আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

অচেনা অতিথি - পর্ব ৪৭ - নাফিসা মুনতাহা পরী - ধারাবাহিক গল্প


মা..হাদ বলে তিতির কিছু বলতে চাচ্ছিল কিন্তু তার আগেই ঠোট কামড়ে ধরল মাহাদ।  তিব্র যন্ত্রনায় কেঁপে কেঁপে উঠছিল তিতিরের সম্পূর্ন দেহ.........

প্রায় ৭ মিনিট পর তিতিরের ঠোটজোড়া ছেড়ে দিল মাহাদ। তখন তিতিরের ঠোট কেঁটে রক্ত বের হচ্ছিল। মাহাদ কিছুক্ষন একধানে তিতিরের দিকে চেয়ে রইল। তিতির অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিঃশব্দে কেঁদেই চলছে। 
এমন অবস্থা দেখে ঠোটের রক্তগুলো মুছে দিয়ে মাহাদ উঠে বেডের একপাশে মাথা নিচু করে বসে রইল।

মাহাদের রেসপন্স না পেয়ে তিতির অনেক কষ্টকরে উঠে বসল। তিতির জানত মাহাদ এমন কাজ কখনো করবেনা যেটাতে তিতিরের অমত থাকে।
তিতির সুড় সুড় করে উঠে হাটুটা ভাজ করে তাতে আধা দাড়িয়ে মাহাদের কাঁধে দু'হাতের বাহু দিয়ে জড়িয়ে ধরে কাঁধে মুখ ডুবিয়ে নিজের শরীরের সম্পূর্ন ভার মাহাদের উপর দিয়ে চুপ করে রইল।

মাহাদ সাথে সাথে ওর মাথাটা ঘুরিয়ে তিতিরকে কিস করে বলল," হাতের ব্যাথা কমেছে?"

" অনেকটা কমছে।"

এবার দু'জনেই অনেকক্ষন ধরে চুপ রইল। শেষে তিতির নিরবতা ভেঙ্গে বলল," Mahad, do you have many friends."

" yes.... any problem! "

আপনার এত মেয়ে বান্ধবী আমার একদম পছন্দ না। তাদের আপনার প্রতি অ্যাচিচুয়েট দেখলে আমার খুব কষ্ট হয়। আপনি সবার সাথে মেলামেশা বাদ দিয়ে দিবেন।

"কেন, হিংসে হয় তোমার?"

" হিংসে হয়, না অন্য কিছু হয় তা আমি জানিনা। তবে প্রচন্ড খারাপ লাগে।"

মাহাদ সেই কথাকে পাত্তা না দিয়ে বলল," তোমার কি হয়েছে আমাকে একটু বলবে? এভাবে তো জিবন চলেনা। দেখ, আমি তোমার কাছে কিছু গোপন করি? তোমার সমস্যা না জানলে আমি সেটা সলভ্ করবো কি করে?"

তিতির কিভাবে বলবে সেই কথা। কথাটা মনে করতেই নিজেই নিজের প্রতি লজ্জা হওয়া শুরু হয়ে গেল। যে কথা মাহাদ আজও তিতিরের কাছ থেকে গোপন করে গেছে সেই কথা ও কিভাবে সেই মাহাদের কাছেই প্রকাশ করবে? এটা তিতিরের দ্বারা সম্ভব নয়।

তিতিরের চুপ থাকা দেখে মাহাদ বুঝল এ কিছু বলতে রাজি নয়। কিছুতো একটা করতে হবে যার জন্য ও ওর পেট থেকে কথাগুলো বের করবে।

 তিতির মাহাদকে ছেড়ে দিয়ে বেড থেকে নেমে দু'হাত মেলে দিয়ে মাহাদকে বলল," যেমনি আমার পোষাক খুলেছেন তেমনি ঠিক করে পড়ে দেন। না হলে কিন্তু খবর আছে আপনার।"

তিতির, তোমার এই আবেগ মাখা খাম খেয়ালি কথাগুলো আমাকে পাগল করে দেয়। সময়গুলো আর শেষ হতেই চায়না। কবে যে আমরা এক হব সেই প্রতিক্ষায় রয়েছি।

মাহাদ দেখেন, আমি তো আপনার কাছে যাবই যাব। যখন আপনি একা থাকবেন। যখন আমাকে আপনার খুব প্রয়োজন হবে।

মাহাদ তিতিরকে পোষাক পড়ে দিতে দিতে বলল," এখুনি তো তোমাকে খুব প্রয়োজন আমার। তাহলে হয়ে যাক?"

নাহ্,,,,,, বলে তিতির ছোটবাচ্চাদের মত মাহাদের কোলে বসে পড়ল। আমি আমার বরটাকে নিয়ে যে অনেক স্বপ্ন দেখি। সেগুলো পুরুন না হতেই?

মাহাদ আর কিছু না বলে ওর উন্মুক্ত শরীর দিয়ে আগলে রাখে তিতিরকে।

♦♦♦♦

তিনদিন পর লাবীবা হিনুর মা, রাশীদা বেগমকে কয়েকবার কল দিয়েছে। শেষে হিনু মাহাদকে কল দিয়ে সব কিছু খুলে বলল।

মাহাদও সাথে সাথে বলল," বল, ছেলে আমাদের পছন্দ হয়নি। বেশি জোড়াজুড়ি করলে বলবি ছেলের চরিত্র খারাপ। এগুলো কিছু একটা বলে কল কেটে দিবি।"

"কি বলিস? এগুলো কিভাবে ওনাকে বলব?"

এটাই আন্টিকে বলতে হবে। আমি একটু বিজি আছি পরে কথা হবে বলে মাহাদ কল কেটে দিল।

হিনু বড়সড় নিশ্বাস ফেলে ওর মায়ের কাছে গিয়ে সব কথা বুঝিয়ে বলল। এর মধ্য লাবীবার কল আবার আসলো। 

হিনুর মা রাশেদা বেগম রিসিভ করতেই অকথ্য ভাষায় কথা বলতে লাগল বাতাসি বিবি। এত এত এত কথা বলল যে শেষে হিনুর মা কেঁদে ফেলল। মানুষ কখনো মানুষকে এমন ভাবে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেনা।

লাউডস্পীকারে সব কথা হিনু শুনছিল। হিনুরও চোখে পানি চলে এল। এই বাসায় তিতির গেলে ওকে শেষ করার জন্যই এরা শাশুড়ী আর বৌমাই যথেষ্ট। ও ওখানে কোন দিনই সুখে থাকবেনা। তিলে তিলে মেয়েটা শেষ হয়ে যাবে। এ বিষয় নিয়ে তিতিরের সাথে আগে কথা বলতে হবে। তারপর মাহাদ......

♦♦♦♦

হিনু বসে আছে আর আসমা সামনে দাড়িয়ে আছে। তারা দু'জনেই তিতিরের আসার অপেক্ষায় আছে। কিছুক্ষন পর তিতির আসলে হিনু বলল,' তুমি ফ্রেস হয়ে আস, তোমার সাথে কিছু কথা আছে।"

হিনুর এমন কথায় তিতির বেশ ঘাবড়ে গেল। খুব দ্রুতই ফ্রেস হয়ে এসে হিনুর সামনে বসল। আপু বলেন!

যা বলছি তার সঠিক জবাব দিবা। আমি তোমার বড় আপুর মত তাই তোমার সমস্যা আমার মত করে সমাধান করতে চাই। আশা করি কোন কথা লুকাবানা আমার কাছে।

" জ্বি আপু।"

" মাহাদের পরিবারের সাথে তোমার কি ঝামেলা? ওরা তোমাকে সহ্য করতে পারেনা কেন? বা তোমার কোন দুর্বলতা আছে কি?"

" আপু আমরাতো সবাইকে পছন্দ করতে পারিনা। এমন কেউ আছে তাদেরও আমরা অপছন্দ করি। তেমন তারাও আমাকে অপছন্দ করে। তাছাড়া এই সম্পর্কের একটা ইতি ঘটাতে চাই আমি।"

" কি বল! মাহাদ তোমাকে এত এত এত ভালবাসে তবুও তুমি তাকে চাচ্ছোনা? তাকে পাওয়া একটা মেয়ে জন্য কতটা ভাগ্যর ব্যাপার সেটা তুমি নিশ্চয় জানো?"

" আপু আমি সবই জানি, কিন্তু একটা সংসার চালানোর জন্য লাইসেন্স দরকার। আর সেটা সঠিক মানুষকেই দিতে হয়। আমি ওর যোগ্য নয়। আমি ওকে সন্তান দান করতে অক্ষম। আমার সাথে এসব ঘটনা ঘটেছে আরো কিছু সময় আগে বলে তিতির সব ঘটনা খুলে বলল।"

"এমন কথা শুনে হিনু থমকে গেল। বড়সড় একটা ঢোক গিলে বলল," একটা মেয়ে হয়ে অন্য মেয়ের এত বড় সর্বনাশ কিভাবে করে! আল্লাহ্ মাফ কর..."

তিতির উঠে গেল সালাত আদায় করার জন্য। আর হিনু চুপ করে বসে রইল মাহাদের অপেক্ষায়। আসমা এসে বলল," এই সমস্যা নিয়ে ভাইজানের সাথে প্রায় প্রতিদিনই ঝগড়া হয় আপার। আপনি একটু বুঝান আপু। ভাইজানতো এতে খুব কষ্ট পায়। আপাও ভালো থাকেনা না ভাইজানরেও ভালো রাখেনা।"

আসমা, শুধু ঐ একটা কারন না, অনেক কারন আছে। তোমার আপা যা করেছে সঠিক কাজ করেছে। আমরা এমন জায়গায় থাকলে ভেঙ্গে পড়তাম। ও অনেক শক্ত মেয়ে মনের দিক থেকে। কষ্ট পেতে পেতে সব কিছুর উপর থেকে ওর বিশ্বাস উঠে গেছে। জিবন্ত লাশের মত ও বেঁচে আছে। তাই ওকে ওর মত থাকতে দাও।

♦♦♦♦

দুপুরে মাহাদ আসেনি। সন্ধ্যার একটু আগে বাসায় এসেছে। তিতির লেবুর শরবত বানিয়ে মাহাদের সামনে দাড়িয়ে আছে। 

মাহাদ গ্লাসটা হাতে নিয়ে বলল," কি ব্যাপার, আমার রানী আজ শুকনো মুখে এভাবে দাড়িয়ে আছে কেন? কি হয়েছে তিতির?"

না কিছু হয়নি তো! হিনু আপু আপনাকে কি যেন বলবে। আপনাকে যেতে নিষেধ করেছে এখান থেকে।

মাহাদ শরবত না খেয়ে তিতিরের হাতে দিয়ে বলল," এটা খেয়ে নাও। আমি ফ্রেস হয়ে আসছি।"

আমার জন্য আছে মাহাদ। এটা আপনার জন্য। এটা আপনার শরীরের জন্য খুব দরকার।

তিতির! শরীর তো অনেক কিছুই চায়। আমরা কি তার সব আবদার মিটাতে পারি! তুমি খাও। তোমার খাওয়া মানে আমার খাওয়া বলে টাওয়াল নিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেল। আর দরজা বন্ধ করার আগে বলল," আমি এসে যেন দেখি তুমি শরবত খতম করেছ।"

এবার তিতির নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেনা। নিঃশব্দে মুখে হাত চেঁপে কাঁদতে লাগল মাহাদ যাতে শুনতে না পায়। নিঃশব্দে কান্না করা খুব খুব কষ্টকর। যে কান্না করে সেই শুধু এটা উপলদ্ধি করতে পারবে।

মাহাদ ওয়াসরুম থেকে এসে দেখল তিতির রুমে নেই।  তিতির আমার ট্রী শার্টটা পাচ্ছিনা। ওটা কোথায় রেখেছ?

"আপনার বিছানার উপরই সব আছে মাহাদ। "

মাহাদ চেঞ্জ করে তিতিরের কাছে আসল। তিতির চায়ের পানি তুলে দিয়েছে চুলায়। মাহাদ তিতিরকে পিছনদিক থেকে জড়িয়ে ধরে বলল," আমার মনে হয় তুমি একটু বেশিই আমার কাছ থেকে দুরে দুরে থাকছ। আমি তোমার কাছ থেকে একেবারে চলে গেছে বুঝবা আমার সাথে তুমি কত অন্যায় করেছ।"

তিতির কিছু বলছেনা, চুপ করে ওর কাজ করে চলছে। কারন এই সময় মাহাদের সামনে দাড়ানোর মত ওর সাহস নাই।

মাহাদ তিতিরকে ছেড়ে দিয়ে সামনে দাড়াতেই বিশ্মিত হয়ে গেল। নাক আর চোখটা ভিষন লাল। মাহাদ তিতিরকে কিছু বলবে এমন সময় আসমা এসে বলল," ভাইজান হিনু আপু এসেছে। আপনাকে ডাকছে।"

তুমি যাও আমি আসছি বলে মাহাদ চুপ করে রইল। আসমা চলে যেতেই মাহাদ তিতিরকে বলল," তুমি আমার কাছে সুখী নও? আমি কি তোমায় সুখী রাখতে ব্যর্থ হয়েছি?"

তিতিরের মুখ দিয়ে আর একটা শব্দও বের হলনা। ওভাবেই চুপচাপ কাজ করতে লাগল। মাহাদ আর একমুহুত্বও দেরি করলোনা। ডাইনিং রুমে চলে গেল।

তিতিরও কাপে চা ঢেলে চোখটা ভাল করে মুছে নিজেকে ঠিক করে ওগুলো নিয়ে বের হয়ে এল কিচেন থেকে।

হিনু মাহাদকে ওর দাদীর বলা কথাগুলোর  সম্পূর্ন রেকর্ড শুনাল। মাহাদ সবকিছু শুনে লজ্জায় ওর চোখমুখ লাল হয়ে গেল। এমন পরিস্থিতিতে সে কখনো পড়েনি।  মাহাদ চুপ হয়ে গেল।

মাহাদের চুপ হওয়া দেখে হিনু বলল," দেখ, তোদের বাসার রের্কড খুব একটা ভালো নয়। চার বছর আপ হয়ে গেছে তবুও নিসাকে মেনে নেয়নি তারা। আর তিতিরকে মেনে নেওয়ার প্রশ্নই ওঠেনা ওদের। মানে তোর দাদী আর মায়ের কথা শুনে যা মনে হল আরকি। তুই যদি জোড় করেও ওখানে তিতিরকে নিয়ে যাস তাহলে ওরা তিতিরকে বাঁচতে দিবেনা। কারন মানুষের চক্ষুশূল হয়ে বাঁচা যায়না মাহাদ। আর যদি তিতিরকে নিয়ে আলাদা থাকিস তাহলে এটা বেমানান হবে। কারন সবাই তোর দিকে আঙ্গুল তুলে বলবে তুই ফুয়াদ ভাইয়ার চেয়েও বিবেকহীন।  তোর বাবার সম্মানের ছিটাফোঁটাও থাকবেনা। দুই সন্তান একই কাজ করছে।"

মাহাদ হিনুকে থামিয়ে দিয়ে বলল," আমি তিতিরকে ছাড়া একটুও থাকতে পারবোনা না তিতির আমাকে ছাড়া থাকতে পারবে।"

এবার হিনু ক্ষেপে গিয়ে বলল," তিতিরের সম্মান নেই? ওকে আর কত অন্যর ঘৃনা ও হাঁসির পাত্র করে রাখবি? তোর নিজের সুবিধার জন্য ওকে শুধু ব্যবহারই করে যাবি? ওর নিজের কোন মান-মর্যাদা নেই?"

মাহাদ আর কোন কথা বলে না। চুপ করে বসে থাকে।

দেখ মাহাদ, তোর আর ওর ভালো জন্য বলছি তুই তিতিরের সাথে আপাতত সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ করে দে। খুব প্রয়োজন ছাড়া একদম যোগাযোগ করিসনা। ওর গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করতে এখনো দেরি আছে। তুইও হাতে তিনটা বছর পাবি। এই তিনটা বছরে মায়ের ভালো সন্তান হয়ে দেখিয়ে পরিবারকে সব কিছু বুঝা। এর মধ্য তিতির ওর জন্য একটা ভালো পজিশন তৈরি করুক।  তখন ওর যোগ্যতায় ওর হয়ে কথা বলবে। 

মাহাদ চুপ করেই আছে। মনে হয় হিনুর কথাগুলো ওর ভালো লাগেনি।

হিনু সব বুঝতে পেরে আবার বলল," নিসার মত জিবন উপহার দেসনা তিতিরকে। নিসার নিজের বাবা মা আছে আর তিতিরের সেদিক থেকে শূন্য। তাই ওকে একটু সম্মান নিয়ে বাঁচতে দে।"

মাহাদ দাড়িয়ে বলল," ওকে,  তোর কথায় মেনে নিচ্ছি। আমি যথেষ্ট চেষ্টা করবো আমার পক্ষ থেকে। কিন্তু এই নিদিষ্ট সময়ের পর আমি আমার খেলা সবাইকে দেখাবো। সেটা তিতির হোক আর আমার পরিবারই হোক। সবাই মাহাদকে নতুন করেই চিনবে।"
মাহাদ বাসা থেকে বের হতেই তিতির ছটপটাতে লাগল। 

আপু একবার ওনার সাথে কথা বলি! উনিতো আর কখনো আসবেনা। আমি যে ওনাকে সম্পূর্ন হারিয়ে ফেললাম।

হিনু কঠিন চোখে তিতিরের দিকে চেয়ে বলল," তোমার কঠোরতা ওকে আরো শক্ত করে তুলবে। এটাই একমাত্র সুযোগ। তুমি যা চাচ্ছো তাই করার। মাহাদের সাথে আস্তে আস্তে যোগাযোগ বন্ধ করে দাও। বাঁকি রইল ৩ বছর পর! তুমি গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করার সাথে সাথে স্কালারসীপে যে দেশে যেতে চাও সেখানে যেও। আমি তোমাকে সাহার্য্য করবো। আগে তোমার একটা মজবুত অবস্থান তৈরি কর তিতির।  
তোমার নিজের শরীরে একটা সমস্যা অলরেডি আল্লাহ্ তৈরি করে দিছে। আজ হয়ত মাহাদ বলবে ওর বাচ্চার প্রয়োজন নেই কিন্তু পরিবারের চাপে বা মানুষের কথায় ওর মন বদলাতে এক সেকেন্ড ও লাগবেনা। তাছাড়া ওর এতবড় বিজনেস। সেটাকে ধরে রাখার জন্য তো একটা নিজের বংশধর লাগবে। ওর দাদীতো তোমাকে বার বার বাজা বলে গালি দিছে। এটাই একমাত্র উত্তম সুযোগ তোমার জন্য। এত রেজাল্ট ভালো কর যাতে তোমাকে দেখে আজ যারা অবহেলা করছে তারা তোমার প্রসংসায় মেতে ওঠে।"

আসমা সব কথা দাড়িয়ে শুনলো। হিনু আপু, মাহাদ ভাইজানকে আর দশজন ছেলের মধ্য গুলিয়ে ফেলেন না। আজও ভালো মানুষ আছে বলে দুনিয়া ধংস হয় নাই। আল্লাহ্ চাইলে এই দু'জন আবার এক হবে। আসমা কথাগুলো মনে মনে বলে ওখান থেকে চলে গেল।

♦♦♦♦

আজ ১১ দিন হল মাহাদের সাথে সমস্ত যোগাযোগ শেষ। এমনকি মাহাদ নিজেই সম্পর্কের আধা সমাপ্তি ঘটিয়ে চলে গেছে। 

তিতির অত্যন্ত মানুষিক ভাবে ভেঙ্গে গেছে। গোলাব আর আসমা তিতিরের কাছ ছাড়া হয়না। 
গভীর রাত, পাশে আসমা গভীর ঘুমে মগ্ন। আর গোলাব তিতিরের কাছে চুপটি হয়ে বসে আছে। ঠিকমত না ঘুমানোর জন্য চোখের নিচে কালি জমে গিয়ে ফর্সা চেহারায় বেমানান হয়ে দাড়িয়েছে। তিতির আস্তে আস্তে বেড থেকে উঠে গিয়ে ব্যালকুনিতে দাড়াল। আকাশের পূর্নিমার চাঁদের দিকে এক নজরে চেয়ে অঝোরে অশ্রু ফেলছে তিতির। বাবাকে ফোন দিয়েছিল, কিন্তু বাবা.....! সে তো থেকেও নেই। কল রিসিভ হয়নি।
আজ তিতিরের মাকে ওর বড্ড দরকার। কান্না করার জন্য তার মায়ের কোল দরকার। রাতে ঘুমানোর জন্য যে তার মায়ের ছোয়া দরকার। কিন্তু মা......! সে তো এক অকল্পনীয় চাওয়া।

তিতিরের এই শূন্যতা গোলাব এসে পূর্ন করে। গোলাব দু'পা রেলিং এর উপর তুলে দিয়ে আকাশের পানে চেয়ে থাকে। তিতির গোলাবকে নিয়ে ফ্লোরে বসে পড়ল। চোখের পানি মুছে বলল," গোলাব তুই কেন মন খারাপ করে আছিস? তোরও কি আমার মত মা নেই! তুই চিন্তা করিসনা গোলাব, আমিতো তোর জন্য আছি। তোর বাবা আছে।"

গোলাব তিতিরের কাঁধে ওর মাথাটা রেখে চুপটি করে গড়গড় করতে লাগল। তিতির খানিকটা অবাক হয়ে গেল। কারন গোলাব মাহাদের কাছে গেলেই এমন শব্দ করতো। তারমানে আশেপাশে মাহাদ আছে? তিতির চট করে উঠে যতদুর চোখ যায় ততদুর মাহাদকে খুঁজেই চলল। কিন্তু মাহাদকে আর পেলনা। 

♦♦♦♦

মাহাদের চেনা রাস্তাও অচেনা লাগছে। মাহাদ কিছুক্ষন আগে বাসায় ফিরেছে। সুইমিং পুলে দু'পা ডুবিয়ে একের পর এক সিগারেট শেষ করছে। এই খানে ও আর তিতির বসে কত গল্প করেছে। আজ মাহাদ আছে কিন্তু তিতির নেই। চোখ ভিষন জ্বলছে। ছোটবেলায় অনেক কেঁদেছে কিন্তু এখন কাঁদতে গেলে লজ্জা করে। কিন্তু বুকের ভিতর যে আগুন জ্বলছে তাকে নেভানোর জন্য তো এই চোখের পানিই প্রয়োজন। দাদী বা মাকে কিছু বলেনি মাহাদ। তারা তাদের কাজ করেছে সেখানে মাহাদ আর কি বলবে?

পানি থেকে পা তুলে মাহাদ উঠে বাসার ভিতরে চলে গেল।

পরের দিন,

মাহাদ ওর বাবাকে বললো, মাঝে মাঝে যেন তিতিরের সাথে দেখা করে আসে। কারন ও যে ভাবে ইদানিং চলাফিরা করছে তাতে ওর মানুৃষিক রোগী হতে বেশিদিন লাগবেনা।
এর মধ্য ওর মা আর দাদীকে তিতিরের বিষয়ে কথা বলেছে। কিন্তু এতে হিতে বিপরীত হয়ে গেছে। লাবীবা সরাসরি বলে দিছে,ঐ মেয়ে যদি এক দরজা দিয়ে বাসায় ঢোকে তাহলে অন্য দরজা দিয়ে সে বাসা থেকে বের হয়ে যাবে। এই বাসায় হয় তিতির থাকবে না হয় লাবীবা থাকবে। দু'জনে কখনো একসাথে থাকবেনা। 

মাঝে মধ্য কামরান সাহেব হাজার ব্যস্ততার ভিতরও তিতিরের সাথে কিছু সময় কাটিয়ে যায়। তাদের ভিতর খুব ভালো একটা সম্পর্ক গড়ে উঠছে। এভাবেই দিন, মাস, বছর কেটে যায়। তিতির সব কিছু মন থেকে ঝেড়ে ফেলেছে। মাঝে মাঝে মাহাদ কল দিলেও এই বাহানা সেই বাহানা দিয়ে কল কেটে দেয়। ধরলে এক প্রকার তাদের ভিতর কোন সম্পর্কই নেই।

এর মাঝে হিনু ওর বরের কাছে অষ্টেলিয়ায় পাড়ি দেয়। হিনু যাওয়ার আগের দিন মাহাদের সাথে মিট করে গেছে। মাহাদকে অনেক উপদেশ দিয়েছে আর মাহাদ চুপচাপ শুনে গেছে। মাহাদের মনে কি চলছে সেটা মাহাদই শুধু জানে।

এর ভিতর কামরান সাহেব সম্পূর্ন রাজনীতির মধ্য ঢুকে পড়ে। সাথে রেজওয়ান পুরো দমে মামাকে হেল্প করার জন্য রাজনিতিতে প্রবেশ করে। মাহাদ তার বিজনেস নিয়েও কিছুটা ব্যস্ত হয়ে পড়লো। 

♦♦♦♦

তিন বছর পরে,

তিতির ওর ৪র্থ বৎসরের ভাইভা পরীক্ষা দিয়ে বাসায় ফিরেছে। আরও অনেক কাজ ছিল সেগুলো শেষ করতে সন্ধ্যা লেগে যায়। বাসায় এসে হিনুকে ফোন দিয়ে সব কিছু জানিয়েছে। পরবর্তীতে কি করতে হবে তার একটা পরিকল্পনা করলো দু'জনেই। আল্লাহ্ আল্লাহ্ করে সব সমস্যার সমাধান হলেই বাঁচে তিতির। মাহাদ সম্পূর্ন তিতিরের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

আসমা ইদানিং হিনুর মায়ের সাথে থাকে। ওনার একা থাকতে সমস্যা হয় তাই আসমা তার কাছে থাকে এবং সব কাজে হেল্প করে। 

তিতির সম্পূর্ন দুঃশ্চিন্তা মুক্ত হয়ে গোলাবকে নিয়ে রাত ১০ টার মধ্য ঘুমাতে গেল। এতদিনের পরিশ্রম থেকে মুক্তি পেয়েছে তাই বেডে শুতেই ঘুম চলে এল।

হঠাৎই কলের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল। ফোনের স্কীনে মাহাদের নামটা ভেসে উঠলো। মাহাদের নাম্বার দেখে ভয়ে তিতিরের বুকটা কেঁপে উঠল। কয়েকবার কল দিল মাহাদ তবুও কল রিসিভ করলোনা তিতির। শেষে এমন কিছু কথা বলে মাহাদ তিতিরকে মাসেজ করলো, অনেকটা বাধ্য হয়েই তিতির ঐ রাতে বাসা থেকে বের হয়ে গেল।

তিতির গন্তব্যস্থলে পৌছে ট্যাক্সির ভাড়া মিটিয়ে নেমে পড়লো। শীতকাল আসতে চলেছে তাই হালকা কুয়াশায় চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। তার ভিতর আবার গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। দুরে অন্ধকারে দেখা যাচ্ছে কেউ একজন মাটিতে বসে আছে। 
তিতির ছাতাটা নিয়ে সেদিকে এগিয়ে গেল। হ্যাঁ সত্যিই,  মাহাদ কাঁদার উপর বসে আছে। পুরো ব্লেজারটা কাঁদায় মেখে গেছে। তিতির কাঁপা কণ্ঠে বলল," আপনি এখানে এভাবে বসে আছেন কেন?"

অনেক লম্বা সময় পর তিতিরের কন্ঠ শুনলো মাহাদ। মাহাদ বসে থেকেই বলল," তুমি আরো অনেক সুন্দর হয়ে গেছ তিতির? মাঝে মাঝেই রাতে তোমায় ব্যালকুনিতে দাড়িয়ে থাকতে দেখি। মনে হয় চাঁদটা আকাশ থেকে নেমে এসেছে। তুমি কি আমায় ভুলে গেছ তিতির?"

আপনি ড্রিংক করেছেন মাহাদ? আপনি এতবড় নোংরা কাজ কিভাবে করলেন? খারাপ কাজ করে এসে আবার আমার সামনে দাড়িয়েছেন!

মাহাদ টলতে টলতে উঠে তিতিরের পাশে দাড়াল। নিজের গা থেকে কাঁদাগুলো নিয়ে তিতিরের গালে মেখে দিয়ে বলল," তুমি বড্ড নিষ্ঠুর তিতির। এখন আমার মনে হয় তোমার সাথে দেখা হওয়াটায় সবচেয়ে বড় ভুল ছিল আমার। এই জন্য বড় বড় মুনিষীরা বলে গেছেন মেয়েদের পিছে ঘুরতে নেই। দিন  শেষে এরা তোমাকে আঘাত করবেই।
তুমি এখন বাসায় চলে যাও। আমাকে নিয়ে তোমায় আর ভাবতে হবেনা।"

দেখি সোজা হয়ে দাড়ান বলে তিতির মাহাদের ব্লেজারটা খুলে দিল। গাড়ীর ভিতর থেকে পানির বোতল এনে মাহাদের হাত, শার্টের কিছু জায়গা ধুয়ে দিল। তারপর ওড়নাটা ভিজিয়ে মাহাদের মুখ চোখের কাঁদাগুলো ভালো করে মুছল। বৃষ্টির দাপট যেন বেড়েই গেল। প্রচন্ড শীত করছে তিতিরের।

তিতির, তুমি কি এখনও আমার বউ আছো? আমাকে কি তুমি এখনো ভালোবাসো?"

অনেক ভালোবাসি, কথাটি মনে মনে বলে তিতির মাহাদকে টেনে নিয়ে গাড়িতে বসাল। তারপর সে বসে গাড়ী স্টার্ট দিল। 

রাস্তার মধ্য মাহাদ নানা আবোল- তাবোল কথা বলতে লাগলো। কোন খারাপ লাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করতে এতটুকু কমতি রাখেনি। তিতির ড্রাইভ করছে আর চুপচাপ শুনে যাচ্ছে। এতদিনের ক্ষোভ মিটাচ্ছে মাহাদ। তিতির মাহাদকে বাসায় নিয়ে আসে। ব্যাগ আর ছাতাটা ডাইনিং টেবিলের উপর ছুড়ে মেরে মাহাদকে নিয়ে রুমে চলে গেল। ওয়াসরুমে দাড় করিয়ে ঝর্না ছেড়ে দিয়ে শার্ট খুলে দিতেই মাহাদ বলল," Titir  I Love♥ you...."

"হুম"

সবকিছু খুলে দিয়ে টাওয়াল নিতে বের হতেই মাহাদ তিতিরকে এক টানে ওর কাছে এনে বলল," Titir i relly love♥ you."

" আমি জানিতো আপনি আমাকে অনেক ভালোবাসেন। আমি টাওয়ালটা নিয়ে আসি!"

" নাহ্ তুমি যাবেনা, আমার মনে হয় তুমি একটু চোখের আড়াল হলে আমার কাছ থেকে সারাজিবনের জন্য  চলে যাবে। আমার চোখের সামনে থাকো।"

এই যে দরজা খুলে যাচ্ছি। আমি পালিয়ে গেলে আবার আপনি ধরে ফেলেন। তিতির রুমে এসে দুটা টাওয়াল নিয়ে এল। মাহাদ তখন দরজার সামনে দাড়িয়ে তিতিরের জন্য অপেক্ষা করছে। 

আপনি এখানে কেন দাড়িয়ে আছেন! আমাকে ভিতরে ঢুকতে দিন! মাহাদ আবার ঝর্নার নিচে দাড়াল। তারপর গোসল করে বাহিরে চলে আসল। খানিক পর তিতিরও বের হয়ে যা দেখলো এতে ওর চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। মাহাদ সোফায় পায়ের উপর পা তুলে ফোনে কার সাথে যেন কথা বলছে। এটা কি হল? ও আমার সাথে এতক্ষন ধরে এত নিখুত অভিনয় করে গেল?
মাহাদ........?

মাহাদ কলটা কেটে দিয়ে ফোনটা দুরে রাখল। তারপর কঠিন চোখে তিতিরের দিকে তাকিয়ে বলল," সমস্যা কি?"

আপনি আমার সাথে এতক্ষন ধরে অভিনয় করছেন? আপনি এত রাত্রে আমাকে বাহিরে নিয়ে গেলেন কেন? আমি মেয়ে মানুষ তা সত্তেও কেন ডাকলেন আমায় এত রাতে!  ছিহ্ঃ বলে মুখ ঘুরালো তিতির।

Just shut up, don't talk this Rubies. তুই আমাকে নিয়ে খেলবি আর আমি তোকে এমনি এমনি ছেড়ে দিব? আমাকে রেখে দেশের বাহিরে যাওয়ার প্লান করলি কোন সাহসে? মাহাদ চট করে উঠেই বলল," Open hand, open offer. চ্যালেঞ্জ করছি, মাহাদের সীমানা পেরিয়ে দেখা।"

আমার আপনাকে ভালো লাগেনা। অসহ্য লাগে আপনাকে। কেন আপনি ছোট্ট কথাটা বুঝতে পারেননা। আমি এই সম্পর্ক থেকে মুক্তি চাই। আমাকে আমার মত করে বাঁচতে দিন।  আপনি কেন এতবড় কথা আমার কাছ থেকে লুকিয়েছেন? আমি তো সন্তান দিতে অক্ষম তাই না?
আমি যদি আগে জানতাম তাহলে কখনো আপনাকে বিয়ে করতাম না। আপনার সাথে না থাকাটায় আমাদের জন্য ভালো হবে।

দার্শনিক হয়ে গেছিস তুই, তাই আমাকে উপদেশ দিতে এসেছিস? হু...তিতির দ্যা ফিলোসফার? হেই ওয়েট,ওয়েট বলে মাহাদ কিছুক্ষন চিন্তা করল। অবশেষে নিউটনের গতিসূত্র, আর্কিমিডিসের প্লবতার সূত্র এবং আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ব সহ ম্যালথাসের জনসংখ্যাতত্ত্ব প্রয়োগ করে বলল," বাচ্চা হবেনা এটার কথাটা বাতাসি তোকে বলেছে তাইনা?"

.....................?

মাহাদ, মাহাদ, মাহাদ এই ছোট্ট কথাটা তোর মাথায় এতদিনে কেন এলোনা বলেই সোজা তিতিরের সামনে গিয়ে ওকে একটা ঠাশশশ্ করে থাপ্পড় মেরে বলল," এই সমস্যার কথা তোকে অনেক আগেই আমাকে বলা উচিত ছিল। নাহ্ তুই তো বলবিনা। কারন তুই বড় হয়ে গেছিস আর নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নিতে শিখে গেছিস।"

তিতির গালে হাত দিয়ে বলল," আমার যা বলার আমি তা বলে দিয়েছি। আপনি আমাকে যত দ্রুত ছেড়ে দিবেন ততই আমি শান্তি পাব। প্লিজ আপনি আমাকে ছেড়ে দেন।"

এই তোর বলা শেষ হয়ে গেছে? এবার তাহলে আমি শুরু করি?
আমি তোর আপনজন না হিনু তোর আপন তাই ওর উপদেশ এতদিন ধরে শুনে এসেছিস? বলিনি তোকে! আমি তোকে নিদিষ্ট সময় দিয়েছি তার মধ্য তুই নিজেকে শুধরিয়ে নিবি? 
এই বাতাসি আমার লাইফটাই তছনছ করে দিছে। ওর তো ব্যবস্থা নিবই সাথে তোরেও শায়েস্তা করে ছাড়ব। পাগলামি শুরু করেছিস? 

আপনি কি ধরনের মানুষ বলেন তো! আমার কথা আপনি কেন বুঝতে পারেন না! আগে আপনার প্রতি আবেগ ছিল কিন্তু এখন সেই মোহ কেটে গেছে। আমি সেই আগের মত ছোট তিতির নেই। যে আপনি যা বোঝাবেন তাই বুঝব। আমি মুক্তি চাই। আমি ডির্ভোস পেপার আপনাকে পাঠিয়ে দিব। আপনি এখুনি এখান থেকে চলে যান বলে দরজার দিকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল তিতির।

ডির্ভোসের কথা তুলতেই মাহাদ ওর সমস্ত শক্তি দিয়ে তিতিরকে আবার একটা থাপ্পড় বসাল। সাথে সাথে তিতির ফ্লোরে ধপ করে পড়ে গেল। মাহাদ ওকে ঐ অবস্থায় ফ্লোর থেকে তুলে ওর সামনে দাড় করিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল," তুই সবসময় আমাকে সাইলেন্ট মাহাদ হিসেবে দেখেছিস। কিন্তু এবার তোকে আমার ভাইলেন্ট রুপ দেখাব।"

মাহাদের এমন ব্যবহারে তিতির প্রচন্ড রেগে গিয়ে গায়ের শক্তি দিয়ে মাহাদকে ধাক্কা দিল কিন্তু মাহাদকে ওর কাছ থেকে একপাও নড়াতে পাড়লনা। তিতির বুঝতে পারল আজ সে শেষ। মাহাদ ওকে কিছুতেই ছেড়ে দিবেনা।

মাহাদ তিতিরের দু'হাত পিছনে নিয়ে গিয়ে শক্ত করে চেঁপে ধরল। এত ছটপট করছিস কেন?
" তুই বুনো ওল হলে, আমি বাঘা তেতুল
  তুই হাফ পাগল হলে, আমি ফুল পাগল
  চল তোকে আজ আমার আক্রোশ দেখাব।"

আমাকে ছেড়ে দিন বলছি! ভালো হচ্ছেনা কিন্তু। আপনি কিন্তু বিশাল ভুল করছেন। এর মূল্য চুকাতে আপনাকে অনেক পস্তাতে হবে।

ভুল! সঠিক করতে গিয়ে অনেক ভুল করেছি। এবার ভূল কাজ করে সঠিক করবো। তোকে বলিনি! যেদিন তোকে ধবর বিদ্ধস্ত করে ছাড়বো। এখন তোকে ছেড়ে দিব সেটাতো প্রশ্নই ওঠেনা। মাহাদ চট করে তিতিরকে তুলেই বিছানায় ফেলে দিল। 
ডির্ভোস চাস আমার কাছ থেকে তাইনা! আর একবার বল! ডির্ভোস দেওয়ার জন্য তোরে বিয়ে করেছি? তোর কাছ থেকে বাচ্চা কে চেয়েছে? আমাকে তুই এখনো চিনতে পারিসনি। আজ তোর হাল এমন করবো যে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তোর এই রাতের কথা মনে থাকবে বলে মাহাদ তিতিরের উপর ওর নিজের কতৃত্ত্ব ফলাতে লাগলো। 

তিতিরের এতদিনের ভয়, ক্ষোভ, অভিমান সবকিছু দুমড়ে-মুচড়ে শেষ করে দিল মাহাদ। ওর ভালোবাসায় আবদ্ধ করে ফেলল তিতিরকে। তোর ভালবাসার উপর শুধু আমার হক রয়েছে। তোর মন, শরীর সব কিছু আমার জন্য। কেন তুই বুঝিসনা আমার তোকেই চাই। কেন আমাকে  এত জোড় করতে হল বলে বিশ্রী কয়েকটা কথা বলেই মাহদ তিতিরের সাথে মিলিত হল। প্রায় ৭ বছরের মাঝামাঝি সময়ে এসে তাদের সেই সুন্দর সময় পূর্ন হয়েই গেল। 

তিতির নিজেই সব কিছু ভূলে মাহাদের ভালোবাসার কাছে হেরে গেল। নিজেকে সম্পূর্ন মাহাদের কাছে সপে দিল। কতক্ষন নিজের সবচেয়ে প্রিয় মানুষের কাছ থেকে দুরে থাকবে। ওর নিজেরও মাহাদকে এভাবেই সারাজিবন নিজের করে চায়। তিতির এমন পরিস্থিতে নিজের অজান্তেই বলে ফেলল," I Love you Mahad. আমার খুব কষ্ট হয়েছে আপনাকে ছেড়ে থাকতে। আমি আর পারবোনা এভাবে কষ্টে থাকতে। আমাকে ছেড়ে যাবেনা প্লিজ।"

মাহাদ সাথে সাথে মুচকি হেঁসে,,,  I Love you2 আমার বৌ♥। তুমি আমাকে যতটা চাও তার থেকেও অনেক বেশি আমি তোমাকে চাই বলে তিতিরের শরীরে তার ঠোটের লাভ ব্রাইটের চিহ্ন আঁকাতে ব্যস্ত হয়ে গেল মাহাদ। পবিত্র চাওয়া গুলো দেরিতে হলেও ইনশাল্লাহ্ পূর্ন হবে।
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।