নিভৃতে যতনে - পর্ব ০৩ - আসফিয়া ইসলাম জান্নাত - ধারাবাহিক গল্প


০৫!! 

নতুন সকাল,নতুন অধ্যায়। কথাটি আজ আমার জীবনের সাথে যেন খাপে খাপে মিলে যাচ্ছে। জীবনের গতিটাই যেন আজ বদলে গিয়েছে। নতুন পরিবেশ, নতুন মানুষ, নতুন জীবন। অথচ এই সকল নতুনের মাঝে এক পুরাতন আমি।

 মিনিট পাঁচেক আগেই ঘুমটা ভেঙ্গেছে আমার। ঘুম ভাঙ্গবার পর কিছুক্ষণ থম মেরে বসে ছিলাম। বুঝে উঠার চেষ্টা করছিলাম আমি আসলে কোথায়৷ অতঃপর পাশ ফিরে রোয়েনকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখতেই চমকে উঠলাম। ধীরে ধীরে সব পরিষ্কার হয়ে এলো সব। মনে পরে গেল কালই আমার এই মানুষটির সাথে বিয়ে হয়ে গিয়েছে। আমি এখন বিবাহিত। কথাটা মনে পড়তেই আনমনে সেই কথাগুলো ভেবে উঠি। কিছুক্ষণ বিছানায় এপাশ ওপাশ করে উঠে পড়ি। চারদিকে চোখ বুলিয়ে দেয়াল ঘড়িটা খুঁজতে থাকি। ডান দিকে দেয়ালে তাকাতে পেয়েও যাই। সময় এখন সাড়ে সাতটার একটু বেশি। আড়মোড়া ভেঙে নেমে পড়ি। লাগেজটার সামনে গিয়ে সেটা খুলি। ভাবতে থাকি কি পড়া যায়। নিয়ম অনুসারে আজ শ্বশুরবাড়িতে প্রথমদিন শাড়ি পড়তে হয়। কথাটা ভেবেই বিরক্তিতে নাক-মুখ কুঁচকে এলো আমার। এমন নয় যে আমি শাড়ি পড়তে পারি না। পারি! কিন্তু সমস্যা হলো শাড়ির সাথে আমার অনন্তকালের শত্রুতা। এই একটা জিনিসই পৃথিবীতে আছে যাকে নাকি আমি মনে প্রাণে ঘৃণা করি। এই চৌদ্দ প্যাঁচ আলা ত্যানা মানুষ যে কিভাবে এত সাচ্ছন্দ্যে পড়ে ঘুরে বেরায় আল্লাহ মালুম। নির্ঘাত এরা এলিয়েন। নাহলে এই ত্যানাটা পড়ে সারাদিন থাকা যায়? হুহ!
একবার ভাবলাম সেলোয়ার-কামিজই পড়বো। যে যা ইচ্ছা বলুক গা। সেলোয়ার-কামিজটা নিতে গিয়েও নিলাম না। শাড়ি উঠিয়ে নিলাম। কেন না শাড়িটা না পড়ার বিষয়টা যে কোথা থেকে কোন পর্যন্ত গড়াবে তা আমার জানা আছে। বিষয়টা আমার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে আমার শ্বশুরবাড়ির সকলের মধ্য দিয়ে যাবে। ঝামেলা হবে। আর তা আমি আপাতত চাই না। তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও শেষে শাড়িটাই বেঁছে নেই৷ ওয়াশরুমের দিকের যেতে যেতে ভাবি, 'এইটা তো মাত্র শুরু। নিজের অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সামনে আর কত কি যে করতে।' কথাটা ভেবেই দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিলাম। 

ফ্রেশ হয়ে এসে চুল আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে টাওয়ালটা দিয়ে চুল মুচতে থাকলাম। নিজেকে পর্যবেক্ষণ করতে করতেই আয়নার মধ্য দিয়েই খাটের দিকে নজর যায়৷ রোয়েন চ্যাপ্টা হয়ে ঘুমাচ্ছে। চুলগুলো একটু লম্বা হওয়ায় কপালে এলোমেলো ভাবে পড়ে আছে। আমি পিছন ঘুরে দাঁড়ালাম। ভালো ভাবে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলাম। কেন না এর আগে আমার তাকে এতটা ভালো মত দেখা হয়নি। শ্যাম বর্ণ গায়ের ছেলেটির মুখশ্রী অতি সাধারণ। লম্বাটে মুখ, সরু নাক। ঠোঁটের রঙ একদম হালকা গোলাপি। গালে কোন দাঁড়ি নেই। দেহের গঠন মিডিয়াম। একদম মোটাও না আবার চিকনও না। দেখতে বেশ না হলেও খারাপ না। আমি এইবার ঘুরে দাঁড়িয়ে মনে মনে বলি, "এত চেক আউট করার কি আছে? প্রেম করবি? এই খাটাশ ব্যাটা না চাইলেও তোর, চাইলেও তোর। একেই নিয়েই তোর কপাল পিটাতে হবে। সেকেন্ড কোন অপশন নাই। হুহ!"
কথাটা যখন ভাবছি তখন দরজায় কড়া আঘাত পড়ে। কেউ একজন অতি মিষ্টি সুরে বলে উঠে,

-- ভাইয়া দরজা খুলো। সকাল হয়ে গিয়েছে। মামী ভাবীকে ডাকছে। 

কথাটা আমার কর্ণপাত হতেই আমি অপ্রস্তুত হয়ে যাই। দ্রুত বারান্দায় গিয়ে টাওয়ালটা মেলে দিয়ে মাথায় ঘোমটা টেনে নিয়ে দরজার দিকে চলে যাই। দরজাটা খুলতেই ১৩-১৪ বয়সী একটি মেয়ের মিষ্টি চেহেরা ভেসে উঠে। আমি তার দিকে ছোট এক হাসি উপহার দিতেই সে চওড়া এক হাসি উপহার দেয়। মিষ্টি কন্ঠে বলে,

-- ভাবী তুমি উঠে গিয়েছ?

আমি কিছু না বলে শুধু মাথা নাড়ি। সে তা দেখে একটু হেসে বলে,

-- তাহলে বেরিয়ে এসো। মামী ডাকছে। এসো আমার সাথে এসো। 

কথাটা বলেই আমার হাত ধরে সে নিয়ে যেতে থাকে। স্বভাবে যতটুকু বুঝলাম সে নিতান্তই বাচ্চা টাইপের একটা মেয়ে। তেমন বুঝ-জ্ঞান এখনো হয়নি। যদি থাকতো নিশ্চয়ই এইভাবে হাত ধরে নতুন বউকে নিয়ে যেত না। অথবা এমন ও হতে পারে নতুন কাউকে পেয়ে তার মধ্যে এক্সাইটমেন্ট জিনিসটা বেশি কাজ করছে৷ সে যাই হোক! আমি আর এই বিষয়ের দিকে তেমন একটা পাত্তা না দিয়ে চুপচাপ এগুতে থাকি। ড্রয়িং রুমের দিকে আসতেই হঠাৎ বাজ গলায় কেউ ধমকে উঠে,

-- জেরিন! এইটা কি ধরনের অসভ্যতা? বাড়ির নতুন বউকে কেউ এইভাবে টেনে নিয়ে আসে? আক্কেল-জ্ঞান নাই?

সম্মোধনটা শুনে বুঝতে পারলাম মেয়েটার নাম জেরিন। এইদিকে কথাটা শুনেই জেরিন আমার হাত ছেড়ে দেয় আর কাঁচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। গোলগাল চোখে সামনে তাকাই। তো আমিও জেরিনের সাথে সামনের দিকে তাকাই। সোফার উপর একজন মাঝবয়েসী মহিলা পায়ের উপর পা তুলে চায়ের পেয়ালা হাতে নিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে জেরিনের দিকে তাকিয়ে আছে। তারই পাশে আরও কিছু মহিলা বসে বসে চা খাচ্ছে। জেরিন মাথা নিচু বলে উঠে,

-- সরি মা। খেয়াল করি নি আসলে। 

সোফায় বসে থাকা সে মহিলা কিছু বলতে যাবে তার আগেই পাশ থেকে একজন মহিলা বলে উঠে,

-- আহা রেনু! মেয়েটা কেন বকছিস? বাচ্চা মানুষ। 

রেনু বেগম চায়ের পেয়ালায় চুমুক দিতে দিতে বলেন,

-- বাচ্চা,বাচ্চা বলে তোমরাই কাড়ে উঠাচ্ছো। এমন করলে ও আদব কায়দা শিখবে কবে?

কথাটা বলে তিনি চুপ করে গেলেন। এরই মাঝে জেরিন কেটে পরে। জেরিন কেটে পড়তেই একজন মহিলা আমার দিকে এগিয়ে আসে। আমার জানা মতে আমার শ্বাশুড়ি। আমার সামনে দাঁড়িতেই আমি সালাম দিয়ে উঠি। সে আমার সালামের উত্তর দিয়ে জিজ্ঞেস করে,

-- ঘুম ঠিক মত হয়েছে মা? নতুন পরিবেশে এসে  সমস্যা হয়নি তো?

আমি না সূচক মাথা দুলাই। সে মুচকি হেসে বলে,

-- এসো তোমায় সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেই। 

কথাটা বলেই সে আমার হাত আলতো করে ধরে এগিয়ে নিয়ে যান। অতঃপর সকলের সামনে নিয়ে গিয়ে একেক করে পরিচয় করিয়ে দিলেন। রেনু বেগম হচ্ছে তার ছোট ননদ আর তানিয়া বেগম হচ্ছে তার ননাশ। দিঘি বেগম হচ্ছে তার বড় জা। মারিয়া ও কুলসুম বেগম হচ্ছে তার ভাইয়ের বউ। মানে ভাবী। আমি সবাইকেই একেক করে সালাম দিলাম। অতঃপর তারা আমার সালামের উত্তর ফিরিয়ে দিয়ে তাদের মাঝে বসিয়ে দিলেন। এইটা সেটা জিজ্ঞেস করতে থাকলেন। এরই মাঝে মারিয়া বেগম জিজ্ঞেস করে উঠেন,

-- তোমার গহনা-গাটি কই? পড়ো নাই কেন? জানো না নতুন বউদের সবসময় হাতে-গলায় গহনা পড়ে থাকতে হয়?

তার কথাটা শুনে সকলের আমার দিকে গোলগাল চোখে তাকায়। যার ফলে আমি অস্বস্তিতে পড়ে যাই। কোন মতে বলে উঠি,

-- গোসল করার সময় খুলে রেখেছিলাম। পরে আর পড়তে মনে ছিল না। 

কুলসুম বেগম ঠেস মেরে বলে উঠে,

-- এমা! এ কেমন কথা মনে ছিল না? এতটা মনভোলা হলে কিভাবে হবে? সংসারের হাল ধরবা কেমনে?

আমি কিছু না বলে দাঁতে দাঁত চেপে বসে থাকি। ইচ্ছে তো করছে দুই একটা কথা শুনিয়ে দিতে। কিন্তু আমার সেটা করতে হয়নি কেন আমার জায়গায় আমার শ্বাশুড়িই  কথাটা কাটিয়ে দেন,

-- ভাবী মনে নাই থাকতে পারে। নতুন পরিবেশ, নতুন জায়গায়। এইভাবেই তো ঘাবড়িয়ে আছে ও। খেয়াল করি নি হয়তো এতটা। 

মারিয়া বেগম ভেঙচি দিয়ে বলে,

-- বাড়ির বউরে এত ছুট দিতে নাই। নাইলে পরে মাথায় চড়ে বসে। 

কথাটা শুনে রেনু বেগম বলে উঠে, 

-- বউ যার তাকেই না হয় বুঝতে দিন। সে ছুট দিবে কি না। খামাকা অন্যের বিষয়ে নাক ঢুকিয়ে তো লাভ নেই। 

রেনু বেগমের কথাটা শুনে মারিয়া বেগম ফুঁসে উঠে। সেই সাথে কুলসুম বেগমও। তারা আর কিছু না বললেও ফোঁস ফোঁস ঠিকই করতে থাকে। একসময় উঠে চলে যান রান্নাঘরের দিকে। তানিয়া বেগম বলে উঠে,

-- রেনু তুই একটু বেশি কথা বলিস। 

দিঘি বেগম বলে উঠে,

-- খারাপ কিছু বলে নি আপা। ঠিকই তো বলেছে। 

তানিয়া বেগম বলেন,

-- তাও কথাটা এইভাবে বলা ঠিক হয়নি।

রেনু বেগম ভাবলেশহীন ভাবেই বলেন,

-- দুনিয়ায় নিজে টিকতে হলে অন্যের মুখের উপর বলা শিখতে হয় বড় আপা। 

ঘটনাটা ক্রমে অন্যদিকে যেতে দেখে আমার শ্বাশুড়ি বলে উঠে,

-- আচ্ছা থাক না বিষয়টা। এই কথাটা আর টেনে লাভ নেই। এইভাবেও নাস্তার সময় হয়ে গিয়েছে। নাস্তা সাজানো দরকার। 

সবাই আর কিছু না বলে একে করে উঠে পরে। আমার শ্বাশুড়ি আমাকে বসিয়ে রান্নাঘরে চলে যায়। অতঃপর এক কাপ কফি নিয়ে ফিরে এসে আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,

-- যাও মা! কফিটা রোয়েনকে দিয়ে এসো আর নাস্তার জন্য বেরিয়ে আসতে বইলো। 

আমি মাথা নিচু করে মাথা দুলাই। সে আমার দিকে মুচকি হেসে বলে,

-- কিছু মনে নিও না। আমার ভাইয়ের বউগুলো একটু এমনই। একটু সহ্য করো। কালকের অনুষ্ঠানের পরই তারা চলে যাবে। 

আমি চট করে বলে উঠি,

-- না! না! আন্টি কোন সমস্যা নেই। আমি কিছু মনে করি নি। 

সে মুচকি হেসে আমার হাতে কফির কাপটা ধরিয়ে চলে যায়। আর আমি চুপচাপ উঠে চলে যাই রুমে। রুমে এসে দেখি বিছানা খালি। চারদিকে চোখ বুলিয়ে দেখলাম একবার। না কোথাও রোয়েন নেই। আমি বেড সাইড টেবিলে কফির কাপটা রেখে পিছনে ঘুরতেই দেখি ওয়াশরুম থেকে রোয়েন বের হচ্ছে। তাকে দেখেই আমি থম মেরে দাঁড়িয়ে যাই। সে আমাকে এইভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। একবার উপর থেকে নিচ পর্যন্ত আমায় দেখে নিয়ে মুখ ঘুরিয়ে টাওয়াল দিয়ে নিজের চুল মুচতে মুচতে আয়নার সামনে চলে যায়। আর আমি তার দিকে তাকিয়ে ভয়ানক এক বকা দিয়ে মনে মনে বলি, "ভাব দেখলে বাঁচি না। এমন ভাবে মুখ ঘুরালো যেন আমার দিকে তাকিয়ে মহা ভারত অশুদ্ধ হয়ে গিয়েছে। ব্যাটা খাটাশ একটা।"
কথাটা ভেবেই মুখ-চোখ কুঁচকে নিলাম। এই মানুষটাকে আমার বিন্দু মাত্র সহ্য হয় না। আমি।দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠি,

-- আন্টি আপনার জন্য কফি পাঠিয়েছে আর বলেছে নাস্তার জন্যও ডেকেছেন আপনাকে।

সে আয়নার মধ্য দিয়েই আমার দিকে একনজর তাকিয়ে আপন কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। বারান্দায় গিয়ে টাওয়ালটা মেলে দিয়ে সে রুমে ফেরত আসে। অতঃপর আমাকে ক্রস করে বেড সাইড টেবিলের উপর থেকে কফির কাপটা নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। তার এমন খাপছাড়া ভাব দেখে আমার মুখ রীতিমতো হা হয়ে যাওয়ার অতিক্রম। মনে মনে বিরক্তি প্রকাশ করে বিরবির করে আমি বলে উঠি,"স্বাদে কি খাটাশ বলি?আস্ত খাটাশ একটা।"
__________________

নাস্তার টেবিলে বসে আছি সকলে। টেবিলে আমি,রোয়েন, রেনু বেগম,তানিয়া বেগম, আমার শ্বশুর আর শ্বাশুড়ি বসে আছেন। বাকিরা নাকি ইতিমধ্যে খেয়ে উঠেছে। এখন বাকি আছে ছোটরা। তারা আপাতত পাশের ফ্ল্যাটটায় আছে৷ তাদের জন্য নাস্তা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। মানুষ বেশি হওয়ায় সকলের নাকি এই ফ্ল্যাটে জায়গায় হয়নি। পাশের ফ্ল্যাট খালি থাকায় রোয়েন নাকি বাড়ির মালিকের সাথে কথা বলে এক সপ্তাহের জন্য সেটা ভাড়া নিয়েছে। যাতে বাকি মেহমানরা সেখানে থাকতে পারে। 
আমি চুপচাপ খাবার খাচ্ছি। এমন সময় আমার শ্বশুর মানে তৌসিফ সাহেব বলে উঠেন,

-- মা তোমার এইখানে সমস্যা হচ্ছে না তো?

'মা' সম্মোধনটা শুনে আমি কিছুক্ষণের জন্য থমকে যাই। নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে রই তৌসিফ সাহেবের দিকে। অতঃপর ঠোঁটের কোনে স্মিত হাসি ঝুলিয়ে বলি,

-- জ্বী না আঙ্কেল। আমার এইখানে কোন সমস্যা হচ্ছে না। 

-- কোন সমস্যা হলে কিন্তু আমায় বা রোয়েনের মাকে বলবে। কিছু যদি দরকার হয় তাহলে তা বলতে লজ্জা পাবে না। 

আমি মাথা নিচু করে বলি,

-- জ্বী। 

কথাটা বলে আমি আড়চোখে রোয়েনের দিকে তাকাই। সে নিচের দিকে তাকিয়ে আপন মনে খেয়েই চলেছে। তার মধ্যে যেন কোন ভাবান্তর নেই। মনে মনে ভাবী, "রোবট নাকি? মানুষ এতক্ষণ কথা না বলে বাঁচে কেমনে ভাই?হাও?" কথাটা ভেবে আমি নিজেও খাওয়ায় মন দেই। হঠাৎ রোয়েন বলে উঠে,

-- মা আমার একটু কাজ আছে আমার বেরুতে হবে। 

আমার শ্বাশুড়ি সালমা বেগম ভ্রু কুটি কুঞ্চিত করে বলে,

-- আজকে আবার কিসের কাজ শুনি? তুই না এখন ছুটিতে আছিস?

রোয়েন ও ভ্রু কুটি কুঞ্চিত করে বলে,

-- ছুটিতে আছি বলে যে কাজ পড়তে পারে না? এইটা কোথায় লিখা আছে?

সালমা বেগম একরাশ বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে বলেন,

-- মানে তুই আজ বের হয়েই মানবি?

সে নিজের নাস্তা শেষ করে ভাবলেশহীন ভাবে বলে উঠে,

-- ইয়াহ!

কথাটা বলেই সে উঠে রুমে চলে যায়। আর আমি সেইদিকে তাকিয়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস নেই। ব্যাটা আসলেই ঘাড়ত্যাড়া। 

০৬!! 

খাটের এক কোনে তব্দা মেরে বসে আছি। শীতল চোখে সামনে তাকিয়ে আছি৷  আমাকে ঘিরে প্রায় আট-দশজন ছেলেমেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সকলের পরিচয় তারা রোয়েনের কাজিন। রাহি,কুহু,ইশান হচ্ছে একদম আন্ডা-বাচ্চা টাইপ। জেরিন,ফাহিম হচ্ছে কিশোর-কিশোরী। নিহান,রেশমি,রাত হচ্ছে আমার বয়সী বা আমার চেয়ে হয়তো একটু বড়। নুরি,শুভ,নীলা এরা হচ্ছে রোয়েনের বয়সী বা তার চেয়ে বড়। নুরি আর নীলা আপু দুইজন বিবাহিত আর সেই আন্ডা-বাচ্চাগুলো তাদের দুইজন এরই। বাচ্চারা রুমের এক কোনে বসে খেলছে আর বাদ-বাকি সকলেই মিলে আড্ডার আসর জমিয়ে দিয়েছে। সকলেই এই সেই প্রশ্ন করে চলেছে। আমার কি পছন্দ না পছন্দ? হ্যানত্যান! এত প্রশ্নের ভীড়ে মাথাটা একদম ধরে এসেছে। কিন্তু তাও নিজেকে সংযত করে বসে আছি। এইদিকে কথায় কথায় নুরি আপু বলে উঠে,।

-- বুঝলে সিয়াশা! তোমার ভাগ্যে এক রোবট জুটেছে।

আমি নুরি আপুর কথা শুনে কৌতহুল দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাই। পাশ থেকে শুভ ভাই বলে উঠে,

-- শুধু কি রোবট বইন? ওই তো রোবটের চেয়েও অধম। 

শুভ ভাইয়ার কথা শুনে বাকিরা হেসে উঠে। আমি এখনো গোলগাল চোখে তাদের দিকে তাকিয়ে আছি। আমার দৃষ্টির মর্ম বুঝতে পেরে নীলা আপু হাসি মুখে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,

-- কি কিছু বুঝো নি? 

আমি দুইপাশে মাথা দোলালাম। যার অর্থ আমি বুঝিনি। নুরি আপু বলে উঠে,

-- ভাই আমাদের সেই ইন্ট্রোভার্ট। বলতে গেলে হাই লেভেলের ইন্ট্রোভার্ট। এর মুখ দিয়ে কথা বের করানো আর পাহাড় খুঁড়ে ইঁদুর খুঁজে বের করা একই কথা। সবসময় নীরব আর একা থাকতে ভালোবাসে। বলতে গেলে একঘেয়ে টাইপ। 

নুরি আপুর কথার মাঝেই নীলা আপু বলে উঠে,

-- এইভাবে ভাই আমার ভালোর ভালো। শান্ত-শিষ্ট। কিন্তু একবার রেগে গেলে কেয়ামত আনতে দেরি নেই। কথায় আছে না, 'শান্ত-শিষ্ট মানুষদের কখনো রাগাতে নেই। নাহলে আজাব বয়ে যায়।' রোয়েনের বেলায়ও কথাটা শতভাগ সত্য। 

হঠাৎ নীলা আপুর কথার মাঝে শুভ ভাই ফোঁড়ন দিয়ে বলে,

-- আসল কথা বলস না কেন তোরা? নাহলে ভাবী বুঝবে কিভাবে রোয়েন আসলে কোন উচ্চতর জাতের প্রাণী। 

কথাটা বলে শুভ ভাইয়া আমার দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলেন,

-- তো শুনেন ভাবী। আপনার অতি প্রিয় বরের কান্ড। সে বিয়ের কোন অনুষ্ঠান এই করতে রাজি ছিল না। বিয়েতে নাকি সোরগোল বেশি হয়, গেদারিং বেশি হয় তাই সে চায় না কোন প্রকার অনুষ্ঠান হোক৷ তার কথা অনুযায়ী সে যাবে, কবুল বলবে আর বউ নিয়ে চলে আসবে। এর মধ্যে এত হৈ-হুল্লোড়ের কি আছে? কিন্তু মামা-মামী কি আর তা মানে? একমাত্র এর ছেলের বিয়েতে নাকি কোন প্রকার অনুষ্ঠান করবে না তা কি মানা যায়? অবশেষে মামা-মামীর অতি জোড়াজুড়িতে সে রাজি হয়। মানে মানুষ কোন লেভেলের রস-কসহীন হলে এমন কথা বলে বলুন তো ভাবী? 

শুভ ভাইয়ার কথা শেষ হতেই পাশ থেকে নীলা আপু বলে উঠে,

-- হলুদের দিন কি করলো মনে নেই? বড়দের হলুদ ছোঁয়ানোর পর যখন আমাদের পালা এলো তখন সে উঠে রুমে চলে আসলো। আর দরজাও খিল মেরে রাখলো৷ বেয়াদব একটা!

নুরি আপু হেসে বলে,

-- কারণ তোরা যে ওকে হলুদ আর রঙে ভূত বানানোর মাস্টার প্ল্যান করছিলি তা ও জেনে গিয়েছিল। তাই তো তোদের পালা আসতেই পালিয়েছে। 

কথাটা বলেই নুরি আপু হু হু করে হেসে উঠে। নীলা আপু ও শুভ ভাই মুখ ভোতা করে একেক অপরের দিকে তাকায়৷ হঠাৎ শুভ ভাই একটু গম্ভীর হয়ে বলার চেষ্টা করে,

-- এইখানে কে মীরজাফর গিরি করেছে তা বলে দে। তার গর্দান নিব আমি আজ। 

কথাটা শুনার সাথে সাথে জেরিন দাঁড়িয়ে গিয়ে বলে,

-- শুভ ভাই! মীরজাফরের দিন শেষ ঘষেটি বেগমের বাংলাদেশ।

কথা বলেই জেরি৷ দাঁত কেলিয়ে এক দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। তা দেখে শুভ চেঁচিয়ে বলে,

-- রোয়েন ভাইয়ের চামচি! আমাদের গোপন কথা পাচার করিস, সাহস তো কম না। আজ তোকে পেয়ে নেই খবর আছে। 

কথাটা বলতেই বলতে শুভ ভাই রুম থেকে বেরিয়ে যায় জেরিনের খোঁজে। আর তা দেখে বাকি সব হাসিটে গড়াগড়ি খায় এমন অবস্থা। আর এইদিকে আমি সবার কথা শুনে বিরবির করে বলে উঠি,

-- ব্যাটা দেখি আস্ত নিরামিষও।  

আমাকে বিরবির করতে দেখে নীলা আপু জিজ্ঞেস করে উঠে,

-- কিছু বললে?

আমি তার কথায় ভড়কে গিয়ে আমতা আমতা করে বলি,

-- না তো। 

আমার কথার প্রত্যুত্তরে নীলা আপু কিছু বলবে এর আগেই রুমে আমার শ্বাশুড়ি মানে সালমা বেগম এসে হাজির হোন। রুমের ভিতর ঢুকতে ঢুকতে তিনি সকলের উদ্দেশ্যে বলেন,

-- নতুন সদস্যকে পেয়ে বুঝি ছাড়তে ইচ্ছে করছে না? কিন্তু তাকেও তো একটু আরাম করতে দিতে হবে নাকি?

তার কথা শুনে নুরি আপু বলে উঠে,

-- কথার তালে ভুলে গিয়েছিলাম চাচী। এই নীলা চল। ভাবী এখন যাই তুমি রেস্ট নাও। পরে আবার আসব নে। 

আমি কিছু না বলে মিষ্টি এক হাসি হেসে মাথা দুলাই। নীলা আর নুরি আপু সবাইকে নিয়ে বেরিয়ে যায়। সকলে বেরিয়ে যেতেই সালমা বেগম আমার দিকে এগিয়ে আসে। আমার পাশে বসে বলে,

-- ঠিক আছো তো মা? তোমার কোন সমস্যা হচ্ছে না তো?

আমি মাথা নিচু করে বলি,

-- জ্বী না আন্টি৷ 

সে আমার হাত তার কোলে নিয়ে বলে,

-- আন্টি কি হ্যাঁ? মা বলে ডাকবা। সকালে ছাড় দিয়েছি বলে এখন দিব না কিন্তু। 

আমি মাথা নিচু রেখেই ইতস্তত সুরে বলি,

-- জ্বী আচ্ছা। 

সে আমার থুতনি ধরে মুখ উঁচু করে ধরে বলে,

-- আমাকে মা ডাকতে তোমার কোন সমস্যা আছে? 

আমি সাথে সাথে বলে উঠি,

-- না! না! তেমন কিছু না। 

-- তাহলে মা বলে ডাকো।

আমি নিভু নিভু স্বরে বলি,

-- মা!

সে স্মিত হেসে বলে,

-- পরিবেশ নতুন, খাপ খাওয়াতে সময় লাগবেই৷ জানি বিষয়টা এতটা সহজ নয়৷ নতুন এক পরিবারে এসে, তাদের আপন করে নেওয়া,খাপ খায়িয়ে নেওয়া। কিন্তু চেষ্টা তো করতে হবেই নাকি?

আমি হ্যাঁ সূচক মাথা দুলিয়ে বলি,

-- জ্বী। 

সে আমার থুতনি থেকে হাত সরিয়ে বলে,

-- আমার সাথে এতটা জড়তা নিয়ে কথা বলতে হবে না। স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলো। হয়তো তোমার আমাকে মনে নেই, কিন্তু আমার যে আছে। সেই ছোট থেকে চিনি তোমায়। 

আমি তার কথা শুনে মুখ চাই। কৌতহুল ভরা কন্ঠে জিজ্ঞেস করে উঠি,

-- আমাকে আপনি ছোট থেকে চিনেন?

-- হ্যাঁ চিনি। তোমার ৩ বছর হওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা তোমাদের পাশের ফ্ল্যাটটাই ছিলাম। সেখানে থাকাকালীন এই তোমার পরিবারের সাথে আমাদের খুব ভালো সম্বন্ধে গড়ে উঠে। এমনকি মাঝে মধ্যে তোমায় আমি নিজের হাতে খায়িয়েও দিয়েছি। 

-- আমার মনে নেই। 

কথাটা বলেই মাথা নিচু করে ফেললাম। সালমা বেগম হালকা হেসে বলে,

-- আরেহ বোকা! এতে মন খারাপ করার কি আছে? অতটুকু বয়সে এইসব মনে থাকার কথা নাকি? 

আমি কিছু না বলে চুপ করে রই। সে স্মিত হেসে বলে,

-- দেখো মা! আমার যাওয়ার পরে যেহেতু তোমায় এই সংসার দেখতে হবে সেহেতু কিছু বিষয় সম্পর্কে তোমার আগ থেকে জেনে রাখা ভালো। 

আমি তার কথা শুনে মুখ তুলে তাকিয়ে বলি,

-- আপনার যাওয়ার পরে মানে? 

-- আমি আর তোমার শ্বশুর তো এইখানে থাকি না। দেশের বাড়িতে থাকি। তোমার শ্বশুর সেখানেই একটা স্কুলের হেডমাস্টার। তো সেই সুবাদে তার সাথে আমাকেও তার সাথে দেশের বাড়িটাতেই থাকতে হয়। 

আমি তার দিকে গোলগাল চোখে তাকিয়ে বলি,

-- তার মানে আমাকে এইখানে একাই থাকতে হবে? 

সে হালকা হেসে বলে,

-- একা কোথায়? রোয়েন আছে না। তার উপর একটা কাজের লোক আছে যে তিনবেলার খাবার রেঁধে দিয়ে যাবে আর সেই সাথে সব কাজও করে দিয়ে যাবে৷ চিন্তা নেই, আমিও মাঝে মধ্যে এসে বেড়িয়ে যাব। 

আমি কিছু না বলে মাথা নুয়ে ফেলি৷ সে তা দেখে আবার বলতে শুরু করে,

-- আমার ছেলেটা জানো বড্ড চাপা স্বভাবের। বলতে পারো অন্তর্মুখী। বেশি মানুষ পছন্দ করে না। সহজে কারো সাথে মিশতে পারে না। নিজের মনের কথা কাউকে বলতে পারে না। একবারেই দরকার ছাড়া বেশি একটা কথাও বলে না। ওর মধ্যে ভাবান্তর জিনিসটা তেমন নেই। একটু কেমন যেনো ও। তাই ওকে ভুল বুঝো না তুমি। ছেলে আমার ছোট থেকেই মেধাবী। ছোট থেকেই পড়ালেখার প্রতি ওর যত আগ্রহ। আর এখন কাজ নিয়ে। কাজের উর্ধ্বে ওর জন্য কিছু নেই৷ কাজ একদিকে পুরো পৃথিবী একদিকে। বুঝতে পারছো আমি কি বলছি?

-- জ্বী পারছি।

সে আমার হাত আরেকটু চেপে ধরে বলে,

-- তোমার কাছে আমার একটাই অনুরোধ, আমি চাই তুমি আমার ছেলেটাকে দেখে রাখো। ওকে বুঝার চেষ্টা করো। ওর অর্ধাঙ্গিনী হয়ে সর্বদা ওর পাশে থাক। আগলে রাখো ওকে। বিপদে ওর পাশে দাঁড়াও। কি পারবে না? 

আমি মাথা নেড়ে বলি,

-- হ্যাঁ পারবো মা। 

সে হেসে বলে,

-- শাড়ি পড়ে থাকতে অস্বস্তি লাগছে না? যাও চেঞ্জ করে নাও। আর কাউরো কোন কথা কানে নিবে না। মানুষের কাজই হলো বলা। এক কান দিয়ে শুনবে আরেক কান দিয়ে বের করবে। কেমন?

আমি পূর্ণ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে সৌজন্য মূলক হাসি দেই৷ এই হাসির মধ্যে নেই কোন কৃত্রিমতা৷ আছে শুধু এক রাশ ভালবাসা আর শ্রদ্ধা।
___________________

রাতে খাবারের পর্ব চুকিয়ে রুমের ভিতরে আসতেই দেখি রোয়েন খাটের উপর বসে ল্যাপটপ চালাচ্ছে। আমি তার দিকে কিছুক্ষণ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে ডেসিং টেবিলের দিকে চলে যাই। চুলে বিনুনি করতে করত আজকের কথা ভাবতে থাকি। 

আজ আমার আর রোয়েনের বৌ-ভাতের অনুষ্ঠান ছিল। অনুষ্ঠানে রোয়েনের পক্ষ থেকে সকলে উপস্থিত থাকলেও আমার পক্ষ থেকে শুধু ছিল মা,চাচা-চাচী,হৃদিপু আর কিছু কাজিনস। বাকি আর কেউ আসে নি। হয়তো আসার দরকার মনে করে নি। অবশ্য আমি নিজেও আশা রাখি নি যে এদের বাদে আর কেউ আসবে। আমার আপন বলতে হৃদিপু আর মায়েই। তো তারা যেহেতু এসেছে আমার কি আর কারোর দরকার আছে?
 হৃদিপু এসেই আমায় জড়িয়ে ধরে। আবেগে প্রায় কেঁদে দেয় দেয় অবস্থা। মেয়েটা আমায় এত ভালবাসে যে বলার মত না। এইদিকে মা তো প্রায় কেঁদেই দিয়েছিল। কত কষ্টে যে থামিয়েছিলাম। পুরো অনুষ্ঠানেই মা ও হৃদিপু আমার আশেপাশেই থেকেছে। ভালোয় ভালোয় অনুষ্ঠান শেষ হতেই যখন চাচা আমায় আর রোয়েনকে যাওয়ার কথা বললো তখন আমার শ্বশুর বাবা কালকের কথা বললেন। আজ নাকি তাদের সকল আত্মীয় চলে যাবে তাই তাদের বিদায়ের সময় আমাদের থাকা প্রয়োজন। চাচাও এক কথায় মেনে গেলেন। সবাইকে নিয়ে চলে গেলেন। আর এইদিকে শুধু উপহাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। ঠোঁটের কোনে ঝুলিয়ে নিলাম তাচ্ছিল্যের হাসি। হাসির আড়ালেই লুকিয়ে নিলাম নিজের কষ্ট গুলো। এই কষ্টগুলো যে দেখার কেউ নেই। 

 হঠাৎ রোনের কন্ঠ কানে আসতেই আমি নড়েচড়ে উঠিম আয়নার মধ্যে দিয়েই আড়চোখে রোয়েনের দিকে তাকাই। রোয়েন গম্ভীর গলায় বলে উঠে,

--  কালকে সকাল ১০ টার মধ্যে রেডি থাকবে। ১০ টায় আমরা রওনা দিব।

কথাটা শুনে আমি ঘুরে দাঁড়াই। ছোট ছোট চোখ করে বলি,

-- না গেলেও চলবে।

রোয়েন নিজের ভ্রু কুটি কুঞ্চিত করে বলে,

-- তুমি থাকতে চাইলে থেক যেও। আই হ্যাভ নো প্রবলেম।

আমি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলি,

-- তা আপনার প্রবলেমটা আসলে কোথায় শুনি?

সে ভ্রু কুটি আরও কুঞ্চিত করে বলে,

-- আমার প্রবলেম জেনে তোমার লাভ কি? সালুয়েশন বুক নাকি তুমি?

তার কথায় আমি ফোঁস করে বলে উঠি,

-- আমি সালুয়েশন বুক কি না জানি না বাট আপনি একটা অসহ্য। 

সে ল্যাপটপ বন্ধ করতে করতে বলে,

-- আর তুমি একটা বুঁচি। 

আমি ফোঁসফোঁস করতে করতে বলি,

-- এই কি বললেন আপনি আমায়?

সে ল্যাপটপ সাইড টেবিলের উপর রেখে শুতে শুতে বলে,

-- মিস বুঁচি! লাইট অফ করে দিও তো। ঘুমাবো আমি এখন। 

বলে পাশ ফিরে শুয়ে পড়লেন। আর আমি রাগে ফোঁসফোঁস করতে থাকলাম। বিরবির করে বলে উঠলাম,

-- ব্যাটা খাটাশ! এর শোধ যদি আমি না নিয়েছি তাহলে আমার নামও সিয়াশা না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন