সদ্য ঘুম থেকে উঠেছে সামার। দুপুরের ঘুম। ভায়োলেট জানালার পর্দা সরিয়ে দিতেই বিকেলবেলার মিষ্টি রোদ এসে ঘরে ঢুকল। মন ভালো হয়ে গেল তার। ঠিক তখনই ঘরে প্রবেশ করলেন পারভীন। হাতে ধরা মোবাইলটা সামারের দিকে এগিয়ে দিয়ে তিনি বললেন, 'অর্ণবের মা, কথা বল।'
হতভম্ব হয়ে পারভীনের দিকে তাকিয়ে রইল সামার। হাই তুলতে তুলতে মোবাইল কানে ধরে সে বলল, 'আসসালামু আলাইকুম শাশুড়ী আম্মা, ভালো আছেন?'
পারভীনের এবার হতভম্ব হওয়ার পালা। সামার বলল, 'জি আম্মা আমিও ভালো আছি। আমি একটু ঘুমাচ্ছিলাম। ফ্রেশ হয়ে এসে কল দেবো শাশুড়ী আম্মা।'
সামার মোবাইল এগিয়ে দিলো পারভীনের দিকে। কোনোমত কথা বলা শেষ করেই ভয়ংকর রেগে পারভীন বললেন, 'এত বেয়াদবি কার কাছে শিখেছিস সামার? মুরুব্বিদের সঙ্গে কেউ এভাবে কথা বলে?'
'শাশুড়ীকে শাশুড়ী ডাকলেও বেয়াদবি হয়ে যায় মা?'
'চুপ কর বেয়াদব মেয়ে।'
'আচ্ছা ঠিক আছে, আমি বেয়াদব। এখন যাও তো মা।'
পারভীন রাগে গজগজ করতে করতে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। এ ঘর থেকে শোনা গেল তার মেজাজী গলা, 'আমিও দেখবো তুই কতদূর যাইতে পারিস। মান সম্মান কিচ্ছু নষ্ট করবি তো তোর মায়ের মরা মুখ দেখবি তুই।'
সামার কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল। ভায়োলেট বলল, 'প্লিজ আপু থাম। আমি মাকে সামলাচ্ছি।'
কিন্তু সামলানো আর হল না। ইতিমধ্যেই তিনি অর্ণবকে কল দিয়ে বাসায় আসতে বলে দিয়েছেন। অফিস থেকে দ্রুত বেরিয়ে চলে এসেছে অর্ণব। সামার হাত মুখ ধুয়ে নাস্তা করার জন্য অপেক্ষা করছে।
ভায়োলেট বলল, 'টেবিলে নাস্তা দিয়েছে আপু, খেতে যা।'
'তোরটা রুমে নিয়ে আসলি, আমারটাও রুমে নিয়ে আসলে কী হতো।'
'তোকে টেবিলে গিয়ে খেতে হবে। গিয়ে দ্যাখ কী অপেক্ষা করছে তোর জন্য।'
'স্পেশাল কিছু বানানো হয়েছে নাকি আমার জন্য?'
কথাটা বলতে বলতে সামার ডাইনিংয়ে প্রবেশ করেই ভিড়মি খেয়ে গেল। চেয়ারে বসে আছে অর্ণব সাহেব। পরনে ফর্মাল শার্ট, প্যান্ট ও টাই। দেখেই বোঝা যাচ্ছে সদ্য অফিস শেষ করে ফিরেছে।
সামার পিছিয়ে যেতে গিয়েও এগিয়ে গেল। অর্ণবের পাশাপাশি চেয়ার টেনে নিয়ে বসলো সে। নাস্তার বাটি এগিয়ে নিয়ে খেতে শুরু করল। অর্ণব মাথা নিচু করে বসে আছে তখনও।
সামার বলল, 'খান। বসে আছেন কেন?'
বিব্রত ভঙ্গিতে অর্ণব খাবার খেতে শুরু করে। এমন সময় পারভীন প্রবেশ করলেন ঘরে। নিজের হাতে অর্ণবকে আপ্যায়ন করে তিনি হাসিমুখে বললেন, 'কতদিন হলো তুমি আসো না বাবা। মাঝেমাঝে আসলে আমরা কত খুশি হই।'
'জি আন্টি। আমার এখন কাজের চাপ একটু বেশী। অফিস থেকে সোজা এখানে এলাম।'
'চাপ তো থাকবেই। তাই বলে বাবা মাকে ভুলে গেলে হবে?'
সামারের বলতে ইচ্ছে করছিল, 'নিজের মেয়েকে তো কখনো আসতে বলো না, পরের ছেলের জন্য এত দরদ?' কিন্তু বলতে পারল না। মাঝেমাঝে কথা হজম করতে হয়।
পারভীন বললেন, 'তোমার মা বাবা ভালো আছেন?'
'জি আন্টি।'
'খেয়েদেয়ে সামারকে নিয়ে একটু বাইরে যেও৷'
অর্ণব চমকে ওঠে। পাশে বসা মেয়েটার সঙ্গে তার চোখাচোখি হয়। মেয়েটির চোখে আগুনের ফুলকি। মাকে রাগ দেখাতে গিয়েও সংবরণ করে নেয় সে।
মৃদু স্বরে উত্তর দেয়, 'মা আমি আজ বাইরে যাবো না। ইচ্ছে করছে না।'
'আমি যেতে বলেছি সামার।'
'আজকে না।'
'আজকেই যা। যা যা কিনতে দেবো দুইজন মিলে কিনে নিয়ে আসবি।'
সামার চোখ মুখ শক্ত করে বসে রইল। তার ইচ্ছে করছে রাগে গলা ফাটিয়ে একটা চিৎকার দিতে। নাস্তার টেবিল থেকে উঠে দ্রত জামাকাপড় পরে সামার বেরিয়ে এলো। অর্ণবের খাওয়া তখনো শেষ হয়নি।
সামার বলল, 'উঠুন।'
পারভীন অগ্নিমূর্তি ধারণ উঠলেন, 'ছেলেটাকে খাওয়া থেকে টেনে তুলে নিয়ে যাবি নাকি?'
মেয়ের কাণ্ড কারবার কিছুই বুঝতে না পেরে দিশেহারা হয়ে যান তিনি। সামার মুখ শক্ত করে বসে রইল।
পরিস্থিতি দেখে হাত ধুতে যায় অর্ণব। পারভীন কিছু বলার আগেই সে বলে, 'আমার খাওয়া হয়ে গেছে আন্টি।'
পারভীন আর কথা বাড়ালেন না। এমনভাবে তাকালেন, যার অর্থ- আমিও দেখবো তুই কতদূর যেতে পারিস।
দুই মা মেয়ের মাঝে অদৃশ্য এক প্রতিদ্বন্দ্বিতা সৃষ্টি হয়েছে। পারভীন বরাবরই রূঢ় প্রকৃতির হলেও কখনো এমন বিতণ্ডায় পড়তে হয়নি তাকে। তিনি সামারের হাতে টাকা তুলে দিয়ে বলে দিলেন অর্ণবের জন্য জামাকাপড়, জুতা ও একটা ওয়ালেট কিনে দিতে। সামার ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কোনো প্রত্যুত্তর দিতে পারল না।
বাসা থেকে বেরিয়ে একটা অর্ণব দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়িয়ে থাকে। সামার একটা রিকশা ডেকে নেয়। জড়োসড়ো হয়ে বসল অর্ণব। কোনো আচরণে সামারকে বিরক্ত করার ইচ্ছে তার নেই।
সামার বলল, 'আপনি যে ঝামেলা পাকিয়েছেন, এটা থেকে আমায় উদ্ধার কীভাবে করবেন বলুন তো?'
অর্ণব ইতস্তত করতে করতে বলল, 'আর কিছুদিন ম্যানেজ করে নিন প্লিজ। তারপর আমি বাসায় জানাবো আপনার সঙ্গে আর কোনো বনিবনা হচ্ছে না।'
সামার চোখ বড়বড় করে তাকালে অর্ণব ঝটপট উত্তর দেয়, 'আপনার দোষ দেবো না। বলবো আমারই আপনাকে ভালো লাগে না। আশাকরি এটা শুনলে আপনার মা বাবাও আর কিছু বলবেন না।'
'বলবেন না হয়তো। কিন্তু আম্মু ভয়ংকর রেগে যাবে আপনার ওপর। আর কোনোদিনও আম্মু আপনার মুখ দেখতে চাইবে না।'
'দেখার প্রয়োজনও নেই।'
সামার কয়েক পলক তাকিয়ে রইল অর্ণবের পানে। তারপর একটা বড় শ্বাস নিয়ে বলল, 'ইদানীং আমার মন মেজাজ ভালো যাচ্ছে না। আমি একটা হইচই করা টাইপের মেয়ে। অথচ কয়েকদিন ধরে সারাটা ক্ষণ মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে থাকে। কারণটা কী জানেন?'
'আমার জন্য?'
'হ্যাঁ, আপনার জন্য।'
অর্ণবের মুখটা অন্ধকার হয়ে গেল। নিজেকে আরও অপরাধী মনে হতে লাগে তার।
সামার বলল, 'আপনার জন্য না। এত দুশ্চিন্তা করার দরকার নেই। আসলে সময়টাই খারাপ যাচ্ছে। বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে আগের মত আড্ডা, চিল এসব হচ্ছে না। সবাই যে যার মতো ব্যস্ত। আরজুর সঙ্গে কথা বলে শান্তি পাচ্ছি না। আবার বাসায় যতক্ষণ থাকি, মাকে মনেহয় আমার শত্রু। মানসিকভাবে খুবই যন্ত্রণার মধ্যে আছি আমি।'
অর্ণব কিছুক্ষণ চুপ থেকে উত্তর দিলো, 'আপনি যতটা রাগী, ততটাই ভালো আপনার মন। অনেক নরম মনের মেয়ে আপনি।'
'কীভাবে বুঝলেন?'
'আমার ওপর এতটা রেগে থাকার পরও নিজের দুঃখের কথা আমাকে বললেন। সাধারণত মেয়েরা নিজের কষ্টের কথা কারও সাথে সহজে শেয়ার করে না।'
'আমি এমনই। মনের কথা চেপে রাখতে পারি না। যা মনে আসে সঙ্গে সঙ্গে সবার সাথে শেয়ার করি।'
'এ জন্যই বললাম আপনার মনটা অনেক নরম।'
সামার বলল, 'আচ্ছা শুনুন, মা বলেছে আপনার জন্য কিছু কেনাকাটা করতে। আমি আপনাকে টাকা দিয়ে দেই, আপনি নিজে পছন্দ করে কিনে নিতে পারবেন না?'
অর্ণব কী বলবে বুঝে উঠতে সময় লাগল। নিজেকে নিয়ে আর কোনো বিব্রত অবস্থা সৃষ্টি করার ইচ্ছে তার নেই। তাই বলল, 'আমার কিছু লাগবে না। আপনি বললে আমি রিকশা থেকে নেমে যাই।'
' কিছু লাগবে না সেটা মা জানে। সে সাধ করে কিনে দিতে চায়। আপনি আপনার ইচ্ছেমত কিনে নেবেন। আমার আসলে আপনার সঙ্গে ঘুরে ঘুরে কেনাকাটা করার কোনোই ইচ্ছে নেই।'
অর্ণব ভীষণ অপমানিত বোধ করল৷ চোখ বন্ধ করে কথাটা হজম করল সে। তারপর বলল, 'মামা রিকশা থামান। আমি নেমে যাচ্ছি। আর আপনি আপনার মাকে বলবেন যা যা কেনার কথা ছিল সব কিনে দিয়েছেন।'
লাফ দিয়ে রিকশা থেকে নেমে গেল অর্ণব। সামার বলল, 'করছেন কী? রিকশায় উঠুন।'
'আমার সঙ্গে ঘুরে ঘুরে কেনাকাটা করার ইচ্ছে যার নেই, সেটা শুনেও তার সঙ্গে ঘুরে বেড়ানোর মতো ছেলে আমি নই। ভয় পাবেন না, আগামী কয়েকদিন আমি আপনাদের বাসায় যাবো না। আন্টিকে ফোন করে ধন্যবাদ জানিয়ে দেবো।'
অর্ণব পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে রিকশা ওয়ালাকে একটা একশো টাকার নোট এগিয়ে দেয়। সামার রাগত স্বরে বলল, 'আপনি কী করে ভাবলেন আপনার টাকা আমি নেবো? মামা আপনি টাকা নেবেন না।'
অর্ণব রিকশাওয়ালাকে বলল, 'মামা আপনি এইটা রাখেন। উনি দিতে চাইলে নিয়েন। আমার ভাড়া আমি দিয়ে দিচ্ছি।'
'ত্রিশ টাকা দিলেই হবে।' রিকশাওয়ালা বলেন।
' ঠিক আছে সত্তর টাকা আমাকে ফেরত দেন।'
রিকশাওয়ালা সত্তর টাকা ফেরত দিলে দ্রুত রাস্তা ছেড়ে ফুটপাত ধরে হাঁটা শুরু করলো অর্ণব। সামার হতভম্ব হয়ে বসে রইলো। রাগ হচ্ছে, খুব রাগ। সামারের সঙ্গে এতটা ইগো দেখানোর সাহস কখনো কারও হয়নি।
রিকশা টেনে অর্ণবের পাশে দাঁড়িয়ে সামার বলল, 'রিকশায় উঠুন।'
'আপনি যেখানে ইচ্ছে যান।'
'উঠতে বলেছি আপনাকে। এত তেজ কাকে দেখাচ্ছেন আপনি? '
'আপনি এত তেজ কাকে দেখাচ্ছেন? আমি আপনার বয়ফ্রেন্ড না। আপনার গোলামও না।'
সামার ভয়ংকর রেগে গেল। রিকশা থেকে নেমে অর্ণবের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল, 'আপনি আমাকে রাগ দেখিয়ে রিকশা থেকে নেমে যান, আবার আমার মুখের ওপর বড়বড় কথাও বলেন। সাধারণ ভদ্রতাবোধ নেই আপনার?'
অর্ণব নিজেও রাগে লাল হয়ে উঠেছে, 'সাধারণ ভদ্রতা আপনার নেই। থাকলে একটা ছেলের মুখের ওপর বলতে পারতেন না, আপনার সঙ্গে কেনাকাটা করার ইচ্ছে আমার নেই।'
'তাহলে কী করতাম? নাচতে নাচতে আপনার সঙ্গে কেনাকাটা করতাম? এতদিন আপনার বুদ্ধি শুনেছি, তারমানে এই না আমাকে আপনার সঙ্গে সবকিছু করতে হবে।'
অর্ণব একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, 'আমি তো করতেও বলছিনা আপু। আপনি আপনার মতো যেখানে ইচ্ছে যান। আমি আপনার মাকে জানাবো, আপনি আমাকে কেনাকাটা করিয়ে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।'
সামার চুপ করে রইল। রিকশাওয়ালা অবস্থা বুঝে রিকশা ঘুরিয়ে চলে গেলেন। সামার সেদিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল, ' শালার রিকশা ও..'
সামার ব্যাগ থেকে টাকা বের করে অর্ণবের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, 'এগুলো নিয়ে যান। আম্মুর দেয়া পাঁচ হাজার টাকা। শার্ট, প্যান্ট, জুতা আর ওয়ালেটের জন্য। আর এক্সট্রা ত্রিশ টাকা রিকশা ভাড়া।'
অর্ণব একগাল হেসে বলল, 'অদ্ভুত মেয়ে আপনি। রিকশা ভাড়ার টাকা আমি দিয়েছি বলে সেটাও ফেরত দিতে চাইছেন। হাসি পাচ্ছে আমার।'
'হাসুন। টাকাগুলো নিয়ে তারপর যান।'
'টাকা আমি নেবো না। আপনাকে বলেছে কিনে দিতে, টাকা দিতে বলেনি। আমার কী নূন্যতম আত্মসম্মান বোধ নেই? আমি আপনার কাছে টাকা নেবো?'
সামার উত্তর খুঁজে না পেয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলল। একটা শ্বাস নিয়ে বলল, 'ঠিক আছে। চলুন।'
'মাথা খারাপ? এর পরেও আমি আপনার সঙ্গে যাবো?'
'যাবেন। আর নয়তো এই টাকাটা নেবেন। কারণ এটা আমি আমার কাছে রাখবো না।'
অর্ণব হতভম্ব হয়ে উত্তর দিলো, 'অদ্ভুত! টাকাটা আপনি যা খুশি করতে পারেন। আমার কিছু যায় আসে না।'
'আপনি হয় টাকাটা নেবেন আর নয়তো আমার সঙ্গে যাবেন। এই টাকা আমি নিজের কাছে রাখতে পারবো না। আর মাকেও ফেরত দেয়া সম্ভব না।'
অর্ণব কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। তার নিজের আচরণ এখন নিজের কাছে লজ্জাজনক লাগছে। সামারকে তার এই আচরণের জন্য 'সরি' বলা উচিৎ। একটা মেয়ের সঙ্গে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ঝগড়া করাটা মোটেও ভালো মানুষের কাজ নয়। 'ধেৎ' শব্দটা উচ্চারণ করে অর্ণব বলল, 'চলুন।'
দুজনে ফুটপাত ধরে হাঁটতে শুরু করল। এবার আর রিকশা নেয়া হয় না। কারও মুখে কোনো কথা নেই। পাশাপাশি হাঁটতে গিয়ে দুজনেরই রাগ কমে যেতে থাকে।
কাছেই একটা শো রুম পেয়ে সেখানে ঢোকার কথা বলে অর্ণব। সামার সায় দেয়। ভেতরে ঢুকে দুজনেই কয়েক মিনিট চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল।
সামার বলল, 'আপনি পছন্দ করুন, আমি বিল দিচ্ছি।'
'আমার আসলে নিতেই ইচ্ছে করছে না।'
'তাহলে সেটা আম্মুকে ফোন করে জানান।'
'এটাও এইমুহুর্তে সম্ভব না।'
'আমরা কী এখন এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ম্যানিকুইন দেখবো?'
অর্ণব অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে হেসে ফেলল। অবস্থা বেগতিক। হেঁটে হেঁটে দু একটা শার্ট নেড়চেড়ে দেখল সে। তারপর ইউ টার্ন নিয়ে ঘুরতেই মেয়েদের জামাকাপড়ে চোখ গেল। একটা টপস হাতে নিতেই সামার এসে বলল, 'বাসায় মেয়েদের টপস পরে থাকেন নাকি?'
অর্ণব ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে উত্তর দেয়, 'এটা দেখে ভালো লাগল।'
'তাহলে নিন। রুমে পরে থাকবেন। পরে অফিসে গেলে কিন্তু লোকজন হাসাহাসি করবে, সেটা ভুলে যাবেন না।'
অর্ণব হেসে বলল, 'আমি এটা আপনার জন্য দেখছি।'
'আমার জন্য কেন?'
'আপনি আমাকে শপিং করিয়ে দেবেন আর আমি হা করে সেগুলো গলাধঃকরণ করব?'
সামার মুখ বাঁকিয়ে বলল, 'ওরে আমার আত্মসম্মান রে। গলাধঃকরণ মোটেও হা করে করেননি, আমি জোর করে করাচ্ছি। আপনার জন্য শার্ট দেখেন, আমার জন্য কিছু লাগবে না।'
অর্ণব হাতে টপস নিয়েই ছেলেদের সাঁড়িতে চলে এলো। দু একটা শার্ট দেখতে দেখতে সামারকেও দেখতে বলে সে। সামার মুখে রাগের অভিব্যক্তি ফুটিয়ে তুলে শার্ট খুঁজতে থাকে। দুই মিনিটের মাথায় একটা শার্ট ও প্যান্ট খুঁজে অর্ণবের হাতে ধরিয়ে দেয় সে।
অর্ণব টপসের বিল পরিশোধ করে ব্যাগটা হাতে নিয়ে বোকার মতো দাঁড়িয়ে থাকে। সামার এটা কিছুতেই নেবে না। অর্ণব হাতে দুইটা শপিং ব্যাগ নিয়ে কোনদিকে যাবে বুঝে উঠতে পারে না।
হঠাৎ সামারের ফোনে একটা মেসেজ আসে। হোয়াটসঅ্যাপে ঢুকতেই সে দেখল মেসেজটা আরজু পাঠিয়েছে। তাদের কেনাকাটা করার ছবি। সামার শার্ট দেখছে আর তারই পাশে টপস হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে অর্ণব।
সামার ফোন থেকে মুখ তুলে বলল, ' শিট!'
অর্ণব চমকে উঠলো। কিছু না বলেই সামার শো- রুম থেকে বেরিয়ে যায়। অর্ণব বেরিয়ে এলো পিছুপিছু। সামার বলল, 'আপনি আর আসবেন না। পারলে আমাকে এই ঝামেলা থেকে উদ্ধার করুন।'
কথাটা বলেই হনহন করে হেঁটে চলে গেল সামার। অর্ণব দুইটা শপিং ব্যাগ হাতে নিয়ে বোকার মতো স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। কী হলো হঠাৎ, কিছুই তার মাথায় ঢুকছে না। সামারকে 'সরি' বলা আর হলো না তার।
.
.
.
চলবে.........................................................................