বন্ধন - পর্ব ১৮ - সুলতানা পারভীন - ধারাবাহিক গল্প


৩৫!! 

মায়রাকে খাটে বসিয়ে দিয়ে আলমারি খুলে মায়রার অনুষ্ঠানে পড়ার জন্য শাড়ি বের করছে আয়ান। বেশ অনেকটা সময় পর দুটো শাড়ি পছন্দ হলো আয়ানের। দু হাতে দুটো শাড়ি নিয়ে মায়রার দিকে ফিরলো আয়ান। মায়রা খাটে পা ঝুলিয়ে বসে বসে আয়ানের কান্ড দেখছিলো এতোক্ষণ। আয়ান ভ্রু কুঁচকে মায়রার মুচকি হাসি মুখটার দিকে তাকালো।

-এই যে বউ? এভাবে মিটিমিটি হেসে দয়া করে আমাকে পাগল বানাবেন না এখন। কোন শাড়িটা পড়বেন বলে ফেলুন?

-আম-----। দুটোই তো সুন্দর।

-তাই তো আমিও ডিসাইড করতে পারছিলাম না। সেজন্যই তো তোমাকে জিজ্ঞেস করলাম গো পরী--। বলো বলো?

মায়রা ভালো করে দুটো শাড়ির দিকেই তাকালো। একটা টকটকে লাল ভারি কাতান শাড়ি। কালো সুতার কাজ করা শাড়িটার পুরো জমিনে। আরেকটা গোল্ডেন পাড়ের গোল্ডেন রঙের ভারি বউ শাড়ি, এটায় লাল ফুলের ডিজাইন করা। মায়রার বিভ্রান্ত দৃষ্টি দেখে আয়ান নিজেই হেসে ফেললো। লাল কাতান শাড়িটা খাটের উপরে রেখে গোল্ডেন কালারের শাড়িটা আলমারিতে রেখে এসে মায়রাকে টেনে নিয়ে কোমড় পেঁচিয়ে ধরলো আয়ান। মায়রা লাজুক হেসে মুখ নামিয়ে নিতেই আয়ান মায়রার মুখটা আবার তুলে ধরলো। 

-এখন এই লাল শাড়িটা পড়বা। গোল্ডেন কালারেরটা ওই বাড়িতে যাওয়ার সময়। কেমন?

-হুম? যেতেই হবে?

-পাগলিটা? নিয়ম না? বাবা মা নিতে আসবে তো। আর একা কি যেতে দেবো বউকে? আমি তো যাবোই বউয়ের সাথে---।

-বাবা মা নিতে না এলে?

-কি যে বলো না তুমি। তিয়াশ ভাইয়ার সাথে তো কথা হলো একটু আগে। উনারা বেরিয়েছেন---।

-ওহ-----।

-কিছু কি চিন্তা করছো পরীটা?

-নাহ মানে--। আপনিও তো রেডি হবেন-। রেডি হয়ে নিন না?

-আবার আপনি আপনি শুরু করলে গো পরীটা? ঠিক না বুঝসো এসব কিন্তু একদমই ঠিক না--।

-না মানে---। সরি ভুল হয়ে গেছে--।

-ভুল যখন করেছ তাহলে তো শাস্তি পেতে হবে ম্যাডাম---।

-কি-কি শাস্তি!

-বলবো? নাকি করে দেখাবো?

-হুম? মানে?

-হা হা--। পাগলিটা-। তোমার শাস্তি হলো এখন তোমাকে আমি রেডি করিয়ে দিবো-। সাজিয়ে দিবো--। ওকে?

-না না--। আমি পারবো---।

-জানি তো পারবা। কিন্তু এটা তো শাস্তি ম্যাডাম। পরের বার যেন ভুলেও আপনি কথাটা না বের হয় মুখ দিয়ে---। 

-আর হবে না তো? সরি---।

-ইশ! এতো কিউট করে সরি বলতে হয়? কিন্তু ম্যাডাম শাস্তি তো মাফ হবে না। শাড়ির সাথে আনুষঙ্গিক যা লাগে পড়ে নিন--। নইলে কিন্তু সেটাও আমিই পড়িয়ে দিবো---। 

-না না না---।

-আরে? এভাবে না না করে লাফালাফি শুরু করলে কেন গো বউ? আমিই তো---?

-আ-আমি-আমি আসছি---।

মায়রা কাপড় চোপড় নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়াতেই আয়ান মায়রার হাত টেনে ধরে বুকে টেনে নিলো।

-এই? কই যাও?

-এগুলো পড়ে-পড়ে আসি---।

-উহু--। কোথাও যাওয়া চলবে না। এখানে রুমেই চেঞ্জ করো---।

-আপনি!

-আমি? আমি একটু শুয়ে থাকি। টায়ার্ড লাগছে ভিষণ---। কই চেইঞ্জ করো---?

-আমি--আমি পারবো না--।

-ওহ আচ্ছা--। সেটা বললেই পারতা--। আমি চেইঞ্জ করিয়ে দিচ্ছি। নো প্রবলেম---।

-না না--। আমি বলেছি যে এখানে চেইঞ্জ করতে পারবো না--।

-কেন এখানে কি হয়েছে?

-পারবো না আমি---। 

-আচ্ছা যা যা পড়ার পড়ে আসো--। যাও। কি আর করা!

আয়ান দুষ্টু একটা হাসি দিয়ে মায়রার হাত ছাড়তেই মায়রা এক ছুটে ওয়াশরুমে ঢুকে গিয়ে দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়ালো। লজ্জায় পুরো দম বন্ধ হয়ে আসছিলো ওর। আয়নায় নিজের দিকে চোখ পড়তে আরো লজ্জা পেল বেচারি। মানুষটার স্পর্শগুলো যেন এখনো গায়ে লেগে আছে৷ কি এক অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছিল মায়রার। আর মানুষটার কথায় এতো লজ্জা লাগছিলো যে মায়রার ইচ্ছে করছিলো মাটি খুঁড়ে ঢুকে পড়তে৷ এতো নির্লজ্জ কেন মানুষটা! কোনমতে ব্লাউজ, পেটিকোট পড়লো মায়রা। এবার বের হতে হবে চিন্তা করেই কাঁপুনি শুরু হলো বেচারির। ভয় করছে নাকি লজ্জা করছে সেটাও বুঝতে পারছে না৷ এর মধ্যেই দরজায় নক হলো।

-বউটা কি ঘুমিয়ে গেছে নাকি গো? বৌভাত কিন্তু আজকেই ম্যাডাম-।

-আস-আস-আসছি---। হয়ে গেছে---।

মায়রা বড় একটা শ্বাস টেনে বের হওয়ার জন্য পা বাড়ালো। থ্রি পিসের ওড়নাটা চোখে পড়তেই সেটা টেনে গায়ে জড়িয়ে নিলো। ওয়াশরুমের দরজাটা একটু ফাঁক করতেই আয়ানের হাতের টানে মায়রা একেবারে আয়ানের বুকে এসে পড়লো৷ আয়ানও মায়রার কোমড় পেঁচিয়ে ধরলো শক্ত করে। মায়রার চিবুক ধরে মুখটা তুলে ধরে বেশ অনেকক্ষণ তাকিয়ে রইলো আয়ান। 

-ছাড়ুন না? দে-দেরি হচ্ছে তো?

-ইশ! এতোক্ষণ পরে বের হলে? এরচেয়ে ভালো হতো আমি পড়িয়ে দিলে--। অন্তত একটু সময় তো বাঁচতো----।

-আম-----।

-আর ম্যাডাম--। শাড়ি পড়ানোর সময় ওড়নার কি কাজ?

আয়ান কথাটা বলেই মায়রার গায়ের ওড়নাটা টান দিয়ে নিয়ে ফেললো। মায়রা লজ্জায় লাল হয়ে চোখ বুজে ফেললো৷ মায়রার দিকে চোখ পড়তেই আয়ান নিজেও থমকে গেল। মায়রাকে আরেকটু নিবিড় করে জড়িয়ে ধরে কানের কাছে ঠোঁট নিলো।

-ও আচ্ছা--। এটা ঢাকার জন্য এই ব্যবস্থা? 

-হুম---?

আয়ানের কথায় মায়রা চোখ খুলে আরো বেশি লজ্জা পেল। মানুষটা ঘোর লাগা চোখে মায়রার গলার দিকে তাকিয়ে আছে। আয়ান মায়রার দিকে এগিয়ে আসছে দেখে মায়রা চোখ বন্ধ করে নিলো শক্ত করে। আয়ানও ঘোরের মধ্যে মায়রার গলার ইঞ্চি খানেক নিচের তিলটায় চুমো খেল গভীরভাবে। বেশ অনেকক্ষণ পর মুখ তুললো আয়ান। আবার মায়রার কানের কাছে ঠোঁট নিয়ে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো আয়ান।

-আচ্ছা পরী তোমার সবগুলো তিলই কি এমন কুচকুচে কালো আর নেশা ধরানো? আচ্ছা এই কালো কালো ছোপ গুলোকে কি এজন্য বিউটি স্পট বলে? এই যে কেমন তোমার সৌন্দর্যটা আরো বেশি বাড়িয়ে দিয়েছে---। ভাগ্যিস বিয়ের আগে চোখ পড়ে নি--। কি যে হতো তাহলে---!

-------------------------------

-আসো---। শাড়ি পড়াই--। বিউটি স্পট রহস্য আজ রাতে উদ্ধার করা হবে--। আজ কিন্তু কোন আপত্তি শুনবো না। আগেভাগেই বলে দিলাম--। 

মায়রা লজ্জায় লাল হয়ে চোখ বুজে দাঁড়িয়ে আছে আর আয়ান ওকে শাড়িটা পড়িয়ে দিচ্ছে। শাড়িটা গুঁজে দেয়ার সময় আলতো করে মায়রার পেটে স্পর্শ করছে আর মায়রা কেঁপে কেঁপে উঠছে। আয়ান সেটা দেখেও মজা পাচ্ছে। আয়ান ফ্লোরে বসে শাড়ির কুঁচিটা ঠিক করে দিয়ে মায়রার নাভির পাশের তিলটায়ও কয়েকটা চুমো খেল। মায়রার ভারি নিশ্বাস পড়া দেখে আয়ান হেসে উঠে মায়রাকে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসিয়ে সাজিয়ে দিতে লাগলো। মায়রা অবাক অবাক চোখে দেখছে মানুষটাকে। এই মানুষটা এতো অদ্ভুত কেন? মায়রাকে গয়না পড়ানো আর সাজানো শেষ হলে আয়ান আরেকবার মায়রাকে কাছে টেনে কপালে চুমো খেল। 

-আজ সারাদিন জ্বালাবো এভাবে। রাতে আমাকে দেখতে দাও নি যে তার শাস্তি। এখন একটু বসো। আমি রেডি হয়ে নিই। কেমন?

-হুম----।

এদিকে তিথিও রেডি হচ্ছিলো। তিয়াশরা চলে এসেছে। একটু আগেই কথা হলো। তাই সাজটা শেষ করে আয়নায় একবার নিজেকে দেখে নিলো তিথি। সাজটা ঠিকঠাক হয়েছে। লেহেঙ্গার সাথে বেশ মানিয়ে গেছে। দরজাটা খুলে জুতো পড়ার জন্য ড্রেসিং টেবিলের সামনে টুলটায় বসলো তিথি। পাম্পসুটা একটু ফিটিং তাই বসা ছাড়া কিছুতেই পড়তে পারে না তিথি। জুতোটা পড়েই খেয়াল হলো জুতো পড়তে গিয়ে লেহেঙ্গার দোপাট্টাটা এলোমেলো হয়ে গেছে। তিথি আয়নার দিকে তাকিয়ে দোপাট্টা ঠিক করে নিয়ে পিন আপ করছে আর নিজেই মিটিমিটি হাসছে। ওড়নাটা একটু এদিক সেদিক হলেই তো ভদ্রলোক রেগে যাবে। না বাবা। তাকে রাগিয়ে কাজ নেই। তার চেয়ে ভালো মতো পিন লাগানো যাক যাতে জায়গা মতো থাকে ওড়নাটা। আর এই সাজ দেখে কি বলবে? পছন্দ মতো সাজ হয়েছে তার?

একটু পরেই তিথির ফোনটা বেজে ওঠার শব্দ পেয়েই মোবাইল নেয়ার জন্য হাত বাড়ালো তিথি। আর সাথে সাথেই কিছু একটা পড়ার শব্দ শুনে চমকে পিছনে ফিরে তাকিয়ে একেবারে স্তব্ধ হয়ে গেল তিথি। তিথির থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়ানো মানুষটা সজোড়ে তিথির মেবাইলটা আছাড় দিয়েছে ফ্লোরে। আর এখন এক পা এক পা করে তিথির দিকে এগিয়ে আসছে৷ মানুষটার চোখ জোড়া এতোটা লাল হয়ে গেছে যে মনে হচ্ছে এখনই রক্ত ঝরে পড়বে। লোকটা একদম সামনে এসে তিথির হাতটা মচকে ধরলো।

-এই ছেলেটা তোমাকে এতোবার কেন কল করবে? তোমার আগে পিছে কেন এতো ঘুরঘুর করবে? আর তুমিই বা ওকে দেখে এতোটা খুশি হবে কেন? কে ও? কে?

৩৬!! 

লোকটা তিথির হাতটা এতো শক্ত করে পিঠের সাথে চেপে ধরেছে যে তিথি রীতিমতো ব্যথাই পাচ্ছে। কিন্তু ব্যথার চেয়েও সম্ভবত মেয়েটা আরো কয়েক গুণ বেশি অবাক হয়েছে। আরিয়ানের এই কাজকর্ম ওর একদমই মাথায় ঢুকছে না। ছেলেটা হঠাৎ এমন ব্যবহার করছে কেন? রাগে চোখ দিয়ে যেন আগুন ঝরছে ওর। একটু পরে তিথির ভয় লাগা শুরু হলো। কেউ এভাবে দেখলে কি ভাববে? তার উপরে বৌভাতের অনুষ্ঠান হচ্ছে কম্পাউন্ডে, বিশাল প্যান্ডেল করে। বাড়িটা একদম ফাঁকা। সবাই সাজগোজ শেষ করে প্যান্ডেলে চলে গেছে এতোক্ষণে। কথাটা মাথায় আসতেই তিথির গলা শুকিয়ে গেল। কোনমতে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলো আরিয়ানের হাত থেকে।

-ছাড় আরিয়ান। কি করছিস? লাগছে আমার।

-আমার এর চাইতেও বেশি লাগে তোমাকে ওই ছেলের আশেপাশে দেখলে। ও কেন তোমার সাথে এমন করে কথা বলবে? তুমি শুধু আমার তিথি-।

-ধরে থাপ্পড় লাগাবো বেয়াদব ছেলে। তুই আমার ফ্রেন্ড হস জাস্ট। আমি কার আশেপাশে ঘুরবো, কে আমার সাথে চব্বিশ ঘন্টা কথা বলবে তার কৈফিয়ত কি তোকে দিতে হবে নাকি?

-১০০ বার দিতে হবে। হাজার বার দিতে হবে-। তুমি বুঝো না তোমাকে কতটা চাই আমি তিথি। আর তুমি কিনা--।

-জাস্ট শাট আপ আরিয়ান। ছাড় আমাকে--।

-না ছাড়বো না---। কে ওই ছেলে হ্যাঁ? ওর সাথে তোমার এতো মেলামেশা কিসের হ্যাঁ? 

-ছাড় বলছি---।

-হ্যাঁ ছাড়লাম--। তোমাকে আমি কতোটা ভালোবাসি তুমি কেন ব্যাপারটা বুঝতে পারো না?

-জাস্ট স্টে আওয়ে ফ্রম মি---। তুই আমাকে ভালোবাসিস? এই তোর ভালোবাসার নমুনা? ভালোবাসলে আর যাই হোক চোরের মতো এভাবে আমার রুমে আসতি না---।

-আমার জায়গায় আজ তোমার ওই তিয়াশ থাকলে কথাগুলো নিশ্চয়ই আলাদা হতো তাই না তিথি?

-হ্যাঁ হতো-। কজ আই লাভ হিম। তারচেয়ে বড় কথা হলো সে এলেও এভাবে চুপিচুপি দেখতে আসতো না--। ছিহ!

-হা হা হা---। তোমার চয়েজ দেখে হাসি পাচ্ছে খুব তিথি৷ নিজেকে এই ৭-৮ বছর বড় লোকটার সাথে চিন্তা করতে একটুও এমবারেস ফিল করো না? তোমাকে এই মানুষটার সাথে যায়? জাস্ট সিরিয়াসলি!

-জাস্ট শাট আপ আরিয়ান--। জাস্ট শাট ইউর মাউথ আই সেইড--।

-উমমমম--। ইয়াপ আমি তো চুপ করেই যাবো৷ কিন্তু বাকিদেরকে চুপ করাবে কি করে তুমি? এই ধরো তোমাদের ব্যাপারটা দুটো পরিবারে জানাজানি হলে কি হবে ভেবেছ একবারও? কালই তো তোমার ভাইয়ার বিয়ে হলো ওই লোকটার বোনের সাথে--। তোমাদের জন্য যদি ওদের বিয়েটাও ভেঙে যায়-?

-না---। এমন-এমন কিচ্ছুই হবে না--৷ দরকার হলে আমি কখনো ভাইকে বলবো না যে আমি আর তিয়াশ----।

-হা হা হা--। তুমি বলতে হবে কেন? বলার মানুষের অভাব পড়েছে নাকি? ধরো আজই এই বিয়ে বাড়ির কেউ তোমাদের ব্যাপারটা আয়ান ভাইয়াকে---।

-আরিয়ানননন---।

-হেই জাস্ট কুল ডাউন তিথি-। তুমি তো আমার রাগী পাখি--। আমি কি তোমার পরিবারকে কষ্ট দিতে পারি বলো? তুমি জাস্ট এই লোকটা থেকে দূরে থাকো--। আর এই হাবিজাবি প্রোগ্রামটা শেষ হলেই আমি বাসায় তোমার ব্যাপারে কথা বলে নেব---।

-আরিয়ান---। তুই বের হ আমার রুম থেকে-। বেরো----।

আরিয়ান তিথিকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে আরেকবার তিথির হাতটা মচকে ধরলো। দাঁতে দাঁত চেপে তিথির দিকে তাকালো।

-তিথি, বেশি বাড়াবাড়ি করলে কি হবে সেটা কল্পনাও করতে পারবা না তুমি---৷ 

-ছাড়----।

তিথি নিজের সমস্ত গায়ের জোর দিয়ে আরিয়ানকে ধাক্কা দিয়ে সরানোর চেষ্টা করলো৷ তিথিকে বেশ শক্ত করেই ধরে রেখেছিল আরিয়ান। ফলে আরিয়ানের হাতের টানেই তিথির দোপাট্টাটা অনেকখানি ছিঁড়ে গিয়ে সেইফটিপিন সহ খুলে এলো। সেইফটি পিনের টানে লেহেঙ্গার টপসটাও উপরে বাম পাশেরও অনেকটা ছিঁড়ে গেল। দোপাট্টাটা খুলে আরিয়ানের হাতেই রয়ে গেল। তিথিও সাথে সাথেই ঘুরে দেয়ালের দিকে মুখ করে একেবারে দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়ালো। এমন একটা ব্যাপার ঘটবে আরিয়ানও আশা করে নি। তাই কয়েক মিনিট থমকে দাঁড়িয়ে রইলো। পরে হুঁশ হতেই তিথির দিকে দোপাট্টা হাতে এগিয়ে গেলো।

-তিথি------?

-প্লিজ সামনে আসিস না-। প্লিজ তোর কাছে হাত জোড় করছি---। 

তিয়াশ প্যান্ডেলে মা বাবাকে বসিয়ে দিয়ে তিথিকে আশেপাশে না দেখে কল দিয়েছিল। কলটা হুট করেই কানেকশন লস হয়ে যায়। আবার ট্রাই করতেই তিথির মোবাইল অফ শো করে। তিয়াশ এদিক ওদিক তিথিকে খুঁজে বাড়ির ভিতরেই দেখতে আসে। তিথির রুমটা কোনদিকে সেটা জানলেও ঠিক কোন রুমটা সেটা তিয়াশ জানতো না৷ তাই সবগুলো রুমে একটু টোকা দিয়ে তিথির নাম ধরে ডাকছিলো তিয়াশ। একটা রুম থেকে তিথির কান্নার শব্দ ভেসে আসছে শুনতে পেয়েই ছুটে যায় তিয়াশ। রুমের দরজাটা হালকা ভেজানো ছিল। ধাক্কা দিতেই দরজাটা খুলে যায় পুরো। রুমের ভেতরে ঢুকতেই জাস্ট আরিয়ানের কথাটুকুই শুনতে পায় তিয়াশ।

-তিথি আমার কথাটা শোনো প্লিজ?

দরজা খোলার শব্দে আরিয়ান পিছনে ফিরতেই গালে ঠাস করে একটা চড় পড়ে৷ তিয়াশ এক হাতে আরিয়ানের পাঞ্জাবির কলার চেপে ধরে অন্য হাতে সমানে থাপড়াচ্ছে। 

-তোর সাহস হয় কি করে আমার তিথির দিকে হাত বাড়ানোর? তোকে আজকে আমি খুন করে ফেলবো---।

-ভাইয়া আপনি যা ভাবছেন তার কিছুই হয় নি এখানে--। আমি তিথির সাথে কথা বলছিলাম একটা ব্যাপার নিয়ে----।

-তুই আমাকে শেখাবি এখন কথা কিভাবে বলে? কারো গায়ের ওড়না-----।

ওড়নার কথাটা খেয়াল হতেই তিয়াশ আরিয়ানের হাত থেকে তিথির দোপাট্টাটা নিয়ে ধাক্কা মেরে আরিয়ানকে ফ্লোরে ফেলে দিলো। তিথির গায়ে দোপাট্টাটা জড়িয়ে দিয়ে আরিয়ানের দিকে রক্তচক্ষু নিয়ে আবার এগিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো৷ আরিয়ানও আর দেরি করে পড়িমরি করে রুম থেকে পালালো। তিয়াশ ওকে ধাওয়া করার আগেই তিথি তিয়াশকে পিছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললো। তিয়াশ আর এক পাও নড়লো না। তিয়াশ নিজের বুক থেকে তিথির একটা হাত ধরে টেনে নিয়ে তিথিকে নিজের ধরে ফিরিয়ে মুখটা তুলে ধরলো। মেয়েটার চোখে মুখে একটা আতঙ্ক ছেয়ে আছে। 

-তিথি? আর ইউ অলরাইট? ঠিক আছো তুমি তিথু?

-তিয়াশ?

তিথি তিয়াশের বুকে মুখ ডুবিয়ে ফোঁপাতে লাগলো। একটু আগে কি হচ্ছিল সেটা ভাবতেই সারা শরীর কাঁপছে তিথির। তিয়াশ আলতো করে তিথিকে শক্ত করে বুকে আঁকড়ে ধরে চুলে আলতো করে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো৷ তার আসতে আর কিছুক্ষণ দেরি হলে কি হতো সেটা ভাবতেই তিয়াশেরও গায়ে কাটা দিয়ে উঠছে। সেটা তিথিকে বুঝতে না দিয়ে শক্ত করে বুকে চেপে ধরে আছে। দরজায় হালকা টোকা পড়ার শব্দে তিথি তিয়াশ দুজনেই চমকে উঠলো। তিথি ভয় পেয়ে তিয়াশের পিছনে মুখ লুকালো। তিয়াশ সামনের দিকে তাকাতেই আয়ানকে দেখে ঢোক গিললো। 

আয়ান মায়রাকে স্টেজে বসিয়ে দিয়ে এসে প্যান্ডেলে কোথাও তিথি আর তিয়াশকে না দেখে হাসলো। মায়রার কানের কাছে মুখ নিয়ে হেসে জানালো ও একটু বাড়ির ভিতরে যাচ্ছে।  মায়রা ভ্রু কুঁচকে আয়ানের দিকে তাকাতেই আয়ান ঠোঁটের কোণে শয়তানি মার্কা হাসি ফোটালো।

-আজকে লাভবার্ডদেরকে হাতে নাতে পাকড়াও করবো--। তুমি বসো কেমন?

-হুম----।

মায়রাকে হাসতে দেখে আয়ান ওর দিকে একবার চোখ টিপে বাড়ির ভিতরের দিকে এলো। আরিয়ান পড়িমরি করে ছুটতে ছুটতে আয়ানের সাথে ধাক্কা খেতে খেতে ছুটে বেরিয়ে গেল দেখে আয়ানের ভ্রু কুঁচকে গেল। তিথির রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে তিয়াশ আর তিথির কথাগুলো একটু শুনলো। তিথি যে কাঁদছে সেটা বুঝতে পেরেই দরজায় নক করে রুমে ঢুকলো আয়ান। রুমে ঢুকে থ হয়ে গেল। তিয়াশের পিছনে জুবুথুবু হয়ে গায়ে ওড়না পেঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তিথি। আর তিয়াশও থমকে দাঁড়িয়ে আছে। ড্রেসিং টেবিলের তিথির সাজের জিনিসগুলো সব ফ্লোরে পড়ে আছে। আয়ান বুঝতে পারছে না কি বলবে। কি দেখতে এসে কি দেখছে?

-তিথি? তিয়াশ ভাইয়া? কি হয়েছে? এই অবস্থা কেন রুমের? আর তিথি? এই তোর এই অবস্থা কেন?

-ভাইয়া---। আমি আপনাকে পুরো ব্যাপারটা বলছি-। আপনি প্লিজ আমার সাথে একটু বাইরে আসবেন?

-আমার বোনটা ঠিক আছে?

-ওকে একটু সময় দেয়া দরকার--। আপনি চলুন প্লিজ----?

-হ্যাঁ? হ্যাঁ হ্যাঁ আসুন--।

তিয়াশ আয়ানের সাথে বাইরে যাওয়ার আগে আরেকবার পিছন ফিরে তিথির দিকে তাকালো। তারপর বাইরের দিকে পা বাড়ালো।

-তিথি চেইঞ্জ করে নাও--৷ আর প্লিজ ফ্রেশ হয়ে নাও--। ভালো লাগবে---।

তিয়াশ আর এক মিনিটও না দাঁড়িয়ে আয়ানের সাথে রুমের বাইরে এলো। দরজাটা বাইরে থেকে টেনে দিয়ে আয়ানকে সবকিছু খুলে বললো তিয়াশ। তিথিকে সেদিন বাসায় এনে দিতে যখন কলেজে গিয়েছে সেখানে ছেলেটা তিথিকে দূর থেকে ফলো করছিলো সেটাও জানালো। তিয়াশের কথা শুনে আয়ানও থমকে দাঁড়িয়ে রইলো। তিথির আর সব ফ্রেন্ডদের মতো আরিয়ানও প্রায়ই বাসায় যাওয়া আসা করে। ছেলেটা তিথির এতো ভালো বন্ধু হয়েও এমন কিছু করবে সেটা স্বপ্নেও ভাবতে পারে নি আয়ান। তিয়াশ আয়ানের দু হাত নিজের হাতে জড়িয়ে ধরতেই আয়ান তাকালো তিয়াশের দিকে।

-ভাই--। তিথির পাশে এখন কাউকে থাকা খুব জরুরি--। আপনি যদি কিছু মনে না করেন আমি কিছুক্ষণ ওর সাথে থাকি প্লিজ? ওর মনের ভেতরে যে কি চলছে---।

-আপনি থাকুন ওর সাথে। ও আমার শেরনি বোন। ওর কিচ্ছু হবে না---। আর ওই আরিয়ানকে তো আমি--। 

-ভাই এখনই কিছু করতে যাবেন না। অনুষ্ঠানটা শেষ হোক। আর কোন স্টেপ নেয়ার আগে আমাদের তিথির কথাটাও তো ভাবতে হবে--?

-হুম---। আপনি ওর একটু খেয়াল রাখুন--।

-জি ভাই আমি আছি-। আপনি টেনশন নিবেন না। আর আপনি মায়রার কাছে যান---। আমি তিথিকে নিয়ে আসছি---।

আয়ান মাথা দুলিয়ে বাইরের দিকে চলে গেল। আর তিয়াশও লম্বা একটা নিঃশ্বাস নিয়ে তিথির রুমের দরজায় নক করলো। কয়েকবার নাম ধরেও ডাকলো। তিথির কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে তিয়াশের বুকের ভিতরে ধ্বক করে উঠলো। মেয়েটা জবাব দিচ্ছে না কেন? ও কিছু করে বসলো না তো!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন