উমা - পর্ব ১২ - মুশফিকা রহমান মৈথি - ধারাবাহিক গল্প


উমা জল ছেড়ে দিলো। কোমল গাল বেয়ে নোনাজলের স্রোত গড়াচ্ছে। উমার জল যেনো তীরের মত বিধছে রুদ্রের বুকে। নিজেকে আটকে রাখতে পারলো না সে। তড়িৎ গতিতে উমাকে জড়িয়ে ধরলো সে। নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে বললো,
“কথা দিচ্ছি উমা, আর কখনো তোমাকে অভিযোগের সুযোগ দিবো না। কখনো তোমার কাজলকালো চোখে অশ্রুর বিন্দু জমতে দিবো না। কথা দিলাম”

উমা মুখ তুলে চাইলো। রুদ্র তখন পরম আদরে তার অধরজোড়ায় গভীর ছোয়া একে দিলো। আজ কেনো যেনো উমা বাধা দিলো না। অভিমানের প্রাচীর ভাঙ্গছে ধীরে ধীরে। ঘরের নৈঃশব্দ্যতা ভালোবাসার উষ্ণ আবেশে মুখোরিত হলো। সেই মূহুর্তেই ডিমের প্লেট নিয়ে হাজির হলো ফুলির মা। ফুলির মার আকস্মিক আগমনে স্বম্বিত ফিরে উভয়ের। উমা খানিকটা সরে দাঁড়ায় রুদ্রের থেকে। কোমল গাল জোড়া উষ্ণ লালিমায় রঞ্জিত হয়ে রয়েছে। ফুলির মা বরাবরি এমন, তার জায়গা জ্ঞান নেই এর কাছাকাছি। স্বামী স্ত্রীর অন্তরঙ্গ মূহুর্তে তার আকস্মিত উপস্থিতিতে সে মোটেই লজ্জিত নয়। বরং নির্বিকার চিত্তে বললো,
“নাও নাও, রুদ্র দা খায়ে লও। কত্তা মা পাঠাইছে।“
“তোমার বোধ কোনোদিন হবে না তাই না?”
“বারে, আমার কি দোষ। ফটক খুইলে প্রেম করলে আমি কেমনে বুঝবো। এখন আমি যাচ্ছি গা, তুমি দরজা দিয়ে চুম্মাচাটি করো”

উমার ইচ্ছে হলো লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে। এতোটা অপ্রস্তুত এই প্রথম হলো। রুদ্র খানিকতা বিব্রত বোধ করলো। ফুলির মা ডিমের থালা রেখে বেড়িয়ে গেলো। উমা থালাটা এগিয়ে দিয়ে বললো,
“খেয়ে নিন, বলের অভাব হয়েছে আপনার”
“কে বলেছে তোমায়?”
“রহিম কাকু তো বলে গেলেন”
“ও টাকা খাওয়ার ধান্দা, আমার মতো উচা লম্বা লোকের কি বলের অভাব হবে? এ মানা যায়।“
“উহু, বেশি কথা কেনো বলছেন। খেয়ে নিন না।“
“বেশ বল্লুম না। কাজের কথা বলি।“
“বলেন”
“আগামীকাল তোমার কলেজ ভর্তি। সক্কালে বের হবো। প্রিন্সিপালের সাথে আমার কথা হয়ে গেছে। উনি আমাকে ভালোভাবে চেনেন। বলেছে তোমার ভর্তি হয়ে যাবে। যদিও বছরের মাঝে কিন্তু নিবে বলেছেন”

রুদ্রের কথা শুনে উজ্জ্বল হয়ে উঠে বিমর্ষ মুখখানা। এতো কাজের মাঝেও রুদ্র তার ভর্তির সকল ব্যাবস্থা করে এসেছে দেখে সন্তোষের কোমল দোলা মনকে পুলকিত করে তুললো। নমনীয় কন্ঠে বললো,
“আপনার মনে ছিলো?”
“থাকবে না কেনো?”
“এমনি”
“সব ভুললেও দুজন নারীকে আমি ভুলতে পারি না। একজন যে এই ডিমের পেছনে ছুটেছে, আরেকজন তুমি।“
“আমার জন্য তো অপর জন বেশ চটেছেন”
“পুরোনো দিনের মানুষ কি না। তাদের চিন্তাধারা এক বাক্সে বন্দী। স্বামী, সন্তান এবং সংসার। এর বাহিরে কখনো সে বের হতেই পারে নি। আমি চাই না তুমি সেই বাক্সে আটকে থাকো। আমি চাই তুমি আমার সাথে সাথে এগোও।“
“আপনি কি এবার সত্যি ভোটে দাঁড়াবেন?”
“রাজনীতি আমার রক্তে আছে, রক্ত তো শরীর থেকে আলাদা করতে পারবো না।“

উমা চুপ করে গেলো। তার নীরবতাকে উপলব্ধি করতে পারলো রুদ্র। রুদ্র তার চোখে চোখ রাখলো। কি অদ্ভুত না, কাজলকালো চোখের আড়ালে লুকিয়ে থাকে শত সন্তোষ,  বিষাদের উপকথা; তবুও এই চোখের ভাষা বোঝা বড় দায়। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
“চিন্তা করো না, আমি আর কারোর রক্তে হাত রাঙ্গাবো না। একজন ভালো নেতা হয়ে দেখাবো তোমায়।“
“ভালো মানুষটি হওয়া কি খুব কঠিন।“
“কঠিন নয়, তবে আমি হতে চাই না। এই দুনিয়া ভালো মানুষের নয়। ভালো হয়ে ভালো থাকা যায় না। হিংস্র পশুরা ছিড়ে খাবে। আমার দূর্বলতাকে বাঁচাতে হলেও আমাকে শক্ত হতে হবে। শুধু একটাই আবদার, বিশ্বাস রেখো। বিশ্বাস আমি ভাঙ্গবো না।“

উমা গভীর নয়নে তাকালো রুদ্রের দিকে। আজ যেনো রুদ্রকে বড্ড চেনা লাগছে তার। সেই চেনা মানুষ যাকে ভালোবাসতে ইচ্ছে হয়। হ্যা, রুদ্রকেও ভালোবাসতে ইচ্ছে হয় তার। সে কি তবে মনের আঙ্গিনাতে ঠায় দিয়েছে এই নিষ্ঠুর মানবকে। কে জানে, হয়তো__________________

অভিনব সিংহ এর সামনে দাঁড়িয়ে আছে রুদ্র। অভিনব সিংহ পাইপ টানতে ব্যাস্ত। তিনি বেশ আয়েশ করেই পাইপ টানছেন। এতে রুদ্র বেশ বিরক্ত ই হচ্ছে। চোখ কুচকে বাবার দিকে তাকিয়ে আছে সে। বিগত আধা ঘন্টা যাবৎ অহেতুক ই সে অভুনব সিংহের সামনে বোকার মত দাঁড়িয়ে আছে। কারন বাবা তাকে জরুরি তলপ পাঠিয়েছে। কিন্তু রুদ্র বুঝতে পারছে না বাবা জরুরি ভাবে ডেকে কেনো পাইপ টানতে ব্যাস্ত। হাত ঘড়িটার দিকে বারে বারে সে তাকাচ্ছে। রাতের খাবার সময় প্রায় হয়ে এসেছে। বরাবর ই দ্রুত খাবার রেকর্ড অভিনব সিংহ এর। আজ যেনো খাবারের কথা ভুলেই গিয়েছেন তিনি। সে বেশ আয়েশ করে চুরুট টানতেই ব্যাস্ত। একরাশ বিরক্তি নিয়ে রুদ্র বললো,
“বাবা, ডেকেছিলেন যে। কিছু বললেন না, আমি কি চলে যাবো।“
“যাবে কেনো? বাবার সাথে দু মিনিট বসো। তোমার মা বলছিলো, কাল বৌ মা এর কলেজে নাকি ভর্তি”
“আজ্ঞে, হ্যা।“
“তাহলে কালীগঞ্জেই যাবে তোমরা?”
“তখন তো কথা হলো”
“হ্যা তা হলো, কিন্তু কালীগঞ্জ গেলে তুমি গুদাম কিভাবে দেখবে?”
“আমি তো জানালাম ই আমি এবার ভোটে মেম্বার হিসেবে দাঁড়াতে চাই। আর সত্যি বলতে লোকের কানে ঢি ঢি পড়ে গেছে আপনার জেলে যাওয়া। আমার মতে এসব থেকে আপনার বিরতি নেওয়াই উচিত। লোকে কি বলবে? চেয়ারম্যানকে পুলিশ ধরেছে। এর চেয়ে বরং আমিও রাজনীতিতে যোগ দেই। কালীগঞ্জে থাকলে আপনার সুবিধা বই অসুবিধা হবে না। একেক ভেতর দুই। আপনার পাল্লাও বাড়বে, আপনার নাম ও পরিষ্কার হবে।“

অভিনব সিংহ এবার চোখ মেললেন, পাইপ রেখে নড়ে চড়ে বসলেন। ভ্রু যুগল কুঞ্চিত করে তীর্যক চাহনী প্রয়োগ করলেন রুদ্রের দিকে। কিন্তু রুদ্র নির্বিকার। অভিনব বাবু গম্ভীর কন্ঠে বললেন,
“তুমি কি সেদিনের ব্যাবহারে গোসা করেছো?”
“গোসা কেনো করবো বাবা?”
“না আসলে সেদিন একটু বেশি ই বলেছিলুম কি না। গোসা করে যদি আমার থেকে দূরে যেতে চাও তবে বলবো। এমন টা করো না। আমি তো বারো ঘাটে জল খেয়েছি। মানুষ ধরতে আমার সময় লাগে না। এসব অজুহাত দিলে কি আমি শুনবো। পুলিশ কেস এমনটা এই জীবনে কম সামলাই নি। এই আবদুল্লাহ এর জন্য তোমার সাহায্যের প্রয়োজন নেই আমার। তুমি এবার ঝেড়ে কাসো তো বাছা”
“সত্যি বলবো বাবা?”
“বলো”
“আমি উমাকে আপনার এই বন্দিশালা থেকে মুক্ত করতে চাই………

—————

অভিনব সিংহ এবার চোখ মেললেন, পাইপ রেখে নড়ে চড়ে বসলেন। ভ্রু যুগল কুঞ্চিত করে তীর্যক চাহনী প্রয়োগ করলেন রুদ্রের দিকে। কিন্তু রুদ্র নির্বিকার। অভিনব বাবু গম্ভীর কন্ঠে বললেন,
“তুমি কি সেদিনের ব্যাবহারে গোসা করেছো?”
“গোসা কেনো করবো বাবা?”
“না আসলে সেদিন একটু বেশি ই বলেছিলুম কি না। গোসা করে যদি আমার থেকে দূরে যেতে চাও তবে বলবো। এমন টা করো না। আমি তো বারো ঘাটে জল খেয়েছি। মানুষ ধরতে আমার সময় লাগে না। এসব অজুহাত দিলে কি আমি শুনবো। পুলিশ কেস এমনটা এই জীবনে কম সামলাই নি। এই আবদুল্লাহ এর জন্য তোমার সাহায্যের প্রয়োজন নেই আমার। তুমি এবার ঝেড়ে কাসো তো বাছা”
“সত্যি বলবো বাবা?”
“বলো”
“আমি উমাকে আপনার এই বন্দিশালা থেকে মুক্ত করতে চাই, যেখানে আপনার কোনো কালোছায়া ওর কোনো ক্ষতি করবে না“
“তোমার কেনো মনে হলো আমি উমার কোনো ক্ষতি করবো?”

বাকা হাসি দিয়ে রুদ্রের চোখে চোখ রেখে কথাটা জিজ্ঞেস করে অভিনব সিংহ। রুদ্র কিছুক্ষন চুপ করে থেকে শান্ত কন্ঠে বলে,
“বাবা, আমার ইহজীবনটাই কেটেছে আপনাকে দেখে। আমি আপনার শিরা উপশিরার সাথে পরিচিত। আপনির আতে ঘা লাগলে আমাকে সরিয়ে ফেলতেও আপনি দু বার ভাববেন না। পিসে মশাই তো আপনার ই শিকার ছিলো। একমাত্র বোনের সোহাগ কাড়তে যেহেতু দুবার ভাবেন নি, সেখানে উমা তো একটা তুচ্ছ প্রানী মাত্র। একটা ঢলা দিলেই শেষ। তাই উমাকে আপনার নোংরা খেলা থেকে দূরে রাখতে চাই আমি। যে চো্রাবালিতে আমার পা আমি জানি আমার নিস্তার নেই। কিন্তু উমা তো শ্বেত কোমল মাত্র। ওকে এই নোংরামি থেকে দূরে রাখাটাই শুভ। আর একটা কথা, আমি বট গাছের নিচে পিসে যাওয়া চারাটি হতে চাই না। আমি সেই বট গাছ হতে চাই যেখানে হাজারো পক্ষী বসতি গড়বে। আসি”

রুদ্র যেতে ধরলে অভিনব সিংহ আয়েশী কন্ঠে বলেন,
“আমার বন্দিশালাটা কি শুধু এই বাড়ি বা গ্রাম অবধি ই আবদ্ধ? তোমার মনে হয় না আমার হাত ওখানেও যেতে পারবে?”
“আমার প্রাচীর ভেঙ্গে যদি আপনার কুছায়া ঢুকতে পারে তবে আমি নিজেই হাটু গেড়ে নিবো।“

বলেই রুদ্র ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়। অভিনব সিংহের মুখোভাব গম্ভীর হয়ে উঠে। যে ছেলের হাটু ভেঙ্গে তাকে পঙ্গু করে দিয়েছিলো অভিনব সিংহ সেই ছেলে আজ মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়েছে। এতোকাল রুদ্র কেবল ই তার হাতের পুতুলটি ছিলো। যে তার কথায় উঠতো আর বসতো, কিন্তু এখন রুদ্র কাঠপুতুলটি নেই। অভিনব সিংহ এর মনের কোনে আশ্বিনের কাল মেঘ জমলো। এই মেঘ ভয়ের। রুদ্র এমন একজন ব্যক্তি যে তার সকল কাজের জীবন্ত সাক্ষী, অভিনব সিংহ এর কালো কারবাড়ি, অন্যায়, দুষ্টতার প্রাসাদের কোথায় কোন সুরঙ্গ রয়েছে এই জ্ঞান রুদ্র ব্যাতীত সবার অজানা। নিজেকে গড়তে যেয়ে না তাকেই গুড়িয়ে ফেলে সেই ভয় ই তাকে গিলে খাচ্ছে। নিজের নিয়ন্ত্রন হারা্তে লাগলেন অভিনব সিংহ, পাইপ টানতে বিছ্রি লাগছে। মুখ তেতো হয়ে আসছে। তাই ছুড়ে ফেললেন পাইপটি। এভাবে হেরে গেলে চলবে না, খুব দ্রুত কিছু একটা করতেই হবে। এবং সেটা অতিসত্তর_____________

১৪!! 

কালীগঞ্জ ডিগ্রী কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে আছে উমা এবং রুদ্র। এই প্রথম গ্রাম থেকে বের হয়েছে উমা। তার টানা টানা চোখে পৃথিবীর নতুনত্বকে বন্দী করতে ব্যাস্ত ছিল সে। গ্রাম থেকে বেশ দূরে কলেজটি। যদিও তারা রুদ্রের মোটর সাইকেলে এসেছে তবুও কম সময় লাগে নি। পুরোটা রাস্তা দুচোখ ভরে সে অজানা অচেনা আকাশের কাব্য পড়েছে সে, অজানা বাতাসের গল্প শুনেছে। ইট পাথরের শত শত দালান সাক্ষী রেখে মোটর সাইকেল চলছে কালো পিচের রাস্তায়। এক আকাশ নীলচে রঙ্গ এবং একমুঠো সোনালী রোদ্দুর মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে উমার চোখের সামনে। অজান্তেই ঠোট চিরে উচ্ছ্বাসের মুক্তোদানা পরিস্ফুটিত হচ্ছে। মোটর সাইকেলের আয়না দিয়ে আড়চোখে রুদ্র তাকে দেখে নিলো। ষোড়শীর চোখে না জানে কত কৌতুহল। এই কৌতুহলের সাক্ষী আর এই কালো পিচের কালীগঞ্জের সড়ক। মোটর সাইকেল থামলো কালীগঞ্জ ডিগ্রী কলেজের সামনে। কলেজ টি ১৯৬৯ সালে স্থাপিত। বেশ পুরোনো দালান গুলো। বিশাল মাঠ পেরিয়ে প্রিন্সিপালের রুম। উমা অবাক নয়নে দেখে যাচ্ছে কলেজটিকে। এই প্রথম এত বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দেখেছে সে। তার মনে হলো মনের আঙ্গিনায় নতুন প্রভাতের সূচনা হয়েছে, কালো মেঘের দল সেই সোনালী কিরণে যেনো উধাও হয়ে গিয়েছে। রুদ্র মুচকি হেসে বলল,
“শুধু দেখলেই হবে, ভর্তি হতে হবে তো। সাতক্ষীরার দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠিত কলেজ এটা। বেশ পুরোনো। আমি আর শাশ্বত ও এখানেই পড়েছি।“
“তাই?”
“কেনো আমাকে দেখলে কি মূর্খ মনে হয়?”
“তা মনে হয় না, তবে শিক্ষিত ও মনে হয় না। কেমন যেনো গা ছাড়া ভাব। বইতে বলে শিক্ষিতরা নাকি মার্জিত হয়।“
“আমি অমার্জিত?”

রুদ্র ঝাঝালো কন্ঠে প্রশ্ন ছুড়ে দেয় উমার দিকে। অন্য সময় হলে উমা দমে যেতো, কিন্তু আজ দমলো না। নির্ভীক কন্ঠে বললো,
“মার্জিত মানুষ এরুপ কর্কশ কন্ঠে কথা বলে না।“

উমার উত্তরে হেসে উঠে রুদ্র। সে কথা বাড়ায় না। উমার হাত নিজের মুঠোতে নেয়, তারপর হাটতে লাগে প্রিন্সিপালের রুমের দিকে। উমার মুখেও এক স্নিগ্ধ হাসি ফুটে উঠে, এ যেনো অকৃত্রিম সুখ। উমা চায় চিরটাকাল যেনো এই সুখটাই তার কাছে থাকে। আবার ভয় ও হয়, এতো সুখ কি সইবে তার কপালে।

দুপুরের দিকে বাড়ি ফিরে উমা এবং রুদ্র। বাড়ি পুরোই শূন্য। ফুলির মাকে ডাক দিলে সে হাত মুছতে মুছতে আসে। রুদ্র কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই সে মনমরা হয়ে বলে,
“নিখিল দা বুকে বেদনা উঠছে, সক্কলে ওখানেই গেছে। তারে নাকি হাসপাতালে লয়ে যাইতে হবে।“

বাবার শরীরের অবস্থা শুনেই কলিজায় কামড় পড়ে উমা। এমন একটা কথা শুনবে কল্পনাও করে নি সে। মুখ ফেটে এক দলা কান্না জড়ো হলো চোখের কোনায়। গলা আটকে আসছে। আপন বলতে তো এই বাবা আর ভাইবোন গুলোই আছে। সেই দুমাস পূর্বে দেখেছিলো বাবার অসহায় মুখখানা। কি বাজে ভাবেই না অপমান করেছিলো রুদ্র। এর পর থেকে ওই বাড়ি যাওয়া হয় নি তার। শুধু শুধু তাদের যন্ত্রনার কারন হতে চায় নি উমা। অথচ আজ সেই বাবার অসুস্থতা শুনে কিভাবে শান্ত থাকবে সে। নিঃশ্বাস নিতেও যেনো কষ্ট হচ্ছে তার। ছলছল নয়নে জড়ানো কন্ঠে রুদ্রকে বলে,
“আমি যাবো, হাসপাতালে। দয়া করে মানা করবেন না”

উমার আবেগী আকুল নিবেদন ফিরিয়ে দেবার মতো নিষ্ঠুর নয় রুদ্র। মেয়েটিকে সুখের চাদরে মুড়য়ে রাখার প্রতিশ্রুতি নিয়েছে সে। তাই সব ভুলে তাকে আশ্বত করলো,
“আমি নিয়ে যাবো”

আধ ঘন্টা বাদে হাসপাতালে পৌছালো উমা। ছুটে গেলো ভেতরে, সারাটা রাস্তা হু হু করে আর্তনাদ ই করেছে মেয়েটি। আজকের দিনটি সবথেকে আনন্দের ছিলো অথচ কি হয়ে গেলো। সরকারী হাসপাতালের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে রতী, রাজশ্বী, গোপাল, শাশ্বত, লক্ষী, এবং অভিনব সিংহ। উমাকে দেখেই জড়িয়ে ধরলো রাজশ্বী। দিদিকে জড়িয়ে জল ছেড়ে দিলো ছোট মেয়েটি। গোপাল অবস্থার গভীরত্ব বুঝতে পারছে না। তাই ভ্যাবলার মতো চেয়ে আছে। রতী একটু পর পর কেঁদে উঠছে। লক্ষী তাকে সান্তনা দিচ্ছে। শাশ্বত ই দ্রুত এখানে নিয়ে আসে। ডাক্তার দেখছে নিখিলকে। উমাকে ভেঙ্গে পড়তে দেখে শাশ্বত বলে,
“চিন্তা করো না উমা, সব ঠিক হয়ে যাবে।“

শাশ্বতের শান্তনা আদিক্ষেতা ঠেকলো রুদ্রের কাছে। সে তাকে কিছু বলার পূর্বেই………………

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন