আমার একটাই যে তুই - পর্ব ০২ - সিজন ২ - সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি - ধারাবাহিক গল্প


দু হাত পুড়ে চামড়ায় ঠোসা পড়ে গেছে কুহুর। বার বার দু হাতে ফু দিচ্ছে আর বাচ্চাদের মতো ফুপাচ্ছে। ইউসুফ হাতে মেডিসিন দিয়ে দিচ্ছে আলতো হাতে। তার ভাবখানা এমন হাতটা যেনও তারই পুড়েছে। ব্যথাতুর কন্ঠে বলল,,

---" কাঁদিস না বাুইপাখি এখনি জ্বলা কমে যাবে! "

কুহু চুপ হলো না।  কাঁদতেই লাগলো। পাশেই আঁচলে মুখ চেঁপে কাঁদচ্ছে মনিশা। এক মাত্র ভাগনী তার।  কতই আদরের ছোট থেকেই বুকে রেখে মানুষ করেছে তার বোন। কখনো চোট পেতে দেয়নি কুহুকে। যদি কখনো পেয়েও যেতো তার বোন সুমি কেঁদে কেঁটে পুরো বাড়ি শুদ্ধ মাথায় করে নিতো। আর আজ তার ছোট পরিটির হাত পুড়ে গেছে একদম।

---" মা এসব কিভাবে হলো?"

ভাবনায় ফোড়ন পড়লো মনিশার। চোখের জলটুকু মুছে বলল,,

---" আমি ঘরে ছিলাম তখন। রান্না ঘর থেকে কুহুর চিৎকার ভেসে আসতেই দৌড়ে আসি।"

ইউসুফ ভ্রু কুচকে বলল,,

---" কুহু রান্না ঘরে কেন গেছিলো? কাজের মানুষদের অভাব পড়েছে নাকি?"

কন্ঠে রাগ-ও প্রকাশ পেলো খুব। তারপর কুহুর দিক তাকিয়ে ধমকের শুরেই প্রশ্ন করলো,,

---" রান্না ঘরে কেন গেছিলি? কথা বলছিস না কেন?"

কুহু ভয়ে আরো কাঁদতে লাগলো। ইউসুফের রাগের সাথে আগাগোড়া পরিচিত সে। কুহুর ক্ষেত্রে পান থেকে চুন খসতে দেড়ি হতে দেড়ি ইউসুফের চড়-থাপড় খেতে দেড়ি না। কুহু ঢুক গিললো শুকনো।  বলল,,

---" আমি বুঝতে পারিনি পাতিল এতো গরম ছিলো। চুলায় অাগুনও ছিলো না তখন!"

ইউসুফের চোয়াল শক্ত করে দাম্ভিকের সুরে বলল,,

--পাতিল কেন ধরেছিলি?"

কুহু নতজানু। মুখ দিয়ে কিছু বলতেই চাইছে না সে৷ তাতে যেন রাগ মাথায় চড়তে এক সেকেন্ডও সময় ব্যয় হলো না। দু আঙ্গুলে মুখ ঠেসে ধরলো কুহুর। কুহু বিস্ময়ে হতভম্ব।  মনিশা হা হা করে উঠলেন,,

---" কি করছিস,  কি করছিস এসব বাবা ছাড় ওকে? ব্যথা পাচ্ছে মেয়েটা। এমনিতেও কত চোট হয়েছে হাতে?"

ইউসুফ মনিশার কথা তোয়াক্কা করলো না। অন্য হাতে খাটের পাশের ড্রয়ার খুলে গ্যাস লাইট বের করে নিলো। কুহু হকচকিয়ে গেলো। মুখ দিয়ে বেড়িয়ে গেল,,

---" এটা দিয়ে কি করবেন? "

ইউসুফ বাঁকা হাসলো। হিমশীতল হয়ে গেলো কুহুর দেহ খানি। বলল,,

,---" যা ভেবেছিস তাই!"

