আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

অচেনা অতিথি - পর্ব ২১ - নাফিসা মুনতাহা পরী - ধারাবাহিক গল্প


রাশেদের মুখ থেকে কথা বলাটা শেষ না হতেই মাহাদ এসে রাশেদের শার্টের কলার ধরে টেনে তুললো। এই তুই কি বললি! তিতির বাহিরের মেয়ে! শার্টের কলার ধরে রাশেদকে ঝাকিয়ে মাহাদ বললো," কান খুলে একটা পরিষ্কার কথা মাথায় ঢুকে নে, তোর বোনকে যতটুকু দয়া করে শাস্তি কমাতে চাইছিলাম ততোটুকুও আর কমাবোনা। জিন্দেগী ভর ওরে জেলের ভিতর পঁচে মারবো। ক্ষমতা থাকে তো ওকে বের করে দেখাস।


দেখছো কামরান তোমার ছেলের ব্যবহার! মানুষ করতে পারোনি তোমার ছেলেকে। কাল বাসায় গিয়ে এর থেকেও  খারাপ ব্যবহার করেছে তোমার দুই ছেলে মিলে। তুমি কিছু বলো।(বকুল)


উনি কি বলবেন, যা বলার আমার সাথে বলুন। আপনার লজ্জা থাকা উচিত। আপনি কেমন সন্তানকে জন্ম দিয়েছেন! যে সামান্য কথা কাটাকাটিতে এক মেয়েকে মার্ডার করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিল!  মাহাদ দৌড়ে উপরে গিয়ে তিতিরের সব রির্পোট এনে বকুল সাহেবের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, আপনার মেয়ে তিতিরের মা হওয়ার ক্ষমতা পর্যন্ত হুমকির মুখে ফেলেছে। এটা যদি আপনার মেয়ের সাথে কেউ করতো তাহলে কি আপনি তাকে এমনি এমনি ছেড়ে দিতেন! 


এবার লাবীবা রান্নাঘর হতে ডাইনিং রুমে এসে বলল," ভাইসাব কিছু মনে করবেননা। আপনার মেয়ে যা করেছে তা ক্ষমার অযোগ্য। তিতিরের এখনো ঙ্গান ফেরেনি। যখন ফিরবে তখন আপনারা তারসাথে কথা বলেন। এখানে এসব ঝগড়াঝাঁটি করাটা বেমানান।


মাহাদ ওদের ওখানে রেখেই বাসা হতে বের হলো। মাহাদ কাল হতে মুখে পানি পর্যন্ত তোলেনি তিতিরের টেনশানে। আর এরা ওকে নিয়ে এখনো পড়ে আছে । প্রায় আধা ঘন্টার মধ্য মাহাদ হসপিটালে পৌছালো।  আর পৌছেই শুনলো তিতিরে ঙ্গান ফিরেছে। মাহাদ আর দেরি না করে তিতিরের কাছে চলে যায়। সামনে ফুয়াদ বসে তিতিরের সাথে গল্প করছিল। মাহাদ চলে আসায় ফুয়াদ তিতিরকে বিদায় জানিয়ে মাহাদের সাথে কিছু কথা বলে ওর অফিসে চলে গেলো।


মাহাদ তিতিরের কাছে বসতেই একটা নার্স এসে বললো," স্যার, ওনাকে অনেক আগে থেকে খাবারের জন্য বলা হচ্ছে কিন্তু আপনি না আসলে নাকি উনি খাবেননা তাই জোর করেও খাওয়াতে পারিনি। দেখেন শরীর দুর্বলতার জন্য ওনার শরীর মাঝে মাঝে কেঁপে উঠছে। না খেলে আবার ওনার শরীর খারাপ করবে। তখন আবার সমস্যা হতে পারে।


আপনি যান আমি বাঁকিটা সামলিয়ে নিচ্ছি। নার্স চলে যেতেই মাহাদ তিতিরের দিকে তাকালো। তারপর কোন কথা না বলে মাহাদ  হাতটা ধুয়ে খাবার মেখে নিজে এক লোকমা ভাত মুখে দিয়ে তারপর তিতিরে মুখে খাবার ধরতেই তিতির খাবারটা মুখে পুরো নিলো।  ওরা দু'জনেই খাবার খাচ্ছে।

তিতির, তোমায় বুঝতে হবে। তুমি অসুস্থ আর আমি সুস্থ। আমার না খেলেও চলবে কিন্তু তোমার!  


এবার তিতিরের মুখ হতে ছোট ছোট কথাগুলো ভেঁসে এলো। নিচু গলায় তিতির বললো," আমি জানিতো আপনি কাল হতে কিছু খাননি। আপনাকে ছেড়ে আমি কি করে খাই।"


মাহাদ তিতিরের কথা পাত্তা না দিয়ে বলল," তিতির, তুমি না খুব ভারী। আমি ভাবছি, যখন আমি তোমাকে প্রেগন্যান্ট করে দিব, তখন তুমি আরো ভারী হয়ে যাবে। এই অধম কি আর তখন তোমাকে কোলে নিতে পারবে!"

মাহাদ তিতিরের কাছে খাবার নিয়ে যেতেই তিতির আর কিছুতেই খাবেনা। এবার সে খাবার খেতে নারাজ। তার ডায়েট এখন হতেই শুরু হয়ে গেছে। সে আর একটা ভাতের দানাও খাবেনা।
মাহাদ কথাগুলো বলেও বেক্কেল সেজে গেলো। বউ তার রুমান্টিকতা বলতে কিছুই বোঝেনা। 

মাহাদ একটু হেসে বললো," তিতির,  তুমি দেখছি রোমান্সের "র" বলতেও কিছু বোঝনা!"

ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ

তিতিরের চোখ চকচক করে উঠলো মাহাদের কথাতে। বর তার দেখছি সেই মোডে আছে। তাই তিতিরও চট করে লাজ লজ্জার মাথা খেয়ে বললো," একবার  শুধু কাছে আইসেন, তারপর আমি কি জিনিস আপনাকে দেখিয়ে ছাড়বো।"

ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ

কথার সুযোগে মাহাদ আবার তিতিরের মুখে ভাত পুরে দিয়ে বললো, " চিন্তা করোনা তিতির, যেদিন যাবো সেদিন তোমায় ধংস করে ছাড়বো। "

ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ

এবার লজ্জায় তিতিরের হাত পা কাঁপতে লাগলো। শেষে তিতিরের হেঁচকি উঠে গেলো।
মাহাদ চট করে তিতিরের মুখে গ্লাসটা ধরে মুচকি একটা হাসি দিয়ে বললো," এখনো তো গায়ে হাতই দিলামনা তার ভিতর এত কাঁপাকাপি! এত দুুর্বল ফিলিং নিয়ে আমায় বড় মুখ করে বলছো! তুমি আমায় দেখিয়ে ছাড়বে? হুমহ্ বুঝলাম, হারবে তবু দমবেনা।"

ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ

তিতিরের পানি আর গলা দিয়ে নামলোনা। মাহাদের কথা শুনে টাস্কি খেয়ে বিষম উঠে গেলো। কাঁশতে কাঁশতে চোখ দিয়ে পানি বের হল।


কাঁশির শব্দে দু'টি নার্স নিজেদের মধ্য বলাবলি করছে। এই তুই গিয়ে দেখনা ম্যাডাম কাঁশছে কেনো!

আমি যেতে পারবোনা। পারলে তুই যা। এই স্যারটা ম্যাডামের রুমে গেলেই রোমান্স শুরু করে দেয়। লজ্জায় কাছে যেতে পারিনা বলতেই নার্স দুটি দেখলো মাহাদ তাদের দুজনেরই সামনে দাড়িয়ে আছে।
মাহাদকে দেখে তারা চমকে উঠলো। না মানে স্যার....


আপনাদের এই আষাড়ে গল্প শেষ হলে আপানারা দয়া করে পেসেন্টের কাছে যেতে পারেন। আপনাদের এই অহেতুক কথাবার্তার জন্য কাজে ব্যাঘাত ঘটবে আর তাতে পেসেন্টেরও ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা থাকবে। মাহাদ কথাগুলো বলে চলে গেলো।

♦♦♦♦♦

মো. কামরান আহনাফ হসপিটালে এসেছেন তিতিরকে দেখতে। উনি একাই এসেছেন। মাহাদ তখন  তিতিরের জন্য কিছু কেনাকাটা করতে বাহিরে গিয়েছে।
কামরান সাহেব তিতিরের কাছে বসে কিছুক্ষন গল্প করতেই ডক্টর চলে আসলো তিতিরকে লাষ্ট বারের জন্য চেকাপ করতে।


ডক্টর চেকাপ করে বললো সব ঠিক আছে। আজকে তোমাকে রিলিজ দেওয়া হবে তিতির।
ডক্টরের কথা শুনে কামরান সাহেব বলল, " তাহলে ওকে আমার সাথে নিয়ে যাই ডক্টর!"


অবশ্যই নিয়ে যেতে পারেন। নার্সরা ধরে তিতিরকে গাড়ীতে তুলে দিল। কামরান সাহেব নিজে হসপিটালের বিল মিটিয়ে সিগনেচার করে নিচে এসে গাড়ীতে উঠতেই ডাইভার গাড়ী স্টার্ট দিল। বহুবছর পর কামরান সাহেব মাহাদের নাম্বারে কল দিয়ে তিতিরকে বলল," তুমি মাহাদকে বলো আমরা বাসায় চলে আসছি।"


ব্যাপারটা তিতিরকে খুব কষ্ট দিল। তিতির মনে মনে প্রতিঙ্গা করলো যেভাবেই হোক কামরান সাহেবের দুই ছেলেকে তার সাথে আবার এক করবে। বাবাও কষ্ট পায় ছেলেগুলোও কষ্ট পায়। কিন্তু নিজেদের মধ্য জেদ বহাল রাখবে তারা। কেউ কোন অংশে কম না।

কলটা রিসিভ হলোনা। এবার তিতির মাহাদের উপর খানিকটা রেগে গেলো। তিতির বাসায় আসছে সেটা মাহাদকে টেক্সট করে ফোনটা কামরান সাহেবকে দিয়ে বলল," আঙ্কেল ওনাকে টেক্সট করে দিছি।"
কামরান সাহেব আর কিছু বললোনা। 

তিতির বাসায় এলে মৌ আর মিসেস.লাবীবা মিলে তিতিরকে ধরে বাসার ভিতরে নিয়ে আসলো। তারপর  রুমে নিয়ে গেলো ওরা তিতিরকে।

♦♦♦♦

বাতাসি বিবি তার বাবার বাসায় অবস্থান করছে। সাথে সাবিনাকেও নিয়ে এসেছে। একদিন না যেতেই বাতাসির অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে বুদুনের তিন বিবি আজ বুদুনকে ঘরে তুলো মিটিং করছে।
বুদুন অপরাধীর মত সবার মাঝখানে মাথা নিচু করে বসে আছে।


বুদুনের বড় বিবি লুতফুন জোড় গলায় বলল," তোর বোনকে এই বাড়ি ছাড়া করবি না তোরে আমরা বাড়ি ছাড়া করবো? এই বয়সে বুড়ির জেদ দেখলে  মরা  মানুষ সুদ্ধ কব্বোর থেকে উঠবে। 


বুদুনের ২য় বিবি সফুরা চিল্লায় কইলো, " বুবু ওরে তো কাল গলঘরাতে গরুর সাথে রাখছি। আজ যদি ওর বোনরে বাড়ি থেকে না সরাই তাহলে সেখানেও ওরে রাখুমনা। সোজা বাড়ীর বাহিরে বার করে দিমু। বুইড়া কালে বাপের বাড়িত আসা সারা জিবনের জন্য ভুলামু। বজ্জাত বুড়ি, স্বভাব ভালো হলে তাও রাখা যায়। আল্লাহ্ ভালা যানে এই বেডিরে ওর বাড়ির সগ্গলে ক্যামনে সর্য্য করে।


৩য় বিবি তো কান কর্তাল ফাটিয়ে চিৎকার করে বলল," বুড়া বয়সে বাপের বাড়ীর লাইর খাওয়ার ভিমরতি জাগছে বুড়ির। অত্যাচরী বুড়ি কোনহানকার। কথাগুলো এমন ভাবে বললো যাতে বাতাসি শুনতে পায়। ও ঘর থেকে চিৎকার শুনে বাতাসি বিবি কান খাড়া করলো। তারপর মনটা খারাপ করে সাবিনারে কইলো এই হানেও সুখ নাইরে সাবিনা। এই বুড়া বয়সে মানষের হাতে ঝাঁটার বাড়ি খাওয়ার কপাল করে আইছি।


দাদী আপনি নিজেই নিজের কপালে ঝাঁটার বাড়ি খাওয়াচ্ছেন। ঐ বাসায় সবাই আন্নেরে কত্ত ভালোবাসে আর আন্নে কি করলেন! আন্নের কপালে ঝাঁটার বাড়ি পড়বোনাতে কার কপালে পড়বো। আন্নেও গালি খান আরেও গালি খাওয়ান। আন্নের লগে আসাটায় আর ভুল হয়ে গেছে।


বাতাসি বিবি চুপ করে রয়। সাবিনা ভুল কিছু কয়নি। এমন সময় বুদুন  বাতাসির কাছে এসে বসে বললো, " বুবু বাড়িতে ঝগড়া লাইগা তোমার এহানে আসাটা ঠিক হয়নি। বাড়ি ভর্তি ছাওয়াল -পাওয়াল নাজানি কত কষ্ট পাচ্ছে। বুদুন বড় সড় ঢোক গিলে আবার বললো," বুবু চলো তোমারে বাড়িতে রাইখা আসি।"


বাতাসি বিবি সাবিনার সামনেই বুদুনের গালে চড় মারলো। হারামজাদা, মাগীর ভ্যাড়া, বৌদের গোলাম আরে কইতে আইছোস বাড়িত দিয়ে আইবি? বৌদের শাসন করতে পারোস না! আর তো মনে হয় তুই বৌদের হাতে দিনে রাইতে ম্যার খাস। তোর সরম লাগেনা বৌদের হাতে কিল-ঘুতা খাইতে? তুই মরোদ ভাবলেই আর দুক্কু লাগে। কাসেম সিকদার হিজড়া জন্ম দিছে। 

কোথায় তুই বৌদের লাডির উপর রাখবি না করে বৌগুলা তোরে লাডির উপর  রাহে। সর আর কাছ থাইকা। তোরে ভাই বলতেও আর সরম লাগে।

বাতাসি বিবি গর্জে উঠে বলল,"তোর বৌদের সাহস কি করে হয় আরে বাড়ি থাইকা বাইর হওয়ার কথা কয়!"

খ্যাড়া আই এবার ভিটার ভাগ নিমু। তোদের পথের কাঙ্গাল যদি না করছি তয় আর নাম বাতাসি লয়। তোদের যদি ভিক্ষার ঝোলা কান্দে না তুলছি তয় আই কাসেম সিকদারের মাইয়া লয়। 

সাবিনা কামুরে ফোন লাগা। আই এহনি বাড়িত যামু। 


বুবু, বলে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো বুদুন।  ওদের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে পাঁচদিন বাড়িছাড়া ছিনু। তাও কারো যায় আসেনি। তোমার সোয়ামীর বাড়িতে তো ম্যালা সম্পত্তি। তাছাড়াতো কামু অনেক টাকা কামাই করে। তোমার কোন অভাব নাই।  এই একমাত্র বাপ দাদার ভিটাতেও তুমি ভাগ বসাইতে আইবা! তাহলে আমি কই যামু?


জাহান্নামে যাবি। দুর হ হতচ্ছাড়া। আগে বৌগুলারে যদি আর সামনে হ্যাক্কা লাডি দিয়ে পিডাইতে পারিস তাইলে ভাবমু এই ভিটায় ভাগ লমু না তোরে ব্যাবাক দান করুম।
ঐ সাবিনা কল দিছোস?


জে দাদী ধরেন বলে সাবিনা ফোনটা এগিয়ে দিল। কামরান সাহেব হ্যালো বলতেই বাতাসি মরা কান্না জুড়িয়ে দিল। ও বাবা কামু আরে ভুলেই গেছেস একদিনে!


গাড়ী কখন পাঠাবো সেটা বলেন। আর আপনেরে যদি ভুলেই যাই তাহলে ভালো করে ফোনে দেখেন কতবার কল দিছি। আপনি তো একবারও রিসিভ করেননি।


হইছে হইছে, গাড়ী পাঠা বাড়ীত যামু। আর শোন, বৌমাকে বলিস তো, আর জন্য আসাম ঘাটি করে রাখতে। খুব খাওয়ার মন চাইছে। বাতাসি বিবি কথাগুলো বলে কল কেটে দিল। আহ্ বাড়িত যামু আমরা সাবিনা। তয় এহানে যা যা হইছে তা কিন্তু বাড়িত যাইয়া কইবার পারবুনা কইয়ে দিচ্চি। যদি আর মান সোলেমান নিয়া টানা হিচড়া করোস তাহলে তোর খবর আছে।


সাবিনা শুধু মাথা নাড়ালো। এই বাসায় থাইকা সাবিনার যতগুলো অভিঙ্গতা হল সেই গুলা দিয়া ঝানু বুড়িরে শায়েস্তা করোন যাবে।

♦♦♦♦♦

বিকেলের দিকে মাহাদ একগাঁদা শপিং করে নিয়ে এলো। গোসল সেরে নিয়ে তিতিরের রুমে চলে গেলো। তিতির তখন ঘুমাচ্ছিল। মাহাদ সব সপিং ব্যাগগুলো ওয়্যারড্রপে রেখে দিয়ে ফোনের বক্সটি ওর মাথার কাছে রেখে দিল। সেদিন ঝগড়া করার পর ফোনটা  আর রাগ করে নেয়নি মেয়েটা। ফ্যান বন্ধ করে এসি চালু করে  গায়ে ভালো করে কম্বল জড়িয়ে দিয়ে দ্রুত রুম হতে বের হল। বের হতেই সামনে ওর মাকে দেখতে পেলো।


লাবীবা ভ্রু কুঁচকে বলল," মাহাদ, তিতিরের রুমে তুই কি করিস?"


ওর মেডিসিন  আনছিলাম, সেগুলো দিয়ে আসলাম। ও ঘুমাচ্ছে তাই আর ডাকলামনা। কাল একটা কাজের মেয়ে আসবে তিতিরের দেখাশুনা করার জন্য। ওকে তিতিরের রুম শুধু দেখে দিও তাহলেই চলবে।


মাহাদ তিতিরের জন্য তোর আলগা দরদ একটু বেশি বেশি হচ্ছেনা! কি প্রয়োজন ছিল রাশেদের সাথে ওমন ব্যবহার করা! তিতির পরের ঘরের মেয়ে। দু'দিন পর সে এই বাসা থেকে চলে যাবে। খামোকা ওর জন্য তুই শত্রুতামি করলি কেন! রাশেদ রাজনিতি করে, ও কি তোকে এমনি এমনি ছেড়ে দিবে?


মাহাদ ওর মায়ের দিকে চেয়ে স্পষ্ট বুঝতে  পারছে ওর মা তিতিরের উপর কতটা বিরক্ত। মাহাদ একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললো," মা আল্লাহ্ তোমাকে এই জন্য কোন মেয়ে সন্তান দেয়নি। তোমাকে দেখে এটা বুঝলাম যে, একটা মেয়ের সব থেকে বড় শত্রু অন্য একটা মেয়ে।"
নিজের মেয়ে হলে কি করতে?
মাহাদ কথাগুলো বলে দ্রুত ওর রুমে চলে গেলো। মাহাদ রুমে এসে সুয়ে পড়লো। গতকাল থেকে ঘুম হয়নি।

♦♦♦♦

সন্ধ্যার পর বাতাসি বিবি বাসায় এসেই হরতাল শুরু করলো।  সে যে বাড়ী থেকে বের হয়ে গেছে তার খোঁজ খবরও নেয়নি কেউ। এত দিন ধরে শত্রু লালন-পালন করেছে সে।


রুপালী খুব খুশি তার মায়ের আগমনে। সামনে মেয়ের বিয়ে, মুরব্বি মানুষ কেউ না থাকলে ভালো দেখায়। রুপালী মায়ে তল্পি-তল্পা নিজের হাতে বাতাসির রুমে রেখে এসে বললো, " আম্মা আপনি আসছেন কি যে খুশি হয়েছি সেটা বলার বাহিরে।


বাতাসি বিবি কোন কথা না বলে আগে গিয়ে গোসল করে নিলো। তারপর মাগরিবের নামায পড়ে নিয়ে বিছানায় বসতেই সাবিনা দৌড়ে এসে বলল," দাদী শুনছেন, তিতির আপার নাকি এক্সিডেন্ট হয়েছে।"


বাতাসি কথাটা শুনে হাতে তালি দিয়ে বলল," বেশ হয়েছে। এমন ভালা খবর দেওয়ার লায় তোরে পাঁচ টাকা দিমুনি। আর কি খবর আছে বল।


দাদি, এতবড় খবর দিলাম আর আন্নে আরে মাত্র পাঁচ টাকা দিবেন? আপনার ঘর হইতে বাহির হওয়ার আগেইতো আর টাকা শেষ হইয়া যাবে। 

সাবিনার কথার মাঝে কামরান সাহেব তার মায়ের রুমে আসলো। মাকে সালাম দিয়ে পায়ে কদমবুসি করে মায়ের পাশে এসে বসলো। তারপর বলল," আম্মা কেমন আছেন আপনি?"


কামু তোর নানীর বাড়ীর ভিটাতে আই কতগুলা জমির ভাগ পামু? ধানের জমি দশ বিঘার  মত ছিলো। সব সুদ্দে কতগুলা পামু হিসাব করে ক তো?


কামরান সাহেব বিশ্মিত হয়ে বললেন," আম্মা কি সব বলেন! আপনার কি হইছে বলেন তো! আমাদের কি কোন কিছুর অভাব আছে তার জন্য ওতটুকু জমির জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন!


দাদি এমনি উঠেপড়ে লাগছে? বুদুন দাদার বৌরা মিলে দাদিরে ঠাঙ্গানি দিছে। আর দাদিরেও খুব অপমান করছে। হের লায় দাদি এমন করতাছে বুঝতে পারছেন না সাহেব! দাদিরে যা কথার ঠাঙ্গানি দিছেনা! আই পর্যন্ত ভয় পাইছি। সাবিনার মুখ ফসকে কথা গুলো বের হতেই সাবিনা নিজেই ওর নিজের মুখ হাত দিয়ে চেপে ধরলো।  তার পর জ্বিভে কামড় দিয়ে বাতাসির দিকে তাকাতেই  ওর পিলে চমকে উঠলো। বাতাসি মনে হয় রাগে ফায়ার  হয়ে আছে।


ঐ ফক্কিনির মাইয়া আমার পাঁচ টাকা ফারত দে! তোর শরীরের চামড়া ছিলে পায়ের জুতা বানামু। তোর এত্ত বড় সাহস আর বাপের বাড়ির দুর্নাম করোস?


কামরান সাহেব যা বোঝার  বুঝে গেল। তাই সাবিনাকে একটা ধমক দিয়ে বলল," এই তুই যা তো এখান থেকে! শুধু উল্টা পাল্টা কথা বলিস।"
সাবিনা এক দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল। 
আম্মা ওর কথা কে বিশ্বাস করে! আমরা কি ছোট বেলায় নানার বাড়ী যাইনি! কতটা ভদ্র পরিবারে মানুষ আমার নানাজানরা। 
বুদুন মামা ওতটুকু জমি নিয়ে খায় তার ভিতর গিয়ে আপনি যদি ভাগ বসান তাহলে ব্যাপারটা ভালো দেখায়না আম্মা। আপনি তো ভদ্র ঘরের মেয়ে। আপনাকে কি এগুলো মানায় বলেন?


বাতাসি বিবি কিছুক্ষন নিজেই নিজের সাথে পরামর্শ করলো। তারপর মনে মনে ভাবলো, বুদুনের বৌদের যে বাহাদুরি।  জমি কাইরা নিলে তো ওরা আর ভাইটারে না খিলে মারবে। আহা আর বংশে বাতি দেওয়নের জন্য ঐ একটা ভাই বাঁইচা আছে। বাতাসি কামরানের মাথা নেড়ে সোহাগ করে বলল," বাপ তোর উপর খুব খুশি হইছি আজ। তোর উপর খুশি হইয়া তোর পোলারেও মাফ কইরা দিলাম। সোনা বাপ আমার বলে আরো সোহাগ করে বাতাসি মাহাদের রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।


 মায়ের এমন নির্ভেজাল আদর পেয়ে কামরানের চোখে পানি আসলো। কতদিন তার মা তাকে এভাবে আদর করেনি। কামরান চশমা খুলে চোখ মুছে বের হয়ে গেল রুম হতে। কামরান আজ খুব খুশি।


বাতাসি বিবি মাহাদের রুমের দরজা খুলে উকি দিয়ে দেখলো মাহাদ ঘুমিয়ে আছে। আহ্ নাতী আর রাজপুত্রের মত দেখতে। জুয়ান কালে তোরে যদি পাইতাম তাহলে আর ঐ ইমতিয়াজরে বিয়া করতাম! তোর লগেই বিয়া বসতাম। ইমতিয়াজের কোন বেল থাকতো আর কাছে!
বাতাসি পা টিপে টিপে মাহাদের বিছানার কাছে এসে বসলো। 

ভাই তুই ক্যান যে ঐ শাঁকচুন্নিরে বিয়া করলি হেইডা ভাইবা ভাইবা কত যে  রাতের ঘুম হারাম করছি। তার ঠিক নাই।
মাহাদের গালে হাত দিয়ে বাতাসি বলল," তোর সাথে কত দিন ঝগড়া করিনা। ঝগড়া করার জন্য মন আর আঁকুপাঁকু করে। "
বাতাসি বিবি মাহাদের শিয়রে বসে পা দুটা কম্বলের ভিতর দিয়ে মাহাদকে একটা পা দিয়ে ঠেলা দিতেই মাহাদ চোখ খুললো।

ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ

মাহাদের চোখটা পাঁচ টাকার মার্বেলের মত করে বললো," তুমি!"

ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ

বাতাসি মুখে ভেংচি কেটে বলল," তোমারে সোহাগ করতে আইছি সোয়ামী।"

ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ

মাহাদ হাই তুলে বলল," আর সোহাগ! মেয়াদউত্তীর্ন  মালের কোন দাম নাই মার্কেটে, সেটা তুমি জানোনা?

ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ

সোয়ামী, পুরাতন চাউল কিন্তু ভাতে বাড়ে !

ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ

কেনো, তোমার কি আবার বাচ্চা-কাচ্চা পয়দা করার মনে সখ জাগছে নাকি!  
মাহাদ বিছানা থেকে উঠে আধাশোয়া হয় বসে আবার বললো," তুমি এত জলদি বাপের বাড়ি থেকে আসলা যে! তা বাতাসি, তুমি স্ব-ইচ্ছায় আসছো না বুদুনের তিন বৌদের কাছ হতে ব্যাকর্শট খেয়ে বাসার রাস্তা ধরেছো?

ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ

মাহাদ মুখ সামলে কথা ক বলছি। আর বাপের বাড়ি নিয়ে কথা কইবিনা। তোদের জাত-পাত বুজি খুব ভালো! তোদের জাত তুলে যদি একবার কথা তুলি তাহলে মুখ ঢাকোনের রাস্তা খুজে পাবিনা।

ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ

হুম, ভালো তো! রুপালী ফুপু, রজনী ফুফু আমাদের বাসায় এসে থাকার জন্য কোনদিন তো আমার মা বাবাকে গোয়াল ঘরে রাখেনি। কিন্তু তুমি একদিন থাকতেই তোমার সোহাগের ভাইটাকে গোয়াল ঘরে রাত্রি যাপন করতে হল। তোমার জাতের থেকে আমার জাত অন্তত এই দিক থেকে বেশ ভালো।

ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ

তোরে সাবিনা এই কথা বলছে! খ্যাড়া সাবিনার ব্যবস্থা নিচ্ছি। ওর বাড় বেশি বেড়ে গেছে।

ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ

খামোকা সাবিনা বলতে যাবে কেন! তোমার বংশের বাতি বুদুন ফোন দিয়েছিলো। যেমন ভাই তেমন তার বোন। সে কড়া ভাষায় বলে দিছে,  জমি ভাগ করতে আসলে তার একদিন কি তোমার একদিন।
আমিও বলে দিছি। এবার বাতাসি জমি ভাগ করতে গেলে আগে ওর মাথা ফাটিয়ে দিও। যা খরচ পাতি দরকার আমি দিব।

শুনেছি, তোমার ফুফু জমির ভাগ নিতে গিয়ে নাকি তোমার বাবা তার মাথা ফাটিয়ে দিয়েছিল!  সেই ইতিহাস  তোমাকে দিয়ে আবার নতুন করে পুনরাবৃত্ত ঘটানো হবে। এই বংশ নিয়ে তুমি গলা ফাটিয়ে তুমি বাহাদুরি করো?

মাহাদ ওর দু'হাত একটু প্রসারিত করে মুচকি হেঁসে বললো," আহ্ বুদুন আর তার ৩ বিবিদের হাতে বাতাসি বিবি লাঠির বারি খেয়ে চিৎপটান। এটাই হলো সিকদার বাড়ীর ব্রেকিং নিউজ। খুব ভালো ঝাক্কাস খবর তাই না বাতাসি।

মাহাদের কথা শুনে বাতাসি বিবি হুংকার দিয়ে বলল,'" তোর আশায় আমি ছাই দিমু। আর বুদুরেও দেইখা নিমু।"
বাতাসি কামু বলে চিৎকার দিয়ে ডাকতে ডাকতে রুম থেকে বের হয়ে গেলো.......... বাপ জমির দলিল বার করতো। আজ বুদুনরে ভিটা ছাড়া করুম।
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।