১৭!!
তাওহীদ ফোনে কথা বলছে। আর আরিশা বিছানায় হেলান দিয়ে বসে তাওহীদের পায়চারি করতে করতে কথা বলা দেখছে। আর মনে মনে একটা হিসেব কষছে৷ কি এমন হলো যে আয়ান হঠাৎ করে কোথাও চলে গেল! হঠাৎ কি মনে হতে আরিশা নিজের মোবাইলটা হাতে নিয়ে তারিখটা দেখেই চমকে গেল। তারপর তড়িঘড়ি করে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ালো। তাওহীদ আরিশার দিকে তাকিয়ে কলটা কেটে আরিশার দিকে এগিয়ে গেল।
-আরু? কি হয়েছে? এমন লাগছে কেন তোমাকে?
-তাওহীদ-। আমাদের এখনই যেতে হবে--। আমি জানি আয়ান কোথায় আছে--।
-হোয়াট? কোথায়? কি করে?
-এতো কথা বলার সময় নেই এখন৷ আপাতত এটা জেনে রাখো আয়ানকে যদি পাওয়া যায় তাহলে সিবিচেই পাওয়া যাবে--। নয়তো-।
-রিল্যাক্স আরু--। আমি দেখছি-।
-না তাওহীদ--। আমি যাবো আয়ানের কাছে--। প্লিজ?
-আচ্ছা চলো--৷ ছেলেটাকে ফিরিয়ে আনি-৷ কি যে করছে! কেন করছে! উফ! চলো--।
তাওহীদ আরিশাকে নিয়ে সীবিচের দিকেই গাড়ি ছোটালো। ওদের বাসা থেকে বিচে যেতে ঘন্টাখানেক সময় লাগবে। দুজনেই মনে মনে শুধু এটাই চাইছে আয়ানকে যেন ওরা ওখানেই পায়।
এদিকে মায়রা অনেকক্ষণ কান্নাকাটি করার পর এখন বসে বসে ফোঁপাতে ফোপাঁতে চোখ মুখ মুছছে নিজের৷ আর মায়রার পাশে বসে আভা ওকে এটা ওটা বলে থামানোর চেষ্টা করছে৷ সামি শুধু রুমটার দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ভাগনির কান্ড দেখছে। এই মেয়েটাকে কড়া করে কথা শুনিয়ে এমনিতেই সামির বুকটা ফেটে যাচ্ছে। তার উপরে মেয়েটা একেবারে কেঁদে কেটে হেঁচকি তুলে ফেলায় আরো বেশি খারাপ লাগছে সামির। আরো কয়েক মিনিট অপেক্ষা করে সামি ধীর পায়ে এগিয়ে এসে মায়রার সামনে হাঁটু মুড়ে বসলো৷
-মায়রা মামনি? তাকা তো মামার দিকে? কাঁদছিস কেন এমন? আমি মরে গেছি নাকি রে মেয়ে?
-মামনি তুমি তোমার বরকে এসব বলতে মানা করো বলে দিলাম--।
-এই রে--। আমার মা দেখি রেগে আছে এখনো? এই দেখো মা কান ধরছি? সরি?
-আমি কারো সাথেই কথা বলবো না। হুহ--৷ আমি কে যে---।
-ও আচ্ছা! তাই নাকি? আমার কথা আমাকেই ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে রে মেয়ে? দাঁড়া--। এই আভা চলো? আমরা চলে যাই---।
সামি মায়রাকে দেখিয়ে আভার হাত ধরে টানার অভিনয় করতেই মায়রা ছোট বাচ্চাদের মতো আভার হাত টেনে ধরলো।
-আমার মামনি কোথাও যাবে না পচা লোক--। তুমি একটা খারাপ। আমি নাকি কারো মা--। তাই তো এতোগুলো দিন আমার সাথে একটা কথাও বলে নি--। আমি আছি না মরেছি--।
-মায়ু?
সামি মায়রাকে চট করে বুকে জড়িয়ে নিলো। আভাও এসে পাশে দাঁড়ালো সামির৷
-এসব বাজে কথা বলবি তো মার খাবি বলে দিলাম---।
-আম সরি মামা--৷ আম সো সো সরি--।
-কাঁদিস না মা।
-হুম--। কেমন আছো মামা?
-মেয়েটা এতো কষ্টে আছে জেনেও ভালো থাকি কি করে বল?
-আমি তো ভালোই আছি মামা।
-সে তো দেখতেই পাচ্ছি কেমন ভালো আছিস৷ হাত পুড়লি কি করে?
-মামনি তো নিজের মেয়েকে কোন কাজকর্মই শিখিয়ে শ্বশুরঘরে পাঠায় নি। তাই একটু আধটু তো হাত পুড়বে, পা কাটবে--। এসব তো কমন ব্যাপার মামা---।
-তোদের কাজের বুয়া আসে নি আজ?
-মামা দুজনের সংসার-। সেটার জন্য আবার কাজের লোক? এতোটাই অকাজের কি তোমাদের মেয়েটা?
-কি হয়েছে বল তো মায়রা? সীমান্ত কি কিছু---?
---- বাদ দা তো মামা। তোমার হঠাৎ! আমি ভাবতেই পারি নি--।
-খুশি হস নি মামা আর মামনিকে দেখে---।
-ভিষণ খুশি হয়েছি---। এতো খুশি যে আমি তোমাকে বলে বুঝাতে পারবো না মামা--।
-তাহলে তোকে আরেকটা খুশির খবর দেই শোন। আগামী সপ্তাহে তোদের ব্যাচের রিইউনিয়ন। তোর ফ্রেন্ডেরা বার বার করে বলেছে তোকে খবরটা দিতে---।
-মামা!!
-হুম--। সো তুই আমাদের সাথে যাবি--। বিয়ের পর তো একটা দিনও বাপের বাড়িতেও নাকি নাইওর যাস নি--। অন্তত কয়েকটা দিন মামার বাসায় থেকে আসতে পারবি এই উছিলায়--। পরে না হয় সীমান্ত গিয়ে নিয়ে আসবে---।
-মামা? ও রাজি হবে না--।
-রাজি হবে না মানে? বাসায় তো গরু ছাগল নেই যে সেগুলোকে রেখে তুই যেতে পারবি না। আরে বাবা। বিয়ের প্রথম বছরটাই তো ঝাড়া হাত পা। যেদিকে ইচ্ছে ঘুরবি---।
-------------------------------
-কি ব্যাপার বলতো মায়রা? তুই কি যেতে চাচ্ছিস না আমাদের সাথে?
-আমার চাওয়া না চাওয়ায় আজকাল কিছুই হয় না--। হয়তো লোকটা তোমাদের সামনে খএব সুন্দর করে বলবে 'তোমার ইচ্ছে হলে যাও'। কিন্তু তার পরেরটা তো আর--।
-মায়রা? কি করেছে ও তোর সাথে? বল আমাকে?
-বলার মতো বেশি কিছু করে নি--।
-মায়রা? একটা কথা বল তো? তুই নাকি বিয়ের পরের দিনই জামাইকে বলে ঢাকায় চলে এসেছিস? বাড়িতে নাকি শ্বশুর শাশুড়ির সেবাযত্ন করতে পারবি না--।
-মানে! কি বলছো?
-তোর শাশুড়ি তোর মাকে বলেছে ফোন করে--। কথাটা কি সত্যি?
-মামা! তোমার মনে হয় আমি!!
-তোকে চিনি বলেই কথাটা মানতে পারি নি---। কিন্তু তোর শাশুড়ি তোর নামে এসব কেন---?
-উনি মিথ্যে বলে নি মামা। উনাকে যা বলা হয়েছে উনিও তাই বলেছে-।
-মানে?
-মাও সেদিন কথাটা আমাকে বলেছিল। আমি বুঝতে পারি নি। এখন বুঝতে পারছি--।
-কি রে হাসছিস কেন?
-মামা তোমাদের জামাই আমাকে বলেছে তার অফিসের অনেক কাজ জমা হয়ে আছে, তাই আমাকে নিয়ে ঢাকায় চলে এসেছে বৌভাতের দিনই--। আর তার মাকে বলেছে যে---যে আমি তাদের সাথে থাকতে চাই না তাই আমরা চলে যাচ্ছি--। হাসির কথা না বলো?
-ও মাই গড! এ তো দেখি ক্রিমিনাল মাইন্ডেড ছেলে রে!
-----------------------------
-গাধার মতো আরো কর বিয়ে--। তোকে ধরে থাপড়াতে ইচ্ছে করছে এখন--। ফাজিল মেয়ে--।
-মামা?
-কি মামা! গাধার মতো সব ছেড়ে ছুঁড়ে বিয়ে করো নিলি--। কি লাভ হলো তাতে? তোর বাবা মা তোর জীবনটা নিয়ে এতো বড় ব্লান্ডার করবে আমি ভাবতেও পারি নি-। ওফ!!
-আমি কি করতাম বলো? মা বলেছে আমার কারণেও যদি তাদের বদনাম হয় তাহলে বাবা মরেই যাবে--। আমি সন্তান হয়ে কি করে- নিজের বাবার মৃত্যু কামনা করতাম বলো?
-এই জায়গায় বাঙালি ধরা খেয়ে যায় বুঝলি? বাবা মা জানে সন্তানের উইক পয়েন্টটা কোথায়৷ সন্তান সব পারলেও তাদের মৃত্যুর কারণ হতে হবে জানলে নিজের ভালোবাসা এমন কি নিজের জীবনটাও কোরবান করতে পারে-এটা তারা খুব ভালোই জানে--। আর বাঙালি এতেই কুপোকাত। সহজ পদ্ধতি। কি বলিস?
-মামা?
সামি কিছু একটা বলতে যাবে এর আগেই আভা উঠে দাঁড়ালো।
-এই ছাড়ো তো এসব। তোমাদের মামা ভাগনির এসব বকবকানি আমার একদম পছন্দ হচ্ছে না। আমি এখন রাঁধবো--। তোমরা দুজনে আগের মতো রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমাকে ডিস্টার্ব করবে এসো? মায়রা--। কোথায় কি আছে দেখিয়ে দিবি চল--।
-হ্যাঁ মামনি---।
আভার কথায় সামি আর মায়রা দুজনেই হেসে ফেললো। এরপরে তিনজনে মিলে হৈ হুল্লোড় করে রান্না করায় লেগে গেল। আর ছয়টা মাস পরে মায়রার ঠোঁটের কোণে আবার আগের সেই প্রাণবন্ত হাসিটা দেখা দিয়েছে। আর এই একটা হাসিই সামি আর আভার খুশির জন্য যথেষ্ট। এই মেয়েটার ঠোঁটে এভাবে হাসিটা ফুটিয়ে রাখার জন্য তা যা করার দরকার তাই করতে পারে৷
১৮!!
গাড়ি থেকে বেশ কিছুটা রাস্তা পায়ে হেঁটে গিয়ে সাগর তীরের একটা বিশাল পাথরের উপরে আয়ানকে বসে থাকতে দেখে যেন আরিশা আর তাওহীদ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। আরিশা একবার একবার তাওহীদের দিকে তাকিয়ে গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে এসে আয়ানের পাশেই পাথরটায় পা ঝুলিয়ে দিয়ে বসলো। আয়ান টের পেল কিনা বুঝা গেল না। সাগর পাড়ের এই তীক্ষ্ম রোদে ছেলেটা কি করে বসে আছে সেটাই রীতিমতো অবাক হওয়ার বিষয় আরিশার কাছে। কেমন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সাগরের ঢেউগুলোর দিকে। কি দেখছে একমনে! আরিশা আর কিছু না ভেবে হালকা কেশে গলা পরিষ্কার করে নিলো। আর সেই শব্দে আয়ানও যেন ঘোর কেটে তাকালো আরিশার দিকে। আরিশাকে পাশে বসা দেখে আয়ানের ভ্রু কুঁচকে গেল কিছুটা।
-আরু? তুই এখানে কি করছিস?
-সেটা তো আমাদেরও প্রশ্ন আয়ান। তুই এখানে কি করছিস?
-কি আর করবো? বসে আছি-। আর এই অবস্থায় তাও এতো রোদে তুই কেন বসে আছিস এখানে? তাওহীদ ভাই কই? একা তো আসিস নি নিশ্চয়ই--।
-তোর কি হয়েছে আয়ান?
-আমার কিছুই হয়নি--। মনে হচ্ছে তোর মাথাটাই খারাপ হয়ে গেছে। বেবিটাকে কষ্ট দিয়ে মজা পাচ্ছিস ফাজিল মেয়ে? ওঠ বলছি? চল আমার সাথে--। তাওহীদ ভাইয়েরও হিসাব নিচ্ছি দাঁড়া---।
-আয়ান? চুপ করে এখানে বস--।
-আরু?
-বসবি কিনা?
-হ্যাঁ--বাবা। বসলাম। খুশি এবার?
-তুই সারারাত এখানে এভাবে বসেছিলি? বাসায় না গিয়ে---।
-তোর মাথাটা দেখি সত্যি গেছে--। এখানে বসে থাকলে এতোক্ষণে জোয়ারের টানে কোথায় চলে যেতাম--।
-তাহলে কোথায় ছিলি?
-ছিলাম আরকি--। এদিক ওদিক ঘুরলাম--।
-তা হঠাৎ কি মনে করে?
-কেন? একটা দিন একটু নিজের মতো করে----।
-আয়ান? আঙ্কেল আন্টি কতোটা টেনশনে পড়ে গেছে সেই খেয়াল আছে তোর? তারা সমানে কল করেছে তোকে কালকে--। সারা রাত বাইরে ঘুরেছিস, কথাটা বলতে একটুও লজ্জা করছে না তোর? আঙ্কেল আন্টি এভাবে টেনশন করলে অসুস্থ হয়ে যেতে পারে কথাটা মাথায় ঢুকছে না তোর?
-আমি কি করবো? আমি ওকে---।
-একটা কথা শোন আয়ান। যে গেছে তার জন্য কেঁদে কি হবে? আল্লাহ যদি চায় ওর তোর হবে, তাহলে পৃথিবীর কোন শক্তিই সেটা আটকাতে পারবে না। কিন্তু মায়রা যদি তোর ভাগ্যেই না থাকে তাহলে তুই যাই করিস না কেন তাতে কিন্তু কোন লাভই হবে না আয়ান--।
-বাদ দে না আরু---।
-ওই ছেলে বাদ দিব কি হ্যাঁ? কি বাদ দিবো? একটা মেয়ে তোকে ছেড়ে অন্য একজনকে বিয়ে করেছে বলে কি তোর সব শেষ হয়ে গেছে? দুনিয়াতে কি এমন ঘটনা প্রথমবার ঘটেছে?
-মায়রা শুধু একটা মেয়ে ছিল না আরিশা। সি ওয়াজ মাই এভরিথিং-।
-ইয়েস সি ওয়াজ--। ছিল। এখন তো নেই--। তাই যারা আছে তাদের দিকে নজর দে--। তুই যে এভাবে গুম মেরে বসে থাকিস, ঠিক মতো কথা বলিস না কারো সাথে, খাওয়া দাওয়া তো আল্লার রহমতে ছেড়েই দিয়েছিস-এগুলো দেখে তোর কাছের মানুষগুলো কি খুব বেশি ভালো আছে? তোর মা বাবা তারা কি ভালো আছে? সারাদিন মাথাট মধ্যে একটা টেনশন ঘুরে আমাদের। কি করছিস কোথায় আছিস। কেন? একটা মেয়ে চলে গেছে বলে? শুধু ওই মায়রাই তোর সব? আমরা কেউ কিচ্ছু না?
-আরিশা--। লেকচার থামা প্লিজ।
-ঠাটিয়ে একটা থাপ্পড় দিবো যদি আর একটা কথা বলিস তুই--। সবাই টেনশনে মরছে তার জন্য সে আসছে 'লেকচার থামা' বলতে--।
-আরু? মায়রাকে ছাড়া এক একটা সেকেন্ড আমার কাছে বিষের মতো লাগছে--। মনে হচ্ছে এভাবে তিলে তিলে মরার চেয়ে----।
-কি? বাকিটাও বল? মরতে মন চাচ্ছে তোর? তো মরেই যা তুই-। তুই শান্তি-আমরা সবাই শান্তি। কিন্তু একটা কথা বল তো? তুই মরলে তোর বাবা মাকে দেখবে কে? আমার তো কোনো দায় পড়ে নি তাদেরকে দেখার-। আর তোর কোনো ভাই বোনও নেই যে তারা শেষ বয়সে অন্য সন্তানের সাহারায় বাঁচবে----।
-------------------------------
-শোন আয়ান--। আমরা যতই মনে করি স্পেশাল একজন মানুষ ছাড়া আমরা একেবারেই অচল, টিকবে পারবো না, বাঁচতে পারবো না, আসলে সেটা কিন্তু মোটেও নয় জানিস? শুধু সেই স্পেশাল একজনকে নিয়েই তো তোর দুনিয়া নয়, সেখানে আরো মানুষ আছে। তাদের জন্য হলেও তো তোকেও বাঁচতে হবে, সুখে থাকতে হবে। তাদের মুখের দিকে তাকিয়ে হলেও নিজের জীবনে মুভ অন করতে হয় তো--।
-------------------------------
-আর হয়তো যে ছেড়ে গেছে বলে নিজেকে এতোটা কষ্ট দিচ্ছিস সে হয়তো তোর চেয়ে আরো কয়েক গুণ বেশি কষ্ট সহ্য করছে। তবু বেঁচে আছে। কেন বল তো? কারণ মরে যাওয়াটা কোন সমাধানই নয়। শুধু মন থেকে দোয়া কর যেন সে সুখে থাকে। আর হাসিমুখে নিজের লাইফে মুভ অন কর--। বাকিটা উপরওয়ালা যা চায় তাই হবে-।
-বুঝলাম মেরি মা-। বহুত লেকচায় দিয়ে ফেলেছেন---। এখন চলুন প্লিজ? আর এভাবে রোদের মধ্যে বসে থাকতে হবে না---। আপনার জন্য আমার ছোট্ট মামনিটাও টেনশনে আছে---।
-সেটাও তোরই দোষ৷
-আচ্ছা বাবা৷ মানছি আমার দোষ। এবার চল? তাওহীদ ভাই কই?
-ওই যে--। পিছনে দাঁড়িয়ে আছে।
-আয়--। উঠি তাহলে---।
-হুম---।
আয়ান আরিশাকে হাত ধরে উঠতে হেল্প করলো। তারপর দুজনে এটা ওটা বলতে বলতে তাওহীদের কাছে এগিয়ে এলো। তাওহীদ একটা হাসি দিয়ে আয়ানের সাথে হ্যান্ড শেইক করে একবার জড়িয়ে ধরলো।
-ভাই যে ভয়টাই না পাইয়ে দিয়েছিলে!
-কিন্তু আপনারা জানলেন কি করে আমি বিচে আছি?
-সেটা জানার জন্য তোমার বান্ধবী মিস আরিশা দি গ্রেট গোয়েন্দাই যথেষ্ট নয় কি?
-তাওহীদ!!
তাওহীদের কথা শুনে আয়ান হেসে ফেললো। আর আরিশা কটমট করে তাওহীদের দিকে তাকালো। তাওহীদ বেচারা বউয়ের রাগী মুখটা দেখে একটু ঘাবড়ে গেল।
-না মানে আরু--তুমিই আয়ানকে খুঁজে বের করেছ সেটা বললাম আর কি---।
-তুমি আজকে বাসায় চলো--। তোমার আজকে হচ্ছে দাঁড়াও---।
-এই না না না--।
আরিশা তাওহীদের দিকে আরেকবার চোখ গরম করে তাকিয়ে আয়ানের দিকে ফিরলো।
-তুই আমাদের সাথে চল এখন৷
-আরে না--। গাড়ি আছে সাথে। বাসায় চলে যাবো--। তোরাও চলে যা। আমার জন্য অহেতুক তোদের দুজনেরও টেনশনে পড়তে হলো। সরি রে--। সরি তাওহীদ ভাই--।
-যা ভাগ তো--৷ টেনশনে ফালাই এখন আসছে সরি বলতে--। মাফ নাই এখন--। বাসায় যা----।
-এখন বাসাই যাচ্ছি--। টায়ার্ড লাগছে প্রচন্ড--। তুই কেমনে রাগ করে থাকিস সেটাও দেখবো নি। আপাতত যাচ্ছি---।
-যা তো ভাগ---।
এদিকে দুপুরবেলা মায়রা মামা মামির সাথে গল্প করছিলো এমন সময় সীমান্তের কল এলো। মায়রা কলটা রিসিভ করে কানে লাগালো।
-হ্যালো মায়রা? এই শোনো না কি খাবে? কি অর্ডার করবো? চাইনিজ নাকি-----?
-খাবার পাঠানো লাগবে না---।
-তুমি এতো কথা বলো কোন আমি তো বুঝি না। যেটা জিজ্ঞেস করছি সেটা বলো---।
-না আসলে--। মামা মামি এসেছে ঘন্টাখানেক আগে-। মামনি রান্না করছে---।
-মামা মামি এসেছে! হঠাৎ?
-------------------------------
-আর আমাকে বলবে না? উফ! আমি খাবার পাঠিয়ে দিতাম। মেহমানের হাতে রান্না করাচ্ছো! কি কমনসেন্স তোমার মায়রা! ওফ!
-না মানে--। কথা বলছিলাম। আর মামিও চাইলো---।
-বাদ দাও। তুমি মামা মামির সাথে গল্প করো--। আমি বিকেলেই চলে আসবো---।
-হুম----। রাখছি।
-হুম।
মায়রার কলটা কেটেই সীমান্ত ভ্রু কুঁচকে চিন্তা করতে লাগলো। এই দুই আপদ হুট করে আসার পিছনে কোন প্ল্যানিং নেই তো? সীমান্ত তাড়াতাড়ি নিজের কাজ শেষ করায় মন দিলো। তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতেই হবে আজ তার। যে করেই হোক।।