আমার অন্তরালে তুমি - পর্ব ২৩ - ফারহানা ছবি - ধারাবাহিক গল্প


বাইরে ঝিরি ঝিরি বৃষ্টির মাঝে ঝড়ো হওয়া বইছে ৷ থেমে বাজ পড়ছে৷ কেমন যেন শান্ত পরিবেশ কিন্তু মুহূর্তে ঝড় যেন তার শান্ত পরিবেশ কে অশান্ত করে তুলতে লাগলো ৷ ছন্দ ডিনার কম্পিলিট করে রবীন্দ্র সংঙ্গিত  ছেড়ে উপন্যাস বই নিয়ে বসে পড়ে ৷ একসময় বিদ্যুৎ চলে যায় ছন্দ বাধ্য হয়ে উঠে মোম আর ম্যাচ খুজে মোম জ্বালিয়ে সামনে নিতে লাল টকটকে চোখ জোড়া দেখে ভয় পেয়ে যায় ছন্দ ৷ বাইরে আবার বাজ পরতে সেই বাজের আলোয় বর্ণের মুখটা স্পষ্ট দেখতে পেল ছন্দ.....

৭৯

"" ব,,বনরাজ তু,,তুমি ...?"" ঘাবড়ে গিয়ে বললো ছন্দ... ছন্দের কথা শেষ  হতে বর্ণ এক হাত দিয়ে ছন্দের কোমর খামচে ধরে অন্য হাত দিয়ে  ছন্দের গাল চেপে ধরে.. মুহূর্তে বর্ণের এমন ভয়ঙ্কর রুপ দেখে ছন্দের পুরো শরীল কাঁপছে ভয়ে...

বর্ণ আগুন চোখে ছন্দের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো "" আমাকে দেখে চমকে গেলি কেন হাহ! এখন আর আমাকে ভালো লাগছে না তাই না? ""

"" কি সব বলছো আবল তাবল বনরাজ?"" গাল থেকে বর্ণের হাত সরানোর চেষ্টা করতে করতে বললো ছন্দ...

"" চুপ একদম চুপ আমাকে বনরাজ বলে ডাকবি না আমার টিয়াপাখি একমাত্র আমাকে বনরাজ ডাকবে ৷ তোর তো এখন অন্য কাউকে ভালো লাগে অন্য কারোর গাড়িতে চরে তার সাথে হাসি তামাসা করতে ভালো লাগে ৷ "" বর্ণের কথা শুনে ছন্দ এবার বুজতে পারলো বর্ণের এমন রাগের কারন...

"" নির্ঘাত পাগলটা আমাকে অনিলের সাথে গাড়িতে দেখে নিয়েছে ৷ আর আমার পাশে অন্য কাউকে দেখে এমন রিয়েক্ট করছে ৷ কি করে শান্ত করবো পাগল টা কে আল্লাহ..."( মনেমনে)

ছন্দ কে চুপ থাকতে দেখে বর্ণ ছন্দের কোমরে নখ বসিয়ে দিয়ে আবার বলতে লাগলো"" কি হলো এখন চুপ কেন তুই বল ওই ছেলে কে যার গাড়িতে করে তুই গিয়েছিলি?""

"" আ,,আমি চিনি না মাকে লিফ্ট দিয়ে ছিলো ৷ আর তখন একটা জোকস বলেছিলো তাতে দুজনে হাসছিলাম ট্রাস্ট মি বনরাজ...""

"" ওয়াট! তুই চিনিস না ছেলে টাকে সত্যি তো? ""

"" মিথ্যে কেন বলবো তোমায়?.. স্যরি বনরাজ তোমায় মিথ্যে বলার জন্য এই মিথ্যে টা না বললে তুমি হয়তো অনিলকে শেষ করে দিতে আমি জানি তুমি আমার বিষয়ে একটু বেশি পজিসিব আর তাই এখন থেকে আরো সাবধানে আমার কাজ গুলো করতে হবে...."" ছন্দের ভাবনার মাঝে  বর্ণ ছন্দ কে জরিয়ে ধরে ... ছন্দ মুচকি হেসে নিজেও জরিয়ে নেয় বর্ণ কে...

"" আমাকে না বলে বাংলো থেকে চলে এলে  কেন টিয়াপাখি ?""

"" আম্মু ভাবি অনেক বার ফোন করেছিলো ৷ আর ভাবির শরীলটাও ভালো নেই সে জন্য ""

"" আমাকে না জানিয়ে এসে তুমি অপরাধ করেছো আর এই অপরাধের শাস্তি স্বরুপ আজ সারা রাত তুমি আমার আদর করবে..." 

"" উহু এটা আমাকে শাস্তি দিচ্ছো নাকি নিজে রোমান্স করার সুযোগ করে নিচ্ছো হুম""

"" যেটা খুশি ভাবতে পারো বাট আই নিড ইউ ...""

"" তুমি ফ্রেস হয়ে বসো আমি এখুনি নিচ থেকে আসছি...""

"" কোথায় যাচ্ছো তুমি?"" ছন্দের হাত টেনে ধরে বললো বর্ণ ..

"" বললাম তো নিচ থেকে আসছি ততোক্ষন তুমি ফ্রেস হও ৷ দেখো তোমার পায়ে জুতোয় কাদা লেগে আছে ৷ ""

"" ওকে .."" বর্ণ ফ্রেস হতে ওয়াশরুমে ঢুকে যায় ৷ আর ছন্দ নিচে রান্না ঘরে এসে খুব সাবধানে একটা প্লেটে খাবার বেরে সাবধানে উপরে নিয়ে আসে৷ ততোক্ষনে বর্ণ ফ্রেস হয়ে রুমে আসে ৷ 

"" এই যে মিস্টার আমি জানি আপনি আমার উপর রাগ করে না খেয়ে আছেন আসুন খেয়ে নিন তার পর কথা হবে...""

"" উহু এভাবে নয় তুমি আমায় খাইয়ে দিবে তবে- ই আমি খাবো ৷ ""

"" নেকু.. এখানে এসে বসো.." বর্ণ বাধ্য ছেলের মতো ছন্দের পাশে বসে পরে ৷ ছন্দ খুব যত্ন সহকারে বর্ণকে পুরো খাবার টা খাইয়ে দেয়৷ 

"" দেখো পুরো খাবার টা খেয়েছি এখন কিন্তু আমাকে তোমার আদর করতে হবে..."" 

"" তাই ! "

"" ইয়েস মিসেস সুবহা জাহান ছন্দ চৌধুরী .."" বিছানায় শুয়ে কথাটা বললো

ছন্দ মুচকি হেসে বর্ণের বুকে মাথা রাখে ৷ বর্ণ হাত বারিয়ে মোম বাতিটা ফু দিয়ে নিভিয়ে দিয়ে ছন্দ কে জরিয়ে নিলো নিজের সাথে .........

__________________

৮০

মুরাদ টেবিলের সামনে ছন্দের পুরো ডিটেইলস বার বার ঘেটে যাচ্ছে এটা ভেবে ছন্দ সম্পর্কে এমন কিছু আছে যে ও বা বর্ণ কেউ জানে না? কিন্তু সেটা এটাই খুজে যাচ্ছে বার বার ৷ কিন্তু ব্যার্থ হচ্ছে বার বার মুরাদ৷ 

"" আমি শিওর ছন্দ ভাবি আমাদের সামনে নিজেকে যেভাবে প্রেজেন্ট করছে ভাবি মটেও সে রকম নয় ৷ তার তিক্ষ্ম দৃষ্টি তার চাল চলন এটিটিউড অন্য কথা বলে কিন্তু আমি কেন তা ধরতে পারছি না আর না বর্ণ পারছে৷ বর্ণের ঈগলের দৃষ্টি কি করে এড়াতে পারে ? কিন্তু আমি হার মানবো না যতোক্ষন না এটা শিওর হচ্ছি ছন্দ ভাবিকে আমি ভূল ভাবছি... নাহ এবার আমি যা খোজ নেওয়ার আমি নিবো অন্য কাউকে কিছু জানানো যাবে না তাহলে বিষয়টা বর্ণের কানে চলে যেতে পারে "" 
মুরাদ কথা গুলো ভেবে ফাইল গুলো গুছিয়ে নিয়ে বলতে লাগলো"" কাল থেকে শুরু হবে ভাবির সত্যতা খুজে বের করা ৷ " মুরাদের কথার মাঝে ফোন বেজে ওঠে তার , ফোন হাতে নিয়ে ফোনের স্কিনে বনপাখি নামটা দেখে মুরাদের মুখে হাসি ফুটে ওঠে .... 

___________________

রাতে ঝড়ের তান্ডব লীলা খেলা শেষ করে ভোরে সূর্যের নরম মিষ্টি আলো ছন্দ কে ছুয়ে দিতে চোখ মুখ কুচকে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে  বর্ণ ওকে বাচ্চাদের মতো আস্টে পিস্টে জরিয়ে আছে৷ 

"" ইস আমার জামাই টা কি মিষ্টি কিউট হ্যান্ডসাম দেখতে একে বারে স্ট্রোবেরির মতো ইচ্ছে করে খেয়ে ফেলি ... "" বর্ণের কপালে ছোট ছোট চুল গুলো সরিয়ে আলতো করে চুমু দিয়ে সরে যেতে নিলে ছন্দের চোখ পরে বর্ণের ঠোট জোড়ার উপর ... ছন্দের ইচ্ছে করছে বর্ণের ঠোট জোড়া ছুয়ে দিয়ে...

"" উফফফ এতো কেন ভাবছি জামাইটা তো আমার-ই অন্য কারোর তো নয় ৷ দিয়ে দি ..."" ছন্দ বর্ণের ঠোটে ঠোট ছোঁয়াতে বর্ণ চোখ মেলে তাকায় ৷ বর্ণ কে তাকাতে দেখে ছন্দ সরে যেতে নিলে বর্ণ ছন্দ কে চেপে ধরে ছন্দ একচুল নরতে পারে না ৷ বর্ণ তার কাজ শেষ করে ছন্দ কে শক্ত করে বুকের সাথে চেপে ধরে বলে..."" কি ভেবেছিলে জানপাখি তুমি চুপি চুপি আমাকে আদর করে যাবে আর আমি টের পাবো না ৷ আমি আবার কারো ধার রাখি না তাই শোধ করে দিলাম....""

"" তার মানে তুমি জেগে ছিলে?""

"" ইয়েস সুইটহার্ট ...""

ছন্দ ভিষন লজ্জা পেল .. ঘাপটি মেরে বর্ণের বুকে মুখ গুজে রইল....কিছুক্ষন ছন্দের মনে পড়লো গতকাল রাতে সিগরেট প্লেসে যাওয়ার কথা কিন্তু বর্ণ আসায় আর যাওয়া হয়নি ৷ কিন্তু আজ তাকে যে করে হোক যেতে হবে কিন্তু তার আগে বর্ণ কে সেইফলি বাড়ি থেকে বের করে দিতে হবে ৷ যদি একবার সাব্বির আহাম্মেদ এর চোখে বর্ণ পড়ে যায় তাহলে সাব্বির আহাম্মেদ সব বুজতে পারবে৷ এটা তো কোন কিছুর মূল্যে আমি হতে দিতে পারি না৷ 

ছন্দ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ছয় টা বেজে গেছে ৷ 

" এটাই সময় ওর চলে যাওয়ার কারন সাব্বির আহাম্মেদ বা কিয়ারা সাতটা সারে সাতটার আগে উঠবে না৷ আর চেনা জানা কেউ নেই এখনি ওকে বের হতে হবে..." ছন্দ তার ভাবা মতো বর্ণ কে ডাকতে লাগলো....

"" বনরাজ সকাল হয়ে গেছে তোমার এবার যাওয়া উচিত...""

"" উহু আমি তোমায় ছেড়ে কোথাও যাবো না""

"" প্লিজ বনরাজ বাচ্চামো করো না ৷ প্লিজ ওঠো এখন তোমাকে যেতেহবে নাহলে সবার চোখে পরে যাবে ৷ বিপদে আমি পড়বো ৷ প্লিজ বনরাজ ওঠো ৷ "" 

"" টিয়াপাখি আমি বেঁচে থাকতে তোমার একচুল ক্ষতি কেউ করতে পারবে না ৷ আমি আগে যে ভূল করেছিলাম দ্বিতীয় বার সে ভুল আমি করবো না আমার সবটুকু দিয়ে তোমায় প্রটেক্ট করবো আই প্রমিজ টু ইউ "" ছন্দের কপালে চুমু দিয়ে বর্ণ ওয়াশরুমে ঢুকে যায় ফ্রেস হতে ততোখনে ছন্দ কাপড় পরে নিয়ে বিছানা ঠিক করে ফেলে ৷ বর্ণ ফ্রেস হয়ে রেডি হয়ে বের হয়ে ছন্দ জরিয়ে ধরে ৷

"" আমি যাচ্ছি টিয়াপাখি তবে ঠিক সারে নয়টায় আমি আসবো তোমাকে পিক করতে ৷""

 ছন্দ বর্ণের পায়ের উপর পা রেখে আরো খানিক টা উচু হয়ে বর্ণের কপালে ঠোটের স্পর্শ দিয়ে বলে"" সাবধানে যেও বনরাজ.."  

বর্ণ মিষ্টি হাসি দিয়ে মেইন দরজা দিয়ে বেরিয়ে যায় কারন মুন্নি তখন ও ঘুমিয়ে ছিলো....

বর্ণ যাওয়ার পর ছন্দ শাওয়ার নিয়ে ড্রেস পালটে চুল গুলো শুকিয়ে নেয় হেয়ার ড্রাইয়ার দিয়ে ৷ ততোক্ষনে কিয়ারা বেগম ঘুম থেকে উঠে যায় ৷ ছন্দ নিচে এসে দেখে সাব্বির আহাম্মেদ রোজকার মতো পেপার পরছে আর কিয়ারা বেগম নাস্তা বানাচ্ছে ৷ মুন্নি হাতে হাতে কিয়ারা বেগম কে সাহায্য করে দিচ্ছে৷ 

৮১

সাব্বির আহাম্মেদ আড়চোখে ছন্দ কে দেখে গলা খাকাড়ি দিয়ে বলতে লাগলো..." ছন্দ মামুনি বিকেলে কি তোমার কোন প্লান প্রোগ্রাম আছে?"

"" নাহ আব্বু কেন?""

"" বেশ তাহলে বিকেলে সুন্দর করে সেজে গুজে রেডি হয়ে থাকবে ৷ আমার বন্ধু জাফর তার স্ত্রী আর ছেলে আসবে তোমাকে দেখতে...""

"" কিহ কি বলছো আব্বু আমার তো এখনো গ্রাজুয়েশন শেষ হয়নি""

"" সমস্যা নেই বিয়ের পর পড়বে...": পেপারে মুখ গুজে কথা গুলো বললো সাব্বির আহাম্মেদ....

"" কি চলছে সাব্বির আহাম্মেদ এর মনে ? কি ঘোট পাকাচ্ছে আমাকে তো জানতে হবে কিন্তু তার আগে আমাকে বের হতে হবে৷"" (মনে মনে)
" ওকে আব্বু আমি বিকেলে রেডি থাকবো কিন্তু এখন তো আমাকে ভার্সিটিতে যেতে হবে ইম্পটেন্ড ক্লাস আছে আজ""

"" ফাইন যাও তবে বিকেলে তৈরি থাকবে ৷"

"" ওকে..""

"ছন্দ নাস্তা ট্রে নিয়ে উপরে তোর ভাবিকে দিয়ে আয় ৷ ইদানিং শরীল টা ভালো যাচ্ছে না তোর ভাবির নিচে এসে খেতে পারবে না ৷ আর এই অবস্তায় বার বার সিড়ি ভেঙে উঠা নামা শরীলের জন্য ঠিক না..."

"" ঠিক আছে দেও আমি নিয়ে যাচ্ছি আর ভাইয়া কে পাঠিয়ে দিচ্ছি ""

"" হুম ..."" 

ছন্দ তার ভাবি কে খাইয়ে নিচে এসে নিজে খেয়ে নিয়ে সারে নয় টায় বেরিয়ে যায়৷ কিছুটা যেতে বর্ণের গাড়িটা দেখতে পায় ছন্দ দ্রুত গাড়িতে উঠে বসতে বর্ণ গাড়ি স্টার্ট দেয়৷ 

ভার্সিটিতে আসার সময় পুরো সময় টা জুরে ছন্দ বর্ণের কোলে বসে ছিলো আর বর্ণ ছন্দ কে কোলে বসিয়ে ড্রাইব করে ৷ ছন্দের বারন বর্ণ কর্নপাত না করে নিজের মতো করে গাড়ি চালিয়ে গেছে৷ যখন বর্ণ ছন্দের কথা শুনলো না তখন ছন্দ বর্ণের সাথে দুষ্টুমি করতে লাগলো ৷ কখনো গলায় স্লাইট করতে লাগলো আবার কখনো গালে বার বার চুমু খেতে লাগলো৷ বর্ণ ড্রাইব করছে বিধায় অনেক কষ্ট করে নিজেকে কন্ট্রোল করে রাখলো ৷ পুরো সময় টা খুব দুষ্টুমি করলো ছন্দ ৷ কিন্ত ভার্সিটির সামনে আসতে ছন্দ শান্ত হয়ে গেল কারন কেউ যদি দেখে ফেলে তাহলে তার-ই সমস্যা ৷ বর্ণের কোল থেকে উঠতে গেলে বর্ণ ছন্দের কোমর চেপে ধরে ছন্দের ঠোট জোরা নিজের আয়ত্তে নিয়ে নেয় ৷ পাচঁ মিনিট পর বর্ণ ছন্দের ঠোট জোরা ছেড়ে দিতে ছন্দ দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে যায়৷ গাড়ি থেকে নামতে ছন্দ বন্যা কে দেখতে পায় ৷ বন্যা হাত বাজ করে দারিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি হাসছে৷  ছন্দের বুজতে বাকি নেই যে সবটা বন্যা দেখেই এমন শয়তানের নানীর মতো হাসছে৷ বর্ণ জানে ছন্দ এখন তার সাথে কথা বলবে না ৷ তাই গাড়ি ঘুড়িয়ে বাড়ির দিকে রওনা হলো৷ 

ছন্দ বন্যা কে পাত্তা না দিয়ে ভার্সিটির  ভিতরে ঢুকে যায়৷ বন্যা ছন্দের পিছু পিছু হাটতে লাগে৷ 

ক্লাসে ঢুকে ছন্দ চুপ চাপ বসে থাকে তখনি বন্যা ছন্দের পাশে বসে বলতে লাগলো"" এই যে ভাবি আমি কিন্তু সব জানি আপনার আর ভাইয়ার বিয়ে সম্পর্কে ৷ আর এটাও জানি গতকাল রাতে ভাইয়া কোথায় ছিলো"" দাঁত ক পাটি বের করে ছন্দের কানের কাছে ফিস ফিস করে কথা গুলো বললো বন্যা ৷ বন্যার কথা শুনে ছন্দের চোখ কপালে উঠে গেল৷ 

"" কি কি বলছিস এই সব জাতা কথা ""

" উহু এতো দিন পর আমার মনের আশা পূর্ন হলো আর তুই কিনা বলছিস আমি জাতা কথা বলছি দিস ইজ নট ফেয়ার ভাবিজি..." বন্যার কথা শেষ হতে ছন্দ দুম দাম কয়েকটা কিল বসিয়ে দিলো বন্যার পিঠে....

"" পেকাটি চুপ থাক এটা ক্লাস রুম আমাদের বেড রুম না সো কিপ কোয়াইট ওকে""

বন্যা ছন্দের হাতে মার খাওয়ার ভয়তে চুপ করে গেল ৷ ছন্দ বন্যা দুটো ক্লাসে ফাজলামি করে কাটিয়ে দিলো টিচারের অগচরে... দুটো ক্লাস করে ছন্দ শরীল খারাপের বাহানা করে বেরিয়ে আসে বন্যা ছন্দ কে বাড়িতে ড্রপ করে দিয়ে আসার কথা বললে ছন্দ নাচক করে দিয়ে একাই বেরিয়ে আসে৷ 


ছন্দ ভার্সিটির গেট দিয়ে বের হয়ে বা দিকে তাকিয়ে দেখে অনিল গাড়ি নিয়ে দারিয়ে আছে৷ ছন্দ ক্লাসে থাকা অবস্তায় অনিল কে মেসেজ করে দেয়৷ অনিল মেসেজ পড়ে চলে আসে ৷ ছন্দ দ্রুত গিয়ে গাড়িতে উঠে বসে ৷ আজ অনিল কোন ভূল করেনি মুখে মাক্স কালো কোট পরে এসেছে যাতে কেউ চিনতে না পারে৷ ছন্দ ও ওড়না দিয়ে মুখ ভালো করে বেধে নেয় ৷ অনিল গাড়ি স্ট্রাট দিয়ে বেরিয়ে যায় ভার্সিটির চত্তর থেকে.... কিছুটা দুর যেতে অন্য আর একটা গাড়ি ছন্দদের গাড়ি ফলো করতে থাকে তখনি অনিল মিররে সাদা রঙের গাড়ি পিছুনে আসছে৷ অনিলের কেন যেন সন্ধেহ হয় ৷ অনিল ভালো করে গাড়িটা ফলো করে বুজতে পারে সত্যি গাড়িটা ওদের গাড়ি কে ফলো করছে৷

"" কুইন পিছুনের একটা গাড়ি আমাদের ফলো করছে "

" ওয়াট!" ছন্দ সাইড মিররে তাকিয়ে গাড়িটা দেখতে লাগলো তবে গাড়িটা বেশ দুরে থাকায় গাড়ি কে ড্রাইব করছে তা দেখতে পাচ্ছে না৷ 

" অনিল অন্য রোড দিয়ে চলো ৷ আমি কোন রিক্স নিতে পারবো না৷ "

" ওকে কুইন.."" অনিল অন্য রোড দিয়ে গাড়ি যেতে পিছুনের গাড়িটার সামনে বাস এসে পরে৷....

"" ওহ শিট গাড়িটা কোথায় গেল ?  বাস টা গাড়ির সামনে আসার সময় পেল না ৷ "" রাগে ফুসতে ফুসতে মুরাদ গাড়ি ইউট্রার্ন নিয়ে ফিরে আসে...

" একবার মিস করেছি কিন্তু নেক্সট টাইম এই ভূল করবো না৷ ভাবি আপনার আসল রুপ আমি বর্ণের সামনে নিয়ে আসবো-ই আই প্রমিজ টু ইউ ..." 

৮২

অনিল তাদের সিগরেট প্লেসে ঢুকতে নাকে একটা ভোটকা গন্ধ পেয়ে চোখ মুখ কুচকে ফেলে ছন্দ.. ওড়না দিয়ে ভালো করে মুখ চেপে ভিতরে ঢুকে সবাই হন্তদন্ত হয়ে ছন্দের সামনে এসে মাথা নিচু করে দারায়....

"" এই বাজে পচাঁ গন্ধ কোথা থেকে আসছে ? আন্সার মি ড্যাম ইট "" রেগে বললো ছন্দ...তখনি Md এসে ছন্দ কে বলতে লাগলো..."" কুইন এই পচাঁ গন্ধ টা নিচের টর্চার সেল থেকে আসছে৷ Rk মানে রেহানের পুরো শরীল পচে গেছে ৷ ""

"" মরেছে তো?"

"" ইয়েস কুইন.."

" ওটাকে কোন নর্দমায় ফেলে আয় তারপর পুরো টর্চার সেল পরিষ্কার করে ফেল ৷ ""

"" ওকে কুইন..."" 

"" Md আপনি আমার সাথে আসুন আর অনিল তুমিও আসো..."

"" ওকে কুইন..."" দুজনে ছন্দের পিছু পিছু যেতে লাগলো... 

ছন্দ তার সিংহাসনে বসে দু সাইডে দারিয়ে আছে Md আর অনিল ছন্দ ইশারা করতে অনিল Md দুজনে সোফায় বসে পরে...

"" Md আমার আরো কিছু জানার আছে আপনার থেকে সাব্বির আহাম্মেদ এর বিষয়...""

"" কুইন কিং মানে আপনার বাবা আফাজ আহাম্মেদ ওনারা তিন ভাই বোন ছিলো ৷ কিং বড় সাব্বির আহাম্মেদ মেজ আর তাদের ছোট বোন সাগরিকা ... Md কথার মাঝে ছন্দ বললো"" এগুলো আমিও জানি কারন আমার সবটাই মনে পড়ে গেছে Md . সবার মিষ্টি কথা আর ভালো মানুষির পিছুনে হিংস্র রুপটা আমি অনেক আগে দেখেছি ৷ কিন্তু সব জেনেও কেন যেন আমার মনে হচ্ছে সাব্বির আহাম্মেদ বা সাগরিকা কেউ এতো বড় ষরযন্ত্র করার কলিজা রাগে না৷এর পিছুনে বড় কারোর মাথা আছে...""

"" বড় কারোর মাথা? কিন্ত কে সে ?"

"" জানি না তবে খুজে তো বের করতে হবে ৷ কারন তাকে তো আমার হাতে মরতে হবে ৷ এখন পর্যন্ত যাদের ভয়ঙ্কর মৃত্যু উপহার দিয়েছি তার থেকেও ভয়ঙ্কর সুন্দর মৃত্যু তাদের আমি উপহার দিবো...""

" বাট কুইন কে সে আর তার কোন ক্লু তো আমরা খুজে পাইনি..? তাহলে?"""

"" পেয়ে যাবো কিন্তু আপনাদের দুজনকে সাব্বির আহাম্মেদ আর সাগরিকার উপর নজর রাখতে হবে ৷ তাদের ফোন ট্রাক করতে হবে৷ কখন কার সাথে কথা বলে এ্যাভরিথিং সব কিছু জানতে হবে৷"

"" কাজ হয়ে যাবে কুইন.." 

"" বাই দ্যা ওয়ে আজ আমায় কে ফলো করেছে তার পুরো ইনফরমেশন আমার চাই অনিল..""

"" কুইন যাস্ট টেন মিনিট'স দিন আমি   আপনাকে সব ইনফরমেশন দিচ্ছি.."" অনিল বসা থেকে উঠে বেরিয়ে গেল ফোন কানে নিয়ে ৷ এদিকে Md নতুন কিছু ফাইল দেখাচ্ছে ছন্দ কে ৷ 

"" কুইন কিং মারা যাওয়ার পর বৈআইনি কাজ আবার পুরো দমে চালিয়ে যাচ্ছে বিজনেস ম্যানরা তারা যেন কোন কিছুতেই ভয় পায় না ""

"" এদের সাহস ছিল Rk এখন সে Rk বেচে নেই তাহলে কার সাহসে ওরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছে ? " 

ছন্দ ফাইল দেখে কয়েকজন করে মার্ক করে Md কাছে দেয়৷ 

"" এদের কে তুলে আনুন তারপর তাদের আদর আপ্পায়ন করুন ৷ এমন ভাবে আপ্পায়ন করবেন যেন তারা আপনার কাছে মৃত্যু ভিক্কা করে কিন্তু মৃত্যু ও তাদের কপালে জুটবে না৷""

"" ওকে কুইন তাহলে আজ-ই ওদের তুলে আনার ব্যাবস্থা করছি""

"" হুম....আমি আপনাকে আর একটা কাজ দিতে চাই Md...""

"" কুইন কোন দ্বিধা নয় যাস্ট হুকুম করুন " ছন্দ হেসে ফেলে Md কথা শুনে ... 

"" Md আজ আপনার কাছে দুজন কে আমি পাঠাবো তাদের পুরো সুরক্ষার দ্বায়িত্ব আপনাকে নিতে হবে কারন আমার মনে হচ্ছে তাদের প্রানের ঝুকি আছে...""

"" ওকে কুইন কোথায় তাদের পিক করবো শুধু এটা জানিয়ে দিন...?"

ছন্দ তার ফোনে দুজনার ছবি সেন্ড করে Md কে দিয়ে দেয়৷ 

"" এদের কে আপনি আপনার কাছে সুরক্ষিত রাখবেন হ্যা সাথে এটাও দেখবেন এরা যেন বাইরে বের হতে না পারে ৷""

"" ওকে কুইন..." ছন্দ আর Md কথা দশ মিনিটের মাথায় শেষ হতে অনিল এসে হাজির হয়...

"" কুইন আজ যে আমাদের গাড়ি ফলো করছিলো সে আর কেউ নয় আয়ান চৌধুরী বর্ণ তার বেস্টফ্রেন্ড মুরাদ..."" 

"" মুরাদ! আর ইউ শিওর অনিল.?"" 

" হান্ড্রেড পার্সেন কুইন.."

"" মুরাদ কেন আমাকে ফলো করবে? কি কারন থাকতে পারে এর পিছুনে?"" ছন্দ ভাবতে ভাবতে মনে পরে গেল সেদিনের কথা যেদিন আমান ওকে জোর করে বিয়ে করতে চেয়েছিলো সেদিন ও চরম ভূল টা করে ফেলেছিলো আমান কে আঘাত করে ৷ মুরাদ হয়তো ওকে সন্ধেহ করছে ৷ 

"" অনিল খোজ নেও মুরাদ কখন কোথায় যাচ্ছে ""

"" ওকে কুইন.."" 

ছন্দ হাতে ঘড়ি দেখে Md কে বিদায় জানিয়ে বেরিয়ে আসে৷ অনিল ছন্দ কে ড্রপ করে দিতে চাইলে ছন্দ বারন করে দেয় ৷ কারন এখন আর কোন মতে ছন্দ রিক্স নিতে রাজি নয়৷ তার এই দ্বিতীয় পরিচয়টা কেউ জানুক এটা ছন্দ চায় না সে চায় তার বাবার মতো আড়ালে থেকে দেশের সেবা করতে ৷ 
______________________

৮৩

ছন্দ বাড়িতে দুপুরে ফিরে আসে কারন সাব্বির আহাম্মেদ সকালে জানিয়ে দিয়েছে তাকে আজ ছেলে পক্ষ দেখতে আসবে৷ ছন্দ রুমে এসে ফ্রেস হয়ে বর্ণ কে ফোন করে কিছুক্ষন কথা বলে ৷ তার ভাবির রুমে যায়৷ ছন্দ কে ভিতরে আসতে দেখে রুনা মুচকি হেসে বলল" আরে ছন্দরানী যে এতোক্ষনে ভাবি আর পুচকুর কথা মনে পড়লো তোমার হুম?"

" স্যরি ভাবি আসলে পড়াশুনা নিয়ে একটু ব্যাস্ত ছিলাম সামনে তো থার্ড সেমিস্টার পরীক্ষা বুজতেই পারছো কতো চাপের ভিতর আছি.." ছন্দ ফলের ঝুড়ি নিয়ে ফল কাটতে কাটতে বলল ...

"" আচ্ছা ছন্দরানী আজ কাল দেখছি তুমি একটু না আরো অনেক বেশি সুন্দরী হয়ে যাচ্ছো কেন বলোতো?""

"" ধ্যাত কি সব বলছো তুমি ..?" 

"" হুম ঠিক বলেছি ৷ মেয়েরা এরকম রুপ খুলে যখন মেয়েদের বিয়ে হয় ৷ কিন্তু তোমার তো বিয়ে হয়নি তাহলে দিন কে দিন সুন্দর কেন হচ্ছো?"" ছন্দ শুকনো ঢোক গিয়ে মনে মনে বলতে লাগলো "" বিয়ে হয়নি বলছো একবার নয় দু দুবার বিয়ে হয়েছে আমার কিন্তু তোমাকে তো তা জানতে দেওয়া যাবে না কারন সে সময় এখনো আসেনি৷ 

"" আরে ভাবি তুমি কি যাতা বলছো বলোতো যাই হোক চলো তোমাকে রেডি করে দি ""

"" আমি হঠাৎ কেন এখন রেডি হতে যাবো হুম""

"" সারপ্রাইজ আছে তোমার জন্য এখন কথা না বলে চুপ চাপ উঠে দারাও আমি তোমাকে চেন্জ করতে সাহায্য করছি.."" রুনা কিছু বুজতে পারছে না তবে কথা না বারিয়ে চুপ চাপ রেডি হয়ে নেয়৷ 

"" বাহ ভাবি তোমাকে আট পেরে শাড়িতে অসাধারন লাগছে ৷ দারাও কানে পিঠে কালো টিকা দিয়ে নি নাহলে নজর লেগে যাবে.." ছন্দ তার চোখের কাজল নিয়ে রুনার কানের পিঠে লাগিয়ে দিয়ে হালকা সাজিয়ে দিলো..

"" পার্ফেক্ট এবার নিচে চলো ভাইয়া কে নিচে ড্রইংরুমে দেখলাম চলো....""

রুনা লজ্জায় নিচে যেতে চাইছিলো না  কিন্তু ছন্দ জোর করে নিয়ে আসে৷ ছন্দ রুনাকে সিড়ি পর্যন্ত আনতে চোখ যায় ড্রইংরুমে রুনার সেই চিরচেনা প্রিয় মুখ গুলো দেখতে পেয়ে চোখ জোড়া ছলছল করছে৷ রুনা এখন বুজতে পারছে ছন্দ তাকে কিসের সারপ্রাইজ দেওয়ার কথা বলছিলো... ছন্দ তার ভাবি কে ধরে সিড়ি দিয়ে ধিরে ধিরে নিচে নেমে আসে৷ রুনাকে দেখে তার মা ছুটে এসে জরিয়ে ধরে...

"" কেমন আছিস মা?"" রুনার মা রায়লা বেগম বলে উঠলো ..

 "" আলহামদুলিল্লাহ মা আমি ভালো আছি তুমি কেমন আছো আর বাবা তুমি কেমন আছো?""

"" ভালো রে মা তোকে নিতে এলাম আমরা..""রুনার বাবা হাসিব সাহেব... 

"" কিন্তু বিয়াই সাহেব এই অবস্তায়..বাকিটা বলতে না দিয়ে হাসিব সাহেব বলে উঠলো " দেখুন বিয়াইন আমাদের বংশের নিময় হলো মেয়েদের প্রথম সন্তান তাদের বাপের বাড়িতে জন্ম হয়৷ এটা আপনাদের বংশের নিয়ম হতে না পারে কিন্তু আমাদের তো এই নিয়ম পালন করতে হবে৷ 

"" ঠিক আছে আমি আপনাদের বাধা দিবো না৷""

" ধন্যবাদ কিন্তু আমাদের আর একটা আবদার আছে জামাই বাবাজি কেও আমাদের সাথে নিয়ে যেতে চাই কিছু দিনের জন্য..""

"" কাব্যের যদি কোন অসুবিধা না হয় তো যাক আমার তাতে সমস্যা নেই ৷ কারন এই সময় বউমার পাশে কাব্যের থাকাটা উচিত বলে আমি মনে করি...""

"" বাহ তাহলে তো হয়েই গেল ৷ ভাবি আমি তোমার আর ভাইয়া জামা কাপড় প্যাক করে আনছি তোমরা কিছুক্ষণ অপেক্ষা করো .."" 

রুনা ছন্দের দিকে তাকিয়ে জরিয়ে ধরে কানে কানে বলে"" থ্যাঙ্কিউ ছন্দরানী আমি জানি এই সব তোমার প্লান ৷ "" 

"" হয়েছে হয়েছে এসব আদিক্ষেতা রাখো আমি তোমাদের লাগেস নিয়ে আসছি৷" বলে ছন্দ দ্রুত উপরে কাব্যে রুনার রুমে চলে গেল...পনেরো মিনিটের মাথায় ছন্দ লাগেজ নিয়ে হাজির হয় ৷ কিয়ারা বেগম আর তার বোন কায়রা হাসি মুখে ওদের বিদায় দিয়ে ভিতরে চলে আসে৷ 

ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দিয়ে ছন্দের এলাকা ছাড়িয়ে কিছুদুর যেতে একটা মাইক্রো তাদের গাড়ির সামনে এসে থামে ৷ ড্রাইভার দ্রুত গাড়ি ব্রেক মারে ৷ 

রুনা কাব্যেদের গাড়ি থামতে মাইক্রো থেকে পাচঁ জন লোকমুখে মাক্স পড়ে  বের হয়ে এসে রুনা কাব্যে রুনার বাবা মা ড্রাইভার প্রত্যেকের মুখের উপর ক্লোরোফর্ম স্প্রে করে দেয়৷ সাথে সাথে প্রত্যেকে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে... 

"" দ্রুত ছেলে আর মেয়ে টা কে সাবধানে গাড়িতে তুলে নে ৷ আর বাকিদের তাদের বাড়িতে পৌছে দিয়ে আয় সাথে এই চিঠি টা ওদের কে দিয়ে দিবি ""

"" ইয়েস স্যার.."" 

লোক গুলো কাব্য আর রুনা কে সাবধানে মাইক্রোতে বসিয়ে নিয়ে যায় আর বাকিদের পৌছে দেয় তাদের বাড়িতে৷ 

৮৪

টেবিলের উপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ছন্দের পরিচিত সব মানুষের ছবি ৷ মুরাদ এক এক করে সব গুলো মার্ক করে ছন্দের অতি আপন জন দের ছবি সরিয়ে রাখছে....

"" আজ আমি একটুর জন্য হারিয়ে ফেললাম নেভার মাইন্ড নেক্সট টাইম এই ভুল আর হবে না ৷ ছন্দ ভাবির দ্বিতীয় মুখ আমি উম্মোচন করবো-ই ৷ " 
মুরাদের ভাবনার মাঝে বর্ণের কল এলো .. "" হ্যালো ..""

" মুরাদ এই সব কি হচ্ছে ? তুই ঠিক কি করতে চাইছিস হ্যা ..." বর্ণের রাগি কন্ঠ শুনে মুরাদ ঘাবড়ে গেল কারন মুরাদ খুব ভালো করেই জানে বর্ণের রাগ সম্পর্কে ৷ 

"" মা,,মানে কি বলতে চাইছিস তুই আমি কিছু বুজতে পারছি না ..." 

"" রিয়েলি তুই কিছু বুজতে পারছিস না? ওকে ফাইন তাহলে তুই চৌধুরী ম্যানশনে আয় বাকিটা আমি তোকে এখানে বুঝিয়ে দিচ্ছি..." মুরাদ কে বলতে না দিয়ে বর্ণ কল ডিসকানেক্ট করে দিলো...

"" বর্ণ কিসের কথা বলছে এটা নয়তো ও যেনে গেছে আমি ভাবিকে ফলো করেছি? যাই হোক আমাকে যেতে হবে চৌধুরী ম্যানশনে নাহলে বর্ণ কি করে বসবে  আল্লাহ জানে...." মুরাদ সব কিছু ওভাবে ফেলে বেরিয়ে যায়.. 

______________

বাড়িতে ফিরে সাব্বির আহাম্মেদ জানতে পারে তার বিনা অনুমতিতে তার ছেলে আর পুত্রবধু তার বাপের বাড়ি চলে গেছে৷ কথাটা শোনার পর থেকে দম মেরে আছে সাব্বির আহাম্মেদ ৷ কিয়ারা বেগম তার স্বামীর হাবভাব বুজতে না পেরে জ্বিগাসা করলো" কি হয়েছে সাবু তুমি কথাটা শোনার পর থেকে এভাবে দম মেরে আছো কেন? তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমি মটেও খুশি নও ?" 

কিয়ারা বেগমের কথা শুনে সাব্বির আহাম্মেদ মুখে একগাল হাসি এনে বললো"" কি সব বলছো কিয়ারা আমি কেন খুশি হবো না এখন তো আমি আরো বেশি খুশি হবো আস্তে আস্তে যে পথের কাটা দুর হচ্ছে ...শেষের কথা গুলো আস্তে করে বললো সাব্বির আহাম্মেদ ...

"" কিছু বলছো সাবু?" 

"" ওহ হ্যা বলছি যে ওরা গিয়ে যাক কয়েকমাস বেরিয়ে আসুক আমাদের নাতি বা নাতনি পৃথিবীতে এলে না হয় ওদের এক সাথে বাড়িতে ফিরিয়ে আনবো..... নাহ কিয়ারা ওরা আর ফিরবে না ওদেরকে ওখানে শেষ করে দিবো আমি ..." (মনে মনে বললো সাব্বির আহাম্মেদ  )

"" আচ্ছা শোন ছন্দ কে যারা দেখতে আসছে তাদের জন্য নাস্তা রেডি করে রেখেছি কিন্তু ওরা আসবে কখন?""

"" এই তো বিকেলের দিকে তুমি ছন্দ কে রেডি থাকতে বলো ...""

"" আচ্ছা , তাহলে এখন খেতে এসো .." 

"" হুম তুমি খাবার সার্ব করো আমি আসছি ..." 

__________

ছন্দের ফোনটা হঠাৎ ভাইব্রেশন হলে ছন্দ দেখে Md মেসেজ.. মেসেজ টা পড়ে ছন্দের ঠোটের কোনে হাসি ফুটে উঠলো ... 

" এবার তো খেলা জমবে আমি ডিয়ার সো কল্ড আব্বাজান... দেখি বিকেলে কোন গাধা আসে আমাকে দেখতে তারপর না হয় নতুন চাল দিবো ততোক্ষন না একটু আনন্দ করে নেও ...." 

কথা গুলো বলে ছন্দ বাকা হেসে রুম থেকে বেরিয়ে যায়.... 

____________

গাড়ি কোন ভাবে পার্ক করে মুরাদ দৌড়ে চৌধুরী ম্যানশনে ঢুকে চমকে গেল.......

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন