অচেনা অতিথি - অন্তিম পর্ব ৫৫ - নাফিসা মুনতাহা পরী - ধারাবাহিক গল্প


মাহাদের নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। এই তিন বছরে মাহাদ তিতিরকে এতটা কাছে পায়নি। সাথে সাথে মাহাদের বুকের ভিতর ঢিপ ঢিপ করতে লাগলো।  অপত্যাশিত পাওয়া যাকে বলে। 

"বাবা কিছু বলবেন?"

তিতিরের এই বাবা ডাক শোনার জন্য আলীম সাহেব সব কিছু করতে পারে। আলীম সাহেব একটা পৈশাচিক হাঁসি দিয়ে মাহাদের দিকে তাকালো। 

মাহাদ সাথে সাথে রুম থেকে বের হয়ে গেল। তারপর আসমাকে গিয়ে বলল," আসমা, ড. আলীম ও তার স্ত্রী তোমার আসল বাবা- মা। তিতিরের সমস্ত দায়িত্ব থেকে তোমাকে মুক্তি দিচ্ছি। বিয়ে করেছ, এখন সুখে শান্তিতে সংসার করো এটাই আমার দোয়া তোমাদের জন্য।"

জ্বী ভাইজান, কাল সব শুনেছি। আপনি আপাকে নিয়ে যাবেন না?

নাহ্, ওর যেদিন ইচ্ছা হবে সেদিন ওকে নিতে আসবো। তার আগে আমি আর আসছিনা। মাহাদ চলে আসার সময় সাদকে বুকে নিয়ে অনেকক্ষন ধরে আদর করলো। গোলাব পিছু পিছু আসতেই মাহাদ নিষেধ করলো। মাকে দেখিস গোলাব। ও এখন থেকে আরো অসহায়। মাহাদ গাড়ী নিয়ে চলে গেল।

তিনদিন পরে,
তিতিরকে রেডী হতে বলল মিসেস আলীম। এই তিনদিনে তিতিরের উপর তাদের ভালোবাসা কিছুটা কমে গেছে আসমাকে পেয়ে। শুধু মাহাদের ক্ষতি করার জন্য আলীম সাহেব চিরদিনের জন্য তিতিরকে এখান থেকে নিয়ে যাচ্ছে।

সাদ সকাল থেকেই তিতিরকে বলছে," মা, বাবা যাব।"

এই কথাটা শুনে আলীম সাহেব এসে সাদকে একটা ঠাশশশ্ করে চড় মারলেন। সাদ একদম চুপচাপ হয়ে তিতিরের কোলের মধ্যে ঢুকে পড়ল। মায়ের কোলের ভিতর নিঃশব্দে ফিকরে কেঁদে উঠলো সাদ। চোখ দিয়ে ফোটা ফোটা অশ্রু ঝড়ে পরছে।

সাদকে দেখেই এখন মাহাদের কথা মনে পড়ছে আলীম সাহেবের। আগে কিছু হতনা কিন্তু মাহাদকে দেখার পর থেকেই ওর ভিতরের আগুন জ্বলে উঠেছে। এখন তিতির আর ওর সন্তানকে দেখতে মন চাচ্ছেনা।

তিতির কিছু বলছেনা। চুপ করে শুধু ধৈর্য্য ধরে আছে কোন এক নতুন ভোরের অপেক্ষায়।

আসমা সব কিছু দেখেও চুপ করে আছে কিন্তু ওয়াহিদ এর কঠোর প্রতিবাদ করলো। স্যার, আপনি এত খারাপ ব্যবহার কি করে করতে পারলেন সাদের সাথে। শুধু মাত্র মাহাদের উপর রাগ করে এত কিছু করছেন? যে মাহাদ আপনার নিজের মেয়ের জন্য এত কিছু করলো তবুও আপনি এতটা নিষ্ঠুর হন কিভাবে। আমার বলতে খারাপ লাগছে তবুও বলছি, মাহাদ ছাড়া আপনার মেয়ে আসমা আজ পতিতাবৃত্তি করে জিবন কাটাতো। এত এত এত কিছু করেও আজ আপনি আপনার মেয়ের ভূলের জন্য মাহাদকে কেন শাস্তি দিচ্ছেন? সয়ং আল্লাহ্ আপনার মেয়েকে ক্ষমা করবেনা সেখানে আপনি কিভাবে রিয়ার পক্ষ নিয়ে মাহাদকে কষ্ট দিচ্ছেন। কেন তার সন্তানের গায়ে হাত তুললেন? আপনার আসল রুপ তাহলে আজ দেখিয়েই দিলেন! আপনি জানতেন এ মাহাদের স্ত্রী তাই একে ব্যবহার করতেই আপনি তাকে সুস্থ করে তুলেছেন তাইনা? আপনার প্লান আমি বেশ ভালো করেই বুঝে গেছি।
আসমা এখুনি রেডী হও। এখানে আর একমুহুত্বও নয়। এরা কারো পিতা-মাতা হওয়ার যোগ্যই নয়। 

আসমা এর মধ্য ফোন করে মাহাদকে আসতে বলেছে। আসমা তিতিরকে চটজলদি বোরখা পড়িয়ে দিতে সাহার্য্য করলো।

"আসমা আমরা কই যাচ্ছি? আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো তুমি?"

আসমা এবার কেঁদে উঠে বলল," আপা, যেখানে গেলে আপনাকে কেউ ভুলে ফুলের টোকাও দিতে সাহস পাবেনা সেখানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।"

" আমি মাহাদের কাছে ফিরবোনা আসমা। আমি মরে গেলেও ফিরবোনা আসমা। সাদকে ওনার কাছে রেখে আসো। এই একটাই আমার হয়ে শেষ কাজ করো আসমা। সারা জিবন কৃতঙ্গ থাকবো আসমা।"

" আপা, কেন একটা জেদ ধরে বসে আছেন? এত কিছু হয়ে যাচ্ছে তবুও চুপচাপ এভাবেই সহ্য করে যাবেন? ভাইজান কি এমন করেছেন যার জন্য আপনি দিনের পর দিন ভাইজানকে কষ্ট দিয়েই চলছেন।"

" আসমা আমি যা জানি তুমি তা জানোনা। তাই কথা বাড়িওনা।"

" আমি সেই কথাটাই জানতে চাচ্ছি আপা।"

" স্বামী-স্ত্রীর মাঝের কোন কথা বাহিরে প্রকাশ করতে নাই আসমা। আমাকে আর কিছু বলোনা।"

♦♦♦♦

মাহাদ বাসায় এসেছে। ওয়াহিদ মাহাদের পাশে দাড়িয়ে আছে। আলীম সাহেব কিছুতেই রাজি নয় তিকিরকে মাহাদের কাছে দিতে। আলীম সাহেবের সাথে মাহাদের কথা কাটাকাটি হয়। আলীম সাহেব শেষে তিতিরকে জোড়ে জোড়ে ডাকতে লাগলো।

আসমা তিতিরকে রেডী করতেই তিতির হাতরে হাতরে ওর ওয়্যারড্রপ থেকে একটা মিনি ব্যাগ নিল। এদিকে আলীম সাহেব তিতিরকে ডেকেই চলছে। আসমা তিতিরকে নিচে নিয়ে আসল।

"মাহাদ চুপ করে দাড়িয়ে আছে।"

"তিতির তুমি কি মাহাদের কাছে ফিরতে চাও! কথাটি আলীম সাহেব বলতেই মাহাদ খুব জোড়ে ধমক দিয়ে বলে উঠলো,,,,, এই চুপপপপপপ.....
মাহাদের এমন ধমকে মিসেস আলীম সহ তিতির পর্যন্ত কেঁপে উঠলো।

আমি বলিনি আমাকে ক্ষেপিয়ে তুলবেন না! এর ফলাফল খুব খারাপ হবে। শুনলেন না তো? এখন দেখেন আমি কি করতে পারি বলে মাহাদ তিতিরের হাত ধরে জোড়ে সাদকে ডাকলো।

তিতির মাহাদের থেকে নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। আমাকে ছাড়ুন, আপনার সাথে আমি যাবোনা। 

বাবা বলে সাদ দৌড়ে মাহাদের কাছে আসতেই তিতির অপরাধীর মত চুপ করে গেল। সাদের গালে ৫ আঙ্গুলের দাগ দেখে মাহাদের বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো। যেই সন্তানের জন্য মাহাদ ওর কলিজা পর্যন্ত ছিড়ে দিতে পারবে সেই বাচ্চার গালে ৫ আঙ্গুলের দাগ! মাহাদ এটা কি করে সইবে? তিতিরের উপর ওর রাগটা চরম পর্যায়ে উঠে গেল। 
মাহাদ সাদকে কোলে নিয়েই কয়েকটা চুমু খেতেই সাদ আহ্ বলে উঠলো। সাদের গাল এখনো ব্যাথা করছে। 
আসমা সাদকে নিয়ে এখান থেকে যাও বলে মাহাদ আসমার কোলে সাদকে দিল। আসমা ভয় পেয়ে গেল। এবার ভুমিকম্প হতে আর দেরী নাই। আসমা মাহাদের এই স্বভাবকে প্রচন্ড ভয় পায়। আসমা সাথে সাথে  সাদকে নিয়ে বাহিরে চলে গেল।

সাদ চলে যেতেই মাহাদ আগে তিতিরকে স্বশব্দে একটা চড় মেরে বলল," আমাকে আর কত অত্যাচার করবে তুমি! তোমার কি একটুও দয়া হয়না আমার উপর?"

তিতির কোন কথা না বলেই চুপ করে দাড়িয়ে রইল। তিতির কাঁপছে আর সেটা দেখে আলীম সাহেবের খারাপ লাগলো। মাহাদ তুমি কাজটা ঠিক করছোনা। তুমি সাদকে নিয়ে চলেই যাও।

চুপপপপ, আর একটা কথাও আপনার মুখ থেকে আমি শুনতে চাইনা। আপনি যদি আমার একদিনের ছোট হতেন তাহলে আপনাকে আমি চড়েই সোজা করতাম। আর একবার যদি দেখছি আপনি একটা কথাও বলেছেন তাহলে আমি ভুলে যাব আপনি আমার বয়সের বড়। নিজের চরকায় তেল দিন বলেই তিতিরকে নিয়ে বের হয়ে আসল মাহাদ।

তবে গোলাব একটা কাজ করলো। যেটা কেউ করতে পারলনা সেটা ও করে দেখাল। ও যাওয়ার আগে আলীম সাহেবের চোখের সামনে প্রসাব করে চলে আসল। আর বুঝিয়ে দিল, "ধর্মের কল বাতাসেও নড়ে।"

♦♦♦♦

বাহিরে আসমা সাদকে কোলে নিয়ে দাড়িয়ে আছে। মাহাদ এসে সাদকে কোলে নিয়ে আসমাকে বলল," আসমা তুমি সুখে থেক। সব থেকে তোমার অবদান বেশি আমার স্ত্রী-সন্তানদের নিরাপদে রাখার জন্য। আমি সত্যি তোমার উপর খুব খুশি। এর বিনিময়ে আল্লাহ্ সুবহানাতালা তোমাকে ইহকালে ও পরকালে উত্তম প্রতিদান উপহার যেন দেন।"
আমীন....

ভাইজান, আমার জিবন আজ পরিপূর্ন। আপনার মত মানুষকে খুশি করতে পেরেছি। আর কিছু চাইনা ভাইজান বলে কেঁদে উঠলো আসমা।

ওয়াহিদ কে নিয়ে আমাদের বাসায় এসো আসমা। কথাগুলো বলে মাহাদ সাদ আর তিতিরকে নিয়ে ওর ফ্লাটের উদ্দেশ্য রওনা দিল।

মাহাদরা চলে যেতেই আলীম সাহেব চিৎকার করতে করতে বাহিরে এসে আসমাকে বলল," তুমি জানো, ফুয়াদের জন্য আমার মেয়ে সুইসাইড করছে? তার ব্যবস্থা মাহাদ করে দিয়েছে।"

রিয়া আপু সুইসাইড করেছে তার জন্য সয়ং আল্লাহ্ তাকে ক্ষমা করবেনা আর আপনি তার হয়ে সাফাই গাইছেন? মাহাদ ভাইজান কি সেটা আমার থেকে আপনি ভালো জানেননা। ঐ মানুষটা যদি সারাজিবন আমায় আপার দাসী করে রাখতো তাহলেও আমি আলহামদুলিল্লাহ্ বলে কবুল করে নিতাম। তাদের মত মানুষ হয়না। আপনি বাবা হওয়ার যোগ্যতায় রাখেন না। আপনার আরো শাস্তি হওয়া উচিত। হারানো জিনিস পেয়ে মানুষ খুশি হয় কিন্তু আমি দেখছি আপনি মোটেও খুশি হয়নি। আপনি আরো হিংসা বশীভূত হয়ে অনিষ্ট করেই চলছে। আপনার থেকে তো আমি ঐ চোর বাপ মার কাছে ভালো শিক্ষা পেয়েছি। ওয়াহিদ চলেন, এখানে আর একমুহুত্বও নয়। 
আসমা ওয়াহিদকে নিয়ে তখনই বাসা থেকে বের হয়ে যায়।

♦♦♦♦

মাহাদ বাসায় এসে গাড়ী থেকে নেমে সাদকে নিয়ে ভিতরে গিয়ে কাজের মেয়েকে বলল," গাড়ীতে ম্যাডাম বসে আছে। তাকে আমার রুমে নিয়ে আসো।"

মাহাদ ওর রুমে এসে আগে সাদের গালে জেল লাগাতেই উহু বলে সাদ নিঃশব্দে কাঁদতে লাগলো। 

" এইতো বাবা হয়ে গেছে, নানু বুঝতে পারেনি তোমার এতটা লাগবে। নানু তোমার গালে ভূল করে হাত তুলেছে বাবা বলে মাহাদ সাদের গালে ফু দিতে লাগলো।"

" সাদ ওর বাবাকে চিপে ধরে অঝোরে কাঁদতে লাগলো।"

" তুমি অনেক ভালো ছেলে বাবা। এতটুকু আঘাতে কাঁদতে নেই। তোমার গোলাব ভাইয়াতো তোমাকে দেখে হাসবে।"

সাদ তবুও ফিকরে কাঁদছে। মাহাদ ওর পোষাক বদলিয়ে ওকে গোসল করে নিয়ে এসে কাপড় পড়িয়ে দিয়ে নিচে ডাইনিং রুমে এল। তারপর ওকে খাবার খাইয়ে দিয়ে বুকে নিয়ে রুমে গেল। তারপর ওকে ঘুমিয়ে দিয়ে তিতিরে দিকে চাইল।

তিতির বোরখা পড়া অবস্থায় বসে আছে। মাহাদ গিয়ে তিতিরের গায়ে হাত দিতেই তিতির রাগে ওর হাতটা ঝিটকে ফেলে দিল।
আমাকে একদম স্পর্শ করবেন না। আমার কাছ থেকে ১০ হাত দুরে দুরে থাকবেন বলে নিজেই টেনে টেনে হিজাব আর বোরখা খুলতে লাগলো আর কাঁদতে লাগলো।

"কেনো আমার সাথে এমন করছো! আমার অপরাধ কী?"

" আপনার সাথে কথা বলতে আমার রুচিতে বাঁধছে, আপনি আমার সামনে থেকে চলে যান।" 

" কি হয়েছে বলবে তো!"

" আমি বলছিনা আপনি আমার চোখের সামনে থেকে চলে যান। এক কথা কতবার বলতে হয়?"

" আমার সাথে যা করছো করো কিন্তু আমার ফ্যামিলির সামনে এমন সিনক্রিয়েট করতে যেন না দেখি। কাল সবাই আসছে এখানে তাই কোন খারাপ আচরন করা যেন না দেখি। মাহাদ আলমারি থেকে কিছু কাপড় এনে তিতিরের হাতে দিল। ড্রেস চেঞ্জ করো।"

তিতির ওর বোরখা ছুড়ে মারল কিন্তু ভাগ্য ক্রমে সেগুলো মাহাদের চোখে মুখে গিয়ে পড়ল।

মাহাদ আর কিছু না বলে বোরখা ওয়াসরুমে রেখে এসে রুম থেকে  বের হয়ে গেল। ওর অত্যাচার তাও সহ্য করা যাবে কিন্তু ওকে দুরে রেখে মাহাদ কিছুতেই থাকতে পারবেনা।

তিতির আর পুরোদিনেও রুম থেকে বের হলোনা। এমনকি রাতের খাবারও খেলনা। সাদকে মাহাদ রাতে খাওয়ানোর চেষ্টা করলো কিন্তু ও মায়ের দুধ খাবে। শেষে মাহাদ তিতিরের কাছে নিয়ে গিয়ে তিতিরকে ডাকল। কিন্তু তিতির কথা বলল না। মাহাদ সাদকে নিচে নেমে দিতেই সাদ অন্যদিকে দৌড় দিয়ে চলে গেল। 

মাহাদ রেগে গিয়ে সোজা তিতিরের কাছে এসে ওর বুকে হাত দিয়ে ব্লাউজের বোতামে হাত দিতেই তিতির মাহাদে হাত ঝিটকানি মেরে ফেলে দিয়ে বলল," কি অসভ্যতামি শুরু করেছেন ছেলের সামনে?"

" ছেলের কান্না কি তোমার কানে যায়না?"

" ওর ব্যবস্থা ও নিজে করবে বলতেই সাদ তিতিরের ওড়নাটা এনে বলল," মা দুদু খাবো।"

তিতির ওকে কাছে টেনে নিয়ে বলল," বাবা আমি তো কাপড়টা ঐ বাসায় ফেলে রেখে এসেছি।"

" সাদ আবার ছুটাছুটি করতে লাগলো অন্য কাপড় খুঁজতে।"

" সাদ এটা দিয়েই হবে। এখানে আসো আমার বাবা!"

মাহাদ কপালে চোখ তুলে এদের মা ছেলের কান্ডগুলো দেখতে লাগলো। তিতির আলতো করে সাদের চোখটা বেঁধে দিয়েই সাদকে দুধ পান করাতে লাগল।

বাহ্ দারুন বুদ্ধি, আমার জিনিসগুলো দেখছি ভালয় হেফাযতে রেখেছ বলেই হাঁসতে হাঁসতে মাহাদ রুম থেকে চলে গেল।

♦♦♦♦

পরেরদিন শুক্রুবারে যথারীতি কামরান সাহেব, লাবীবা, নিসা, ফুয়াদ ও তাদের মেয়েরা নিধি আর ফিহা, রুপালী, বাতাসী, আর রাতিশা আসলো। শুধু মৌ আসতে পারলোনা। ও রেজওয়ানের কাছে আছে।

সবাই তিতিরকে দেখলো কিন্তু সাথে সাদকে দেখে চমকে উঠলো। তিতির একটা মোটা পাড়ের বেগুনী সুতি শাড়ী পড়ে মাথায়  ঘম্টা টেনে সাদকে কোলে নিয়ে বসে আছে।

"মাহাদ ও কে?"

"বাবা দাদুকে তোমার পরিচয় দাও!"

মায়ের কথা শুনে সাদ ভুবনজয়ী একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে সবার উদ্দেশ্য সালাম দিয়ে বলল," আমার নাম দেওয়ান মো. তৈমুর আহনাফ সাদ।"

সবার আগে বাতাসিই বলে ফেলল," আমাগো বংশের বাতি। এই এক্কানই আমাগো বংশের বাতি কামু।"
বাতাসি হঠাৎ চোখ উল্টায় কইলো," মাহাদ এডা সত্যেই তোর পোলা তো! না অন্য কারো? "

মাহাদের আগে এবার তিতিরই ক্ষেপে গেল বাতাসির কথায়। চোখ ভরে জল আসল তিতিরের। তিতির সাথে সাথে চোখের পানি মুছে কড়া ভাষায় বাতাসিকে জবাব দিল, ও আমার আর মাহাদের সন্তান। ওর নাম সাদ ইবনে মাহাদ।

তিতিরের এমন কথা নিসার মোটেও ভালো লাগলোনা। এক দৃষ্টিতে তিতিরের দিকে চেয়ে রইল। বাচ্চা জন্ম দিয়ে দেখছি তেজ বেড়ে গেছে।

কামরান সাহেব সাদকে কোলে তুলে বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে বলল," সাদ বলতো আমি তোমার কে হই!"

" দাদু।"

সবাই খাবার বসেছে আর তিতির দুরে সোফায় বসে আছে। তিতিরকে সবাই খেতে বলেছে কিন্তু তিতির আসতে চাইছিলনা। কামরান সাহেব ওকে জোড় করে নিজের কাছে বসিয়ে বলল," মা আমি কিন্তু কাল তোমায় নিতে আসবো।"

তিতির মাথা নিচু করে বসে থেকেই ঘাড় নাড়িয়ে গেল। সবাই খেতে বসেছে। মাহাদ আর ওর কাজের দুটা ছেলে মিলে খাবার সার্ভ করছে। বাতাসি সবার মাঝে বলেই ফেলল," তুই কি কামের মানুষ হইছোস! বৌ তো ঠাং মেলায় ভাত গিলছে আর তুই কাজ করছোস?"

" বাতাসির এমন কথায় তিতিরের গলায় খাবার আটকে গেল। তিতির এদের জিবনে ফিরতে চায়নি কিন্তু সেই জায়গায় তাকে আসতে হল।"

" আম্মাজান কি বলেন এসব! আপনার মুখে দেখছি কিছুই আটকায়না।"(কামরান)

মাহাদ আজ কিছু বলছেনা। গুম মেরে সব কাজ করে যাচ্ছে নিজ হাতে। 

নিসা বাতাসির শত্রু তবুও আজ বাতাসির এমন মন্তব্যতে খুব খুশি হল। লাবীবা বা রুপালীও কিছু বলল না। এদের মনে হচ্ছে মাহাদের বৌ সন্তান জন্ম দিছে ফুরে গেছে। এখন ওকে আর দরকার নাই। সাদ আর মাহাদ হলেই ওদের জন্য যথেষ্ঠ।

সবাই খাবার শেষ করে আরো আড্ডা দিয়ে বিকেলের দিকে চলে গেল। তিতির মাহাদের সাথে আর কথা বলছেনা। রুমের ভিতর দরজা লাগিয়ে দিয়ে অনেকক্ষন ধরে কাঁদল।

মাহাদ সব বুঝতে পেরে ওর বাবাকে কল দিয়ে বলল," বাবা আমার কিছু কাজ আছে। তিনদিন পর তিতিরকে নিতে এখানে আসেন।"

মাহাদ আর তিতিরকে ডিষ্ট্রাব না করে সাদকে নিয়ে অন্যরুমে ঘুমাতে গেল।

পরেরদিন মাহাদ অনেক চেষ্টা করলো তিতিরের সাথে কথা বলতে কিন্তু তিতির কিছুতেই কথা বললনা মাহাদের সাথে। এটা মাহাদের জন্য অন্যরকম যন্ত্রনা। মাহাদ বিকেলে বাসা হতে বের হয়ে গেল। তার কিছুক্ষন পর আবার ফিরে আসলো। রাতে সবাই একসাথেই খেল। মাহাদ সাদকে নিয়ে অন্যরুমে ঘুমাতে চলে গেল।

তিতির বিছানায় সুয়ে পড়তেই ঘুম চলে আসলো। তিতির ঘুমানোর আধাঘন্টা পড়ে মাহাদ রুমে চলে আসলো। নিজের বউ তবুও কাছে যেতে পারিনা। টার্চই করতে দেয়না। এতবড় স্বামী টর্চার মাহাদ তো মেনে নিতে পারেনা। দেখি কতদিন রাগ করে থাকতে পারে আমার উপর সেটা আমিও দেখে ছাড়বো।

মাহাদ তিতিরের পাশে বসে ওর গাল ছুয়ে দিল। কড়া ঘুমের মেডিসিন দিয়েছে খাবারের সাথে। এত জলদি ঘুম ভাঙ্গছেনা ওর। সেই সুবাদে মাহাদ তিতিরের পাশে সুয়ে তিতিরকে বুকের ভিতর নিল। কতদিন এই সময়টার জন্য মাহাদের বুক হাহাকার করে তার হিসাব নেই। আল্লাহ্ সুবহানাতালা কে অসংখ্য শুকরিয়া জানিয়ে মাহাদ তিতিরকে আলিঙ্গন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। তিতিরকে গভীর একটা কিস করতেই তিতির নড়ে উঠলো। মাহাদ তিতিরকে এভাবে পেয়ে পাগল হয়ে গেল। মাহাদের আলিঙ্গন গভীর থেকে গভীরতর হয়ে গেল। শব্দ করে একের পর এক কিস করতে লাগল তিতিরকে। ঘুমের মধ্যই তিতিরের পুরো শরীর কেঁপে উঠলো। তিতির আধো চোখ মেলে মাহাদের দিকে চেয়ে অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠল," কি করছেন আপনি? ছাড়ুন আমায়!"

মাহাদ তিতিরের কোন কথা শুনতেই নারাজ। এমন পর্যায়ে সে পৌছে গেছে সেখান থেকে তার ফেরা অসম্ভব। সে বহুদিনের তৃষ্ণার্ত। তার ভিতরের ক্ষুধার্ত মাহাদ জেগে উঠেছে। এই ক্ষুধা শুধু মাত্র তিতিরই মেটাতে পারে। আধা জাগ্রত তিতিরের ছটপটানি মাহাদকে আরো পাগল করে তুলে সর্বোচ্চ সীমানায় নিয়ে গেল। মাহাদ ওর হিতাহিত ভুলে গিয়ে তিতিরের উপর হামলে পড়ল। হাত দুটো শক্ত করে বিছানায় চেঁপে ধরে তিতিরকে বাধ্য করলো ওর সাথে মিলিত হতে। মাহাদ তিতিরকে পূর্ন করলো আর তিতির অজান্তেই মাহাদকে পূর্ন করলো।

ক্লান্ত মাহাদ তিতিরকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে ঘুমে দেশে হারিয়ে গেল। যখন চারদিকে ফযরের আযান দিল তখন মাহাদের ঘুম ভেঙ্গে গেল। মাহাদ উঠে সব কিছু পরিপাটি করে ফ্রেশ হয়ে নিজের রুমে চলে আসল। তারপর সাদকে তুলে অযু করে দিয়ে ওকে নিয়ে সালাত আদায় করল এবং সাদকে নিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়ল। যতদিন তিতির নিজ ইচ্ছায় ওর কাছে আসবেনা ততদিন মাহাদ একই কাজ করবে তিতিরের সাথে।

সকাল সাতটার দিকে সাদের ঘুম ভেঙ্গে গেলে মাহাদ উঠে সাদকে ফ্রেস করিয়ে দিয়ে ওকে নিয়ে তিতিরের রুমে গিয়ে দেখে তিতির এখনো ঘুমাচ্ছে। এবার মাহাদেরই খারাপ লাগলো। শুধু ওর জন্য তিতিরের নামাযগুলো কাযা হয়ে গেল। মাহাদ তিতিরকে কয়েকবার ডাকতেই তিতির জেগে উঠলো। শরীর দুর্বলের জন্য উঠতে পারছেনা। শরীর কাঁপছে।

মাহাদ শেষে ওকে ধরে ওয়াশরুমে নিয়ে গিয়ে ঝর্নার নিচে দাড় করিয়েই ঝর্না চালু করে বাহিরে চলে আসলো।

মাহাদ আপনি ঝর্না চালু করলেন কেন বলে তিতির চিৎকার দিল পিছন থেকে। মাহাদ শুনেও শুনলোনা। সাদকে নিয়ে নিচে গিয়ে নাস্তা করে গোলাবের সাথে ওকে খেলতে দিয়ে রুমে এসে ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়লো।

এমন সময় তিতির এসে দরজা বন্ধ করে দিয়ে চিৎকার দিয়ে বলল," রাতে আমার সাথে কি করেছেন?"

" তিতির আস্তে কথা বলো। কাজ করছি।"

" আমি জানতে চাচ্ছি রাতে আমার সাথে কি কুকর্ম  করেছেন?

" কি বলছো! কিসের কুকর্ম!  কই কিছু করিনি তো?"

" আপনি প্রচন্ড মিথ্যা কথা বলেন। আমার ভয় হয় এই স্বভাবটা না জানি সাদ পায়।"

" এবার মাহাদ ক্ষেপে গেল। বেড থেকে উঠেই তিতিরের কাছে গিয়ে এক টানে শাড়ীর আচলটা ওর বুক থেকে খুলেই বলল,"  কি করেছি আশা করি বুঝতে পেরেছ! এ নিয়ে আর একটা কথাও শুনতে চাইনা।"

তিতির ক্রোধে ফেটে পড়ল কিন্তু কিছু বলল না। সাথে সাথে রুম থেকে বের হয়ে এল। সামনে ফুলের টবের সাথে একবার ধাক্কাও খেল। কানা হয়েছি এখনতো যার তার সাথে ধাক্কা খাবোই।

♦♦♦

কামরান সাহেব বেলা ১২টার সময় বাসায় আসল। মাহাদের কথা না শুনে আগেই চলে এসেছেন তিনি।মাহাদ বালা জোড়া বের করে ওর বাবার হাতে দিয়ে বলল," বাবা আমার কাজ আছে। আপনি ওদের নিয়ে যান। সন্ধ্যার আগেই ওকে এখানে নিয়ে আসেন।"

" তুই কি সত্যি যাবিনা! আর তিতির কি ওখানে আজ থাকবেনা? সাবিনা তো বাসা মাথায় তুলে রেখেছে তিতির যাবে বলে।"

" আমার কাজ আছে বাবা, অন্যদিন যাব।"

কামরান সাহেব আর কথা বাড়ালেন না। তিতির আর সাদকে নিয়ে বাসা থেকে বের হলেন।

সাদ ওর দাদুর কোলে। কামরান সাহেব খুব যত্নে ওকে আগলে রেখেছে। এমন সময় তিতির বলে উঠলো,"বাবা..!"

" হ্যাঁ মা বলো!"

" আমাকে একটু ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবেন? আমি আমার ছেলেটাকে দেখতে চাই। আমি জানিনা ও দেখতে কার মত এবং কেমন হয়েছে।"

" কামরান সাহেবের চোখ ছলছল করে উঠলো। ডাইভারকে গাড়ি ঘুরাতে বলল। তিতিরকে নিয়ে তার পুরনো বান্ধবী ফাতেমা কামরুনের কাছে নিয়ে গেল। ফাতেমা কামরুন একজন নামকরা চক্ষু বিশেষজ্ঞ।"

" তিনি তিতিরের চোখ পরীক্ষা করে বললেন," কামরান, দীর্ঘ সময় ওর চোখের কোন চিকিৎসা করা হয়নি বলে চোখের অনেক ক্ষতি হয়েছে। আমি কিছু মেডিসিন দিচ্ছি। এগুলো খেলে চোখ ভালো হওয়ার সম্ভবনা আছে! কিন্তু যদি নাও ভালো হয় তাহলে চোখ সার্জারি করার জন্য উপযুক্ত হবে। সাতদিন পর ওকে আবার নিয়ে এস।"

ওকে বলে কামরান সাহেব তিতিরকে নিয়ে চলে আসল। বাসায় পৌছাতে পৌছাতে বেলা ৩টা বেজে গেল। 

সাবিনা তিতিরকে পেয়ে খুব খুশি হল। সাথে বাসার ছোট বাচ্চারাও। লাবীবা এসে সাদকে বুকে নিয়ে আদর করতে লাগলো।
সাবিনা, আমাদের খাবার ব্যবস্থা কর বলে কামরান সাহেব উপরে চলে গেলেন।

সাবিনা আমাকে একটু উপরে নিয়ে যাওতো! আমি ফ্রেস হব। সাবিনা তিতিরকে নিয়ে মাহাদের রুমে গেল। তারপর ওয়াশরুমে ঢুকে দিয়ে বাহিরে দাড়িয়ে রইল। তিতির খানিকপর বের হয়ে এসে বলল," সাদকে নিয়ে আসতো?"

সাবিনা নিচে গিয়ে বলল," আম্মা সাদকে তিতির আপা চাইলো। ওরে দেন আমার কাছে।"

কেবল আসলো আর আমার কাছ থেকে কেড়ে নিতে চাচ্ছে! ছেলে কি ওর একা না আমাদেরও বলে কেঁদে ফেলল লাবীবা। প্রতিশোধ নিচ্ছে বলে সাদকে নিয়ে উপরে এসে ছেড়ে দিল। এমন সময় নিসা আর বাতাসিও রুমে ঢুকল।

অ্যার মাহাদরে তো গোলাম করে রাখছোস। তুই পায়ের উপর পা তুলে খাস আর মাহাদ খাইটা মরে। তুই কি সত্যি কানা না আমাগো উপর শোধ তোলার জন্য কানা সাজছোস? 

বাতাসির এমন কথা শুনে নিসা সাহস পেল। তার ভিতর মাহাদ কাছে নেই। এখন ওকে কে আটকায়। কপাল একেই বলে, ছিল কোথায় আর এল কোথায়? তিতির এটা সত্যি তোমার আর মাহাদের সন্তান তো? না অন্যকারো এনে মাহাদের উপর চাপিয়ে দিচ্ছ! আর মাহাদ তো যে তোমার জন্য পাগল, তোমাকে পাওয়ার জন্য সব অন্যায় মেনে  নিবে। ওর কোন বাঁচ-বিচার নেই। তিতির বলতেই ও অঙ্গান।

তিতির চুপ করে সমস্ত কথা হজম করছে। আর সাদ ওর মায়ের কোলে ভীত অবস্থায় বসে আছে। ও এসবে অভ্যস্ত নয়। ও এটা বুঝতে পারছে ওর মাকে সবাই বকা দিচ্ছে।

এমন সময় মৌ রুমে এসে বলল," তিতির, তুই কখন এসেছিস? এটা আমাদের সাদ বাবা? "

তিতির আর সাদ এক সাথেই সালাম দিল মৌকে। তারপর তিতির বলল," আপা একটা জায়নামাযের ব্যবস্থা করে দিবেন!  আমি যহোরের সালাত আদায় করতে পারিনি।"

আমি এখুনি আনছি বলে মৌ চলে গেল। এদিকে সাদ ওর মার কোল থেকে বের হয়ে তিতিরের হাত ধরে ওয়াসরুমে নিয়ে গেল। তিতির ওকে ফ্রেস করে দিয়ে অযু করে দিল। তারপর ওকে রুমে নিয়ে আসতেই মৌ  নামাযের জায়গা করে দিয়ে তিতিরকে এনে ওখানে দাড় করালো। তিতির সাদকে নিয়ে নামাযে মনযোগ দিল।

ঢং বলে নিসা রুম থেকে বের হয়ে গেল। লাবীবা আর বাতাসি চুপকরে দাড়িয়ে রইল। লাবীবার মনে সন্দেহ জেগে উঠলো আসলেই কি এটা মাহাদের সন্তান না অন্য কারো সন্তান! চেহারা একদম মাহাদের মতই। সেই নাক সেই ঠোট সেই চোখ। গালে টোলও পড়ে সাদ একটু হাসলে। না না এটা আমার নাতীই। কি শিক্ষা দিয়ে তৈরি করেছে তিতির। আমিও আমার সন্তানদের এমন শিক্ষা দেইনি। 

তিতির সালাত আদায় করে উঠতেই মৌ রাতিশাকে এনে বলল," রাতিশা, সেদিন নাকি তুমি তোমার আন্টির সাথে কথা বলতে পারোনি বলে বাবাকে অভিযোগ করছিলে, দেখ আজ আন্টি এসেছে। ইচ্ছামত কথা বলো।"

" তিতির ওকে কাছে ডেকে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল," আপা ও কি আপনার মত হয়েছে না ভাইয়ার মত হয়েছে? ভাইয়ার কিন্তু একটা খুব ভালো গুন আছে উনি মানুষের সাথে খুব ভালো ব্যবহার করতে জানে। আমি কোন দিনও দেখি নাই কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করতে।"

মৌ কোন কথা বলতে পারলোনা। কামরান সাহেব এর মধ্য এসে তিতির আর সাদকে নিয়ে নিচে আসলো। তারপর একসাথে খাবার খেতে বসলো। সাবিনা এসে রুমে ঘটে যাওয়া সব কথা বলে দিতে লাগল কামরান সাহেবকে।

"সাবিনা, কারো কথা কাউকে বলতে নেই বোন। এতে আল্লাহ্ সুবহানাতালা অসুন্তষ্ট হোন। এবং সেটা গিবতের শামিল হয়ে যায়।"

" আপা, চুপ করেন। অ্যাই আন্নের মত না। আন্নের মত চুপ থাকার মাইয়া না। এতগুলা কতা কইল আর চুপ কইরা থাকুম? কক্ষনও না....।"

এভাবেই কাটলো তিতিরের দিন। অবশেষে সন্ধ্যার আগেই কামরান সাহেব তিতিরকে রেডী হতে বললেন। সাদ চলে যাবে বলে আরো কিছু কথা শুনালো তারা। তিতিরের আজ প্রচন্ড অসহায় মনে হচ্ছে। মাহাদকে প্রচন্ড মিস করছে। অবশেষে সাবিনা বলেই ফেলল," সাহেব অ্যাই তিতির আপার সাথে যাই?"

কামরান সাহেব কি যেন ভেবে বলল," তাহলে তোকে এক বারে রেখে আসবো। ওর তোকেও খুব দরকার।"

সাবিনা সাথে সাথে খুঁশি হয়ে  ওর সব কাপড় গোছ-গাছ করে তিতিরের সাথে চলে গেল।

♦♦♦♦

রাত ১১টা বাজে মাহাদ এখনো বাসায় ফিরেনি। কামরান সাহেব তিতিরকে রেখেই চলে গেছেন। মাহাদ কখনও এত দেরী করেনা। সাবিনার সাহার্য্য নিয়ে মাহাদকে বার বার কল দিচ্ছে তিতির কিন্তু নাম্বার বরাবর বন্ধ আসছে। সাদ অনেক আগে ঘুমিয়ে পড়েছে। তিতির কামরান সাহেবকে কল দিলেন। কামরান সাহেব বলল," ও ঠিক আছে। কিছু কাজ আছে সেগুলো শেষ হলেই বাসায় চলে যাবে।"

অবশেষে রাত তিনটার দিকে মাহাদ বাসায় ফিরলো। দরজা খুলে দিল সাবিনা। সাবিনাকে দেখে মাহাদ চোখ উপরে তুলে বলল," কিরে তুই এখানে?"

সাবিনা খুশি হয়ে বলল," অ্যাই এহন থাইকা এহানে থাকুম।"

" ভালো, তোর আপা কই?"

" ঘুমাইছে।"

" তুই তো দেখছি আসমার মত মিথ্যা কথা বলতে শিখেছিস আপার পক্ষ হয়ে। আপার তরফদারি ভালয় করতে শিখেছিস।"

" ভাইজান, খাওন দেই?"

" নাহ্ বলে মাহাদ ওর রুমে গিয়ে দেখলো সাদ ওর বিছানায় সুয়ে আছে। সাদকে দেখেই সব কষ্ট দুর হয়ে গেল মাহাদের। মাহাদ ফ্রেস হয়ে এসে ব্লেজার সহ শার্টটা খুলে আয়নার সামনে দাড়ালো। হাতের অনেক জায়গায় কেটে গেছে। 
শালা কুত্তার বাচ্চা পাঁচটা বছর ধরে আমায় জ্বালিয়ে মারছে। তোর বিরুদ্ধে একটা প্রমান পাই তার পর দেখিস এই মাহাদ কি জিনিস!
মাহাদ হাত ড্রেসিং  করে সাদের পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লো।

♦♦

পরেরদিন,
মাহাদ পরে সাবিনার কাছে তিতিরের সাথে ঘটে যাওয়া সব কথা শুললো। মাহাদ ওর বাবাকে আর ভাইকে ডেকে ঠান্ডা মাথায় বুঝিয়ে বলল," তিতিরের ওখানে একেবারে যাওয়া ঠিক হবেনা। কারন এত কিছু হয়ে যাওয়ার পরও যদি এরা কেউ না শুধরায় তাহলে এরা জিবনেও শুধরাবেনা। আমি আমার জিবনে আর অশান্তি চাইনা। আর ওকে হারানোে শক্তি আমার নেই। তাই এভাবে দুরে থাকায় আমাদের  সবার জন্য ভালো।"

মাহাদ তিতিরের নিজের বাবার সাথেও কোন যোগাযোগ রাখতে দেয়নি। যেই বাবা তার নিখোঁজ মেয়ের খোঁজ খবর নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি তাহলে তাকে কেন ওর জিবনে এনে অশান্তি করবে!
তাই তিতির আর ওর মধ্য কোন ঝামেলায় রাখেনি। সব কিছু টেনে ছিড়ে ফেলছে মাহাদ।

মাহাদের ডিসিশন নিয়ে ঘোর প্রতিবাদ জানালো লাবীবা, বাতাসি আর নিসা। শেষে ফুয়াদ ওদের এক ধমকেই চুপ করে দিল। ঐ নিষ্পাপ মাসুম বাচ্চার জন্ম নিয়ে যদি তোমাদের মনে সন্দেহ জাগে তাহলে তোমরা কতটা নিকৃষ্ট আর কালপিট সেটা আমাদের বোঝা হয়ে গেছে। তোমাদের মুখও দেখার উচিত নয় তিতিরের।

♦♦♦♦

আটদিন পরে,
মাহাদ অফিসে ছিল। কামরান সাহেব এসেছেন তিতিরকে ডাক্তারে কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য। ওনার সময় হয়নি তাই আসতে পারেনি এতদিন। 

"বাবা সেদিন মাহাদ কেন ওত রাতে ফিরেছিল?"

কামরান সাহেব একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল," ৫ টা বছর ধরে মাহাদকে জ্বালিয়ে আসছে। মাহাদ আর ফুয়াদের পিছে হাত ধুয়ে লেগেছে সরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী। "

বাবা আপনাকে কিছু দেওয়ার ছিল। আর চুপ করে থাকা ঠিক হবেনা বলে তিতির উঠে গিয়ে ড্রয়ার খুলে একটা  মিনিব্যাগ বের করল। আশা করি এটা দিয়েই সব জট খুলবে বলে একটা পেনড্রাইভ ওনার হাতে দিল। ৩ বছর আগে এটা আমি মাহাদকে দিতে চাইছিলাম কিন্তু তার আগেই আমি ওদের শিকার হই। ভ্যাগ্গিস আমি এটা আমার সালোয়ারের পকেটে রেখেছিলাম। পরে আসমা আমাকে এটা দিয়েছে। ফুয়াদ ভাইয়ার কষ্টের ফসল এটা। আমি এতবছর ধরে অনেক যত্নে রেখেছি।

এখন প্রশ্ন, কি ছিল সেই পেনড্রাইভে!
সেখানে ছিল কয়েকজন নেতার ধর্ষন রের্কড, ইয়াবা চালানের আগে তাদের সাক্ষাত, বিভিন্ন অবৈধ অস্ত্র চালান, কিছু সৎ পুলিশ অফিসারদের নিখুত মার্ডার তারপর তাদের নদীতে নিক্ষেপ করা সহ আরো কিছু তথ্যাদি । এই সব নেতাদের ধংস করার জন্য যথেষ্ট প্রমান।

কামরান সাহেব আর দেরি না করে সব কিছু কপি করে মাহাদের কাছে পাঠিয়ে দিল। মা, মাহাদ ছাড়া এদের সুক্ষ্ণ ভাবে কেউ ধরিয়ে দিতে পারবেনা।

মাহাদও সেদিনই সাথে সাথে এ্যাকশন নিয়েছে। যার ফলাফল তাদের পদ থেকে বহিষ্কার সহ জেল-জরিপানা হল। একটা কালো অধ্যায় মাহাদের হাত দিয়ে শেষ হল।

তিতির ড. কামরুন নাহারের সামনে বসে আছে। সব কিছু চেকাপ করে কামরুন ম্যাম খুঁশির খবর শুনালেন। হ্যাঁ মেডিসিন রেসপন্স করেছে। আর সার্জারির প্রয়োজন হবে না আশা করি। আরও নতুন কিছু মেডিসিন এ্যাড করে বলল," ইনশাল্লাহ্ পরের বার তুমি এখানে আসলে আমাকে নিজের চোখে দেখতে পারবে তিতির।

তিতিরের থেকে কামরান সাহেব বেশি খুশি হলেন। তিতিরকে নিয়ে বাসায় ফিরলেন।

৪ দিন পর,
সকালে লাবীবা ফোন করে জানিয়েছে সাবিনাকে পাঠাতে। বাসায় কি যেন নাকি কাজ আছে। মাহাদ ডাইভারকে দিয়ে ঐ বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছে সাবিনাকে। তিতির বাসায় একা আছে বলে মাহাদ অফিসে যায়নি। বাসায় এই তিনজন ছাড়া কেউ ছিলনা। তিতির রান্না ঘরে কাজ করছিল। কিছুটা দুরে সাদ দাড়িয়ে আছে আর মাহাদ ডাইনিং রুমে বসে ফোনে কথা বলছিল।তিতিরের অসাবধানতায় ওর ওড়নাতে আগুন লেগে যায়। সাদ ওখানেই আ..উ..উ বলে চিৎকার দিয়ে ওঠে। 

সাদের চিৎকার শুনে মাহাদ কথা বলা বন্ধ করে সাদের দিকে তাকালো। ফোন ছুড়ে ফেলে দৌড়ে সাদের দিকে এসে দেখে তিতিরের ওড়নাতে আগুন জ্বলছে। তিতির হাতরে হাতরে পানি খুঁজছে আর বলছে,"  সাদ বাহিরে যাও বাবা, এখানে একমুহুত্বও থেক না। "

মাহাদ দ্রুত ওর গা থেকে ওড়নাটা খুলেই ফ্লোরে ছুড়ে মারল। একজগ পানি এনে ঢেলে দিয়ে আগুন নিভালো। তারপর তিতিরকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরল। কারন তিতির থরথর করে কাঁপছে। মাহাদ ওখান থেকে বের করে এনে সোফায় বসিয়ে দিয়ে ওর শার্টটা খুলে তিতিরের গায়ে জড়িয়ে দিল। কারন তিতির কোনদিনও সাদের সামনে ওড়না ছাড়া থাকেনা। সাদ দুরে দাড়িয়ে ছিল। সাদ খুব ভয় পেয়েছে। ওর ভয় দুর করতে মাহাদ বলল," সাদ যাওতো বাবা, তোমার গোলাব ভাইয়াকে খুঁজে আনো!

সাদ চলে যেতেই তিতির মাহাদকে দুরে সরে দিয়ে চুপ করে রইল।

"এ ভাঙ্গবে তবু মচকাবেনা। আমার দোষ কোথায় আমি সেটাই তো বুঝতে পারছিনা।"

মাহাদ জোড় করে তিতিরের হাতে জেল লাগিয়ে দিল। কারন ওর হাত কিছুটা পুরে গেছে।

রাতের দিকে সাদ আর ঘুমাচ্ছেনা। শুধু মাহাদের সাথে ফাজলামি করছে। শেষে মাহাদ উপর হয়ে সুয়ে সাদকে বলল," আমার পিঠে উঠে হাটো তো বাবা!

সাদ ওর বাবার পিঠে উঠে অনেকক্ষন অবদি হাটাহাটি করে ক্লান্ত হয়ে পড়লো। শেষে মাহাদের পাশে এসে সুয়ে পড়লো। কিছুক্ষনের ভিতর সাদ ঘুমিয়ে পড়ল। মাহাদ দ্রুত উঠে তিতিরের রুমে চলে গেল। তিতির তখনো বসে ছিল বেডে।

"মাহাদ রুমে আসতেই তিতির বলে উঠলো কে?"

মাহাদ কোন কথা না বলে এসে তিতিরের কোলে মাথা রেখে সুয়ে বলল," তোমার কি সমস্যা আমাকে বল!"

"আপনি চলে যান আমার রুম থেকে।"

" মাহাদ চট করে উঠেই তিতিরের মাথাটা ধরে ওর ঠোটের স্বাধ নিয়ে বলল," তুই বলবি! তোর কি হয়েছে? না হলে তোর অবস্থা আজ খারাপ করে ছাড়ব।"

" আমাকে ছুবেন না একদম। যেই ঠোট অন্য মেয়েকে স্পর্শ করে সেই ঠোটের ছোয়া আমার প্রয়োজন নেই।"

মাহাদ তিতিরকে বুকে টেনে নিয়ে বলল," আমি কাকে ছুয়েছি বল?"

উমহ্ ছাড়েন আমাকে বলে মাহাদের সাথে ধস্তাধস্তি শুরু করলো। শেষে তিতির রেগে গিয়ে মাহাদের বুকে জোড়ে কামড় বসিয়ে দিতেই মাহাদ তিতিরকে ধাক্কা মেরেই একটা চড় বসিয়ে দিল ওর গালে।

"রাক্ষস হয়েছিস?"

তিতিরের দাঁত লেগে মাহাদের বুকের খানিকটা অংশ কেটে গেছে। সেখান থেকে রক্ত ঝরছে।

আমি বলিনি আপনি আমাকে ছুবেন না! কেন ছুতে আসলেন। আমার কাছে না এসে নিসার কাছে যান। তিতির ছিহ্ বলে মুখটা ঘুরিয়ে নিল।

মাহাদের মাথায় চড়চড় করে রক্ত উঠে গেল। তবুও নিজেকে শান্ত করে বলল," তিতির, তুমি আমাকে স্পষ্ট করে না বললে আমি কিভাবে বুঝব আমার দোষ কোথায়!"

"এবার তিতির কেঁদে উঠলো, আপনি গাছের খাবেন আবার তলারও কুড়াবেন? নিসার সাথে আপনার শারিরীক সম্পর্কের কথা আপনি অস্বীকার করতে পারবেন? আপনাদের মধ্য অবৈধ সম্পর্ক নেই!"

মাহাদ এই কথা শুনে আকাশ থেকে যেন পড়লো। তারপর কঠিন গলায় বলল," এই কথা কে বলেছে?"

"কাউকে বলতে হবেনা। আমি নিজে দেখেছি!"

" তুমি নিজে দেখেছ!"

তিতির চোখের পানি মুছে বলল," সেদিন ওরা যখন আমাকে কিডন্যাপ করেছিল তখন গাড়ীর ভিতর একটা একটা করে পিক দেখিয়েছিল। যেখানে আপনি আর নিসা কুকর্মে লিপ্ত ছিলেন।"

এই কথা শুনে মাহাদের প্রচন্ড খারাপ লাগল। শেষে তুমি আমাকে ভুল বুঝলা? আমিই ভুল, বলে উঠে দাড়াল মাহাদ। তোমার সাথে আমার সম্পর্ক এখানেই শেষ। মাহাদ রুম থেকে বের হয়ে চলে গেল। 

তিতির বসে কাঁদতে লাগলো। আমি বিশ্বাস করিনি মাহাদ কিন্তু নিজের চোখকে কিভাবে ভূল বলব। আল্লাহ্ দয়া করে এই সমস্যার সমাধান করে দাও। আমি আর পারছিনা। ৩ টা বছর অপেক্ষা করেছি শুধু তার মুখ থেকে এই প্রশ্নের জবাব চাইবো বলে। কিন্তু সে তো জবাব না দিয়েই চলে গেল।

মাহাদ দরজার সামনেই দাড়িয়ে ছিল। মাহাদ দ্রুত এসে তিতিরের দু'হাত পিছনে নিয়ে গিয়ে শক্ত করে  ধরে বলল," তুমি না একজন খুব মেধাবী  স্টুডেন্ট! কত ভালো তোমার রেজাল্ট। তুমি কিভাবে শত্রুর কথা বিশ্বাস করলে। তোমার কি তখন স্মৃতি শক্তি লোপ পেয়েছিল? শত্রু কখনো সত্য কথা বলে! সে তোমাকে মানুষিক হেনেস্তা করার জন্য এসব বলবেই তো! এই আধুনিক যুগে একজনের ছবি দিয়ে কত খারাপ কিছু তৈরি করছে, এই কথাটি কি তোমার মাথায় একবারও আসেনি! তুমি কেমন বিশ্বাস করো আমাকে! তোমায় মাথায় এগুলো আসে কিভাবে?

মাহাদ আর নিজেকে কন্টোল করতে পারেনা। মাহাদ একপর্যায় তিতিরকে পাগলের মত কিস করতে লাগল। ওর যতক্ষন মন চাইলো ততক্ষন পর্যন্ত তিতিরকে আর ছাড়লোনা। তুমি সব কিছু বুঝতে পারো আর আমার চোখের জল অনুভব করতে পারোনা! লোহাকে অবহেলা করলে লোহা পর্যন্ত মরিচা ধরে আর আমিতো মানুষ। রেজওয়ান সব প্লান করে এতকিছু করেছে। তোমার একবারও মনে হলনা যেই মাহাদ তিতিরের জন্য পাগল সেই মাহাদ কিভাবে অন্য মেয়ের কাছে যাবে?

আমারই ভূল তোমার সমস্ত মতামতকে মূল্য দেওয়া। আজ যদি আমি আমার মত করে চলতাম তাহলে এত কিছু হত না। আমার নিজেই নিজের প্রতি রুচি উঠে গেছে। আমি আর পারছিনা বলতেই তিতির ওকে আষ্টে-পৃষ্টে জড়িয়ে ধরল। 
মাহাদ, যার চলে যায় সেই শুধু বোঝে বিচ্ছেদের কতটা যন্ত্রনা। 
আমি আপনাকে কিছু কথা বলি, আপনার মনে আছে আমার এক্সিডেন্টের জন্য আপনি পরেরদিন রিপাকে ঘুম থেকে কিভাবে তুলে থানায় নিয়ে গেছেন! সেই আমার সাথে দুর্ঘনার জন্য আসিফও আপনাকে ঘুম থেকে তুলেই থানায় নিয়ে গিয়েছিল। কোন কাজ দম্ভ করে করতে নেই। যদি করে তাহলে সেটা একদিন না একদিন নিজেকে দিয়েই শোধ যাবে।
যানিনা আল্লাহ্ সুবহানাতালা কেন আমাদের এত দুরে রেখেছিল। নিশ্চয় এর ভিতর আমাদের জন্য কল্যান ছিল। 

"মাহাদ কোন কথা বলছেনা।"

মাহাদ আপনি যেদিন আমার কাছে ছিলেন সেদিন মনে হয়েছিল আপনি একটু ভারী হয়ে গেছে বলে হাঁসলো তিতির।

"তোমাকে ভারী করার ব্যবস্থা করবো?"

"মানে!"

" না চিন্তা করছি তোমাকে কিভাবে প্রেগন্যান্ট বানাবো। তখনতো তুমি এমনি ভারী হয়ে যাবে।"

" তিতির এবার বেশ লজ্জা পেল।"

" তিতির আমি চাইনা তোমার চোখ ভালো হোক। তুমি এভাবে থাকলে আর আমার কাছ থেকে পালিয়ে যেতে পারবেনা।"

এবার যদি চলে যাই তাহলে আমার হাত-পা ভেঙ্গে দিয়েন বলে তিতির মাহাদের মাঝে ডুবে গেল। আজ তিতির বড্ড আগ্রাসী রুপ দেখাচ্ছে। মাহাদকে ভালোবাসতে আজ সে বড্ডই ব্যস্ত। সে নিজে নেশাতে মজে গেছে সাথে মাহাদকেও নেশাগ্রস্ত করে তুলছে। মাহাদের নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসছে। মাহাদ নিজে চাচ্ছে তিতিরের সাথে মিশে যেতে কিন্তু তিতির ওকে সেটা করতে দিচ্ছেনা। এক পপর্যায়ে মাহাদ ক্ষিপ্ত হয়ে গেল। তিতিরের আলিঙ্গনে মাহাদের মন ভরছেনা। তাই সে নিজেই তিতিরকে গ্রাস করতে লাগলো। 

তিতির অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠল," আমি আমার ♥অচেনা অতিথী♥ কে খুব ভালোবাসি। তাকে ছাড়া আমার জিবন অন্ধকার।"

" চুপপপপ, আর একটা বাড়তি কথাও না। মাহাদ তিতিরের কাছ থেকে এতদিনের পাওনা ভালোবাসা আদায় করে নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।"
এ এক অনবদ্য ভালোবাসার প্রেমকাহিনীর সাক্ষ্য। একে অপরের মাঝে সুখ খুজে নেওয়ার রাত। সত্য আর পবিত্র প্রেমগুলো একে অপরের সাথে মিলিত না হওয়া পর্যন্ত ক্ষান্ত থাকেনা। তারা মিলিত হয়েই ছাড়বে।

♦♦♦

৭ মাস পড়ে,

তিতিরকে চেকাপ করছে ড. ফাহমিদা আলীম। তিতির কনসিভ্ করেছে। মি.আলীম আর মিসেস. আলীম তাদের ভুল বুঝতে পেরে পরে তিতিরে কাছে চলে এসেছে। একটা মেয়ে হারিয়েছে তিতিরকে হারানোর ক্ষমতা আর তাদের নেই। তিতিরের বাচ্চা হলে আসমা দেশে আসতে চেয়েছে। ও ওয়াহিদের সাথে পাকিস্তানে রয়েছে। তিতিরের মেয়ে সন্তান হবে তাই আসমা আগেই নাম ঠিক করে রেখেছে।  ♥মাহরীন বিনতে মাহাদ♥

 লাবীবা ইদানিং তিতিরের কাছে এসে থাকে। সেও তার ভূল বুঝতে পেরে সেগুলোকে এখন শোধরানোর চেষ্টা করছে। তিতির এখন সম্পূর্ন দেখতে পায়। রেজওয়ান সুস্থ হয়ে গেছে। নিজেকে বেশ শুধরে নিয়েছে। কিন্তু মনের ভিতর কি চলছে সেই জানে। মাহাদ সব দিক সামলিয়েও তিতিরের প্রচন্ড কেয়ার নেয়। মাহাদের একটাই কথা, তিতির আমি যদি তোমার উপর কোন কারনে বিরক্তও থাকি তাহলে তুমি যেন আমার কাছ থেকে অন্য বিছানায় গিয়ে সুয়ে পড়োনা। আমার রাগ ভাঙ্গলে আমি নিজেই তোমাকে বুকে টেনে নিব। আমার রাগও ভাঙ্গানোর প্রয়োজন নেই তোমার। আমরা যদি একে অপরের সাথে রাগ করে আলাদা থাকি তাহলে সেখানে শয়তান তার নিজের জায়গা করে নিয়ে আমাদের বিচ্ছেদ ঘটিয়েই ছাড়বে। তাই ভুলেও এমন কাজ করোনা। তিতির মাহাদের প্রতিটা কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে।
তিতির ওর বাবার সাথে আর যোগাযোগ করতে পারেনি। শুনেছে ইভানা নাকি মারা গেছে। তাই আদরী আর তিতিরের নাম পর্যন্ত সহ্য করতে পারেনা। কিছু কিছু মানুষ কোনদিনই সোজা হয়না। যেমন, নিসা, বাতাসি, এরশাদ আর আদরী। এদের মত মানুষদের আল্লাহ্ সুবহানাতালা নিজ দায়িত্বে তাদের অন্তরে মোহর মেরে দেন। এদের ভালোমন্দ বোঝার মত আর ক্ষমতা থাকেনা। তারা তাদের পাপ বাড়াতেই থাকে। আর এমন একটা দিন আসে সেদিন আল্লাহ্ সুবহানাতালা এদের নিজ থেকেই পাকড়াও করে। তখন শুধু আফসোস করা ছাড়া আর সময় থাকেনা।

 সুখে আর শান্তিতে থাকুক মাহাদ আর তিতিরের এই পবিত্র বন্ধন। আল্লাহ্ সুবহানাতালা এমন পবিত্র বন্ধনগুলোকে দুনিয়া ও আখিরাতে এক দৃষ্টান্ত সাক্ষ্য  করে রাখুক।  একজন বিবাহিতা নারীর জিবনে সব থেকে অমূল্য পাওয়া হল, তার স্বামীর ভালোবাসা। স্বামীর ভালোবাসা পেলে পৃথিবীর আর কোন ভালেবাসার প্রয়োজন নেই বলে আমার মনে হয়।



                               ***(সমাপ্ত)***

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন