৩৯!!
রাতে আয়ানের রুমে আসতে বেশ অনেকটাই দেরি হয়ে গেছে। এতোক্ষণ মায়রার বাবা মায়ের সাথে অফিসের কাজকর্ম, আয়ানের রিসেন্ট প্রজেক্ট এসব নিয়ে কথা হচ্ছিলো। মায়রা অবশ্য খাওয়া দাওয়া করেই রুমে চলে গেছে। এতোক্ষণ মেয়েটা কি করেছে কে জানে। আয়ান রুমে এসে দেখলো লাইট অফ। দরজা বন্ধ করে লাইট জ্বালিয়ে একটু অবাক হলো আয়ান। মায়রা রুমে নেই। মেয়েটা ওর দেরি দেখে রাগ করে অন্য রুমে গিয়ে বসে আছে নাকি? কথাটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললো সাথে সাথেই। মায়রা এমন পাগলামিটা অন্তত করবে না, এটা আয়ান বেশ ভালোই জানে। তাহলে গেল কই মেয়েটা!
আয়ান ওয়াশরুম চেক করার জন্য পা বাড়াতেই খেয়াল করলো বারান্দার দরজাটা খোলা। আয়ানেরও বুঝতে এবার অসুবিধা হলো না মায়রা কোথায়। আস্তে আস্তে বারান্দায় গিয়ে দেখলো মায়রা বারান্দার গ্রিল ধরে বাইরের অন্ধকারের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে৷ আয়ান আস্তে করে গিয়ে মায়রাকে পিছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। মায়রা একটু কেঁপে উঠলো কিন্তু কিছু বললো না। আয়ান আলতো করে মায়রার কানে ঠোঁট ছোঁয়ালো।
-বউটা অন্ধকারে বারান্দায় কি করে হুম? আমি তো আরো চিন্তায় পড়ে গেছিলাম--।
-কেন?
-বারে! ভাবলাম দেরি করায় বউ রাগ করে কোথাও গিয়ে বসে আছে--।
-নাহ। রাগ কেন করবো? তুমি তো কথা বলছিলে মা বাবার সাথে---।
-ইশ রে! একটু রাগ তো করতে পারতে-। আমি আদর করে বউয়ের মান ভাঙাতাম---। ভালো হতো না বলো?
মায়রা কিছু না বলে হাসলো নিঃশব্দে। আয়ান মায়রার চুলে মুখ ডুবিয়ে ঘ্রাণ নিচ্ছে। কখনো মায়রার কাঁধে, ঘাড়ে নাক ঘষে দিচ্ছে। কখনো ঠোঁট ছুঁইয়ে দিচ্ছে। মায়রা লজ্জায় লাল হয়ে আয়ানের হাতের উপরে হাত রেখে চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে আয়ানের স্পর্শ অনুভব করছে। আয়ান হুট করে মায়রাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে পাঁজাকোলা করে তুলে নিয়ে রুমের দিকে হাঁটা ধরলো। মায়রা লজ্জায় আরো লাল হয়ে আয়ানের দিকে তাকাতেই পারলো না এবার। আয়ানও ব্যাপারটা বুঝতে পেরেই মায়রাকে রুমে নিয়ে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে এসে বারান্দার দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে আবার মায়রার পাশে এসে বসলো। দুহাতে মায়রার মুখটা তুলে ধরে মায়রার চোখে চোখ রাখলো আয়ান। মায়রাও লজ্জা রাখা চোখে আয়ানের দিকে তাকালো।
-লাজুক পরী? শোনো? কখনো রাগ করে আমাকে ফেলে এখানে আসবা না বলে দিলাম--। এই বাসাটা আমার একদম পছন্দ হয় নি---।
-হুম? কেন?
-বারে! বারান্দায় দেখছো না গ্রিল লাগানো? তুমি রাগ করে চলে এলে আমি তোমার রাগ ভাঙাতে আসবো কি করে হুম?
-দ-দর-দরজা দিয়ে আসবেন আর কি?
-না না না। হবে না। আর দরজা দিয়ে আসবো মানে কি? তার মানে তুমি রাগ করে চলে আসবাই এখানে?
-না না। সেটা বলি নি তো। তুমি কি করে আসবা বললা তাই বললাম আর কি---।
-হুম--। আসবা না কখনো রাগ করে কেমন?
-হুম---।
-আর এমনি আসলেও দিনের বেলা আসবা। আমি অফিস থেকে যাওয়ার সময় নিয়ে যাবো। রাতে থাকা কিন্তু চলবে না। বুঝসো?
-জি--। আপনি তো নিজের বেড ছাড়া ঘুমাতে পারেন না আবার।
-হুম---। তাই এখানে থাকা হবে না আপনারও। বুঝলেন ম্যাডাম? আমার লাজুক পরীটা আমার বুকে থাকবে সবসময়। ওকে?
-হুম-। আজকে একটু কষ্ট করে ঘুমান-। কালই চলে যাবো আমরা---।
-উহু-। আজকে তো কোনো ঘুম হবে না ম্যাডাম।
-হুম?
-মনে নেই দুপুরে কি বলেছি? হুম? এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে চলবে?
-না মানে!
-আর ইশ! মিষ্টি খাওয়া হয় নি। কেমন কেমন লাগছে।
-তুমি বসো আমি দেখে আসি ফ্রিজে আইসক্রিম বা চকলেট আছে কিনা---।
-আরে না না। এতো রাতে কেউ দেখলে কি ভাববে? ছি ছি! তবে মিষ্টি না খেলে তো ঘুমও আসবে না।
-কেউ কিচ্ছু ভাববে না--। তুমি বসো একটু--।
-উহু---। আমি তোমাকে এখন কিছুতেই রুমের বাইরে যেতে দিবো না। তুমি যা করবা রুমে থেকে করো---।
-আমার কাছে তো মিষ্টি কিছু নেই--।
-আছে তো।
-নেই তো---।
-আছে বলছি না?
-সত্যি বলছি। থাকলে তো দিতাম--।
-নিজে থেকে যখন দিচ্ছ না তাহলে আমি নিজেই নিয়ে নিই?
-হুম--। থাকলে তো নিবেন। হুহ--।
-দেখো---। এই হলো পৃথিবীর বেস্ট মিষ্টি---।
আয়ান মায়রার মুখটা তুলে ধরেই মায়রার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো। মায়রা কেঁপে উঠে আয়ানের পাঞ্জাবি আঁকড়ে ধরেছে। আয়ান একটু পরে সরে এসে মায়রাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে মায়রার গলার কয়েক ইঞ্চি তিলটায় চুমো খেল। মায়রা কেঁপে উঠে আয়ানের হাত ধরে ফেলতেই আয়ান আলতো করে মায়রার কানে চুমো খেল।
-আজ বাধা দিও না প্লিজ? বেশি লজ্জা লাগলে চোখ বুজে আদর খাও। তাকাতে হবে না।
মায়রা শক্ত করে চোখ বুজে ফেললো। আয়ান হেসে মায়রার আঁচলটা সরিয়ে মায়রার সারা গায়ে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিতে লাগলো। আয়ানের ঠোঁটের স্পর্শে মায়রা কেঁপে উঠছে দেখে আয়ানও আরো গভীরভাবে স্পর্শ করে মায়রাকে মাতাল করে তোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো। মেয়েটাকে ভালোবাসায় পাগল করে নতুন এক জগতে হারিয়ে গেল আয়ান। দুজন মিলে পাড়ি জমালো ভালোবাসার নতুন কোনো দেশে।
এদিকে তিথি বসে আছে তিয়াশের রুমে। তিয়াশ ড্রইংরুমের সোফায় ঘুমাবে। তাই তিথি তিয়াশের রুমে থাকছে। তিথি রুমের প্রত্যেকটা জিনিস ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছে। পুরো রুমটায় যেন তিয়াশের স্পর্শ লেগে আছে। আলমারি খুলে তিয়াশের একটা টিশার্ট বের করলো। সেটাকে শক্ত করে ধরে ঘ্রাণ নিলো। মানুষটার মাদকতা ভরা গন্ধটা যেন পাচ্ছে তিথি। সেই গন্ধে কেমন নেশা ধরে যাচ্ছে তিথির। এসব ভাবতে ভাবতেই টিশার্টটা বুকে চেপে ধরে বিছানায় এসে বসেছে তিথি। ঘুম আসছে না কিছুতেই। এমন সময় তিথির মোবাইলে তিয়াশের কল এলো। তিথি তাড়াতাড়ি কলটা রিসিভ করলো।
-হ্যালো?
-পিচ্চি? এটা কিন্তু ঠিক না বুঝসো? একদমই ঠিক না।
-কি ঠিক না?
-এই যে তুমি এতো কাছে আছো অথচ আমি তোমাকে ছুঁয়ে দিতে পারছি না। ইট ইজ নট রাইট।
-------------------------------
-তুমি ঘুমাচ্ছো না কেন? কি করছ বলো তো?
-তোমাকে ফিল করছি। তোমার স্মেল নিচ্ছি--।
-এই মেয়ে? পাগল বানাতে চাইছো আমাকে? চলে আসবো কিন্তু--?
-হুম--। আসো?
-ইশ রে! আসো না? এলে যে কি বিপদে পড়বা সেটা তো জানো না পিচ্চিটা---।
-বিপদে পড়ব কেন? তুমিই তো?
-ইশ! পিচ্চি বউটা--। তোমার ওই ঘুম আদুরে চেহারা দেখলে তো আর মাথা ঠিক থাকবে না এখন--। কি করে ফেলব বলা যায় না। পরে আবার বলবা আমার দোষ। না বাবা। আমি নেই এসবে---।
-এই-। তাহলে এসো না।
-জি---। তবে তোমাকে দেখতে ভিষণ ইচ্ছে করছে--। ইচ্ছে করছে তোমার নিচের ঠোঁটটায় জোরে একটা-----।
-এই অসভ্য ছেলে---। এসব কি বলো হ্যাঁ? আর একবার এক কথা বলো কেন? একবার বলো আসা যাবে না। একবার বলো দেখতে ইচ্ছে করছে! আজব তো!
-আমার ভেতরে কি চলছে সেটা তোমাকে কি করে বোঝাই পিচ্চি?
-উফফফ-। পিচ্চি পিচ্চি করবা না তো। আসলে আসো। না আসলে ঘুমাও---।
-উহু--। আসা যাবে না। মাথা এমনিতে খারাপ-। তুমি ঘুমাও কেমন?
-আমার না ঘুম আসছে না।
-পাগলিটা। চেষ্টা করো। আসবে। ওকে?
-হুম---। আচ্ছা।
তিয়াশ হেসে কলটা কেটে দিলো। পিচ্চিটা আসলেই কি কখনো বুঝবে কি চলছে তিয়াশের মধ্যে। তার উপরে এতো রাতে পিচ্চিটার ঘুম ঘুম মুখটা দেখলে কি আর শান্ত থাকা যায়!
আর হসপিটালের কেবিনের বাইরে সিটে তাওহীদের কাঁধে মাথা রেখে বসে আছে আরিশা। কখন ঘুমিয়ে গেছে কে জানে। মেয়েটার ঘুম যেন না ভাঙে তাই তাওহীদও একদম নড়াচড়া না করে একটু কাঁধটা আরিশার দিকে কাত করে বসে আছে। এভাবে বসায় একটু সমস্যা হচ্ছে যদিও। তবুও তাওহীদ একটুও নড়ছে না। পাগলীটা তার কাঁধে মাথা রেখে আছে সেটাই তাওহীদের কাছে অনেক। সকাল হলেই তো আর এই স্পর্শটা পাবে না। মেয়েটা কেন বুঝে না ওকে কতোটা চায় তাওহীদ? আধো কখনো কি বুঝবে মেয়েটা? ঘুমের ঘোরেই আরিশার মাথাটা তাওহীদের কাঁধ থেকে গড়িয়ে এসে বুকে পড়লো। তাওহীদও তড়িঘড়ি করে করে একটু সোজা হয়ে আরিশাকে বুকের সাথে বেঁধে নিলো। ইচ্ছে করলে আরিশার মাথাটা আবার কাঁধে রাখা যায়। তবে কাজটা করার বিন্দুমাত্রও ইচ্ছে হলো না তাওহীদের৷ শক্ত বাঁধনে আরিশাকে বুকেই জড়িয়ে রাখলো। আর কাজটা করতে তাওহীদের একটুও খারাপ লাগছে না। উল্টো অন্যরকম একটা শান্তি লাগছে বুকের ভেতরে।
৪০!!
দেখতে দেখতে বেশ কয়েকটা মাস কেটে গেছে। আয়ানের কাজের চাপও বেড়েছে। সেইফটি ফর উইমেনের প্রজেক্টটায় কোন না কোন ঝামেলা দেখা দিচ্ছে দিনের পর দিন। কখনো মাইক্রো চিপ ব্রেসলেটে লোকেট করা যাচ্ছে না, কখনো স্যাটেলাইটের সাথে কানেক্ট হচ্ছে না, আবার কখনো কানেক্ট হলেও এস. ও. এস মেসেজ আসছে না কানেক্টেড তিনটা নাম্বারের কোনটাতেই। অথচ আর কয়েকটা মাস পরেই ওদের থিমের প্রোগ্রেস না বুঝিয়ে দিতে পারলে এই এ্যাসাইনমেন্টটা ওরা হারাবে। সব মিলিয়ে ব্যস্ত আর সাংঘাতিক বিরক্তিতে সময় কাটছে দিবাশার প্রত্যেকটা মানুষের। সবাই নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে কাজটা ঠিক করে করতে।
সকালে আয়ানও তাড়াহুড়ো করে বেরিয়েছে৷ দুপুর হয়ে আসছে। একবার কলও করেনি যাওয়ার পর থেকে। মায়রা মোবাইল হাতে ভাবছে কল কি করবে নাকি করবে না। ভাবতে ভাবতেই হাতের মোবাইলটা কেঁপে উঠলো মায়রার। ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে কলটা রিসিভ করলো।
-হ্যালো?
-মোবাইল হাতে নিয়ে বসে ছিল নাকি বউটা? তাহলে কল করছিলে না কেন?
-না মানে। তুমি তো ব্যস্ত----।
-ও আচ্ছা। এই মায়রা? শোনো না? আজকে দুপুরে আসতে পারবা না। আমার কাজটা কম্পপ্লিট করে ফিরব। রাগ করো না কেমন?
-আচ্ছা। লাঞ্চ?
-করে নিবো বউটা। তুমিও খেয়ে নিও কেমন?
-আচ্ছা।
-আর শোনো? আমি একটা মিটিং এ যাবো। কল করে না পেলে টেনশন করবা না একদম। ওকে?
-আচ্ছা---।
মায়রার ঠোঁটের কোণে হাসিটা মিলিয়ে গেল কারো কণ্ঠ শুনে।
-আয়ান? চল? দেরি হয়ে যাচ্ছে--।
-আরে আসছি রে বাবা। ---মায়রা এখন রাখছি কেমন?
-আচ্ছা---।
কল কাটতেই মায়রা মুখ মলিন করে বসে চিন্তা করতে লাগলো। আরিশা আয়ানের রুমে চিন্তা করতেই মায়রার মুখটা কালো হয়ে গেল৷ মাথা থেকে ব্যাপারটা মুছে ফেলার চেষ্টা করলো মায়রা। তবু মনটা খারাপ হয়ে রইলো মায়রার। কোনমতে দুপুরে খাওয়া দাওয়া করলো। তিথি বহুক্ষণ মায়রার সাথে আড্ডা দিলো এসে। তারপর এক প্রকার জোর করেই বিকেলের দিকে মায়রাকে নিয়ে শপিং করতে গেল। সন্ধ্যার দিকে ফিরার সময় মায়রার মুখ দেখে তিথি বুঝতে পারলো মায়রার মন আরো বেশি খারাপ হয়ে গেছে। বেশ অনেকবার জিজ্ঞেস করলেও কিছুই বলেনি মেয়েটা।
আয়ানও সারাদিন ব্যস্ত ছিল মিটিং এ। দুপুরে সেইফটি ফর ইউমেন এর চেয়ারম্যান আর একজন ক্লাইন্টের সাথে মিটিং শেষ করে অফিসে যাওয়ার জন্য বের হতেই আরিশার কল এলো। আরিশার সাথে দেখা করতে একটা কফিশপে এলো আয়ান। আরিশাকে একটা টেবিলে একা বসে থাকতে দেখে গিয়ে সামনাসামনি বসলো।
-কি রে? হঠাৎ এখানে আসতে বললি যে? আর্জেন্ট কোন কাজ আছে?
-আয়ান-। তাওহীদ-তাওহীদ আজকে আমাকে কিছু বলার জন্য এখানে ডেকেছে--।
-হ্যাঁ? ভালোই তো। আমাকে আসতি বললি কেন? আমার কি কাজ---?
-ও কি বলবে সেটা তো আমি জানি। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না ওকে কিভাবে---।
-প্লিজ তুই এবার এটা বলিস না যে তাওহীদ ভাইকে তুই রিজেক্ট করার কথা চিন্তা করছিস?
-তুই তো জানিস সব---। তাহলে--।
-তাহলে কি? সব ছেলেই তো ধোঁকাবাজ না আরু। কেন বুঝতে পারিস না সেটা?
-হ্যাঁ হ্যাঁ--ধোঁকাবাজ না। জানি আমি। কিন্তু আমি যে কাউকে বিশ্বাস করতে পারি না। কি করবো আমি বল?
-কেউ ভালোবাসলে তাকে অবিশ্বাস করতে হয় না আরু। ভালোবাসা নামের ছোট্ট শব্দটায় একটু তো বিশ্বাস করতে হয়---।
-ভালোবাসা? বিশ্বাস? হা হা হা। তুই জানতে চাইছিলি না আমি কেন ভালোবাসায় বিশ্বাস করি না। শুনবি? শোন। বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে জেনে এসেছি আমার বাবা ছোটবেলায়ই মারা গেছে। মা আর বাবা ভালোবেসে বিয়ে করেছিল। বাবার সাথে মায়ের বিয়েতে মায়ের বাড়ির কেউ রাজি ছিল না। তবুও মা সবার অমতে বিয়ে করে বাবাকে। তারপর একটা বিজনেস ট্রিপ থেকে ফেরার সময় বাবা কার এক্সিডেন্টে মারা যায়----।
-এটা তো সবাই জানি আমরা আরু---।
-হ্যাঁ--। এই সুন্দর গল্পটা আমিও জানতাম।
-মানে? গল্প বলছিস কেন?
-হ্যাঁ এতোক্ষণ যা শুনলি তার কিছুটা সত্যি--। মা ওই লোকটাকে বিয়ে করে ঘর ছাড়ে। তারপর নিজেদের সুখের সংসার শুরু করে। সেটাও কয়েক বছরই স্থায়ী হয়েছিল। আমার জন্মের পর থেকেই মায়ের সাথে ওই লোকটার বিহেভ একেবারেই বদলে যায়। বিজনেসের নাম করে উনি অফিসের মেয়েদের নিয়ে-----। একবার তো বাসায়ই অফিসের একজন লেডিস স্টাফকে নিয়ে চলে আসে রাত কাটাবে বলে----। মা আর এসব মেনে নিতে পারে নি এসব। আলাদা হয়ে গেছে দুজনে। মা নানু বাড়িতে ফিরে আসে আমাকে নিয়ে। তারপর নিজের জুয়েলারি বিজনেস শুরু করে---।
-তারপর?
-এসব আমি জানলাম আমার এস এস সির সময় জানিস। পরীক্ষার এক সপ্তাহ আগে উনি নিজের বাবার অধিকার ফলাতে এসেছে। আর আমাকে নিজের সাথে নিয়ে যেতে। কেন জানিস? উনার সেকেন্ড ওয়াইফের কখনোই কোন বেবি হয় নি। হা হা। হোয়াট এ নাইস জোক। ইজ'নট ইট?
-আরু? রিল্যাক্স! সবাই---।
-তুই আবার বলবি তো সবাই সেইম না ওই বাবা নামের লোকটার মতো? আর ভালোবাসা? লোকটা তো মাকে ভালোবেসেই বিয়েটা করেছিল আয়ান?
-আরু? শোন আমার কথাটা?
-আমি নিজেকে মায়ের জায়গায় নিয়ে কখনোই দাঁড়ায় করাতে পারবো না। কেউ আমার ভালোবাসা নিয়ে, আমার জীবন নিয়ে খেললে আমি মরেই যাবো----।
আয়ান আরিশার মুখটা একটু তুলে দিয়ে হাতটা শক্ত করে ধরলো। আরিশা ফোঁপাচ্ছে। আয়ান আলতো করে আরিশার মাথায় হাত রাখলো।
-শোন আরু? আন্টির লাইফে যা হয়েছে সেই ব্যাপারে আমি কিছুই বলবো না। উনি মানুষ চিনতে ভুল করেছেন--। কিন্তু তাই বলে সবাই যে তোর বিশ্বাস ভাঙবে বা তোর বিশ্বাস বা জীবন নিয়ে খেলা করবে এমনও ভাবা তো তোরও উচিত নয় বল? তুই ই বল? আমাকেও বিশ্বাস করিস না তুই?
-আয়ান! তোকে অবিশ্বাস করব কেন?
-আমিও তো একটা ছেলে বল? আমিও তো মায়রাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছি। তোর কি মনে হয় আমিও ওকে ধোঁকা দিব?
-আয়ান?
-তোর কথা শুনে তো তাই মনে হচ্ছে আমার--।
-আমি---। আমি সেটা বলছি না উফফফ।
-আমি তোর বেস্টফ্রেন্ড বলে আমাকে এতোটা ভরসা করিস। অন্তত আমার কথায় হলেও তাওহীদ ভাইকে একটা সুযোগ দে---। উনি সত্যি তোকে ভিষণ ভালো রাখবে, দেখিস?
-আয়ান?
-তাওহীদ ভাই নিশ্চয়ই চলে আসবে। আমি গেলাম---। আমার কাজ আছে অফিসে---।
-আচ্ছা যা।
আয়ান অফিসে এসে কাজে মন দিলো। সন্ধ্যায় তিথির কল দেখে রিসিভ করলো।
-তিথি বল--।
-এই ভাইয়া? তুই ভাবিকে কি বলছিস বল তো?
-কি বললাম আমি আবার?
-সেটাই তো জিজ্ঞেস করছি। ভাবি সেই কখন থেকে মুখ কালো করে বসে আছে। এই মিষ্টি মেয়েটাকে মুখ কালো করলে বুঝা যায় জানিস না?
-আরে বাবা! আমি মায়রাকে কিছুই বলি নি। ওর সাথে দুপুরে কথা হয়েছে---।
-ও আচ্ছা! এই ব্যাপার? দুপুরে বাসায় আসিস নিই আজকে--। তাই হয়তো ভাবির মন খারাপ।
-আরে? আমি মায়রাকে তো বলেছিলাম মিটিং আছে, দুপুরে আসতে পারব না যে---।
-হুহ--। ভাবি আমার সাথে শপিং এ গিয়েও কিছুই কিনে নি--। তখন থেকে রুমে চুপ করে বসেছিল। এখন মনে হয় রান্না করতে যাবে----।
-আরে? ওকে ফোনটা দে---।
-তুই লাইনে থাক--। আমি দিচ্ছি--।
তিথি মোবাইলটা মায়রার কানে ধরিয়ে দিলো। মায়রা থতমত খেয়ে তিথির দিকে তাকালো।
-কি হলো তিথি?
-কথা বলো?
-হুম-----। হ্যালো?
-মায়রু? কি হয়েছে বউটা?
-কই? কিছু হয় নি তো---।
-তিথি যে বললো তুমি নাকি মন খারাপ করে বসে আছো? হুম?
-উহু না। একটু টায়ার্ড লাগছিল জাস্ট। শোনো না? তোমার কাজ শেষ?
-উহু-। আরেকটু দেরি হবে-। এই শোনো তোমার এখন রান্না করতে হবে না। তুমি রেস্ট করো।
-আরে না না। কিছু হবে না।
-কথা কম বলো বুঝসো? আমি খাবার নিয়ে আসবো আসার সময়। কি আনবো বলো? চাইনিজ নাকি থাই?
-আমি তো কখনো---।
-হুম?
-তোমার যা পছন্দ নিয়ে এসো--।
-ওক্কে ম্যাডাম। আপনি এখন একটু সুন্দর করে সেজেগুজে নিন। আমরা এসে বের হবো। ওকে?
-কোথায়?
-সেটা পরে দেখা যাবে---।
-আচ্ছা।
আয়ান কলটা কাটতেই মায়রা তিথির দিকে তাকিয়ে মলিন হাসলো।
-কি গো ভাবি? কি বললো ভাইয়া?
-উনি খাবার নিয়ে আসবে।
-ইয়েএএএ। আজকে রান্না করা লাগবে না। তুমি গিয়ে রেডি হও যাও--।
-হ্যাঁ? কেন?
-আরে ভাইয়াকে সারপ্রাইজ দিবা। হি হি---। যাও যাও---। আর শোনো মন খারাপ করো না। রাগ হলে আমাকে বলবা ভাইয়াকে পিটান দিবো দুজন মিলে-। হিহি।
মায়রা হেসে ফেললো তিথির কথায়। রুমে এসে পেস্ট কালারের একটা হালকা সিল্কের শাড়ি বের করে পড়ায় মন দিলো। তারপর হালকা সাজগোজ। মনটা যত খারাপই হোক না কেন, মানুষটার জন্য নিজেকে সাজাতে অন্য রকম শান্তি কাজ করে মনের মধ্যে।