আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

অচেনা অতিথি - পর্ব ২৫ - নাফিসা মুনতাহা পরী - ধারাবাহিক গল্প


মাহাদ এবার বেশ জোড়েই বললো," সারপ্রাইজটা ওদের জন্য নয় তিতির, শুধু মাহাদের বউয়ের জন্য।"


রূপসা রুমে এসে ক্রোধে ফ্লাওয়ার ভাজটা ফ্লোরে ছুড়ে মারলো। দরজা বন্ধ করে দিয়ে আয়নার সামনে দাড়িয়ে বলল," আমার মধ্য কিসের কমতি আছে! তার জন্য মাহাদ আমাকে বার বার ফিরে দেয়? "

নিজের মাথার ওড়নটা টেনে খুলে ফেললো। হাতের চুরি খুলে ফ্লোরে ছুড়ে মারলো। এক এক করে গহনাও খুলে ফেললো। তারপর পুরো রুম তছনছ করে ফেললো।  ফ্লোরে সব কিছু এলমেলো হয়ে ছরিয়ে-ছিটে পড়ে আছে। রূপসা রুম থেকে বের হয়ে সাবিনা আর আসমাকে জোড়ে জোড়ে ডাকতে লাগলো।


আসমা আর সাবিনা দৌড়ে রূপসার কাছে চলে আসে। আপা কিছু কইছেন?


সাবিনার এমন কথায় রূপসা ঠাশশশ্ করে সাবিনার গালে দুইটা থাপ্পড় মারলো। মাহাদের উপর রাগটা সাবিনার উপর ঝাড়ল। ভয়ে আসমা কেঁপে উঠলো।
রুপসা চিৎকার দিয়ে বললো," এত কথা বলিস কেন! দু'জনে গিয়ে আমার রুম এখুনি পরিষ্কার করে দে। আমি শাওয়ার নেওয়া শেষ করার আগেই যেন কাজ কমপ্লিট হয়।"
রূপসা ওয়াসরুমে চলে গেল আর সাবিনা চুপ করে দাড়িয়ে রইলো।

খানিক পড়ে রূপসা ওয়াসরুম থেকে বের হতেই রাগে ওর পায়ের রক্ত মাথায় উঠলো। পুরো রুম মনে হচ্ছে আরো বেশি নোংরা। রূপসা চিৎকার করে আবার সাবিনা আর আসমাকে ডাকলো। কিন্তু এবার শুধু সাবিনা আর আসমা এলোনা সাথে এলো বাতাসি বিবিও।


সাবিনার গায়ে হাত তোলা! সাবিনা তার শোধ না তুলতেই দম নিবে! রূপসার না হাত ভেঙ্গে দিবে ও। যেখানে যা বললে কাজ হবে সাবিনা সেখানেই বলেছে। এখন শুধু ধামাকা বাজার অপেক্ষা। এই গালের দাগ মুছার আগে তার বিচার চাই। 


বাতাসি বিবি কপাল জড়িয়ে তুলে বললো," ঘরের এই অবস্থা ক্যান! এত জিনিসপত্র ভাঙ্গছোস কিয়ের লায়! জিনিসপত্র কি তোর বাপ কিনে দিছে?"


বাতাসির কথা শুনে রূপসা খানিকটা রেগে গিয়ে বললো," নানী বাবা তুলে একদম কথা বলবানা। ভাঙ্গাতো কেবল শুরু। আরও দেখ, কত কি ভেঙ্গে ফেলি।"


আর একটা জিনিসে হাত দিয়ে দেখা দিনি! বাতাসি চিক্কুর দিয়ে রজনীরে হাক দিলো। কিন্তু রজনী আসলোনা। শেষে সাবিনাকে পাঠানো হল। সাবিনা গিয়ে রজনী আর রুপালী দু'জনরেই ডেকে আনলো। সাথে লাবীবাও এসেছে।


দুই মেয়েকে দেখেই বাতাসি বিবি হুংকার দিয়ে বলে উঠলো, আর বাড়িতে এসব চলবোনা। আর সংসারের মালপত্র তোর মাইয়া ইচ্ছা করে ভাঙ্গবে আর আই বইয়া বইয়া দেখবো? কক্ষনও না। রজনী তোর মাইয়াকে এইসব পাগলামি করবার নিষেধ কর। যা নষ্ট করছে সবগুলো যেন আবার ঠিক করে গুছে রাখে। না হয় মাইয়াকে নিয়ে বাড়িত থাইকা বের হয়ে যায় এখুনি। এগ্লা পাগল ছাগলের জায়গা আর বাড়িতে নাই। 


রজনী এবার ওর মায়ের উপর ক্ষেপে গেল। এ্যাঁ এতদিন পর আসছি তাও আপনার মুখের বচন থামলোনা। আপনি এতবড় কথা বলতে পারলেন! আমি এখুনি বাসা হতে চলে যাবো।


যাবি যখন তাহলে এহনি যা। যাওয়ার আগে তোর মাইয়ার বিচার কইরা যা। তোর মাইয়া কোন সাহসে আর সেক্রেটারি সাবিনার গায়ে হাত তুললো? সাবিনার গায়ে হাত তোলা মানে আর গায়ে হাত তোলা। সাবিনাকে অপমান করা মানে আরে অপমান করা। তোর মাইয়া নাকি শিক্ষিত মাইয়া! শিক্ষিত মাইয়া হয়ে ক্যামনে ওতটুকু মাইয়ার গালে থাপ্পড় মারে! ঐ সাবিনা খাড়াই কি দেহস! গাল দেহা পাগলের মায়েরে।


এবার রজনী চুপ করে গেল। মেয়ের দোষ বলে রুম থেকে বের হয়ে গেল। এদিকে রূপসা ফুলে মরছে। একদিকে মাহাদের চিন্তা অন্য দিকে এই বুড়ির প্যাঁনপ্যানানি। অসহ্য লাগছে। বাবা এই মহিলার জন্য এই বাসায় আসতে নিষেধ করছিল। শুধু মাহাদের জন্য আসছিলাম। কিন্তু সেটাও বৃথা গেল।


শয়তানের বাচ্চা শয়তান একটা। যেমন বাপ তেমন তার বেটি। সুদ,ঘুষ খেয়ে টাকার পাহাড় গড়েছে। কিন্তু এই সংসারটা আর পোলার  রক্ত-ঘামের কামায়ের তিলে তিলে গড়া সংসার। সেহানে এসে তুই সব নষ্ট করবি আর আই চাইয়া থাকুম? সব কিছু গোছানো দেখতে চাই বলে বাতাসি আসমা আর সাবিনাকে নিয়ে চলে গেল।


রূপসা এবার নিজেই নিজেকে গালি দিতে লাগলো। কেন যে মাথা গরম করতে গিয়েছিল। এখন সব নিজেকে করতে হবে। কাঁচের টুকরোগুলো তুলতে গিয়ে কয়েক জায়গায় হাতও কেটে ফেললো।

♦♦♦♦

প্রায় চল্লিশ মিনিট ধরে মাহাদ বাইক চালাচ্ছে। এভাবেই তিতিরকে নিয়ে ঘুরতে খুব ভালো লাগছে। অনেকটা ফাঁকা রাস্তা। মাঝে মধ্য দুই একটা গাড়ী হেড লাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে। 

এমন সময় তিতির মাহাদের কানের পিঠে কিস♥ করতেই মাহাদ চিৎকার করে বলে উঠলো, " তিতির তোমাকে আমার একবার মনে পড়লে, আল্লাহ্ ছাড়া কারো সাদ্ধ নাই আমাকে আটকানো । যতবার তুমি আমার কাছ থেকে চলে যাবা ততবারই বাধ্য করবো আমার কাছে ফিরে আসতে। সেটা তোমার ইচ্ছা হোক আর অনিইচ্ছায় হোক। মাহাদের কাছে তিতিরকে ফিরতেই হবে।"

কথাগুলো বলেই একটা জনশূন্য মাঠে এসে বাইক থামালো মাহাদ।

মাহাদ বাইক স্টান্ড করতেই তিতির নেমে পড়লো বাইক থেকে। মাহাদের আচরন তিতিরকে পাগল করে দিচ্ছে। কে বলেছে ওর জন্য কেউ নেই! 

"আকাশের দিকে চেয়ে হাতে কিস করে সেই কিস তিতির কিছুটা উপরে লাফিয়ে উঠে  ছুড়ে মারলো তারাদের উদ্দেশ্য।"

 মা, আমার স্পেশাল মানুষ। যাকে ছাড়া আমার জিবন অন্ধকার। আমার বাঁচার অক্সিজেন সে। 


তিতির মাহাদের দিকে পিছন ফিরে তাকাতেই বাইকের হেডলাইটের আলো তিতিরের মুখে পড়লো। 
বাইকের হেডলাইটের আলোয় তিতিরকে  আকাশ থেকে নেমে আসা অপ্সরী মনে হচ্ছে। যেই অপ্সরী আজ আবার মাহাদের সাথে বিয়ে বসতে আকাশ থেকে নেমে এসেছে।  তিতিরের রুপের কাছে মাহাদকে নিজের কাছে নিজেরই তুচ্ছ মনে হল। এ কেমন রুপ তার প্রিয়তমার। শুধু তিতিরকে বউ সাজানোর জন্য আজ মাহাদের এত প্লান।  কখনো বউ সাজে তার প্রিয়তমাকে দেখা হয়নি। তাই এভাবেই তার মনের পিপাসা মিটাতে হচ্ছে।

তিতির সামনে এক পা এগিয়ে বললো, "
 In my dreams,  I Love You.
I live with you.........

তিতির মাহাদের দিকে এক পা করে এগুচ্ছে আর বলছে," আমি চাইনা দুনিয়ার সৌন্দর্য উপভোগ করতে আপনাকে ছাড়া। আমার প্রতিটা পদক্ষেপে আপনাকে চাই, আপনি যদি আমার জিবনে না থাকেন তাহলে সেদিন হতে আমি পৃথিবীর সব কিছু দেখা হতে নিজেকে বঞ্চিত করবো। যেখানে মাহাদ নেই সেইখানে তিতিরের কোন অস্তিত্ব নেই।"

মাহাদের সামনে তিতির দাড়িয়ে রয়েছে। এমন সময় মাহাদের ফোনে কল আসলো। ফোনটা বের করে দেখলো ওর মায়ের ফোন।

মাহাদ এক আঙ্গুল বের করে ইশারা করলো। তিতিরের কাছ থেকে এক মিনিটের অনুমতি নিয়ে কল রিসিভ করে হাটতে হাটতে একটু দুরে গেল। হ্যাঁ মা বল, কিছু বলবে? আমি একটু বিজি আছি। ফিরতে দেরি হবে।

ঃ- " মা মাই ফুট, এখুনি বাসায় আয়। তাছাড়া তোর কীর্তিকালাপ বাসার সবার সামনে তুলে ধরতে আমার এক সেকেন্ডও সময় লাগবেনা।

রূপসার কথা শুনে মাহাদ কিছুটা অবাক হয়ে গেল। তারপর নিজেকে সামলিয়ে বলল," বলে যখন দিবি তখন বলেই দে। আসলে আমি বাসায় বলতে পারছিনা। তুই এই সাহার্য্য করলে তোর প্রতি কৃতঙ্গ থাকবো।"

ঃ- মাহাদ আমি কিন্তু সিরিয়াস! তুই যদি এখন না আসিস তাহলে আমি কিন্তু সুইসাইড করবো। আর তোর নাম লিখে যাবো।

ঃ-" তুই সুইসাইড করবি  কি করবিনা সেটা আমার জানা নাই। তুই মরবি, এর প্রভাব তোর পরিবারের উপর পড়বে। It doesn't matter to me.......
কথাগুলো বলে ফোন কেটে দেয়। এরপর কাকে যেন মাসেজ করলো তারপর ফোন পকেটে রেখে দেখলো, কথা বলতে বলতে তিতিরের কাছ হতে মাহাদ অনেক দুরে এসেছে। মাহাদ পিছন ফিরে তাকাতেই তিতির একটা দৌড় দিল। মাহাদ খানিকটা অবাক হয়ে গেল তিতিরের কান্ডে।

তিতির মাহাদের কাছে আসতেই যেন ঝাঁপ দিল মাহাদের বুকে। দুই হাত আর দু'পা দিয়ে আকড়ে ফেলে মাহাদকে। তারপর মাহাদকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ওর দু'টি ঠোট মাহাদের দুটি ঠোট আলিঙ্গন করতে লাগলো। তিতির শুষে নিচ্ছে মাহাদের ভালবাসা। মাহাদের জন্য এ এক পরমতৃপ্তি। তিতির সম্পূর্ন মাটির উপরে।

মাহাদ ওর দুই হাতে তিতিরকে জড়িয়ে ধরল শক্ত করে। আজ মাহাদ আর তিতিরকে কোন কিছু করতে বাঁধা দিচ্ছেনা। বরং নিজেকে আজ তিতিরের কাছে সপে দিয়েছে।

খানিক পরে তিতির মাহাদকে ছেড়ে দিতেই মাহাদ বলে উঠলো," তিতির, তোমার  এভাবে ছোট বাচ্চাদের মত আমার কোলে ওঠার যখন এতই সখ ছিলো সেটা আগে বললেই পারতে! আমি তোমাকে রোজ এই রকম সময়  উপহার দিতাম!"

এবার তিতির ব্যাপক লজ্জা পেয়ে যায়। কি বলবে কিছুই খুঁজে পাচ্ছেনা। ভালো লাগার উত্তেজনায় হাত পায়ে কম্পন সৃষ্টি হয়ে তিতিরকে জানান দিচ্ছে সে কতবড় বেহাপানা করেছে একটু আগে। 

মাহাদ তিতিরের এই অবস্থা দেখে অট্টোহাসিতে ফেটে পড়লো। চাঁদের আলোয়  আলোকিত অপ্সরাটা সত্যই মাহাদের সামনে  কেঁপে চলছে।
মাহাদ হাসি থামিয়ে বললো," তিতির, তোমাকে আমি আমার তেলেসমাতি না দেখাতেই এই অবস্থা! যখন দেখাবো তখন না জানি তুমি সেন্সলেস হয়ে পড়।"

তিতির মুগ্ধ হয়ে মাহাদের হাসি দেখছিল এতক্ষন ধরে। চাঁদের আলোয় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল মাহাদের মুখের হাসির ছাপ পড়া টোলটার সৌন্দর্যতা। এই হাসির বিনিময়ে তিতির ওর নিজের জানটা খোয়াতেও এক সেকেন্ড ভাববেনা। তিতিরের মনে হচ্ছে এই পূর্নিমা চাঁদের রাতে তাদের দুই জনের মনের মধুচন্দ্রিমার খুঁনশুটি চলছে। এ এক অন্যরকম অনুভুতি।

মাহাদ তিতিরের ভাবনায়  ঢিল ছুড়ে  বললো," ম্যাম,,, আপনার রোমান্স শেষ হলে কি আমরা যেতে পারি!"

তিতির ভ্রু কুচকে বললো," কই যাব!"
তিতিরের মোটেও ইচ্ছা করছেনা এই মুহুত্বটা নষ্ট করে দিয়ে বাসায় যেতে। কিন্তু কি আর করা সাহেবের কথা তো শুনতেই হবে। 

মাহাদ বাইকে উঠে  স্টার্ট দিতেই তিতির এসে বাইকে বসলো। তিতির কিছুটা অভিমানের সুরে বললো," আমরা কি বাসায় যাবো মাহাদ!"

মাহাদ তিতিরের কথার কোন জবাব না দিয়ে বাইকের গিয়ার তুলে মুহুত্তেই স্থান ত্যাগ করে সামনের দিকে চললো। পুরোটা রাস্তায় এখন ফাঁকা। 

এমন সময় মাহাদ তিতিরকে জোড়ে জোড়ে বলতে লাগলো, 

"তিতির আমিতো মানুষ! তাই কখনো তোমার উপর অভিমান করলেও আমার সাথে তোমার কিন্তু থাকতে হবে। যদি তোমাকে আমার ভালো নাও লাগে তবুও তোমাকে আমার পাশে থাকতে হবে। তোমাকে রাগে যদি বকাবকিও করি তাহলেও আমার সাথেই তোমাকে একি বিছানায় থাকতে হবে। আমাকে ছেড়ে কোথাও যেতে পারবেনা। কারন যখন আমার রাগ কমে যাবে বা আমার ভূল বুঝতে পারবো তখন যেন আমি সাথে সাথে তোমাকে আমার সামনে এবং পাশে পাই। কথা দাও খারাপ সময় হোক আর ভালো সময় হোক তুমি আমাকে ছেড়ে কখনো যাবেনা।"

মাহাদের কথা শুনে তিতিরের চোখে জল চলে আসলো। বাইকে বসার কারনে সামনের বাতাসে তিতিরের চোখের জল চোখ হতে ছিটকে বাতাসের সাথে হারিয়ে যাচ্ছে। তিতির কথা বলতে পারছে না। কান্না করেই চলছে। 

তিতির যে কান্না করছে সেটা মাহাদ বুঝতে পারলো। তাই তিতিরকে আর ফোর্স করলো না মাহাদ। মাহাদ বাইক নিয়ে দ্রুত গতিতে ছুটে চললো গন্তব্য স্থলে। 

♦♦♦♦

রূপসার মাথা থেকে ঐ দৃশ্য কিছুতেই যাচ্ছেনা। বাসায় দুইটা মেয়ে আছে। যারা ওর সাথে বউ সেঁজেছিলো। মৌসুমি আর তিতির নামে ঐ মেয়েটা। আগে এদের পরোখ করি তারপর বাঁকিদের দেখা যাবে। রূপসা দ্রুত তিতিরের কাছে যেতে চাইলো কিন্তু তিতির কোন রুমে থাকে সেটাই জানেনা সে। এই ক'দিন যে বাসায় আসছে কে কোন রুমে থাকে সেটাই ঠিকমত জানেনা সে। 

রুম থেকে বের হতেই দেখলো নিচে আসমা কাজ করছে। তাই আসমাকে ডাক দিল রূপসা।


আসমা কাজ ফেলে উপরে এসে বললো," আপা কিছু বলবেন!"


তিতিরের রুমটা কোথায় দেখিয়ে দাওতো! ওর সাথে কিছু কথা আছে। না হয় তুমি ওকে ডেকে নিয়ে এসো আমার রুমে।


আসমা মনে মনে বললো," বজ্জাত বেডি,  তোর খেলা দেখছি তুই এখুনি খেলতে শুরু করছিস। আমি সেই প্রস্তুতি নিয়েই আছি। তুই চলোস ডালে ডালে আমি চলি পাতায় পাতায় আর মাহাদ ভাইজান চলে শিরায় শিরায়।"

আপা কি কইবেন আমায় কন। তিতির আপা অসুস্থ। এমনি কয়েকদিন আগে ওনার অনেক বড় এক্সিডেন্ট হইছে। আমি একটু আগেই ওনার রুম থেকে আসলাম। উনি ঔষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন। সারাদিন ব্যাস্ততার কারনে ওষুধ নিতে পারেনি। তাই শরীর একটু বেশিই খারাপ হয়ে পড়ছে। কাল মনে হয় আবার তেনারে ডাক্তার দেখাতে হবে।


তিতির এখানেই আছে। তারমানে সন্দেহ থেকে তিতির বাদ। এখন বাঁকি মৌসুমি। ও বাসায় আছে কিনা সেটা যাচাই করতে হবে। আসমা চলতো আমার সাথে! মৌ ভাবীর বোনেরা কোন রুমে আছে দেখিয়ে দাও তো?


আচ্ছা চলেন বলে আসমা রূপসাকে নিয়ে মৌসুমিদের রুমে নিয়ে গেল। রুমে এসে দেখে মৌসুমি আর মৌতুসি ঘুমিয়ে পড়েছে। আর ওদের মা ফোনে কথা বলছিল।


আসমা রূপসাকে দেখেই দাড়িয়ে গিয়ে বললো," রূপসা,  ভিতরে আসো!"


না আন্টি ঠিক আছে। ভুলে আপনাদের রুমে ঢুকে পড়েছি। আপনি কথা বলেন বলে হাফ ছেড়ে রূপসা চলে আসলো সেখান থেকে। মৌসুমীও সন্দেহ থেকে বাদ। বাঁকি রইলো রুমকির তিন বান্ধবী। কাল তো ওরা আসবে এখানে রুমকির বৌভাতে যাওয়ার জন্য। তারপর বাঁকিটা দেখবো।


রূপসার মুখে এমন মিথ্যা কথা শুনে আসমা তো হা হয়ে গেল। বেডি এত মিথ্যুক সেটা আসমার জানা ছিলোনা। তুই কি খুঁজতে বের হয়েছিস সেটা ভাবছিস আমি জানিনা! সারা জিবন খুঁজলেও খোজার লাগাল পাবিনা। সাবিনা তো তোরে ব্যাটে বলে চার হাকিয়েছে আর আমার মত শিক্ষিত আসমা সোজা তোরে গ্যালারি  
পার করবো ছক্কা হাঁকিয়ে। সব জায়গায় জোচ্চুরি!  খ্যারা তোর জোচ্চুরিপনা ছুটাবো। যার নুন খায় তার সাথে কখনো বেঈমানী করেনা এই আসমা। পারলে জিবন দিব তাও বিশ্বাসঘাতকতা করবোনা। 

♦♦♦♦

তিতির দুরে দেখতে পেল আলো জ্বলছে। আস্তে আস্তে আলো আরো উজ্জ্বল হতে লাগলো। মাহাদ তিতিরের জন্য এত এত এত সারপ্রাইজ রেখেছে যেটা কোন ছেলে তার বিবাহিত স্ত্রীর জন্য খুব কমই করে। প্রেমিকার জন্য হয়ত করে কিন্তু যে বউ পেয়েছে তার জন্য খুব কমই করে থাকে।

দুরে বিশাল ফায়ার বিগ্রেড জ্বলছে। আগুন গুলো রাতের অন্ধকারের বিরুদ্ধে  বিদ্রোহ করছে। আগুনের আলো চারদিকে আলোকিত করে রেখেছে। মাহাদ সেখানে এসে বাইক থামালো। মাহাদ টিসু দিয়ে আগে ওর ঠোটটা ভালো করে মুছলো। তিতিরের লিপিষ্টিক হয়ত মাহাদের ঠোটে লেগে থাকতে পারে তাই কাজটি করলো মাহাদ। যাতে ফ্রেন্ডরা কোন মজা করার সুযোগ না পায়। তারপর তিতিরকে নিয়ে সেই আগুনের সামনে যেতেই চারদিকে লাইট জ্বলে উঠলো। 

ওহ্ মাই গড! ৬০/৬৫ জন ছেলেমেয়ে ঘাসের উপর বসে থেকে একসাথে চিৎকার দিয়ে উঠলো," বর কনে হাজির।"

সবাই উঠে যে যার কাজে ব্যস্ত হয়ে গেল। এ যেন এক বিয়ের রিসেপশন। মাহাদের ক্লোজ ক্লাসমেট সহ আরো ছোট ভাইয়েরা এখানে উপস্থিত, শুধু মাহাদ আর তিতিরের জন্য। 

মাহাদ হেঁসে বললো," আমরা দেরি করে ফেলিনিতো! সঠিক সময়ে এসেছি! সব রেডী....."

সামনের স্টেজে সবাই গিয়ে হাজির হল। মাহাদের চার বান্ধবীরা তিতিরকে নিয়ে স্টেজে গেল। মাহাদ সেখানে আগে গিয়েই বসেছে। তিতিরকে ইশারা করলো ওর পাশে বসতে। তিতির বিষ্ফোরিত চোখে চারদিকের সবকিছু দেখতে লাগলো। না চাইতে মাহাদ সব কিছু ওর সামনে হাজির করেছে একের পর এক সারপ্রাইজ।

এই মিনহাজ কই গেল! আমাদের হুযুর মিনহাজ দোস্ত কই গেলি জলদি এসে বিয়ে পড়া বলতেই সবার মধ্য থেকে ভিড় ঠেলে জুব্বা পড়া দাড়ীওয়ালা ছেলেটা বের হয়ে এল।

"মাহাদ তিতিরকে বললো," এ আমাদের ফ্রেন্ডেদের মধ্য সব থেকে ধার্মিক। ও আমাদের আজ বিয়ে পড়াবে।"

"আবার বিয়ে! আমরা তো বিয়ে আগেই করে ফেলেছি। "

"একবার কেন? তুমি চাইলে প্রতিদিন তোমার সাথে ১৮ বার বিয়েতে বসতে রাজি আছি তিতির। চুপ করে দেখইনা....  আর কি কি হয়।"

এবার মিনহাজ দাড়িয়ে বললো," ছেলে পক্ষের সাক্ষী কে কে আছেন! "

যত গুলো ছেলে ছিল সবাই দাড়িয়ে বললো," আমরা সবাই ছেলে পক্ষের সাক্ষী।"

আর মেয়ের!

এবার সব মেয়েরা দাড়িয়ে উচ্চস্বরে বললো," আমরা সব মেয়েরা মেয়ে পক্ষের সাক্ষী।"

৬৫ জনকে সাক্ষী করে মিনহাজ হুযুরের মাধ্যমে "তিন কবুল" পরে তিতির আর মাহাদ আবার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গেল। এই ৬৫ জন ছাড়াও আল্লাহর সৃষ্টির এই প্রাকৃতিক পরিবেশও সাক্ষী রইলো এই জুটির বিয়েতে। এতে ঐ চাঁদমামার  স্নিগ্ধ মিষ্টি আলোও বাদ গেলনা।

সবাই একসাথে চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো," তিতির ওয়াদা করো,  তুমি কখনো আমাদের প্রিয় বন্ধু মাহাদকে ছেড়ে যাবেনা। সুসময়ে-অসময়ে  যে অবস্থায় হোকনা কেনো, যে পরিস্থিতে পরোনা কেনো তবুও তুমি মাহাদকে ছেড়ে যাবেনা। কথা দাও তিতির কথা দাও।"

এদের এমন কথা শুনে তিতির কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো। মাহাদ সাথে সাথে এসে তিতিরের হাত ধরলো। তিতিরের এই কান্না মাহাদকে আজ তৃপ্তি দিচ্ছে। হাত দিয়ে চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে মাহাদ বললো," তিতির ওদের প্রশ্নের সেরা জবাবটা তুমি দিয়ে দাও।"

তিতির কান্না কন্ঠে চিৎকার করে আল্লাহ্ সুবহানাতালার শুকরিয়া আদায় করতেই সবাই চুপ করে গেল আর তিতিরের প্রশ্নের জবাবের অধীর আগ্রহে রইলো।

" তিতির আকাশের পানে ওর শাহাদাত আঙ্গুল তুলে বললো," ঐ শ্রেষ্টময় প্রভু ছাড়া যদি আমার অন্য কাউকে সেজদাহ্ করার অনুমতি থাকতো তাহলে বলে, তিতির মাহাদের দিকে তাকিয়ে, মাহাদের দু'হাত ধরে ওর হাতের পিঠে কিস♥ করে বললো আমি আমার এই প্রিয় মানুষটাকে সেজদাহ্ করতাম। উনি আমার জন্য দুনিয়ার বুকে আল্লাহর দেওয়া শ্রেষ্ট নিয়ামত। আমি এই নিয়ামতকে আজিবন আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চাই। "

তিতির আর কথা বলতে পারেনা। কান্নার কারনে কথা বলা বন্ধ হয়ে যায়। কোন লজ্জার তোয়াক্কা না করেই সবার সামনে মাহাদকে দু'হাতে জড়িয়ে ধরলো নিজের বুকের সাথে।

মাহাদের জন্য এর থেকে উত্তম জবাব আর কি হতে পারে। তিতিরকে জড়িয়ে ধরতেই চোখ দিয়ে কয়েক ফোটা জল তিতিরের ঘাড়ে এসে পড়লো।

আজ শুধু এই দুই দম্পতি কাঁদলোনা সামনে থাকা সব শুভাকাঙ্ক্ষীগনও তাদের চোখের পানি ধরে রাখতে পারলোনা। 

♦♦♦♦

তিতির স্টেজের কিনারায় বসে আছে দু'পা নিচে ঝুলে দিয়ে। সবাই মজা করছে আর তিতির ওদের দেখছে।
মাহাদকে টেনে নিয়ে গেছে ওর ফ্রেন্ডরা। সবাই দাড়িয়ে যে যার মত খাবার খাচ্ছে। কয়েকজন স্যাম্পিং এর বোতল খুলতেই মিনহাজ বললো," দেখ তোরা যদি আজ মদ খাস তাহলে আমি চলে গেলাম। এর মধ্য আমি নাই।"

আর একটা ফ্রেন্ড চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো,

ঐ তোরা এই হুযুরটাকে সরাতো! আজকে মজা করবোনাতে  তোর বাচ্চা হওয়ার দিনে মজা করবো!"

সবাই হো হো করে হেঁসে উঠলো। কয়েকজন মাহাদের দিকে ড্রিংক এগিয়ে দিতেই মাহাদ ওর দু'হাত ক্রস করে দু'কান ধরে জ্বিভে কামড় দিয়ে তিতিরকে ইশারা  করে দেখিয়ে দিয়ে বলল,

" দেখছিস না প্রাইমিনিষ্টার আমার দিকে কেমন করে তাকিয়ে পাহারা দিচ্ছে! আজ যদি সামান্য ভুল করছিনা তাহলে বাসায় আর যায়গা হবেনা। তোরা মজা কর।"

আরো অনেকক্ষন সেখানে ইনজয় করে সবাইকে বিদায় দিয়ে তিতিরকে নিয়ে বাসার পথে রওনা দিল মাহাদ।

মাঝপথে আরো একটা সারপ্রাইজ দিয়ে বসলো মাহাদ তিতিরকে। মাহাদ বললো," তিতির তোমার ঘুম পাচ্ছে!"

" নাহ্....."

মাহাদ এবার বাইক থেমে তিতিরকে বললো,"তোমাকে আজ বাইক চালানো শিখাবো। সামনে আসো।"

আসলে মাহাদ একমিনিটও চাচ্ছেনা তিতির ওর বুকের কাছ থেকে সরে থাকুক। মাহাদ একটু পিছনে সরে বসতেই তিতির গিয়ে মাহাদের সামনে বসলো। তিতিরও বুঝে গেছে মাহাদ তাকে নিজের কাছে চাচ্ছে। 

তিতির বসতেই মাহাদ তিতিরের দিকে ঝুকিয়ে বললো," তোমাকে অল্প কয়েকবারই বুঝিয়ে দিব। আর চালিয়ে দেখাব এর মধ্যই তোমাকে শিখতে হবে বুঝেছ! আর তুমিতো খুব ভালো সাইকেল চালাতে পারো। তাই তোমার কাছে এটা চালানো ইজি হবে।

তিতির শুধু মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিয়ে মনযোগ সহকারে সব কিছু বুঝে নিচ্ছে। মাহাদ স্টার্ট দিল তারপর তিতিরের হাতের উপর হাত রেখে বাইক চালাতে মনযোগ দিল। দশ মিনিট পর মাহাদ হাত সরিয়ে নিল আর তিতির সেটা বুঝতেই পারলোনা। তিতির সামনের দিকে এতটাই মনযোগ দিয়ে ফোকাস করছে যে মাহাদ এখন তার সাথে কি করছে তার অনুভুতিই রইলোনা। 

মাহাদ ওর হাতটা তিতিরের পেটে রাখলো। তারপর ঘাড়ে কয়েকটা কিস করলো। মাহাদের ভিতরে ফিলিংস চরম পর্যায়ে এসে মনে দোল দিচ্ছে। মাহাদ তিতিরের পিঠের উপরের ওড়নাটা সরিয়ে দিয়ে নিজের দিকে আরো তিতিরকে চট করে টেনে এনে পিঠে গভীর ভাবে কিস♥ করতেই তিতির কেঁপে উঠলো যার ফলাফল মনযোগ অন্যদিকে যেতেই বাইক আঁকাবাঁকা হয়ে চলতে লাগলো। সাথে সাথে মাহাদ বাইকের ব্রেক ধরলো।

তিতিরতো ভয়ে শেষ। এখুনি কি হয়ে যেত! মাহাদের কাজে বাঁধা হওয়ার জন্য খানিকটা রেগে গিয়ে বললো," এতটুকু সামলাতে পারোনা! তাহলে আমায় সামলাবে কিভাবে!"

তিতিরও সাথে সাথে জবাব দিল, " আপনি মাঝরাস্তায় চলন্ত বাইকে রোমান্স করবেন তাহলে বাইক চলবে কি করে! এতে দুর্ঘটনা ছাড়া আর কিছু হবেনা।"

মাহাদ তিতিরের হাত বাইকে রেখে তার উপর নিজের হাত দিয়ে চালাতে লাগলো বিরক্ত হয়ে। তার কিছুক্ষন পর হাত সরিয়ে নিয়ে তিতিরকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে  মাথাটা তিতিরের ঘাড়ে রেখে বললো," তোমার বরকে কিভাবে তুমি সহিসালামতে বাসায় নিয়ে যাবা, সেটা এখন সম্পূর্ন তোমার দায়িত্বে। তুমি যেমনটা চাইবে তেমনটা হবে।"

তিতির বাইক চালানোতে এবার কঠোর মনযোগ দিল। তিতির তোর আজ চরম পরীক্ষা। মাথা ঠান্ডা করে বাইক চালা। 

তিতির মনে মনে বললো," সামান্য কিসে♥ বাঁধা হওয়াতে সাহেবের এত রাগ, আর যেদিন তিনি আমার  কাছে ঘনিষ্ট হয়ে আসবে সেদিন না জানি আমায় সত্যিই বিদ্ধস্ত করে ছাড়ে।"

মাহাদ মোড়ে মোড়ে গিয়ে একটু নিজেই বাইক হান্ডেল করছে আর  তিতিরকে বাসার রাস্তা বলে দিচ্ছে কোন দিকে দিয়ে যেতে হবে। আর খানিকটা পথ তারপর বাসায় পৌছে যাবে তারা।
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।