বাচ্চাটির অস্পষ্ট কথায় মাহাদ চিয়ার থেকে উঠে হাটু গেড়ে বসে কাঁপা কণ্ঠে বলল," বাবা তোমার নাম কি?"
বাচ্চাটি কোন কথা না বলে মাহাদের কাছে গিয়ে দু'হাতে ওর গলা জড়িয়ে ধরে রইল। বাচ্চাটির বুকের ভিতরের স্পন্ধনের শব্দ মাহাদ স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে। মাহাদ বাচ্চাটিকে আরও কয়েকবার জিঙ্গাসা করলো, বাবা তোমার নাম কি। কিন্তু বাচ্চাটি মাহাদের কাধে মাথা রেখে ওকে জড়িয়ে ধরে চুপ করেই রইল। মনে হচ্ছে বাচ্চাটি ওর হাজার বছর আগে হারিয়ে যাওয়া অমূল্য রত্ন খুঁজে পেয়েছে।
মাহাদ শেষে ওকে বুকে নিয়েই উঠে দাড়ালো। ভারী মুশকিলে পড়ল মাহাদ, বাচ্চাটাকে নিয়ে। কে এর বাবা-মা। কেন এই ভিড়ের মধ্য ওকে একা ছেড়ে দিয়েছে।
লাবীবা ফোনে কথা শেষ করে পিছন ফিরে দেখলো, মাহাদ একটা বাচ্চাকে কোলে নিয়ে দাড়িয়ে আছে। মাহাদ, বলে লাবীবা ওর কাছে গিয়ে বলল," মাহাদ কেমন আছিস বাবা? আমাদের কথা কি একবারও তোর মনে হয়না?"
মাহাদ ওর মাকে সালাম দিয়ে শুধু বলল," আলহামদুলিল্লাহ্ অনেক ভালো আছি।"
লাবীবা মাহাদের হাত ধরে বলল," মাহাদ আমার সাথে বাসায় চল বাবা। তোকে ছাড়া আমার থাকতে খুব কষ্ট হয়। এই বয়সে আমাকে আর কষ্ট দেসনা। আমি তোর কাছে আর কতবার ক্ষমা চাইবো বল!"
মা প্লিজ পুরনো কথা বলোনা। আমার ভালো লাগেনা। আমার সময় নেই। আমার এখুনি যেতে হবে।
"বাচ্চাটা কে মাহাদ? তুই কি আবার বিয়ে করেছিস? কারন তিতিরতো নেই তাহলে অন্য কেউ......?"
লাবীবার এমন কথায় মাহাদ ক্ষেপে গেল। মাহাদের চোখের ভাষা কারো বুঝতে বাঁকি রইল না। শেষে রজনী এসে বলল," তোর মাকে ভুল বুঝিসনা। বাচ্চাটা দেখতে অবিকল তোর মত। ছোট বেলায় তুইও অনেকটা দেখতে এমন ছিলি।"
"বাচ্চাটা আমার হলে আমি খুঁশি হতাম। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমার, কারন বাচ্চাটি আমার না।"
রূপসা এসে মাহাদের সামনে দাড়িয়ে বলল," কেমন আছিস?"
মৃত মানুষ যেমন থাকে তেমন আছি। বিয়ে করেছিস, বাচ্চা আছে তাই সংসার কর মনযোগ দিয়ে। অন্য দিকে আর নোংরা মনমানুষিকতা নিয়ে তাকাস না বলে মাহাদ রুম থেকে বের হয়ে এলো। মাহাদের পিছন পিছন লাবীবাও চলে আসলো।
কিন্তু পিছন থেকে বাতাসি কয়েক বার মাহাদকে চিল্লায় চিল্লায় ডেকে বলল," মাহাদ যাসনা ভাই। তোরে ছাড়া অ্যার ভাল লাগেনা। অ্যার একখান কতা শুনে যা ভাই। আর কতবার তোর কাছে ক্ষমা চামু ক!"
রজনী কান্না করতে করতে বলল," আম্মাজান আপনি হাজার বার ডাকলেও সে আসবেনা। আপনি যে কষ্ট ওরে দিছেন তা ও কোনদিনও ভুলতে পারবেনা। মাহাদ কষ্ট পুষতে পুষতে পাথর হয়ে গেছে। তাই ওর মন আর গলবেনা।"
♦♦♦♦
মাহাদ বাহিরে এসে দাড়াতেই মিল্টন দ্রুত এসে বলল," স্যার, আমি তেমন কাউকে খুঁজে পেলাম না। তাছাড়া এখন যদি এখানে বলি এই বাচ্চাটি কার তাহলে এর অভিবাবক হয়ে অনেকে এসে বলবে বাচ্চাটি তার। এমনি হসপিটালে বাচ্চা চোরের অভাব নেই। আপাতত একে আমাদের সঙ্গে রাখা উত্তম বলে আমি মনে করছি।"
মাহাদ আমার কথা শোন বলে লাবীবা মাহাদকে ডাকলো। মাহাদ বাচ্চাটিকে বডিগার্ড সজিবকে দিয়ে ওর মায়ের কাছে গিয়ে বলল," প্লিজ মা এত মানুষের সামনে সিনক্রিয়েট করোনা। আমার জরুরি মিটিং আছে।"
"মিটিংই তোর কাছে বড় হয়ে গেল আমার থেকে? আমার কি কোন দামই নেই তোর কাছে?"
"অনেক দাম আছে মা। কিন্তু তোমাকে দেখলেই আমার অতীত মনে পড়ে যায়। তুমি মা হয়ে নিজের সন্তানের প্রতি বিন্দু পরিমানে দয়া দেখাওনি। আমি তোমার পা পর্যন্ত ধরেছি তবুও তোমার মন গলাতে পারিনি । তখন তোমার দয়া হয়নি তাই এখন আর দয়া দেখাতে আসোনা প্লিজ। আমার কোন পরিবর্তন দেখতে পাবেনা।"
এদিকে সজিবের কোল থেকে বার বার পেলে পেলে নামতে চাচ্ছে বাচ্চাটি। অবশেষে সজিব বাচ্চাটিকে কোল থেকে নেমে দিল।
মাহাদ ওর মায়ের সাথে কথা বলা শেষ করে ওদের কাছে এসে বলল," সজিব, বাবুটা কই?"
সজিব এদিক ওদিক চেয়ে বলল," স্যার বাচ্চাটি তো এখানেই ছিল।"
বাচ্চাটি গেল কোথায় বলে মিল্টন আর সজিব এদিক ওদিক খুঁজতে লাগল। অনেক খুঁজেও তারা পেলনা।
মাহাদ তো এদের উপর ক্ষেপে গেল। একটা বাচ্চার খেয়াল রাখতে পারোনা তোমরা!
এমন সময় একটা ছেলে এসে বলল," স্যার, আপনি ডি এম মো. মাহাদ আহনাফ না! স্যার একটা সেলফি উঠাই আপনার সাথে বলেই কয়েকটা সেলফি নিল।"
মাহাদ আর এক মুহুত্বও সেখানে দেরী করলোনা। দ্রুত হসপিটাল থেকে বাহিরে চলে এল। মাহাদ শেষ বারের মত এদিক ওদিক চাইতে অদুরে বাচ্চাটিকে দাড়িয়ে থাকতে দেখলো। বাচ্চাটি বেলুনওয়ালার কাছে দাড়িয়ে রয়েছে। মাহাদ আর দেরী না করে ওর কাছে গিয়ে ওকে কোলে তুলে নিয়ে বলল," বাবা তোমাকে আমি কখন থেকে খুঁজছি আর তুমি এখানে?" বেলুন নিবা?"
মাহাদ সব বেলুন দিতে বলে ওয়ালেট থেকে টাকা বের করে বেলুন বিক্রেতাকে দিল। তারপর একহাতে বেলুন নিয়ে বাচ্চাটিকে নিয়ে গাড়ীর কাছে আসতেই মিল্টন ডোর খুলে দিল। স্যার বাবুটাকে অবশেষে পাওয়া গেল।
হুম বলে মাহাদ বেলুনগুলো মিল্টনের হাতে দিতেই বাচ্চাটি ওর একহাত দিয়ে বেলুন ধরল।
মাহাদ হেঁসে বলল," বাবা আমরা গাড়ীতে উঠি! তারপর তোমাকে আবার বেলুনগুলো দিব।"
" মাহাদ ওকে নিয়ে গাড়ীতে উঠতেই মিল্টন একঝাক বেলুনগুলো কে বাহিরে রেখে বেলুনের সুতা ভিতরে আটকে দিল। তারপর নিজেও উঠে গাড়ী স্টার্ট দিল।"
মাহাদ বুঝলো বাচ্চাটি খুব খুঁশি হয়েছে। তাই বুদ্ধি করে আবার জিঙ্গাসা করলো, বাবু তোমার নাম কি?"
শিশুটি অস্পষ্ট স্বরে বলল," সা....দ।"
সাদ বার বার বেলুন ধরার চেষ্টা করছে। মাহাদ ওকে বুকে নিয়ে জানালার দিকে আরো এগিয়ে গেল। এবার সাদ একটা বেলুন ধরে ফেলল। কিন্তু অতিরিক্ত বাতাসের ফলে শব্দ করে একটা বেলুন ফেটে যেতেই চমকে উঠে মাহাদকে শক্ত করে চিপে ধরল সাদ।
সাদ অত্যান্ত ঠান্ডা স্বভাবের বাচ্চা। প্রয়োজন ছাড়া কথা বলছেনা। বাবা ব..লু..ন বলতেই মাহাদ আবার একটা বেলুন টেনে সাদের হাতে ধরিয়ে দিল। কিন্তু বাতাসে আর বেলুন ধরে রাখতে পারলোনা সাদ। হাত থেকে ফসকে উড়ে গেল। মাঝে মাঝে একটা দুটা বেলুন শব্দ করে ফেঠে যাচ্ছে আর ও চমকে উঠে খিলখিলিয়ে হেঁসে উঠছে। মাহাদ অশ্রুসিক্ত নয়নে সাদকে দেখছে। মাহাদ কল্পনাও করতে পারেনি দিন শেষে আল্লাহ্ সুবহানাতালা তাকে এত বড় একটা নিয়ামত উপহার দিবে।
মাহাদ ওর মিটিং কান্সেল করে দিয়ে মাগরিবের আযানের সময় বাসায় ফিরল। মাহাদ সাদকে ওর কাজের ছেলেটার কোলে দিতে চাইল কিন্তু সাদ কারো কাছেই গেলনা।
অবশেষে মাহাদ ওকে নিয়ে রুমে গেল। সাদকে বিছানায় রেখে ওযু খানায় ওযু করতে ঢুকল। সাদও বিছানা থেকে নেমে মাহাদের কাছে গিয়ে ওর হাত দু'টো বের করে দিল মাহাদের দিকে। মাহাদ প্রথমে বুঝতে পারলোনা। কিন্তু পরক্ষনে বুঝতে পারলো সাদ অযু করতে চাচ্ছে। সাদের প্রতিটা ব্যবহার তিতিরের কথা মনে করে দিচ্ছে। তিতির আল্লাহর কাছে ওয়াদা করেছে, আল্লাহ্ সুবহানাতালা যদি তাকে একটা সন্তান দান করে তাহলে ওর জন্মের পর থেকে প্রতিটা ওয়াক্তে আমাদের সন্তানকে নিয়ে নামাযে শামিল করবে। একটা ওয়াক্ত থেকেও আমাদের সন্তানকে বঞ্চিত করবেনা। তবুও আল্লাহ্ সুবহানাতালা ওকে যেন একটা সন্তান দান করেন।
কোন বাচ্চাকে প্রতিদিন অযু করার শিক্ষা না দিলে সে কখনো এভাবে অযুতে অভ্যস্ত হতনা। মাহাদের মনে হচ্ছে এই সন্তান তার। তিতির যেভাবে সন্তান মানুষ করতে চেয়েছে ঠিক তেমন ভাবেই সমস্ত গুনাবলি সাদের মধ্য নিহিত আছে।
মাহাদ সাদকে আগে ওযু করে দিয়ে বাহিরে বের করে দিল তারপর নিজে ওযু করে বের হয়ে এল। মাহাদ শুধু দেখছে সাদ কি কি করে। সাদ দাড়িয়ে আছে। বাবা কিছু খাবে বলতেই সাদ না করে দিল ঘাড় নাড়িয়ে।
মাহাদ জায়নামায বিছিয়ে নামাযে দাড়িয়ে গেল। নামাযে মনযোগ দিল মাহাদ। ৩ রাকাত ফরয নামায পড়ে যখন সালাম ফিরাতে গেল তখন অনুভব করল ওর পাশে কেউ নামায আদায় করছে। মাহাদ বাঁকি সালাম ফিরে পাশে চেয়ে দেখল সাদ ওর টাওয়াল বিছিয়ে নামাযে দাড়িয়েছে। মাহাদকে দেখে অবিকল সেই অনুসারে সেও সালাত আদায় করে মাহাদের দিকে চেয়ে আছে।
মাহাদের চোখ ভিজে এলো। মাহাদ সাথে সাথে আল্লাহর কাছে হাত তুলে মোনাজাত ধরল। আল্লাহ্ আমার কাছে আমার তিতিরকে ফেরত দাও। আমার অনেক পরীক্ষা নিয়েছ আর নিয়না। আমি আর পারছিনা। হয় তাকে আমার কাছে পাঠিয়ে দাও না হয় তার কাছে আমাকে নিয়ে যাও।
মাহাদ নামায শেষ করে সাদ কে নিয়ে উঠে পড়ল। কিন্তু সাদের সমস্যা হতে লাগলো। যত রাত বাড়তে লাগলো সাদের তত ওর মায়ের কথা মনে পড়তে লাগল। মা বলে কান্নাকাটি করতে লাগল। কেউ আর থামাতে পারেনা। না কোন কাজের মেয়ে না মাহাদ নিজে থামাতে পাড়ছে। সাদের ছোট্ট চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়ে চলছে আর মা মা বলে কেঁদে উঠছে।
মাহাদ শেষে সব বেলুন একটা একটা করে সুতা থেকে ছিড়ে বেডের উপর রেখে ওর ভিতর সাদকে ছেড়ে দিল। এত বেলুন পেয়ে সাদ কিছুক্ষন চুপ করে থাকলেও একটু পর আবার মা বলে কেঁদে উঠলো। মাহাদ সাদ কে নিয়ে এসে নিজেই দুধ গরম করে চামুচ দিয়ে খাওয়ানোর চেষ্টা করলো। বাবা এগুলো খাও তাহলে মার কাছে নিয়ে যাব বলে অনেক ভুলিয়ে ভালিয়ে ওকে খাবার খাওয়ায় দিল।
সাদ মাহাদের মুখের দিকে চেয়ে আবার মা বলেই কেঁদে উঠলো। মাহাদের মাথায় চট করে বুদ্ধি এল। সাদকে নিয়ে সোজা একটা অন্ধকার রুমে গিয়ে লাইট জ্বালালো।
সাদ দেখতো ওটা কে বলে দেয়ালে টাঙ্গানো তিতিরের একটা বড় ছবির দিকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।
সাথে সাথে সাদ কান্না থামিয়ে দিয়ে ওর হাতের আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে বলল," মা.."
মাহাদের যা বোঝার দরকার বুঝে গেছে। এটা ওর আর তিতিরের সন্তান। মাহাদ তিতিরের ছবির একদম কাছে নিয়ে যেতেই সাদ ছবিতে হাত দিয়ে আবার বলল," মা.."
মাহাদ পাগলের মত সাদকে চুমা খেতে লাগলো। সাদকে নিয়ে ছাদে চলে গেল। মাহাদ সাদকে চাঁদ মামা দেখিয়ে দিয়ে বুকে নিয়ে হাটতে লাগল। সাদও ফিকরে কাঁদছে মাহাদও কাঁদছে। তাদের দু'জনেরই তিতির নামক সেই মানবীর দরকার। যার জন্য দু'জনেই তীর্থের কাকের মত অপেক্ষা করে চলছে। একজনের মা দরকার আর একজনের প্রেমিকা রুপী তার স্ত্রীকে চাই।
সাদ কাঁদতে কাঁদতেই মাহাদের বুকে ঘুমিয়ে পড়ে। চারদিকে এশারের আযানের ধ্বনি ভেঁসে আসছে। মাহাদ সাদকে নিয়ে নিচে নেমে আসলো। তারপর বেডে ওকে সুয়ে দিয়ে ওযু করে এসে দুইটা জায়নামায বিছালো। তিতিরের নিয়ম অনুযায়ী সাদকে একটা জায়নামাযের উপর শুয়ে দিয়ে পাশাপাশি ও জায়নামাযে দাড়িয়ে সর্ব্বোপ্রথম শুকরিয়ার নামায পড়ে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানালো। তারপর নামায আদায় করে ঘুমন্ত সাদকে তুলে নিয়ে বিছানায় গিয়ে সুয়ে পড়ল। মাহাদ সাদকে পেয়ে যতটা খুশি হয়েছে তার চেয়ে হাজার গুন তিতিরের উপর রাগ জমা পড়ে গেছে ওর বুকে। তিতিরের সাহস কি করে হয় এভাবে আমার কাছ থেকে নিজেকে আড়াল করে রাখা। সাদ তখনই ওর বুকে ফিরে যাবে যতক্ষন না ও এসে আমার কাছে ধরা দিয়ে ক্ষমা না চায়। মাহাদের আর ঘুম ধরলোনা। মাঝরাতে মাহাদ ফোনটা বের করে তিতিরের ছবি গভীর ভাবে হাজারো স্বপ্ন নিয়ে দেখছে।
মানেনা মন আমার, তুমি তুমি করে যায়
যানেনা কি করে, আমি তোমাকে বোঝায়।
এলোমেলো হল কি আমার
কেন যানি লাগে সবি আঁধার
তোকে ছাড়া মানছেনা তো এ মন
নারে নারে না....
ভাবনা তোর অর্থহীন, মনের অতলে..
মন আমার মানছেনা, আয়না রে কাছে..
সাদ চট করে জেগে উঠে বসে। তারপর ড্রিম লাইটেই আশে পাশে ওর মাকে খোজে। মাকে না পেয়ে মাহ্ বলে ডেকে ওঠে। ওর চোখ দিয়ে মুক্তার দানার মত পানি ঝড়ছে নিশব্দে।
কি হয়েছে বাবা! এইতো আমি বলেই লাইট জ্বালালো মাহাদ। সাদ ওর বাবাকে দেখে কিছুটা থামলো। বাবা শুশু.....
মাহাদ সাথে সাথে সাদকে নিয়ে বাথরুমে চলে গেল। তারপর সেখান থেকে এসে সাদ কে নিয়ে নিচে গেল। সব খাবার ফ্রীজ থেকে বের করে ওকে কোলে নিয়েই সব গরম করলো। তার পর ডাইনিং টেবিলে সাদকে বসিয়ে দিয়ে প্লেটে খাবার তুলে নিল। মাহাদ লেবু ছাড়া একদমই ভাত খেতে পারেনা তাই ভুলেই ভাতের উপর লেবু চিপে নিতেই মনে পড়ল সাদ কি লেবুর রস মাখা ভাত খেতে পারবে?
ওদিকে সাদ ভাত মাখা দেখে ভাতের দিকে চেয়ে আছে। তারপর সাদ নিজেই পাশে রাখা একটুকরো লেবু নিয়ে নিজের জ্বীভে বুলিয়ে নিল। সাথে সাথে টকে মুখ জড়িয়ে ফেলল। তারপর আবার মুখে দিয়ে মুখ ইষ্টাবিষ্টা করল। কিন্তু সে লেবুর রস একটু একটু করে জ্বীভ দিয়ে শুষে নিচ্ছে।
মাহাদ এমন দৃশ্য দেখে শব্দ করে হেঁসে উঠেল। তার পর বলল," একেই বলে বাপকা বেটা।"
মাহাদ নিঃশ্চিতে সাদকে খাবার খাওয়ায় দিল এবং নিজেও খেল। তারপর ওকে নিয়ে রুমে চলে আসলো।সাদের পেট ভরা তাই জলদিই ওর চোখ জুড়ে ঘুম নেমে আসলো।
মাহাদ সাদের কপালে কিস করে বলল," সাদ, মা কি জিনিস সেটা তুমি জানো, কিন্তু বাবা কি জিনিস সেটা আজ থেকে অনুভব করবে। নিজ ইচ্ছায় তোমার মা আমাকে শাস্তি দিয়েছে তো! তুমি আমার কাছে আসার পর থেকে তার পাল্টা শাস্তিও সে পেতে শুরু করেছে। তাকে নিজ ইচ্ছায় আমার কাছে ফিরতে হবে।"
♦♦♦♦
পরের দিন ম্যাগাজিন কভারের ফটো শুট করতে মাহাদ সাদকে নিয়ে একটা স্টুডিওতে উপস্থিত হল। দেশের বাহিরে থেকে একটা অফার এসেছে মাহাদের জন্য। মাহাদ শুধু একজন বিজনেসম্যান নয়, সে একাধারে তরুন সমাজের আইকন। নিজ দেশে সহ বিভিন্ন দেশের জনপ্রিয় ম্যাগাজিন কম্পানির সাথে কাজ করারর অভিঙ্গতা তার রয়েছে। এ যাবত তাকে নিয়ে ম্যাগাজিন
কম্পানিগুলো অনেক অর্থ উর্পাজন করেছে। ৬ বছরে মাহাদকে নিয়ে কাজ করা ম্যাগাজিন প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায় সাড়ে ৪শত কোটি টাকা আয় করেছে।
মি. মাহবুব আলম একজন বিশিষ্ট ফটোগ্রাফার। মাহাদ তার সাথে হ্যান্ডশেক করতেই মাহবুব আলম বলল," মাহাদ, বাচ্চাটি কে?"
"মাহাদ চমৎকার একটা হাসি দিয়ে বলল," আমার ছেলে।"
"বিয়ে করলে কবে আর বাচ্চাই বা হল কবে? আবার কি বিয়ের পিঁড়িতে বসেছ নাকি?"
"বিয়ে একবারই হয় ভাইয়া। ডি এম মো. মাহাদ আহনাফ এবং মিসেস তিতির মাহাদের একমাত্র সন্তান সাদ ইবনে মাহাদ।"
"বাপরে বাপ কি ফ্যামিলি, হেই সাদ বেটা কেমন আছেন আপনি?"
সাদ সাথে সাথে শুধু একটা সালাম দিয়ে চুপ করে রইল।
মাহবুব আলম খুশি হয়ে সালামের জবাব দিয়ে বলল," মাহাদ, তোমার সন্তানকে মানুষ করেছ বটে। আর কিছু বলতে না পারুক সালাম দিতে শিখেছে খুব সুন্দর করে। সেটা চেনা মানুষ হোক আর অচেনা মানুষই হোক। যার সাথে পরিচয় হচ্ছে তাকেই সালাম দিচ্ছে। অত্যন্ত সুন্দর শিক্ষা।
মাহাদ সাদকে মিল্টনের কোলে দিল। তারপর ফটো শুটের জন্য রেডী হল। কিছু ছবি তোলার পর একজন অফার দিল। স্যার, আপনি যদি অনুমতি দেন তাহলে আপনাকে আর আপনার ছেলেকে নিয়ে কিছু ফটো শুট করতাম। সামনে ঈদ আসছে সেই উপলক্ষ্য।
"সাদ পাঞ্জেবী ছাড়া কোন পোষাক পড়েনা। আপনারা ওর মাপের যদি পাঞ্জেবীর ব্যবস্থা করতে পারেন তাহলে সম্ভব।"
স্যার ১টা ঘন্টা সময় দেন। আমরা সব কিছুর ব্যবস্থা করছি। প্রায় ৫০ মিনিটেই ওরা ড্রেস নিয়ে হাজির হল। মাহাদ নিজে সাদকে পোষাক বদলিয়ে দিল। বাবা আর ছেলের পাঞ্জাবী পরে কিছু ছবির শুট দিল। বাবা আর ছেলের ম্যাচিং করা ড্রেস। সবকাজ শেষ করে মাহাদ বলল," আসরাফুল ভাই, এই ম্যাগাজিন কবে পাবলিশ হবে?"
"এই ঈদের ১ মাস আগে।"
"অনেক দেরী আছে, তার ভিতর তিতিরকে আমি আমার কাছে নিয়ে আসতে পারবো।"
ভাই আমার সন্তানের কথা যেন এখুনি কেউ পাবলিশ না করে। আপনি এই বিষয়টা দেখবেন বলেই মাহাদ সাদকে নিয়ে সেখান থেকে বের হয়ে এল।"
দিনে সাদ চুপচাপই থাকে কিন্তু রাত এলেই ওর মায়ের জন্য কান্না কাটি করে। তাই মাহাদ এশারের নামায আদায় করে খাবার খাইয়ে সাদ কে নিয়ে বের হয়েছে বাহিরে। শহরের নানা লোকজন আর কোলাহলে ওর মায়ের কথা ভুলে গেল। মাহাদের বুকে ঘুমিয়ে পড়তেই মাহাদ আর দেরী না করে সাদকে নিয়ে বাসায় চলে আসলো।
সাদ আসার পর থেকে মাহাদ ওর অফিসে যাওয়া, মিটিং সহ সবকিছু আপাতত বাদ দিয়ে ছেলেকে শুধু সময় দিচ্ছে।
পরেরদিন বিকেলে সাদকে নিয়ে মাহাদ বাসা হতে বের হতেই গেটে একটা ছেলেকে দাড়িয়ে থাকতে দেখল। মাহাদ ব্রেক কষে গাড়ী থামিয়ে গ্লাসটা নামিয়ে ছেলেটিকে ডাকল। এই হাসান, তুমি এখানে?
হাসান এক দৌড়ে মাহাদের কাছে এসে সালাম দিয়ে বলল," ভাইজান আমাকে চিনতে পেরেছেন?"
" হুম, কেমন আছো তুমি! এখানে কেন?"
" ভাইজান আপনাকে ২ বছর পাগলের মত খুঁজেছি। গত তিনদিন আগে একটা ভাইয়ের মাধ্যমে আপনার বাসার ঠিকানা পেয়েছি। ৩ দিন ধরে আসছি কিন্তু কেউ ঢুকতে দেয়না।
যাক সেই কথা, ভাইজান আসমার বাপ-মা আপনার সাথে দেখা করতে চায়। আপনি আমার সাথে একবার যাবেন? খুব কান্না-কাটি করে তারা। জানিনা কি কথা আছে আপনার সাথে।"
" মাহাদ কিছু একটা ভাবলো তারপর ওকে গাড়ীতে উঠতে বলল।'
♦♦♦♦
মাহাদ সাদকে নিয়ে হাসানের বাসায় বসে আছে। হাসান হুলুস্থু বেঁধে দিয়েছে। কোথায় বসতে দিবে কি খাওয়াবে এসব নিয়ে। হাসানের ৪ বছরের একটা বাচ্চা ছেলে রয়েছে। সে একটু পর পর আড়াল থেকে বের হয়েই ফিক করে হেঁসে আবার দৌড় দিচ্ছিলো। সাদের ব্যাপারটা খুব পছন্দ হয়েছে। বাচ্চাটি যখনই সামনে আসছে তখনই সাদ মুচকি হেঁসে উঠছে।
"হাসান কিছু দরকার নেই তুমি ওনাদের ডাকো। আমার সময় নেই।"
হাসান দ্রুত গিয়ে আসমার বাবাকে ডেকে আনলো। আসমার মা খুব অসুস্থ তাই আসতে পারলোনা। আসমার বাবা মাহাদকে দেখেই মাহাদের পায়ে পড়ে কাঁদতে লাগল। সাহেব যে পাপ আমি করেছি তার কোন ক্ষমা নেই। আমি আসমাকে এক বড়লোকের ঘর থাইকা চুরি কইরা আনছি।
এমন কথা শুনে মাহাদ সাদকে আরো বুকের ভিতর নিল। মাহাদের এতকিছু জানা ছিলনা। আসমার বাবা সব ঘটনা খুলে বলল। তারপর একটা ঠিকানা হাতে গুজিয়ে দিয়ে বলল," সাহেব আসমাকে এই ঠিকানায় একটু পৌছে দিয়েন। আপনার থাইকা যতগুলা টাকা নিছি সেগুলো তো ফেরত দিবার পারবোনা। কিন্তু শেষ বারের মত আমার এই উপকারটা করেন।
জিবনে যত টাকা পয়সা করেছি সব বৃদ্ধ বয়সের অসুখের পিছনে ব্যয় হয়ে গেছে। মরন রোগ আমাগো পিছন নিছে। আল্লাহর শাস্তি কোনদিনও ভূল হয়না। ঠিক সময় তাকে পাকড়াও করে।
মাহাদ জানতোনা ওর থেকে টাকা নিয়ে হাসান আর ওর বাবা আসমাকে মুক্তি দিয়ে ওর কাছেই পাঠিয়েছে। দুনিয়া বড়ই আজব। গোলাব আর আসমা বেঁচে আছে কিনা সেটা মাহাদ নিজেই জানেনা। ওদের কথা মনে হতেই মাহাদের গলা ধরে এল।
আরো কিছুক্ষণ কথা বলে মাহাদ সাদকে নিয়ে বাসায় আসলো। ঠিকানাটা বার বার দেখছে মাহাদ। মাহাদ যা অনুমান করছে তা যদি ঠিক হয় তাহলে আসমা তার খুব পরিচিত। তবুও লোক লাগালো ঠিকানার আসল মালিককে বের করতে।
দু'দিন হয়ে গেল, সাদের কেউ খোঁজ করতে আসলোনা। মাহাদ অর্ধৈয্য হয়ে যাচ্ছে তিতির কেন এখনো চুপ করে আছে?
তিনদিনের পর এক সকালে মিল্টন এসে বলল," স্যার, সাদের নামে নিঁখোজের খবর একটা পত্রিকায় বের হয়েছে। আপনার কথা অনুযায়ী তাদের নাম্বারে ফোন দিয়ে এখানে আসতে বলেছি। ওনারা স্বামী-স্ত্রী একটু পরই এখানে আসছে।
স্বামী-স্ত্রী.....! মাহাদের কলিজাটাই নড়ে উঠলো। অসম্ভব..
মাহাদ আর কোথাও গেলনা সেদিন। অপেক্ষা করতে লাগল তাদের জন্য।
ঠিক দুপুরে এক ভদ্র লোক এবং তার স্ত্রী মাহাদের বাসায় আসলো। এসেই সাদের কথা জিঙ্গাসা করলো।
আপনারা বসেন আমি স্যার কে ডেকে আনছি বলে সজিব উপরে চলে গেল। সাদ পাশে খেলা করছে আর মাহাদ বসে আছে।
স্যার, সাদের অভিবাবক এসেছে।
মাহাদ আর একমুহুত্ত্বও দেরি করলোনা। সাদকে কোলে নিয়ে নিচে নেমে আসলো। ওনাদের সামনে এসেই সাদকে ছেড়ে দিল। মাহাদকে দেখে কিছুটা ভরকে গেলেন ভদ্রলোকটি। সাথে তার স্ত্রীও। এদিকে সাদ সামনে ভদ্রলোকটিকে দেখে দৌড়ে ওনার কাছে যেতেই উনি সাদকে বুকে তুলে নিয়ে উর্দু মিশ্রিত বাংলা ভাষায় বলল," আপকো বহুত বহুত শুকরিয়া জনাব। হাম ড. ওয়াহিদ ইব্রাহীম। হাম একজন পাকিস্থানি ডক্টর। সী ইজ মাই ওয়াইফ। ১৫ দিন হল হামলোগ বাংলাদেশে এসিয়াছি।"
মাহাদ মহিলাটিকে একবার ভালো করে দেখলো। ফুল পর্দা করা। এটা তিতির না তাহলে ও কে? আসমা....!
আসমা বিয়ে করেছে....?
এমন সময় মহিলাটি হাত বাড়াতেই সাদ ড. ওয়াহিদের কাছ থেকে ওনার কাছে গিয়ে মাহাদকে হাত দিয়ে দেখে দিল," আন্নি বাবা..!"
মহিলাটি আর একমুহুত্ব দেরী না করে সাদ কে নিয়ে উঠেই চলে আসতে লাগলেন। এই আসমা কই যাও বলতেই মহিলাটি ড. ওয়াহিদের কথার তোয়াক্কা না করেই আরও দ্রুত বের হয়ে গেল।
মাহাদ সাথে সাথে বলল," আপনার স্ত্রীর নাম আসমা?"
ড. ওয়াহিদের কথা হারিয়ে গেল। সে বুঝতে পারলো ভুল জায়গায় তার স্ত্রীর নাম নেওয়া হয়ে গেছে ।
মাহাদ আর এক মুহুত্ত্বও দেরী না করে বাসার বাহিরে এসে দেখল, আসমার গাড়ী ওর বাসা থেকে বের হয়ে গেল। মাহাদও তো কম না। মাহাদ দ্রুত ওর গাড়ীটা বের করে আসমার পিছন পিছন ছুটল। আজ এদের লুকোচুরি খেলা দেখেই ছাড়বে মাহাদ। মাহাদ আরও রেগে গেল আসমা আর তিতিরের উপর।
প্রায় ঘন্টা দুয়েক পর আসমা বাসায় পৌছাতেই মাহাদ ও গাড়ী নিয়ে ঢুকলো সেই বাসায়। গাড়ী থেকে বের হয়েই আসমা বলে পিছন থেকে ডাক দিল মাহাদ। আসমা সাথে সাথে দাড়িয়ে গেল। মাহাদের ডাক কে অগ্রাহ্য করার মত শক্তি নেই আসমার। মাহাদ কাছে এসেই বলল," তোমার আপা কই?"
" আসমা কথা বলতে পারছেনা। মনে হচ্ছে হাজার জন মানুষ ওর মুখ চেপে ধরে আছে।"
মাহাদ ওকে আর কিছু না বলে বাসার মধ্য চলে গেল। বাসায় ঢুকতেই একটা কুকুর খেঁকিয়ে এসে মাহাদের সামনে বিকট শব্দে চিৎকার করতে লাগল। এমন সময় কই থেকে গোলাব এসেই ঐ কুকুরের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে শাসন করে জানিয়ে দিল তার মালিক এসেছে। তাই কোন শব্দ না করে যেন চুপচাপ সেখান থেকে চলে যায়। কুকুরটিও লেজ গুটিয়ে একটু দুরে সরে গিয়ে চুপ করে রইল। সাথে সাথে গোলাব মাহাদের কাছে ছুটে আসলো। কত দিন পর এই প্রিয় মানুষটাকে সে কাছে পেয়েছে। মাহাদের কোলে যেন ঝাঁপ দিল গোলাব। মাহাদ ওকে নিয়ে ওখানেই বসে পড়ল। গোলাব মাহাদের হাত, পা গাল জ্বিভ দিয়ে আলিঙ্গন করতে লাগল গড়গড় শব্দ করে। গোলাব ওর নিজের গাল মাহাদের ঘাড় আর গালের সাথে ঘষতে লাগলো চোখ বন্ধ করে। মাহাদও ওর স্নেহের আদর বুলিয়ে দিল গোলাবের গায়ে। গোলাব সেই অদ্ভুদ স্বরে ডাকতে লাগল আর মাহাদের বুক ঘেষে নিজের জায়গা করে নিল।
সাদ পিছন থেকে দৌড়ে এসে গোলাবের সাথে যোগ দিল তার বাবাকে ভালোবাসা দেখাতে। গোলাব সাদের একমাত্র খেলার সাথী। গোলাব ভাইয়া আপনি জানেন, এটা আমার বাবা। কথাগুলো অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠলো সাদ।
কুকুরের ডাকের শব্দ শুনে তিতির উপর থেকে সিড়ি বেয়ে ছুটে আসলো। তিতির নিশ্চিত সাদ এসেছে। কিন্তু গোলাবের এমন আদর মাখানো গড়গড় শব্দ শুনে তিতির চমকে উঠলো। মাহাদ........
বুকের ভিতর ছাৎ করে উঠলো তিতিরের। তিতির সাথে সাথে ওখানেই বসে পড়ল আর আর্তনাদের সাথে কেঁদে উঠলো, " সাদ, আপনি কোথায় বাবা! আমি তো আপনাকে দেখতে পাচ্ছিনা বাবা বলেই হাত দুটো বাড়িয়ে দিল তিতির। "
সাদ দৌড়ে ওর মায়ের কাছে গিয়ে হাতের মধ্য দিয়ে তিতিরের বুকের ভিতর জায়গা করে নিয়ে বলল," লাব্বাইক আমার মা। তিতিরের কপালে চুমা খেয়ে তারপর দু'হাতে ওর মায়ের চোখের পানি মুছে দিল।
তিতির সাদকে বুকের ভিতর নিয়ে বলল," বাবা আপনি আঙ্কেলকে ছেড়ে কই গিয়েছিলেন? আপনি জানেন, আপনার ভুলের জন্য ওয়াহিদ আঙ্কেলকে কত বকা শুনতে হয়েছে আমার কাছ থেকে।"
" সাদ আর কিছু না বলে ওর মায়ের বুকে থেকেই মাহাদের দিকে চেয়ে রইল।"
আসমা! আসমা! বলে চিৎকার দিয়ে ডাক দিল তিতির। সাদকে বুকে নিয়ে তিতির ফিকরে কেঁদেই চলছে। তিতির মাহাদের অস্তিত্বর টের ঠিকি পেয়েছে।
আসমা তিতিরের ডাক শুনে বাহির থেকে দৌড়ে এসে মাহাদের কাছে দাড়াল। আর তিতিরের কাছে যাওয়ার সাহস পেলনা মাহাদকে পিছনে রেখে। ওখানে দাড়িয়েই আসমা বলল," আপা , আমরা সাদকে নিয়ে এসেছি।"
তিতির আসমার কথার তোয়াক্কা না করেই হুহু করে কেঁদে উঠলো, আসমা মাহাদ....... বলে বড়সড় ঢোক চিপে আবার বলল, তোমার ভাইজান এখানে এসেছে তাইনা? আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি আমার মাহাদ এখানেই উপস্থিত আছে। একদম মিথ্যা কথা আমাকে বলবানা আসমা। আমি জানি সে এখানেই আছে।
মাহাদ সাথে সাথে মুখে আঙ্গুল চেপে আসমাকে ইশারা করে ওর কথা বলতে নিষেদ করলো............
মাহাদ শুধু তিতিরের দিকে অপলভাবে চেয়ে রয়েছে। তিতির দৌড়ে আসতে ওর মাথার ওড়নাটা খুলে গেছে। দীঘলকালো লম্বা চুলগুলো খোপা থেকে খুলে গিয়ে ফ্লোরে গড়া গড়ি খেয়ে ফ্যানের বাতাসে ঢেউ খেলছে। অপূর্ব রমনী তার রাজপুত্রটাকে বুকে নিয়ে অঝোরে অশ্রু বির্সজন দিচ্ছে।
বন্ধু তোমারো রূদয়ে, আমি যেতে চাই হারিয়ে
যদি খুঁজে পাই ঠিকানা, থাকবেনা সুখের সীমানা।
রাখবো তোমায় যতন করে, আমার রূদয় জুড়ে
স্বপ্ন দেখব দুজন মিলে, দুজন দুজনার হয়ে
শুধু তুমি পাশে থেক, আমায় মনে রেখ......