যখন জ্ঞান ফিরে, নিজেকে হাসপাতালের বেডে আবিষ্কার করি। পাশেই তিথি আমার হাত চেপে বসে কাঁদচ্ছিল।তার সাথে দাঁড়িয়ে মেজদাক ভাইয়া।আমার জ্ঞান ফিরতে দেখেই তিথি হন্তদন্ত হয়ে জিগ্যেস করলো,,
--" বনু এখন কেমন লাগচ্ছে তোর? ব্যাথা এখনো করছে?"
আমি মলিন হাসলাম। চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে কান পর্যন্ত যেতে লাগলো।এত মানুষের ভিড়ে কাউতে তো আপন ভরসার মানুষ পেলাম বলে। তাই ভেবে কান্না আসচ্ছে।তিথি মুছে দিয়ে দিতে দিতে কান্না জড়িত কন্ঠে বলল,,
--" কষ্ট হচ্ছে খুব নারে?"
আমি মাথা নাড়িয়ে ব্যথাতুর কন্ঠে বললাম,,
--" না এখন ঠিক আছি। সবাই কই? ইউসুফ ভাই..!"
তিথি আবার ফুঁপিয়ে উঠলো। মেজদাক পেছন থেকে তিথিকে সামলে বলল,,
--" আঙ্কেলের অবস্থা খুব ক্রিটিক্যাল !তারা ঢাকা নিয়ে গেছেন।ডাক্তার বলেছেন ২৪ ঘন্টার আগে কিছু বলতে পারছেন না। তবে (কিছুক্ষণ চুপ থেকে) না বাঁচার চান্স বেশি।"
বড় মামার এমন অবস্থার কথা শুনে কান্না বেড়ে গেল আমার। তাড়াতাড়ি উঠে বসে তিথির হাত ধরে কাঁপা গলায় বললাম,,
--" ক...কি হয়েছিল ব....বড় মামার!"
তিথি এবার হু হু করে কেঁদে দিল। নিজেকে সামলে বলল,,
--" ইউসুফ ভাইয়ার একটা মিটিং ছিল। তাকে ফোনে না পেয়ে বড় ফুফা সে মিংটিয়ে যাচ্ছিল এটেন্ড করতে! জানিসতো বড় ফুফা গার্ড পছন্দ করতো না।তাই নিতো না। তা যেন কাল হয়ে দাঁড়ালো আজ। তার সাথে ডায়মন্ড ভাইয়া ছিল।তারা বাইপাস দিয়ে যাচ্ছিল ঠিক তখনি একটি গাড়ি এসে দাঁড়ালো তাদের বরাবর সামনে! সরছিল না। ডায়মন্ড ভাইয়া বের হতেই তাকে আঘাত করে। তা দেখে চাচু বের হতেই (ওড়নায় মুখে চেপে কাঁদতে লাগলো আবার তিথি..আমি বলতে বললে সে ঢোক গিলে বলতে শুরু করলো) ফুফাকে পিছন থেকে কে যেন চাকু ঢ...ঢুকিয়ে দেয়।তাও এক বার না স....সাত বার!"
জ্যান্ত
বলে আবার কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। আমি শক্ড হয়ে বসে আছি! মনে হচ্ছে ৪৪০ বোল্ডের শক্ড খেয়েছি। চোখ দিয়ে অঝড়ে জল পড়চ্ছে গড়িয়ে।
____________________________________________
তিথি আর মেজদাক ভাইয়া মিলে আমায় বাসায় নিয়ে আসলো। বাসা আসার ইচ্ছে আমার ছিল না। কেন যাবো? সে বাসায়? যেখানে তারা আমাকে দোষী ভাবচ্ছে!তা ভেবে আমি বাবাকে কল করলাম। বাবা গা ঝাড়া দিয়ে বললেন,,
--" তোর মত মেয়েকে জ্যান্ত পুতে ফেলেছি আমি সেই কবেই। আর ফোন করবি না তুই! মরলেও আর কল দিবি না।"
বাবার কথায় ফুপিয়ে কাঁদতে লাগলাম কি করবো আমি এখন? তখন তিথি আর মেজদাক ভাই বুঝালো,,
--" তোর তো যাওয়ার আর জায়গা নেই! কই যাবি বল? আর চারিদিকে যে হাল অবস্থা। তোর বাবাও তোকে নিবে না। তার থেকে বরং বাসায় চল। কিছু একটা ব্যবস্থা করে ফেলবো।"
অামি ছলছল চোখে তাকাতেই তিথি তার সাথে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
--" ঠিক হয়ে যাবে সব কুহু! ইউসুফ ভাই তোর হলে যে কোনো মূল্য পাবি। যদি তোর ভাগ্য না থাকে হাজার কাতরালেও পাবি না।"
আমি তখন শক্ত করে তিথিকে ধরে কেঁদেই চলেছিলাম।
বাসার পরিবেশটা থমথম। কেমন গুমাটে ভাব! সে প্রাণ ছল বাড়িটির মানুষ গুলো কাঁদচ্ছে মুখ চেঁপে। কেউ কেউ তবজি পরচ্ছে। আমাকে দেখে মুখ ফিরিয়ে নিলো তারা। কষ্ট লাগলো খুব। এক দিনের ব্যবধানে কাছের মানুষ পর হয়ে গেল আমার। তিথি আমাকে রুমে এলে শুয়ে দিল বেডে। ব্যথায় দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছিল খুব। এর কেউ আর আসলো না রুমে। তিথি মাঝে খাবার এনে খাইয়ে দিয়ে গেছে। বসে থাকতে থাকতে কখন ঘুমিয়ে যাই বুঝতে পারিনি।
মধ্যরাত হতেই বাড়িতে জোরে জোরে কান্নার আওয়াজে ঘুম ভেঙ্গে গেল। এত রাতা কান্নার শব্দ ধক করে উঠলো মনে। সাথে সাথে বাহিরে আসতেই তিথি দৌঁড়ে এলো আমার কাছে কাঁদতে কাঁদতে বলল,,
--" বনুরে বড় ফুফা..!"
তিথি চুপ হয়ে গেলে। কান্নার জন্য কথা যেন বলতে পারছেনা। আর দিতে আমার ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসচ্ছে। তিথিকে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বললাম,,
--"কি হয়েছে মামার। বল। বল না। ভয় লাগচ্ছে আমার।"
তিথি হেচকি তুলে কাঁদচ্ছে। বুঝতে বাকি নেই বড় মামা হয়তো..!আমি কাঁপা কন্ঠে বললাম,,
--" বড় ম..মামা আর..!"
তিথি এবার আমাকে জড়িয়ে কেঁদে দিল। আমি সেখানই স্তব্ধ হয়ে গেলাম। চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়চ্ছে। মুখ দিয়ে একটি কথাও বলতে পাড়লাম না
তিথিকে ছেড়ে দিয়ে, খাটে বসে দু হাটুতে মুখ চেঁপে কাঁদতে লাগলাম। নিজেকে আজ দিশেহারা লাগছে। কোনো না কোনো ভাবে না চাইতেও আমিও জড়িত বড় মামার মৃত্যুর। নিজের প্রতি ঘৃণা লাগচ্ছে। এত ঘৃণা যে সারা শরীর চাকু দিয়ে খুবলে ফেলতে ইচ্ছে করছে। বাবা সমতুল্য ব্যক্তিটির হাসি মুখ খানি ভেসে উঠচ্ছে বার বার। কানে আসচ্ছে সেদিন শেষবার তার বলা কথা গুলো,,
--"আম্মু শেষ পরীক্ষাটা ভাল করে দিও কিন্তু। মনে রেখ শেষ ভাল যার! সব ভাল তার। আর হে পড়াশুনাটা কখনো অবহেলা করো না।কারণ যখন কেউ তোমার পাশে না থাকবে এ পড়াশুনা টাই কাজে দিবে!"
বলে মাথায় হাত বুলিয়ে দিছিলেন তিনি পরম যত্নে। আর সেই মানুষটি আজ নেই! না আর ফিরবে? না বলবে,
--"কুহু আম্মু এক কাপ চা, নিউজ পেপারটা দে! ইশ! চশমাটা ফেলে এসেছি এনে দে মা!"
কেউ বলবে না। কেউনা না। এসব ভেবে কাঁদচ্ছিলাম তখনি মিশুপি ঘরে ঢোকে। তাকে দেখে কোনো কিছু বললাম না। সে এসে বাবা হারাবার ঝাল আমার উপর মিটিয়ে গেল। কিছু বললাম না। তার লাষ্ট কথায় বুকটা চিড়ে গেল। আমার বাবা নেই তাই বাবার মর্ম কখনো বুঝবো না। বুঝলে হয়তো বড় মামা জীবিত হতো। তাও রিয়েক্ট করলাম না। চুপ করে কান্না করে গেলাম। কারণ পৃথিবী মানুষ আর কিছু পাড়ুক না পাড়ুক দোষারোপ করতে ঠিক পারে।
____________________________________________
বড় মামার লাশ আনা হলো। সবাই কাঁদচ্ছে বড় মামী মামার বুকে পড়ে কাঁদচ্ছে। মিশুপিও কাঁদচ্ছে সাথে। নানু মা মুখের আঁচল চেপে কাঁদচ্ছে আর বলছে,,
--"আর শাফিনরে কেন নিলা! আমারে নিতা বেকার মানুষ ছিলাম। ওর কি বয়স হইছিল। কেন নিলা।আল্লাহ্"
এসব বলে বিলাপ করছে। পাশেই ইউসুফ ভাই দাঁড়িয়ে আছে। সে কাঁদচ্ছে না। মুখ টা ফ্যাকাসে লাগচ্ছে গত পরশু এই মুখটিতে প্রাণোচ্ছল হাসি ছিল। আজ তা নেই। কালো মেঘের ভিড়ে যেন হারিয়ে গেছে। তাকে দেখে আরো বুক ফেঁটে যাচ্ছে আমার।
ময়মনসিংহের সব মানুষের ভিড় জমছে একবার মামাকে এক পলক দেখবে বলে। কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছে তারাও। করবেই বা না কেন? ১০ টা বছর এক টানা তিনি ময়মনসিংহের মেয়র পদে ছিলেন। মানুষের ভাল-মন্দ এগিয়ে আসতেন। সেই মানুষটি আর নেই।
বড় মামাকে শেষ গোসল দিয়ে নেওয়া হল বড় মসজিদ। জানাযা পড়ানো হলো কবর দেওয়া হলো কবরখানায় কালীবাড়িতেই। একে একে সবাই চলে যেতে লাগলেন। এক সময় পুড়ো বাড়ি খালি হয়ে গেল। হাসি খুশি মানুষ গুলো শোকে মুঁর্ছে গেল। সবাই হাসতে ভুলে গেল যেন।ধীরে ধীরে সব পরিবর্তন হতে লাগলো। সে দিনের পর থেকে ইউসুফ ভাইয়া সব থেকে বেশী পরিবর্তন হতে লাগেন। সে একদিনো কাঁদে নি। না হেসেছে। কেমন যেন গম্ভীরতায় ছেয়ে গেছেন তিনি। তার সাথে তেমন আর একটা কথা হতো না। তিনি বড় নেতা হলেন। রাহুল ভাইকে দিলেন বড় মামার জায়গা দিলেন।এর মাঝে বাড়ি ছেড়ে ছিলাম তিথির সাহায্য। সেদিন ধরে ফেলন ইউসুফ ভাই বাসস্ট্যান্ডে সকলের সামনে থাপড় মেরেছিলেন। থাপরের জোড় এতটা ছিল যে টাল সামলাতে না পেরে মাটিতে পড়ে গেছিলাম। চারিদিকে মানুষের ভীর জমে গেছিল।তারপর টানতে টানতে গাড়িতে ঢুকালো। বাসায় এসে ধাক্কিয়ে রুমে ফেললো।আর চেঁচিয়ে সেদিন বলেছিল,,
--"আমার অনুমিত ছাড়া যদি এবাসা থেকে বের হোস! ঠেঙ্গ ভেঙ্গে ঘরে বসিয়ে দিব।"
সেদিন ইউসুফ ভাইয়ের আরেকটি রূপ আমি দেখেছিলাম "হিংস্রতার রূপ" যা মনে হলেও পিলে চমকে যায় আমার।সেদিন ফুঁপিয়ে কেঁদে কাঁটিয়েছিলাম রাত দিন। সবাই শুধু তার মর্জি আমার উপর ঝাড়ে। নিজেকে জড় বস্তু মনে হচ্ছিল আমার।বন্দি হয়ে গেছিলাম যেন এই বৃষ্টি বিলাস বাড়িটিতে। এভাবে ৬ মাস কেটে গেল।
—————
ছাদের একদম শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছি। এই ছাদের মাঝে আমার আর ইউসুফ ভাইয়ার কত শত স্মৃতি চোখের সামনে ভাসছে। মনে হচ্ছে টিভির স্ক্রীনের সামনে বসে আছি। তার সাথে কাটানো প্রতিটা মুহূর্ত ভেসে উঠচ্ছে তাতে। এইতো এখানে সেদিন বসে গান গেয়ে শুনাচ্ছিলেন তিনি।দোলনায় আমার কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে আকাশের হাজার, কোটি তারা গোনার বৃথা চেষ্টা করেছেন। পূর্ণিমা রাতে চন্দ্রবিলাস তো শ্রাবণ সন্ধ্যাটুকুতে হাতে হাত ধরে বৃষ্টি বিলাস করেছি দুজনে। কখনো মাঝ রাতে কফি হাতে ছাঁদের কার্নিশ ঘেঁষে হাজারো স্বপ্ন বুনেছিলাম ভবিষ্যতের। কিন্তু সব স্বপ্ন কি সত্যি হয়? সব ভালবাসা কি পূর্ণতা পায়? মনের মাঝে অস্থিরতা বাড়ছে। দম আটকে আসচ্ছে। মনে ছাদ থেকে লাফ দিলে কেমন হয়?মারা যাবো? মরার মতো এতো কঠিন কাজটা কি আমার ধারা হবে? মরার সময় খালি হাতে না অত্যন্ত নিউটনের মধ্যাকর্ষণের সূত্র প্রমান নিয়ে পৃথিবীট পারবো! ভেবেই হেসে উঠলাম নিজে নিজেই এমন বাচ্চামো চিন্তা ভাবনার জন্য। হাসতে হাসতে আবার কেঁদেও দিলাম। হাসির সাথে কি কান্নার কোনো সংযোগ আছে? আগে তো এমন হয়নি এখন কেন হচ্ছে? এখন অতি সুখে আছি বলে? ভেবেই আবার হেসে ফেললাম। সুখ কথাটি আমার জন্য যে অতি তুচ্ছ! তা কি সুখ জানে? না জানে না! তাই তো হুট করে সুখের ছিটাফোঁটা ফেলে আবার এক রাশ বেদনা দিয়ে চলে যায়। এই তো কিছুক্ষণ আগের কথা। তখন তিথি দৌঁড়ে এসে বলল,,
--"কুহু তোর রেজাল্ট দিয়েছে! জি.পি.এ-5 পেয়েছিস। খুশি হোস নি! "
--" হে হয়েছি!"
--"মনে হচ্ছে না!"
--"ওহো!"
--"তোর কি মন খারাপ!"
--"নাহ্"
--"তাহলে এভাবে কেন কথা বলছিস! তোর কি শরীর খারাপ!"
কঁপালে ও গলায় হাত দিয়ে জিগ্যেস করলো তিথি। আমি বললাম,,
--" নাহ্। ঠিক আছি। ফিট এন্ড ফাইন।"
তিথি সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,,
--"মনে হচ্ছে না।তুই সত্যি ঠিক আছিস তো?"
--"হে!"
তিথি চলে গেল। আমি সত্যি অনেক খুশি হয়েছি। কিন্তু প্রকাশ করতে পারাচ্ছি না। এ খুশির কোনো মূল্য নেই। তাই কাউকে দেখাতে চাই না। এ ভেবেই ছোট শ্বাস ফেললাম। তখনি নানু মা ডাকলেন। দৌঁড়ে নিচে আসতেই হকচকিয়ে গেলাম।সামনে ডায়মন্ড বসে। টেবিলের সামনে এক গাদা মিষ্টির প্যাকেট। আমি যেতেই নানু বলল,,
--" তুই 5 পেয়েছিস শুনে এত মিষ্টি নিয়ে হাজির হলো ডায়মন্ড!"
নানুর কথায় তার দিক তাকালাম ধন্যবাদ বলার জন্য। তার দিক তাকাতেই তার ভঙ্গিমা দেখে গা জ্বলে গেল আমার। কি বিচ্ছিরি সেই হাসি, সেই চাওয়া। দেখলেই গা রাগে রি রি করে। আমি মাথা নত করে এদিক সেদিক তাকালাম। কিন্তু ঠিকই বুঝতে পারচ্ছি লোকটি তার লোভাতুর দৃষ্টিতে আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত স্ক্যান করে যাচ্ছে। দেখেই গা গুলিয়ে বমি আসচ্ছে। এই লোকটির নাম ডায়মন্ড হলেও তার ক্যারেক্টার বাংলা সিনেমার মিশা সওদাগরের মতো। দেখলেই বমি বমি পায় ওয়াক! বড় মামা থাকতে এই লোকটিকে কখনো বাসায় আনতো না।আর আনলেও আমাদের কাউকে সামনে আসতে দিত না। আর আজ কি সিন্দর মিষ্টি নিয়ে চলে আসচ্ছে ভাব খানা এমন যেন না জানি তার সাথে কত ভাল সম্পর্ক আমাদের। এই লোকটি ইন্টারেস্টিং একটি কথা আছে। লোকটি নিগ্রোদের মতো কালো তাই তাকে আমরা ডাকি, "ব্ল্যাক ডায়মন্ড" বলে। একবার তো এক পিচ্চি তাকে দেখে ভয়ে চিৎকার কি বাবা গো বাবা।আমার ভাবনায় বাঁধা পড়লো লোকটির ডাকে। তার হলদে দাঁতে হেসে বলল,,
--" কেমন আছো কুহু!"
--"ভালো!"
--"বসো এখানে!"
--"না তারা আছে আমার!"
নানু মা সাথে সাথে ধমকে উঠলেন বললেন,,
--" এ কেমন বেয়াদবি কুহু বড় মানুষ কিছু বললে শুন্তে হয়! এ শিখিয়েছি তোরে! বস!"
আমার মন খারাপ হলো! সাথে নানু মার ব্যবহারেও অবাক? কেন করছেন এমন! আমি বসতে নিবো তখনি ফোনো কথা বলতে বলতে বাসার ভিতরে ঢুকেন ইউসুফ ভাই। তাকে দেখে অটোমেটিক হাত পা কাঁপা শুরু আমার। এক হাত দিয়ে অন্য হাত মুচড়ে যাচ্ছি। ইউসুফ ভাই ভ্রু কুচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে বুঝতে চেষ্টা করলেন এখানে হচ্ছে টা কি! নানু মা কিছুটা ঘাবড়ে গেছেন। তাউ মুখে হাসি রেখা টেনে বললেন,,
--"আরে ইউসুফ! আয় দাদু ভাই বস!"
তিনি নামুর কথা পাত্তা না দিয়ে ডিরেক্ট প্রম্ন ছুঁড়লেন ডায়মন্ড কে,
--"তুমি এখানে? রাহুল ভাইয়াতো বাসায় নেই!আউট অফ টাউন!তাহলে?"
ডায়মন্ড হেসে বলল,,
--" আমি কুহুর কাছে এসেছি। না মানে আজকে ওর রেজাল্ট দিল। এত ভাল রেজাল্ট শুনে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলাম না।কি হলো কুহু বসছো না যে? বসো?"
তখনি ইউসুফ ভাই চোখ-মুখ শক্ত করে বলে উঠলেন,,
--" কুহু রুমে যা! এখন এই মুহূর্তে!"
আমি তখনি দৌড়ে উপরে চলে গেলাম। তারপর উকি দিয়ে নিচে তাকালাম। ইউসুফ ভাই ভ্রুকুটি কুচকে বললেন,
--" আজ তো তাহলে তিথিরও রেজাল্ট। শুধু মিষ্টি কুহুর জন্য কেন?"
ডায়মন্ড তখন হাসার চেষ্টা করে, আমতা আমতা করে বলল,,
--" না মানে ওই আর কি! দুজনের জন্য!"
এটুকু বলতেই যেন ঘাম ছুটে গেছে ডায়মন্ডের। তিনিও ইউসুফ ভাইকে এক প্রকার ভয়ই পান বলতে গেলে। এর আগেও ডায়মন্ড আমার কাছ ঘেঁষার ট্রাই করেছিল। ইউসুফ তখন ইশরা ইঙ্গিতে অনেক কিছু বলেছিলেন। এর পর কয়েকদিন এই আপদের অত্যাচার বন্ধ্য ছিল। আর এখন আবার শুরু। ইউসুফ ভাই তার বরাবর পা তুলে বসতেই সে দাঁড়িয়ে গেল, ইউসুফ ভাই তখন বললেন,,,
--" তো তিথি কই!"
দাদু বললেন,,
--" কি জেরা শুরু করেছিস? ওকে? বাবা তুমি ব..!"
নানু মাকে তার কথা পুরো করতে না দিয়ে ইউসুফ ভাই বললেন,,
--" তুমি এখন যেতে পারো!"
ডায়মন্ড মুখ কালো করে চলে যেতেই নানু মা ঘেন গেন করতে শুরু করলেন।ইউসুফ ভাই সে দিকে কান না দিয়ে বড় বড় পা ফেলে উপরে আসতে দেখে এক দৌড়ে নিজের ঘরে চলে আসলাম। খাটের এক কোনে জড়সড় হয়ে বসে রইলাম।উনি যে আমার ঘরেই আসচ্ছেন তা আমি ১০০% সিউর। এভেবেই গায় কাঁটা দিয়ে উঠচ্ছে।
আমার রুমের দরজা দাম করে খুলে ভিতরে ঢুকলেন উনি। তার ভয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম আমি। হাত পা কাঁপা শুরু।হৃদস্পন্দন যেন চক্রবৃদ্ধি হাড়ে বাড়চ্ছে। উনার লাল টকটকা চোখ আর মুখ দেখে ভয়ে গলা শুকুয়ে কাঠ। উনি দ্রুত বেগে আমার দিকে তেড়ে এসে দেয়ালের সাথে চেঁপে ধরলেন। হঠাৎ করে তার এমন আক্রমণে হার্টফেল করার উপক্রম। চোখ দুটি খিচে বন্ধ করে তার হাত দুটো খামচে ধরে আছি।ইউসুফ তখন হিসহিস করে বলল,,
--" খুব শখ পরপুরুষের সামনে যাওয়ার? হুম?(বলে আরেকটু চেপে ধরলেন আমি চোখ বন্ধ করেই "আহ্" করে উঠলাম..! সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে দাঁতে দাঁত চেপে আবার বললেন) মানা করেছিলাম না? তাহলে কেন গেলি? তাও ওই ইতরের সামনে? "
আমি এবার ব্যথা শইতে না পেরে কেঁদে দেই। তাতেও তার হেলদুল হলো না। উল্টো ধমকে বললেন,,
--" একদম কাঁদবি না! কাঁদলে চোখ দুটো এখনি পকেটে করে নিয়ে যাবো! বেদ্দপ? আর তুই নিচে কেন গেছিস! কি হলো বলছিস না কেন?"
--" অ...আমি জানমাত না! ন..নানু মা ডেকেছিলেন!আমি জানতাম না ডায়মন্ড ভাই এসেছে!"
ফুঁপিয়ে কেঁদে কাঁপা স্বরে কথা গুলো বললাম। ইউসুফ ভাই আমাকে ছেড়ে দিলেন।আলতো হাতে চোকের পানি মুছে দিয়ে বললেন,,
--"সরি বাবুইপাখি! আমার মাথা ঠিক ছিল না। সরি! কান্না করিস না! আচ্ছা এই দেক কানে ধরেছি!"
আমি নিঃশব্দে কেঁদেই যাচ্ছি। কষ্ট লাগচ্ছে খুব। রাগে অভিমানে তার দিক তাকালাম না। কেন তাকাবো? আজ কত দিন পর তিনি আমার সামনে তাও এমন রুড ব্যবহার করছেন। কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে। ইউসুফ ভাই আমার মুখ তার দিক ঘুরিয়ে ইনোসেন্ট ফেইস করে তাকিয়ে বললেন,,
--" সরি!"
তার এমন মুখ খানা দেখে বুক ফেটে কান্না আসতে লাগলো। সুন্দর মুখ খানা কেমন শুখনো হয়ে আছে। পছন্দের চুল গুলো এলোমলো ভাবে কঁপালে লেপ্টে আছে। অাগে থেকে অনেক খানি শুকিয়ে গেছেন। তার এই হাল দেখে বুকে ছ্যাত করে উঠলো। কি হাল তার চেহারার। আমি সইতে না পেরে আমি ইউসুফ ভাইয়ার বুকে ঝাপিয়ে পড়ে কেঁদে দিলাম। ইউসুফ ভাইয়াও পরম যত্নে আগলে নিলেন তার বুকে শক্ত করে। আর মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,,
--" প্লীজ বাবুইপাখি কাঁদিস না! প্লীজ!"