কুহু এবার ইউসুফের হাত থেকে দূরে যেতে চাইলো। না চাইতেও ফোস্কা পড়া হাত ব্যবহার করতেই কটা ফোস্কা গলে রক্ত বের হয়ে গেল। ইউসুফ তা লক্ষ করলেও এ মুহুর্তে সত্যি জানতে চায়। কুহু কাঁপা কন্ঠে বলল,,

---" আমি বলছি! আমার হাত জ্বালাবেন না আর। "

বলে সব টুকু বলতে লাগলো কুহু।

তখন ইউসুফ কুহুকে খাইয়ে অফিসের জন্য বের হয়ে যাওয়ার পর ইউসুফের দাদু কুহুকে ডেকে বলল,,

---" রূপই আছে না কিছু গুনও আছে? কাম কাজ কিছু জানো? "

কুহু মাথা নত করে রাখলো। বাবা-মার এক মাত্র সন্তান হলো কুহু। তাদের হাল অবস্থা এক সময় ইউসুফদের মতোই ছিলো। হুট করে কুহুর বাবা আরিফের ক্যান্সার ধরা পড়ে। প্রথম স্টেজ বলে চিকিৎসা করে সাড়ানো যাবে বলে আশ্বাস দেয় ডাক্তার। উনার পিছনেই অঢেল টাকা ব্যয় করতে হয়েছে অনেক। লাষ্ট শুধু রয়ে গেছিলো। তিন তলা বাড়িটি। এর মাঝে আরিফের চাকরিও চলে যায়। বছর তিনেক যেতেই সুস্থ হয়ে উঠলোও আগের চাকরি আর পান নি চেষ্টা করেও।  আরো চাকরির জন্য চেষ্টা করে যখন হতাশ হন। তখনি বাড়ির নিচের এক সাইডে সুপার শপ দিয়ে দেন। তাতেই যেন ভাল চলছে তাদের। তিন তলা ভবনটি এখন পাঁচ তলা করেছেন আরিফ। আর তাই আত্মিয়ারা বাবাকে বলেন মুদির দোকানদার। মুদির দোকানদার হলেও তিনি তার মেয়ে আর বউতে কখনো কষ্ট করে রান্না ঘরের আগুনের তাপে পুড়তে দেন নি। সব কাজের জন্য রেখে ছিলেন কাজের লোক। কুহু ছোট শ্বাস ছাড়লো। বলল,,

---" আপনার কিছু লাগবে দাদু?"

রোকেয়া বানুর পান খাওয়া ঠোঁটে হাসি চওড়া হলো। তিনি বললেন,,

---"তেমন কিছু কড়াইতাম না। শুধু তোমরা না কি না কউ? লুডুস না কিতা? একটু রাইন্দা আনো। "

কুহু খুশিই হলো। এটি বা হাতের কাজ। নাচতে নাচতে রান্না ঘরে চলে এলো। চুলোর উপরের পাতিল সরিয়ে গরম পানি বসাতে নিতেই কুহুর চিৎকার ভোসে এলো। মাইশা দৌড়ে রান্না ঘর থেকে এসে দেখে কুহু দু হাতে ফোস্কা ওল রেডি পড়ে গেছে।মাইশা তখন এ হাল দেখে নিজেই কেঁদে দিলেন।

---" আম্মু এ পাতিলা তো অনেক গরম।"

নিচে পড়ে থাকা পাতিল হালকা ধরে বলল মিশু। মাত্রই কলেজ থেকে বাসায় ফিরেছে সে। হল রুমে দাদু আর ছোট চাচির চাঁপা কন্ঠ আর হাসি মুখ দেখে সন্দেহ হয় ক্ষীণ।  সে এমনিতেই এ মহিলাকে দু চোখে দেখতে পারে না। ছোট থেকেই ইউসুফের কান পড়া দিয়ে বিসিয়ে তুলেছে তাদের ভাই বোনের সম্পর্ক। সে আর না দাঁড়িয়ে উপর উঠতে লাগলো। তখনি কুহু চিৎকারের রান্না ঘরে এলো।

মনিশা  অবাক হয়ে বললেন,,

---" তাই তো এতো অনেক গরম পাতিল! এমন কে করলো? "

চিন্তা পড়ে গেলো মনিশা। পরক্ষণেই কেঁদে কুটে বলতে লাগলেন,,

---আমার ফুটফুটে বাচ্চাটা কি এমন দোস করলো? কে এমন করলো?"

বলতে বলতে ইউসুফতে জানালেন তিনি। ইউসুফ কিছু মুহূর্তে চলে এলেন। মিশু তখন বলে উঠে,,

---" মা এসব দাদু করিয়েছে। আমি ভাইকে সব বলে দিবো!"

মনিশা বাঁধা দিলেন। সংসরারে অশান্তি তিনি চান না। মিশুকে বুঝিয়ে সুজিয়  ঘরে পাঠিয়ে দেন তিনি। মিশু তাতে হতাশ হয়। মাকে বলে,,

---" আমি না বললেও ভাইয়া তা জেনেই ছাড়বে!"

সব শুনে ইউসুফের রেগে আগুন। ধপাধপ পায়ে নিচে নেমে আসে। চিৎকার করে ডাকতে লাগে,,

---" দাদু? দাদু  কই তুমি নিচে আসো!"

রোকসানা  তার ঘরে বসে ফল খাচ্ছিলেন খুশিতে। তার পাশে রাহি বসে ফল কেঁটে দিচ্ছে তার দাদুকে। দু জনেই তখনের ঘটনা আওড়ে হেসে যাচ্ছেন। ইউসুফ চেচামেচি শুনতে পেয়েই গলা আঁটকে গেল ফল। খুক খুক করে কেশে উঠলেন তিনি। রাহির ও  ভয়ে মুখ শুকিয়ে গেছে। ইউসুফ যদি জানতে পারে এর পিছনে তার হাত ও আছে! এর পর এ বাড়ির টিকিট তারোও কেঁটে যাবে। 

ইউসুফ গলার স্বর বৃদ্ধি  হতেই হন্তদন্ত হয়ে বের হয় রোকেয়া বানু। যেতেই ইউসুফ এক অভাবনীয় কাজ করে বসলো।  উপস্থিত সকল হা হয়ে গেল। 

—————

উঁচু একটি জায়গায় গাড়ি থামিয়ে।  নেমে দাঁড়ালো ইউসুফ। সূর্য তার তেজ কমিয়ে পারি দিচ্ছে ঘুমন্ত রাজ্য। মুহূর্তেই আকাশের মাঝে তার রেখে যাওয়া ছিঁটেফোঁটার ঝলকানিতে লাল লাল হয়ে ঢেউ তুলে গেছে সুদূর রাঙ্গা মেঘ গুলো। ইউসুফের মনে আক্ষেপ হলো।" ইশ! ছুতে পারতাম তারে?"

মুহুর্তেই সেই আক্ষেপ উবে গেল, পিছনের একটি গাড়ি শব্দহীন গাড়ি এসে থামতেই। কিন্তু ইউসুফ তাকালো না সেদিক। তার দৃষ্টি সামনের সুন্দর দৃশ্যে।

---" নেতার পদধূলি হঠাৎ আজ আমার এলাকায়।" ঠোঁটু মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল কথাটি আশিক।

ইউসুফ তার দিক ফিরলো। বিদ্রুপের হাসি ফুটিয়ে তুললো ঠোঁটে,, 

---" পরগাছা বড় হলে গেলে উপরে ফেলতে তো আসতেই হবে!"

মুহূর্তেই হলদে মুখটি ফ্যাকাসে হয়ে গেল আশিকের। খানিকটা গম্ভীর হয়ে বলল,,

---" আমার এলাকায় দাঁড়িয়ে আমাকে অপমান করছিস?"

---" ভুলে যাচ্ছিস!  তোর এলাকা আমার আন্ডারেই পড়ে!"

শক্ত হয়ে গেল  আশিকের চোয়াল। বলল,,

---" আমি কিন্তু ভুলে যাবো তুই কখনো আমার বন্ধু ছিলি!"

ইউসুফ হো হো করে হেসে উঠলো। যেন কোন জোকস মেরেছে আশিক।  এক হাতে পেটে ধরে হাসতে লাগলো। আশিক থমথম মুখে চেয়ে আছে।

---" তুই এখনো ভাবিস? আমি তো কবেই সেই ভাবনাটাই ছুড়ে ফেলেছি।  তোর মতো খচ্চর আর আমার বন্ধু থাকবে!"

রাগে ফেঁটে পড়লো আশিক। চেচিয়ে উঠলো সে।

---" ইউসুফ...। তুই আমাকে অপমান করছিস কিন্তু!"

---"এতক্ষণে বুঝলি?"

রাগ সামলাতে পারলোনা আশিক। চেঁপে ধরলো ইউসুফের গলা। আকস্মিক ঘটনায় ইউসুফ বিস্মিত।  পরক্ষণেই সে নিজেও চেঁপে ধরে আশিকের কন্ঠনালি। ইউসুফ আত্মা রক্ষার জন্য ছোট বেলায় মহসিন তাকে কারাত প্রশিক্ষন করিয়ে ছিলেন। সেই সুবাদে শত্রু পক্ষের অাক্রমণ উলটাতে ইউসুফ বিচক্ষণ।  আশিক কাতরে উঠলো। ইউসুফের গলা থেকে হাত আলগা হয়ে যায়। ইউসুফ ঘুড়িয়ে তাকে খাদের কিনারায় নিয়ে আসে। আশিকের ভয়ে চোখ মুখে আতঙ্ক বাহিরে দেখা যাচ্ছে। চোখ তার নিভু নিভু। ইউসুফ তার সেই বিখ্যাত টাল পড়া গালে বাঁকা হাসলো। বলল,,

---" কি বলিস? ছেড়ে দি? উড়ে যাক তোর প্রাণ পাখি!"

আশিক কাতরাচ্ছে।  শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে এবার। চোখ উল্টো আসচ্ছে। ইউসুফ তখনি তাকে কিনারা থেকে সরে আসে। আশিকে ছেড়ে দেয়। আশিক বড় বড় দম নিতে থাকে। ইউসুফ তখন তার গাড়ির  সাথে ঘেসে দাঁড়িয়ে বলল,,

---" আমার সাথে লাগতে আসিস না। প্রাণ হারাবি।আর  হে!  আমি জিতেছি এবার  নেতাও হয়ে গেছি। বাজি তুই হেরে গেছিস। এবার ট্রফি হিসেবে কুহু আমার!"

আশিকের ঠোঁটে এবার হাসি। ভ্রু কুচকে গেল ইউসুফের। আশিক তার হাসি বহাল রেখে বলল,,

---" কুহু তোকে না আমাকে ভালবাসে।"কন্ঠে তার গর্বের আভাস।

ইউসুফ রাগে গা রি রি করলো। তবুও ঠান্ডা গলায় বলল,,

---" কিন্তু তুই ওকে ভালবাসিস না!"

---" ভাল তো তুইও বাসিস না!"

ইউসুফ তীর্যক নয়নে তাকলো। ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল,,

---" তোর না ভাবলেও চলবে। আমার ট্রফি আমি যেভাবেই হোক আপন করেই নিবো। তুই এর মাঝে এলে আমার পুকুরে সেই রাক্ষুসে মাছে খাবার বানাতে দু মিনিট ও সময় লাগবে না!"

আশিক ভয় পেল এবার। ইউসুফ কতটুকু ভয়ংকর আর হিংস্র এক মাত্র তার কাছের মানুষই জানে। আশিক শুকনো ঢুক গিললো। মনে পড়লো তার কলেজের একটি দিনের কথা। স্কুল থেকেই ইউসুফের সাথে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব ।  কলেজ শেষের একদিন ফেয়ারওয়েল তাদেরই এক বন্ধু ইউসুফের গায়ে হাত তুলে ফেলে। সকলেই হো হো করে হাসতে লাগে। সেদিন ছেলেটিকে কিছু না বললেও একদিন ছেলেটির লাশ তারা ঠিকি পায়। আর তা আশিক স্বচোখে দেখে কিভাবে তাকে ইউসুফ মেরেছিলো। তা ভেবেই গা শিউরে  উঠলো।

আশিক মুখে বলল,,
---" কুহুর সাথে কেন খেলছিস? ও তো তোর বোনই হয়? তার ভালোবাসার কেড়ে তুই কখনো তার মনে তোর জায়গায় করতে পাড়বি?"

ইউসুফ এবার গাড়ির বোনাটের উপর শুয়ে পা দুলাতে দুলাতে বলল,,

---" যা আমার চাই। তা যে কোনো মুল্যেই চাই। আর রইলো কুহুর ভালবাসার কথা?  আজ নয় কাল আমি অর্জন করেই ফেলবো।"

---" কি আছে ওই মেয়েতে যে এতো মরিয়া হয়ে উঠেছিস? সেই মেয়েই না তোর কাল হয়ে দাঁড়ায়।"

আশিকের কথায় হাসে ইউসুফ। ঠোঁট দুটি নাড়িয়ে বলল,,

---" ওর হাতে মরতে পাড়লেও আমি ধন্য। তুই বুঝবি না। ও যে আমার একাই যে তুই!"
পরের কথাটি বিড় বিড় করে বললো ইউসুফ। আশিক বুঝতে পাড়লো। তাকিয়ে রইলো। ইউসুফ বলল,,

---" বাড়ি যা। আজকের পর কুহুর সাথে তোর যেন কোন যোগাযোগ না থাকে!"

ত্যাগ করে সেই স্থান ইউসুফ। আশিক ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। ঠোঁটে তার শয়তানি হাসি। বিড় বিড় করে বলে,, 

---" তোর সময় ঘনিয়ে আসচ্ছে বলে।"

গত একমাস আগের সেই দিনটি এখনো দৃশ্যমান আশিকের চোখে। সে রাগে ফেঁটে পড়ে৷ তার সামনেই বসে আছে আলতাফ শেখ আশিকে মামা। তিনি তাকে শান্ত  করার চেষ্টা করে বলল,,

---" ভাগ্নে রাগে নয়। বুদ্ধি দিয়ে কাজ করতে হবে। তবেই না হারাতে পাড়বে তাকে!"

আশিক নিভলো। তবুও তার  কানে যখন আসে ইউসুফ লাষ্ট পর্যন্ত কুহুকে বিয়ে করে নিয়েছে। রাগ মাথা চড়ে বসে। সেদিন সে যেতে বাস স্টেশনে তার আগেই ইউসুফের লোকেরা আঁটকে দেয় তাকে। নয় তো আজ তার হাতের মুঠে থাকতো ইউসুফের দুর্বলতা। সে ছোট শ্বাস ছাড়লো বলল,,

---" শালা বহুত ভাগ্যবান। যা চায় তাই পায়। "
______________

রোকেয়া বানুর সামনে সেই পাতিলটি। যা পুরে লাল হয়ে আছে। ইউসুফ নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বলল,, 

---" দাদু পাতিলটি উঠাও!"

রোকেয়া বানু ভয়ে চুপসে গেছে। আদরের নাতির সামনে আহ্লাদী কান্না সুরে বলল,,

---" তুমি এসব কিতা বলল? আমার হাত পুইড়া যাইবো!"

---" আমিও তাই চাই! যে হাত আমার বউয়ের হাত পুড়িয়েছে,  সে হাত আমি কিভাবে ঠিক থাকবে?"

ইউসুফ এগিয়ে এলো। রোকেয়া বানু "ও আল্লাহ্ গো " বলেই পিছিয়ে গেল রাহির কাছে। রাহি কাঁপছিলো।  রোকা বানু তার পিছনে আসতেই সে দৌঁড়ে পালালো। রোকেয়া বানু অসহায় মুখ করে বলল,,

---" আমি তুমরা দাদু লাগি আর তুমরা এমন করতাসো?"

ইউসুফ ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল,,

---" আপন দাদু হলে কি আর তাই করতে? সৎ দেখেই এ কাজ করলে!"

রোকেয়া বানু নতজানু। মাফ চাওয়ার মতো হাত দুটো এক করে বলল,,

---" আমি তুমার বউয়ের ধারে কাছে যামু না মাফ কইড়া দাও!"
_______________

কুহু রুমে বসে আছে। ঘন ঘন শ্বাস ফালছে সে। ইউসুফের এ রূপ কখনোই দেখেনি সে! নিজ দাদুর গায়ে হাত তুলতে পিছপা হয় না। ভয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ। এ কার সাথে বিয়ে হলো তার? আশিক কেন সেদিন এলো না? আজ হয়তো দিনটি অন্য রকম হতো? 

কুহুর ভাবার মাঝে ইউসুফ রুমে প্রবেশ করে। ইউসুফ দেখে ভয়ে কুকরে যায়। ইউসুফ তা লক্ষ  করে। কাছে এসে বসে কুহুর। কুহু তখন পিছিয়ে যেতে যায়। ইউসুফ হাত ধরে তার কাছে নিয়ে আসে। কুহু ইউসুফের চোখের দিকে তাকায়। নিরব, শান্ত বিলাই চোখ কত কিছু বলে যাচ্ছে যা বুঝতে অক্ষম কুহু। ইউসুফ বলল,,

---" বাবুইপাখি ভয় পাচ্ছিস আমায়? "

কুহু জবাব দিলো না। ইউসুফ ছোট শ্বাস ছাড়লো। কুহুর দু গালে হাত রেখে বলল,,

---" আমি তোর চোখে আমার জন্য ভালবাসা দেখতে চাই। নাকি ডর-ভয়! আমি দাদুর সাথে সে কাজটি না করলে সে তোর আরো ক্ষতি করতো।  আমার আমি তোর ক্ষতি দেখি কিভাবে বল।"

তবুও কিছু বলল না কুহু মাথা নত করে ভাবতে লাগলো তখনের কথা কিভাবে তার জন্যই শাসিয়ে ছিল তার দাদু কে হোক সে সৎ। কিন্তু তবুও কেন যেন ইউসুফকে তার ভয় হয়। খুব ভয় হয়। এমন না যে সে তার উপর হাত তুলেছে। বা বাসর রাত থেকে এখন পর্যন্ত অশ্লীল ভাবে ছুয়েছে? তাহলে...  তাহলে কেন,  এমন মন হয়? লোকটির ভিতর-বাহির দুটো দুই রকম?

এসব ভাসতেই তার আশিকের কথা মনে পড়লো আবার। ছেলেটিকে সে বিশ্বাস করে মনে প্রানে ভাল বেসেছিলো। আর এখন পর্যন্ত একটি খবর সে নিলো না? কুহু কেমন আছে? সেদিন কি হয়েছিল? তাও জানা নেই তার? তবুও খুঁজ নিলো না। তাহলে সত্যি ধোঁকা  দিয়ে ছিলো? এসব ভাবতেই চোখ পড়লো ইউসুফের ফোনের দিক। ইউসুফ ওয়াশরুমে পানির শব্দ আসচ্ছে। সেই সুযোগে ফোন হাতিয়ে নিয়ে বারান্দায়  এলো। কি আশ্চর্য?  ফোন খুলতেই ভেসে উঠলো কুহুর বউ রূপের ঘুমন্ত  ছবি। নিশ্চয় ঘুমের মাঝে ইউসুফ তুলেছে? সে দিকে তোয়াক্কা না করে সে কল করলো আশিকে নাম্বারে।কল হচ্ছে। কুহুর দেখ খানা কাঁপন ধরলো। অধীর আগ্রহে ওপাশ থেকে ফোন তোলার অপেক্ষা  করতে লাগলো। আর তখনি...!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন