বকুল ফুলের মালা - পর্ব ১৫ - সুলতানা পারভীন - ধারাবাহিক গল্প


২৯!! 

আয়ান পাগলের মতো কয়েকটা কটেজের দরজায় নক করে মায়রাকে খোঁজার চেষ্টা করলো। কোন কটেজেই কেউ নেই৷ তাই কেউ আয়ানের এমন ব্যস্ত হাহাকারে কেউ দরজা খুলে বেরিয়ে আসলো না। তাতে আয়ানের মনে একটা ভয় ধীরে ধীরে দানা বাঁধতে শুরু করেছে। তাই আরো পাগল পাগল লাগছে আয়ানের। কোনমতে টলে পড়তে পড়তে নিজেকে সামলে নিয়ে অন্য একটা কটেজের দরজায় নক করার জন্য হাত বাড়ালো। নক করার আগেই কাঁধে কারো স্পর্শ পেয়ে আয়ান যতটা না চমকে উঠলো ঠিক ততটাই আশা করলো যে মায়রাই এসেছে আবার। কিন্তু পিছনের দিকে তাকিয়ে বেচারার শেষ আশাটুকুও ভেঙ্গে গেল আরিশা আর তাওহীদকে দেখে। 

-আয়ান? কি হয়েছে তোর? এমন দোখাচ্ছে কেন তোকে? আর কার কটেজে নক করছিস? 

-আরু? আরু--মায়রাকে দেখেছিস তুই? তাওহীদ- তাওহীদ ভাইয়া আপনি-আপনি দেখেছেন মায়রাকে? ও কোন দিকে গেছে? বীচের দিকে? বলুন না? এই আরু বল না প্লিজ? ওর সাথে একটা একটা মিনিট কথা বলবো-শুধু একটা মিনিট--। প্লিজ?

-আয়ান? কি বলছিস উল্টোপাল্টা? মায়রা এখানে আসবে কি করে? তুই রুমে চল--। আয় আমার সাথে-।

-না--। আমি মায়রার সাথে কথা না বলে কোথাও যাবো না--। ও আমার সামনে ছিল--। এই এতোটা কাছ থেকে দেখেছি আমি ওকে---। ওকে আবার কাঁদিয়ে ফেলেছি--। শিট! কিন্তু ওর সাথে আমার এখন কথা বলতেই হবে--। আমার জানতেই হবে ও লাস্ট কথাটা কি বলেছে--।

-আয়ান? প্লিজ বোঝার চেষ্টা কর একটা বার? প্লিজ? মায়রা আসে নি। তুই হ্যালুসিনেট করছিস ওকে--। ও কি করে আসবে? ওরা ঢাকায় তো আয়ান---। প্লিজ কথাটা শোন--।

-আরু? প্লিজ----।

আয়ান রেগে গিয়ে নিজের হাতটা ঝাড়া দিয়ে আরিশাকে সরিয়ে দিতেই তাওহীদ আরিশাকে ধরে ফেললো। আরিশা আর তাওহীদ দুজনেই একটু ঘাবড়ে গেছে। আয়ান এতোটা বেপরোয়াভাবে আর বেখেয়ালে আরিশাকে সরিয়ে দিয়েছে যে তাওহীদ না ধরে ফেললে হয়তো আরিশা পড়েই যেত। কিন্তু সেদিকে কোন হুঁশই নেই ছেলেটার। সে একেবারে একরোখা আচরণ করছে। আরিশা তাওহীদের দিকে তাকাতেই তাওহীদ মাথা নেড়ে একটু অভয় দেয়ার চেষ্টা করলো ওকে। তারপর আয়ানের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। 

-আয়ান? মায়রার সাথে কখন দেখা হয়েছে? কোথায়?

-ও তো এখানেই ছিল--। ঠিক আমার সামনে--। রাগ করে বকেছি বলে কাঁদতে কাঁদতে কোথায় চলে গেছে --। দেখো না তাওহীদ ভাই প্লিজ? ওকে এনে দাও না? আমি আর পারছি না ওকে ছেড়ে থাকতে। আই নিড হার---। প্লিজ?

তাওহীদ আয়ানকে শান্তনা দেয়ার মতো ভাষাই খুঁজে পাচ্ছে না। প্রিয় মানুষটাকে হারানোর যন্ত্রণাটা তাওহীদ নিজেও খুব ভালো করেই বোঝে। আর বোঝে বলেই আয়ানের মনটা ডাইভার্ট করার জন্য এখানে নিয়ে এসেছে। কিন্তু হঠাৎ কি এমন হলো যে ছেলেটা এমনভাবে ভেঙ্গে পড়েছে? আসলেই কি কোনোভাবে মায়রা এখানে এসেছে? সেটা কি করে সম্ভব!

-আয়ান? তুমি এখানে!

আয়ান, আরিশা আর তাওহীদ তিনজনেই এতোটা হাইপার হয়ে ছিল যে পিছনে যে কখন আরো দুজন মানুষ এসে দাঁড়িয়েছে সেটা ওরা কেউই খেয়াল করে নি। এবারে কথাটা শুনে তিনজনেই ওদের দিকে তাকালো। আরিশা আর তাওহীদ চিনতে না পারলেও আয়ান একজনকে চিনতে পেরে এগিয়ে গেল। 

-তাথৈ? দেখেছিস আরু আমি বললাম না তোকে মায়রা এসেছে। আমি জানি---। তাথৈ মায়রা কোথায়? বলো না প্লিজ?

-আয়ান? রিল্যাক্স--। মায়রা তো--।

-প্লিজ তাথৈ-। তুমি ওদের মতো বলো না মায়রা আসেই নি। ওর সাথে আমার কথা হয়েছে--। এখানে দাঁড়িয়ে ছিল মায়রা--। আমি--। ও রাগ করে কোথায় চলে গেল--। আমি ওকে ওভাবে কথাগুলো বলতে চাই নি বিশ্বাস করো?

-কি? কি বলেছ তুমি মায়রাকে?

-প্লিজ তাথৈ? বলো না ও কোথায়?

-দাঁড়াও--। মাথাব্যথা করছে বলে তো রুমেই ছিল--৷ চলো দেখি কি করছে---। 

রিহান বেচারা এসবের মধ্যে পুরোই থতমত খেয়ে গেছে। কটেজের বাইরের বাজারটা থেকে সবার জন্য অনেক কেনাকাটা করে সবেই ফিরেছে ওরা। এর মধ্যে কোথা থেকে কি হচ্ছে তার কিছুই বুঝতে পারলো না সে। এদের কারো সাথেই তার পরিচয় নেই। কিন্তু সবাই মিলেই মায়রাকে খুঁজছে দেখে যতটা না অবাক হলো ততটা চিন্তিতও হলো। শেষে আর স্থির থাকতে না পেরে তাথৈকে হালকা করে গুঁতে দিলো। 

-এই তাথৈ? এরা কে গো? কি হচ্ছে এখানে? কিছুই তো বুঝতে পারছি না--।

-ও আয়ান--। ওর কথাই মামা মামি বলেছে--। আর এরা সম্ভবত আয়ানের ফ্রেন্ড--।

-ওহ---।

মায়রার কটেজের সামনে গিয়ে দরজায় নক করার সাথে সাথেই দরজাটা খোলা দেখে এবারে তাথৈ আর রিহানের মতো বাকিটাও কিছুটা চিন্তায় পড়লো। 

-তাথৈ আমরা তো বাজারের দিক থেকে এলাম--। ওদিকে মায়রা গেলে তো দেখতাম--। ও কি আবার বীচে গেছে একা একা?

-নাহ--। আমরা একটু আগেই বীচ থেকে ফিরেছি--। ওদিকটায় কেউ নেই--৷ মায়রা গেলে তো দেখতাম--।

-তাহলে কি ও মাঠের দিকে গেছে? ক্যাম্পফায়ারের দিকটায়? চলুন সবাই মিলে খুঁজলে পেয়ে যাবো--। 

রিহান আর আরিশাদের কথা শুনেই আয়ান মাঠের দিকে ছুটলো। আর ওর পিছন পিছন বাকিরাও ছুটে চলেছে মাঠের দিকটায়। মাঠে এসেই দেখলো জায়গায় জায়গায় কয়েকজন করে দল করে বসে আছে। কেউ ক্যাম্প ফায়ার করছে, কেউ বারবিকিউ করছে, আর কেউ নিজেদের মতো করে আড্ডা দিচ্ছে। এর মধ্যে মায়রাকে কোথায় খুঁজবে সেটা কারো মাথায় এলো না। হঠাৎ পাশ থেকে দুজনের কিছু একটা নিয়ে আলোচনা কানে এলো ওদের। 

-আরে? নিজেদের ঘরের ঝামেলা বাকি সবাইকে জানানোর দরকার কি? ভাই কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছি নাকি এমন ফ্যামেলি ড্রামা দেখতে? আশ্চর্য!

-আর বলিস না--। ছেলেটাও কি শুরু করেছে মেয়েটার সাথে? এমন করে সবার সামনে অপমান করার কোনো দরকার আছে ভাই? স্বামী স্ত্রী নিজেদের মতো করে কথা বলে সব মিটিয়ে নিলেই তো পারতো? এভাবে সিচুয়েশনটাকে আরো খারাপ করে কি লাভটা হচ্ছে?

-আরে? ধ্যাত--। মেয়ে কার না কার সাথে এখানে চলে এসেছে আর তার স্বামী তাকে ফলো করতে করতে এখানে এসেছে--। আর মাথা কি ঠিক থাকে?

-যাই বলিস--। মেয়েটাকে দেখে কিন্তু মনে হয় না এমন কিছু। ছেলেটাই কেমন জানি গায়ে হাত তুলতে তেড়ে যাচ্ছিলো--। এমন করে এখনকার যুগে কেউ? নারী নির্যাতনের কেইস দেয়া উচিত--।

-তুইও যেমন বোকা--। আজকালকার মেয়েগুলোকে দেখে বোঝাই যায় না কে ভালো আর কে ঘরে স্বামী থাকা স্বত্বেও পরকিয়া করে বেড়ায়--৷ দোষ মেয়েটারও আছে নিশ্চয়ই--। নইলে---।

লোক দুটো কথাগুলো বলতে বলতে পাশ দিয়ে চলে যেতেই তাথৈ আর রিহান একে অন্যের দিকে তাকালো। দুজনের মুখ দিয়েই অস্ফুটে একটা নামই বের হলো। মায়রা৷ 

-আয়ান? প্লিজ সবাই মিলে একটু খোঁজো--। সীমান্ত এখানেও এলে---।

-কি হয়েছে তাথৈ? সীমান্ত----।

-প্লিজ আয়ান। কথা বলার মতো সময় হাতে নেই---।

এদিকে সীমান্তের একদম মুখোমুখি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মায়রা৷ লোকটা যাচ্ছেতাই বলে মায়রাকে এতোক্ষণ অপমান করেছে। তবু মায়রা একটা টু শব্দও করেনি। মেয়েটা ভাবতেই পারে নি একটা দিনে পরপর দুটো ধামাকা অপেক্ষা করছিল ওর জন্য। আয়ানের সামনে নিজেকে সামলাতে না পেরে এখানে এসে যে আরো বড় মুশকিলে পড়ে গেছে। সীমান্ত এমনভাবে তেড়ে আসছে যে ভয়ে মায়রাকে প্রায় চোখ বন্ধ করে ফেলতে হচ্ছে। এবারেও মায়রা চুপ করে আছে দেখে সীমান্তের রাগ চড়ে গেল মাথায়৷ মায়রার হাতটা ধরে টেনে নিয়ে গেল সবার থেকে একটু দূরে। 

-কি ভেবেছ কি তুমি? সবার সামনে চুপ করে থেকে সবার সিম্পাথি গেইন করবে? বলো? জাস্ট স্পিক আপ--।

- তুমি এখানে কি করে---?

-এতো খুশি হওয়ার কিছু নেই৷ তোমাকে ফিরিয়ে নিতে আসি নি। অবশ্য তুমি তো ফিরতে চাও ও না তাই না?

------------------------------

-চাইলে এই চারটা দিনে অন্তত একবার হলেও খবর নিতে আমি মরে গেছি নাকি বেঁচে আছি--। তুমি তো--। তুমি তো তোমাট নিজের লাইফ নিয়েই বেশ আছো। সেদিন ফ্রেন্ডদের নিয়ে রাত পর্যন্ত ব্যস্ত। আর এখন বোন আর দুলাভাইয়ের সাথে বেড়াতে এসে নিজের মতো করে ঘুরছো--। বাহ! এসব হলে তো আসলেই আমাকে লাগবে না। তাই না?

-সীমান্ত? মুখ সামলে কথা বলো।

-না গো। আর সামলানোর ইচ্ছে নেই--। ধরো--। যা বোঝার আমার বোঝা হয়ে গেছে--। তুমি কাগজটায় সাইন করে পাঠিয়ে দিও---।

-কিসের কাগজ!

-অবিয়াসলি ডিভোর্সের--। তোমার মতো মেয়ের সাথে সংসার করার আর কোন সাধ নেই--। বাই দা ওয়ে। তোমার তো বেশি সময় লাগার কথা না--। এখনই সাইন করে দাও। আমার আর এসব মজা লাগছে না। তুমি তোমার মতো থাকো। আর আমি আমার মতো--। দ্যাটস ইট।

------------------------------

-এখন ফেরার জন্য হাজার হাতে পায়ে ধরলেও কোনো কাজ হবে না। সো জাস্ট সাইন দা ড্যাম পেপার৷ ফাস্ট----।

সীমান্ত মায়রার হাতে ডিভোর্স পেপার আর কলম ধরিয়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে চুপচাপ। আর মায়রা পুরোই বেকুব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কি করবে কিছুই মাথায় ঢুকছে না। এদিকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে সীমান্তের বলা কথাগুলো শুনছিল আয়ান আরিশা আর বাকি সবাই। আয়ান রাগে কটমট করে সীমান্তের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতেই আরিশা আয়ানের একটা হাত টেনে ধরে থামালো। আয়ান বিরক্ত হয়ে আরিশার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো।

-মায়রার সিদ্ধান্তটা ওকে নিজেকেই নিতে দে আয়ান। ও যে সিদ্ধান্তটাই নিক তাতে আমরা পাশে থাকবো সবসময়। কিন্তু সিদ্ধান্তটা ওর একার। আর তুই এখন যাস না। তাতে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে মেয়েটারই বদনাম হবে--। তুই শুধু দেখ ও কি চায়।

আরিশার কথায় আয়ানের সাথে তাথৈ, রিহান, তাওহীদ সবাই চুপ করে দাঁড়িয়ে গেল। আর মায়রা কি করে সেটাই দেখার অপেক্ষায় রইলো। জীবনের বাকি পথটুকু কিভাবে চলতে চায় তার সবটাই এখন মায়রার নিজের হাতে। জীবনটা ওর। আর সিদ্ধান্তটাও যখন ওকেই নিতে হবে তখন ভেবে চিন্তেই নিক। পরে যেন কোন আফসোস থেকে না যায়।

৩০!! 

হাতের কলমটা নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ নিজের মনেই চিন্তা করে শেষে কাগজটা একবার দেখে নিয়ে সাইন করে দিলো মায়রা। তারপর চুপচাপ সেটা সীমান্তের দিকে বাড়িয়ে দিলো। সীমান্ত হয়তো এতোটাও আশা করে নি। মায়রা ডিভোর্স পেপারটা ওর দিকে ফিরিয়ে দিলে সেখানে মায়রার সাইন দেখে সীমান্ত এবারে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো। মায়রার দিকে এক পা এগিয়ে আসার চেষ্টা করতেই মায়রা হাত তুলে সীমান্তকে থামিয়ে দিলো।

-আজকে এই মূহুর্ত থেকে আমাকে স্পর্শ করার কোন অধিকার আপনার নেই। তাই দয়া করে এই ভুলটা করতে যাবেন না--।

-বাহ! তুমি যে আমার সাথে সংসারটা করতেই চাইছো না এটাই তার প্রমাণ। তোমার মতো মেয়ের কা থেকে এর চেয়ে বেশি কিছু অবশ্য আশা করাও ভুল--।

-জি--। হয়ে গেছে আপনার? এখন আসতে পারেন--।

-আমি থাকলে তো সমস্যা তাই না? তুমি তোমার এই ভালোমানুষির মুখোশের আড়ালের নোংরামিগুলো তো করতে পারবে না--। যেগুলো আমার কাছে থেকে করতে পারছিলে না--। জাস্ট শেইম অন ইউ মায়রা।

-আর কিছু বলবেন? 

-তোমার সাথে কথা বলার মতো আর রুচি নেই---।

-আর প্রয়োজনও নেই--। 

-খুব তো খই ফুটেছে না মুখে? যাদের উষ্কানিতে এসব করছো তারাও যে তোমার বোঝা কয়দিন বয় আমিও দেখবো সেটা--৷ আর তোমার মা বাবার কাছে তো তুমি আগেই---।

-মরে গেছি--। জানি---। সেসব নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না--। আমার বোঝা আমি একাই সামলাবো৷ আপনার চিন্তা করতে হবে না--। শুধু একটা কথা মনে রাখবেন, আমি আপনার স্ত্রী ছিলাম, দাসী নই বা কোন সেক্স টয় নই। যে আপনি যখন ইচ্ছে হয় আমাকে ভোগ করার পারমিশন পেয়ে যাবেন বা আপনার প্রত্যেকটা চাহিদা পূরণ করতে আমি বাধ্য থাকবো। 

-লেকচার মারতে এসেছ? নিজের সংসারটা টিকিয়ে রাখার ক্ষমতা নেই। সে মারে লোকচার! হাহ---।

-দোয়া করি যাতে একদিনের জন্য হলেও আপনি মেয়েদের দামটা বুঝতে পারেন। বুঝতে পারেন মেয়েরা কারো পায়ের নিচে পড়ে থাকার জন্য কোন ম্যাট্রেস না। আল্লাহ মেয়েদেরকে স্বামীর সংসারের রাণী করে পাঠিয়েছেন। আর একটা মেয়ের সম্মান কতোটুকু---।

-তোমার এই অভিশাপ বলো আর দোয়াই বলো--তোমার কাছেই রাখো। আর আজকের পর থেকে যা ইচ্ছে করো--। আই ডোন্ট কেয়ার। কিন্তু তোমার তোমার কাজের ইফেক্ট যেন আমার উপরে না পড়ে---।

-------------------------

-নারীদের সম্মান নিয়ে এতো লোকচার দিচ্ছিলে না? কাল থেকেই বুঝতে পারবে এই সমাজে তোমার মতো ডিভোর্সি মেয়েদের অবস্থানটা কোথায়--। সুখে থাকাটা সহ্য হয়নি তো? এবার নামের সাথে এই ডিভোর্সি তকমাটা নিয়ে আজীবনের জন্য নরকেই বেঁচে থাকো তুমি। বায়--।

সীমান্ত চলে যাওয়ার পরও মায়রা চুপ করে সেখানে বসে আছে। নিজের মাথাটা চেপে ধরে নিঃশব্দেই কাঁদছে। একটা সিদ্ধান্ত ওর জীবনটাকে এতোটা ওলটপালট করে দিবে সেটা কখনোই ভাবতে পারে নি মায়রা। 

এদিকে সবাই এতোক্ষণ একটা ঘোরের মধ্যে ছিল। তাথৈ কোনমতে ছুটে মায়রার কাছে এসে মায়রাকে নিজের বুকে জড়িয়ে ধরলো৷ রিহানও মায়রার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। দূর থেকে দাঁড়িয়ে মায়রার কান্না দেখে আরিশা আয়ানকে টেনে কটেজের ভিতরে নিয়ে গেল। আয়ান এতোক্ষণ যেন একটা শকের মধ্যে ছিল। আরিশার এভাবে ওকে টেনে নিয়ে আসায় হুঁশ ফিরলো আয়ানের। 

-আরু? কি করছিস? এখানে আনলি কেন? আমাকে মায়রার কাছে যেতে হবে--।

-গিয়ে কি করবি তুই? ওকে শান্তনা দিবি? ওর সংসারটা টিকলো না বলে? নাকি এমন একটা অমানুষের মতো লোকের অত্যাচার এতোদিন ধরে সহ্য করেছে বলে তুইও ওকে নছিহত দিবি? হ্যাঁ? কোনটা?

-তুই কি বলছিস এসব? আর যেতে দে না প্লিজ--।

-খবরদার এক পা ও যাবি না তুই ওর কাছে--। কি ভেবেছিলি কি তুই? মেয়েটা তোকে ধোঁকা দিয়ে অন্য একজনকে বিয়ে করে খুব সুখে আছে না? একটু আগে নিশ্চয়ই ওকে এসবই শুনাচ্ছিলি তাই না?

-আরু আমি----।

-তোকে আমি আগেই বলেছিলাম আয়ান। আমরা যা ভাবি তার বাইরেও একটা দুনিয়া আছে। সেখানে কি হচ্ছে সেটা আমরা জানিও না। কিন্তু তাই বলে তার অস্তিত্ব নেই এমনটাও তো নয়--। তুই ওর কষ্টটা ফিল করিস নি বলে যে মেয়েটা কষ্টে ছিল না বা খুব সুখে ছিল সেটা ভাবা কি ঠিক? আর তোর কি মনে হয় নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করা, কারো সাথে সংসার করা এতোই সোজা? বলতেই পারিস এমন হাজারটা মেয়ে আছে যারা বাবা মায়ের অমতে গিয়েও ভালোবাসার মানুষের হাত ধরে ঘর ছাড়ে--। কিন্তু তুই আমাকে একটা মেয়েও দেখাতি পারবি না যে নিজের বাবা মা মরে যাবে জানার পরও এই একই কাজটা করতে পারে--। তুই হয়তো বলতেই পারিস তারা তো আসলেই মরবে না। জাস্ট ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল এটা। কিন্তু নিজেকে একটা মেয়ের জায়গায় রেখে একবার ভাব তো? তুই কি চাইবি তোর জন্য তোর বাবা মা মরে যাক? চাইবি?

-আরু? প্লিজ? এসব এখন বাদ দে। এই মূহুর্তে আমাকে মায়রার পাশে দরকার। বোঝ ব্যাপারটা একবার--।

-এই মূহুর্তে তোকে ওর দরকার নেই আয়ান। এখন ওর দরকার একজন বন্ধুর, যে ওকে সবসময় সব বাজে পরিস্থিতি থেকে আগলে রাখতে পারবে--। সমাজের চোখে মায়রার গায়ে যে ট্যাগই লাগুক না কেন সেসব বাদ দিয়ে ওকে এ্যাক্সেপ্ট করতে পারে এমন মানুষ দরকার ওর এখন--।

-------------------------

-তুই পারবি সেই মানুষটা হতে? পারবি? হাজার লোকে হাজারটা কথা বলবে। সেগুলো ইগনোর করে শুধু মায়রাকে ওর যোগ্য সম্মানটা দিতে পারবি? বল?

-পারবো আমি---।

-পারবো বলাটা সহজ আয়ান। কিন্তু এটাও ভুলিস না ওর-----।

-গত ছয়টা মাসে মায়রার জীবনে কি ঘটেছে সেটা আমার দেখার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই আরু---। আমি তখনও ওকে ভালোবাসতাম। আজো ভালোবাসি। আজীবন ভালোবাসবো। 

আরিশা এবার আয়ানের হাতটা ছেড়ে দিলো। আয়ান একবার ভ্রু কুঁচকে আরিশার দিকে তাকালো।

-যা আয়ান। তোকে মায়রার এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। 

আয়ান কটেজটা থেকে বেরিয়ে যেতেই তাওহীদ ঢুকলো। এতোক্ষণ সে রুমের বাইরেই অপেক্ষা করছিল আয়ান আর আরিশার কথা শেষ হওয়ার জন্য। এখন এসে আলতো করে আরিশাকে বুকে টেনে নিলো। আরিশা এতোক্ষণ আয়ানকে শক্ত শক্ত কথা বললেও এবারে তাওহীদের স্পর্শে একটু নুইয়ে পড়লো। তাওহীদ আরিশার চুলে বিলি কেটে দিলো আলতো করে।

-আরু? কেঁদো না প্লিজ। সব ঠিক হয়ে যাবে---।

-এবার কি হবে বলো তো? দুটো মানুষ একে অন্যকে ভালোবাসে। তবু কেন তারা একসাথে সুখি হতে পারবে না?

-একটা কথা কি জানো আরু? হুমায়ুন আহমেদ স্যারের একটা কথা আছে৷ 'অপেক্ষা হলো শুদ্ধতম ভালোবাসার একটি চিহ্ন। সবাই ভালোবাসি বলতে পারে। কিন্তু সবাই অপেক্ষা করে সেই ভালোবাসা প্রমাণ করতে পারে না।' আয়ান এতোদিন অপেক্ষা করেছে৷ এবারে নিশ্চয়ই ওর ভালোবাসার যোগ্য মূল্য ও পাবে। নিশ্চয়ই পাবে। হয়তো আরো কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু একটা মিষ্টি ভবিষ্যত ওদের জন্য অপেক্ষা করে আছে অদূরেই।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন