।। তার এমন ভাবে আমার বাহুতে চেপে ধরায় বেথ্যা কুকিয়ে উঠলাম।।সাথে সাথে চোখ দিয়ে দু ফোঁটা পানি পড়ে গেল।।তিনি এসব কিছুর গুরুত্ব না দিয়ে আমার দিক ঝুকে শাসিয়ে  বলতে লাগে,,
-----আর যেন কোন ছেলের সাথে কথা বলতে তো দূর কাছে ঘেসতে না দেখি....!! তাহলে জানে মেরে ফেলবো তোকে...!! আর তারপর নিজে মরে যাবো।।
আমি উনার কথা শুনে থম মেরে রইলাম।।
সাথে সাথে উনা চোখের দিকে তাকালাম।।আজ তার সুন্দর চোখ জোড়ায় হিংস্রতা দেখতে পাচ্ছি।। তারপর তিনি আমাকে হালকা ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে আঙ্গুল উঁচু করে নাড়াতে নাড়াতে বললেন,,
-----মাইন্ড ইট...!!তারপর চলে গেলেন।।
আমি এখনো তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলাম।।কিছুক্ষণ আগে যে হাতে টানটান ব্যথা অনুভব হচ্ছিলো।। তা যেন এখন টেরি পাচ্ছি না।।হয়ত তার এমন ব্যবহার মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে আমার।।
আমিও দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে, নিচে চলে আসলাম।।

নিচে এসে আরেক দফা শক্ড দেখাম।।
মুনতানিছা আপি বলে এক চিৎকার করে জড়িয়ে ধরলাম তাকে।।তিনি হচ্ছেন বড় মামা মানে মিরাজ মামার মেয়ে তারা দুই ভাই বোন।। তার ফ্যামিলিরা ওয়ার্ল্ড ট্যুর  গেছিলেন।।আজ ১ মাস পর তার দেখা পেলাম।।উনি গুনে গুনে আমার ২ বছরের বড়।। কিন্তু আমাদের বন্ডিং অনেক ভালো।।মুনতানিশা আপু আমাকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলেন,,
-----কেমন আছিস পিচ্চি??
-----ভাল আছি তুমি?? আল্লাহ আপি তুমি চুল কালার করসো??
-----ভাল আছি।।হুম করছি সুন্দর লাগতেছেনা??
-----হুম খুব সুন্দর লাগতেসে তোমারে বার্বি ডল মনে হইতেছে।।
মুনতানিশা আপি আমার গাল টেনে বলল,,
-----তাই!! তুই করবি???
আমিও খুশিতে গদ গদ হয়ে বলে উঠলাম,,
------হুম করবো।।
তখনি পিছন থেকে কেউ আমার চোখে হাত দিয়ে ঢেকে ফেলে।।আমি আরো জোরে চেচিয়ে বলি,,
-----বড় ভাইয়া....!!
রাহুল বলল,,
------বাহ ভুলিসনি তাহলে হুম!!
আমি তাকে জড়িয়ে ধরে বলি,,
-----তোমাকে কেমনে ভুলবো ভাইয়া।।তা আমার জন্য কি এনেছো??
রাহুল কুহুর দিক একটি লাগেজ এগিয়ে দিয়ে বলতে লাগে,,
-----এটা তোর।।
-----ধন্যবাদ ভাইয়া এতগুলো।।বড় ভাইয়া মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেলেন।।
আমি বড় মামা, বড় মামীর সাথে কথা বলে নিলাম।।আমার ছোট পরিবারে একজন ছাড়া সবাই অনেক ভালবাসে।।আর সে হচ্ছে এক মাত্র ইউসুফ ভাইয়া।।হুহ।।

পরেদিন সকালে,,
খাবার টেবিল সবাই উপস্থিত তখনি কথার ছলে বলে ফেলি বড় মামী, ছোট মামী,,আর নানুমাকে উদ্দেশ্য করে।।
------আমি চুল কালার করবো মুনতানিশা আপুর মতো।।
বড় মামী বলল,,
------কবে করতে চাস আম্মু??
আমি মুখের মাঝে হাসি নিয়ে বলতে লাগি,,
-----আজকেই...!!
ছোট মামী অর্থাৎ ইউসুফের মা বলল,,
-----ঠিক আছে তাহলে আজি করে নিস।।
তখনি পিছন থেকে ইউসুফ খেকিয়ে বলে উঠে,,
---- খবরদার যদি চুলে কালার করিস তাহলে চুল আর একটাও থাকবে না তোর মাথায়।।

আমি আহত চোখে তাদের দিক তাকাতেই বড় ভাইয়া বলল,,
-----ইউসুফ এসব কি কথা??  ছোট মানুষ চাইছে বাঁধা কেন দিচ্ছিস।।
ইউসুফ গম্ভীর ভাবে  আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
------আমি যা বলেছি এটাই ওর মানতে হবে আদারওয়াইজ এদিকে সেদিক হলে আই উইল ডো ওয়াট আই হ্যাভ সেইড।।বলে খাবার টেবিল ছেড়ে উঠে চলে গেল।।

আর আমি কেঁধে দিলাম।।সেদিন দিনটি ামার কাঁদতে কাঁদতে গেল।।এই সাইকো আসার পর থেকে আমার সব কেড়ে নিচ্ছে।।আমার ইচ্ছের দাম দিচ্ছেই না।।
সেদিন রাতে ভাত না খেয়ে অনশনে বসলাম।। কেউ দেখে সেদিন আমাকে ভাত খাওয়াতে ব্যর্থ হয়েছেন।। তখনি রুমে ঢুকে ইউসুফ।। তাকে দেখি আমার কাপাকাপি শুরু।। কারণ তিনি আমাকে একটু ভিলেন মার্কা লোক দিলেন।। তারপর বলতে লাগেন,,
-----কিরে খাবি না কেন??
-----আমার ইচ্ছে।।
-----তোর ইচ্ছে তো জানতে চাইনি।।নে খেয়ে নে বলে ভাত মাখিয়ে মুখের সামনে তুলে ধরলেন।। আমি মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকালাম।।নাহ আর যাই হোক এই বজ্জাত হাত থেকে খাব না।। তিনি এবার রাগ নিয়ে বললেন,,
-----ভালোই ভালোই বলছি খেয়ে নে না হিতে বিপরীত হবে।।
তাও আমি পাত্তা দিলাম না।। তিনি এবার আমার  গাল চেপে খাবারটা মুখে পুরে দিলেন।।যেই কাবার টা মুখ থেকে ফেলে দিতে নিলাম ওমনি উনি এক বাজখাই ধমক মারলেন।। সাথে সাথে আমি ভয়ে আতকে উঠলাম।। তারপর বললেন,,
-----একটা ভাতও যদি মুখ থেকে বের হয়।। তাহলে তোকে পাবলিক টয়লেটে নিয়ে আটকে রাখব।।
টয়লেটের কথা শুনে আমার বমি আসতে লাগলো।। তারপরও নিজেকে সংযোগ রেখে খাবারটা খেয়ে নিলাম।। খাবার শেষে তিনি আমার মুখ মুছে বলতে লাগলেন।।
----বাবুই পাখি দেখ আমি তোকে কিছু বলছি,, তোর চুল গুলো আমার খুব ভাল লাগে।। তাই এটাতে  কিছু করার ট্রাই করিস না।।জানিস তো আমি একরোখা মানুষ।। সত্যই তোর চুল আর থাকবে না।।
তারপর উনি আমার সামনে পরে থাকা কাঁটা চুল গুলো কানের পিছনে গুজে দিয়ে বলতে লাগে,,
-----তোর এই কালো কুচকুচে  চুল গুলোর উপর আমি খুব দুর্বল রে।। তুই জানিস তোর এই চুলের জন্য তোকে কতটা,  কিউট, মায়বী, এন্ড....!! 
তিনি আমার কাছে কিছুটা ঝুকে কানের কাছে এসে স্লো ভয়েসে বলল,,হট লাগে??
আমি সাথে সাথে বিষম খেয়ে উঠলাম।। আর তার দিক বড় বড় চোখ করে থাকালাম।।তার একথায় আমার হার্ট বিট করতে লাগল জোরে জোরে।। এ বুঝি লাফবয়ে  বেরিয়ে গেল।। তিনি আমার এই অবস্থা দেখে মুচকি হেসে রুম থেকে চলে গেলেন।। আমি তখন তেমনি বসে রইলাম দম আটকে আসচ্ছিল মনে হচ্ছিল।।

পরেদিন সকালে,,
 মুনতানিশা আপু আর আমি জয়নাল আবেদিন পার্কে গেলাম ফুচকা খেতে সানন্দার।। ময়মনসিংহের বেস্ট ফুচকা হচ্ছে সানন্দার ফুচকা।। আপু দেশে ছিল যখন তখন প্রতিদিন আসতাম আমরা ফুচকা খেতে।। আপু ঘুরতে যাওয়ার সময় আর আসা হয়নি কখনো।। আজ এক মাস পর ফুচকা খেতে এসেছি।। সাথে সাথে পাঁচ প্লেট ফুচকার অর্ডার দিয়ে দিলাম দুজনে।। এখানে টকদই এত ইয়াম্মী।।ঈদের দিন আসলে সিরিয়াল দিয়ে বসতে হয় এত ফেমাস।।মামা ামাদের এত দিন পর দেখে জিগাসা করলেন,,
-----এত দিন কই ছিলেন মামারা??
-----মামা আপি ছিল না বসায়।।আর আপি কে ছাড়া আমাকে একা ছাড়বে না তাই আসতে পারিনি।। 
মুনতানিশা আপি বলতে লাগে,,
এইজন্যই তো গত এক বছরে ফুচকা আজকে সবার করে দিবো আমরা দুজনে।। বলে হাসতে লাগলাম আমরা।।
পুচকা শেষে পার্কের ভিতর দোলনায় গিয়ে বসলাম দুজনে।। তারপর নানান কথাবার্তা বললাম।। আপু কোথায় কোথায় ঘুরেছে সব বলল।। সেখান থেকেই চুল কালার করে এসেছেন সেটাও বললো।। চুল কালার করার কথা শুনে হাসি মুখটা চুপসে গেল।।আপি বিঝতে পেরে বলল,,
-----কুহু তুই সত্যি কালার করবি??
আমি উপর-নিচ মাথা নাড়ালাম।।
আপু বলল,,
-----তাহলে চল দুর্গাবাড়ি!!
-----দুর্গাবাড়ি কেন?
-----দুর্গাবাড়ি ওমেন্স ওয়ার্ল্ড পার্লার থেকে করাবো তোর চুল কালার।।
আমি মন খারাপ করে বললাম,,,
----ইউসুফ ভাইয়া জানতে পারলে আমার মাথা চুল একটাও থাকবে না আপু...!! জানেও মেরে ফেলতে পারে।।
-----ধুর পাগলি!! শুন একবার কালার করে ফেললে ছোট ভাইয়া কেন তার বাপ ও কিছু করতে পারবে না।।বলেই হেসে দিল।।
------কিন্তু??
------কোনো কিন্তু না চল। বলে টানতে টানতে গাড়িতে উঠালো।।তারপর ড্রাইভার চাচাকে বললো দুর্গাবাড়ি ওমেন্স ওয়ার্ল্ডের সামনে নিয়ে যেতে।।

কিছুক্ষণ পর গাড়ি এসে পার্লারের সামনে থামে।।আমার আটটা ধড়াস ধড়াস করে শব্দ করছে পার্লারে গিয়ে।। আপু বুঝতে পেরে সাহস দিতে লাগলো।। যখন ভয় কম ছিলনা তখন ছোট মামি কে ফোন দিল।। ছোট মামী আমাকে অভয় দিয়ে বললেন তিনি সব সামলে নিবেন।। এবার মনে মনে সাহস নিয়ে করিয়ে ফেললাম।।
তিন ঘন্টা পর,,
নিজের চুল দেখে আমি নিজে ক্রাশ খাইলাম।।
আপু বলল, 
-----কুহু তোকে ইরানি মেয়েদের মত লাগছে।।
পার্লারের আপু আমার খুব সুনাম করছিল।।
আমি খুশীতে লাফাতে লাগলাম।।
তারপর বিল পে করে আমরা বাসায় চলে আসলাম।।
বাসায় আসতেই সবাই আমাকে দেখে শক্ড। মামী বলল,,
------আল্লাহ আমার মেয়েকে যে পুতুল লাগছে আজ।।বলে কঁপালে চুমু এঁকে দিল।।
আমি খিলখিল করে হেসে দিলাম।।

তখনি পিছন থেকে রেগে ফুসফুস  করতে বলে উঠে,,
-----মানা করেছিলাম না।।

আমি তাকে দেখি জ্ঞান হারিয়ে ফেলার অতিক্রম।। তখনি তিনি এসে আমাকে রুমে নিয়ে আটকে দিলেন।।

তার কিছুক্ষন পর,,,

----ইউসুফ ভাইয়া প্লিজ আমার এতো বড় সর্বনাশ করবেন না।।

-----আগে মনে ছিল না?? না করেছিলাম না??

-----সরি ভাইয়া,,  আর হবে না!!  (কাঁদতে কাঁদতে বললাম পায়ে ধরে সাইকোর)

----তাতো হচ্ছে নারে বাবুইপাখি?? দোষ যখন করেছিস শাস্তিতো পেতেই হবে তো!! এই কে আছিস এরে বানতো চেয়ারের সাথে।।

আমি  আরো জোড়ে কাঁদতে কাঁদতে চেঁচিয়ে বললাম,,
----মামী ও মামী আমাকে বাঁচাও!!  তোমার বিদেশ পলাতোক সাইকো আমার চুলের বলি দিয়ে দিচ্ছে গো।।মামী ও মামী।।।

ইউসুফের সাঙ্গু পাঙ্গুরা আমার হাত বেঁধে দিলো চেয়ারের সাথে।।

বাহির থেকে মামা মামি দরজা ধাক্কাতে লাগলেন জোড়ে জোড়ে।।সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ না করে সাইকো এগিয়ে আসলো আমার দিকে।।আর আমার গাল চেঁপে ধরলো জোড়ে।।আর দাঁতে দাঁত পিশে বলতে লাগে,,

----চুলে কালার করার সময় মনে ছিল না তোর?? বলেছিলাম না কালার না করতে??  শুনিশ নিতো এবার ভোগ কর।।বলেই তিনি কাকে যেন ইশারা করলেন,,  সাথে সাথে ইয়া মোটা একটা লোক এসে হাজির,, হাতে তার কেঁচি,,।।

লোকটি এসেই গজ গজ করে আমার হাটু ওবদু সদ্য ব্রাউন কালার চুল গুল কেঁটে দিলো।।আমি  ভ্যা করে কেঁদেই যাচ্ছি।।কিন্তু কোনো কাজ হলো না।।চুল ছোট ছোট কাটার পর ব্লেট দিয়ে ঘেজা ঘেজ আদিল করে দিল।।তারপর আয়না সামনে এনে ধরে বলল সাইকো,,

-----দেখ দেখ বাবুইপাখি তোকে আদিল মাথায় আরো হট লাগচ্ছে।।বলে হাসতে লাগলেন।।

আর আমি রাগে দুঃখে এক চিৎকার দিলাম শরীর সর্ব শক্তি দিয়ে।।সাথে সেখানের সবাই গায়েব।। ইউসুফ বাঁদে।।তিনি আমাকে এক রাম ধমক দিয়ে বলতে লাগে,,

----নেক্সটাইম আমার কথার খেলাপ হবি,,  তো এর থেকে করুন হাল করবো বলে রুমের দরজা খুলে বের হয়ে গেলেন তিনি।।।

আমি এখন আর পারলাম না মাটিতে পড়ে থাকা ইয়া লম্বা লম্বা বড় চুল গুলো আমার দেখে বুঁক ফেটে কান্না আসতে লাগলো।।মনে মনে যত বাজে গালি ছিল সব দিয়ে দিলাম।।

—————

সেদিন সারাটাখন আমার চুল গুলো কোলে নিয়ে খুব কেঁধেছি।।আমার মা বাবা মারা যাওয়ার দিন হয়ত এভাবে লাষ্ট কান্না করেছিলাম।।বড় মামী,  ছোট মামী,  এবং মামারা পর্যন্ত থামাতে পারছিল না।।কান্নার এক পর্যায় আমি খানিকটা হেলে পড়ি বড় মামীর কুলে।।কারণ চোখে সামনে সব ঝাপসা দেখাচ্ছিল তখন।।ধীরে ধীরে চোখের সামনে অন্ধকার নেমে এলো।।এবং কিছু সেকেন্ডেই আমি জ্ঞান হাড়াই।।

মাঝ রাতে, হটাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেল,, পিটপিটকরে তাকিয়ে দেখি আমি আমার রুমে আমার বিছানায় শুয়ে।।পরক্ষনে মনে হয় হয়ত স্বপ্ন দেখছিলাম।। কিন্তু মাথাটা কেমন জানি খালি খালি লাগচ্ছে।। মনে হচ্ছে স্বপ্ন ছিলনা।।তাই ভয়ে ভয়ে নিজের মাথায় হাত দিলাম।।সাথে সাথে চোখের পানি গড়গড় করে পড়তে লাগলো।। তার মানে আমি স্বপ্ন দেখছিলাম না।।বিছানা থেকে নেমে, ডেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে লাইট জালিয়ে নিজেকে দেখতে লাগি....!

সাথে নিজে দুহা মুখে চলে যায়।।কতটা বিধ্বস্ত লাগছে আমায়।।আবারো কান্না আসচ্ছে ঠেলে।। কিন্তু এবার আর কাঁদবো না আমি।।চোখের গড়িয়ে পড়া পানি গুলো মুছে নিলাম আমি।।আর মনে মনে তটস্থ করে নিলাম।।এর প্রতিশোধ আমি নিয়েই ছাড়বো...!! একে আমি শায়েস্তা করে না করে শান্তিতে বসচ্ছি না...!!! এবার আর ছাড়াছাড়ি নাই।।বেটা আমার প্রিয় জিনিসে হাত দিয়েছে,, একে এত সহজে ছেড়ে দিলে আর যাই হোক আমার রিডার্সদের কাছে আমি ছোট হয়ে যাবো....!!! তাতো হচ্ছেনা....!!!! এর বদলা আমি নেবওই.....!! যেমন - খুনের বদলে খুন, তেমনি চুলের বদলে চুল.....!! আপনারা কী বলেন রিডার্সরা..???আমি ঠিক করছি তো...!!!

যা ভাবা সেই কাজ।।শয়তানি একটা হাসি দিয়ে চলে গেলাম কার্য হাসিল করতে ইউসুফের ঘরে।।দরজা খুলে পা টিপে রুমে আসলাম..!! সাইকো বেঘোর ঘুমাচ্ছে।।তার পুরো বেড জুরে দখল করে শুয়েছে।।বাহিরের রাস্তার পিলার গুলো থেকে আসা মৃদু হলুদ আলো পরছে তার মুখে।।তার হালকা বাদামী চুল গুলো কপালের পরে আছে।।দেখতে কতটা না মায়া লাগচ্ছিল।।মনে চাইছিল তার কপাল থেকে চুল গুলো সরিয়ে দিতে।।

কিন্তু পরক্ষণেই তার ভয়ানক কর্মকাণ্ডের কথা মনে পড়ে গেল,, সে কিনা না হাল করেছিল আমার।।আবার মেনের মাঝে প্রতিশোধের আগুন জ্বলে উঠলো।।সাথে সাথে তার থেকে চোখ ফিরিয়ে নিলাম..কিন্তু বেহায়া চোখ বারবার তার পানে চলে যাচ্ছে।।

সাথে সাথে মন থেকে এসব ঝেড়ে ইউসুফের ওয়াশরুমে চলে এলাম.....!!! আর কাজ শেষে বের হয়ে গেলাম....!! এবার বুজবে ঠেলা কত ধানে কত চাল হুহ...!!!!!!

সকালে,,

গলা ফাটা চিৎকারে হল রুমে জড়ো হয়ে গেল সবাই।। এ চিৎকার আর কারো না সাইকো বেটার...!!আমি চোখ ঢলতে ঢলতে খাট থেকে নেমে খাটের নিচ থেকে স্যান্ডেল পায়ে নিচে নেমে এলাম।। আমাকে দেখে কটমট করে তাকিয়ে বলতে লাগে ইউসুফ,,

-------এসব তুই করেছিস তাই না....??

আমি না জানার ভান করে বললাম,,

------কি সব করেছি আমি..??

তিনি এবার দাঁতে দাঁত চেপে বলতে লাগলেন,,
------আমার শ্যাম্পুর বোতলে সুপার গ্লু কে ঢেলে দিয়েছিস তুই দেখ আমার চুলের কি হাল হয়েছে এখন...!!

তাকে দেখে উপস্থিত সবাই হাসচ্ছে মিটমিট করে।। আমিও আর ধরে রাখতে পারছি না...!!  তার চুল পুরো পাখির বাসা হয়ে গেছে।।এমন মনে হচ্ছে তাকে ধরে বেঁধে কারেন্টের শক দেয়া হয়েছে।। যার ফলে তার চুল এমন হয়ে গেছে।।

আমি বললাম,,
-----দেখুন ভাইয়া আমি এসব কেন করবো?? আপনার সেই দামী দামী শ্যাম্পুতে গন্ডগোল আছে।। ফরেনসিক ল্যাবে চেক করে নিন গিয়ে...!!

তিনি কটমট করে বললেন,,
-----ফাজলামো করছিস আমার সাথে...!!  সত্যই কুহু আল্লাহর ওয়াস্তে যদি এর পিছনে তোর হাত থেকে থাকে, আই উইল শো ইউ হাউ ব্যাড আই এম...!! 
বলে ধপাধপ পায়ে বের হয়ে গেলেন....!!  

আমি আর হাসি আটকে রাখে পারলাম না ফিক করে হেসে দিলাম।।তখনি নানু মা এসে ামার কান মলে বলতে লাগে,,
------এসব তোর কাজ না বুড়ি...!!
আমি বললাম,,
------আলবাৎ আমার কাজ।। সে আমার চুলের বলি দিয়েছে এবার তাকেও দিতে হবে...!!
------বুড়ি তুই তো জানিস ও কথাটা রাগি...!!  কেন ওর সাথে লাগতে গেলি এখন যদি উল্টো কিছু করে বসে...!!
------ও ইয়াং লেডি ওসব তুমি আমার উপর ছেড়ে দেও..!! তোমার ওই তার ছিড়া লম্বু খাসিকে নাকানি-চুবানি  না খাইয়েছি আমার নাম পাল্টে ফেলবো...!!!

সেদিন বিকালে সাইকো  ফিরে আসে বাসায়।।তখন হলরুমে চলছিল গল্পের আসর।। ইউসুফকে দেখে সবাই ভুত দেখার মতো হা করে চেয়েই আছে...!!
সবার মাঝে তখন পিনপতন নিরবোতা...!! সন্ধের সময় মশা মাছি,  পোকামাকড় সবাই আওয়াজ করতে ভুলে গেছে....!!

কিছুক্ষণ পর,,বড় মামী বলে উঠলেন,,
-----ইউসুফ তোর এ হাল কি করে হলো....!!!
ইউসুফ রাগে কটমট করে আমার দিকে চেয়ে উত্তর দিল,,
-----তোমাদের আদুরীর আদুরের ফল বলে....!!  বলে রাগে গজ গজ করতে করতে চলে গেলেন।।

উপস্থিত সহ সবাই হো হো করে হাসির রোল পরে গেল...!! 

কারণ আমি আমার প্লানে সাকসেস হয়েছি।। ইয়াহু....!!!
ইউসুফ তার চুল হারিয়েছে...!! আদিল মাথা টিং টিং হয়ে গেছে।।আমি দৌড়ে রুমে গিয়ে গান ছেড়ে লাফাতে লাগলাম...!!লুঙ্গী ডান্স করতে লাগলাম...!! 

তখনি ধাড়াম করে আমার রুমে দরজা খুলে গেল...!! দরজার দিকে তাকিয়ে আমার সব আনন্দ ফুর্তি  গুজে গেল...!! মুহূর্তেই চুপসে গেলাম....!!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন