সাইকো ইজ ব্যাক - পর্ব ০৮ - সিজন ৩ - সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি - ধারাবাহিক গল্প


অতীত,

সেদিনের পর থেকেই ইউসুফের খেলার সাথী হয়ে উঠে কুহু।ইউসুফ কুহুকে তখন থেকেই বাবুইপাখি ডাকতো।কুহু নামটি কমি ইউস করতো। হয় বাবুইপাখি নয়তো কায়নাত ডাকত।।কিছুদিন ভাল কাঁটলে বিপত্তি ঘটল তখন যখন থেকে কুহুর স্কুলে ইউসুফ ভর্তি হলো।সে কারো সাথেই কুহুকে মিশতে দিত না।যা কুহুর মোটেও পছন্দ হচ্ছিল না।দেখা যায় যে কুহু তার সহপাঠীদের সাথে মাঠে খেলতে গেলে সেখানে হুট করেই এসে উপস্থিত হয় ইউসুফ।কুহু ইউসুফকে খেলতে বললে ইউসুফ না করে দেয়। আবার কুহুকেউ খেলতে দেয় না।সেখান থেকে টেনে নিয়ে আসে তাকে।আর কখনো ছেলের সাথে খেলতে দেখলে তো কথাই নেই।ছেলেটিকে মারে তো মারে সাথে কুহু চুল টেনে ধরতো।তাই কুহু ইউসুফের থেকে দূরত্ব রাখতে শুরু করে দেয়।তার উপর ধীরে ধীরে কুহুর পছন্দের জিনিসপত্র গুলো হাড়িয়ে যেত।হোক তার পছন্দের পেন্সিল, জামা, বই, পুতুল বা যে কোনো জিনিস।কিন্তু আশ্চর্য জনকভাবে কিছু দিন পর ঠিকি পেত তাও বিধ্বস্ত ভাবে।এইতো কিছুদিন আগেই কুহুর বাবা কুহুর জন্য খুব সুন্দর একটি পুতুল এনে দেয়। পুতুলটি কথা বলতো। কখনো করতো আবার কখনো কোমর দুলিয় নাচতো।এটি নিয়ে সারাদিন খেলতো কুহু।ঘুমতে গেলে সাথে করে নিয়ে ঘুমুতো আবার বাহিরে খেলতে গেলেও নিয়ে যেতো। যা মোটেও পছন্দ করতো না ইউসুফ। একদিন ঘুম থেকে উঠে পুতুলটি আর পেল না কুহু। সারা বাড়ি খুঁজে গিয়ে পেল বাগান সাইডে পুতুলটি আধপুরো অবস্থায়।।এসব খুব কান্না করতো কুহু সব সময়।

একদিন বিকেলে,,

ছোট ছোট পায় বাড়ি  উঠোনে একটি কুকুরের সাথে খেলচ্ছে কুহু।এদিক ওদিক ছুটচ্ছে আর হাসচ্ছে। কুহুর হাসিতে আলোকিত হচ্ছে যেন কুলসুমের বাড়ি।বাড়ির বারান্দার সিড়িতে বসে সুইটার বুনচ্ছে কুলসুম।আর নাতনীর কাণ্ড দেখে দেখে নিজেও হাসচ্ছেন।কিছু বছর আগ পর্যন্ত এই বাড়িটি ছিল নিরব নিস্তব্ধ।গেইট খুলার শব্দে সামনে তাকায় কুলসুম।তার সামনে হাসি মুখে দাড়ায় নাহার তার নাতি ইউসুফ। ইউনুফের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি কুহুর দিক।ইউসুফ এসেছে আর কুহু সেদিকে পাত্তা নেই সে ব্যস্ত সেই বিড়ালের দিক।তা যেন সহ্য করতে পারচ্ছে না ইউসুফ।

ইউসুফরা এসেছে আধঘন্টার উপর। একটি বার কুহু আসেনি তার কাছে।তার সাথে খেলতে। তার বন্ধু অন্য বন্ধুতেই ব্যস্ত। ভেবে রাগ হচ্ছে তার।তাই আর সইতে না পেরে নিজেই এগিয়ে গেল কুহুর কাছে।কুহু ইউসুফকে দেখে মিষ্টি হাসলো।ইউসুফ কিছু বলল না। কুহু আবার ব্যস্ত হয়ে উঠে তার খেলায়।ইউসুফ এবার কুহুর হাত চেপে ধরে বলে উঠে,,

---এবার আমার সাথে খেলবে চলো।

কুহু যেতে নারাজ। ইউসুফ জোড় নিয়ে যেতে চাইলে কুহু বলে উঠে,,

--আমি যাবো না তোমার সাথে। খেলছি এখন যাও তুমি।

এটি শুনে রেগে যায় ইউসুফ আর কুহুর হাত ধরে টেনে ধরে নিয়ে যেতে চায়। কিন্তু কুহু হাত ঝাড়া মেরে হাত সরিয়ে বলতে লাগে,,

---তুমি খুব পঁচা তোমার সাথে যাবো না। তুমি আমাকে কারো সাথে খেলতে দাও না। 

---আমি তোমার বন্ধু।  তুমি আমার সাথে খেলবে চলো।

--নাহ্ যাবো না আমি। যাবো না। তুমি আমার বন্ধু না।

এটা শুনে মাথা নিচু করে চলে যায় ইউসুফ। কিন্তু পরের দিন কুহুর খেলার সাথী কুকুরটি আর জীবিত ছিল না। কেউ তার মাথায় বড় ইট দিয়ে থেঁতলে দিছে।এটি দেখেই ছোট কুহু কান্না করতে করতে দু দিন পার করে। বাবা মা মন ভোলানোর জন্য এটা ওটা চেষ্টা করে কিন্তু ব্যর্থ।সেদিন ইউসুফ কুহুর জন্য অনেক গুলো চকলেট নিয়ে হাজির হয়। কুহু চকলেট পেয়ে খুশি হয়। এবং ওর সাথে আবার খেলতে লাগে।একদিন কুহুদের বাসায় নতুন ভাড়াটিয়া উঠে।তাদের দু ছেলে একজন ক্লাস ফাইভে পরে নানু বাড়িতে থেকে আরেক জন কুহুর সম বয়সি ছেলেটির নাম জুবায়েদ। কিছুদিনের মাঝে তার সাথে ভাল ভাব হযে উঠে তাদের। এর মাঝে স্কুল ছুটি থাকায় ইউসুফ তার বাবার কাছে চলে যায় ঘুরতে।১৫ দিন পর ফিরে এসে ইউসুফ স্তব্ধ। কুহু তাকে পাত্তাই দিচ্ছে না বলে।ইউসুফের এসব দেখে রেগে গিয়ে ছেলেটির গায়ে হাত তুলে।আর বলতে লাগে,,

---বাবুইপাখি আমার বন্ধু তোর না।

 ছোট কুহু কান্না করে দেয় এসব দেখে। মারামারির এক পর্যায় ইউসুফ জুবায়েদের মাথায় সে একি রকম করে ইট নিয়ে থেঁতলে দিতে থাকে।জুবায়েদ আর্তনাদ করে উঠে। ছেলেটি মাথায় দিয়ে গল গল করে রক্ত পরে পুরো মাঠ ভেসে উঠে। এদিকে তেমন কেউ না থাকায় কেউ শুনতে পাচ্ছে না।জুবায়েদ সেখানে কিছুক্ষণ দাপাদাপি করে চার হাত ছিড়িয়ে দিয়ে শান্ত হয়ে যায়।তাতেও যেন খেন্ত না ইউসুফ। জুবায়েদ হাত পা মারতে থাকে।   মাথা ফেটে ভিতর থেকে মগজ বের হয় আসতে লাগলো।কুহু ইউসুফের এই রূপ ভয়ানক রূপ আর জুবায়দ এই অবস্থায় দেখে সেখানেই জ্ঞান হাড়িয়ে ফেলে। তখন ছুটে আসে পাশের বাড়ির এক আঙ্কেল।তিনি মাঠের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন।কারো চিৎকারের শব্দে এদিকে ছুটে আসেন তিনি।ইউসুফ তখনো বিড়বিড় করে যাচ্ছে,,

---কুহু আমার বন্ধু।  আর কারো না। সে আমার বাবুইপাখি। সে আমার।

এমন পরিস্থিতি দেখে ডেকে আনে সবাইকে। সেই ছেলেটিকে হাসপাতালে নেয়া হয়।ইউসুফের দাদু এসব শুনে মাথায় হাত দিয়ে বসে, জুবায়েদের বাবা মা বলে গেছে,জুবায়েদের কিছু হলে জেলের ভাত খাওয়াবে তাকে।ইউসুফ তখনো বিড়বিড় করতে থাকে।এমন খবর শুনে ছুটে আসে ইউসুফের বাবা মা।আর এদিকে খবর আসে ছেলেটি মারা যায়।জুবায়েদের বাবা পুলিশ নিয়ে হাজির হয় তাদের বাড়ি। কিন্তু কাজ হয় না। ইউসুফের বাবা তখন বড় বিজনেসম্যান বলে সব সামলে নেয়। কিন্তু জুবায়াদের মা যাওয়ার আগে বলে যায় ইউসুফকে,,

--তুমি আমার ছেলেকে কেড়ে নিয়েছিস।আল্লাহ তোর থেকে যেন তোর সবচেয়ে প্রিয় জিনিস কেড়ে নেয়।তুই যেন প্রতিনিয়ত বেঁচে থেকে মরিস।

সেদিনের পর থেকে কুহু ইউসুফকে ভয় করতে শুরু করে। ইউসুফকে দেখলেই কুহু ভয়ে কুকরে যেত।আর এসব দেখে ইউসুফ আরো ভেঙ্গে পড়তে থাকে এবং ইউসুফের আচর-আচরণ হতে থাকে অ্যাব নরমাল এর মত। সারাদিন বিড়বিড় করতো। এসব দেখে ইউসুফ কে ভাল সাইকোলজিস্ট দেখানোর সিদ্ধান্ত নেন। এবং সেখানেই ধরা পড়ে ইউসুফ মানসিকভাবে আনস্টেবল...!তার চিকিৎসার প্রয়োজন। ডাক্তার আরো জানান,,

--আপনার ছেলে ছোট থেকেই একা থাকতো আপানাদের ছেড়ে।তাই তার মনের মাঝে ভয় কাজ করতো সবাই তাকে ছেড়ে চলে যায় এমন। তাই সবসময় একা থাকতো।আর সে মেয়েটি কি যেন নাম কুহু। হে ওই তার সাথে বন্ধুত্ব করে।কুহুকে নিয়েও ইউসুফের মনে ধরণা জম্ম নিতে থাকে কুহুকে কেউ নিয়ে যাবে তার থেকে। আর এই ভয়টাই ভয়ানক কাল হয়ে দাড়িয়েছে আপনার ছেলের জন্য।

 এটি শুনে ভারসাম্যহীন হয়ে যায় ইউসুফের বাবা-মা। না পেরে ভর্তি করতে হয় পাগলা গরদে। সেখানে গিয়েও অসুস্থ হতে থাকে ইউসুফ আরো দিন দিন। বার বার বিড় বিড় করতে লাগে সে তার বাবুইপাখির কাছে যাবে। এসব দেখে ডুকরে উঠতো ইউসুফের দাদু।এসব ঘটনা ময়মনসিংহ ছড়াতে বেশী সময় লাগেনি।এক কান দুকান হতে হতে ছড়িয়ে যায় এলাকা। সবাই খারপ চোখে দেখতে থাকে। খারাপ মিনে কথা বলতে থাকে।কুহুর ফ্যামিলিরাও দূরত্ব করে নেয় তাদের থেকে। কারন কুহু ইউসুফকে সহ্য করতে পারে না। ইউসুফকে দেখলেই কাঁপতে থাকে আর কান্না করতে করতে জ্ঞান হারায়।তাই না চাইতেও দূরত্ব থাকে তারা।এদিকে ইউসুফের হাল খারাপ হতে থাকে আর এলাকার মানুষের নানা কথায় তারা ইউসুফকে দেশে বাহিরে পাঠিয়ে দেয়।আর তারও ময়মনসিংহ ছেড়ে একে বারে চলে যান। কোথায় গেছে তা কেউ জানতো না তখন।

বর্তমান,

কথা গুলো বলে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়েন জবেদা।আরধন ও চুপ। বর্তমান সমাজে এমন অনেক ছেলে মেয়ে আছে ছোট থাকতে একা থাকতে হয় তাদের। কারো কারো এটি সয়ে গেলেও কিছু শিশু সেই একাকীত্ব কে ঘিরে হয় উঠে হিংস্র পশুর মত। যা একবার না একবার বের হয়ে আসে সবার সামনে।এরা আবার প্রচুর ভালবাসার পাগল থাকে। তাদের কাছে মনে হয় কেউ যদি তাদের একাকীত্ব দূর করে ভালোবাসতো,  আগলে রাখতো? তখন কেউ সামনে থেকে হাত বাড়ালে তারা সুখে সাগরে যেন ভেসে যায়। আর যখন তারা চলে যেতে নেয়? তখনি হয়ে উঠে ভয়ানক।
_________

খাটের কোন ঘেষে মাটিতে বসে আছে ইউসুফ।হাতে তার ছোট বেলার কুহুর ছবি।সেটাতে অসংখ্য চুমু খেতে ব্যস্ত ইউসুফ। চোখে তার পানি। বিড়বিড় করে বলছে সে,,

---বাবুইপাখি আম সরি। আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনি। আমিতো ভালবাসি তোমাকে। কিন্তু জানি না কেন নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারি না। কেন বুঝনা আমায় বাবুইপাখি আমি তোমায় ভালবাসি। আমাকে একটু ভালবাসা যায় না বাবুইপাখি? একটুও যায় না? আমি জানি আমি পাগল। খুব বড় পাগল।কিন্তু দেখ তুমাকে পেলে আমি ঠবক হয়ে যাবো একদম। প্লীজ চলে এসে আমার কাছে প্লীজ।

এসব বলে চিৎকার করতে লাগে ইউসুফ।কখনকি পাবে না বাবুইপাখির মনে একটু জায়গা? একটু কি পাবে না তার কোলে মাথা রাখতে? কখনো কি পারবেনা একটু ভালবাসতে??

যদি কিছু না হয়? না হবে! নিয়ে আসবে তার বাবুইপাখেকে তার কাছে।যদি এদের জন্য না পারে? তাহলে বাবুইপাকিকে নিয়ে পারি দিবে অন্য জগতে। মুছে দেব সব স্মৃতি। শুধু মনে থাকবে ইউসুফে কথা।

—————

পরন্ত বিকেলে জলন্ত সূর্য ঢলে পরেছে পশ্চিম আকাশে।চারিদিকে তার লাল হলুদ আভা ছড়িয়ে।হাসপাতালের কেবিনের এই পরন্ত বিকেল দেখে যাচ্ছে জানালায় ঠেস দিয়ে দাড়িয়ে কুহু।কি  অপরূপ সুন্দর সৃষ্টি আল্লাহুর।

তখনি কেবিনে প্রবেশ করেন জবেদা।মেয়েকে মন মরা দেখে বুকে চিন চিন করে ব্যথা অনুভব করে তার। ধীরে ধীরে  এগিয়ে গিয়ে মেয়ের কাঁধে হাত রেখে নরম সুরে বলে উঠে,,

--"কি ভাবচ্ছিস মা?এভাবে দাড়িয়ে আছিস কেন? ডাক্তার তোকে রেষ্ট করতে বলেছেন"

ছোট শ্বাস টেনে বাহিরের দিক চোখ রেখে বলে উঠে কুহু,

--"আর কত শুয়ে থাকবো ভাল লাগচ্ছে না একটুও শুতে।আর এখনেও ভালো লাগচ্ছে না মা। বাসায় যাবো।"

--আজ রাতটা কষ্ট কর মা। কাল সকালে এই হাসপাতাল কেন এই শহর ছেড়ে দূরে পারি জমাবি অন্য শহরে।

কুহু তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে উঠলো,,

--"মা আমাকে লুকাতে চাইচ্ছো? কতদিন লুকোচুরি খেলবো মা? আমি সত্যি ক্লান্ত মা।আর পারচ্ছি না সইতে।আমাকে মেরে ফেল মা।  আমাকে মের ফেল।(কান্না করে)

মেয়ের কান্না দেখে জবেদার চোখেও পানি চলে আসলো।সত্যিই তো ছোট থাকতে থেকে এখন পর্যন্ত কত কিছু দেখলো সে।মেয়েকে জড়িয়ে ধরে শান্তনা দিতে লাগেন জবেদা।

---"মা কান্না করিস না সব ঠিক হয়ে যাবে। এবার আর ওই পাগলটা তোকে খুঁজে পাবে না।"
_______

---" পাপা আমি তোমার কথায় যাচ্ছি ঠিকি। দু দিন পর দাদুকে নিয়ে চলে আসবো।আর আমার বাবুইপাখি তুমি আমার করে দিবে।নয়তো আমি কাউকে শান্তিতে থাকতে দেব না।"

ছেলের কথা শুকনো ঢুক গিল্লেন তিনি।মুখে জোড় পূর্বক হাসির রেখা টেনে বলে উঠলেন,,

---হে...হে বাবা আমি সব ব্যবস্থা করে রাখবো।

বেড়িয়ে গেল ইউসুফ।তার পিছনে ইউসুফের দাদু যেতে যেতে বললেন,,

---"যা করছিস ভাল করছিস না খোকা। তোর ছেলের এক চিলতে হাসির জায়গাটাও দূর করে দিচ্ছিস। যখন এসব জানবে,  না জানি কোন ঝড় উঠে"

বেড়িয়ে গেলেন তিনিও।এইদিকে মাথা নত করে ছোট শ্বাস নিয়ে বিড়বিড় করে বলে উঠেন ফয়সাল,

--"মা নিজের সন্তানের খুশির জন্য অন্য কারো সন্তানের সাথে এমন অযাচিত কাজ করতে কিভাবে পারি? তার উপর আমি ওয়াদা বদ্ধ।"
_________

৬ মাস পর......!

ভার্সিটিতে পরীক্ষা শেষ হলো কুহুর মাত্রই।হল থেকে বের হয়ে বটতলায় এসে বসে সে। কিছুক্ষণ পর একটি মেয়ে এসে পাশে বসে বলে উঠলো,,

---" এত জলধি কিভাবে পারলি শেষ করতে?  আমার তো শর্ট কোশ্চেন দুটো মিস গেল। আল্লাহ জানে পাশ করবো কি না...!(কাঁদ কাঁদ ফেস করে)

--আরে করবি করবি আমি জানি আমার স্বর্ণ খাটি স্বর্ণ। একদম খাটি তাই স্যারও চিনবে।আর তোকে পাশ কেন ফার্স্ট ক্লাস করে দিবে।(মিটমিটিয়ে হেসে)

---"মজা নিচ্ছিস না হুহ।  আমার সাথে এমন করিস তুই সব সময়। যা কথা বলব না তোর সাথে।"(মুখ ফুলিয়ে) 

--"ঠিক আছে বাবা সরি।আর কেন করিস এই যে দেখ কানে ধরে সরি"(বাচ্চাদের মতো ফেইস করে)

কুহুুর এমন কাজে হেসে দেয় স্বর্ণা।সাথে কুহু ও।তাদের বন্ডিংটা খুব ভাল দেখে মনে হয় না জানি কত বছরের পরিচিত তারা।এইতো ছয় মাস আগেই রাজশাহীতে দূর সম্পর্কে মামার বাসায় উঠে কুহু।পরের দিন ভার্সিটিতে পা রাখতেই স্বর্ণা সাথে পরিচিত হয়ে ছিল কুহু। আর কতটা ক্লোজড তারা এখন। দিন গুলো খুব শান্তিতে কাটছে তার।এখনে আসার আগে কত কিছু ভেবেছিল সে...কিভাবে থাকবে এখানে? কেমন ভাবে কাটবে তার দিন কাল? অথচ স্বর্ণার সাথে দেখা হওয়ার পর থেকে সব চিন্তা দূর হয়ে গেল তার।শরীরে ঝাঁকুনী পেয়ে ভাবনা থেকে বের হয়ে আসে কুহু।

---"কি করে? কই হাড়াইলি? কতখন ধরে ডাকতাসি?(ভ্রু কুচকে)

---" হুম! নাহ্ মানে তেমন কিছু না। তুই বল কি বলবি?"

---"তুই থাইকা থাইকা কই হারায়া যাস বুঝি না। আচ্ছা শোন শুক্রবার ভাইয়ার বিয়ে তোর কিন্তু যেতেই হবে! নয়তো আড়ি অাড়ি তোর শ্বশুর বাড়ি করে দিব হুহ! 

কুহু হেসে দিল আর বলল,,

--- আচ্ছা যাবো।
_________

অন্ধকার ঘরে খাটের সাথে ঠেস দিয়ে বসে আছে ইউসুফ।মাথাটা খাটের সাথে হেলানো। আর বিড় বিড় করে বলচ্ছে,,

----বাবুইপাখি কোথায় তুমি?আমার জন্য এত টুকুও কষ্ট হয় না তোমার? জানো কতটা দিন যে তোমার মুখ খানি দেখতে পাই না? আমি কি এতোই খারাপ? আমাকে ছেড়ে কেন তুমি দূরে চলে গেলে??চলে আসো না প্লীজ সত্যি বলছি, আর কষ্ট দিবো না। বুকের মাঝে আগলে রাখবো তোমারে। প্লীজ কাম ব্যাক বাবুইপাখি। বলতে বলতে সেখানেই ঘুমিয়ে পরে ইউসুফ।।।

আজ ছয়মাস জাবত কুহুকে পাগলের  খুঁজে চলেছে ইউসুফ। কিন্তু পায়নি।এদিকে ফয়সালের সাথে রাগ করে বাড়ি ছেড়ে দেয় ইউসুফ। দিনে তিন থেকে চারবার শাসিয়ে আসে  কুহুর পরিবারকে কেউ মুখ খুলতে রাজি না। 

কি করবে ভেবে পাচ্ছে না ইউসুফ।তার যেন মনে হচ্ছে তার কাছ থেকে প্রাণটাই কেউ নিয়ে গেছে।

সকালের কড়া রোদের আলো চোখ পড়তেই ঘুম ভাঙ্গে ইউসুফের। উঠে রেডি হয়ে যায় ভার্সিটির দিক।ইউসুফদের মাস্টার্স ফাইনাল পরীক্ষা চলচ্ছে।পরিক্ষা শেষে হল থেকে বের হতেই আদিব বলল,,

--দোস্ত ওটা তানিয়া না?

ইউসুফ ভ্রু কুচকে মাথা নাড়িয়ে বলে উঠে,,

---"হুম ধরে আনতো ওরে! এতদিন তো ওর ছায়াটাও দেখি নাই। আজ হুট করে কোথা থেকে এলো? আর ওর সাথে নিশ্চিত কথায় হয় কুহুর। আম ডেম সিউর ও সব জানে!"

একটি খালি রুমে বেঞ্চির উপর হকি স্টিক নিয়ে বসে আসে ইউসুফ। বার বার স্টিক দিয়ে বেঞ্চিতে বাড়ি দিচ্ছে হালকা।যা দেখব কেঁপে উঠচ্ছে তানিয়া। ভয়ে তার অন্তরআত্মা যায় যায়। সে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল,,

--"ভভভাইয়া অঅঅঅামি কককি করেছি? আআমাকে এখানে বেধে রাখচ্ছেন কেন?

--"তোমাকে মারবো বলে। মেরে একে বারে গুম করে দিবো। লাশটাও কে খুঁজে পাবে না! কেমন হবে বলতো? কাল সকালের খবরের কাগজের বড় বড় গোটা গোটা অক্ষরে লিখা হবে।যে "তানিয়ে নামের মেয়েটি হঠাৎ করেই গুম হয়ে গেছে।।সে কোথায় গেছে কেও জানে না।" কেমন হবে? তানিয়া..! (ভাবলেশহীন ভাবে)

তানিয়ে অবাক হয়ে চোখ বড় বড় ততাকিয়ে বলল,,

---কি বলছেন এসব? আআআমি কি করছি? প্লীজ আমাকে মারবেন না। আমি মরণকে অনেক ভয় পাই। প্লীজ প্লীজ। লাষ্ট কথা গুলো কান্না করতে করতে বলল।

--"তানিয়া কান্না করে লাভ নেই। আমি ডিসিশন নিয়ে ফেলছি। তোমাকে মেরে নদীতে ফেলে দিব। সেখানে জানতো শত শত রাক্ষস মাছ আছে। যা এক মূহুর্তেই তোমার শরীরে মাংস খেয়ে ফেলবে। হাড্ডি পাওয়া যাবে নাকি সন্দেহ! আমি শুনেছি নদীর মাছ গুলো মেয়ের মাংস খুব পছন্দ করে। আজ তো পার্টি করবে তারা....!"

এবার তানিয়া জোরে কেঁদে দিয়ে ইউসুফের পা জড়িয়ে বসে পড়লো। আর কান্না কান্না করতে করতেই বলল,,

---ভাইয়া আপনার পায়ে পড়ি প্লীজ মারবেন না আমায়। আমাকে ছেড়ে দিন।।

তানিয়ের কান্ডে বাঁকা হাসলো ইউসুফ।তারপর গম্ভীর সুরে বলে উঠলো,,

---এক শর্ত তানিয়া।

তানিয়ে চোখ মুছে উঠে দাড়িয়ে বলে উঠে,,

-- বলুন ভাইয়া।

---কুহু কই?

---ভাইয়া আমি জানি না।(কাচুমাচু হয়ে)

---মিথ্যে  বলচ্ছো? মনে রেখ নদীর মাছ তোমার জন্য ওয়েট করচ্ছে।

তানিয়ে ঢুক গিলে বলল,,

--সত্যি বলচ্ছি ভাইয়া আমি জানি না।

--নাহ্ বুঝে গেছি তুমি ভাল কথার মানুষ নই!বলে
তানিয়ের হাতে টান দিয়ে বলল,,চল মাছের খাবার হিসেবে দিয়ে আসি তোমাকে"

তানিয়ে এবার ঘাবড়ে পিছিয়ে যায় হাত ছাড়িয়ে আর বলে উঠে,,

---ভাইয়া আমি সত্যি বলচ্ছি জানি না কুহু কই।শুধু আমাকে বলেছিল ওই তার মামার বাড়ি গেছে। সত্যি বলছি ভাইয়।(কাঁদ কাঁদ ভাবে)

ইউসুফ ছোট নিশ্বাস ছাড়লো। সে বুঝতে পারছে এত ভয় দেখানোর পর তানিয়ে মিথ্যে বলবে না। কিন্তু ইউসুফতো কুহুর সব রিলেটিভদের বাসায় ছোঁজ করেছে পায়নি তো সে।তাহলে কোথায় লুকিয়ে রেখেছে তার বাবুইপাখিকে তারা?? কোথায়??

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন