৫৫!!
হাতের কাছে আয়ানের ফতুয়াটা পেয়ে সেটাই গায়ে জড়িয়ে বিছানা থেকে নিচে পা রাখলো মায়রা। ঘুমন্ত আয়ানের দিকে তাকিয়ে একবার লাজুক হেসে বারান্দার দিকে পা বাড়ালো ঠিকই কিন্তু এক পা ও সামনে এগোতে পারলো না বেচারি। ভদ্রলোকের শক্তিশালী হাত জোড়া মায়রার কোমড় পেঁচিয়ে ধরে টেনে নিলো নিজের উপরে। মায়রাও সোজা আয়ানের উপরে পড়তেই দুজন চোখের পলকেই মুখোমুখি হয়ে একে অন্যের দিকে তাকিয়ে রইলো। আয়ানের চোখের ঘোর লাগানো দৃষ্টি আর ঠোঁটের কোণে ফুটে থাকা দুষ্টু হাসিটা দেখেই মায়রার বুকের ভিতরে ধুকপুকানিটা কয়েক শ গুণ যেন বেড়ে গেল। আয়ান আলতো হাতে মায়রার গালে আঙুল ছুঁইয়ে দিতেই মায়রা একটু কেঁপে উঠে চোখ বন্ধ করে নিলো। আর সেটা দেখে আয়ানও শব্দ করে হেসে ফেললো।
-যেই দেখলে আমার চোখটা একটু লেগে এসেছে ওমনি পালাচ্ছিলে? এসব কিন্তু একদম ঠিক না বউসোনা। একদম মানবো না এসব আমি--।
-না মানে আসলে---। আমার ঘুমটা ভেঙ্গে গেছে তাই---।
-হুম? তাই?
-আরে? কি করছ কি তুমি?
আয়ান ততক্ষণে মায়রার ঘাড়ে নাক মুখ ডুবিয়ে দুষ্টুমিতে মেতেছে। এবারে আলতো করে মায়রার কানের লতিতে কামড় বসালো।
-আউচ! এই? কি করছ তুমি?
-আদর দিচ্ছি দেখছ না? কত বড় সাহস তার সে আমাকে না ডেকে একা একা বারান্দায় যাচ্ছে। আবার আমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে এমন করে জড়িয়ে নিয়েছে যে আমার নিজেরই নেশা ধরে যাচ্ছে---।
-তুমি তো ঘুমাচ্ছিলে-। তাই তোমার ঘুম ভাঙ্গাই নি----।
-এখন যখন আমার ঘুমটা ভেঙ্গে গেছে তাহলে তোমাকেও জাগিয়ে রাখবো সারা রাত---।
-দুষ্টু লোকটা--। আপনার কাল অফিস নেই?
-বস আমার আজকের ছুটিটা মাটি করলো--। তাই কাল আমার আর কোনো প্ল্যান নেই-বউটাকে আদর করা ছাড়া---।
-ধ্যাত---। সরো তো এখন?
-এতো নাচানাচি করলেই তো ছাড়া পাবেন না ম্যাডাম। বলেছিলাম না একটা রাতও ঘুমাতে দিবো না। অনেক জ্বালিয়েছেন আপনি আমাকে৷ এখন থেকে প্রতিদিন প্রতিরাতে আমি জ্বালাবো--। মানা করলেও শুনবো না। উঁহু--।
-আরে! কি মুশকিল!
-কিছু কি বললেন ম্যাডাম?
কথা বলতে বলতেই আয়ান মায়রাকে বালিশে শুইয়ে দিয়ে মায়রার মুখের দিকে এগিয়ে আসছিলো। আয়ান একদম মায়রার মুখের কাছাকাছি আসতেই মায়রা লজ্জায় লাল হয়ে চোখ বুজে নিলো। একটু পরেই মায়রা আয়ানের স্পর্শে চোখ মেলে তাকালো। আয়ান ফতুয়াটা মায়রার কাঁধ থেকে খানিকটা সরিয়ে দিয়ে কাঁধে ঠোঁট বুলিয়ে দিচ্ছে। মায়রার ভারি নিঃশ্বাস আর কেঁপে ওঠা সবই যেন আয়ানকে আরো পাগল করে তোলায় ব্যস্ত। আয়ান কয়েক সেকেন্ড মুখ তুলে মায়রার ঠোঁটের কাঁপন দেখলো। তারপর মায়রার আঙ্গুলে নিজের আঙ্গুলগুলো ডুবিয়ে মায়রার ঠোঁট জোড়া দখল করে আবার ভালোবাসায় ডুব দিলো আয়ান।
সকালে মায়রার ঘুম ভাঙলে টের পেল আয়ান ঘুমের মধ্যেও ওর কোমড় পেঁচিয়ে নিজের সাথে জড়িয়ে রেখেছে। মায়রা চোখের ঘুম কাটিয়ে আয়ানের বুকের উপর থুতনি রেখে মুখের দিকে তাকালো। এই মানুষটা সারা রাত ধরে এতো দুষ্টুমি করে এখন কি সুন্দর শান্ত হয়ে লক্ষী ছেলের মতো ঘুমাচ্ছে। ছেলেটা এতো দুষ্টু বুঝাই যায় না একদম। কথাটা ভেবেই মায়রা নিজেই একটু লাজুক হেসে আয়ানের বুকে মুখ লুকালো। মানুষটার বুকে এভাবে লুকিয়ে থাকতে বেশ লাগছে মায়রার। কিন্তু অনেক বেলা হয়ে গেছে কথাটা মনে পড়তেই মায়রা তড়িঘড়ি করে উঠার চেষ্টা করতেই নিজের দিকে চোখ পড়লো। আর তাতেই বেচারির গালটা আরো লাল হয়ে গেল লজ্জায়। কোনমতে গায়ে চাদর জড়িয়ে নিয়ে আয়ানের উপর থেকে সরে আসার চেষ্টা করতেই আয়ান আরো শক্ত করে মায়রাকে নিজের বুকে জড়িয়ে ধরলো।
-গুড মর্নিং মাই ডিয়ার মিসেস স্নো হোয়াইট।
-জনাবের ঘুম ভেঙ্গেছে বুঝি? ছাড়ুন তো এখন। শাওয়ার নিতে হবে---।
-এতোক্ষণ কি সুন্দর করে বুকে চুপটি করে লুকিয়ে ছিলে। এখন এতো ধড়ফড় করছ কেন? ঘুম পাচ্ছে অনেক। এখন উঠতে হবে না। তুমি আমার বুকে থাকো। আর লক্ষী বউ হয়ে ঘুমাও।
-ইশ! বললেই হলো আর কি! কতো বেলা হয়ে গেছে? ছাড়ো। তুমি ঘুমাও। আমার উঠতে হবে--। ছাড়ো না?
-আমি ঘুমে চোখ মেলতে পারছি না আর উনি পালানোর জন্য ছটফট করছেন। চুপ করে শুয়ে থাকো। এখন কোথাও যাওয়া হবে না।
-আরে! সবাই কি ভাববে! ছি! ছাড়ো তো? আমি শাওয়ার নিয়ে একটু---।
-শশশশ। ওফ বাবা! এতো ছটফট না করে একটু চুপ করে আমার বুকে থাকো না? তুমি বুকে থাকলে শান্তি লাগে--। আর এখন উঠতে হবে না।
-জি না। সেটা হবে না। মা কি ভাববে! আমি একবার দেখি মায়ের রাগ ভাঙ্গাতে পারি কি না--। ছাড়ো না?
-ধ্যাত৷ আচ্ছা যাও--৷ শাওয়ার নাও। আমি ঘুমাই--।
-হুম---।
-যাওয়ার আগে একটু আদর করে দাও---। আরে! এভাবে তাকানোর কি হলো? মিষ্টি করে একটা আদর করে দাও। আমি একটুও দুষ্টুমি করবো না। প্রমিস--।
মায়রা আয়ানের গালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিতেই আয়ান মায়রার কোমড় জড়িয়ে নিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো। একটু পরে আয়ান সরে আসতেই মায়রার লজ্জা রাঙা মুখটা দেখে কানে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো।
-এখন এতো লজ্জা পেয়ে আর কি হবে গো চাঁদপরী? তোমার লজ্জা তো রাতেই----।
-ধ্যাত--। ছাড়ো তো। তুমি ঘুমাও। সরো---।
-ওকে ম্যাডাম---৷
মায়রা আয়ানের গায়ে বিছানার চাদরটা ভালো করে জড়িয়ে দিয়ে নিজে গায়ের চাদরটা ঠিক করে নিয়ে আলমারির দিকে পা বাড়ালো। এবারে আয়ান মায়রার গায়ের চাদরটা টেনে ধরে মায়রাকে আটকালো। মায়রা লজ্জায় লাল হয়ে কোনমতে আয়ানের হাত থেকে চাদরটা ছাড়ানোর চেষ্টা করলো। আয়ান চাদরটা হেঁচকা টান দিয়ে মায়রাকে নিজের কাছে নিয়ে এলো। মায়রাও এসে পড়লো আয়ানের বুকের উপরে। মায়রার খোলা চুলগুলো এসে পড়লো আয়ানের মুখের উপরে। আয়ান হেসে মায়রার চুলের ভিতর দিয়ে হাত গলিয়ে দিয়ে মায়রার মুখটা তুলে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো৷ বেশ কয়েক মিনিট পরে একটা আলতো কামড় বসিয়ে মায়রাকে ছাড়লো আয়ান। মায়রা আয়ানের বুকে মুখ লুকিয়ে নিতেই আয়ানও মায়রাকে হালকা করে বুকে জড়িয়ে ধরে মায়রার কানে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো।
-এইবার একদম পারফেক্ট লাগছে আমার বউকে৷ লজ্জা টুকটুকে গাল, আমার কামড় বসানো লাল টুসটুসে ঠোঁট--। একদম পারফেক্ট কম্বিনেশন।
-অসভ্য একটা লোক---। এতো দুষ্টু কেন তুমি?
-আরেকটা কামড় এখনো বাকি আছে কিন্তু--। তোমার কাঁধের লাল তিলটায়--। আসো? দেই?
-পাজি লোক একটা৷ আমি এখন বাইরে কি করে যাবো?
-সেসব তো আমার দেখার বিষয় না৷ আমার কাজ হলো বউকে আদর করা। আমি আমার কাজ করছি আপাতত৷ এনি প্রবলেম?
-ধ্যাত--। সরো তো---।
মায়রা আয়ানের উপরে একটু বিরক্ত হয়েই ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো। আয়ানও কিছুক্ষণ শুয়ে শুয়ে হাসলো। আয়ান পাশ ফিরে শুতেই নিজের ফতুয়াটার দিকে চোখ পড়তেই আয়ানের ঠোঁটের কোণে আবার একটা দুষ্টু হাসি খেলা করে গেল৷ আয়ান উঠে চাদরটা নিজের গায়ে জড়িয়ে নিয়ে আলমারির দিকে এগোলো। কয়েকটা জামা নিয়েই ওয়াশরুমের দরজায় এসে নক করলো আয়ান। মায়রা বিরক্ত হয়ে চুপ করে রইলো। আয়ান আবার নক করলো।
-এই মায়রা সোনা? তোমার ড্রেস না নিয়েই শাওয়ারে চলে গেছ? ড্রেসটা নাও? পরে তো শাওয়ার নিয়ে আমার সামনে আসতেই পারবে না। কি গো? শুনছ?
-ওখানে-ওখানেই রেখে দাও--।
-আরে না না। টাওয়াল পড়ে রুমে আসতে তো আমার লজ্জাবতীটা আবার লজ্জায় লাল হয়ে যাবে। কই নাও না?
-হুম? আচ্ছা--। দাও----।
মায়রা ওয়াশরুমের দরজাটা একটু ফাঁক করে হাত বাড়িয়ে আয়ানের হাত থেকে জামাগুলো নেয়ার চেষ্টা করলো। আর দরজা খোলা মাত্রই আয়ান দরজা ঠেলে ঢুকে জামাগুলো র্যাকের উপরে রেখে ঠিক মায়রার সামনে এসে দাঁড়ালো। মায়রা থতমত খেয়ে সরার চেষ্টা করতেই আয়ান মায়রাকে দেয়ালের সাথে আটকে ধরে মাথার উপরের শাওয়ারটা ছেড়ে দিলো। মায়রা দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে পানির ছাট থেকে বাঁচার জন্য মুখের উপরে হাতের পাতা রেখে আয়ানের দিকে তাকালো।
-আরে! কি করছ? ভিজে যাচ্ছি তো?
-তোমায় নিয়ে ভালোবাসার বৃষ্টিতে ভিজবো বলেই তো এলাম ম্যাডাম। আলাদা আলাদা শাওয়ার নিয়ে লাভ কি বলো? এর চেয়ে একসাথেই শাওয়ার নিই। সময়টাও সেইভ হলো। আর সাথে আমি আমার স্নো হোয়াইটটাকেও একটু ছুঁয়ে দিতে পারলাম। ভালো হবে না বলো?
-তুমি আজকাল একটু বেশিই দুষ্টুমি করছ না?
-দুষ্টুমি কখন করলাম বউটা? একটু আদর করছি আর কি--৷ বউটা দেখি দিন দিন আনরোমান্টিক হয়ে যাচ্ছে।
-তাই না?
-জি ম্যাডাম। তাই তো দেখছি---।
আয়ান মায়রার কাঁধ থেকে চাদর সরিয়ে দিয়ে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে কথা বলছিলো। মায়রাও আর কিছু না বলে আয়ানের দুষ্টুমিতে সাড়া দিলো নিজেও। সমস্ত ভয়, চিন্তা, জড়তা এসব ভুলে মিলেমিশে এক হয়ে গেল দুটো আত্মা। আর বদ্ধ ঘরে ঘন ঘোর লাগানো নিঃশ্বাসরা নিজেদের নতুন ভালোবাসার গল্প রচনায় ব্যস্ত হয়ে রইলো।
৫৬!!
শাওয়ার শেষে চেইঞ্জ করতে গিয়ে বেচারি মায়রা আরেকবার বিপাকে পড়লো। আর সাথে সাথেই আয়ানের দুষ্টুমিটাও ওর কাছে পরিষ্কার হয়ে গেল। মায়রা এবারে কটমট করে আয়ানের দিকে তাকালো৷ আয়ান অবশ্য সেসবে পাত্তা দিলো না। সে নিজের মতো করে মায়রার গায়ে একটা শুকনো টাওয়াল জড়িয়ে দিয়ে ভিজে চুল মোছায় মনোনিবেশ করেছে৷ মায়রা আয়ানের হাত থেকে টাওয়ালটা নিয়ে ফেলতেই আয়ান মিষ্টি করে হেসে মায়রার চুলগুলো একটু নাড়িয়ে এলোমেলো করে একটু শব্দ করেই হাসলো।
-আয়ান? তুমি তুমি তুমি-----।
-আরে বাবা! আমি আবার কি করলাম! ঠিকমতো চুলও মুছতে পারে না আমার পিচ্চি বউটা। তাকে একটু হেল্প করছি আর কি---।
-তুমি না আমাকে আমার ড্রেস দিতে এসেছিলে? কোথায় আমার জামা? এগুলো তো---!
-হুম। স্নো হোয়াইটের জন্য শ্বেত শুভ্র পাঞ্জাবি--। তোমার ফিটিং হবে৷ সমস্যা নেই। পড়ে নাও---।
-তোমার পাঞ্জাবি আমি পড়বো কেন?
-আরে বাবা! এতো জোরে চিল্লানোর কি হলো? বলেছিলাম না যা আমার তাই তোমার--। রাতে ফতুয়াটা তোমার গায়ে এতো---। না মানে এতো কিউট লাগছিলো যে আমার ইচ্ছে করছে তোমাকে আমার পোশাকে দেখতে। অন্যায় কিছু করেছি বলো? রাতে ফতুয়ায় দেখলাম, এখন পাঞ্জাবিতে দেখবো, এরপর শার্টে---।
-এই তুমি যাও তো? আমি যেন তার জামা কাপড় পড়ে সারাদিন রুমে বসে থাকবো। আমার যেন আর কাজ নেই?
-তোমার আর কি কাজ? আজ তো তুমি সারাদিন আমার সামনেই থাকবা৷ আমি তোমাকে হুটহাট ছুঁয়ে দিবো--। তখন তুমি লজ্জায় টুকটুকে লাল হয়ে যাবে। আর আমি সেই লজ্জামাখা মুখটা দেখে তোমার মাঝে ডুব দিবো---।
-আ---য়া---ন?
-কি গো বউটা?
-চুপ। একটাও কথা বলবা না আর তুমি।
-আচ্ছা। তুমি চেইঞ্জ করে নাও৷ আমি রুমে আছি।
-পারবো না।
-ওহ! তাই বলবে তো। ওকে--। আমিই চেইঞ্জ করিয়ে দিচ্ছি---।
-এই তুমি যাও তো? বের হও---।
-যা বাবা! এজন্যই বলে কারো ভালো করতে নেই। উনি চেইঞ্জ করতে পারছেন না বলে আমি একটু হেল্প করতে চাইলাম--। এখন আমার উপরেই চোটপাট! একেই বলে যার জন্য করি চুরি সেই বলে চোর! কি কপাল আমার!
মায়রা আবার আয়ানের দিকে রাগী চোখে তাকাতেই আয়ান সুবিধা নয় বুঝতে পেরে তাড়াতাড়ি ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে গেল। মায়রা ওয়াশরুমের দরজাটা বন্ধ করে আয়ানের ধবধবে সাদা পাঞ্জাবিটা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগলো এবার কি করবে। এই পাঞ্জাবি পড়ে ও এখন রুমে যাবে কি করে? আয়ানটাও এতো দুষ্টু হয়েছে যে! কথাটা চিন্তা করে মায়রার ঠোঁটের কোণে একটা লজ্জামাখা হাসি ফুটে উঠলো। মায়রা কিছু একটা ভেবে আয়ানের পাঞ্জাবিটা পড়ে চুল মুছতে মুছতে বের হয়ে এলো ওয়াশরুম থেকে। একদম স্বাভাবিক ভাবেই চুলগুলো নরম টাওয়াল দিয়ে হালকা করে ঝেড়ে নিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে মায়রা৷ আয়ান যে সেই কখন থেকে রীতিমতো হা করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে সেটাকে যেন বিন্দুমাত্র পাত্তা না দিয়েই নিজের মনে চুল শুকাতে ব্যস্ত মায়রা৷ আয়ান কিছুটা ঘোরের মাঝেই এসে মায়রাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে মায়রার ভেজা চুলে নাক মুখ ডুবিয়ে দিলো।
-দেখেছ? বলেছিলাম না আমার পাঞ্জাবিতে আমার লাজুক পরীটাকে একদম স্নো হোয়াইট লাগবে? শাওয়ার নিয়ে এই ধবধবে সাদা পাঞ্জাবিতে পরীটাকে এতো স্নিগ্ধ দেখতে লাগছে যে আমার মাথায় আবার ভূত চেপে বসবে মনে হচ্ছে---।
মায়রা আয়ানের দিকে ঘুরে গলায় হাত ঝুলিয়ে দিলো। আয়ানও হালকা করে মায়রার কোমড় জড়িয়ে ধরে মায়রার মুখের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে। মেয়েটার মুখের রক্তাভ আভাটা দেখতে বেশ লাগে আয়ানের। একটা মানুষ কি করে এতো লজ্জায় লাল হতে পারে সেটাই আয়ান ভেবে পায় না। অবশ্য পাগলীটা এতো লজ্জা পায় বলেই আয়ান তার লাজুক পরীকে আরো লজ্জায় ফেলে মজা পায়। আর এই লজ্জারাঙা চেহারা দেখে তো আয়ান সবসময়ই বেকাবু!
-তুমি সবসময়ই এতো দুষ্টুমি করো কেন? আমাকে লজ্জা দিয়ে মজা পাও খুব?
-ভিষণ।
-অসভ্য একটা--। আমি আর একটুও লজ্জা পাবো না দেখবা তো--। হুহ।
-ও আচ্ছা তাই? তাহলে তোমার নিচের ঠোঁটটায় একটা কামড় দেই কেমন? কি সুন্দর ছোট্ট একটা তিল আছে ঠোঁটের বাম পাশে! দেখলেই ইচ্ছে করে কামড়ে ধরে----।
-অসভ্য একটা---। যাও---।
আয়ানের কথাটা শেষ হওয়ার আগেই মায়রা লজ্জায় লাল হয়ে আয়ানের বুকে মুখ লুকিয়ে নিয়েছে৷ আয়ান সেটা দেখে হেসে মায়রার ভিজে চুলে আলতো করে হাত বুলিয়ে দিলো।
-কেউ নাকি আর আমাকে একটুও লজ্জা পাবে না বলেছিল? কিন্তু এটা কি হলো? সে তো লজ্জায় একেবারে আমার বুকের ভিতরে ঢুকে গেল? এবার আমি কি বুঝবো? হুম? পরীটা আবার আমাকে পাগল করতে চাইছে কেন?
-ধ্যাত--। ছাড়ো তো। তোমার দেখা হয়েছে? আমি চেইঞ্জ করবো---।
আয়ান মায়রার চুলের মধ্যে হাত ডুবিয়ে দিয়ে মুখটা আলতো করে তুলে ধরে নিজের দিকে ফেরালো।
-চেইঞ্জ করে কি হবে বলো? এর চেয়ে আসো আবার দুজনে ডুব দিই ভালোবাসার সাগরে----।
-তুমি একটা খুব খারাপ-----।
মায়রা আয়ানের বুকে এলোপাথারি কয়েকটা কিল বসালো। আয়ান মায়রার হাতদুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে মায়রাকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিলো শক্ত করে। আয়ান মায়রার চোখ গরম করে তাকানোকে পাত্তা না দিয়ে মায়রার ঠোঁটে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে সরে এসে হাসতে লাগলো মিটিমিটি। মায়রা কিছু বলতে যাবে এমন সময় নিচে ড্রইংরুম থেকে কারো জোরে কথা বলার শব্দে আয়ান আর মায়রা দুজনেই চমকে গেল। মায়ের কণ্ঠস্বরটা চিনতে পারলেও কি নিয়ে এতো চেঁচামেচি হচ্ছে সেটা বুঝতে পারলো না কেউই৷ আয়ান একটু বেখেয়ালি হতেই মায়রা আয়ানের বুকে হালকা করে ধাক্কা দিয়ে সরে এলো সামনে থেকে।
-সব তোমার দোষ। এতো দেরি হয়ে গেছে এখনো নিচে যাই নি তাই হয়তো মা আরো বেশি রেগে গেছে। এবার কি হবে! উফফ।
-আরে বাবা! ঠিক আছে আমার দোষ। মানছি। এখন চলো? নিচে যাবে?
-আমি চেইঞ্জ করে যাবো---। তুমি যাও না প্লিজ?
-ওকে ম্যাডাম। আমি দেখছি গিয়ে--। তুমি এখনকার তো চেইঞ্জ করে নাও৷ আমি আমার স্নো হোয়াইটকে পরে দেখবো নাহয়--।
-যাও তো তুমি-। যাও----।
মায়রা প্রায় ঠেলে আয়ানকে রুম থেকে বের করে দিলো। আয়ান হেসে ড্রইংরুমের দিকে পা বাড়ালো। সিঁড়ির কাছে আসতেই মাকে দেখতে পেল আয়ান৷ সায়না কিছু একটা বলার চেষ্টা করছে আর তাতে আরো রেগে গিয়ে জোরে জোরে কথা বলছে। আয়ান ভ্রু কুঁচকে নিচে নামছে আর ভাবছে। এই মেয়ে আবার নতুন কি নাটক শুরু করলো। ড্রইংরুমে একটা প্যাকিং করা লাগেজও দেখে আয়ানের ভ্রু আরো খানিকটা কুঁচকে গেল। কি হচ্ছে কিছুই ওর মাথায় ঢুকছে না৷
-আয়ান? তুই সায়নাকে কি বলেছিস? মেয়েটা চলে যেতে চাইছে কেন হঠাৎ? বল কি বলেছিস?
-খালামনি? আর কতবার বলবো তোমাকে? আয়ান আমাকে কিছু বলে নি। আমার তো ফাইনাল ইয়ারের ক্লাস চলছে৷ আর কয়েক মাস পরেই পরীক্ষা। কেন বুঝতে পারছ না?
-আয়ান না বললে কে কি বলেছে বল? আমাকে বল। কার এতো বড় সাহস হয় তোকে-----।
-ওওওও খালামনি? আমাকে কেউ কিচ্ছু বলে নি৷ ট্রাস্ট মি৷ না আয়ান, না আর কেউ। আমার তো ক্লাস আছে। ঢাকায় তো ফিরতেই হবে--। কয়দিন এখানে বসে ক্লাস মিস করবো বলো?
-সত্যি বলছিস তো?
-হ্যাঁ খালামনি। সত্যি বলছি--।
-তুই চলে গেলে আমি সারাদিন একা একা----।
-একা কোথায় খালামনি? মায়রাও তো আছে। মেয়েটাকে একটাবার সুযোগ দিয়ে দেখো--। দেখবে কি লক্ষী বউ হয়ে থাকবে মেয়েটা।
-সায়না? কিসব বলছিস?
-ওর অতীতে কি হয়েছিল সেটা ভুলে একবার ওকে আগের মতো করে কাছে টেনে নিয়ে দেখো খালামনি৷ দেখবে ও তোমার ছেলেরবউ নয় মেয়ে হয়ে থাকবে--। আর এতো রাগ করে থেকো না কেমন? মায়রার জায়গায় আমি থাকলে কি এতো কষ্ট দিতে পারতে বলো তো?
--------------------------
-পারতে না তাই না? তাহলে ওকেও একটা সুযোগ দিয়ে দেখো। তোমার কিছু করতে হবে না৷ শুধু ওকে তোমার কাজে হেল্প করার সুযোগ দাও। না বলে বকে দিও। তবু চুপ করে না থেকে কিছু অন্তত বলো ওকে। দেখবে তোমারও রাগটা পড়ে যাবে----।
-ও ঠকিয়েছে আমাদেরকে সায়না---।
-মায়রা তো নিজের সম্পর্কে তোমাকে কিছু বলে নি খালামনি। আর না তুমি ওকে কিছু জিজ্ঞেস করেছ। যা বলার তোমার ছেলে বলেছে। ঠকালে ও ঠকিয়েছে৷ মায়রা নয়। তাই শাস্তি দিতে হলে আয়ানকেই দাও।
-সেটাও তো ওর জন্যই----।
-হি হি। তুমি এখনো রেগে আছো খালামনি--। তাই রাগ থেকে কথাগুলো বলছ৷ রাগ পড়ে গেলে দেখবে আমার কথাও তোমার মনে থাকবে না। তুমি মায়রাকে নিয়েই মেতে থাকবে---। দেখো--৷ হি হি।
আয়ান মায়ের পিছনে দাঁড়ানোয় মায়ের মুখের রিএ্যাকশানটা ঠিক মতো দেখতে পাচ্ছে না। কিন্তু সায়নার হাসি আর কথাগুলো শুনে আয়ান অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। এই মেয়েটার হুট করে এমন বদলে যাওয়ার কারণ কি? গতকাল রাতেও ব্যাপারটা খেয়াল করেছিল আয়ান। কিসের যেন একটা সূক্ষ্ম পরিবর্তন হয়েছে সায়নার মধ্যে। রাতে ব্যাপারটা ভালো করে খেয়াল না করলেও এখন চোখে পড়ছে আয়ানের। মেয়েটা সত্যি বদলে গেছে নাকি এর পিছনে অন্য কোনো কারণ আছে সেটাই বোঝার চেষ্টা করছে আয়ান৷ সায়নার এমন পরিবর্তনে আয়ানের টেনশন বাড়ছে। এই মেয়ের এমন নাটকের মানে কিছুতেই আয়ানের মাথায় ঢুকছে না।