অচেনা অতিথি - পর্ব ২৪ - নাফিসা মুনতাহা পরী - ধারাবাহিক গল্প


তিতিরের কথা শুনে রিপার ভাই রাশেদ কটমট করে তিতিরের দিকে তাকালো। তিতির নিজেও জানেনা সে কত বড় বিপদের ফাঁদে পা দিয়েছে।


রাশেদ প্রচন্ড ক্ষোভের সাথে বললো," তুমিই তাহলে সেই তিতির! তুমি কি জানো আমি কে?"

ঃ-" জ্বী আমিই তিতির। আমি আপনাকে চিনিনা কিন্তু এতটুকু বলতে পারি আপনি আমার জন্য আপাততো আল্লাহর দেওয়া সাহার্য্যকারী নিয়ামত। যাকে আল্লাহ্ আমার সাহার্য্যকারী হিসেবে পাঠিয়েছে। তিতির গাড়ীর  জানালার কাচটা নামিয়ে বৃষ্টি ছোয়ার চেষ্টা করলো। কারন ইতিমধ্য বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে।"

ঃ-" তিতিরের এমন ব্যবহারে রাশেদ হতবাক হয়ে যায়। এই মেয়ের দেখছি কোন ভয়ই নেই। রাশেদ গলা ছেড়ে দিয়ে বললো," আমি রিপার বড় ভাই। শুধু তোমার জন্য সে এখনো জেলে আছে। প্রতিদিন আল্লাহর কাছে দোয়া করতাম যাতে তোমাকে খুজে পাই আর নিজ হাতে শাস্তি দেই।"

ঃ-" তিতির ওর হাতকে বৃষ্টি হতে ভেজানো বাদ দিয়ে  হাত ভিতরে নিয়ে এসে গাড়ীর কাঁচটা বন্ধ করে দিয়ে বললো," আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া। আমিতো আপনাকে চিনিনা তাই সালাম দেইনি। আর আমি জানিনা ওনার কি হয়েছে। কিন্তু তিনি খুব মিষ্টি একটা মেয়ে শুধু রাগটা একটু বেশি।"

ঃ-" তুমি নিজেকে খুব চালাক মনে করো তাইনা। তোমার চালাকি বের করছি বলে রাশেদ অন্যদিকে গাড়ীর মোড় ঘুড়ালো। তোমার জন্য যত বেইজ্জতি হয়েছি তার সব কিছু আজ উসুল করে ছাড়বো। "

রাশেদকে অবাক করে দিয়ে তিতির বলল, " ভাইয়া আমাকে কি মার্ডার করবেন!  তাহলে খুব ভালো হত। আমি আমার মার সাথে দেখা করতে পারবো। মাকে অভিযোগ করতাম কেন সে আমাকে ছোটবেলায় ছেড়ে গেছে! কেন আমাকে দুনিয়া নামক জাহান্নামে রেখে গেছে। আমার এখানে আর ভালো লাগেনা। আপনি বলুন, একা একা কেউ বেঁচে থাকতে পারে! কথাগুলো বলে তিতির দু'চোখের পানি মুছলো।"

ঃ-" রাশেদ গাড়ী থামালো এক নির্জন রাস্তার ধারে। বিশ্ময়ের সাথে তিতিরের দিকে চাইলো। মেয়েটার মাথা হতে পা পর্যন্ত সম্পূর্ন পর্দা করা। 

এই মেয়ে তোমাকে আমায় ভয় করছেনা?"

রাশেদের কথাকে পাত্তা না দিয়ে তিতির বলল,"  ভাইয়া, আমাকে কখন  খুন করছেন! আমি একটা কাগজে লিখে দিচ্ছি আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয় আর রিপা আপু নির্দোষ। তাকে যেন সম্মানে ছেড়ে দেয়া হয়।"

ঃ-" রাশেদ গম্ভীর ভাবে বললো," মরার বুঝি খুব সখ তোমার?"

ঃ-" তিতির গাড়ীর ডোর খুলে বেরিয়ে এসে বললো," ভাইয়া জলদি করেন। এখানে কেউ নেই। চিন্তা করেন না আমি মারা গেলে কারো যায় আসেনা।"

ঃ-" রাশেদ গাড়ীতে বসেই চোখ দুটা বড় করে তিতিরের দিকে চেয়েই রইলো। এই মেয়েটা পাগল নাকি!"

তিতির রাস্তার ধারে এসে আকাশের দিকে চেয়ে বললো," মাগো, তোমায় আমি কতদিন দেখিনা। বাবাটাও আমার খোঁজ নেয়না। এভাবে থাকা যায় বলো! তুমি আমাকে শুনতে পাও মা! আমি আমার কষ্টের কথা কাউকে বলতে পারিনা। কাকে বলবো বল? আজ রবিনটাকেও খুঁজে পেলামনা। সবাই আমার কাছ থেকে চলে যায়। আমি কাউকে সুখী করতে পারিনা।"
পুরো বৃষ্টিতে তিতির ভিজে যাচ্ছে। তাই চোখের পানি বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে পড়ছে।

ঃ- " রাশেদ ছাতা নিয়ে তিতিরের পাশে দাড়িয়ে বললো," রিপা তোমার যা ক্ষতি করেছে তার মূল্য আমরা দিতে পারবোনা। কিন্তু ও কম শাস্তি পাচ্ছেনা। তুমি যদি দয়া করে কেসটা তুলে নিতে তাহলে তোমার প্রতি কৃতঙ্গ থাকতাম। আমার মনুষ্যত্ত্ব বোধ তুমি ফিরে আনছো। যানিনা মাহাদের সাথে তোমার কি সম্পর্ক। কিন্তু সেদিন ওর চোখে যে আগুন দেখেছি তাতে মনে হয়েছে সে সহজে রিপাকে ছেড়ে দিবেনা। তুমি আমার বোনটাকে বাসায় নিয়ে আসার ব্যবস্থা করে দাও শুধু। ওর কষ্ট আর সইতে পারিনা।"

ঃ- " তিতির বুঝল আজোও তার মায়ের সাথে দেখা হচ্ছেনা। আকাশের দিকে চেয়ে শুধু অস্পষ্ট ভাবে বললো," খোদা মুক্তি চাই।" 
তিতির গাড়ীতে এসে বসতেই রাশেদ এসে বসে গাড়ী স্টার্ট দিল। পুরোটা রাস্তায় তিতির কেঁদেছে। বিশেষ করে মাহাদের কথা মনে করে বেশি কান্না করছে। বর্তমান জিবনটা তিতিরকে খুব কষ্ট দিচ্ছে।

বাসার কাছে এসে গাড়ী দাড়াতেই তিতির নেমে গেলো। রাশেদ তিতিরকে ডেকে বললো," তিতির, কখনো প্রয়োজন পড়লে এই ভাইটার কাছে এসো।"

তিতির শুধু পিছন ফিরে হাতটা মুখের সামনে এনে ইশারা করে শুকরিয়া জানালো।


তিতির চলে যেতেই রাশেদ ওর ফোনটা বের করে মাহাদকে কল দিতেই মাহাদ রিসিভ করলো।

ঃ-" মাহাদ স্যরি, তোর সাথে সেদিন ওমন ব্যবহার করা ঠিক হয়নি। আমরা সব কিছু বাঁচ-বিচার না করেই ভুল কাজ করার জন্য পা বাড়ায়। আজ তিতিরের সাথে দেখা না হলে আমার চোখ খুলতোনা।"

রাশেদের কথা কেড়ে নিয়ে মাহাদ বললো," আজ যদি তুই তিতিরের গায়ে টার্চ করতি তোকে ওখানেই ৩২ হাত মাটির নিচে পুঁতে ফেলতাম। "
কথা গুলো বলেই মাহাদ পিছন হতে ওর গাড়ী নিয়ে এসে রাশেদের গাড়ীর সামনে থামালো।

মাহাদ ফোনটা কেটে দিয়ে গাড়ীর গ্লাসটা নামিয়ে বললো," নিজের জিনিস কিভাবে আগলে রাখতে হয় সেটা আমি ভালো করে জানি। তিতির বাহিরে থাকলে সেটা এই মাহাদের দু'চোখের সামনেই থাকে। 
তিতিরের কাছে কেউ কিছু চাইলে সেটা আমি অপূর্ণ রাখিনা। বাসায় যা। রিপা বাসায় আসছে।
মাহাদ গাড়ী নিয়ে বাসায় ঢুকলো আর রাশেদ চলে গেল ওর বাসায় খুঁশি হয়ে।

♦♦♦♦

রাত আটটার পর তিতির বাসায় ফিরে এসেছে। বাসার সবাই ব্যস্ত। আজ রুমকির গায়ে হলুদ। বাসা ভর্তি মেহমান। তিতিরের খোঁজ নেওয়ার মত কারো সময় নাই।
তিতির রুমে এসে দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে গোসল করে নিলো। পুরোটা দিন না খেয়ে আছে তার ভিতর এতটা ধকল গেল তাই শরীর আর চলছেনা তিতিরের। কোন মতে গোসল সেরে নিয়ে এসে জায়নামায বিছিয়ে, বসে নামায পড়লো। আজ আর দাড়িয়ে নামায পড়তে পারলোনা।

নামায শেষ করে কেবল বেডে বসেছে এমন সময় দরজায় টোকা পড়লো।
তিতির গিয়ে দরজা খুলে দিতেই আসমা এসে রুমে ঢুকলো খাবার নিয়ে।


আপা পুরোদিন কই ছিলেন? ভাইজান জানলে আমার অবস্থা খারাপ করে দিত। তার ভিতর আজ দিয়ে চারদিন হলো আপনি ঔষুধ খাননি। এরকম কেন করেন বলেন তো! আপনি এমন করলে আমার চাকরি নিয়ে টানাটানি পড়ে যাবে। ভাইজান যে রাগী মানুষ।


আসমার কথার জবাব না দিয়ে তিতির বলল," আমার কাপড় ছিলো সেগুলো কি তুমি ধুয়ে দিছ আসমা! আর তোমার ভাইজান কি এই রুমে আসছিলো?"


আপা ভাইজান তো বাসায় ছিলোনা। আমি এসে দেখলাম আপনি সবকিছু ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখছেন তাই সব কিছু পরিষ্কার করে বেড শীটটা বদলিয়ে ফেলেছি। আপনি খাবারগুলো খানতো! আমার আরো কাজ আছে।


তিতির আসমার কথা শুনে অনেকটা বাধ্য হয়েই খাবারগুলো খেল। তারপর আসমার সামনেই মেডিসিন খেয়ে বললো," হলুদের অনুষ্ঠান কখন হতে শুরু হবে!"


খাবারের বাটি আর প্লেটগুলো গুছিয়ে রেখে আসমা বলল," আপা শুরু হয়ে গেছে একটু আগে। আমি গেলাম। আবার আসবোনি। আপনি রেষ্ট নেন। এমনি আপনার শরীর খারাপ। হলুদে আপনার আসতে হবেনা, আপনি ঘুমান।


তোমার ভাইজান কি বাসায় এসেছেন? 


জ্বী আপা। ভাইজান যা সাজছেনা আজ! মাথা নষ্ট করার মত অবস্থা। ওনাকে দেখে যে আজ কয়টা মেয়ে ফিদা হবে আল্লাহ্ ভালো জানে। মানুষ এত সুন্দর হয় ক্যামনে! এমনি ভাইজানের জন্য কত মাইয়া পাগল তার ভিতর আজতো সবার মনে আগুন জ্বলে যাবে।


আসমা, তোমার কাজ শেষ হলে যেতে পারো। আমি ঘুমাবো। আমি দরজা বন্ধ করে ঘুমাচ্ছি তাই এসে লাভও হবেনা। তুমি যাও।


জ্বী আপা, বলে আসমা বাহিরে আসতেই তিতির দরজা জোড়ে শব্দ করে বন্ধ করে দিল। আর আসমা এদিক ওদিক তাকেই দেখলো, খানিকটা দুরে মাহাদ দাড়িয়ে আছে।


মাহাদ আসমাকে ইশারা করলো তিতির খেয়েছে! প্রতি উত্তরে আসমা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানাতেই মাহাদ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো," বউ পালা আর হাজারটা গরু পালা একই কথা। "

♦♦♦♦

গায়ে হলুদের রিসেপশন জমে উঠেছে। হাই বিটে গান চলছে। সবাই হৈ হুল্লোর করছে। রুমকিকে সবাই গায়ে  হলুদ দিয়ে দিচ্ছে। ক্যামেরা ম্যান ফটো শুট করছে। এ এক এলাহী কান্ডকারখানা।

মাহাদ একটা পান্জাবী আর ধুতি পাজামা পড়েছে। সাদা পান্জাবীর মধ্য হলুদ সুতার চাপা কাজ। মাহাদকে দেখে রুমকি মন খারাপ করে মাহাদের দিকে বার বার তাকাচ্ছে। কোথা হতে রূপসা এসে মাহাদের হাতটা ধরে অন্য দিকে টেনে নিয়ে গেল। যা রুমকিকে রাগে ফায়ার করে ফেললো। রুমকি না পারে সইতে না পারে কাউকে কিছু বলতে।


রেজওয়ান চুপ করে বসে ওর বোনকে দেখছে। রেজওয়ানের কোলে ওর মেয়ে। মৌয়ের কোন খোঁজ নাই। আজ রেজওয়ানের মনটা খু্ব খারাপ। একটাই বোন তার। জিবনে বাবার আদর পায়নি। রেজওয়ান যতটা পেরেছে নিজের ভালোবাসা দিয়ে বোনকে আগলে রাখেছে। আর আজ সেই বোনের গায়ে হলুদ। কাল সে শশুর বাড়ী যাবে। ভাবতেই বুকের ভিতর রেজওয়ানে কষ্ট হচ্ছে।


রূপসা মাহাদকে একদিকে টেনে আনতেই মাহাদের সব ফ্রেন্ড একসাথে চিৎকার দিয়ে উঠলো। মাহাদ ওদের দেখেই হতবাক হয়ে গেল। কারন মাহাদ কোন ফ্রেন্ডকে ইনভাইট করেনি। রেজওয়ানের সাথের তার ভালো সম্পর্ক নেই তাই কাউকে ইনভাইট করেনি। মাহাদ বুঝতে পারছেনা এদের ইনভাইট করলো কে?
সেটা পড়ে দেখা যাবে বলে সব ফ্রেন্ডদের সাথে মেতে উঠলো মাহাদ।


তিতির ঘুমাতে পারছেনা। মাথায় শুধু আসমার কথাগুলো ভেঁসে উঠছে। মনটাকে আর স্থির করে রাখতে পারছেনা। শেষে বাধ্য হয়ে রুম থেকে বের হল। উপরে ড্রিম লাইট জ্বলছে কিন্তু নিচে ফুল লাইট।  তিতিরের চোখ শুধু মাহাদকে খোঁজে। কর্নারের দিকে একদল ছেলে মেয়েদের সাথে মাহাদ মজা করছে। 

আমাকে কষ্ট দিয়ে এখানে মজা করা হচ্ছে? তিতির আরো রেগে গিয়ে রুমে চলে আসলো।

এসে অভিমানে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো। বউ কে এখানে রেখে নিচে অন্য মেয়েদের সাথে মাস্তি করা হচ্ছে?  কতক্ষন আমাকে ছেড়ে থাকবেন।  কাছে আইসেন শুধু একবার। আপনার মাথা ন্যাড়া করে দিয়ে টাকলা বানিয়ে দিব। ১২ হাত দাড়ি রেখে দিব এবার। দেখি ক্যামনে আপনাকে দেখে সবাই ফিদা হয়ে যায়। আপনাকে যা ইচ্ছা তাই করে রাখবো। সব সময় অগোছালো রাখবো। আমাকে কষ্ট দিতে শিখে গেছেন তাইনা!  আমাকে কষ্ট দেওয়া শখ এবার আপনার জন্মের মত ঘুচাবো আমি।  পুরো রাত আর ঘুম আসলোনা। বেশিভাগ সময় কান্না করেই কাটিয়ে দিল তিতির।
ভোর রাতে চোখ ধরে আসলো। তিতির ঘুমিয়ে পরে।


সকাল দশটার দিকে দরজা ধাক্কানিতে তিতির জেগে উঠলো। এখনো ঘুমের রেশ কাটেনি। ঘুম থকে উঠে টলতে টলতে গিয়ে দরজা খুলে দিয়ে ওখানেই দাড়িয়ে রইলো।

সামনে আসমা আর মৌতুসি দাড়িয়ে আছে।


কিরে তুই এখানে এসে এত অলস হয়ে গেছিস! আগেতো এমন ছিলিনা! এত পরির্বতন?(মৌতুসি) 

ঃ- আপা খুব অসুস্থ, আপা আপনাকে তিনবার ডাকছি তাও দরজা খুলে দেননি। চিন্তা হয়না? আর আপনার চোখমুখ এত ফোলা কেন?

কাজের মেয়ের এমন কেয়ার দেখে মৌতুসি তাজ্জব বনে গেল। তিতিরকে ইশারা করে বললো," ব্যাপার কি!"


আসমা তুমি যাও। মৌতুসি রুমের ভিরত ঢুকতেই তিতির ওয়াসরুমে চলে গেল ফ্রেস হতে। খানিকক্ষন পর বের হয়ে এসে দেখলো আসমা এখনো দাড়িয়ে রয়েছে।


তিতির জানিস আজ তোর জন্য সারপ্রাইজ আছে। বিয়েতে সাতটা মেয়ে একই রকম বৌ সাজবে। এর মধ্য থেকে বর মহাশয় কে তার নিজের বৌ খুঁজে বের করতে হবে।  যদি বর মহাশয় সেটা করতে না পারে তাহলে আমরা মেয়েরা ১লাখ কুড়ি হাজার টাকা আদায় করবো বরের কাছ হতে। রুমকি, ওর তিন বান্ধবী, মৌসুমী আপু, রূপসা আপু আর তুই।  এই সাতজন তোরা বৌ সাজবি। তার ভিতর থেকে বের করতে হবে আসল বৌ কে। আমার সাজার খুব ইচ্ছা ছিল কিন্তু মৌ আপু জোড় করে তোর নাম দিল। দেখলাম মৌ আপুর তোর জন্য খুব টান। সবার সাথেই এভাবে মিলেমিশে থাকিস তিতির। চল একসাথে খাবার খাবো।


তুমি যাও আমি একটু পরে যাচ্ছি বলতেই মৌতুসি চলে গেল।
এবার তিতির কটমট করে আসমার দিকে তাকিয়ে বললো," আর একবার যদি সবার সামনে আলগা দরদ দেখাতে আসো তাহলে তোমার সাহেবের তো  মাথা ফাটিয়ে দিব তার সাথে তোমারও ব্যান্ড বাজাবো। আজ পুরাটা দিন যেন তোমাকে আমার চোখের সামনে না দেখি। "
কথাগুলো বলে তিতির নিচে এসে দেখলো সেখানে নাস্তার ট্রাজেডি চলছে। কে কোথা হতে কি খাচ্ছে তার  কোন নিয়ম নাই। ব্রেডবিনে মাত্র দুইটা ব্রেড রয়েছে। তিতির সেখান হতে একটা ব্রেড নিয়ে মুখে পুরে দিয়ে পানি খেয়ে নিল। 
এর মাঝে মৌসুমী এসে বললো," তিতির যা গোসল সেরে নে, বৌ সাজতে হবে।"

জ্বী আপু বলে তিতির উপরে উঠে আসলো তারপর রুমে এসে দেখে বিয়ের পোষাক। তিতির জিবনে কোনদিন বিয়েতে এটেন্ড হওয়ার সুযোগ পায়নি। এই প্রথম বিয়েতে এটেন্ড করছে তাও বউ সেজে। তিতিরের কিছু ভালো লাগছেনা। মনটা মাহাদ মাহাদ করছে। ওয়াসরুমে গিয়ে গোসল সেরে এসে ড্রেসটা পড়ে নিল। তারপর মাথায় বড় একটা ঘোমটা দিতেই মৌ এসে বললো," তিতির চল আমার সাথে। সবাই সাজতে বসে গেছে। পার্লার থেকে মেয়েরা এসেছে। 

♦♦♦♦

সাতটা মেয়েকে একই সাজ সাজিয়ে দিতে অনেক সময় লাগলো। শেষে তিতিরের চুল নিয়ে সমস্যা হয়ে গেল। এত বড় বড় চুল খোপা বাধতে সমস্যা হচ্ছে। শেষে অনেক কষ্টে খোপা বেধে সাত জনকে একসাথে দাড় করিয়ে সবাইকে দেখালো। মনে হচ্ছে সাতটা মেয়ের বিয়ে হচ্ছে। বাতাসি বিবি আড় চোখে তিতিরকে দেখছে আর মনে মনে বলছে, মাইয়াটা দেখতে খুব সুন্দর। এমনকি লাবীবাও তিতিরকে ভালো করে দেখছে আর মাথায় নানান প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। মাহাদের সাথে কি তিতিরের সত্যই কোন সম্পর্ক রয়েছে! কয়েকদিন ধরে ছেলেকে ফলো করেছে লাবীবা। মাহাদ তিতিরের আগে পিছেও ছিলোনা। মাহাদ হয়ত সত্যিই শুধু ওর মেডিসিন দিতে গিয়েছিল।


সবাই কমিউনিটি সেন্টারে চলে গেছে অনেক আগে। একটা ব্লাক কালার হাইসে করে সাত বউ আর অন্য গাড়ীতে লাবীবা তার শাশুড়িকে নিয়ে কমিউনিটি সেন্টারে রওনা দিল। 

প্রায় কুড়ি মিনিটের মধ্য পৌছে গেল। চারটা মেয়ে লম্বা জরির ওড়না চারদিকে ধরে আছে আর গাড়ী থেকে এক এক করে সাতটা বউ বের হয়ে স্টেজের দিকে হেঁটে চলছে। এ এক অন্য রকম সৌন্দর্য। সাতটা বউকে দাড়িয়ে সৌরভকে বলা হল তার বউকে এর মধ্য থেকে খুজে বের করতে হবে। যদি না পারে তাহলে মোটা অংকের টাকা হুনতে  হবে তাকে।


বরযাত্রীরা এর বিরোধিতা করলো। এ কি করে সম্ভব! এত গুলো মেয়ের মাঝে বউ খোঁজা? আজ এতগুলো টাকা দিতেও হয় তাহলে আজ একটা নয় এই সাত বউকেই বরপক্ষ নিয়ে যাবে বাসাতে। কারন তারা বউ গুলোকে উপহার হিসেবে পেয়েছে। শুধু তোমরায় পারো বলে বরপক্ষের কয়েকটা ছেলে হেঁসে উঠলো। আর একজন বলে উঠলো যদি সাতজনকে পাওয়া যায় তাহলে প্রয়োজন হলে আরো দুই লক্ষ দেওয়া হবে।

সৌরভ সবাইকে আশ্বস্ত করলো। সে বললো," আমরা এক টাকাও মেয়েদের দিচ্ছিনা। আগে ভুল প্রমানিত হোক তো?

সৌরভকে বউদের সামনে দাড় করানো হল।সব বউগন  বরমালা হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছে। সৌরভ একবার সব বউদের ঘুরে ঘুরে দেখে সেখান থেকে একজনকে বের করে এনে বললো," রুমকি মালা পরাও।"

সবাইতো অবাক, এত সহজে কি করে বের করে এটাকেই নিজের বউ বলে দাবী করলো সৌরভ!

বউয়ের ঘোমটা খুলে দেখা গেল, সে রুমকি। এবার বরযাত্রীরা হাসতে হাসতে জোড়ে ড়োড়ে হাত তালি দিতে লাগলো। মেয়েদের পুরো প্লানই ফ্লপ গেল। এত কষ্ট করে এতকিছু করা আর সেগুলো সব বৃথা গেল!  

রুমকি বরমালা পড়াতে যেতেই সৌরভ বললো,"  রুমকি, তোমার ঐ হাতের তিলের আমি প্রেমে পড়ে গেছি প্রথম দিন হতেই।"

রুমকির আর বুঝতে বাঁকি রইলোনা এই হাতের তিলটাই ওদের প্লান নষ্ট করে দিয়েছে।


বিয়ের রিসেপশন জমে উঠেছে।যথারীতিতে বিয়ে পড়ানো হল। খাওয়া-দাওয়া সব কিছু শেষের দিকে। সবাই হৈ-হল্লোড়ে ব্যস্ত। তিতির একটা স্ট্যান্ড ফ্যানের সামনে চেয়ার পেতে বসে আছে সাথে মৌসুমী আর মৌতুসি ও  আছে।

ঃ-" এখানে তো দেখছি খুব সুখে আছিস তিতির! আচ্ছা, রুপসা মেয়েটাকে কি তুই চিনিস!"

মৌসুমির কথায় তিতিরের গলা ধরে এলো। আপু, উনি বিয়ে উপলক্ষে এখানে এসেছেন। আগে কখনো বাসায় আসতে দেখিনি।"

মৌসুমি হতাশ গলায় বললো," মেয়েটার ভাব দেখেছিস? কাউকে সে কেয়ার করেনা। রুমকির বিয়ে কিন্তু ওকে দেখে মনে হচ্ছে তারই বিয়ে! আর মাহাদ ভাইয়ার সাথে ওর কেন এত ঘেঁষাঘেঁষি? উমহ্ নিজেকে মনে করে ইংল্যান্ডের রানী এলিজাবেথ।"

আপু একদিনে তুমি অতিষ্ট হয়ে গেছ! তাহলে ভাবো তিতির কতদিন ধরে এই বাসায় আছে। ওকে না জানি কত কি সইতে হয়।(মৌতুসি)

ওদের দু'বোনের কথা শুনে তিতির সামনের দিকে তাকিয়ে দেখলো," মাহাদ দাড়িয়ে রূপসার সাথে গল্প করছে। সাথে একদল ছেলেমেেয়ে। "
তিতির এক নজরে মাহাদের দিকে চেয়ে রয়েছে কিন্তু কিছু বলতে পারছেনা। সত্যিই কি তাদের মধ্য আর কোন সম্পর্ক নেই! মাহাদ সব কিছু কিভাবে ভুলে গেল!

এদিকে মাহাদ সবার সাথে ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো তা দেখে তিতির মনে মনে বললো," এত ছবি তোলার কি আছে! মনে হয় ছবির যাদুঘর তৈরি করবে।"

সবার জন্য অনেক আনন্দের হলেও তিতিরের জন্য মোটেও আনন্দের ছিলোনা দিনটি। বাসায় যাওয়ার অপেক্ষায় আছে সে।

সন্ধ্যার একটু আগে রুমকিকে বিদায় দেওয়া হল তারপর এক এক করে ৩৬ টা বড় বড় হাইস কমিউনিটি সেন্টার হতে বের হয়ে গেল। বউ সহ বরযাত্রীরা চলে গেলে কামরান সাহেবের পরিবারের সবাই বাসার পথে রওনা দিলো।

তিতির বাসায় এসে গাড়ী থেকে নেমে আর ভিতরে গেলনা। বাসার বাহিরে খোলা জায়গায় ঘাসের উপর বসে পড়লো। ঝুপঝুপ করে চোখের পানি ফেলে কাঁদতে লাগলো। 

এমন সময় একটা ছেলে দৌড়ে এলো এবং হাঁপাতে হাঁপাতে  বললো," আপু আপনি কি তিতির! কতক্ষন ধরে আপনাকে খুঁজছি। আপনি এখানে বসে আছেন আর ঐ দিকে মাহাদ ভাইয়ার বাইক এক্সিডেন্ট হইছে।"

তিতিরের বুকের ভিতর ছাৎ করে উঠলো কথাটা শুনে ঐ অবস্থায় উঠেই দৌড় দিল রাস্তার দিকে। ভারী লেহেঙ্গা পরে মেয়েটা দৌড়াতেও পারছেনা। তবুও প্রানপনে দৌড়ে এল রাস্তার সামনে। মাহাদ তখন দাড়িয়ে ফোনে কার সাথে যেন কথা বলছে। 

তিতির বুঝলো এটা মাহাদের প্লান ছাড়া কিছুই নয়। তবুও তিতির কোন কারন ছাড়াই মাহাদের বুকে যেন ঝাপিয়ে পড়ে। শক্ত করে মাহাদকে জড়িয়ে ধরে বললো," আমায় এত কষ্ট দেন কেন!"

মাহাদ ফোনটা কেটে দিয়ে ব্যালকুনির দিকে তাকালো। ততক্ষনে রূপসা এসে ব্যালকুনিতে দাড়িয়েছে। মাহাদ রূপসাকে হাত দিয়ে ইশারা করে তিতিরকে দেখালো। রূপসা সী ইজ মাই লাভ।

তারপর দুই হাতের আঙ্গুল দিয়ে লাভ বানিয়ে দেখালো দেন তিতিরকে জড়িয়ে ধরে কিস♥ করলো।

মাহাদ ওর কাজ করেছে। এই কাজ করার জন্য তার এত প্লান। 
মাহাদ এবার তিতিরকে বললো," আমাকে ছেড়ে যখন থাকতেই পারোনা তাহলে নিজেকে কেনো আমার কাছ থেকে দুরে রাখো!"

মাহাদ রুপসার সামনেই তিতিরকে অনেকগুলো কিস♥ করে তার পর ওকে বাইকে নিয়ে অজানা পথে চলে গেল।


রূপসা এতটা অপমান কোনদিনও হয়নি। মেয়েটার মুখ দেখতে পায়নি। মেয়েটা বউ সেজে আছে।  তারমানে রুমকি আর রুপসা ছাড়া ঐ পাঁচটা মেয়ের মধ্য কেউ একজন হবে যাকে মাহাদ ভালোবাসে। রূপসা রাগে অপমানে মোবাইলটাই ছুড়ে ফেলে দিল।


মাহাদ ওর বাইক নিয়ে সামনের মোড় ঘুরতেই আরো ২৫ টা বাইকসহ মাহাদের ফ্রেন্ডরা মাহাদের সাথে যুক্ত হল। সবাই মিলে একসাথে উল্লাসে চিৎকার করে উঠলো। তিতিরকে মাহাদ চমকের উপর চমক দিচ্ছে। তিতির কখনো কল্পনা করেনি দিনশেষে  মাহাদ তাকে এতটা সারপ্রাইজ দিবে। মাহাদ জোরে বলে উঠলো," তিতির তোমার ভাল লাগছে!"


তিতির শক্ত করে মাহাদের পেটটা আরো জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে একটা কিস করে জানিয়ে দিল সে আজ খুব খুশি।

তিতিরের জন্য আরো চমকের বাঁকি ছিলো। সামনে  মোড়ের রাস্তা হতে আরো ১০ টা বাইক এসে মাহাদদের সাথে যুক্ত হলো। এবার সবাই এক সাথে ইয়াহু বলে চিৎকার দিয়ে উঠলো। মাহাদ হেঁসে বাইকের গিয়ার বাড়িয়ে দিয়ে সবাইকে ছেড়ে আগে চলে গেল অনেক দুরে।


এবার তিতির বিশ্ময়ের সাথে বললো," আমরা যে ওনাদের ছেড়ে আসলাম মাহাদ?"

মাহাদ এবার বেশ জোড়েই বললো," সারপ্রাইজটা ওদের জন্য নয় তিতির, শুধু মাহাদের বউয়ের জন্য।"

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন