" মাহাদ রুমকির কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়েই কষে ঠাশশশ্ করে একটা থাপ্পড় মারল রুমকির গালে। রুমকি ভিমড়ি খেয়ে দরজার সামনে গিয়ে পড়ে গেল।"
- "রুমকি প্রচন্ড রেগে গিয়ে চিৎকার করে বলল-" মাহাদ তোমার এতবড় সাহস তুমি আমার গায়ে হাত তোল!"
-" কেবল তো হাত তুলেছি প্রয়োজন হলে লাঠিও তুলবো। তোর সাহস কি করে হয় আমার রুমে আসা তাও এই রাতে!"
-" রুমকি আর মাহাদের চিৎকারে প্রথমে কামরান দরজা খুলে বেরিয়ে এল। পিছনে লাবীবাও ঘুম চোখে ঢুলতে ঢুলতে চলে এল। দু'জনেই রুমকির ব্যবহারে অবাক হয়ে গেল।"
-" ততক্ষনে রুমকির পাগলামো বেড়েই গেল। মাহাদ রুম থেকে বাহিরে চলে আসছে আর রুমকি মাহাদকে বার বার জাপটে ধরার চেষ্টা করছে। মান সম্মানের আর বালাই রাখছেনা।
আমি তোমার কাছে বার বার আসি আর তুমি কেন আমায় পত্যাখান করো! আজ তোমাকে এর জবাব দিতেই হবে।"
-" রুমকি তুই ড্রাগ নিছিস বলেই মাহাদ রুমকিকে ওর কাছ থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু রুমকি ততই আষ্টে-পৃষ্ঠে মাহাদকে জড়িয়ে ধরছে।"
-" ততক্ষনে বাসার সবাই মাহাদের রুমের সামনে চলে এসেছে এতে তিতিরও বাদ যায়না। ছলছল চোখে মাহাদের দিকে তাকিয়ে আছে।"
-" রুপালী দৌড়ে গিয়ে রুমকিকে ধরে টেনে হিচড়ে সরে আনতেই রুমকি ওর মাকে জোড়ে একটা ধাক্কা দিয়ে বলল -" একদম আমার কাছে আসবানা। খুন করে ফেলব কিন্তু! আমার মাহাদকে চাই চাই চাই।"
রুমকি টলতে টলতে মাহাদের দিকে যেতেই মাহাদ এত রেগে গেল যে, আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারেনা। ওখানেই ঠাশঠাশ করে আরো দুইটা চড় মারল সবার সামনে।
এই পাগল হয়ে গেছিস! তোকে পড়ালেখা করার জন্য চিটাগাং এ পাঠানো হয়েছে আর তুই ড্রাগ নেওয়ার ক্লাস করেছিস এতেদিনে?"
-" রুমকির হুস নাই। মা..হা...দ তোমার চড়গুলোর মধ্যও একটা আর্ট আছে। থাপ্পড়গুলো খুব জোস্ ছিল বলেই গলগল করে ওখানেই বমি করে দেয় রুমকি।"
-" রেজওয়ানের যতটা সম্মান ছিল রুমকি ততটাই হিরহির করে টেনে সব সম্মান নিচে নামালো ওর মামার কাছে। খুব প্রসংসা আর গর্ব করতো কামরানের সামনে রেজওয়ান রুমকি কে নিয়ে। আর আজ সব ধুলিসাৎ।
সাবিনা দাড়াইয়া কি দেখছিস! ওগুলো সব সাফ কর বলেই রেজওয়ান রুমকিকে ধরতেই রুমকি হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো।
" ভাইয়া আমার মাহাদকে চাই। তুমিতো আমায় সব কিছু দাও বলার আগেই। এবার মাহাদ টাকে দাও না!"
-" চুপপপ.... আর একটা কথাও না। মা ওকে নিয়ে যাও বলে রেজওয়ান নিজের রুমে চলে গেল। যাওয়ার আগে মাহাদের দিকে একবার চাইতেই আৎকে উঠল রেজওয়ান। মাহাদের দুই চোখ লাল বর্ন ধারন করেছিল। কখন যেন বিস্ফোরিত হয়ে যাবে। এরা দুই জন দু'জনকে খুব ভাল করেই চেনে।"
-" মাহাদের হঠাৎ করেই তিতিরের দিকে চোখ পড়ল। মেয়েটা স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে আছে। একসাথে অনেকগুলো অবিস্বাস আর হতাশা নিয়ে মাহাদের দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে রয়েছে।"
-" মাহাদের সাথে তিতিরের চোখাচোখি হওয়ার সাথে সাথে তিতির নিজের চোখটা সরিয়েই পিছন ফিরল। সাথে সাথে চোখ দিয়ে টপটপ করে জল পড়ে গেল। দ্রুত সেখান থেকে তিতির নিজের রুমের দিকে পা বাড়াল।"
-" মাহাদ ব্যাপারটা বুঝল। শেষে মায়ের দিকে তাকিয়ে দু'হাত তুলে ইশারায় কিছু একটা বলে নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয় মাহাদ। আজ যদি বাতাসি বিবি না ঘুমিয়ে এখানে থাকতো তাহলে সবকটারে ধুয়ে দিত নিজের মুখের বাক্যলাপে।"
-" মেয়েটা আর মান-সম্মান রাখলো না। কাল সকালে ওর সাথে কথা বলতো লাবীবা। এই বাসায় ড্রাগ নেওয়া সাহস ও কোথায় থেকে পেল! এতটা নোংরা মনমানুষিকতা মানুষের হয় কিভাবে! (কামরান)
-" কামরান যে কতটা রেগে গেছে সেটা হারে হারে টের পেল লাবীবা। রুমকি যে এমন একটা কাজ করবে সেটা কেউ কল্পনাতেও আনেনি।"
♦♦♦♦♦♦♦♦♦
-" পরেরদিন বাসায় একটা থমথমে ভাব। রুমকির ঘুম এখনো ভাঙ্গেনি। ও যানেই না হয়ত গতরাতে ও বাসার পরিবেশটা কতটা নিচে নামিয়েছে। রুপালী গম্ভীর মুখে মেয়ের পাশে বসে আছে। রুপালী নিজেও লজ্জিত রুমকির ওমন ব্যবহারে। মেয়েটা যে তার এতটা নিচে নেমে গেছে বুঝতেই পারেনি। এই বাসায় এসেও ড্রাগ নিল! কখন নিল সেটাই বুঝতে পারছেনা রুপালী।
নিশাখোরের আবার সময় অসময় বলে কিছু আছে নাকি? কথাগুলো বলে নিজেই নিজেকে গালি দিতে লাগল রুপালি।"
-" আকাশে প্রচন্ড মেঘ জমেছে। তিতির ভোর থেকেই জানালার গ্রীল ধরে দাড়িয়ে আছে। পুরোটা রাত ঘুমাতে পারেনি। হয়ত অনেক আশা করেছিল মাহাদকে নিয়ে তাই আল্লাহ্ নিজে এসব দেখালো তিতির কে সাবধান করে দেওয়ার জন্য।
আমি কতটা বোঁকা। রাজপ্রসাদের বাঁদী আমি আর রাজপুত্রকে নিয়ে আকাশ ছোয়া স্বপ্ন দেখি। আমার লজ্জা হওয়া উচিত বলেই ফুফিয়ে কেঁদে উঠলো তিতির। সত্যিই আজ এই মস্তবড় পৃথিবীটা তিতিরের কাছে খুব ছোট লাগছে।
মায়ের মুখটা বার বার মনে করার চেষ্টা করছে তিতির কিন্তু মনে করতে পারছেনা। সময়ের সাথে সাথে মায়ের মুখটাও হারিয়ে যাচ্ছে তিতিরের স্মৃতি থেকে। আকাশে খুব দ্রুত বিজলি চমকালো এবং তৎক্ষনাতই খুব জোড়ে বজ্রপাত হল আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে তুলে। প্রচন্ড বেগে বৃষ্টি শুরু হল।
তিতির জানালার থাইটা লাগিয়ে দিয়ে খাটে এসে বসল। আজ ওর কলেজ যাওয়ার প্রথম দিন কিন্তু আজই আকাশটা বড্ড কান্না করছে তিতিরের মত।
মাহাদের দেওয়া বোরখা,নেকাব, ভ্যানিটিব্যাগ, বই সহ সব কিছু গুছিয়ে নিল তিতির। বাসাতে থাকতে মন চাচ্ছেনা তার। বাহিরে যাওয়ার জন্য মনটা ছটপট করছে। আজ যতই বৃষ্টি হোকনা কেন বাহিরে সে যাবেই।"
-" সকালে লাবীবা নাস্তার টেবিল সাজানো পরিদর্শন করছে। যা যা লাগবে সব কিছু বলে দিচ্ছে আর কাজের ছেলেটা একের পর এক নাস্তা নিয়ে এসে টেবিল সাজিয়ে দিচ্ছে।
শাশুড়ীর নামে নাস্তা নিয়ে লাবিবা চলে গেল। আর যাই হোক বাতাসি বেওয়া ছেলের বৌকে খুব ভালবাসে।"
-" আপু ঘুম থেকে উঠেছেন বলেই মৌয়ের রুমে নক করল তিতির। মৌ তখনো ঘুমাচ্ছিল তাই বাধ্য হয়ে রেজওয়ান দরজাটা খুলে দিয়ে তিতিরের দিকে তাকালো।
বোরখা পড়া মেয়ে। মুখ নেকাবে ঢাকা। মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত আগাগোড়া পর্দা করা। প্রথমে চিনতে পারেনি কিন্তু পরে কথা শুনে রেজওয়ান চিনতে পারে।
তিতির??????"
-" জ্বী ভাইয়া। আপু নেই?
আজ প্রথম ভার্সিটিতে যাচ্ছিতো তাই আপুকে জানাতে এসেছি।"
-" তোমার আপু ঘুমাচ্ছে। এই বৃষ্টির দিন কি ভার্সিটিতে না গেলেই নয়! ওখানে গিয়ে দেখবে হয়ত স্টুডেন্ট অনুপস্থিতির জন্য ক্লাসটাই বাতিল হয়ে গেল। "
-" ভাইয়া প্রথম দিন তাই কোন বাঁধা মানতে চাচ্ছিনা। দাদী বলতো শুরুতে যদি খারাপ হয় তাহলে শেষটাও খারাপের মধ্য দিয়েই শেষ হয়ে যায়। যদিও এটা কুসংস্কার। তবুও মন যাইতে চাচ্ছে।"
-" ওকে,,,,, তুমি চাইলে আমি তোমাকে তোমার ভার্সিটিতে নামিয়ে দিতে পারি। যাওয়া না যাওয়া সেটা সম্পূর্ন তোমার উপরই নির্ভর করছে।"
-" না ভাইয়া আমি চলে যেতে পারবো। আপনি আপুকে একটু বলে দিয়েন বলে তিতির গুটি গুটি পায়ে ওখান থেকে চলে আসল।"
-" আর যাই হোক মাহাদ কখনো এই মেয়েকে পছন্দ করবেনা। ওর রুচি সবসময় উচ্চশীল সেখানে এই সাদাসিধে মেয়েকে জিবনসঙ্গী হিসেবে চুজ করবে!
যদিও তিতির যথেষ্ঠ সুন্দরী ও মার্জিত মেয়ে তবুও মাহাদ! নাহ্ ইনফরমেশন হয়ত ভুল এসেছে আমার কাছে। মৌয়ের কাজিনই বা মাহাদের গার্লফেন্ড হতে যাবে কেন! নানা চিন্তায় চিন্তিত হয়ে পড়ল রেজওয়ান।
যদি সত্যিই তিতির মাহাদের দুর্বল জায়গা হয় তাহলে মাহাদ তুই ফিনিস। এবার আমি খেলবো আর তুই চেয়ে চেয়ে দেখবি। ফুয়াদকে সরাইছি তোরে এবার সরানো আমার বাম হাতের খেল।"
-" নিচে ডাইনিং রুমে আসতেই কামরান আহনাফের সাথে দেখা হল তিতিরের।
তিতির সালাম জানিয়ে ভার্সিটিতে যাওয়ার কথা বলতেই কামরান খুঁশি হয়ে বলল-" তিতির চলো আজ তোমায় আমি ড্রপ করি ভার্সিটিতে। আমিও ঐ ভার্সিটি থেকে পড়া শোনা করেছি। কিছু খেয়েছো? আচ্ছা খাইতে হবেনা চলো আজ আমরা বাহিরে গিয়ে খাবো বলে কামরান তিতিরকে নিয়ে বের হয়ে গেল। কামরানের কোন মেয়ে নেই তাই হয়তো তিতিরের মাঝে নিজের মেয়েকে খুঁজছে।
তিতিরও না করতে পারল না।"
♦♦♦♦♦♦♦♦
-" সকাল থেকে বৃষ্টি হয়েই যাচ্ছে। এমন আবহাওয়াতে যে কারোই ঘুম না ভাঙ্গার কথা। মাহাদও সকাল ১০ টা অবদি ঘুমিয়ে ছিল। শেষে মায়ের কুড়ি মিনিট ধরে দরজা ধাক্কার ফলে শেষে বাধ্য হয়ে বেড থেকে উঠে গিয়ে লম্বা একটা হামি দিয়ে দরজা খুলল।
মা এত সকালে কেউ ডাকে! আমার ঘুমের সাথে বরাবরই তোমার শত্রুতা। একটু ঘুমাতে দাও বলে মাহাদ এসে আবার বেডে সুয়ে পড়ল।"
-" সকাল ১০ টা বেজে গেছে। তোর বাবা, তিতির সবাই যে যার কাজে চলে গেছে আর ছেলে আমার বলে কিনা সকালই হয়নি! ওঠ....."
-" তিতিরের কথা শুনেই ধরপর করে উঠে বসল মাহাদ। কাল যে সিনক্রিয়েট করেছে রুমকি আর সেটা তিতিরের সামনেই। তারপর থেকে ওর খোঁজ নেওয়া হয়নি। আর যাই হোকনা কেন ; ম্যাডামের অভিমান সবসময় ৩৬০ড্রিগী আঙ্গেলে ঘুরতেই থাকে।
মাহাদ শরীর থেকে কম্বোলটা একঝটকায় ছুড়ে ফেলে দিয়েই ওয়াসরুমে চলে গেল। লাবীবা ছেলের কান্ড দেখে মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে বলল-" মাহাদ তোর মধ্য কিন্তু অনেক পরির্বতন এসেছে বাবা। ঠিক যেন আমার ছোট্ট মাহাদ তুই। "
-" মাহাদ ফ্রেস হয়ে এসে দেখল ওর মা নেই। ঝটপট করে রেডী হয়ে গাড়ীর চাবি, ওয়ালেট আর ফোনটা হাতে নিয়ে দ্রুত গতিতে বাসা থেকে বের হয়ে গেল। পিছনে মা কয়েকবার ডাকল নাস্তা করার জন্য কিন্তু তার তো আর সময়ই নেই।
আজ যে তিতিরের ভার্সিটির প্রথম দিন সেই কথাটা মাথায় ছিলনা মাহাদের।"
♦♦♦♦♦♦♦♦♦
-" বাসার গেটে গাড়ির পিপপিপ শব্দ শুনেই ৩ বছরের নিধি চিৎকার দিয়ে উঠে বলল-" আম্মু চাচ্চু এসেছে,,,,,, আম্মু আম্মু চাচ্চু বলেই ছোট পায়ে গট গট করে দৌড়ে ব্যালকুনিতে দাড়াল।"
-" নিধিকে উপরে দাড়িয়ে থাকতে দেখে মাহাদ গাড়ীর গ্লাসটা নামিয়ে বৃষ্টির মধ্যই হাত বাড়িয়ে ইশারা করতেই নিধির খুঁশি দেখে কে!
আমার চাচ্চু আমার বলে দরজার কাছে গিয়ে বলল-" আম্মু আম্মু দরজা খোল; আমি চাচ্চুর কাছে যাবো।"
-" নিশা বাধ্য হয়ে নিধিকে কোলে নিয়ে দরজাটা খুলে নিচে নেমে গেল। মাহাদ ততক্ষনে গাড়ী পার্ক করে নিচে দাড়িয়েছে।
নিশা নিধিকে নামিয়ে দিয়ে উপরে চলে গেল। নিধি এক দৌড়ে মাহাদের কাছে যেতেই মাহাদ নিধিকে কোলে নিয়ে বলল-"কেমন আছেন আম্মাজান?"
-" নিধি চাচ্চুর গালে চুমু দিচ্ছে আর খিলখিল করে হাসছে। এরে পায় কে এখন। শক্ত করে দু'হাত দিয়ে মাহাদের গলা জড়িয়ে ধরে চুপটি করে রইল। মাহাদ ঐ অবস্থায় সিড়ি দিয়ে উপরে উঠে এল। "
-" মা এবার খুঁশি হইছেন! ৩ দিন ধরে সেই জ্বালিয়েছেন বলে ফুয়াদ মাহাদের কাছে আসল। তোরে যে ও কি পায় আল্লাহ্ জানে। বাবা-মা কেমন আছে মাহাদ?"
-" হুম ভাল আছে। নিশা কিছু খাবার দে তো বাসা থেকে কিছু খেয়ে আসি নাই।"
-" নিশা প্লেটে খাবার দিয়েই বলল-"মাহাদ নিতুর বিয়ে আগামী সপ্তাহে তুই কিন্তু আমাদের সাথে যাবি। বাবা-মাকে তো আর বলতে পারবো না তুই অন্তত যাস আমাদের সাথে!"
-" তোর ঐ পুচকে বোনের বিয়ে! এতই বড় হয়ে গেছে যে শেষ পর্যন্ত বিয়ে! তোরা মেয়েরা খুব তাড়াতাড়িই বড় হয়ে যাসরে নিশা। রিলেশন করে বিয়ে না বাসা থেকেই?"
-" আজকাল কি আর তেমন বাবা-মায়ের পছন্দের কেউ বিয়ে করে! নিজের পছন্দ করা ছেলের সাথেই বিয়ে হচ্ছে। তুই কিন্তু আসবি!"
-" তাহলে আমিও একটা রিলেশন করে বিয়ে করেই নিই কি বলিস নিশা! এটাই যখন প্রচলন হয়েছে তার থেকে আমি কেন বাদ যাবো? মাহাদকেও একটা লাভ ম্যারেজ করা উচিত তাই না নিশা?"
-" মাহাদের কথা শুনে নিশা আর ফুয়াদ দুজনেরই মুখ কালো হয়ে গেল কিন্তু কিছুই বলল না। মাহাদ খাবার কমপ্লিট করে সোফায় বসে টিভি অন করতেই নিধি এসে চুপটি করে মাহাদের কোলে মাথা রেখে সুয়ে পড়ল।"
-" আম্মাজান আপনি কিন্তু ঘুমিয়ে পড়েন না। আমি আর কিছুক্ষন পর চলে যাবো। শেষে কিন্তু আর অভিযোগ করতে পারবেন না; আপনার ছেলে আপনাকে না বলে চলে গেছে।
কি হল চকলেট গুলো খাবেন না আম্মাজান!"
-"নিধি বোম ফুলে ছলছল চোখে উঠে বসে রইল । তারপর মাহাদের গলা ধরে চুপ করে রইল।
মাহাদ বিকেলে যাস! "
ঃ-" না ভাইয়া একটু কাজ আছে। সাড়ে ১২টার মধ্য বের হয়ে যাবো।"
ঃ-" তুই কি কোন মেয়েকে পছন্দ করিস! সত্যিই কি রিলেশন করে বিয়ে করতে চাস!"
ঃ-" মাহাদ ওর ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে সব বুঝে ফেলল কেন কথাগুলো বলছে ওর ভাইয়া। ভাইয়া বাদ দাও তো! আমিতো কথার ছলে কথাগুলো বলছিলাম।"
ঃ-" দেখ আমরা এমন একটা কাজ করে এমনি সমস্যার ভিতর পরে গেছি তার উপর একি কাজ যদি আবার তুই করিস তাহলে সব শেষ হয়ে যাবে। বাবা-মাকে ব্যাপারটা জানিয়েই কাজটা করিস বলে নিশা এসে মাহাদের কাছে বসল।
ঃ-" ভাইয়া আমার হাতে সময় নাই আমাকে এখুনি যেতে হবে বলে নিধিকে অনেক বুঝিয়ে তারপর বাসা থেকে বের হল মাহাদ।"
♦♦♦♦♦♦♦♦
-" তিতির কিছু মিনিট হল রাস্তার একটা দোকানের চালের নিচে দাড়িয়ে আছে। ভিজে যাবে, না আরও কিছুক্ষন দাড়িয়ে থাকবে রিক্সার জন্য সেটাই ডিসিশন নিতে পারছে না। কয়েকটা রিক্সাচালককে ইতিমধ্য বলেছে কিন্তু তারা কেউই যেতে রাজি নয় এই বৃষ্টির মধ্য। এর মধ্যই মাহাদ গাড়ী নিয়ে হাযির। গাড়ীর গ্লাসটা নামিয়ে তিতিরকে ইশারা করতেই তিতির বৃষ্টির মধ্য রাস্তায় নেমে পড়ল। মাহাদের গাড়ী ওভার টেক করে রাস্তার একপাশ দিয়ে চলতে শুরু করল।
-" মাহাদ বাসার ড্রাইভারকে কল দিয়ে বলল-" এখানে গাড়ী পার্ক করা আছে আপনি এসে গাড়ীটা বাসায় নিয়ে যান।
সুবিধা মত গাড়ী পার্ক করে মাহাদ ছাতা নিয়ে গাড়ী থেকে নেমে পড়ল। এই মেয়ের অভিমানটা কেন যে এত বেশি সেটাই আমার মাথায় আসেনা।তিতির ততক্ষনে মোড় পেরিয়ে মাহাদের চোখের আড়ালে চলে গেছে।"
-" তিতির বৃষ্টির ভিতরই ভিজে ভিজে চলছে। হঠাৎ পিছন ফিরে চেয়ে দেখে মাহাদ নাই। আমি তার ডাকে সাড়া দেইনাই বলে আর আসবেনা আমার পিছে! কেমন ভালবাসে আমায়....! কথা গুলো বলতেই চোখ ছাপিয়ে নোনা জল বইতে লাগল তিতিরের গাল বেয়ে।
এই তিতির আর আপনার সাথে কখনো কথা বলবেনা। আপনার জিবনে তো অনেক মেয়ে আছে। হয়ত আমাকে কিছুক্ষনের জন্য করুনা করছেন। আমি আর কখনো ভাববোনা তাকে নিয়ে। নিজেই নিজের পথ চলবো। আমার কাউরে দরকার নাই।
তিতির নিজের কথাগুলোর মাঝে এতটাই মগ্ন হয়েছিল যে, মাহাদ কখন থেকে যে ওর মাথায় ছাতা ধরে ওর পাশাপাশি হেটে চলছে সেটা তিতির টেরও পেল না।"
-" ম্যাডাম এত কি চিন্তা করছেন! সেটা কি জানতে পারি?
ঃ- "মাহাদের কথায় ধ্যান ভাঙ্গল তিতিরের। আপনি! আমার ছাতার প্রয়োজন নাই। আমি এসব বৃষ্টিতে ভিজতে অভ্যস্ত। আপনি যেতে পারেন।"
ঃ-" তিতির সত্যিই কি আমি চলে যাবো? তোমার খারাপ লাগবেনা?"
ঃ- " একদম লাগবেনা বলে মাহাদ কে পাশ কাটিয়ে জোড়ে জোড়ে চলতে লাগল তিতির। "
ঃ-" তিতিরের এমন ব্যবহারে মাহাদ খুব কষ্ট পেল। বেশ জোড়েই হেঁটে তিতিরের কাছে গিয়ে ছাতাটা ওর হাতে দিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে বাসায় চলে আসল মাহাদ।"
♦♦♦♦♦♦♦
-" তিতিরের ফিরতে অনেক দেরি হয়ে গেল আসতে আসতে। বাসায় ফিরেই ডাইনিং রুমে বিশাল হট্টোগল দেখতে পেল। গতকাল রাতের কাহিনী নিয়ে বাতাসি বেওয়া তার মেয়ে রুপালীর সাথে ঝগড়া বেঁধে ফেলেছে। রুমকি মাথা নিচু করে সব কথা শুনছে আর কান্না করেই চলছে।
তিতির সেদিকে কান না দিয়ে তাদেরকে পাশ কাটিয়ে নিজের রুমে চলে আসলো।
দুপুরে খাবার টেবিলে তিতির আর মাহাদকে দেখল না। মাহাদকে দেখতে না পেয়ে তিতিরের খুব খারাপ লাগতে লাগল আর সেটা ধীরে ধীরে অস্থিরতায় পরিনত হল।
দুপুর, বিকাল এমনকি সন্ধ্যার সময়ও মাহাদকে দেখল না। কাকে জিঙ্গাসা করবে তিতির তার মাহাদ কই আছে। একসময় রুমের দরজা বন্ধ করে তিতির কাঁদতে লাগল।"
-" বাতাসি বেওয়া নিজের রুমে পান ছেচেই চলছে আর কি যেন ভাবছে। সাবিনা এখন আপাতত তার সাথী। বাসার সমস্ত খবর সাবিনা তার কানে দেয়। বাসার কেউ যদি সাবিনাকে কিছু বলছে তাহলে বাতাসির মুখের কাছে তার আর রেহাই নাই।
সাবিনা বাসার সমস্ত কথা বাতাসি বিবিকে বলছে আর বাতাসি মনযোগ দিয়ে সব কথা শুনছে।
কাল একটা ঝগড়ার আসর বসাতে হবে বুঝলি সাবিনা! এদের বাড় বড়ই বেড়ে চলছে। আমার শাশুড়ি যেমন শক্ত হাতে সংসার শাসন করেছে তেমনি আমাকেও করতে হবে। এদে মান সোলেমান যদি না টানাইয়া নিচে না নামাছি তাহলে আমার নামও বাতাসি না।
সাবিনা বাতাসিরে আরও দুইটা কথা লাগিয়ে দিয়ে বাতাসির মনের আগুন আরও বাড়িয়ে দিল। সাবিনা মনে মনে খুব খুঁশি হয়। কাল বড়সড় একটা ঝগড়া বাঁধবে। বাতাসির ঝগড়া তার খুব প্রিয়। সিরিয়াল দেখার চেয়ে বাতাসির ঝগড়া বেশি বিনোদন দেয় সাবিনাকে।"
-" রাত ১ টা বেজে গেছে। সবাই ঘুমিয়ে গেছে হয়ত কিন্তু তিতির এ পাশ ওপাশ করেই চলছে তবুও ঘুম আসছেনা।
শেষে ভয়ংকর একটা সিদ্ধান্ত নিল। রুম থেকে বের হয়ে মাহাদের রুমে চলে গেল। দরজাটা বন্ধ দেখে কয়েকবার খুব সাবধানে নক করল আর অপেক্ষা করতে লাগল মাহাদ কখন দরজাটা খোলে।"
-" মাহাদ ফুয়াদের সাথে কথা বলছিল আর ল্যাপটপে কাজ করছিল। ভাইয়া লাইনে থাকো আমি আসছি বলে উঠে গিয়ে দরজা খুলতেই তিতির কোন কথা না বলে মাহাদের উপর একপ্রকার ঝাঁপিয়েই পড়ল। দুহাতে শক্ত করে মাহাদকে জড়িয়ে ধরল তিতির।
মাহাদ রিতিমত অবাক হয়ে গেল তিতিরের কান্ডে।
তিতির তো কখনো এমন কাজ করার মত মেয়ে নয়।
-" আমি আপনার সাথে কথা বলিনি বলে এভাবে শাস্তি দিবেন আমাকে! আপনি জানেন না তিতিরের আপনাকে ছাড়া চলেনা! আপনি খুব নিষ্ঠুর প্রকৃতির একটা মানুষ। "
-" চুপপপ বলেই মাহাদ তিতিরকে সরিয়ে দিয়ে আগে দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে এসে ফোনটা হাতে নিয়ে বলল ভাইয়া আমি কাল সকালে কল দিচ্ছি।"
-" তোর রুমে কে এসেছে মাহাদ!
-" ভাইয়া কাল সব বলব। আজ রাখি বলে মাহাদ কল কেটে দিল। ততক্ষনে তিতির মাহাদের বেডের কাছে এসে দাড়িয়েছে।
মাহাদ এবার রেগে গিয়ে বলল-" তিতির! তোমার কি কান্ডঙ্গান বলে কিছু নেই! এতরাতে এখানে কেন আসছো?
-" কেন আসছি জানেন না বলেই তিতির মাহাদকে জড়িয়ে ধরেই বলল-" আপনাকে ছাড়া আমি থাকতে পারছিনা মাহাদ।"
মাহাদকে আর কোন কথার সুযোগ না দিয়ে তিতির মাহাদের দুটি ঠোট নিজের দখলে নিল। তিতিরের চোখের কয়েক ফোঁটা জল মাহাদের বুকে এসে পড়ল........