আমার একটাই যে তুই - পর্ব ১৩ - সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি - ধারাবাহিক গল্প


গাড়ি আবার চলতে শুরু করেছে। আমি গাল ফুলিয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আচ্ছি। ইউসুফ ভ্রুকুটি কুঁচকে আমার দিকে বার বার তাকাচ্ছে! হয়তো বুঝতে ট্রাই করছেন আমি গাল কেন ফুলিয়ে আছি! 

--" কি হয়েছে বাবুইপাখি তুমি গালফুলিয়ে কেন?"

আমি আবাক হলাম লাইক সিরিয়াসলি উনি বুঝতে পারছেন না আমি কি জন্য গাল ফুলিয়েছি? নাকি বুঝেও না বুঝার ধন্দা??আমি কিছু বললাম না। শুধু তার দিকে তাকিয়ে ভেংচি কাটলাম। তিনি এতে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। বলল,,

--"এটা কি ছিল!"

আমি তখনো চুপ! মুখে তালা দিয়ে বসে আছি! এই লোকের সাথে কথা বলবই না আর। ইউসুফ ভাই এবার চুপ রইলেন কিছুক্ষণ তারপর বললেন,,

--" রাগ করেছিস আমার উপর? কি করেছি বলবি তো নাকি? শুধু শুধু বাচ্চাদের মতো গাল ফুলিয়ে বসে থাকিস?"

তার কথায় মেজাজ বিগড়ে গেল আমার। রাগী  চোখে তাকিয়ে বললাম,,

--" হে আমি তো শুধু শুধু গাল ফুলাই। আর আপনি? আপনিত এক নং লুচু!"

আমার কথা শুনে ভাইয়া যেন আকাশ থেকে পড়ল। চোখ গরম করে আমার দিক  তাকিয়ে বলল,,

--" তুই আমার ক্যারেক্টার নিয়ে কথা বলছিস? সাহসতো কম না তোর? আমি কি করেছি লুচুঘিরি?  বল? যখন তখন যেখানে সেখানে কিস করেছি? না টাচ করেছি? নাকি তোর উপর হামলে পড়েছি? কোনটা??"

কি ভয়নাক কথা বার্তা।  তার কথা আঙ্গুনে ঘী ডালার মতো কাজ করলো।রাগে ফুসতে  লাগলাম আমি! বুঝতে পাড়চ্ছি লোকটাও রেগে আঙ্গুন হয়ে গেছে!আমাকে কিছু বলতে না দেখে ধমকে উঠলেন,,

--" বেদ্দপ কথা বলিস না কেন? এখন? বল!"

আমি তখন কটমট করে বললাম,,

--" আপনি তো কিছু করতেই পারেন না? ধোয়া তুলসী পাতা তখন  রেস্টুরেন্টে ছেলে দেখে হামলে তো আমি পড়েছিলাম। হুহ।?"

তিনি কিছুক্ষণ থম মেরে থেকে হো হো করে হেসে দিল।  তার হাসিতে রাগ আরো বাড়তে লাগলো! আমি নিজের রাগ  সামলাতে না পেরে  ভ্যা করে কাঁদতে কাঁদতে বললাম,,

--" আপনি খুব খারাপ নেতা সাহেব।  খুব খারাপ! তখন রেস্টুরেন্টে আমাকে পাত্তাই দিলেন না। এখন আমি রেগে আছি। ভিষন রকম রেগে আছি আর আপনি! হাসচ্ছেন?

বলে হাউ মাউ করে কেঁদে দিলাম।ইউসুফ ভাইতো  রীতিমত হতভম্ব। হয়তটে ভাবতেই পারেনি আমি এতটা কষ্ট পাবো বা কেঁদে দিব। তিনি আমাকে কাছে টেনে নিয়ে গেলেন। আর বললেন,,

--"সরি বাবুইপাখি!  আমি তো যাষ্ট দুষ্টুমি করছিলাম। এতে যে তুমি এতো রেগে যাবে ভাবিনী।  সরি না! আর হবে না। কান্না থামাও এ যে কানে ধরছি দেখ!"

কথা গুলো নরম স্বরে বললেন তিনি!

আমি উনার বুকে মাথা রেখে ফুঁপিয়ে যাচ্ছি। ভিজে যাচ্ছে তার বুক! আমার চোখে পানিতে!কাঁপা স্বরে বললাম,,

--"জ..জানেন নেতা সাহেব! আমি আপনাকে অনেক ভালবাসি! অনেক! অন্য কারো সাথে ভাবতেই বুকটা ফেঁটে যায় আমার! সহ্য করতে পারি না আমি! সত্যি বলছি আপনার সাথে কাউকে ভাবতেই পারি না আমি। খুব ভয় হয় আমার খুব! মনে হয় আপনি হারিয়ে যাবেন।  ভুলে যাবেন আমায়। লাষ্ট পর্যন্ত মিল হবে তো আমাদের।"

সেদিন এগুলো বলে কেঁদে কুটে একাকার হয়ে ছিলাম আমি। কেনই বা হবো না মনের ভিতর একটা ভয় যে ধীরে ধীরে ঘর বাধচ্ছে!হারানোর ভয়, ইউসুফকে না পাওয়ার ভয়!সত্যি কি আমি এতটা ভাগ্যবতী? পাবো তো তাকে আজীবন?  এসব ভেবেই কান্নার বেগ বৃদ্ধি পাচ্ছে আমার।।

ইউসুফ ভাই আমাকে কান্না থামানোর চেষ্টা করছেন। আদুরে সুরে  বলে যাচ্ছেন,,

--" কাঁদিস না বাবুইপাখি!  আমিতো তোরি! শুধু তোর! আর কারো না। এ বুকে তোকে ছাড়া আর কারো ঠাই হবে না কখনো!"

জানি না কেন।  সেদিন ইউসুফ ভাইয়ার কথায় খুব শান্তি পেয়েছিলাম। এতটা শান্তি যে কোনো পোড়া জায়গায় বরফ ঘসলে হয় ঠিক তেমন আরাম পাচ্ছিল মনে।

____________________________________________

মাঝ রাতে গাড়ি এসে থামলো একটি কাঠের দোতালা বাড়ির সামনে! আমি তখন ঘুমে ঢুলুঢুলু। ইউসুফ ভাইয়া ডাকতেই পিট পিট করে চোখ মেলে তাকালাম।তখন কান্না করতে করতে ঘুমিয়েছি বলে এখন চোখ জ্বলছে খুব। 

ইউসুফ ভাইয়া চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলেন। আমি আবাক হয়ে বললাম,,

--"ওমা এটা কার বাসা? না বলে চোরের মত যে ঢুকচ্ছি? ভিতরের লোক তো ডাকাত ভেবে পিটুনি শুরু করবে?"

ইউসুফ ভাই বিরক্তি  নিয়ে বললেন,,

--" এত দু লাইন বেশী কেন বুঝিস তুই! সব সময়? তোর কি ধারণা আমি যার তার বাসায় আসবো? ডাফার!"

আমি ইউসুফ ভাইয়ার দিকে ভ্যাবলার তাকিয়ে আছি।  তা দেখে বাঁকা হেসে বললেন,,

--" এঁটা আমার বাড়ি! কিনেছি কতদিন আগে গাঁধা। এবার ভাবা বাদ দে ঘুম পাচ্ছে আমার।"

বলে গট গট করে উপরে চলে গেলেন উনি! এদিকে আবাক হয়ে দেখে যাচ্ছি আর চার পাশ ঘুরে ঘুরে। কি সুন্দর কাঠের বাড়িতে সব কিছু কাঁঠে জিনিষ দিয়ে পরিপাটি করে সাজানো!তখনি ডাক পড়লো আমি উপরে যেতেই তিনি আমাকে রুম দেখিয়ে দিলেন। আর নিজে চলে গেলেন ফ্রেস হতে!

ফ্রেস বের হতেই ইউসুফ ভাই রুমে ঢুকলেন।  আমাকে দেখে স্থির চাহনিতে চেয়ে রইলেন। আমার কেমন লজ্জা লাগতে লাগলো। সাথে অস্বস্তি কাজ করছে। কারণ আমার সাড়া শরীর হালকা ভেজে। 

ইউসুফ ভাই হয়তো আমার অস্বস্তি বুঝতে পেরে অন্য দিকে তাকালেন বললেন,,

--" নিচে আয় খাবার রেডি!"

বলে চলে গেলেন তিনি! এদিকে লজ্জায় মরে যাই আমি।

____________________________________________

ওসময়ে খাবার খেতে পারি না আমি! শুধু নাড়িয়ে যাচ্ছি! ভয়ে খাবো না বলতে পারচ্ছি না একবার বলেই রাম ধমক খেয়েছি! তাতেই আরো পেট যেন ভরে টাইটুম্বুর। ইউসুফ ভাই দিব্বি খেয়ে যাচ্ছেন! আমার এসব ভাবার মাঝে আবার বললেন তিনি,

--" কি হলো? খাবার খাচ্ছিস না যে?"

আমি কাঁদ কাঁদ মুখ করে বললাম,

--" আর  পারচ্ছি না! সত্যি! "

উনি খাবার মুখে দিতে দিতে বলল,,

--" ঠিক আছে রেখে দে!"

আমি খুশিতে গদ গদ হয়ে যেই না খাবারে হাত পানি ঢেলে হাত ধুতে নিবো! তখনি মারলেন ধমক। সঙ্গে সঙ্গে কেঁপে উঠলাম আমি। উনি বললেন,

--" কি করছিস তুই! খাবার নষ্ট কেন করছিস? জানিস না খাবার নষ্ট করা আমার পছন্দ না!"

বলে উনি আমার খাবার প্লেটা নিয়ে তার প্লেটে ঢেলে নিলেন। আমি তা দেখে বিস্মিত হোলাম। উনি খাবার মুখে দিতেই চেঁচিয়ে বললাম,,

--"নেতা সাহেব! কি করছে এঁটো ছিলো আমার?"

--"তো!"

ভাবলেশহীন উত্তর দিয়ে খেতে লাগলেন মনোযোগ দিলেন!আমি হা হয়ে দেখতে লাগলাম তাকা। আমাকে এভাবে থাকতে দেখে হেসে দিলেন তিনি বললেন,,

--" একে অপরের এঁটো খেলে মহাব্বত বাড়ে।"

তার কথায় ও কাজে চোখ দুটো ছল ছল করে উঠলো আমার। মনে মনে শুধু এটাই বললাম,,

--" এতো ভালবাসা  সইবে তো আমার ভাগ্য!"

____________________________________________

ইউসুফ ভাই  আমাকে টেনে টুনে বাহিরে নিয়ে আসলেন। ঘড়িতে তখন ----৪.৩০।চারিদিক অন্ধারে আচ্ছান্ন তখন।আমার ভয় ভয় লাগচ্ছে কারণ পথে কেউ নেই শুধু আমি আর সে। তার বাড়িটা থেকে সমুদ্র সৈকত সুন্দর দেখা যায়। গভীর রাতে সমুদ্রের গর্জনের আওয়াজো শোনা যায়। উনি এখানে নিয়ে এলেন।প্রথমে আওয়াজটা কিসের ধরতে না পেরে জিগ্যেস করলাম ইউসুফ ভাইকে।

--" এটা কিসের আওয়াজ! "

ইউসুফ ভাই মুচকি হেসে বললেন,,

--" সমুদ্রে গর্জনের আওয়াজ!"

অামি অবাক হয়ে গেলাম। উৎকণ্ঠা ভাবে বললাম,,

--"সত্যি?"

ইউসুফ ভাই মাথা নাড়ালেন,  অর্থাৎ হে!

আমি আবার বললাম,,

--"আমরা এখানে এত রাতে কেন আসলাম ইউসুফ ভাই!আপনার না ঘুম পাচ্ছিল? "

--"পাচ্ছিল তো! কি করবো বল। সমুদ্রের ডাকে এখানে আসতে বাধ্য হলাম।"

--"এটাই কারণ? "

--" না আরেকটি কারণ আছে!"

--" কি?"

--" আরেকটু পর নিজেই জানতে পাড়বি! "

--" আরেকটু পর! তার থেকে বরং আপনি বলে দিন!"

--" তুই স্বচক্ষে দেখে যে আনন্দ পাবি! তা বললে পাবি না!"

আমি মন খারাপ করে গাল ফুলালাম। ইউসুফ তা দেখে হেসে ফেললো। বলল,,

--" চল হাটি! সমুদ্রের বুকে!"

বলে আমার হাতের আঙ্গুলের ভাজে তার হাতের আঙ্গুল গুলো পুরে হাটা ধরলেন পানির মাঝে। পানির মাঝে পা রাখতেই মনের মাঝে আলদা ভালোলাগা কাজ করতে লাগলো। প্রিয় মানুষটির  পায়ের সাথে পায়ের তাল মিলিয়ে হেঁটেই চলছি! ঠিক তখনি ইউসুফ ভাই গুন গুন করে গান ধরলেন,,

--" এ পথ যদি না শেষ হয়,
তবে কেমন হতো তুমি বলতো"

আমি হেসে ফেললাম। সাথে আমার নেতা সাহেবও।

—————

সুখের সময় গুলো যেন অতি দ্রুত ফুরিয়ে যায়। সময়ের বাহ মানে ভাসিয়ে নিয়ে যায় সুখের ভেলা। দিয়ে যায় এক রাশ দুঃখের ছড়া-ছড়ি! এটাই হয়তো নিয়ম।  দিনের পরে যেমন আসে রাত। রাতের পরে আসে আবার দিন। ঠিক তেমনি সুখের পর আসে দুঃখ!তেমনি সেদিনের পর থেকে আমার জীবনে ঢেকে গেল কালো রঙ্গের ছায়ায়। বার বার মনে হয় সে দিন টি যদি শেষ না হতো?

সেদিন ইউসুফ ভাইয়ের হাতটি ধরে এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত হেটে বেড়িয়েছি অনেকক্ষন।হুট করে সেদিন ইউসুফ ভাইয় আমাকে থামিয়ে দিয়ে আমার ডান পাশে ইশরা করলেন তাকাতে। তখন কেবল চারিদিকে ভোরের আলো ফুটচ্ছিল। আমি সেদিকে তাকাতেই অবাক হলাম।  খুশিতে চোখ দুটো চক চক করতে লাগলো আমার।সূর্যি মামা উঁকি দিচ্ছে। নিজের ঘর থেকে বের হয়ে পুরো পৃথিবীকে আলোকিত করে তুলছে! ততখনে আশে পাশে অনেক মানুষ এসে হাজির হয়েছে।কেউ কেউ ছবি তুলছে! আমি মুখে হাত দিয়ে দেখে যাচ্ছি! ইউসুফ ভাই তখন হেসে বললেন,,

--" কেমন লাগলো সারপ্রাইজ? "

আমি উৎকণ্ঠা,,

--" মাশাল্লাহ্!  সাজেকের সেই সূর্য উদয়ের থেকে এটি বেশি সুন্দর। "

 ইউসুফ ভাই হেসে ফেললেন। বললেন,,

--" নাহ্! দুটো দুরকম সুন্দর! একটি সাগরের বুক চিড়ে বের হয় তো আরেকটি পাহাড়ের বুক চিড়ে!"

--"হুম! সত্যি সুন্দর নেতা সাহেব আপানেক অনেক ধন্যবাদ! এত সুন্দর একটা সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য!"

ইউসুফ আবার হাসলেন। আমার কাছে এসে এক হাতে কোমর জড়িয়ে কাছে নিয়ে এলেন তার। আমি প্রথমে ভয় তো পরে তার স্পর্শ ভাললাগা কাজ করতে লাগলো। চুপ করে তার স্পর্শ উপভোগ করতে লাগলাম। লজ্জায় আমি আর তার দিক তাকালাম না।
ইউসুফ ভাই তখন আমাকে তার দিক ঘুরালেন।দু হাতে আমার মুখ খানা ধরে বললেন,,

--"বাবুইপাখি তুমি কি জানো? তুমি যখন লজ্জা পাও!  কতটা ইয়াম্মি লাগে! মনে হয় গাপুসগুপুস করে খেয়ে ফেলি তোমাকে!"

আমি তো এমনিতে লজ্জা পাচ্ছিলাম। তার কথায় আরো বেশি লজ্জা পেতে লাগলা তাই তার দিকে না তাকিয়ে তার বুকে মুখ গুঁজে রইলাম।ইউসুফ ভাইয়াও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন আমায়। মনে হচ্ছিল আমি বুঝি এই হারিয়ে যাবো! ঠিক তখনি ইউসুফ ভাইয়ার ফোন ভাইব্রেট শব্দ হতে লাগলো। কেন জানি এই ফোনের শব্দে বুকে মোচড় দিয়ে উঠলো। কেন এমন হয়েছিল তা সেদিন বুঝতে না পাড়লেও আজ হারে হারে তা টের পাচ্ছি!

সেদিন  ফোনের ভাইব্রেট হয়ে চলছি! ইউসুফ ভাই ফোনটি তুলছিল না। বরং বিরক্ত হচ্ছিল। আমি  বললাম,,

--"নেতা সাহেব! দেখুন কে কল করেছে! ইম্পর্টেন্ট ও হতে পারে!"

--" নাহ্! এই মুহূর্তে তুই ছাড়া আমার কাছে কোন কিছুই ইম্পর্টেন্ট নয়!"

আমি হেসে দিলাম। বললাম,,

--" হে আমি জানি! কিন্তু তুলুন তো ফোনটি? বাসা থেকেও কেউ দিতে পারে? আমরা তো না বলে এসেছি হয়তো টেনশন করছে!"

আগত আমার পিড়াপিড়িতে ফোন হাতে নিয়ে ভ্রু কুচকালো। বলল,

--" মিশু কল করেছে! কিন্তু এতো সকালে কেন?"

চিন্তায় পড়ে গেলেন ইউসুফ ভাই! ফোনটা তুলতেই তিনি স্তব্ধ হয়ে গেলে। শূন্যে তার দৃষ্টি! হুট করেই পাল্টে গেল তার হাসি মুখখানা। সেদিন হাজার জানতে চেয়েও জানতে পারি নি কি হয়েছে! শুধু অস্থিরতা দেখছি তার!সে খানে সেদিন আর এক মুহূর্ত না থেকে বের হয় গেলেন আমায় নিয়ে! আমি পুড়োটা রাস্তা শুধু ইউসুফ ভাইয়াকে দেখেই গেছি! চোখ মুখ লাল হয়ে আছে।চুল গুলো অগোছালো। কিছু ঘন্টার ব্যবধানে যেন সব পাল্টে গেল! আমি হাজার বার জিগ্যেস করেও উত্তর পাইনি। 

____________________________________________

সেদিন গাড়ি এসে থামে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে। আমি অবাক হয়ে রইলাম। হাসপাতালে কেন হঠাৎ! কারো কি কিছু হয়েছে! হু হু করতে লাগে আমার বুক খানা।গাড়ি সাইডে রেখেই তিনি ছুটে গেলেন হাসপাতালের ভিতরে! পিছনে গেলাম আমি! আই সি ইউর সামনে আসতেই! বড় মামি ছুটে এসে জড়িয়ে ধরলেন ইউসুফ ভাইকে! আর কাঁদতে লাগলেন ডুকরে। আমি এখনো অবাক চোখ তাকিয়ে দেখচ্ছি সব।তখনি রাহুল ভাই কোথা থেকে দৌঁড়ে এসে বলল,,

--" ইউসুফ চাচুকে ইমিডিয়েটলি ঢাকা শিফট করতে হবে! হাতে সময় কম! "

ইউসুফ ভাই মাথা নেড়ে রাহুল ভাইয়ার সাথে চলে গেলেন মামিকে ওয়েটিং রুমে বসিয়ে।  কেমন থমথমে পরিবেশ। বাড়ির সবাই উপস্থিত!  আমি কি করবো বুঝতে পাড়ছি না। চোখ ভিজে উঠছে বার বার! বড় মামার কি এমন হয়েছে যে তাকে ঢাকা নিচ্ছে? বা কেনই বা হাসপাতালে।  একদিন আগেও তো সুস্থ ছিলেন তিনি! শেষ পরীক্ষার দিন তিনি নিজেই ড্রপ করেছিলেন আমায়! মানুষটি যে তার বাবার থেকে কম না!বরং বাবার থেকে বেশি। অনেক আদর করেন তিনি আমায়।

মামি আবার গুমের কেঁদে উঠলেন ছোট মামি সামলাচ্ছেন! নানু মাকে ভাবি সামলাচ্ছে। সবাই কাঁদচ্ছে। ওয়েটিংরুমের ফলকের মাঝে কেমন একটা গম্ভীরতা ছেয়ে আছে।তাদের কাছে যেতে কেমন অপরাধ বোধ কাজ করছে! যাবো কি যাবো না দ্বিধায় আছি! 

তখনি মিশুপি এলেন হাতে কফির কাপ। মামির দিক এগিয়ে দিতেই চোখ পড়ে তার আমার দিক তেড়ে এসে থাপড় লাগায় আমার গালে। কটমট করে বললে,,

--" রং না তোর শরীরে খুব! খুব জ্বালা তোর? হে!"

আমি কিছুই বুঝলাম না বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে রইলাম তার দিক। এ ব্যক্তির মুখ থেকে কখনো একটা ধমক শুনে নি! নিজের বাচ্চার মতো আগলে রাখতো তার মুখ থেকে এমন কটু কথা মানতে কষ্ট হচ্ছিল আমার।চোখ থেকে বড় ফোঁটার জল পড়তে লাগলো গাল গড়িয়ে নাক বেয়ে। আমি নিজেকে কোনো রকম সামলে শুধু বললাম,,

--" কি বলছো এসব মিশুপি আমি কি করেছি? এসব বিশ্রী কথা কেন বলছো!"

তখনি পিছন থেকে ছোট মামি তাচ্ছিল্য করে বলল,

--" তিনি রাত দিন ছেলেদের সাথে রাত কাটাবে! ফুর্তি করবে! আর আমরা বললেই হবে বিশ্রী কথা! নষ্ট ছেলে মেয়ে কোথাকার!"

ছোট মামীর কথায় আকাশ থেকে পড়লাম। আমি ছেলেদের সাথে রাত কাঁটাই মানে? তখনি বড় মামি ছুটে এসে আমার চুলে টেনে ধরে মারতে লাগলেন এলো পাথারি।কড়মড় করে বললেন,,

-- "তোর জন্য এক মাত্র তোর জন্য আমার সংসার ভেঙ্গে যাচ্ছে!  তোরে আমি আজ মেরে ফেলবো। তোর জন্য আমার স্বামী মৃত্যুর সাথে পান্জা লড়ছে! তোর জন্য আমার ছেলে অবাধ্য! খুব জ্বালা না তোর এ শরীরে! দু দিন পর পর আমার ছেলেকে নিয়ে রাত কাঁটাতে চলে যাস? হুম বল! কি হলো বলিস না কেন? বল!"

আমি আমাকে মেরেই যাচ্ছেন। আর এসব কথা বলেই যাচ্ছেন! আমি মারের থেকে তার কথায় আহত হলাম বেশি! তার থেকে বেশি অবাক আমার পাশে আজ কেউ নেই! কেউ না। সবাই নিজের মত বসে! মিশুপির ও কোনো হেলদুল নেই। নিজেকে এখন সত্যি নিকৃষ্ট লাগচ্ছে! তাউ নিজেকে ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছি! পারছি না। এক পর্যায় আমি ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়। জুতা খুলে এবার মারতে শুরু করে। আর বলে,,

--" আজ তোর রূপের জ্বালে না ফাসাতি আমার ছেলেকে না সে তোর আগে পিছে ঘুড়তো। আর না আজ তার বাবাকে ছেড়ে তোর সাথে রঙ্গ লিলা করতো। আর না আমার স্বামীকে কেউ খুন করার ট্রাই করতো!"

মামি কাঁদচ্ছে আর মারছে আমায়। বড় মামাকে খুন করার ট্রাই করেছে শুনে বুক ফেঁটে যাচ্ছে কিন্তু আমি মুহূর্তে কি করবো বুঝতে পাড়ছি না। সারা শরীরে এক ফোঁটা শক্তি নেই।সারা শরীরে জখম হয়ে গেছে। কোথাও কোথাও কেঁটে গেছে, জ্বালা করছে খুব। আমি বসা থেকে লুটিয়ে পড়লাম মাটিতে। ঠিক তখনি মামি আমার তলপেটে খুব জোড়ে  লাথি মারতেই মুখ দিয়ে আর্তনাদ বের হয়ে গেল খুব জোড়ে,  " ও মা গো"।  আমার চিৎকারে মামি তো থেমে গেলেন। কিন্তু কেউ এগিয়ে আর আসলেন না। আমি পেট ধরে "মা গো, ও মা গো, আল্লাহ, " বলে কাতরাতে লাগলাম। ব্যথায় কুঁকড়ে যাচ্ছি। কেউ তখন আর এগিয়ে এলো না আমার কাছে। সবাই নির্বিকার ভাবে দাঁড়িয়ে। আমার গলা ফাটানো চিৎকার যেন শুন্তেই পাচ্ছেনা তারা। ধীরে ধীরে সবাই ওয়েটিংরুম থেকে উঠে চলে গেলেন। আজকে যেন আমার ব্যথা কারো চোখেই পড়চ্ছে না। 
আমার চোখের সামনে সব ঘোলা হতে লাগলো। হয়তে মরে যাবো আজ! এখন থেকেই হয়তো মরন যাত্রা শুরু আমার। বিড়বিড় করে শুধু ইউসুফ ভাইকে ডাকলাম। তারপর আর কিছু মনে নাই আমার।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন