অচেনা অতিথি - পর্ব ০২ - নাফিসা মুনতাহা পরী - ধারাবাহিক গল্প


- দু'চোখ দিয়ে লেবুর রসের মত টপটপ করে জল পড়েই যাচ্ছে তিতিরের। চুপ করে ফ্লোরেই বসে পড়ল তিতির।

|

- ঝগড়া লাগিয়ে দিয়ে এখানে এসে মজা নিচ্ছিস বলেই আদরী তেড়ে এসে তিতিরে চুল ধরেই বাঁশের ছিপনি দিয়ে মারতে শুরু করল।

|

- এদিকে প্রতিটা ছিপনির বাড়ি তিতিরের শরীরে একের পর এক দাগ একেঁ দেয় আর তিতির কাটা মুরগির মত ছটপটিয়ে কাঁদতে থাকে। আম্মু আমায় আর মের না। আমি কোনদিনও আর কারো কাছে গিয়ে দাড়াবোনা। আমায় ছেড়ে দাও আম্মু।

আদরীর রাগ তখন চরম পর্যায়ে।

|

- আগে হুস ছিলনা! কতবার করে নিষেধ করছি কারো জিনিস নিবি না। কেন নিতে গেলি বলেই রাগের চোটে গায়ের শক্তি দিয়ে সট্ করে একটা বাড়ি দেয় তিতিরকে। তিতির আর সহ্য না করতে পেরে মা বলে একটা চিৎকার দিয়ে ঠাস করে ফ্লোরে পড়ে গঙ্গাতে লাগল। মাহ্... মাহ্.. মাহ্ বলে ফ্লোরেই গড়াতে লাগল যা দেখে আদরীই ভয় পেয়ে গেল।

আদরী ছিপনিটা ফেলে দিয়ে তিতিরকে এক হাতে তুলে বলল আর একটা শব্দ যদি করিস তাহলে কিন্তু তোকে পুড়েই মেরে ফেলব আজ। হা মুজা বলছি বলেই আদরী জোড়ে ধমক দিল।

|

- তিতির আজ আর ওর কান্না থামাতেই পারছেনা। একবার থামানোর চেষ্টা করতেই দম আটকে গেল। তিতিরের সব আওয়াজ যেন বন্ধ হয়ে গেল। চুপসে গেল এক নিমিষেই।

|

- আদরী কিছু হুস না পেয়ে ওর বাবার বাসায় ফোন দিয়ে ওর ছোট ভাইকে আসতে বলে। তিতিরকে টেনে তুলে ওয়াস রুমে নিয়ে গিয়ে মাথায় পানি দিতে লাগল। তিতির এই তিতির ওঠ বলছি। না উঠলে কিন্তু তোকে আবার মারবো বলে আদরী তিতিরকে ঝাকাতে লাগল। এদিকে আদরীর ছোট ছেলেটা গলা ফাঁটিয়ে কান্না করতে লাগল সেদিকে আর আদরীর খেয়াল নেই। তিতির কে নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে গেল।

|

- ১৫ মিনিট পর আদরীর ছোট ভাই বুলবুল বাইক নিয়ে আদরীর কাছে চলে আসল।

তখন মাগরিবের আযান পার হয়ে গেছে। বুলবুল তিতিরের এই অবস্থা দেখে বলল আপা তুই আবার মেয়েটাকে মারছিস? তোর মনে দয়ামায়া বলে কিছু নাই! কেমন করে পারলি ওকে মারতে বলেই তিতিরকে কোলে নিয়ে বলল এখুনি বাসা থেকে চল। এবার আদরী আরও ভয় পেয়ে গেল।

|

- আদরী কোন মতে দড়জা-জানালা দিতেই আরও একটা বাইক এসে দাড়াল তিতিরদের বাসায়। বুলবুল ওর দুই ফ্রেন্ডকে ফোন দিয়ে ডেকে আনছে। একজনকে বলল দোস্ত গাড়িটা চালিয়ে হাসপাতালে নিয়ে চল। অন্যজনকে বলল আপারে আমাদের বাসায় দিয়ে আয় বাঁকিটা আমি সামলে নিব।

|

- আদরী ওর ছেলেকে নিয়ে বাবার বাসায় চলে গেল আর বুলবুল ছোট্ট তিতিরকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে ওর ফ্রেন্ডের বাইকের পিছনে বসেই বলল দে টান। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যা।

♦♦♦♦♦♦♦♦♦

- কুড়ি মিনিটের মধ্য হাসপাতালে পৌছেই তিতিরকে ডাক্তার দেখাল।

ডাক্তার তিতির কে দেখেই শিউরে উঠল। এই মেয়েটা আপনার কে হয় বলে বুলবুলের দিকে কঠোর ভাবে তাকালো ডাক্তার।

|

- স্যার আমার মেয়ে হয়। রাগের চোটে হুস হারিয়ে ওকে এভাবে মারছি। প্লিজ কিছু করেন। বুলবুলের চোখ দিয়ে কয়েক ফোটা পানি পড়ে গেল।

|

- ডাক্তার সব কিছু শুনে দ্রুত চিকিৎসা দিতে শুরু করল। এদিকে বুলবুল এরশাদকে ফোন দিয়ে বলল দুলাভাই আপা আমাদের বাড়ি গেছে। আপনি বাসায় না গিয়ে আমাদের বাসায় যান। তিতিরকে আমার সাথে নিয়ে আসছি। আমার বউটা তিতিরকে একটু দেখতে চাইছে তাই নিয়ে আসছি। আপনি কি শাপলার সাথে কথা বলবেন! দিব ফোন?

|

- না দরকার নাই। আমি একটু বাহিরে আছি। একটা কাজে একটু শহরে আসছি। বাসায় গিয়ে কথা হবে বলে এরশাদ কেটে দিল কল।

|

- বুলবুল যেন হাফ ছেড়ে বাঁচল। ভ্যাগ্গিস দুলাভাই তিতিরকে চায়নি। বুলবুল তিতিরের কাছে এসে দেখল তিতিরের সেন্স ফিরছে। সবাইকে দেখে তিতির কিছুটা ভয় পেয়ে চুপ করে আছে। বুলবুলকে দেখে ওর যেন প্রান ফিরে এল । বুলবুলের দিকে অপলক ভাবে তাকিয়ে রইল তিতির। এই মামা যে তার বড্ড চেনা।

|

- স্যার আমার মেয়েটারে কি নিয়ে যেতে পারবো! রাত হয়ে গেছে তো!

|

- ওকে নিয়ে যান। এতটা হৃদয় হীন হয়েন না। শেষে না জানি নিজের হাতে মেয়েকে না মেরে ফেলেন বলে কিছুটা বকাবকি করল বুলবুলকে। বুলবুলের সেদিকে খেয়াল নেই ও তিতিরের দিকে হাত বাড়াতেই তিতির চুপ করে ওর মামার কোলে গেল। তিতির এই মামা টাকে খুব ভালবাসে ।

♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦

- আদরী বাসায় এসে বুলবুলকে একের পর এক কল দিয়েই চলছে। ইচ্ছা করে বুলবুল আর কল রিসিভ করলনা যাতে আদরীর দুঃশ্চিন্তা যেন আরও বেড়েই যায়। অনেক অত্যাচার করে তিতিরের উপর তাই ও একটু মজা বুঝুক।

|

- আদরীর মা বার বার জিঙ্গাসা করছে কি হয়েছে কিন্তু আদরী কোন জবাব দেয়না। শেষে মায়ের উপর তেড়ে উঠল। এত চেঁচাও কেন? বলছি তো কিছু হয়নি।

|

- রাত ৯ টার দিকে এরশাদ বাসায় না গিয়ে শশুর বাসায় চলে গেল। এরশাদরে দেখে আদরী ভয় পেয়ে গেল ভিষন। ও এখানে কেন! এখন কি বলবে এরশাদকে?

তিতির তো ওর কাছে নাই। বুলবুলকে কতবার ফোন দিচ্ছি কিন্তু ও ধরছেই না। হারামি বোঝেই না আমি কত টেনশনে আছি। এখন কি করি!

|

- আদরীর মা এসে এরশাদ কে বলল তিতির ভাল আছে! ও কোথায় এলোনা যে!

|

- আদরী এবার প্রচন্ড রেগে গেল ওর মায়ের উপর। চোখ কটমট করে মায়ের দিকে তাকাতেই ওর মা চলে গেল।

|

- তিতির তো বুলবুলের কাছে আছে আদরী বলেনি আপনাকে! আজ ওরা আসবেনা বলে বুলবুল আমাকে এখানে পাঠিয়ে দিল।

|

- আদরীর দেহে যেন প্রান ফিরে এল। আসলে মাকে বলা হয়নি কথাটা। আদরী এবার নিশ্চিন্তে এরশাদের আপ্যায়নে ব্যাস্ত হয়ে পড়ল আর এরশাদ ওর ছেলেকে নিয়ে আদর করতে লাগল।

♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦

- বুলবুল ওর ফ্রেন্ডকে বাসায় পাঠিয়ে দিয়ে তিতিরকে নিয়ে খাবার দোকানে গেল। তিতির মা কি খাবা বল। আজ যা যা বলবা সেটাই কিনে দিব।

|

- তিতিরের ভয় এখনো কাটেনি ও বুলবুল কে জড়িয়ে ধরেই ওর কোলে আছে।

অনেক্ষন পর হাত দিয়ে কয়েকটা চিপস দেখিয়ে দিল শুধু কিন্তু মুখে কিছু বলল না।

|

- বুলবুল চিপস্ সহ আরও কিছু জিনিসপত্র কিনে তিতিরকে নিয়ে ওর শশুর বাসায় গেল। শাপলা তো তিতিরকে দেখে বেশ অবাক হল। নিশ্চয় বাসায় কিছু হয়েছে। বোনের দোষ ঢাকার জন্য তিতিরকে এখানে এনেছে সেটা বেশ ভালভাবেই বুঝতে পারে শাপল।

|

- শাপলা একটু পানি গরম করে দাও তো। ওকে একটু গোসল করে দিব। তিতিরকে বুলবুলের শশুড় বাসায় নিয়ে আসাটা সবার চোখে ভালই সন্দেহের ছিটাফোঁটা দেখা দিল। তিতির বুলবুলের গলা জড়িয়েই ওভাবে আছে।

♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦

- বুলবুল একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। ঢাকাতে জব করে। কিছুদিনের জন্য গ্রামের বাসায় আসছে। ওয়াসরুমে নিয়ে গিয়ে তিতিরের জামা খুলতেই যা দেখলো এতে বুলবুলের চোখ কপালে উঠে গেল। শরীরে এলোপাথারি শুধু মোটা বেতের আঘাতের চিহ্ন । রক্তগুলো মরে গেছে। অজান্তে বুলবুলের চোখে জল চলে আসল।

মা কি তোকে খুব মেরেছে তিতির!

|

- তিতির মাথা নিচু করে শুধু মাথা নাড়াল। তারপর নিজেই মগে পানি তুলে গোসল দিতে লাগল।

অতিরিক্ত শাসনের ভিতর থেকে থেকে নিজের সব কাজ নিজেই করতে শিখে গেছে তিতিরটা।

|

- বেশি পানি দিয়ে গোসল করোনা মা বলেই ওয়াসরুম থেকে চলে গেল বুলবুল। এর মধ্য তিতির সব কাজ কমপ্লিট করে বের হল।

রাতে নিজ হাতে খাওয়ায় দিল তারপর তিতির কে নিয়ে সুয়ে পড়ল বুলবুল।

তিতিরটা ওর মামার বুকে ঘুমিয়ে পড়েছে। যে ভালবাসা বাবার কাছে পাওয়ার দরকার সেটা বহু দিন পর পেয়ে নিশ্চিন্তে পাখির ছানার মত বুলবুলের বুকে মুখ গুজিয়ে ঘুমাচ্ছে।

|

- এই তোমার বোন কি কোন দিনও মানুষ হবে না! এতটুকু বাচ্চাকে কেউ এভাবে নির্যাতন করে। মানুষ করতে পারবেনা সেটা মুখে বললেই পারতো! তাই বলে এভাবে কাউকে নির্যাতন করবে? অমানুষ মহিলা কোথাকার।

|

- এই চুপ করবি না বাসা থেকে এখুনি বের হয়ে যাবো। মানুষ করতে না পারলে কি তুই একে মানুষ করতি? একে একেবারে নিতে পারবি?

|

- এবার শাপলা চুপ করে গেল। কোন কথা মুখ দিয়ে আর বের হলনা।

|

- নিজে যদি নিঃসন্তান হতে তখন হয়ত তিতিরকে নিতে কিন্তু এখন তো আর নিবানা। সবাইকে চেনা যায় তার কর্মে। আর একটা কথাও বলবিনা ঘুমাতে দে বলে তিতিরকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়ল বুলবুল।

♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦

- পরদিন বিকেল বেলায় বুলবুল শাপলা আর তিতিরকে নিয়ে বাসায় চলে যায়। বুলবুল ভাল করেই জানে এরশাদ ওর বাসায় চলে গেছে তাই এই সময় নিয়ে গেল।

|

- আদরী তিতিরকে দেখে আর কিছু বলল না। সবাই মিলে আদরীকে অনেক বুঝাল। আদরী বুঝল কি বুঝলনা সেটা কিছুই বোঁঝা গেল না। ডিসিশন নেওয়া হল তিতিরকে আরও কিছুদিন এই বাসায় রাখা হবে। কারন তিতিরের শরীরে অনেকগুলো দাগ। ওখানকার কেউ যদি একটুও বুঝতে পারে তাহলে আদরীর খবর আছে।

আদরী তার পরের দিন তিতিরকে রেখে নিজের বাসায় চলে গেল।

|

- বলেনা অভাগা যেদিকে যায় সেখানেই সাগর সুখাই। স্বামী বিদেশ থাকার কারনে আদরীর ছোট বোন সহ ওর দুটা বাচ্চা বাবার বাসায় থাকে। সব সময় তিতিরের সাথে তাদের ঝগড়া ঝাটি লেগেই থাকে। বুলবুলও এদিকে ঢাকায় চলে যায়।

একদিন রাবেয়ার দু বাচ্চার সাথে তিতিরের বেশ মারামারি হয়। তিতির মার খেয়ে বসে কাঁদতে লাগে। এটা দেখে শাপলার আর সহ্য হয়না। সোজা গিয়ে শাশুড়ির সাথে ঝগড়া লেগে যায়।

আম্মা এই মেয়েটা কয় দিনের জন্য এখানে আসছে যে তার জন্য আপনার ছোট মেয়ের সহ্য হয়না! বাসায় খাবার জিনিস আনলে আগের ওর বাচ্চা ইচ্ছা মত খাবে তারপর তিতির পাইলে পাবে না পাইলে না পাবে। এগুলো কেন করে! আর আজ কিভাবে ওকে মারছে সেটা কি আপনি একবারও দেখেননি? না আপনি দেখেও না দেখার ভান করছেন!

নিজের বাবার বাড়িতে তো শান্তি পায়না এখানে এসে আরও শান্তি নষ্ট হয়ে গেছে দেখছি। আপনাদের জাতই খারাপ না হলে দুটা মেয়েরই একই ব্যবহার হবে!

|

- শাপলার কথা সুনে রাবেয়া এসে তুমুল ঝগড়া লেগে গেল। আমার বাচ্চাদের খাবার খোঁটা দেওয়া হয় বলে সবাইকে শুনিয়ে চিৎকার দিয়ে দিয়ে কথা গুলো বলতে লাগল যাতে সবাই শোনে শাপলার ব্যবহার কেমন।

শাপলা আর রাবেয়ার মধ্য প্রচুর কথা কাটাকাটি হয়। শেষে বুলবুলকে কল দিয়ে আদরীর মা সব বলল কিন্তু বুলবুল খুব একটা রেসপন্স দিলনা তাই বাধ্য হয়ে আদরীর কাছে কল দিয়ে বলল তিতিরকে নিয়ে যা। ওর জন্য আমার বাসার পরিবেশ নষ্ট হতে চলেছে। আমি চাইনা আমার সংসার নষ্ট হয়ে যাক।

|

- আমি বলেছিলাম না মা ঔ শয়তান মেয়েটা কতটা খারাপ। খুব তো সেদিন আমাকে শাসন করেছিলে আজ দেখ তার ফলাফল। কালই আমি যাচ্ছি। চুলের মুঠি ধরে হির হির করে টেনে আনবো। যেখানে যাবে সেখানেই অশান্তি তৈরি করবে।

|

- পরের দিন আদরী এসে তিতিরকে নিয়ে গেল। শাপলাকেও অনেক কথা শুনিয়ে গেল আদরী।

♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦

- তিতিরকে ওর নিজের নানুর বাসায় যেতে দেওয়া হয়না। কথায় কথায় মার। উঠতে বসতে খোঁটা দেওয়া এ যেন নিত্য দিনের কাজ হয়ে উঠল আদরীর। এখন এরশাদের সামনেও ধমক দেয় আদরী কিন্তু কিছু বলে না এরশাদ।

এভাবে আস্তে আস্তে নির্যাতন সহ্য করেই তিতিরটা বড় হয়। কিছু দিন আগে তিতিরের এসএস সির রেজাল্ট দিছে। রেজাল্ট অত্যন্ত ভাল। এত কষ্টের মাঝেও লেখাপড়া চালিয়ে গেছে। আল্লাহ্ মেধাও দিয়েছে। খুব বেশি পড়তে হয়না তাকে। ছোট ১০ বছরের ভাই "ইভান" আর ৩ বছরের বোন "ইভা" কে নিয়ে দিনগুলো যাচ্ছে।

|

- পরীক্ষার রেজাল্টের পর আদরী খুব চাপাচাপি করে তিতিরের বিয়ে দেওয়ার জন্য কিন্তু তিতির সেদিন সাহস করে ওর বড় আব্বু আর দাদীকে ডেকে নিয়ে আসে বাবার কাছে।

হাবিব আর মনুজান এরশাদকে অনেক ভাবে বোঝায়। দেখ এমনি মেয়েটা মা মরা তার উপর যদি বিয়ে দেস তাতে অনেক টাকা খরচ হবে। সেই টাকা দিয়েই না হয় মেয়েটাকে পড়া। আর তোর বউ তোরে এত কিছু দিতেও দিবেনা। মেয়েটার একটু ভবিষ্যৎ দেখ।

|

- আমাদের মেয়েকে আমরা বিয়ে দেই আর না দেই তাতে আপনাদের কি বলে আদরী এসে ঝগড়া লেগে গেল। ঘরে এখনো একটা মেয়ে আছে। ওর জন্যও তো কিছু ভাবতে হবে। অনেক পড়াশুনা হইছে এখন আর না। এরশাদও আদরীর কথায় সায় দিয়ে বলল মা ওর আর পড়ার দরকার নাই। মেয়ে বড় হয়ে গেছে রাস্তা ঘাটে অনেকে অনেক কথা বলে তাই বিয়ে দেওয়ায় ভাল।

|

- হাবিব ফিরে গেল। মনুজান তিতিরের দিকে তাকিয়ে দেখল তিতিরের চোখ ছলছল করছে। মনুজান বলল ওর যা খরচ সব আমিই না হয় দিব তাও মাইডারে পড়া বাপ।

|

- আদরী খেঁকিয়ে উঠল। এরশাদ চলে গেল সেখান থেকে। মনুজান ও খেপে গিয়ে বলল তোরও তো নিজের মাইয়া আছে সে এই জায়গায় থাকলে তুই ওর পড়া বাদ দিতি! আল্লাহ্ কে ভয় কর বলে মনুজান তিতিরকে টেনে নিয়ে গেল ওর সাথে। মনুজান ভাল করেই জানে ওকে এখানে রেখে গেলে ওর মা ওকে আস্ত আর রাখবেনা।

নিজে যা কর্ম করবি সেটার ফল তোরর উপরই এসে পড়বে। সেদিন শুধু কাঁদবি কিন্তু মাফ চাওয়ার জন্য মানুষ খুজে পাবিনা।

♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦

- হাবিবের ছেলে রবিন আর তিতির একসাথেই পড়ে। ও তিতিরকে এসে বলল ভর্তির ডেট তো শেষ দু'দিন পর। ভর্তি হবিনা তিতির?

|

- মনুজান বলল হারে তিতির তোর বুলবুল মামারে একটু কল দিয়ে দেখতো। ও কিছু করতে পারে। ওমন ভাইয়ের এমন একটা কাল নাগীন বোন কি করে হল হেইডা আল্লাহই ভাল জানে।

|

- মামার যে নাম্বার আমার কাছে নাই দাদী। মামার সাথে কথা বলতে দেয়না মা।

|

- তুই চিন্তা করিস না আমি জোগাড় করে দিব তিতির! তুই বাসায় যা বলে রবিন চলে গেল।

তিতির কেবল বাসায় গেছে আর আদরী এসেই বাপের সামনে মেয়েকে গালে চড় বসিয়ে দিল। খুব বেড়ে গেছিস তাইনা? পড়াশুনা বন্ধ করার কথা শুনে ওদের ডেকে আনছিস! ভাত গিলবি এ বাসায় আর ওদের কাছে আমাদের গায়েন্দাগিরী করবি? এসব নিয়ে যদি আর একটাও কথা শুনছি তাহলে মাটিতে পুঁতে ফেলব।

|

- তিতির মাথা নিচু করে ওর রুমে গেল। মা ইদানিং বাবার সামনেও আমাকে মারে বলে ফিকরে কেঁদে উঠল। এই মার জন্য স্কুলের কারো কারো সাথে মেলামেশা করেনা পর্যন্ত। চাচাতো ভাই রবিন ছাড়া কেউ তার বন্ধু নয়। না মেশার জন্য অনেকের কাছ থেকে কম তিরষ্কার শুনতে হয়নি তিতিরের।

|

- আজ ভর্তির লাষ্ট ডেট। রবিন ভর্তি হয়ে গেছে কিন্তু তিতিরের কোন ব্যবস্থা এখনও হয়নি। সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে গেল তবুও কোন ব্যবস্থা হলনা। সকাল থেকে দুপুর হয়ে গেল না খেয়েই আছে তিতির। চুপচাপ বাসার সব কাজ করছে। তিতির খেল কি খেলনা এতে আদরীর মাথা ব্যাথা নাই। সব রেডী করে ইভাকে কোলে নিয়ে ডাইনিং রুমে হাটছে আর ছোট বোনটাকে খাওয়াচ্ছে। তারপর ঘুম পারিয়ে দিয়ে নিজের রুমে এসে চুপটি করে সুয়ে পড়ল।

|

- বাবার ডাকে তিতিরের ঘুম ভেঙ্গে যায়। তিতির ধরপর করে উঠে বসে। আব্বু তুমি?

|

- চল রেডী হয়ে নে। তোকে নিয়ে কলেজে যাব। সব কাগজ পত্র নিয়ে বের হ। মা যেন না জানতে পারে বলে এরশাদ চলে গেল।

|

- তিতির অবাক হলনা। এটা নিশ্চয় বুলবুল মামার কাজ। এই মামাটার জন্য আম্মুর উপর একটুও রাগ হয়না। তিতির জলদি রেডী হয়ে বাবার কাছে আসতেই আদরী কপাল জড়িয়ে তুলে বলল কই যাস!

|

- তিতির সময় নাই জলদি চল। এসে অনেক সময় পাবি মাকে বলার জন্য তাই চল বলে এরশাদ তিতিরকে নিয়ে আদরীর সামনে দিয়ে বের হয়ে গেল। বাহিরে রবিন দাড়ানোই ছিল। ৩ জনে সোজা কলেজে চলে গেল।

কলেজের সব কাজ কমপ্লিট করে ৩ জনে অটোতে চড়ে বাজারে এল। তখন বিকেল গড়িয়ে গেছে। এরশাদ তিতিরকে একটা রিক্সাই তুলে দিয়ে বলল খুঁশি হইছিস মা?

|

- তিতির আর কথা বলতে পারল না। চোখের পানি টলমল করছে। এরশাদ বুঝতে পেরে রিক্সা ওয়ালাকে বলল একদম বাড়ীর গেটে নামিয়ে দিবি। বাড়ির ভিতর ঢুকলে তারপর চলে যাবি বলে রিক্সার ভাড়া দিয়ে দিল।

রবিন আর এরশাদ দাড়িয়েই রইল তিতির চোখের আড়াল না হওয়া পর্যন্ত।

|

- এবার তিতির আর নিজেকে আটকে ধরতে পারলনা। ততক্ষনে মাগরিবের আযান দিয়ে দিছে। ফিকরে ফিকরে কাঁদছে আর চোখের পানি মুছছে।

|

- এ বাবা কান্দিচ্চিন ক্যান! কি হইছে ভাবী কি আবার গালি দিচে নাকি? তোমার তো কাহিনী সগ্গলে জানি হামরা। আল্লাহ্ চাইলে তুমি একদিন খুব সুখী হবিন বাবা। এই ভর সন্দায় কান্দনা বাবা।

|

- তিতির এবার চুপ করে গেল। রিক্সাওয়ালা চাচার কথা শুনে বেশ লজ্জায় পড়ে গেল। ও চায়না সবার সামনে মাকে ছোট করতে। এই মায়ের জন্যই অত ভালো একটা মামা পেয়েছে সে।

♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦

- রাত ৯ টার দিকে কিছু জিনিসপত্র নিয়ে এরশাদ বাসায় এসেই তিতিরের নাম ধরে ডাকল। তিতির......!

|

- তিতির কে ডাকছো কেন! তিতির তো তোমার সাথে গেছে। মাথা কি পাগল হয়ে গেছে তোমার বলে আদরী চেঁচিয়ে উঠল।

|

- তিতির বাসায় আসেনি?

|

- না তো! তোমার সাথেই তো গেল। তিতির কই? সেই গেছ তো গেছ। ইভারে নিয়ে কিভাবে এতগুলো কাজ সামলাই? তুমি মানুষ হলে আমার কষ্ট ঠিকি বুঝতা।

|

- এবার এরশাদের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। ওর তো অনেক আগে আসার কথা বলেই হন্তদন্ত হয়ে বড় লাইটটা নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেল।

যে মেয়ে শুধু স্কুল আর বাসা ছাড়া কোথাও যায়না। যে কিনা বাইরের জগৎ ই ঠিক মত দেখে নাই সে কই যাবে। তিতির কৈ গেল?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন