- ওসমান নিজের কাজে এতটাই মগ্ন ছিল যে মৌতুসির কথা শুনতেও পেলনা। এবার মৌতুসি ওসমানের কাছে গিয়ে আব্বু বলেই গায়ের শক্তি দিয়ে একটা ধাক্কা দেয়।
|
- ওসমান ধাক্কা খেয়ে ছিটকে বেসিনের উপর পড়ে গিয়ে কুকড়ে উঠল। তোর এত সাহস আবার আমার গায়ে হাত তুলিশ বলেই তিতির দিকে তাকাতেই মৌতুসি কে সামনে দেখতে পেয়ে ওসমান থমকে দাড়ালো। ওসমান নিজেই নিজেকে বলল এ আমি কাকে দেখলাম।
|
- মৌতুসি লজ্জায় ঘৃনায় মুখ সরিয়ে নিল বাবার দিক থেকে। তিতিরের গায়ে ওড়নাটা জড়িয়ে নিয়েই তিতিরকে নিয়ে কিচেন থেকে বের হয়ে গেল। বাসার সবাই তখনো হৈচৈ করছে।
মৌতুসি তিতিরের চোখের জল মুছে দিয়ে বলল কাঁদিসনা। তোরে এই বাসায় আর রাখবোনা। মৌ আপুর বাসায় পাঠিয়ে দিব। আমি নিশ্চিত তোর ওখানে কিছুনা কিছুর ব্যবস্থা হয়েই যাবে।
|
- দুই দিন হয়ে যায়। তিতির কাজ ছাড়া রুম থেকে বের হয়না। ওসমানও লজ্জায় মৌতুসির চোখের দিকে তাকাতে পারেনা।
একদিন সকালে খাবার টেবিলে কথাটা মৌতুসিই আগে তোলে। আম্মু তিতিরকে মৌ আপুর বাসায় পাঠিয়ে দাও। আপুর ওখানে বাচ্চা সামলানো দায় হয়ে পড়েছে।
|
- মৌতুসির কথা গুলো শুনে মৌসুমী চেচিয়ে উঠে বলল ওর ওখানে যাওয়ার দরকার কি! আম্মুকে বলেছিতো আমি ওখানে যাবো।
|
- ওখানে তিতির বেড়াইতে যাচ্ছেনা তোমার মত। ওখানে ও কাজ করতেই যাচ্ছে। তুমিতো বসে বসে খাবা শুধু। কাজের কাজ কিছুই করবেনা। আম্মু আজই তিতিরকে ওখানে পাঠিয়ে দেন। জামিলা কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলনা। কারন মৌতুসি সব কথা তার দাদীকে জানিয়েছে।
|
- আমেনা মৌ কে একটা ফোন দিয়েই তিতিরকে পাঠিয়ে দাও। আর মৌসুমী এ ব্যাপারে আর একটা কথা যদি বলছিস তাহলে তোর খবর আছে। কাজের কাজ নাই শুধু কাজের মধ্য বা-হাত ঢুকানো তোর বের করবো। (জামিলা)
|
- মি. ওসমান মাথা নিচু করে খেয়েই যাচ্ছে। মৌয়ের বাবা আপনি না হয় তিতিরকে দিয়ে আসেন?
|
- আজ যদি ঐ মেয়েটাকে কাছে পাই তাহলে আর বাঁচতে দিব না। শুধু ওর জন্য নিজের মায়ের কাছে আর মেয়ের কাছে নিকৃষ্ট হয়ে গেছি কথা গুলো ভাবতেই জামিলা বলে উঠল ওর যাওয়ার দরকার নাই। আমেনা আর মৌসুমী গিয়ে দিয়ে আয় বলে জামিলা খাবার টেবিল থেকে উঠে গেল।
|
- মৌসুমী থমথম করতে করতে উঠে গেল। শাশুড়ীর এমন ব্যবহারে অবাক হয়ে গেল আমেনা। তিতিরকে খাবার খাইতে বলে আমেনাও চলে গেল। মেয়ের বাসায় যাওয়া বলে কথা, খালি হাতে তো আর যাওয়া যাবেনা।
|
- তিতির চুপচাপ খাচ্ছে আর মৌতুসি সেখানে বসে ওর খাবার দেখছে। মেয়েটা এত ধৈর্যশীল কিভাবে হয়! কত রকম ভাবে এই কটা দিন অত্যাচার করেছি তবুও কোন রকম প্রতিবাদ না করে রোবটের মত কাজ করেই যাচ্ছে।
তিতিরের খাবার শেষ হলে তিতিরকে নিয়ে গেল মৌতুসি।
♦♦♦♦♦♦♦♦♦
- খাটে একের পর এক ড্রেস ফেলে দিচ্ছে আলমারী থেকে। প্রায় ২০ টা ড্রেস বের করে দিয়ে নিজেই প্যাক করে একটা লাগেজে গোছাতে লাগল মৌসুমী।
বোন মাফ করে দিস। নিজের কাজ নিজে জানি তবুও তোর হাতে সব কাজ করে নিতাম। তোকে যেই বাসায় পাঠিয়ে দিচ্ছি ওরা খুবই ধনী। সেখানে নোংরা পোষাক পড়া অ্যালাউ না। সাবধানে থাকবি। আমার আপুকে একদম সহজ ভাবে নিবিনা। দেখছিস তো আমার কেমন তাহলে সে আমাদেরই বোন সে নিশ্চয় ধোয়া তুলশি পাতা হবেনা। তুই যদি একটু বুদ্ধি করে আপুর শাশুড়ী কে হাত করতে পারিস তাহলে তোর পড়াশুনাটা আবার চালিয়ে যেতে পারবি। সবসময় ভালো থাকিস বলে তিতিরকে জড়িয়ে ধরল মৌতুসি।
|
- বিকেলে আমেনা মৌসুমী আর তিতির কে নিয়ে রওনা দিল। ১ ঘন্টা ৪৫ মিনিট জার্নি শেষে মৌয়ের শশুড় বাসায় গেল ওরা।
তিতির এমন বাসা আগে কখনও দেখেনি। গ্রামের সবাই বলত তিতিরদের বাসা সব থেকে হাইফাই কিন্তু এখানে এসে যে বাসা দেখলো তাতে হুশ উড়ে গেল তিতিরের।
দারোয়ান এসে সব জিনিসপত্র নিয়ে গেল। আমেনা তিতিরের হাত ধরে বাসার ভিতর নিয়ে গেল। মৌসুমী তো এদের তোয়াক্কা না করে আগেই চলে গিয়েছে।
|
- মৌ ওর বেবিকে নিয়ে দাড়িয়ে ছিল। মাকে দেখে খুব খুশি হল কিন্তু তিতিরকে দেখে বেশ অবাক হয়ে গেল। এত সুন্দর মেয়ে কখনো কাজের মেয়ে হয় নাকি? হয়তবা হতে পারে বলে নিয়ে গেল ওদের নিজের রুমে। শুধু আমেনা ছাড়া। আমেনা সবার সাথে কথা বলছিল।
|
- আপু তোমাদের বাসায় কয়েকদিন থাকবো। আচ্ছা "মাহাদ" ভাইয়া কই? তাকে তো দেখলাম না!
|
- ওনার এক্সিডেন্ট হয়েছিল। দুদিন আগে বাসায় তাকে নিয়ে আসা হইছে। ৭ দিন কমায় ছিল। পরিবারের উপর দিয়ে খুব ঝড় বেয়ে গেছে। এখন অনেকটা সুস্থ।
|
- মৌসুমী কথাগুলো শুনে চমকে গেল। কিহ্ মাহাদ এক্সিডেন্ট করছে আর তুমি এখন বলছো! মৌসুমী আধা দৌড় দিয়েই রুম থেকে বের হয়ে গেল।
|
- মৌসুমী ওনার রুমে যাস না। ওনি আর ১০ টা মানুষের মত মনমানুষিকতা সম্পূর্ন নন। বিরক্ত হলে তোর অবস্থা খারাপ করে ছাড়বে। কিন্তু মৌসুমী কোন কথায় শুনল না।
এই মেয়ে তো আজ গেছে। জন্মের মত এই বাসায় আসা বন্ধ হয়ে যাবে তোর।
|
- আপু মাহাদ ভাইয়া কে? উনি কি মানুষ নন! না অন্য কিছু......
|
- তিতিরের কথা শুনে ওকে ধমক দিয়ে বলল কাজের মেয়ে হয়ে এত জানার ইচ্ছা তোর কেন! কাজ করতে আসছিস কাজ করেই যাবি। অন্যদিকে যেন মন যায়না বলে হাতে কয়েকটা কাজ ধরে দিয়ে মৌ চলে গেল।
|
- তিতির বেশ বুঝতে পারল এখানে সব কিছু সহজ হবে না। বাসার জন্য মন কেমন জানি করছে। ইভান আর ইভার কথা বার বার মনে পড়ছে তিতিরের। আসার সময় ওদের দেখেও আসতে পারেনি।
" বাবা তোমাকে আমি কোনদিনও ক্ষমা করবো না।" তিতির গম্ভীর হয়ে কথা গুলো বলল। চোখে আর পানি আসেনা যেদিন ওর বাবা ওকে দুনিয়া নামক এই জাহান্নামে রেখে গেছে সেদিন হতে। যার নিজের মেয়ের কথা শোনার সময় হয়নি কোনদিন সে আবার আমার খোঁজ রাখবে, আমি কেমন আছি!
♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦
- মৌসুমী মাহাদের রুমের কাছে এসে দাড়িয়ে গেল। দরজা খোলায় ছিল। মাহাদ কপালে বাম হাত দিয়ে সুয়ে ছিল। দুদিন হল সে হসপিটাল থেকে রিলিজ পাইছে। শরীরটা এখনো বেশ দুর্বল রয়েছে।
মৌসুমী কোন দিনও কথা বলার সুযোগ পায়নি এই দুই বছরেও। শুধু শুনেছে প্রচন্ড রাগী একটা মানুষ সে। রুমের ভিতর যেতে ভয়ও করছে। তারপরও রুমে ঢুকে পড়ল। গলা দিয়ে কয়েকটা শব্দ করে মাহাদকে জানিয়ে দিল তার রুমে কেউ একজন এসেছে।
|
- মাহাদ তবুও ওভাবেই রইল। কোন রেসপন্স নাই।
|
- এর থেকে লজ্জাজনক অপমান আর কোথাও হয়না তবুও মৌসুমী ওখানেই দাড়িয়ে রইল। এই মানুষটাকে সে বড্ড ভাল বাসে।
ভাইয়া বলে ডাক দিতেই মাহাদ স্বাভাবিক হয়েই উঠে বসল।
|
- কারো রুমে আসতে অনুমতির প্রয়োজন হয় সেটা বোধহয় আপনি জানেন না মিস......
|
- না মানে স্যরি বলেই চুপ করে গেল মৌসুমী। এই মানুষটার সামনে আসলেই সব কথা বন্ধ হয়ে যায় মৌসুমীর। মৌসুমী ঘেমেই চলেছে।
|
- এর পরের বার যেন ভুল না হয় বলেই জোড়ে চিৎকার দিয়ে কাজের ছেলে মজিদকে ডাকল। মাহাদের এমন ব্যবহারে মৌসুমী খুব ভয় পেল। এই মানুষটা সব দিক দিয়ে ফাষ্ট। যেমন দেখতে মারাত্মক তেমনি ব্যবহারও মারাত্মক।
|
- জ্বী ভাইয়া বলেন..... কিছু দরকার?
|
- মা কোথায় তাকে এখুনি ডাক দাও বলে মৌসুমীর দিকে তাকাল মাহাদ। কিছু বলবেন?
|
- এবার মৌসুমী প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেল। কি আর বলবে এখান থেকে যেতে পারলেই যেন বাঁচে।
ভাইয়া পড়ে কথা হবে বলে মৌসুমী বের হয়ে গেল রুম থেকে।
|
- লাবীবা আহনাফ তার ছেলের রুমে এসে বলল কি হয়েছে বাবা! কিছু বলবি? কোন সমস্যা হচ্ছে বলে মাহাদের শরীর চেক করতে লাগল।
|
- মা আমার ফোন আর ল্যাপটপটা দিবা! না আমায় অন্য ব্যবস্থা করতে হবে?
|
- কি ব্যবস্থা করবি একটু শুনি! ফোন আর ল্যাপটপ দিব তবে কয়েক দিন পর। আগে তুই সুস্থ হবি তারপর। তোর দাদীকে পাঠিয়ে দিচ্ছি বলেই লাবীবা চলে গেল।
|
- মা এখানে দাদীকে কেন প্রয়োজন সেটাই বুঝতে পারছিনা। তোমাদের সাথে আমার কি শত্রুতা তাই সবাই এমন করো আমার সাথে?
|
- দেওয়ান মো. কামরান আহনাফের মা বাতাসি আহনাফের এই বাসায় দাপট একটু বেশিই। উনি লাবীবার শাশুড়ি আম্মা। বন্দুকের গুলি মিস যাবে কিন্তু তার কথার নড়চড় কেউ করতে পারবেনা এই বাসায়। বুড়ি এখনো বেশ শক্তিসামর্থ্য।
কিরে মাহাদ এত মায়ের সাথে চিৎকার করছিস কেন? কি দরকার আমাকে বল।
|
- দাদী আমার ফোন আর ল্যাপটপ দাও। আমার খুব দরকার। জলদি ওগুলো বের করে দাও।
|
- বাতাসি বেওয়া এক গাল হেঁসে বলল কেন রে ভাই, কোন ছুড়ির লগে ইটিশ-পিটিশ আছে নাকি তাই ফোন দরকার?
আমার বাসায় কিন্তু আমার সতীন আনতে পারুম না।
|
- মিস. বাতাসি বেগুম যাও ফোনটা এনে দাও। লক্ষী আমার কচি খুকিটা স্বামীর কথা শুনতে হয়। তাছাড়া জান্নাতের খুশবু ও কিন্তু কপালে জুটবে না হুম.......
|
- খালি কথায় চিড়া ভিজেনা ডারলিং। তুই সম্পূর্ন সুস্থ হো তারপর সব পাবি বলে বাতাসি বেওয়া চলে গেল।
|
- মাহাদের সব প্লান একদম চম্পট দিল। এতদিন ঙ্গান ছিলনা দেখে হয়ত চুপ করে ছিলাম কিন্তু এখন কি করবো। উফ্ দাদী তোমার সাথে যে দাদা কি করে সংসার করছে আল্লাহ্ ভাল জানে। তুমি যদি আমার বউ হইতা তাহলে রাত দিন আমার হাতে ম্যার খাইতা।
|
- তোর বউ আসুক তখন দেখবো কেমন মারিস বলে পিছন ফিরে মাহাদ কে একটা ভেংচি করে বাতাসি বেওয়া চলে গেল।
|
- মাহাদ রাগের চোটে ট্রী টেবিলে রাখা ফলগুলো ফ্লোরে ছুড়ে মারল। সব জায়গায় পোদ্দারি দেখাতে আসবানা বাতাসি বিবি। মাহাদ যেন পাগল হয়ে যাচ্ছে ওগুলো না পেয়ে।
♦♦♦♦♦♦♦♦♦
- মৌসুমী দ্রুত মৌয়ের রুমে এসে হাঁপাতে লাগল। আপু তোমরা এই বাসায় থাকো কিভাবে? এখানে কোন মানুষ থাকেনা। সবাই যেন একেকটা বনের সিংহ আর বাঘ। কেউ কাউকে ছাড় দেয়না। কথাগুলো বলেই সামনে দেখল মৌয়ের শাশুড়ী মা "রুপালী" বসে আছে।
|
- রুপালী ভ্রু কুঁচকে বলে উঠল কি বললে মৌসুমী?
|
- না মানে আন্টি বলতে চাইছিলাম একটা কথা বলে ফেললাম অন্য কথা। মা আমরা কখন যাচ্ছি বলে আমেনার দিকে তাকালো মৌসুমি।
|
- কাল সকালে যাবে তোমরা বলে একটা মুচকি হেঁসে উঠল রুপালী। আরে মৌসুমী আমিতো তোমার সাথে মজা করছিলাম। তোমরা কথা বলো বলে তিতিরের দিকে তাকিয়ে রুপালী বলল ও কে?
|
- আমেনা কিছু বলতে যাবে এমন সময় মৌসুমী বলে উঠল ও আমাদের কাজের মেয়ে ছিল। আপুর প্রয়োজনের কথা ভেবে ওকে দিতে এসেছি আন্টি।
|
- দেখতে খুব মিষ্টি। দেখে তো মনে হয়না কাজের মেয়ে বলে রুপালী উঠে চলে গেল।
|
- তিতির চুপ করে দাড়িয়েই আছে। আমেনা মৌসুমীকে ধমক দিয়ে বলল ও কাজের মেয়ে? চড়েই তোদের সোজা করবো। বিয়াদপের দল কোথাকার । তোরা হয়ত জানিস না আমি ওদের বাসা থেকে মানুষ হয়েছি। কিন্তু ও আমাদের বাসায় এসে কাজের মানুষের মত খাটছে। ওর যদি মা আজ বেঁচে থাকতো তাহলে তোরা ওর কাজের মেয়ে হওয়ার যোগ্যতাও রাখতি না। ও চুপ করে আছে বলে এই না যে ওর কোন পরিচয় নাই।
ও অত্যান্ত মেধাবি একটা মেয়ে যার কাছে তোদের কোন ঙ্গানই নাই। ওর বাবা কত টাকার মালিক জানিস? ও ভাগ্যর দোষে এমন জায়গায় এসে পড়েছে।
|
- তাহলে ওর বাবা এখানে ওকে রেখেছে কেন? নিশ্চয় কিছু কুকাম করেছে না হলে কেউ এভাবে ফেলে রেখে যায়!(মৌসুমী)
|
- ঐ যে বললাম ভাগ্যর নির্মম পরিহাসের জন্য এখানে পড়ে আছে। আমেনা নিজের চোখের কাছেই সবসময় তিতিরকে রেখেছে। ওর ব্যাপারে রুপালীকে অনেক কিছু বলেছে যাতে তিতিরের সাথে কেউ খারাপ ব্যবহার না করতে পারে।
|
- মৌয়ের স্বামী রেজওয়ান একজন সফল বিজনেস ম্যান। অত্যান্ত কঠোর পরিশ্রমী সে। মামা কামরানের সাথে কাজ করে।
রাতে রেজওয়ান এসে তিতিরকে দেখে বেশ চমকেই যায়। এ এখানে কেন? কিন্তু কাউকে কিছু বলল না।
মৌ এ তোমার কে হয়?
|
- মা বলল আমাদের নাকি কাজিন হয়। আমাদের মেয়ের দেখাশোনা করার জন্য মা ওকে এখানে এনেছে।
|
- অহ্ আচ্ছা বলে ফ্রেস হতে গেল রেজওয়ান। সে তিতিরকে কিভাবে চিনে সেটা জানা গেলনা।
♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦
- পরের দিন সকালে ব্রেকফাস্টের টেবিলে একে একে সবাই হাজির হল। এই ব্রেকফাস্টে সবাই একসাথে মিলিত হয়, তাছাড়া পুরো দিনেও কেউ কারো দেখা পায়না।
দেওয়ান মো. কামরান আহনাফ একজন সফল ব্যবসায়ী। দেশের মধ্য সে উচ্চবিত্ত ধনীদের মধ্য একজন । তার সাহার্য্যকারী আপন ভাগিনা রেজওয়ান। সে মামার অন্ধ ভক্ত।
|
- লাবিবা আমার মাহাদ কই! ও এখানে নাই কেন? বাসায় মেহমান আইছে আর সে ঘরে বসে বসে কি করে! যাও ওরে ডাইকা আনো। বল দাদী ডাকছে।
|
- আম্মা রাখেন না! ও যখন আসতে চায়না তাহলে কেন ডাকেন? ( কামরান)
|
- তুই চুপ থাক বলে ধমক দিল বাতাসি বেওয়া। সারা দিন কাজ কাম নিয়ে ব্যাস্ত থাকিস সংসারের খবর তুই কিভাবে জানবি।
|
- সবার সামনে কামরান বেশ অপমান বোধ করল। কিন্তু সে মাকে অত্যান্ত শ্রদ্ধা করে তাই অপমান হজম করে জুসের গ্লাসে চুমুক দিল।
|
- মাহাদ অনেকটা অগোছালো ভাবেই চলে আসল সবার সামনে। মৌসুমী দেখে তো সেই ফিদা হয়ে গেল। অগোছালো থাকলেও কোন মানুষকে যে এতটা কিউট লাগে সেটা ওর জানা ছিলনা। মনে হয় কোন শিল্পী নিজের হাতে সাজিয়েছে । চোখের পলক আর পড়েনা মৌসুমীর।
|
- অন্য দিন হলে মাহাদ চিৎকার করতো কিন্তু আজ চুপটি করে সবার সামনে বসে মাথা নিচু করে খেয়ে উঠে গেল। ওর এমন ব্যবহারে সবাই অবাক। বিশেষ করে কামরানের চোখ কপালে উঠে গেল। আজ এ কোন মাহাদকে সে দেখলো।
♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦
- তিতির সবার সামনেই বসে খাচ্ছিল মাথা নিচু করে। কামরান হঠাৎ বলে উঠল এই মেয়ে কে মৌ?
|
- সাথে সাথে তিতির উঠে দাড়াল। কেন দাড়াল বুঝা গেলনা। মনে হয় ভয় পেয়েই দাড়িয়েছে।
|
- এই মামুনি দাড়ালে কেন! ভয় পাইছো? ( কামরান)
|
- ভাইজান ও একটু ভিতু। কিন্তু পড়াশোনায় অত্যান্ত ভাল। দুর্ঘটনাবশত রাবির আডমিশন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেনি। একটা বছর লস হয়ে গেল মেয়েটার। ( আমেনা)
|
- কামরান কথাগুলো শুনল শুধু তারপর বাঁকি নাস্তা কমপ্লিট করে উঠে পড়ল।
আমেনা আর মৌসুমী সকাল ১১ টায় তিতিরকে রেখে বাসায় ফিরে গেল।
♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦
- তিতির এখানে এসে ৫ দিন হয়ে গেছে। এর মধ্য একটা জিনিস লক্ষ্য করেছে রেজওয়ান ভাইয়া ওর দিকে কেমন জানি চেনা দৃষ্টিতে তাকায় যেটা তিতিরকে খুব ভাবায়। এটা খারাপ দৃষ্টি না ভাল দৃষ্টি কিছুই বুঝতে পারেনা তিতির। মনে হয় তিতিরকে সে অনেক দিন থেকে খুঁজছে আর এখন সে নিজের কাছেই পেয়েছে।
আর একটা জিনিস লক্ষ্য করেছে এই বাসার লাবিবা আন্টির দুর সম্পর্কে এই ভাইয়ের ছেলে পড়ালেখার জন্য থাকে। ওর নাম রাহাত। ও খুব চোখে চোখে রাখে তিতিরকে। কোথায় যায় কি করে সব সময় মনে হয় পিছু পিছু থাকে। এদের কারো মতলবই ঠিক মত বুঝতে পারেনা তিতির। ঘর পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলেই ডরাই সেটা তিতির কে না দেখলে কেউ বুঝবেনা।
|
- দুপুরে খাবার খেয়ে যে যার রুমে শুয়ে পড়েছে। এই সময় মৌয়ের মেয়ে রাতিশার ঘুম ভেঙ্গে যায়। মৌ তিতিরকে ডেকে রাতিশাকে নিতে বলে আবার ঘুমিয়ে পড়ে।
|
- তিতির রাতিশাকে কোলে নিয়ে কিচেনে গিয়ে দুধ চুলায় বসিয়ে দিয়ে ফিডার নিতে গেল। এমন সময় রাহাত রুমে ঢুকল যেটা তিতির জানতেই পারলো না।
|
- তিতির ফিডার এনে দুধটা নেড়ে অন্য দিকে হয়ে চিনি নিতেই রাহাত এসে তিতিরের কোমড়ে হাত দিতেই রাহাতের হাত মুচড়ে গরম দুধের ভিতর ডুবিয়ে দিল মাহাদ। আর একহাত দিয়ে মুখ চিপে ধরল যাতে আওয়াজ না করতে পারে।