রাত ১১.৩০ টার কাছা কাছি বাজচ্ছে। পড়ার টেবিলে বসে বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছি সমানে । তখনি কানে ভেসে আসলো গিটারের শব্দ। কি সুন্দর সেই সুর। বুঝতে বাকি নেই কে গিটার বাজাচ্ছে। ইউসুফ ভাই! এক মাত্র তারই গিটার বাজানোর শখ। আমি পা টিপে টিপে উঁকি দিলাম ভাইয়ার ঘরে। না নেই রুমে! তাহলে কই? নিশ্চয় ছাদে? দৌড়ে ছাদে গেলাম। ভাই ঠিকি ছাদে বসে,সামনে কফির মগ।এক চুমুক কফি খেয়ে গিটারে সুর তুলছেন! আমি পা রাখতেই গান ধরলেন!
--"তেরে ইসকে নে সাথিয়া
মেরা হাল কেয়া কারদিয়া"
গানের দু লাইন শুনেই ছাদের দরজার কাছে পা সেটে গেল আমার। দাঁড়িয়ে গেলাম সেখানেই!দেয়ালের সাথে হেলে হাত দুটি আড়াআড়ি ভাজ করে দাঁড়ালাম। ঠোটের কোনে আমার লাজুক হাসি ঝুলচ্ছে!চাঁদের আলোয় ভাইয়াকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলেছে। মনে হচ্ছে চাঁদের রাজকুমার গিটার হাতে বসে গান করছে।
--"Gulshan Bhi Ab To Veerana Lagta Hai
Har Apna Hum Ko Begaana Lagta Hai
Hum Teri Yaadon Mein Khoye Rehte Hain
Log Humein Paagal Deewana Kehte Hain
Tere Bina,
Tere Bina..
Tere Bina..."""
তার গানের সাথে ইমাজিনেশন করতে লাগলাম তার কাঁটানো ছোট মুহূর্তগুলো। প্রথম দিনের সেই তার বিলাই চোখে চাহনি দেখে বেহুঁশ হওয়া।ছোট ছোট বিষয়ে শাসন করা।আই লানার পড়িয়ে দেয়া। নৌকা ভ্রমন আর এক গুচ্ছো শাপলা এনে দেয়ার কথা।আর তখনি চট করে ফোনটা বের করে দরজার কাছে সেট করে দিলাম ভিডিও করার জন্য! এমন ভাবে রাখলাম যেন সে বুঝতে না পারে!!
--"Tere Bina...
Naamumkin Hai...
Zindagi Ka Guzaara Sanam...
Ho... Zindagi Ka Guzara Sanam...
Peyaar bahut
karte hai tumse
Ishq hai tu humara sanam
Ho ishq hai tu humara sanam
Laagi Chhoote Naa, Laagi Chhoote naa
Laagi Chhoote Naa...
Ishq Ka Dhaaga Toote Naa...
Ishq Ka Dhaaga Toote Naa...""
আমি মুগ্ধ নয়নে তাকে দেখছি আর গানটা শুনছি! কি সুন্দর তার গলার সুর?তার প্রতিটা জিনিস এত সুন্দর কেন? মাঝে মাঝে হিংসে হয় খুব! তারপর আবার খুব ভাল লাগে! দুনিয়াতে যে এই লোক এক পিস আছেন! আর এই মানুষটিকেই ভালবাসি আমি। না উনি আমার কোনো অ্যাট্রাকশন, না আবেগ না ভালোলাগা। তিনি শুধু আমার ভালবাসা। শুধুই ভালবাসা...।। আমার একটাই যে তুই❤️।আমার ভাবনার চিন্তার মাঝে গানটি থেমে গেল।সাথে সাথে তার ভরাট কন্ঠে বলে উঠল,,
--" বাবুইপাখি! ওখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? এখানে আয়! আমার পাশে বস!"
আমি অবাক হলাম। অবাকের শেষ চূড়ায় যাকে বলে। উনি কিভাবে প্রতিবার বুঝে যান আমি আশেপাশে থাকলে? উনি যেভাবে বসে আছে আমাকে দেখার প্রশ্নই আসে না।তাহলে? হাউ??? প্রতিবার এই প্রশ্ন কিলবিল করে আমার মনের মাঝে! যা কখনো জিগ্যেস করতে পাড়ি না তাকে। কিন্তু কেন??আমার ভাবনার মাঝে আবার তার আওয়াজ শুনা গেল। আমি কাছে গেলাম তার। তিনি ইশারায় পাশে বসতে বললেন আমি বসলাম। তার বললেন,,
--" লুকিয়ে গান শোনা কি আছে! এখানে আসলে কি বকা দিতাম?"
আমি মাথা নত করে বললাম,,
--" আপনি তো তাই করেন! শুধু শুধু বকেন..!"
আমার কথা শেষ হতে না হতেই হো হো করে হেসে উঠলেন তিনি। আমি আড় চোখে তাকালাম তার দিক! কি সুন্দর তার হাসি!টোল পড়া গালের হাসি!চাঁদের আলোয় হাসি যেন আরো সুন্দর লাগচ্ছে।মনে হচ্ছে কোনো ছোট বাচ্চা কোনো মজার কার্টুন দেখে হাসছে। তিনি হাসি থামালেন। আমার গালে হাত রেখে বললেন,,
--" শুধু বকি? আদর করি না! মুচকি হেসে বললেন..!"
কেন জানি লজ্জা পেলাম তার কথায়। গাল দুটি গরম হয়ে গেল সাথে সাথে। লজ্জায় আবার চোখ নামিয়ে নিলাম আমি।ততখনে ইউসুফ তার হাত নামিয়ে আবার গিটারে সুর তুললো।এবার পুড়োটা সময় তাঁকিয়ে আমার দিক।
--"Nainon Se Behtey Ashqon Ke Dhaaron Mein
Humne Tujhko Dekha Chand Sitaron Mein
Birha Ki Agni Mein Pal Pal Tapti Hain
Ab To Saansein Teri Mala Japti Hain
Tere Liye, Tere Liye...
Tere Liye... Is Duniya Ka...
Har Sitam Hai Ganwaara Sanam...
Ho, Har Sitam Hai Ganwaara Sanam...
Tere Naam... Hum Ne Kiya Hai...
Jeevan Apna Saara Sanam...
Ho... Jeevan Apna Saara Sanam
Tere Naam... Tere Naam... Tere Naam..."
গান শেষ হতেই তিনি তাকিয়ে রইলেন আমার দিক। ঘোরলাগা চাহনি তার।এক ধেয়ানে তাকিয়ে আমার দিক। পলক পড়ছেই না তার। আমিও তাকাচ্ছি বার বার তার দিক। আবার চোখ ফিরিয়ে এদিক সেদিক তাকাচ্ছি! কিন্তু তার যেন পলক পড়ছেই না! কি দেখছেন তিনি এভাবে! জানতে ইচ্ছে করছে খুব।জানতে ইচ্ছে করছে ভাইয়া আপনার মনেও কি আমার জন্য তেমন ফিলিংস আছে? যেমনটি আমার মনে আছে? আপনিও কি ঠিক আমার মতোই রাত জাগা স্বপ্ন আমাকে দেখেন? যেমনটা আমি দেখি!আমার ভাবনার মাঝেই হুট করে হাতটা ধরে ফললেন তিনি। সাথে সাথে চমকে উঠলাম। হাত থেকে তার দিক চোখ ফিরাতেই। টেনে নিয়ে গেলেন তার বুকে আমাকে।সাথে সাথে চোখ জোড়া বেড়িয়ে আসার উপক্রম অামার। হুট করে এমন করাতে বিব্রত বোধ করলাম আমি। শরীরে যেন কারেন্ট লেগে গেছে আমার। সারা শরীর কাঁপচ্ছে। ইউসুফ ভাই খুব শক্ত করে ধরে আছেন আমাকে। এক হাতে আমার মাথাটা চেপে ধরেছেন তার বুকে।যার জন্য বুকে বা পাশের হৃদপিন্ডের হৃদছন্দ কানে ভেসে আসচ্ছে আমার। ডিপ ডিপ ডিপ ডিপ...!হঠাৎ মাথা ঘুরতে লাগলো আমার। চোখের সামনে ঝাঁপাসা হয়ে আসচ্ছে। মাথাটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগচ্ছে! আমি জ্ঞান হারাচ্ছি কি আশ্চর্যজনক কথা বার্তা? ভালবাসার মানুষের প্রথম ছুঁয়াতে জ্ঞান হারালাম আমি। ধীরে ধীরে চোখদুটি বুজে আসছিল আর কানের মাঝে সেই হৃদছন্দ বাজতে লাগলো। ডিপ ডিপ ডিপ ডিপ...!
যখন চোখ খুল্লাম নিজেকে আমার ঘরে আবিষ্কার করলাম। সাথে সাথে মনে পড়লো রাতের কথা। লজ্জায় কান দুটো গরম হয়ে গেল আমার। কি আশ্চর্য আমি কাল ইউসুফ ভাইয়ার বুকে ছিলাম ভাবা যায়!তখনি মনে পড়লো আমার ফোনের কথা। ফোনটা ছাঁদে ছিল ইউসুফ ভাই দেখে ফেলেনি তো?? সাথে উঠে যেতে নিব তখনি চোখ পড়ে টেবিলের উপর! ফোনটা চার্জে দিয়া। দেখে অবাক হলাম! ইউসুফ ভাই দেখেনি তো কিছু? ও মাই গড? তাহলে আমব শেষ।মনের মাঝে এক রাশ ভয় নিয়ে নিচে আসলাম। সবাই সবার কাজে ব্যস্ত। দু দিন পর সাজেক যাবে সবাই। সে সব নিয়েই ব্যস্ত তারা..! সব আগে ভাগে ব্যাগপত্র গুছিয়ে নিচ্ছেন। আমি দাঁড়িয়ে দেখচ্ছি। তখনি পড়ল নানু মার ডাক। তার হঠাৎ আমার ডাকের কারণ বুঝতে পাড়চ্ছি না। কারণ উনি অামাকে বড় কোনো কারণ ছাড়া ডাকেন না। লাস্ট বার ডেকেছিলেন কলেজে ফরম ফিলাপ এর টাকার জন্য। আর আজ ডাকচ্ছেন কেন? হঠাৎ মনের কোনো ক্ষুদ্র ভয় অনুভব করলাম। এভয়ের কারন কি??এসব ভাবতে ভাবতে নানু মার ঘরে সামনে আসতেই যা শুনলাম.......!!
—————
ছাঁদের কার্নিশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছি। রাতের আকাশে ঘন কালো মেঘ জমেছে। যেমনটি আমার মনে জমেছে। কি হতো! আমার একটা পরিবার থাকলে? মা-বাবা, ভাই-বোন নিয়ে পরিপূর্ণ একটি পরিবার! যেখানে আমার নিজ স্বাধীনতা আর মতামতের প্রকাশ করতে পাড়তাম বিনা দ্বিধায়! আমারো হে/না বলার সুযোগ থাকতো! খুব কষ্ট হয়! খুব! আর এই কষ্টটা এক মাত্র তারাই উপলব্ধি করতে পারে, যাদের পরিবার নেই!খুব জোরে আকাশ থেকে বর্ষণ শুরু হল। সেই বর্ষণে আমার চোখে জল মুছে নিতে লাগলো।আমার হাত দুটো মেলে দিলাম। আকাশের দিকে মুখ উঁচু করে যেন চোখে জল আর বৃষ্টির জল গুলো মিশে যায়। আর ভাবতে লাগি তখনের কথা...!
নানু মার ঘরে সামনে আসতেই যা শুনলাম.......
--" আমি চাইনা কুহু ইউসুফের আছে পাশে থাকুক মা! আপনি জানেন কুহুকে আমি মেয়ে ভাবি আর তাই ভাবতে চাই। এর বেশী কিছু ভাবতে পারবো না।"
ছোট মামী অর্থাৎ ইউসুফ ভাইয়ার আম্মুর গম্ভীর কন্ঠ শোনা গেল নানু মার ঘর থেকে!বুঝতে বাকি নেই কি হবে পরের স্টেপ! আমি দরজার সামনে এসে নানু মাকে বললাম,,
--"আসবো নানু মা?"
আমার কন্ঠ শুনে ছোট মামি চুপ করে নড়েচড়ে বসলেন। নানু মা তখন শর্তা দিয়ে সুপারি কাটতে কাটতে বললেন,,
--"আয়! "
আমি ভিতরে ঢুকলাম। আড় চোখে ছোট মামিকে দেখে নিলাম। যে এই মুহূর্তে আমাকে দেখে বিরক্তির ছাপ ফুটে উঠেছে মুখে। চোখ মুখ কুচকে চেয়ে আমার দিক। আমি এক পলক তাকিয়ে মাথা নত করে দাড়ালাম।তখনি নানুমা কোনো ভণিতা ছাড়াই কর্কশ কন্ঠে বলে উঠলেন,,
--" সাজেক যাবি না তুই! যে যতই বলুক তোর মুখ থেকে যেন হে না বের হয়! ইউসুফ বললেও না।বুঝেছিস?"
ইউসুফ ভাইয়ার কথা বলতেই চকিতে তাকালাম নানুমার দিক। তিনি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে, আমি সাথে সাথে চোখ নামিয়ে ফেললাম।আর ভাবচ্ছিলাম মনে মনে। কতটা আশা নিয়ে ছিলাম সাজেক যাবো বলে। আমার স্বপ্ন ছিল। নানু মার এভাবে না করাতে বুক চিড়ে যাচ্ছে। চোখের কোনো জল এসে জমে গেছে। অনেক কষ্টে আঁটকে রাখলাম।আর মুখ ফুঁটে বলতে ইচ্ছে করছিল,,
--"কেন নানু মা! আমি যাবো। আমি তোমার নাতনী না? প্লীজ যেতে দাও। একটি বার মেঘের রাজ্য ভ্রমণ করার কি কোনো অধিকার আমার নেই??"
কিন্তু মুখ ফুঁটে বলতে পারলাম না। শুধু মাথা নাড়িয়ে বললাম,,,,
--" জি বুঝতে পেরেছি "
তখনি তিনি তীক্ষ্ণ কন্ঠে ধমকে বললেন,,
--"আর ইউসুফের সাথে কি এত তোর? ডলাডলি কিসের এতো? তোর আশিক না। ভাই হয়!ব্রাহ্মণ হয়ে চাঁদে হাত দেওয়ার চিন্তাভাবনা বাদ দে। তোর পরীক্ষা এবার শেষ হতেই তোকে বিয়ে দিয়ে বিদেয় করবো। যতসব ঝামেলা। কাজ ছাড়া রুম থেকে বের হবি না খবরদার। তাহলে তোর খাওয়া পড়া বন্ধ করে দিব।নিজেকে প্রস্টিটিউটের খাতায় তুলে দিচ্ছিস। এবার তোর ব্যবস্থা করতেই হবে!"
নানু মার মুখে এমন বিষাক্ত কথা শুন্তে হবে ভাবিনী কখনো। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছি আমি। চোখের বাদ এবার ভেঙ্গে গেল। টপ টপ করে জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো আমার চোখ থেকে।লাষ্ট পর্যন্ত কিনা আমাকে এক প্রস্টিটিউটের সাথে মিলালো। আমি আর পাড়লাম না কেঁদেই দিলাম। কিন্তু সামনের দুটো বসে থাকা জীবন্ত মানুষদের কোনো হেলদোল হলো না তারা ভাবলেশহীন ভাবে তাকিয়ে রইল। নানু মা ধমকেই বলল,,
--" ন্যাকামি করবি না। রুমে যা। যা বলছি মনে রাখবি!যা এখন!"
আমি আর দাঁড়ালাম না ছুটে চলে আসলাম। কিন্তু আসার আগে শুন্তে পেলাম নানুর কন্ঠ ছোট মামীকে বলছেন,,
--" আমি না হয় আমার নাতিনকে সামলে নিব! কিন্তু তোমার ছেলে ইউসুফকে আঁটকাতে পাড়বে তো....!!"
এরপর আর কিছু কানে এলো না আমার। এক দৌড়ে রুমে এসে দরজা লাগিয়ে বসে রইলাম সারাদিন। কেউ এলোও না আর রুমে।আমি বালিশে মুখ গুঁজে কেঁদেছি, খুব কেঁদেছি! আজ আমার পরিবার থাকলে কি এসব শুন্তে হতো? সত্যি বড্ড ভুল করে ফেলেছি! খুব বড় ভুল! ভুলেই গেছিলাম আমি কে? কি আমার পরিচয়! সব আজ মনে করিয়ে দিলেন তারা। আমিতো বোঝা সবার কাছে যার মূল্য একটুখানি টুকরা কাগজের মত।কিন্তু মনটা যে বেহায়া হয়ে গেছে! ঘুরে ফিরে ইউসুফ ভাইয়ার কাছে ফিরে যায়।
হঠাৎ বাজ পড়তেই ভাবনা থেকে বেড়িয়ে এলাম আমি। বৃষ্টির বেগ বেড়েছে খুব!সাথে প্রবল বেগে ছুঁটেছে আমার কান্না। আজ থেকে মিটে গেছে ইউসুফ ভাইকে নিয়ে স্বপ্ন দেখার ক্ষমতা। সে যে চাঁদ আর আমি সামান্য মানুষ। যাকে ছোঁয়ার কথা ভাবাও পাপ আমার জন্য। মহাপাপ।এসব ভাবার মাঝেই নীচের ব্যালকনি থেকে ভেসে আসলো একটি পরিচিত কণ্ঠের গানের দুটি লাইন। যা শুনে ফুঁপিয়ে উঠলাম আমি।বুকের মাঝে অসহ্যকর যন্ত্রনা শুরু হল। ভালবাসার মানুষকে হারাবার ব্যাথা।
---"এই মেঘলা দিনে একলা ঘরে থাকেনাতো মন
কাছে যাবো কবে পাবো ওগো তোমার নিমন্ত্রণ"
___________________
পরেদিন সকালে দরজা আটকিয়ে বসে আমি! সকলেই রেডি বের হবে এখন!ময়মনসিংহ থেকে ঢাকা যাবেন। তারপর যাবেন খাগড়াছড়ি তারপর সাজেক।নিচ থেকে হৈ চৈ আওয়াজ আসচ্ছে! মনটা কেমন আনচান আনচান করছে বাহিরে যাওয়ার জন্য। কিন্তু নানু মার বারণ বাহিরে যাও। তাই দরজা আটকে বসে আছি! এর মাঝে নুশরা, বুশরা, তিথি ডেকে গেছে আমাকে। আমি টু শব্দ করিনি! মুখে দু হাত চেপে বসে রইলাম।এখন আবার দরজার কড়া নাড়চ্ছে কেউ! খুব জোরে কিন্তু কে বুঝতে পারচ্ছি না। আমি দু হাঠুতে মুখ গুঁজে বসে রইলাম। তখনি ধাম করে শব্দ হলো। শব্দের বেগ এতো ছিল যে অন্তর আত্না কেঁপে উঠলো। আমি সামনে তাকাতেই বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে রইলাম। ইউসুফ ভাই দাঁড়িয়ে। চোখ মুখ লাল করে। তার পিছনেই দাঁড়িয়ে আছে নানু মা আর ছোট মামী।ইউসুফ ভাইয়া এসে আমার হাত চেঁপে ধরলেন খুব শক্ত করে আর বললেন,,
--"চল"
আমি তার এভাবে ধরায় ব্যথায় কুকিয়ে উঠলাম আর বলতে লাগলাম,,
--" কই নিয়ে যান ভাইয়া! ছাড়েন? আমি যাবো না? আমার পরীক্ষা সামনে। প্লিজ হাত ছাড়েন ব্যথা পাচ্ছি! তেন বুঝতেসেন না?"
এক নাগারে বলে যাচ্ছি পিছন থেকে নানু মা আর মামি বলে যাচ্ছে,,
--" ও যেতে চাইছে না জোর কেন করছিস? ছাড় ওরে!"
ইউসুফ ভাই তখন দাঁতে দাঁত চেঁপে বললেন,,
--" ও যাবে না? ওর বাপ যাবে! ওর চৌদ্দগুষ্টি যাবে। "
তার কথায় সবাই বিস্মিত।মামি বার কয়কে বুঝাতে এসে ব্যর্থ। কিন্তু কে শোনে কার কথা তিনি আমাকে টেনে হিছড়ে নিয়েই যাচ্ছেন। শুনচ্ছেন না কিছু...!এবার আমি কেঁদে দিলাম।আর সাথে সাথে তিনি রাম ধমক মারলেন আমাকে। উপস্থিত সবাই তখন স্তব্ধ। নানু মা, মামি সহ আমিও চুপ। তিনি আমায় ঠেলে গাড়িতে বসিয়ে দিলেন। তিনিও গাড়িতে উঠে তিথিকে শুধু বললেন,,
--" পাঁচ মিনিটে এর কাপড়-চোপড় নিয়ে গাড়িতে উঠবি। "
তারপর গাড়ি স্টার্ট দিলেন। আমি তখন কাঁদ কাঁদ মুখে জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম মামি এখনও বিস্মিত। আর নানু মার ঠোঁটে বাঁকা হাসি! যা বোঝার ক্ষমতা আমার নেই।