আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

মায়াবতী (অন্তিম পর্ব ২১)


৪১!! 

-এই যে মায়াবতী কন্যা, আর কত এই ঘুমন্ত মায়াভরা মুখটা দেখিয়ে বুকের জ্বালাতন বাড়াবে বলো তো? এবার তো চোখ মেলে তাকাও ঘুমপরী। কিছুক্ষণ নাহয় তোমার দীঘল কালো চোখের মায়ায় হারাই নিজেকে। এই মায়াবতী? উঠো না প্লিজ?

কানের কাছে কেউ ফিসফিস করে কথাগুলো বলায় মায়া পড়িমরি করে উঠে বসার চেষ্টা করলো। ঘুমের ঘোরে কোথায় আছে সেটা ঠাহর করতেই কয়েক মিনিট লাগলো মায়ার। একটু পরেই নিজেকে কারো দুহাতের বাঁধনের মধ্যে আবিষ্কার করে লম্বা বাস জার্নিটার কথাটা মনে পড়লো। মানুষটার বুকের ঢিপঢিপ শব্দ শুনে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করলো মায়া। কিন্তু এই কঠিন বাঁধনটা ছাড়িয়ে নেয়া সম্ভব হলো না মায়ার। 

-এতো নড়াচড়া করো কেন বলো তো? এতোক্ষণ তো লক্ষী মেয়ের মতো আমার বুকেই মাথা রেখে ঘুমিয়েছিলে। আমি তো তখন কিছু বলি নি। এখন ঘুম ভাঙতেই এতো লাফালাফি কেন বলো তো মায়াবতী? ভালোবেসে বুকের মাঝে আগলে রাখতে চাইছি তোমায়। সেটা বুঝি ভালো লাগছে না।

-আপনার লজ্জা শরম কিছু না থাকতে পারে। কিন্তু আমার আছে। বাস ভর্তি লোকের সামনে এভাবে জড়িয়ে ধরে রেখে কি প্রমাণ করতে চাইছেন কি আপনি হ্যাঁ? এসব বেহায়াপনা আপনার ডাবলিন শহরে বা অন্য কোথাও গিয়ে করবেন। এটা বাংলাদেশ। এখানে সমাজ, সংস্কৃতি, লোকাচার এসব বলেও কিছু জিনিস এখনো অবশিষ্ট আছে।

-আমার মায়াবতীকে বুকে আঁকড়ে ধরতে কে বাধ দিবে আমায়? কোন সমাজ-----।

-বারবার 'আমার মায়াবতী, আমার মায়াবতী' করলেই এই মায়া আপনার হয়ে যাবে না মিস্টার রাহাত চৌধুরী। ভালোবাসাটা খুব সূক্ষ্ম একটা অনুভূতি। সেটা হয়তো হয়, নয়তো হয় না। ভালোবাসায় মাঝামাঝি বলে কোনো অবস্থান হয়না। 

-মাঝামাঝির আবার কি দেখলে তুমি? আমি তো তোমাকে ভালোবাসি মায়াবতী।

-ভুল বললেন। আপনার মনে হয় আপনি আমাকে ভালোবাসেন। যখন সেই মনে হওয়াটা বদলে যাবে, যখন অন্য কিছু মনে হবে তখন আমার অবস্থানটাও আপনার জীবনে বদলে যাবে। প্রত্যেকবার এই এক অবহেলা আমি মানতে পারছি না। পারবো না মানতে। 

-আগে যত ভুল করেছি সবগুলোর জন্যই আমি লজ্জিত মায়া। তোমায় হারাতে চাই না বিশ্বাস করো? তোমাকে ভালোবেসে নিজের করে নিতে চাই। অধিকার নিয়ে আগলে রাখতে চাই। যেই অধিকারটায় তোমারও কোনো দ্বিধা থাকবে না। প্লিজ রাজি হয়ে যাও একবার? প্লিজ?

কথাগুলো বলতে বলতেই রাহাত বাঁধনটা ছেড়ে দিয়েছিল। মায়া সেটা টের পেয়ে সরে এসে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বাইরের দিকে তাকালো। যত দূরে তাকানো যায়, ঠিক ততদূরের কোনো বিন্দুতে তাকিয়ে নিজের চোখের পানিটুকু আটকে নিলো চোখের মাঝেই৷ মায়া চায় না ওর এই অসহায় কান্নার বিন্দুগুলো রাহাতের চোখে পড়ুক। রাহাতের সামনে নিজেকে আর একবারও অসহায় হিসেবে তুলে ধরতে চায় না মায়া। কিছুতেই না।

-লাঞ্চ ব্রেক হয়েছে মায়া। বাসটা একটা হোটেলে দাঁড় করিয়েছে। কিছু খেয়ে নিবে চলো?

-খিদে নেই আমার। 

-তিনটা বাজে মায়া। ঘুম ভেঙেছে তাই হয়তো খিদে পাচ্ছে না। হাত মুখ ধুয়ে একটু ফ্রেশ হয়ে নাও। দেখবে পেটের মধ্যে যুদ্ধ চলছে। তাছাড়া সন্ধ্যার আগে একবার হয়তো নাস্তার জন্য মিনিট পাঁচেক কোথাও দাঁড়াবে বাসটা। আর থামবে না ঢাকায় পৌঁছোনোর আগে। প্লিজ কিছু অন্তত খেয়ে নাও?

মায়া কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। এতো লম্বা জার্নি বাকি এখনো। ওয়াশরুমে যাওয়া দরকার অন্তত একবার। কিন্তু খিদে তো একদমই লাগে নি। কিন্তু এই লোকটা সেই কথা শুনবে কেন? নিজের কথা চিন্তা করতে গিয়ে মায়ার রাহাতের কথাও মাথায় আসলো। লোকটারও তো হয়তো খিদে পেয়েছে। কথাটা ভেবে মায়া আর কথা না বাড়িয়ে উঠে দাঁড়ালো ধীরে ধীরে৷ রাহাতও এবারে হেসে মায়াকে আগে নামতে দিয়ে নিজে মায়ার পিছনে পিছনে হাঁটা ধরলো। হোটেলের ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে হাত মুখ ধুয়ে মুছে দুজনে মিলে লাঞ্চটা শেষ করে আবার বাসে ফিরে এলো। এবারেও মায়াকে আগে বাসে তুলে দিয়ে রাহাত কিছু একটা মনে পড়ায় মায়াকে সিটে গিয়ে বসতে বললো। মায়া একটু অবাক হলেও কিছু না বলে চুপচাপ নিজের সিটে গিয়ে বসে পড়লো। ধীরে ধীরে বাসটা আবার ভরে গেল প্যাসেঞ্জারে। একটু পরে ড্রাইভার বাসটা স্টার্ট করছে টের পেতেই মায়া একটু আঁতকে উঠলো। রাহাত এখনো ফিরে আসে নি দেখে মায়া নিজের সিট থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বাস থামানোর চেষ্টা করলো। এদিকে মায়ারা পিছনের দিকে বসেছে বলে ড্রাইভার মায়ার গাড়ি থামানোর কথা শুনতে পেল না। 

-কেউ গাড়িটা থামাতে বলুন না? আরে! গাড়ি থামান। 

মায়ার চেঁচামেচিতে পাশের সিটের কয়েকজন মায়ার দিকে ফিরে তাকালো। 

-কি হয়েছে ম্যাডাম? গাড়ি থামাতে বলছেন কেন? এমনিতেই তো লাঞ্চ ব্রেকে অনেক দেরি হয়ে গেছে। পৌঁছাতে রাত হয়ে যাবে।

-আরে! আপনারা বুঝতে পারছেন না কেন? একজন তো রয়ে গেছে এখনো। আপনারা চেক না করে কি করে বাস ছেড়ে দিলেন? সবাই উঠেছে কিনা চেক করতে হয় জানেন না? গাড়ি থামান বলছি? থামান গাড়ি?

-রয়ে গেছে? কে রয়ে গেছে? ওই ড্রাইভার? মামা গাড়ি থামান। এই ম্যাডামের হাসবেন্ড এখনো গাড়িতে উঠে নি---। মামা? ব্রেক করেন। গাড়ি ঘুরান। ওই মামা। 

সবার চ্যাঁচামেচি শুনে ড্রাইভার গাড়ি ব্রেক করে রাস্তার এক পাশে দাঁড় করালো। বাসের কন্টাক্টর পিছনের দিকে এগিয়ে এলো। 

-কি হলো? বাস থামাইলেন কেন? এমনে রাস্তায় এতোবার বাস থামাইলে পৌঁছামু কোন রাইতে? আপনেরা----।

-আরে! ম্যাডামের হাসবেন্ডকে ফেলে চলে যাচ্ছিলে কেন? উনার হাসবেন্ডকে খুঁজতে হবে। গাড়ি ইউ টার্ন করো---।

-আরে আফা! ভাইজান তো দেখসিলাম গাড়িতে উঠসিলো। আবার নামলো কহন? আপনেগোরে নিয়া এই এক জ্বালাতন। কে কোনহান দিয়ে উঠেন, কোনহান দিয়া আবার নাইমা যান। ও মামা। গাড়ি ঘুরাও। পেসেঞ্জার রইয়া গেসে---।

অবশ্য গাড়ি ঘোরাতে হলো না। তার আগেই রাহাত ছুটতে ছুটতে গাড়িতে এসে উঠলো। মায়াও প্রায় সাথেসাথেই ছুটে এসে রাহাতকে জড়িয়ে ধরলো। সবারে সামনে এমন করে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলেছে মেয়েটা, দেখেই রাহাত একটু অবাক হলেও নিজেকে সামলে নিয়ে মায়াকে হালকা করে নিজের সাথে জড়িয়ে নিলো। 

-আরে পাগলী? কাঁদছ কেন এভাবে? শান্ত হও প্লিজ? দেখো আমি চলে এসেছি তো? এবার তো কান্নাটা থামাও প্লিজ?

-আরে ভাই! ওয়াইফে রেখে এভাবে কোথায় চলে গেছেন? ভয় পেয়ে গেছে হয়তো উনি। আর এই মিয়া কন্টাক্টর? তুমি ঠিক করে চেক করবা না সবাই উঠেছে কিনা? 

বাসের একজন পেসেঞ্জারের এমন কথা শুনে রাহাত একটু হাসলো। মায়া এখনো রাহাতকে আঁকড়ে ধরে আছে শক্ত করে। রাহাত কন্টাক্টরের দিকে তাকালো। 

-নেক্সট টাইম থেকে একটু সাবধানে চেক করে তারপর ব্যাক করবেন। আমি আজকে বাসটা ধরতে পেরেছি তাই কিছু বললাম না। কিন্তু সবাই তো চুপ করে থাকবে না। বুঝেছেন?

-সরি স্যার। আসলে আপনাকে তো বাসের দিকে আসতে দেখেছিলাম। কোন ফাঁকে নেমেছেন খেয়াল ছিল না। সরি স্যার। আর ম্যাডাম। আমরা সত্যি সরি। আপনি এভাবে কাঁদবেন না। 

বাস ড্রাইভারের কথাটা শুনে রাহাত আর কিছু বললো না। চুপচাপ মায়াকে নিয়ে গিয়ে সিটে এসে বসে পড়লো। বাস স্টার্ট দিতেই রাহাত মায়াকে সোজা করে বসিয়ে দেয়ার চেষ্টা করতেই টের পেল মেয়েটা এখনো ভয়ে কাঁপছে। রাহাত আর মায়াকে ছাড়িয়ে না নিয়ে নিজের সাথেই জড়িয়ে রেখে চুলে বিলি কেটে দিলো। 

-আপনাদের বুঝি নতুন বিয়ে হয়েছে?

ডান পাশের সিট থেকে একটা মেয়েলি কণ্ঠে প্রশ্ন লটা শুনে রাহাত তাকিয়ে দেখলো মায়ার বয়সীই একটা মেয়ে কৌতূহল নিয়ে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে। মেয়েটার পাশে যে ভদ্রলোকটি বসা তাকে দেখে মেয়েটার হাসবেন্ড বলেই মনে হচ্ছে রাহাতের। রাহাত কিছু না বলে একটু হাসলো। মেয়েটা তাতে যেন আরেকটু প্রশ্রয় পেয়ে রাহাতের দিকে ঘুরে বসলো৷ 

-আপনার মিসেস বুঝি সকাল থেকে রেগে ছিল আপনার উপরে? ইশ! আপনাকে রেখে গাড়ি স্টার্ট দেয়ায় কি ভয়টাই না পেয়েছিলেন। এভাবে নিজের বউকে একা রেখে নামেন কেন আপনারা?

-ঝুমুর কি শুরু করেছ এগুলো? দেখছ উনার ওয়াইফ এমনিতেই প্রচন্ড ভয় পেয়ে আছে। কোথায় উনি নিজের ওয়াইফকে সময় দিবে, তা না তুমি তোমার প্রশ্নের ঝুলি মেলে বসলে? এমন পাগলামি করলে চলে? সরি ভাই। ওর কথায় কিছু মনে করবেন না। আমার ওয়াইফ একটু বেশি চটপটে। কথা বলতে খুব ভালোবাসে তো। তাই কখন কি বলবে মাঝে মাঝে সেটা বুঝে উঠতে পারে না।

-এই কি বললা তুমি? তুমি আমাকে বাচাল বললা? এতো রিকুয়েস্ট করার পর বান্ধবীর বিয়েতে নিয়ে এসেছ। আর সেইজন্য এভাবে অপমান করবা? থাকবোই না আমি আর। ঢাকায় ফিরেই সোজা বাপের বাড়ি চলে যাবো আমি। আর আসবো না। দেখবা তো তুমি---।

-আরে? ঝুম? কথা তো শোনো? 

ঝুমুর নামের মেয়েটা রাগ করে মুখ ঘুরিয়ে নেয়ায় মেয়েটার স্বামী মহাশয় তার রাগ ভাঙ্গানোর চেষ্টা করতে লাগলো। ঘটনাটা দেখে রাহাত হেসে ফেললো। মায়ার চুলে আলতো করে হাত বুলিয়ে দিতে গিয়ে বুঝতে পারলো মায়াবতীটা রাহাতের বুকেই কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে গেছে। মায়াকে সিটে ঠিক করে শুইয়ে দিয়ে মায়ার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকালো রাহাত। মায়াবতীটা যতোই রাগ করে থাকুক না কেন মেয়েটা এখনও ওকে আগের মতোই ভালোবাসে। আর ভালোবাসে বলেই হাজার অভিমান স্বত্বেও ফিরে আসে বারবার। আরেকট আঁট ঘাট বেঁধে চেষ্টা চালালে হয়তো এবারের মতো মায়াবতীর রাগটা ভাঙাতে পারবে। কথাটা ভাবতেই রাহাতের ঠোঁটের কোণে একটা মিষ্টি হাসির রেখা ফুটে উঠলো। বাসের পিছনে বেশ কিছুটা রাস্তা ছুটে আসায় ক্লান্ত হয়ে গেছে শরীরটা। ক্লান্তিতে রাহাতের চোখ বুজে আসছে বারবার। আর ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে যাওয়ার আগেও পাশের দম্পতির খুনসুটিমাখা ঝগড়াগুলোও কানে এসে বাজছে রাহাতের। এই ছেলেমানুষি খুনসুটিগুলোও কেন জানি প্রচন্ড ভালো লাগছে রাহাতের। মনে হচ্ছে এই দম্পতির জায়গায় কোনো এক সময় হয়তো ওরা দুজন থাকবে। রাহাত আর তার মায়াবতী, সাথে তাদের খুনসুটিতে ভরা ভালোবাসার নতুন এক অধ্যায়।

৪২!! 

বাসের ঝাঁকিতে ঘুমটা ভাঙ্গতেই মায়া আড়মোড় ভেঙ্গে পাশ ফিরতেই ঘুমন্ত রাহাতের মুখটা দেখে থমকে তাকিয়ে রইলো। মায়ার পাশের সিটেই হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে আছে মানুষটা। সন্ধ্যার আধো আলোয় লোকটার মুখটায় যেন একটা মায়াবী আভা খেলা করছে। রাহাতের পাশেই একটা একটা সাদা প্লাস্টিকের ব্যাগে কতোগুলো চিপস, চকলেট আর মাফিনের প্যাকেট দেখে মায়া ভ্রু কুঁচকে রাহাতের মুখে দিকে তাকালো আবার। লোকটা এইগুলো কিনতেই তখন নেমেছিল কথাটা বুঝতে আর দেরি হলো না মায়ার। বাস ছেড়ে দেয়ার মূহুর্তটা চিন্তা করতে গিয়ে ভয়ে একবার শিউরে উঠলো মায়া। এই মানুষটার উপরে তো প্রচন্ড রেগে আছে মায়া। তবু কেন কয়েকটা মিনিটের জন্য তাকে হারিয়ে ফেলছে ভেবে পুরো দুনিয়াটাই ওলোটপালোট হয়ে যাচ্ছিল মায়ার। মায়া রাহাতের দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে বাইরের দিকে তাকালো। ঘন অন্ধকারে চারপাশটা ছেড়ে যাচ্ছে। রাতের আঁধারেরা ধীরে ধীরে দিনের সমস্ত আলোর জায়গা দখল করে নিয়েছে। হয়তো এভাবেই ধীরে ধীরে মায়ার জীবনটাও অন্ধকারের সমুদ্রে ডুবে যাচ্ছে। 

মায়া একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার চোখ বুজে ভাবনার দুনিয়ায় হারিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলো। নিজের সাথেই যেন কোনো এক দ্বন্দ্বযুদ্ধে নেমেছে মেয়েটা। ঠিক করে উঠতে পারছে না জয় কার হবে। রাহাতের জন্য মায়ার ভালোবাসার নাকি এতোদিনের করা অবহেলায় জমা অভিমানের। ভালোবাসা এক কদম বাড়াতে চাইলেই অভিমান আর দশ কদম এগিয়ে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে মায়া না পারছে রাহাতকে আগের মতো আঁকড়ে ধরতে, আর না পারছে তার উপস্থিতি ইগনোর করতে। এ দোটানা থেকে মুক্তি কবে পাবে মেয়েটা কে জানে?

-সময় পাল্টাবে মায়াবতী। কিন্তু ভালোবাসা? সেটা সময়ের সাথে সাথে কিঞ্চিৎও কমবে না। বরং বাড়বে, বাড়তেই থাকবে। একবার ভরসা করে হাতটা ধরো, দেখবে আজীবন তোমায় বুকের মাঝে আগলে রাখবো৷ শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত ভালোবেসে যাবো কথা দিলাম। মৃত্যুর আগ মূহুর্তেও এক সেকেন্ডের জন্যও তোমাকে আমার চেয়ে আলাদা মনে করতে দিবো না। হাজার বছরও যদি বাঁচি তবে সেটা শুধু তোমার সাথে বাঁচতে চাই মায়াবতী। তুমিহীনা একটা সেকেন্ডও বাঁচার ইচ্ছে নেই আমার। কারণটা কি জানো? কারণ তুমি আমার ভালো থাকার কারণ, বেঁচে থাকার কারণ, হাসি আনন্দ, আমার সমস্ত সুখের কারণ। উপরওয়ালার কাছে শুধু একটাই প্রার্থনা, জীবনের শেষ অব্ধি যে তোমায় ভালোবেসেই বাঁচতে পারি। জীবনটা ছোটো হোক, আপত্তি নেই। কিন্তু আমাদের ভালোবাসায় যেন কখনো কমতি না হয়।

পাশ থেকে ফিসফিস কণ্ঠে রাহাতের কথাগুলো শুনে মায়া চমকে রাহাতের দিকে তাকিয়েছিল। আবছা আলো আঁধারিতে রাহাতের মুখটা হালকা বোঝা যাচ্ছে। রাহাতের চোখে মুখে ফুটে থাকা গাঢ় আবেগের রেশটুকু মায়ার চোখ এড়ালো না। এতো সহজে এই আবেগের মায়াজালে ধরা দেয়া ঠিক হবে কিনা সেটাই মায়া বুঝতে পারছে না। 

-এভাবে চোখে চোখ রেখো না গো মায়াবতী। তোমার ওই চোখের মায়ায় হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে ভিষণ। পরে নিজেকে সামলানো দায় হবে আমার। তখন তো আবার দোষ আমারই হবে।

-এমন পাগলামি করছেন কেন আপনি? 

-পাগলামি করছি না মায়াবতী। তোমার মায়ায় জড়াতে চাইছি নিজেকে। জানো তো মায়া জিনিসটা বড্ড অদ্ভুত, বড্ড বেহায়া। একবার যার উপরে মায়া পড়ে যায়, তার হাজার অবহেলার পরও তাকে ছাড়া বাঁচা দুষ্কর হয়। যেমনটা আমার হচ্ছে এখন। তোমার এই দূরে ঠেলে দেয়া মানতে কষ্ট হচ্ছে ভিষণ জানো? একটা বার সব ভুলে আগের মতো ভালোবাসতে পারবে না মায়া?

-মায়া জিনিসটা কতোটা অদ্ভুত, তার ক্ষমতা কতোটুকু আমার জানা নেই রাহাত। কিন্তু অবহেলা জিনিসটা অনেক কষ্টের। জানেন? কেউ যদি তার প্রিয় কারো অবহেলায় কঠিন হয়ে যায় তখন তাকে আগের রূপে ফিরে পাওয়ার কথা ভাবাটাও বোকামি। 

-হোক না বোকামি। তোমাকে জয় করতে একটু বোকামি ভাবনা ভাবতে হলে ভাবলাম। ক্ষতি কি তাতে? তাছাড়া কারো পারমিশন নিয়ে তোমায় ভালোবাসি নি আমি। তাই তোমাকে চাই কথাটা বলতে তোমার পারমিশনও লাগবে না। আর রইলো পড়ে তোমাকে নিজের করে পাওয়ার কথা-সে তো তুমি না চাইতেও আমার হয়ে গেছ। তোমার অভিমান ভাঙাতে না পারলে তোমার হাজার অভিমান সুদ্ধ তোমায় নিজের করে নিবো। নো প্রবলেম।

-মানে?

-মানে আমাকে ভাবতে দাও তো৷ তুমি বসে বসে চিপস খাও। আমাকে প্ল্যান করতে দাও। 

-হুম।

-একটা কথা জানো তো মায়া? প্ল্যানিং করে ভালোবাসা হয়না। আর হুট করে যে ভালোবাসাটা হয় তাকে অনুভব করার পর পিছিয়ে আসা রীতিমতো বোকামি। এই বোকামিটা আমি করবো না। কারণ তোমাকে ভালোবাসতে কোনো কারণ মাথায় আসে নি, আর যখন ভালোবেসেছি তখন যত বড় কারণই আসুক না কেন তোমাকে ছেড়ে যাবো না কোনোদিন। এইটুকু ভরসা অন্তত করতে পারো।

-ভরসা? জানেন একটা মেয়ে কখন নিজেকে সবচেয়ে সুখী ভাবে? যখন সে ভরসা করার মতো কাউকে পায়। আমিও পেয়েছিলাম। কিন্তু আফসোস হলো ভরসার মূল্যটা কেউ একজন দিতে পারে নি।

-একদিন দিতে পারে নি, কিন্তু আজ দিতে পারবে মায়াবতী। কারণ সে এখন তোমাকে হারাতে পারবে না। কিছুতেই না। তুমি হারাতে চাইলেও সুযোগটা এবারে সে তোমাকে দিবে না।
 

মায়া আর কথা না বাড়িয়ে টুকটুক করে চিপসে কামড় বসিয়ে রাহাতের কথাগুলো ভাবায় মন দিলো। রাহাত কিছু একটা প্ল্যানিং করার কথা বললো। কিসের প্ল্যানিং? আর এমন ঘুরপ্যাঁচ লাগানো কিসব বললো! এদিকে রাহাত নিজেও ভাবছে৷ মায়াবতীর রাগ, অভিমান ভাঙ্গানোর জন্য এবারে একটা সলিড প্ল্যান করা দরকার। কারো বুদ্ধিতে নয়, এবার নিজেই প্ল্যান করে মায়াকে জয় করতে মাঠে নামবে রাহাত। কিন্তু প্রশ্ন হলো কি করবে!

পরের দিন সন্ধ্যায়।
মিহান আর দিয়ার বিয়ের রিসেপশনের আয়োজন করা হয়েছে মিহানদের বাড়িতে। সেন্টমার্টিনে ডেস্টিনেশন ওয়েডিং শেষে ছোট্টো করে একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। বাড়ির ইয়ার্ডে ছোটোখাটো করে প্যান্ডেল সাজানো হয়েছে। সেখানেই আজ আরেকবার বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সাথে আত্মীয় স্বজনদের জন্য একটা ছোটোখাটো গেটটুগেদার। স্টেজে মিহান আর দিয়াকে বসানোর পর থেকে মায়া এটা ওটা কাজের ফাঁকে একটু পর পর গেইটের দিকে তাকাচ্ছে। ঠিক তাকাচ্ছে বললে ভুল হবে, কারো আসার অপেক্ষায় পথ চেয়ে বসে আছে মায়া। কিন্তু লোকটা কখন আসবে কে জানে! মায়া আরেকবার হতাশ হয়ে নিজের কাজে মন দেয়ার চেষ্টা করতেই কেউ একজন পিছন থেকে এসে জড়িয়ে ধরায় মায়া চমকে উঠলো। মায়া চমকে উঠলেও একটা মিষ্টি কন্ঠে 'মায়াআপু' ডাক শুনে মায়ার ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠেছে। মায়া হেসে মানুষটাকে টেনে নিজের সামনে নিয়ে আসলো। 

-আরে বাহ! লিজা তোমাকে তো দারুণ দেখতে লাগছে! দেখি দেখি লাজুক মুখটা একবার! 

মায়া এক পা পিছিয়ে এসে লিজার মাথা থেকে পা পর্যন্ত চোখ বুলিয়ে নিলো। লিজা বেচারি লজ্জায় একটু কুঁকড়ে গেল। মায়া হেসে লিজার টুকটুকে লাল শাড়ি পড়া মেকাপে রাঙা মুখটা দেখে নিলো। লিজার এমন লজ্জা পাওয়া দেখে মায়া মুখ টিপে একটু হাসলো। 

-লিজা? কি ব্যাপার বলো তো? তোমরাও কি আজ বিয়ে করছ নাকি? না মানে দারুণ দেখাচ্ছে কিন্তু। চাইলে একসাথে দুটো বিয়ের আয়োজন করা যায় আর কি। কাজী সাহেবও আছেন--। দিহান ভাইয়া কোথায়? উনাকে বলে দেখি রাজি হয় কিনা। কি বলো?

-আপু? 

লজ্জা পেয়ে লিজার মুখের রঙটা যত বদলাচ্ছে মায়া মজা পেয়ে আরো বেশি জ্বালাতন করছে মেয়েটাকে। লিজা শেষে লজ্জা পেয়ে দুহাতে মুখ ঢেকে ফেলেছে দেখে মায়া এগিয়ে এসে লিজার মাথায় হাত রাখলো।

-বাব্বাহ! কি লজ্জা পেয়েছে মেয়েটা! তা ম্যাডাম বিয়ের দাওয়াত কবে পাচ্ছি হুম হুম?

-বড় বোনের আগে কি ছোটো বোনের বিয়ে হয় বলো? আগে তোমার আর স্যারের বিয়ে হবে। তার পর না আমাদের সিরিয়াল আসবে--।

-মানে?

লিজা নিজেই কথাটা বলে ফেলে জিভ কামড়ালো। মুখ ফসকে কথাটা বলে ফেলেছে। এবার না সারপ্রাইজটার কথাও বলে দেয়। একটা কথাও পেটে থাকে না কেন! মনে মনে নিজেকেই গালি দিয়ে গুষ্ঠি উদ্ধার করলো লিজা। এখন মায়া জোর করে জানতে চাইলে তখন কি বলবে সেটা ভেবেই এই শ্রাবণ মাসের আধো বৃষ্টি আবহাওয়াতেও ঘামতে শুরু করেছে মেয়েটা। 

-লিজা? তুমি এখানে! আর তোমাকে আমি সবখানে খুঁজে মরছি। যাদের বিয়ে তাদের সাথে একবার দেখা করতে হবে তো। নইলে বন্ধু তো বিশ্বাসই করবে না তোমাকে নিয়ে এসেছি যে। এমনিতেই সেন্টমার্টিন থেকে এই এক শর্তে ছাড়া পেয়েছি আমি। আরে মিস মায়াবতীও এখানে দেখছি। কি খবর ম্যাডাম?

দিহানকে কথাগুলো বলতে বলতে এগিয়ে আসতে দেখে লিজা যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। দিহান হাসি হাসি মুখে মায়া আর লিজার পাশে এসে দাঁড়ালো। মায়া লিজাকে আর প্রশ্ন না করে দিহানের কথায় সায় দিয়ে হাসলো একটু।

-এই তো ভাইয়া। ভালো আছি৷ আপনাদের কি খবর?

-এই যে খবর আপনার বোনটাকে জিজ্ঞেস করুন। কেঁদে কেটে আমাকে টেনশনে ফেলে সেন্টমার্টিন থেকে ঢাকায় এনে এখন নাকি লজ্জায় আমার দিকে তাকাতেও পারছে না। এমন করলে হয় বলুন তো? 

দিহানের কথায়ও লিজাকে আবার লজ্জা পেতে দেখে মায়া হেসে ফেললো। মায়া কিছু বলার মতো পেল না তাই চুপচাপ হাসছে। দিহান একবার নিজের মোবাইলটা হাতে নিয়ে কিছু একটা দেখে মায়ার দিকে তাকালো।

-মায়া আমরা একটু মিহান আর দিয়া ভাবির সাথে দেখা করে আসি। পরে আবার হয়তো দেখা না করেই শুধু খাওয়া দাওয়া করেই চলে যাবো। হা হা হা। তাহলে কিন্তু রক্ষে থাকবে না। 

-জি ভাইয়া। ওরা স্টেজেই আছে। 

-আচ্ছা। তুমি তোমার অপেক্ষা চালিয়ে যাও। আমরা নাহয় আরেকটু পরেই আবার খোঁজ নিতে আসবো। কি বলো লিজা?

দিহানের কথায় এবারে মায়া একটু লজ্জা পেয়ে গেল। যার জন্য অপেক্ষা করছে তার আসার নাম নেই, এদিকে সবাই চলে এসেছে এই লোকটা ছাড়া। দিহান লিজাকে নিয়ে স্টেজের দিকে চলে যেতেই মায়া আবার একবার গেইটের দিকে তাকিয়ে বিরক্ত হয়ে ইয়ার্ডের অন্যদিকে হাঁটা ধরলো। এবারে প্রচন্ড রাগই হচ্ছে মায়ার। ঢাকায় আসার পর একবারের জন্যও কোনো যোগাযোগ করে নি লোকটা। আর আজকে মিহানের রিসেপশনেও আসে নি। আধো আসবে কিনা সেটা নিয়েও মায়ার এখন চিন্তা হচ্ছে।  কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই স্টেজ থেকে কিছুটা দূরে চলে এসেছিল মায়া। আশেপাশের কোলাহল কখন থেমে চারদিক নিশ্চুপ হয়ে গেছে সেটা একদমই টের পায়নি মেয়েটা৷ হঠাৎ পিছন থেকে কারো কণ্ঠস্বর শুনে চমকে উঠলো মায়া। চিরচেনা এই কণ্ঠ শুনে পিছনে ফিরেই মায়া চমকে উঠলো। মায়ার থেকে বড় জোর কয়েক হাত দূরে হাঁটু গেড়ে বসে এক গুচ্ছ লাল গোলাপ এগিয়ে ধরে আছে রাহাত। তার বলা কথাগুলো যেন মায়ার চারপাশে আকাশে বাতাসে ঘুরে এসে আবার মায়ার কানেই এসে বাজছে। 

-তোমাকে ভালোবাসবো বলে এতোটা পথ ছুটে এসেছি মায়াবতী। তোমার অভিমান ভাঙাবো বলে নিজের করে নিতে এসেছি। তোমার শাসন পাবো বলে বারবার ভুল করেছি। তুমি শুধরে নিবে বলে তোমাকে পেয়েও বারবার হারিয়েছি। তোমার পাগলামিতে নিজেও হেরে গেছি শতবার। তারপরও প্রত্যেকবার নতুন করে তোমাকে পাওয়ার স্বপ্ন সাজিয়েছি। নতুন করে তোমাকে রাঙানোর জন্য তুলিতে তোমার নামের রঙ মাখিয়েছি। নতুন করে তোমাকে আর হারানোর সাহস নেই। তাই অধিকার নিয়ে তোমাকে বাঁধতে এসেছি। আমৃত্যু এই বাঁধনটায় বাঁধা পড়তে রাজি আছো তো মায়াবতী? এই পাগলাটে লোকটাকে আদরে, শাসনে আগলে রাখতে রাজি তো তুমি? তাকে আরো একবার ভালোবাসতে রাজি আছো কি তুমি?

৪৩!! 

-Say yes, Maya. Say yes.

পাশ থেকে অনেকগুলো হাততালির শব্দ শুনে মায়া চমকে রাহাতের দিক থেকে চোখ সরিয়ে সামনের দিকে তাকাতেই ওদেরকে ঘিরে থাকা ভিড়টাকে দেখে থতমত খেয়ে গেল। মায়া হা করে ভিড়টার মধ্যে মা, চাচ্চু, চাচী, মিহান, দিয়া, দিহান, লিজা সবার হাসি মুখগুলো দেখলো। সবাই ওদের ঘিরে দাঁড়িয়ে হাসছে কেন সেটা বুঝতে আর বাকি রইলো না মায়ার। মায়া আবার রাহাতের দিকে তাকিয়ে দেখলো রাহাত এবারে এক হাতে গোলাপের তোড়াটা ধরে রেখেছে, আর অন্য হাতে একটা খোলা একটা বক্সে জ্বলজ্বল করছে একটা আংটি। মায়া রাহাতের দিকে তাকাতেই রাহাত মিষ্টি করে হাসলো এবারে। 

-উইল ইউ ম্যারি মি মায়াবতী?

মায়া চোখ বড় বড় করে রাহাতের দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে বোঝার চেষ্টা করলো কথাটা সত্যি শুনেছে কিনা। অবশ্য বেশিক্ষণ ভাবার সময় পেল না মায়া। তার আগেই আবার ওদের চারপাশটা করতালিতে মুখরিত হয়ে উঠলো। মায়া এক পা দু পা করে এগিয়ে এসে রাহাতের একদম সামনে এসে দাঁড়িয়েছে ততক্ষণে। মায়া ইতস্তত করে সবাইকে এক নজর দেখে নিয়ে আবার রাহাতের দিকে তাকালো। লোকটা রাজ্যের আশা দু চোখে জড়ো করেছে যেন আজকে। এই আকুল আবেদন, এতো মায়া ভরা চাহনি এড়িয়ে যাওয়ার সাধ্য কি মায়ার কোনো কালে ছিল?

-প্লিজ মায়া আজকে ফিরিয়ে দিও না? অভিমান করতে চাও তো? আমি কখনো বাধা দিবো না। রাগ করে গাল ফুলিয়ে ঝগড়া করতে চাইলেও সেই সুযোগটা তোমার জন্য চব্বিশ ঘণ্টাই থাকবে। তবে দূরে যাওয়ার কথা ভেবো না একবারও প্লিজ। স্মৃতিকে হারিয়ে বুঝেছি নিজের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদটাকে হারানোর কষ্ট কতোটুকু। তুমি তো আমার এই নতুন জীবনটার সবচেয়ে বড় সম্পদ, বেঁচে থাকার অবলম্বন। তোমাকে হারাতে পারবো না। প্লিজ মায়াবতী?

-আপনি প্লিজ উঠুন? এভাবে হাঁটু গেড়ে বসে আছেন কেন? উঠুন?

-আগে তুমি বলো তুমি রাজি কি না। আমার সাথে নিজের বাকি জীবনটা সাজাতে, আমার রঙে নিজেকে রাঙাতে রাজি আছো কি তুমি?

-আপনি উঠবেন প্লিজ? আপনার সাথে আমার কথা আছে। আলাদা করে। দয়া করে সেগুলো শুনবেন আগে? 

-ওহ! আচ্ছা ঠিক আছে। চলো?

মায়া বাড়ির ভিতরের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় মায়ার মা, চাচা, চাচী কিছু একটা বলার জন্য এগিয়ে আসার চেষ্টা করেই মায়ার থমথমে মুখটা দেখে থেমে গেল। রাহাতও গোলাপের তোড়া আর আংটির বক্স নিয়ে মায়ার পিছন পিছন চললো। মায়া মিহানদের বাড়িতে যে রুমটায় ছিল সেটায় রাহাতকে নিয়ে এলো। রাহাত রুমে ঢুকতেই মায়া রুমের দরজাটা বন্ধ করে রাহাতের দিকে ফিরলো। রাহাত এতোক্ষণ টেনশনে থাকলেও এবারে কিছুটা অবাক হলো। মায়া ওর উপরে যে রেগে নেই সেটা রাহাত বুঝতে পারছে। কিন্তু মেয়েটা সোজা কথায় সেটা স্বীকার করছে না কেন সেটাই রাহাতের মাথায় ঢুকছে না। রাহাত এবারে ফুল আর আংটি বিছানার উপরে রেখে মায়ার একটা হাত ধরে টেনে নিজের কাছে আনলো। মায়া ছোটার জন্য ছটফট করছে দেখে রাহাত মায়াকে নিজের সাথে আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে নিলো। মায়ার ছটফটানি তাতে আরেকটু বেড়ে গেল ছাড়া পাওয়ার জন্য।

-কি করছেন কি রাহাত? ছাড়ুন? আমি আপনার সাথে আলাদা করে কথা বলবো বলে রুমে এসেছি। এভাবে জাপটে ধরে থাকার জন্য নয়।

-তো বলো তুমি কি বলবে। আমি কি তোমাকে বলতে মানা করেছি নাকি? 

-এভাবে ধরে রেখেছেন কেন? ছাড়ুন। আমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরার অধিকারটা কিন্তু আপনাকে আমি দিই নি। কথাটা ভুলে যাচ্ছেন কেন আপনি?

-তোমাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরবো। একদম নিজের বুকের মধ্যে লুকিয়ে রাখবো বুঝলে? আর অধিকারের কথা বলছ? সেটা কাউকে দিতে হয় না। অধিকারটা অর্জন করে নিতে হয়। আমিও তোমাকে ভালোবেসে আগলে রাখার অধিকারটা অর্জন করে নিয়েছি মায়াবতী। কবে থেকে জানো? যেদিন তুমি নেশার ঘোরে নিজের ভালোবাসার কথাটা আমার কাছে স্বীকার করেছিল। সেদিন থেকে তোমার উপরে শুধু আমার অধিকার আছে তোমাকে ভালোবেসে ছুঁয়ে দেয়ার, এভাবে শক্ত করে তোমাকে জড়িয়ে ধরার।

-তাই বারবার নিজের থেকে দূরে ঠেলে দিয়েছেন আমাকে তাই না? 

-এখনো সেই ভুলগুলোর শাস্তিই দিবে মায়াবতী? একটা বার সেই ভুল শোধরানোর সুযোগ দিবে না?

-না দিবো না। কি হবে সুযোগ দিয়ে? সুযোগ দিয়ে তো ভালোবাসা হয় না রাহাত। ভালোবাসাটা আপনাআপনি হয়ে যায়। 

-সেটাই তো বোঝাতে চাইছি ম্যাডাম। এই পাগলীটার মায়ায় যে আটকে গেছি। তাই তো তাকে ভালোবাসার বাঁধনে বাঁধতে চাইছি। 

মায়া চুপ করে আছে দেখে এবারে রাহাত একহাতে মায়ার কোমড় জড়িয়ে নিয়ে অন্য হাতে মায়ার মুখটা তুলে ধরে চোখে চোখ রাখলো।

-দেখো মায়া। তুমি কি ভাবছ আমি জানি না। কিন্তু বিশ্বাস করো প্রত্যেকটা ভোরে ঘুম ভাঙার পর তোমাকে আমার পাশে চাই। তুমি অভিমান করে যখন গাল ফুলিয়ে বসে থাকবে, তখন তোমার অভিমান ভাঙিয়ে তোমার এই মিষ্টি ঠোঁটজোড়া দখল করে নিতে হলেও তোমাকে চাই আমার। খুঁটিনাটি ঘরোয়া বিষয়ে দুজনে তুমুল ঝগড়া শেষে তোমায় আদরের সাগরের ভাসাতে আমার প্রত্যেকটা দিন তোমাকে পাশে চাই। বাড়াবাড়ি পর্যায়ের ঝগড়ায় তুমি যদি বাপের বাড়ি যাওয়ার বায়না ধরো, তখন শাস্তিস্বরূপ তোমার শরীরে আমার চিহ্ন বসাতে হলেও তোমাকে পাশে চাই। এই যে বারবার দূরে যাওয়ার জেদ করো, তার জন্য এমন করে তোমার নিচের ঠোঁটটায় অভিমানের কামড় বসাতেও তোমাকে চাই আমার। মোট কথা আমার সকাল দুপুর সন্ধ্যা রাত্রি-চব্বিশ ঘন্টা আমার তোমাকে চাই। ভালোয় ভালোয় মেনে যাও হ্যাঁ? নইলে জোর করতে হলে কিন্তু পরে আমাকে দোষ দিতে পারবে না বলে দিলাম। 

কথা বলার ফাঁকে রাহাত আলতো করে মায়ার নিচের ঠোঁটটা একবার কামড়ে ধরে ছেড়ে দিয়েছে। মায়া একবার কেঁপে উঠে চোখ বুজে নিয়েছিল। কিন্তু রাহাতের শেষের কথাটা শুনে মায়া ভ্রু কুঁচকে রাহাতের মুখের দিকে তাকালো। 

-কি করবেন আপনি?

-এখনো বলতে হবে কি করবো? তার চেয়ে রাজি হয়ে গেলে ভালো হতো না বলো? বাকি প্রেমটুকু নাহয় বিয়ের পরে কন্টিনিউ করতাম।

-আবার যদি ফেলে যেতে চান তখন? 

-যাতে তোমায় ছাড়ার সাহস দেখাতে না পারি তার জন্যই তো বাঁধতে চাইছি রে মায়াবতী। আর তোমাকে ছেড়ে কতদূরই বা যাবো বলো? 

-------------------------------

-এখনো বিশ্বাস করতে ভয় পাচ্ছ? নাকি ভরসা করতে পারছ না? আচ্ছা বেশ! তুমি নিজের মনকেই নাহয় প্রশ্ন করো এবার। যদি তুমি রাজি না থাকো আর একবারও জোর করবো না আমি। তবে হ্যাঁ। উত্তরটা যদি না হয় তবে আজকের পর আর তোমার সামনে এসে দাঁড়াবো না প্রমিস। 

রাহাত মায়াকে ছেড়ে দিয়ে কপালে ছোট্ট করে একটা চুমো এঁকে দিয়ে সরে আসার চেষ্টা করতেই মায়া রাহাতের পাঞ্জাবির কোণা ধরে টেনে ধরলো। মায়াবতীটা তাকে আটকাবেই সেই ব্যাপারে রাহাতের কোনো সন্দেহই ছিল না। তাই ঠোঁটের কোণে একটা হাসি ফুটে উঠেছে রাহাতের। অবশ্য রাহাত একটু গম্ভীর মুখ করে মায়ার দিকে ফিরে তাকালো। মায়া রাহাতের একদম কাছ এসে দাঁড়িয়েছে এবারে।

-প্রশ্নের উত্তরটা না জেনেই চলে যাচ্ছেন যে? আমি কি বলেছি আপনাকে যে আমি রাজি না? 

-রাজি যে সেটাও তো বলছ না। তাছাড়া এতো ভাবতে যেহেতু হচ্ছে তার মানে তোমাকে বিয়ের আশায় বসে থাকা বোকামিই হবে। এর চাইতে মিহানের রিসেপশনে এতো সুন্দরী মেয়েরা এসেছে তাদের কারো পিছনে ঘন্টা খানেক সময় দিলে কালই বিয়েটা করতে পারবো কনফার্ম---।

-এই কি বললেন আপনি? মেয়ে পটাতে যাবেন তো? তো যান। ধরে রেখেছে কে আপনাকে? বিয়ে করবো না আমি আপনাকে। হুহ। যান তো যান আপনি।

-তাই নাকি ম্যাডাম? সত্যি যাবো তো? পরে কিন্তু হাজার ডাকলেও ফিরবো না---।

-যান না আপনি? ধরে কে রেখেছে? 

মায়া রাহাতের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে রাগে ফুঁসছে। লোকটার সাহস হয় কি করে এসব বলার? কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ বাম হাতটায় টান অনুভব করে রাগে লাল হয়ে পিছনে ফিরে তাকালো মায়া। ততক্ষণে রাহাতের আংটিটা মায়ার অনামিকায় চিকচিক করছে। আর রাহাত আবার হাঁটু গেড়ে মায়ার দিকে গোলাপের তোড়া বাড়িয়ে ধরে আছে। 

-ভেজা চুলে যে নিজের প্রেয়সীকে দেখে নি, সে নাকি পৃথিবীর অর্ধেক সৌন্দর্যই মিস করেছে মায়াবতী। আর এই শ্রাবণ ধারায় নাকি প্রিয়তমার হাতে হাত রেখে যে ভিজতে পারে নি, সে নাকি কখনো ভালোবাসতেই শিখে নি মায়াবতী। আমি কিন্তু প্রত্যেকটা দিন এই অপার সৌন্দর্যটা উপভোগ করতে চাই। আর প্রত্যেক বছরের শাওনের জলে আমার মায়াবতীর হাতে হাত রেখে ভিজতে চাই জীবনের শেষ শ্রাবণ পর্যন্ত। শুধু সুখের সময়টায় নয়, জীবনের শেষ দিনটা পর্যন্ত আমার প্রত্যেকটা হাসি-কান্নায়, সুখে দুঃখে তোমাকে পাশে পেতে চাই মায়াবতী। সুযোগটা দিবে মায়াবতী?

মায়া এবারে নিজের ঠোঁট কামড়ে ধরে কোনোমতে কান্না আটকে মাথা নেড়ে সায় জানিয়ে রাহাতের হাত থেকে গোলাপের তোড়াটা নিয়ে রাহাতকে টেনে তুললো ফ্লোর থেকে। রাহাতও আর অপেক্ষা না করে মায়াকে শক্ত করে নিজের সাথে জড়িয়ে নিলো। তবে এবারে জোর করে নয়, অধিকার নিয়েই নিজের ভালোবাসাটা আগলে নিয়েছে লোকটা। 

এক সপ্তাহ পর। 
ফুলে ফুলে সাজানো বাসরের মধ্যমনি হয়ে রাহাতের জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনছে তার মায়াবতী। কোথাও টুং করে একটা শব্দ শুনলেও বুকের ঢিপঢিপ শটা যেন শতগুণ বেড়ে যাচ্ছে মায়ার। এদিকে ভদ্রলোকের আসার নামও নেই। অন্যদিকে ভারি বেনারসি পড়ে রাহাতের জন্য অপেক্ষায় বসে থাকতে থাকতে বেচারি কাহিল। মায়া বিরক্ত হয়ে বিছানা থেকে সবে পা নিচে রেখেছে এমন সময় রাহাত রুমে আসলো। মায়া বিরক্তি ভুলে আবার তাড়াতাড়ি জড়োসড়ো হয়ে ঘোমটা টেনে বিছানায় বসলো। রাহাত এক পা দু পা করে এগিয়ে এসে মায়ার পাশে এসে বসলো। হালকা হাতে মায়ার মুখের উপর থেকে ঘোমটা সরিয়ে নিয়ে মায়ার ভারি মেকাপ করা নববধূর রূপটা দেখলো রাহাত বেশ কিছুক্ষণ ধরে। মায়া একটু সাহস করে চোখ মেলে রাহাতের দিকে তাকাতেই রাহাত মুচকি হেসে মায়ার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে মায়াকে একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিলো। 

-ভারি শাড়িটা পড়ে থাকতে তো কষ্ট হচ্ছে মায়াবতীর। শাওয়ার নিয়ে এই হালকা শাড়িটা পড়ে নাও কেমন? মায়াবতীটাকে আজ নাহয় শুভ্রপরীর রূপে দেখি। কেমন?

মায়া প্যাকেটটা নিয়ে গুটিগুটি পায়ে ওয়াশরুম গিয়ে ঢোকার পর রাহাত নিজের কাজে মন দিলো। মায়ার ভারী মেকাপ তুলতে তুলতে যতক্ষণ লাগবে, সেই সময়ের মধ্যে রাহাত নিজের কাজটা করে নিতে অসুবিধা হবে না। তাই চটজলদি কাজ শুরু করলো। মায়াও মেকাপ তুলে শাওয়ার নিয়ে রাহাতের দেয়া প্যাকেট থেকে নতুন শাড়িটা গায়ে জড়িয়ে নিলো। তুষারের মতো ধবধবে সাদা শাড়িটায় স্টাইপের কাজ করা থাকায় বাল্বের আলো পড়ে চিকচিক করছে যেন শাড়িটা। শাড়িটা পড়ে ওয়াশরুম থেকে থেকে বের হতে গিয়ে রীতিমতো ঘাবড়ে গেল মায়া। পুরো রুমটা ঘুটঘুটে অন্ধকার। মায়া একবার ঢোক গিলে রুমে পা দিয়ে অন্ধকার হাতড়ে রাহাতকে খোঁজার চেষ্টা করলো। 

-রাহাত? কো-কোথা-কোথায় আপনি? রুমটা এতো অন্ধকার করে রেখেছেন কেন? কারেন্ট চলে গেছে নাকি?

-না সুইটহার্ট। আরেকটু সামনে এসো। 

-কিছু দেখতে পাচ্ছি না। লাইট অন করুন না প্লিজ?

-উঁহু। নো মাই ডিয়ার। ওয়েট আমার হাত ধরে এসো। এখন লাইট জ্বালানো যাবে না।

-হুম।

কথাগুলোর মাঝেই রাহাতের হাতের স্পর্শ পেল মায়া। রাহাত হাত ধরে মায়াকে এনে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে আবার যেন অন্ধকারে মিশে গেল। অবশ্য এবার প্রায় কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই বিছানার পাশে তিনটে মোমবাতি একে একে জ্বলে উঠলো। একটু পরে দেখতে দেখতেই ঠিক উল্টোদিকেও আরো তিনটে মোমবাতি জ্বলে উঠলো। আর সবশেষে বিছানার থেকে আরো কিছুটা দূরে এক গুচ্ছ মোমবাতির আলোয় রাহাত মায়ার বাসরঘরটা অদ্ভুত মায়াবী আলোয় উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। মায়া এতোক্ষণে খেয়াল করলো বিছানার উপরে গোলাপের পাপড়ির বদলে বেলীফুলের একটা ছোটোখাটো পসরা সাজানো হয়েছে। মায়া অবাক হয়ে রুমটায় চোখ বুলিয়েই বুঝতে পারলো শুধু ফুলগুলো নয়, পুরো রুমটাই যেন হঠাৎ করে ধবধবে সাদা রঙে বদলে গেছে। মনে হচ্ছে মায়া ভুল করে বরফের রাজ্যে চলে এসেছে। রাহাত এবারে মায়ার কাছে এসে বসতেই মায়া খেয়াল করলো বিয়ের শেরওয়ানি বদলে রাহাত নিজেও এখন শুভ্রতার রাজকুমার বেশে মায়ার সামনে হাজির হয়েছে। মায়ার কৌতূহলী মুখের দিকে তাকিয়ে রাহাত হেসে মায়ার হাতে সেদিনের ফাইলটা ধরিয়ে দিয়ে মিটিমিটি হাসছে। মোমবাতির আধো আলোয় ফাইলের কাগজগুলো কিসের সেটা বুঝতে না পেরে মায়া রাহাতের মুখের দিকে তাকালো।

-এটা কি?

-প্রত্যেক বছর আমাদের ম্যারেজ এনিভার্সারি দুইবার করে হবে। একটা হলো পেপারে সাইন করার ডেইটে, আরেকটা আজকের দিনে। 

-মানে কি? কিসের সাইন করার কথা বলছেন?

-কাগজগুলো না পড়েই তো রেগেমেগে সাইন করে দিয়েছিলে। এতো রাগ না করে একটু ঠান্ডা মাথায় কাগজগুলো পড়ে দেখলেই বুঝতে পারতে ওটা কোনো রেজিগনেশনের পেপার ছিল না। ছিল তোমার আমার ম্যারেজ রেজিস্ট্রির কাগজ। এক বউকেই দুই বার বিয়ে করলাম। হা হা হা। তাই ম্যারেজ এনিভার্সারিও হবে বছরে দু বার।

-আপনাকে তো আমি? এসবের মানেটা কি?

-মানে খুব সিম্পল। ভালোয় ভালোয় বিয়েতে রাজি না হলে জোর করে তুলে আনতাম। আমার লিগ্যাল বউ। হা হা হা। 

-আপনাকে তো আমি। এখানে না জানিয়ে সাইন করলেই কি বিয়ে হয়ে যাবে নাকি? আজব!

- তাই তো আবার সব নিয়ম মেনে বিয়ে করলাম আমার মায়াবতীকে। যাতে কোনো দোটানা না থাকে কারো মনে। 

মায়া কিছু না বলে বিছানা থেকে নামার চেষ্টা করতেই রাহাত মায়াকে বেলীফুলের বিছানায় শক্ত করে চেপে ধরে মায়ার লজ্জারাঙা মুখের দিকে তাকালো। রাহাতের উষ্ণ নিঃশ্বাসগুলো মায়ার চোখে মুখে এসে পড়ে নতুন করে লজ্জায় রাঙিয়ে দিয়ে যাচ্ছে মায়াকে। তাই হয়তো রাহাতের চোখে চোখ রাখা দায় হয়েছে মায়ার। রাহাত কয়েক সেকেন্ড মায়ার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে মায়ার কানে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে হালকা গলায় গান ধরলো। গানের প্রত্যেকটা শব্দের সাথে রাহাতের স্পর্শগুলোও আরো গভীর হলো। যে ঘোর লাগানো স্পর্শগুলো দিয়ে রাহাত মায়াকে নিয়ে ভালোবাসার অন্য কোনো দুনিয়ায় হারিয়ে যেতে চাইছে। সেই ভালোবাসার দুনিয়াতেও মায়াবী আধো আলোর রাজ্যে ভালোবাসাগুলো গানের সুর হয়ে ভেসে যাচ্ছে। সেই শুভ্রতার রাজ্যে রাহাত মায়াবতীর নতুন ভালোবাসার গল্প রচিত হচ্ছে। আর সাথে একটা গুনগুন করা গান।

"শীতল বাতাসে, দেখেছি তোমায়
মেঘ মিলনে চেয়ে রাগ করো না
মন চায় তোমায় আজি রাতে

বৃষ্টি তো থেমেছে অনেক আগেই
ভিজেছি আমি একাই
আসতো যদি বিভীষিকা
খুঁজেও পেতেনা আমায়
মেঘ মিলনে চেয়ে রাগ করো না
মন চায় তোমায় আজি রাতে।

ঝুমঝুম পাতালি হাওয়ার সাথে
খুঁজেছি শুধুই তোমায়
পেছাতে পারে নি ঝড়ো হাওয়া
খুঁজেই নিয়েছি তোমায়

ভুলে গিয়েছি মন শত অভিমান
মন চায় তোমায় কাছে পেতে।
শীতল বাতাসে, দেখেছি তোমায়
মেঘ মিলনে চেয়ে রাগ করো না
মন চায় তোমায় আজি রাতে।"



                                    ***(সমাপ্ত)***
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।