ময়মনসিংহে পৌঁছাতে রাত হয়ে যায় আমাদের। বাড়ির ভিতর প্রবেশ করতেই! আচমকা আমাকে কেউ ঠাস করে চড় বসিয়ে দিল! সামনে তাকিয়ে দেখি ছোট মামি দাঁড়িয়ে আছেন। রাগে ফুসচ্ছেন। আমি অবাক চোখে তাকিয়ে আছি।ছোট মামি আমাকে মারার জন্য আবার হাত তুলতেই কোথা থেকে ইউসুফ ভাই এসে হাত ধরে ফললেন তাঁর। শক্ত গলায় বললেন,,
--"আম্মু ওকে মারচ্ছো কেন?"
তখন ছোট মামী তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন। আর রাগে কটমট করতে করতে বললেন,,
--" কেন মারেছি মানে? কেন মারবো না সেটা বল! ওর জন্য আজ আমার ছেলেকে হারাতে বসেছিলাম আমি! কোল খালি হয়ে যেতো আমার!ওর জন্য আমার সংসারে আগুন জ্বলছে!ওকে তো আমি...!"
বলেই ছোট মামি তেড়ে এসে আমার চুলের মুঠি টেনে ধরলেন! আমি ব্যথায় আর্তনাদ করে উঠি! তাঁর এহেন কাজে হতভম্ব উপস্থিত সবাই! তিনি এমন কিছু করবেন সবার ভাবনার বাহিরে ছিল। ইউসুফ তৎক্ষণাৎ
এসে মামির হাত থেকে আমাকে ছুটিয়ে চেঁচিয়ে বলল,,
--" আম্মু কি শুরু করছো তুমি! এসব কেমন ব্যবহার তোমার? ওর এখানে কোন দোষ নেই! কেন বার বার দোষী সাব্যস্ত করতে চাইছ?? "
--"দোষী সাব্যস্ত করতে চাইছি না। এই মেয়ে, এই মেয়ে দোষী। বুঝলী তুই দোষী তোর জন্যই সব হচ্ছে! তুই কেন গেলি সাজেক কেন? মানা করি নি আমি? কেন গেলি!আজ তুই না যেতি আমার ছেলে না পাহাড় থেকে পড়ত! যদি কিছু হয়ে যেতো? তখন? তখন কোথায় পেতাম আমার সন্তান? কোথায় পেতাম? বল?
কথা গুলো চেঁচিয়ে বলছেন মামি আর হাপাচ্ছেন। আমি ইউসুফ ভাইয়ার পিছনে উনার শার্ট মুঠ করে পিঠের সাথে লেপ্টে দাঁড়িয়ে চোখের জ্বল ফেলছি আর উঁকি দিয়ে মামির ভয়ংকর রূপ দেখছি!মামিকে দেখে ভয় হচ্ছে খুব!সাথে রাগে, দুঃখে, অপমানে মরে যেতে ইচ্ছে করছে!আমার জন্য যত অশান্তি শুরু হয়েছে এ পরিবারে! আমার এখনে না থাকাই উত্তম!সত্যি তো বলছেন তিনি? আমার জন্যই ইউসুফ পাহাড় থেকে পড়েছেন! না আমি যেতাম, না লিয়া ধাক্কা দিত, আর না আমরা পাহাড় থেকে পড়তাম। আমার ভাবার মাঝে ইউসুফ ভাইয়ার কথা শুনে চমকে গেলাম আমি! উনি ঠান্ডা গলায় বললেন,,
--"আম্মু অনেক বলেছো! আর একটি শব্দ নয়! যা জানো না তা নিয়ে একদম কথা বলো না। পাহাড় থেকে কেউ সেচ্ছায় পড়ে না! ওটা দূর্ঘটনা মাত্র! কিন্তু আমাদেরটা দুর্ঘটনা ছিল না! ছিল পরিকল্পনা। যা তোমার সো কল্ড বোনের সো কল্ড মেয়ে লিয়ার করা প্লান ছিল। সে কুহুকে এক বার না দু দু বার মারার চেষ্টা করছে! সে এখন জেলখানায়। এটেম টু মার্ডার কেস তাকে পুলিশ কাস্টডিতে নেয়া হয়েছে! সো অন্যকে দোষারোপ করার আগে নিজের দিকটা ভাল করে দেখতে হয় আম্মু দেন কথা বলতে হয়!এ বিষয়ে কোনো কথা যেন না শুনি! কুহু ফেলনা না আম্মু আমার হবু বউ! ওর উপর নেক্সটাইম কেউ আঙ্গুল তুললে হাতটাই ভেঙ্গে দেব সে যে কেউই হোক। সো বি কিয়ার ফুল অল।"
বলে আমাকে টেনে ইউসুফ ভাই উপরে নিয়ে যেতে লাগলেন। আমি অবাক চোখে তাকিয়ে দেখচ্ছি তাকে! পিছনে না ফিরেও এটা বুঝতে পারছি আমার মতো পিছনের মানুষ গুলোর একি হাল!ছোট মামি তো রীতিমত শক্ড! আমিও ভাবি নি! এতো ইজিলি তিনি বিয়ের কথা বলে দিবেন সবাই কে!কেন জানি এত খারাপ লাগার মাঝে তার এই কথাটি ভাল লাগচ্ছে মনের মাঝে!
খাটে বসে আছি! আর ফুপিয়ে কাঁদচ্ছি।আর বলছি বার বার,,
--"আমার সত্যি যাওয়া উচিত হয়নি! আমরা ভাগ্যবশত বেচে গেছি!অন্য কিছু হতো পাড়ত! আপনার কিছু হলে মামি কখনো ক্ষমা করতো না আমায় কখনো না।"
ইউসুফ তখন হাটু গেড়ে আমার সামনে মুচকি হেসে আমার চোখের জল মুছে দিয়ে বলল,,
--"বাবুইপাখি যা হয় ভালর জন্য হয়! দেখ এটার জন্য আমি আর তুই আজ কতো কাছে চলে এসেছি! কতটা ভাল সময় কাঁটিয়েছি! কতো স্মৃতি তৈরি করেছি! "
ইউসুফের কথায় তার দিক ছল ছল চোখে তাকাতেই তিনি আমার ডান হাতটি তার দু হাতের ভাজে নিয়ে বলল,,
--"বাবুইপাখি প্যানিক হোস না সব ঠিক হবে। আমি আছি তোর সাথে! আম্মু রেগে আছেন বিধায় এমন করছেন! তুইতো জানিস তোর ছোট মামি তোকে কতটা আদর করে! একদম মেয়ের মতো!"
ইউসুফ ভাইয়ার কথায় মনে মনে হাসলাম আমি! তাচ্ছিল্যের হাসি! মামি আমাকে মেয়ে ভাবেন ঠিক। কারণ তিনি চায় না ইউসুফ ভাই, আমি তার পুত্র বধূ হই!আর মানা তো দূর থাক।
____________________________________________
সাজেক থেকে আসার পর সময় কেঁটে যাচ্ছে স্রোতের বেগে। দেখতে দেখতে চার মাস কেঁটে গেছে! এ চার মাসে অনেক কিছুই হয়েছে! কিছু ভাল কিছু মন্দ। আমার এইচ. এস. সি এক্সাম শুরু হয়েছে গত মাসেই! আর দুটো বাকি! এদিকে ইউসুফ ভাইয়ার মাথায় ভর করেছে নেতা হবার ভুত। উনি এসবে ব্যস্ত ইলেকশন নিয়ে! ছোট মামা তাকে প্রপারলি সাপোর্ট করছে। ময়মনসিংহের মেয়েরাতো রীতিমত ইউসুফ ভাইকে ক্রাশ বলে এক পায় ভোট দিতে রাজি! আমিও দিতাম বাট হলো না। কারণ আমার এন আইডি নেই। হুহ।মাঝে মাঝে হিংসে হয় তার উপর এতটা সুন্দর কে হতে বলেছে তাকে! মেয়েরা কিভাবে হুমরী খেয়ে পড়ে তাঁর উফ! অসহ্য! ইউসুফ ভাই এতটা বিজি থাকেন যে দু/ তিন দিন তার দেখাই পাই না।মন তখন বন্ধ খাচার ভিতর থাকা পাখির মতো আনচান আনচান করে!
প্রথম প্রথম লোকটির উপর রাগ হতো প্রচুর! কি দরকার এই নেতা খেতার কাজ করার? কিন্তু যখন তাকে অসহায় মানুষকে সাহায্য করতে দেখি তখন গর্ব হয়। বুক ফুলিয়ে বলতে পারি মানুষটি যে আমার! এক মাত্র অামার।
এর মাঝে ছোট মামির কড়া কথার শেষ ছিল না।সেদিনের পর থেকে তিনি আমাকে সকলের অগোচরে গালাগাল করেন! বিশ্রী ভাষায় কথা বলেন। যা সহ্য না করতে না পেরে ঘরে বসে কাঁদি।মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে ছুটে পালিয়ে যাই! কোনো দূর দেশে কিন্তু পারি না! কারণ একটি! ইউসুফ ভাইয়ার জন্য। এই ব্যক্তিটির জন্য সব হজম করতে রাজি আমি! সব! নিজেকে নিঃস্ব করতেও হয়তো একবার ভাববো না আমি! একবারো না।
____________________________________________
রাত বাজে ---১ঃ৩০ মিনিট! বইয়ে মুখ গুঁজে পড়চ্ছি! কাল এক্সাম আছে। কিন্তু মনযোগ দিতে পাড়ছি না! কারণ আজ কদিন যাবত আমার নেতা সাহেবের দেখা পাচ্ছিনা। উনাকে কল করলেই "এখন ব্যস্ত পরে কথা বলছি " বলে ফোন কেঁটে দেয়! তখন আমার ছোট মনে হু হু করে উঠে। রাগে দুঃখে তাকে আর কল না দিয়ে ফোন বন্ধ করে বসে থাকি! আমার থেকে এখন তার কাজটাই যে বেশী! আমি কে?যেমনটি আজও করেছেন উনি!আমি আবার পড়তে ট্রাই করলাম।তখনি খট খট করে নক করলো দরজায়! ঘড়িতে তখন---২ঃ০০ টা। এ সময় কে এসেছে তা বুঝতে একটুও সময় লাগিনি আমার! লজ্জায় লাল-নীল হতে, হতে দরজা খুলতেই দেখতে পাই আমার নেতা সাহেবকে! সাদা পাঞ্জাবি, চোখে চশমা, উসখো-খুসকো চুল আর ক্লান্তি মাখা মুখ খানী দেখে ধক করে উঠলো। মনের মাঝে কিছুক্ষণ আগে জমে থাকা রাগটুকু ছু মন্ত্রর হয়ে গেছে।কতটা ক্লান্ত তিনি! আমাকে দেখে হাসলেন তিনি! ক্লান্তি মাখা হাসি! তার এ হাসিতে কান্না পাচ্ছে আমার! বলতে ইচ্ছে করছে,,
--"কি দরকার ছিল আপনার এসব কাজে জড়াতে? "
কিন্তু মুখ ফুঁটে কিচ্ছু বলতে পাড়লাম না। কিছুই না।তিনি ভিতরে ঢুকে আমাকে খাটের উপর বসিয়ে আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লেন। এটা নতুন কিছু না! বিগত কদিন যাবত এসবি চলছে! তিনি ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে ফিরে আমার রুমে এসে আমার কোলে মাথা দিয়ে পেটে মুখ গুঁজে ঘুমিয়ে যান।তার এহেন কাজে মনের মাঝে দোলা দেয় অনেক অনুভূতির। তার এই ক্লান্ত মাখা মুখটি দেখে নাও করতে ইচ্ছে হয় না। বরং ভাল লাগে খুব ভাল।আমার ভানবার মাঝে ইউসুফ ভাইয়া বলে উঠেন,,
--"বাবুইপাখি! সত্যি খুব ব্যস্ত ছিলাম রে, রাগ করিস না প্লীজ। তুই না বুঝলে আমাকে কে বুঝবে বল?"
তাঁর ক্লান্ত মাখা কন্ঠে বলা কথা শুনে চোখ থেকে দু ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো।চারিদিক আধার বলে দেখতে পেল না ইউসুফ ভাই।তখন নিজেকে সামলে হেসে বললাম,,
--" না নেতা সাহেব রেগে নেই আমি! আপনি ঘুমুন।আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি!"
ইউসুফ ভাইয়ার আর সাড়া পাওয়া গেল না। শুধু অনুভব করলাম আমার পেটে এসে পড়া তাঁর ভারী নিঃশ্বাস। তিনি ঘুমিয়ে গেছেন। গভীর ঘুমে! আমি তার মাথায় হাত বুলাতে লাগলাম। আর তাকিয়ে রইলাম তার মুখখানার দিক। বাহির থেকে আসা আলোয় আমার নেতা সাহেবের মুখখানা আরো ভয়াবহ সুন্দর লাগচ্ছে! নিজের অজান্তেই এই ব্যক্তিটির মাথায় চুমু এঁকে দিলাম আমি! গভীর চুমু! এতে নিজেই লজ্জা পেতে লাগলাম নিজের কাজে! ভাগ্যিস তিনি জেগে নেই। নয়তো লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করতো!
—————
দিনক্ষণ বদলাচ্ছি। সাথে বদলাচ্ছে ইউসুফের স্বভাব।আর বাড়চ্ছে পাগলামি। এই তো সেদিন আমার লাষ্ট পরীক্ষা ছিল। ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে পরীক্ষার হল থেকে বের হতেই আমি বিস্মিত হলাম। সামনে অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিটি কে দেখে। উনার কাছে যেতেই উনি হুট করে আমার হাতটি ধরে বলতে লাগেন,,
--" চল বাবুইপাখি! এখানে আর ভাল লাগচ্ছে না!"
--" কই যাবো? নেতা সাহেব?"
অবাক হয়ে বলাম আমি।ইউসুফ বললেন,,
--"অনেক দূরে! এতটা দূরে যে এই শহরের কলরব শুন্তে না হয়!না পারবে ছুঁতে শহরের ধূলো।"
তার কথায় হেসে দিলাম। বললাম,,
--" নেতাগিরি ছেড়ে কবি হয়ে যাচ্ছেন?"
ইউসুফ হাসলো!বললো,,
--"তোর জন্য সব হতে পাড়ি আমি!চল এবার?"
--" কিন্তু কই!"
জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালাম তার দিকে। তিনি আমার মাথায় টোকা দিয়ে বললেন,,
--"কক্সবাজার "
--"সত্যি!"
আহ্লাদে আপ্লুত হয়ে তার এক হাতে জড়িয়ে ধরে বললাম।
তিনি হেসে ফেললেন। আর বললেন,,
--"চল"
--"কিন্তু আমিতো কলেজ ড্রেসে! কাপড় ও আনিনি!"
মন খারাপ হয়ে গেল আমার! তা দেখে ইউসুফ ভাই আবার হেসে ফেললেন। এত হাসচ্ছে কেন এই লোকটা। উফ! কত মাতাল করা সেই হাসি! ইউসুফ এবার আমার নাক টিপে বললেন,,
--"ব্যাকআপ প্ল্যান আছে! চল।"
আমি ইউসুফের আঙ্গুলের হাতে ভাজে হাত রেখে হেঁটে গাড়িতে এসে বসলাম। গাড়ি চলছে। ইউসুফ ড্রাইভ করছে তার পাশের সিটে আমি বসে! সে আমার এক হাত তার বুকে গুঁজে অন্য হাত ড্রাইভ করছেন! মাঝে মাঝে চুমু এঁকে দিচ্ছেন হাতে। এতে লজ্জায় লাল হচ্ছি আমি! আবার একা পাবো কটা দিন ইউসুফকে। বিগতো ৬ টা মাস তার সাথে ভাল ভাবে কথাটি হয়ে উঠে নি! আর আজকে আবার যাচ্ছি সেই ব্যক্তিটির সাথে বহু দূর! ভাবতেই শরীরের চামড়ার ভিতর দিয়ে শিরশির করে উঠচ্ছে। ইউসুফ হাসচ্ছেন প্রাণ খোলা হাসি!কিন্তু বুঝলাম না হঠাৎ ঘুড়তে যাওয়ার প্লেন কেন? জিগ্যেস করলাম,,
--" আচ্ছা! হঠাৎ ঘুড়তে যাওয়ার প্লেন কেন? এমনিতে তো আপনার চান্দ মুখ খানা দর্শন করতে পারি না? আজ এই অধমের উপর এত দয়া কেন?"
ইউসুফ হেসে ফেললো।ক্লান্ত স্বরে বলল,,
--" হাপিয়ে উঠে ছিলামরে বাবুইপাখি! দম বন্ধ হয়ে আসচ্ছিল সব কিছুতে! তার মাঝে তোকেও টাইম দিতে পারাচ্ছি না। সামনে ইলেকশন তখন আরো ব্যস্ত থাকবো! তুই দৌঁড়াবি এডমিশন কোচিং এ। তাই ভাবলাম কদিন বরং গা ঢাকা দি তোরে নিয়ে তো নিয়ে টু মেরে আসি!"
ইউসুফের কথায় ভালোও লাগলো আবার খারাপোও! লোকটি সত্যি ক্লান্ত তার উপর আবার কষ্ট করে ড্রাইভ করে এত দূর যাচ্ছে! যদি কিছু হয়! আর উনার গার্ডরা কই? ড্রাইভার তো নিতেই পারতেন? তাকে বরলাম,,
--" আপনি ড্রাইভার নিলেন না কেন? আর গার্ডরাই কই? ইলেকশনের আগে আগে আপনাকে একা বের হওয়া ঠিক হয়নি! "
গম্ভীর কন্ঠে বললাম! তার দিকে তাকাতেই তার হাসি মুখ দেখতে পেলাম। হেসে হেসে বললেন,,
--" এখনই বউয়ের দায়িত্ব পালন করা শুরু করেছিস?"
আমি রাগান্বিত চোখে পাতাতেই তিনি আবার বললেন,,
--" আরে বাবুপাখি রাগিস কেন? শুন জানি রিস্কি। তাও নিতে চাই আমি! কিছুটা শান্তির জন্য! তোর সাথে সময় কাটানোর জন্য। কিছুটা স্মৃতি তৈরি করবো বলে। আর তুই বল! যখন তোর সাথে রোমান্স করব, তখন গার্ড আর ড্রাইভার থাকলে কেমনে করবো বল?"
ইউসুফের কথায় লজ্জা পেলাম। ঠিক হয়ে বসে অন্য দিকে তাকিয়ে হাসতে লাগলাম। ইউসুফও হাসচ্ছেন। মিটমিট করে। বললেন,,
--" বাবুইপাখি! তোকে লজ্জা পেতে দেখলে খুব আদর করতে ইচ্ছে করে! করবো নাকি?"
আমার এবার লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে! লোকটি এমন কেন? লজ্জা দেয়ার জন্য একটি মুহূর্ত বাদ দেয় না। তিনি হেসে আবার বললেন,,
--" বলছিস না যে?"
আমি মুখ বাকিয়ে বললাম,,
--" আই হ্যাট ইউ!"
ইউসুফ হো হো করে হেসে ফেললো বলল,,
--" লাভ ইউ টু!"
____________________________________________
রাত ----০৮ঃ৩০ বাজে উত্তরার একটি শপিং মল ঢুকলাম আমরা শপিং করতে! ইউসুফ ভাইয়া ামাকে ৪/৫ গাউন আর কিছু টপস, প্লাজো আর জিন্স সাথে মেচিং জুঁতো কিনে দিলেন। এখান থেকে কলেজ ড্রেস পালটে একটি টপস আর প্লাজো পড়ে নিলাম।।তারপর চলে গেলাম জেন্টস জোনে ইউসুফ নিজের জন্য কিছু কিনলেন। কারন তিনিও কোনো কাপড় আনে নি!।সাদা পাঞ্জাবি পড়ে এসেছেন। তিনিও পাল্টে নিলেন।তার চলে গেলাম খাবার খেতে খুব খুদা পেয়েছিল আমার! গপাগপ খাচ্ছি! ইউসুফ ভাই তখন হেসে বললেন,,
--"আস্তে খাও বাবুইপাখি! গলায় আটকে যাবে!কোনো ট্রেন ছুটচ্ছে না আমাদের!"
আমি খাবার চিবুতে চিবুতে বললাম,,
--" যদি আপনাকে কেউ চিনে ফেলে তখন?"
ইউসুফ হেসে ফেললো।বলল,,
--"বাহ্ এত চিন্তা আমার হবু বউয়ের!"
আমি খাবার আবার মুখে পুড়ে বললাম,,
--" খুব!"
--"আচ্ছা আস্তে খা কেউ চিনবে না আমাকে!"
তখনি পিছন মেয়ে কন্ঠে বলল,,
--"আরে ইউসুফ না! ময়মনসিংহের নেতা যে?"
আরেক জন বলল,,
--"হে তাইতো! আল্লাহ আমাদের ক্রাশ। চল চল পিক তুলে আসি!"
বলে এগিয়ে এলো তারা। উসখুস করতে লাগলো ইউসুফ। আর আমি মুখে এক গাদা খাবার নিয়ে গাল ফুলিয়ে আছি! কি সুন্দর ছেছড়া মাইয়া গুলাইন লজ্জা নাই! আমি রাঙ্গানিত চোখে তাদের দিকে তাকিয়ে খাবার চিবিয়ে যাচ্ছি! আর আমার নেতা সাহেব? বাহ্?
মৌমাছি তো মধু দেখলে বন বন করবেই! তাই বলে কি ফুল কাঁটা ফুটাতে পারে না?না কি চায় না? দেখ দেখ কি সুন্দর সেলফি তুলছে বাবাগো বাবা? চিপকু মাইয়া গুলা। মন টা চাইতেসে এক লাথি মেরে মাইয়া দুটাকে ড্রেনের পানিতে ফেলে দেই।আর এই লোক বাহ্ কথা বলব না এই লোকের সাথে হুহ। একদম না। নো নেভার..! হাত আড়াআড়ি করে অন্য দিকে তাকিয়ে রইলাম। একদম তাকাবো না এদের দিক। একদম না।