এমপি আফতাব নাযীম এসির ঠান্ডার হাওয়াতেও ঘেমেই চলছেন। ছেলেকে বার বার নিষেধ করার সত্তেও কথা শোনেনি সে। বরাবরই সে একটু জেদি। এখন কি করব বলে নিজের চুল নিজেই ছিড়তে মন চাচ্ছে। ছেলের নাম্বারে বার বার ডায়েল করেও কোন লাভ হচ্ছেনা। বন্ধ দেখাচ্ছে......।
শীর্ট নাম্বার টাও বন্ধ রেখেছে গাধার বাচ্চা। এখন যদি ও ধরা পরে তাহলে আমিতো ওকে সাহার্য্যই করতে পারবোনা। কি করি কি করি বলতেই মাথায় চট করে বুদ্ধি এল তার। আজ কামরান সাহেব দেশে ফিরছেন। তাকে দেখার জন্য হলেও তো তার বাসায় যেতে পারি। হ্যা, সেই সময় সাথে করে যদি ছেলেটাকে নিয়ে আসতে পারি তাহলে ওকে আর দেশেই রাখবোনা। আল্লাহ্ আর যাই হোক মাহাদের হাতে যেন ও পরেনা। ভাবনা চিন্তার এক পর্য়ায়ে আফতাব সাহেব দ্রুত রেডী হয়ে কামরান সাহেবের বাসার দিকে রওনা দিলেন।
♥
সকাল ১০টা বাজে,
কামরান সাহেব বাসায় এসেছেন। তার প্রাইভেট রুমে প্রেস কনফারেন্স করছেন। সবার একই প্রশ্ন, একজন দেশের মন্ত্রীর বাসার কাজের মেয়ের যদি নিরাপত্তা না থাকে তাহলে সাধারন মানুষদের কি ভাবে নিরাপত্তা দিবে। তাছাড়া মেয়েটি নাকি প্রেগন্যান্ট! সাংবাদিকদের একই প্রশ্ন, এত দ্রুত মেয়েটিকে কেন কবর দেওয়া হল! মৃত্যুর আগে মেয়েটিকে নাকি ধর্ষনও করা হয়েছিলো। ঘটনাটি এমন নয় যে, সরিষার মধ্য ভূত! আপনার বাসার ছেলেরা তো এর ভিতর জড়িত নয়!
নাহ্ আমরা বলছিনা যে, তারাই জড়িত। কিন্তু এমন ঘটনা অহরহ ঘটছে আমাদের সমাজে। আমরা জাষ্ট সত্যটুকু জানতে চাই। আপনি আমাদের কিছু বলেন।
কামরান সাহেবের অ্যাসিটেন্ট মকবুল আলম গলা খেঁকারি দিয়ে ভ্রু কুচকে বলল-
~" আপনারা একটু বেশিই কথা বলেন। স্যার এমনি কষ্টে আছেন তার ভিতর আপনারা উল্টাপাল্টা কথা বলে উনাকে আরও কষ্ট দিচ্ছেন।"
একটা মেয়ে সাংবাদিক উঠে দৃঢ় গলায় বলে উঠলো-
~" বাসার কাজের মেয়ের জন্য এত দরদ! এমনি বলছি, সরিষার ভিতর ভুত লুকিয়ে আছে?"
এই মেয়ে এত কথা বলো কেন! তোমার কি জিবনের মায়া নেই! বলেই মকবুল আলম ধমক দিয়ে উঠলো। কামরান সাহেব সেখান হতে উঠে বাসার ভিতর চলে আসলেন। কি নোংরা ভাষায় কথা বলছে তারা।
বাতাসি বিবি কামরান সাহেবকে দেখেই ডুকরে কেঁদে উঠে বলল-
~" বাপ আইছোস তুই! আমাগো সাবিনা আর নাই।"
কামরান সাহেবেরও দু'চোখ বেয়ে দু'ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো। মেয়েটাকে ভালো রেখে গেল তার ভিতর এত বড় ঘটনা কিভাবে ঘটলো! তাই বলে কোন তথ্য প্রমান পাওয়া যাবেনা?
.
ফুয়াদ আজ অফিসে যায়নি। মাহাদই যেতে নিষেধ করেছে। ১১টার দিকে জরুরি কাজ আছে বলে ফুয়াদ সকালের নাস্তা করে রেডী হচ্ছে। অন্যদিকে মাহাদ বেডে বসে আছে। কেবল খাওয়া শেষ করে মেয়েকে নিয়ে সে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। মাহাদ অতিথীর পাশে শুয়ে পড়তেই অতিথী ওর বাবার চুল ধরে খেলায় মেতে উঠলো। মাহাদের কপালে একটা চুমা খেয়েই খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো। মাহাদ এবার আধাশোয়া হয়ে মেয়ের দিকে তাকাতেই সে বাবার দিকে স্থির চোখে চেয়ে রইলো। মাহাদ মুখে হাসি ফুটিয়ে অতিথী গালে একটা কিস করতেই ও হাত বাড়িয়ে দিল। মাহাদ সেখানেও কিস করতেই ও অন্য হাত বাড়িয়ে দিল। মাহাদ সেখানেও কিস করলো। এবার পা এগিয়ে দিতেই মাহাদ পায়ের তালুতে কিস করলো। তারপর আদুরে স্বরে বলল-
~" আমার আম্মাজানের আরও কিসি চাই!"
এবার অতিথী ওর মুখ বাউন্স করতেই মাহাদ ওর ঠোটেও কিস করলো। দু'চোখেও করলো দেন মেয়েকে নিয়ে মাতিয়ে উঠলো। তিতির এসে মাহাদকে বলল-
~" কোন পোষাক পড়বেন!"
মাহাদ অন্য মনষ্ক হয়ে বলল-
~" তুমি চুজ করে দাও। হলেই হলো একটা।"
তিতির ওয়্যারড্রপ থেকে কাপড় বের করে মাহাদকে পড়িয়ে দিতেই রুমে এসে নক পড়লো। আপা আসুম...
তিতির মুখ ফিরিয়ে দেখলো একটা ১১ বছরের মেয়ে দাড়িয়ে আছে। সাবিনাকে দেখাশোনার জন্য মেয়েটিকে আনা হয়েছিল। সাবিনা পরপারে চলে গেলেও মেয়েটি রয়েই গেছে। মেয়েটির নাম কুসুম। পুরো নাম কুসুম কলি। গায়ের রং ছিপছিপে কালো। তবে মুখের ভিতর একটা মায়া মায়া ভাব আছে। কুসুমকে দেখলে মনের ভিতর সাবিনার কথা এসে নাড়া দিয়ে ওঠে। সাবিনা অবশ্যই ফর্সা ছিল একটু বেশি।
মাহাদ কুসুমকে দেখে হাসি মুখে বলল-
~" কিরে, এখানে কাজ করতে কোন সমস্যা হচ্ছে!"
মেয়েটি ঘাড় নাড়িয়ে বলল-
~" না ভাইজান। তয় সাবিনা বুবুর ঘরে থাকতে ভয় লাগে। মাঝে মাঝে আন্দারের ভিতর সাবিনা বুবু কান্দে আর ঘোরাফেরা করে। তহন খুব ভয় পাই।"
~" ধ্যুর বোকা মেয়ে, এসব মনের কাল্পনিক ভয়। খুব বেশি সমস্যা হলে নান্নুর মায়ের কাছে থাকবি।"
~" হেই তো অ্যারে খালি ধমকায়। কতায় কতায় ধমকায়। নিজেকে কি ভাবে আল্লাহ্ জানে। মনে হয় কোন জমিদারনী।"
~" এইতো বললি, তোর নাকি কোন সমস্যা নেই। কিন্তু এখন দেখছি তোর তো অনেক সমস্যা!"
মেয়েটা তিতিরের দিকে চেয়ে চুপসে গেল। তিতিরকে সে অনেক ভয় পায়। কারন সাবিনার মরার আগের দিন তিতির ওকে থাপ্পড় মারছিল। যার জন্য সে মারা গেছে। এটা তার ধারনা। তাই ভয়ে মুখ থেকে আর একটাও কথা বের হলোনা। কিন্তু সে অতিথীকে খুব পছন্দ করে। কি সুন্দর মাইয়াটা। এসব ভাবতেই মাহাদ বলল-
~" দেখ নিচে হয়ত মিল্টন এতক্ষনে এসে গেছে। ওকে বল আমি ডাকছি।"
আচ্ছা বলে চলে গেল কুসুম। সে চলে যেতেই মাহাদ তিতিরকে বলল-
~" তিতির নিচের একটা রুম ঠিক করে রেখতো! আজ থেকে নিচে থাকবো। এখান থেকে নামা ওঠা আমার জন্য কষ্টকর হয়ে যায়।"
ওকে বলতেই মাহাদ বলল-
~" ড্রয়ারে একটা বক্স আছে। ওটা নিয়ে আসতো!"
তিতির কথা না বাড়িয়ে বক্সটা এনে মাহাদের হাতে দিতেই মাহাদ বলল-
~" অতিথীকে নিয়ে সাদের রুমে যাও।"
কি করতে চলছেন বলেই তিতির ওর একদম কাছে আসলো। মাহাদ কি যেন চিন্তায় মগ্ন ছিলো। তিতিরের কথায় ধ্যান ভঙ্গ হতেই মাহাদ চিন্তিত চেহারায় বললো-
~" কিছুতো একটা হবেই। কতটুকু সাফল্য পাবো সেটা জানিনা। এভাবে বসে না থেকে কাজে লেগে পড়াই বেটার। গোলাবকে আমার কাছে পাঠিয়ে দাও।"
গোলাবের নাম নিতেই তিতিরের বুকের ভিতর ধক্ করে উঠলো। তারমানে মাহাদ জটিল কোন কাজ করতে যাচ্ছে। আবার কোন বিপদে মাহাদ পা বাড়াচ্ছে! আল্লাহ্ রক্ষা করো। কথাটি মনে মনে বলে মাহাদের কপালো দীর্ঘ একটা কিস করে তিতির বলল-
~" স্ত্রী-সন্তান সব সময় আপনার পথ চেয়ে থাকে। তাদের আপনি কখনো নিরাশ করেন না। আপনি ছাড়া আমাকে বোঝার কেউ নেই। শুধু এতটুকু স্মরনে রাখলেই যথেষ্ঠ। "
তিতির অতিথীকে নিয়ে চলে যেতেই মিল্টন আর সাজিদ রুমে ঢুকে বলল-
~" স্যার আপনি রেডী।"
~" ইয়েস, অপেক্ষা কিসের। চল যাওয়া যাক।"
♥
বাসায় এমপি আফতাব নাযীমের গাড়ী ঢুকতেই দেখলো, বাসার গেটে অনেক সাংবাদিক ভিড় জমিয়েছে। তাদের ভিড় ঠেলে গাড়ী ঢুকাতে বেশ বেগ পেতে হল।
গাড়ী থেকে বের হতেই দেখলো খানিকটা দুরে মাহাদ হুইল চেয়ারে বসে আছে। মাহাদকে দেখে আফতাব সাহেবের কলিজা কেঁপে উঠল। এই ছেলেকে একদমই বিশ্বাস নেই। চোখের পলকে যে কোন প্লানই ভেস্তে দিতে তার সময় লাগবেনা। ওর নযর এতই তীক্ষ্ণ যে তার সামনে কেউ পার পাবেনা। ছেলেকে শুধু বাসা থেকে একবার বের করতে পারলেই আফতাব সাহেবের কলিজায় পানি আসবে। তারপর বাঁকিটা সামলাতে তার বা হাতকা খেল।
মাহাদ দুর থেকে আফতাব সাহেবকে হাতের ইশারায় সালাম দিতেই ওর কাছে থাকা কুকুরটা বাঘের মত হংকার ছাড়তে ছাড়তে দৌড়ে এল। আফতাব সাহেবের পিলে চমকে উঠলো। ভয়ে আধা দৌড়ে কয়েক হাত পিছন দিকে যেতে বাধ্য হল। কিন্তু নাযীম সাহেবকে ক্রস করে গোলাব সোজা বাসার মালীর রুমের ভিতর ঢুকে পড়লো। নাযীম সাহেব যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। কোন কথা না বাড়িয়ে তিনি বাসার ভিতর চলে গেলেন।
গ্যারেজের বিশাল এড়িয়ায় বাসার সব কাজের লোককে ডাকা হয়েছে। ১১ বছর ধরে বিশ্বাসী কাজ করার মালী মজনুও বাদ যায়নি। মাহাদ আর ফুয়াদ পাশাপাশি অবস্থান করছে। পুলিশের কিছু ফোর্স সহ মিল্টন আর সাজিতও আছে।
মাহাদ তীক্ষ্ণ ভাবে সবার দিকে চেয়ে আছে। ১৪ জন বাসার কাজের লোক। খুটে খুটে দেখছে তাদের। শুধু গোলাব আসার অপেক্ষায়। কিছুক্ষন পর গোলাব আসতেই সবাই ভয়ে চুপসে গেল। গোলাব মোট ৭জনকে চিহ্নিত করলো।
বাঁকি গুলোকে গ্যারেজ থেকে বের করে দেওয়া হল। মাহাদ এবার নিজে পরীক্ষা করে আরও ৪জনকে বাহিরে পাঠাতেই কামরান সাহেব সহ নাযীম আর মকবুল ঢুকলো ভিতরে। মাহাদ চিৎকার করে এবার বলল-
~" এখনো সব কিছু স্বীকার করো। তানাহলে কাউকে বিন্দু পরিমানও অবসর দেওয়া হবেনা।"
কেউ কোন কথার জবাব দিলোনা। এমন ভাব করলো তারা, যেন দেখে মনে হচ্ছে কেউ কিছু জানেনা। ভালো তো কথাটি বলতেই ২৭ বছর বয়সী রোস্তম সাথে সাথে কামরান সাহেবকে তাক করে রিভেলভার ধরলো। মাহাদ যেন প্রস্ততই ছিল। সে মনে হয় আগেই জানতো এমন একটা ঘটনা ঘটবে। পাশ থেকে রিভেলভার বের করেই পরপর ৬টা শুট করলো রোস্তমের বাম হাতে। এত দ্রুত এমন একটা ঘটনা ঘটবে সেটা ফুয়াদও বুঝতে পারেনি। মাহাদ ওকে কোন সুযোগই দেয়নি।
রোস্তম চিৎকার দিয়ে নিচে পড়ে যেতেই আফতাব সাহেব এর পায়ের নিচ থেকে মাটি যেন সরে গেল। প্রচন্ড ভয় পেয়ে থরথর করে কাঁপতে লাগলো।
মাহাদ এবার চিৎকার করে বলল-
~" কুত্তার বাচ্চা, আমার সাথে দু' নাম্বারি! তুই যেখান থেকে এসব শিক্ষা নিয়েছিস, সেখানকার পিন্সিপাল আমি। এখনো সময় আছে তৌকির বের হয়ে আয়। না হলে এমন অবস্থা করবো, জিবনে পরিবারের মুখও দেখতে পারবিনা।"
বাঁকি দু'জন কাজের লোক থরথর করে কাঁপছে কিন্তু মুখ খুলছেনা। মাহাদ ওর বাবাকে বাহিরে চলে যেতে বলতেই ফুয়াদ গিয়ে একজনকে শক্ত করে চেয়ারে বেঁধে বলল-
~" মুখ খোল। আমার দয়ামায়া আছে কিন্তু মাহাদ এদিক দিয়ে একদম সাইকো। ভেবে দেখ তোরা।"
নাহ্ তাতেও মুখ খোলেনা। এবার বাহির থেকে মজনুকে ডেকে এনে দাড় করিয়ে মাহাদের হুকুম পেতেই সাজিদ একটা মিনি প্লাস নিয়ে গিয়ে ঐ লোকটার একটা পায়ের আঙ্গুলের নখ টেনে উপরে তুলতেই মজনু মিয়া কাঁদতে কাঁদতে নিচে বসে পড়লো। বাবা আমি বলছি আমি বলছি। আমার ছেলেটাকে আর কষ্ট দিয়োনা তোমরা।
ফুয়াদ অবাক হয়ে বলল-
~" কাকা, সে আপনার ছেলে হয়?"
মজনু মিয়া এবার মাথা নিচু করলো। কিন্তু মাহাদ বললো, খেলাতো কেবল শুরু। এই কটা দিন আমার অনেক মাথা ঘামিয়েছেন। তার পুরুষ্কার আপনাকে দিতে হবেনা! সাজিত তোমার কাজ শেষ হয়নি। শুরু করো বলতেই ছেলেটির পিছে ধাম করে লাটির বারি পড়লো। ছেলেটি ব্যাথায় মোচড় দিয়ে উঠলো। এখনো স্বীকার কর। কি কি ভাবে এসব করছিস?
মিল্টন একটা মোটা ক্যান্ডেল জালিয়ে ওর গালের উপর বাঁকা করে ধরতেই গরম উত্তপ্ত মোম গলে ওর গালে পড়তে লাগলো। এবার ছেলেটি ওর মুখ খুললো। ছেলেটি সব কথা বলে দিল। কিন্তু মাহাদ সন্তুষ্ট হলোনা। না না হচ্ছেনা। আসল কাহিনী বল। কথাগুলো বলেই মাহাদ বলল-
~" ডবল ডোজ দাও। এমনি কথা বের হবে।"
মাহাদের এই কথা শুনে ছেলেটি ভয় পেয়ে সব ঘটনা খুলে বলতেই ফুয়াদ সব কথা রের্কড করলো। এবার মাহাদ অন্য জনের কাছে গিয়ে বলল-
~" তুই তো সব কাজ বাম হাতে করিস। তাহলে বোকার মত ডান হাতে রিভেলভার ধরতে গিয়েছিলি কেন? অহ্ হ্যা, এটাও তোর একটা কৌশল তাইনা! যাতে তোকে আমি চিনতে না পারি!
আমি চলতে অক্ষম হয়ে গেছি, তাই বলে এই না যে আমার মেধাও অক্ষম হয়ে গেছে। তোর হাতে ৬টা গুলি কেন করেছি সেটা ভালো করেই জানিস তুই। তোকে আমি এই দু'দিনেই গায়েব করে দিতাম। কিন্তু তোর গ্যাং সহ বাপকে ধরবো তাই এত লেট করা। সাবিনার সাথে যা যা করেছিস সব কিছু আমি উসুল করবো।"
আসল ঘটনা ৫ বছর আগে শুরু হয়।
আফতাব সাহেবের ছেলে তৌফিক নাযীমের সাথে টেন্ডার নিয়ে এক ঝামেলা হয় মাহাদের মধ্য। সেবার টেন্ডার পায় মাহাদ। এবং তৌফিক সেটা না পেয়ে বাজে ভাবে অপমানিত হয়। সেই শোকে তৌফিক আত্বহত্যা করে। তারপর থেকে এরা বাপ ব্যাটা মাহাদের পিছনে পড়ে আছে।
মাস ৮য়েক আগে বাসার একটা কাজের লোকের দরকার ছিল। যেহেতু মজনু মিয়া ১১ বছর ধরে বাসায় কাজ করছে তাই সে খুব বিশ্বাসী লোক ছিলো। তার হাত ধরে তৌকির অত্যন্ত কৌশলে বাসায় ঢোকে। তারপর প্ল্যান করতে শুরু করে কিভাবে মাহাদকে টার্গেট করা যায়। সে প্রথমে সাবিনাকে টার্গেট করে। কিন্তু সাবিনা অত্যান্ত বুদ্ধিমতি মেয়ে ছিলো। প্ল্যান চেঞ্জ করে ওকে প্রপোজ করে। নানান ভাবে ছলে বলে ওকে মানুষিক ভাবে আক্রমন করে। এক পর্যায়ে ওর ফাঁদে পা দেয় সাবিনা। বাসার সব কথা এসে ওর সাথে শেয়ার করতো। এমনকি ওর সাথে মেলামেশাও করে। কিন্তু সাবিনা যখন প্রেগন্যান্ট হয় তখন ওকে বলে বিয়ে করতে। কিন্তু ও সেটা না করে ওকে ফাঁদে ফেলে সাদের ঐ ভিডিও দেখিয়ে। ওর হাত দিয়ে সাদকে প্রতিদিন মেডিসিন খাওয়ানো সহ সবকাজ করতে থাকে। যখন সাবিনা দেখলো ওর দ্বারা চরম ক্ষতি হয়ে যাবে মাহাদের তখন ও ডিসিশন নেয় মাহাদকে সব বলে দিবে।
মাহাদকে সব কথা জানাবে, কথাটা বলে তৌকিরকে ভয় দেখাতে চেয়ে ও আবার তৌকিরের ফাঁদে পড়ে সাবিনা। তৌকির ওকে বলে সে ভাল হয়ে গেছে। সাবিনাকে নিয়ে সে এখান থেকে চলে যাবে। কিন্তু সে রাতে তিতিরের ওমন ব্যবহারে সাবিনা তৌকিরের কাছে গিয়ে বলে সে এ বাসায় আর থাকবেনা। অনেক হয়েছে, এখুনি যেন তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। তৌকির ওর কাছ থেকে কয়েকদিনের সময় চায় কিন্তু সাবিনা নাছোড়বান্দা। সে রাগে এক পর্যায়ে বলে ও মাহাদকে সব বলে দিয়েছে। এতেই তৌকির দ্রুত ওর চ্যাল পাল্টে
দেয়। অনেক চিন্তা ভাবনা করে ওর লোকদের সব ঠিক করে সাবিনাকে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। তারপর সম্পূর্ন নিজের রুপে সাবিনার কাছে উপস্থিত হয়ে বলে, আমার আসল চেহারা দেখেছিস! একজন এমপির ছেলে হয়ে তোর মত কাজের মেয়েকে নিয়ে সংসার করবো আমি? তুইতো মাহাদের জন্য একটা ফাঁদ। সাবিনা বুঝে যায় ওর বাচার আর কোন পথ নেই। তাই ও তৌকিরের পা ধরে ক্ষমা চেয়ে বলে আমি ভাইজানরে কিছু বলিনাই। আমাকে ছেড়ে দেন। আমি অনেক দুরে চলে যাব।
যাবিতো, তোকে কে ধরে রাখছে! তবে এভাবে নয় অন্যভাবে। আর সেটাও হবে লাইভে। তারপর তৌকির নিজেকে সম্পূর্ন ঢেকে কন্ঠ চেঞ্জ করে ওমন ভয়াভয় হত্যাকান্ড ঘটায়। মাহাদ সেদিন ওকে চিনতে পারেনি কিন্তু বাসা সহ সন্দেহ ভাজনদের উপর গবেষনা চালিয়ে এটাই বুঝতে পারে, যা হয়েছে বাসার ভিতরই হয়েছে।
এবার ফুয়াদের কাজ। ওদেরকে পুলিশ কাষ্টারিডে পাঠিয়ে দেওয়া হল। ফুয়াদ বাসায় এসে সোজা মকবুলের কলার চেঁপে ধরে জোর গলায় বলল-
~" আমার বাবার টাকায় আয়েশ করিস আবার আমার বাবার গলায় ছুড়ি ধরিস!"
মকবুল আলমের উপর এমন অচমকায় হামলায় কামরান সাহেব বিশ্মিত হলেন। আফতাব সাহেব তো শেষ। মুকবুল আলীম কামরান সাহেবের দিকে তাকিয়েই দ্রুত বলে উঠলো-
~" স্যার কিছু মনে করবেন না। আপনার দুই ছেলেই চরম বেয়াদপ। এরা বড়দের সম্মান করতে জানেনা। আপনার ছোট ছেলের তো কথা বাদই দিলাম। তারমত পাগল আমি আজ পর্যন্ত দেখি নাই। কিন্তু আমাকে কেন হেনেস্তা করা হচ্ছে সেটা কি জানতে পারি!"
সবই জানতে পারবা মকবুল বলেই কামরান সাহেব লম্বা একটা হাই উঠালেন। তারপর গা আধা মোচড় দিয়ে বললে-
~" আমার ছেলেদের এগুলো প্লান নয়। এবার আমিই মাঠে নেমেছি। তুমি এত খেলা খেলে যাবে আর আমি কিছুই ধরতে পারবোনা! এমনি এমনি মন্ত্রীত্ব পদবি পেয়েছি নাকি। নিশ্চয় তুমি কিছু করেছ, যার জন্য আমার ছেলে তোমার মত চাচা বয়সী লোকের গায়ে হাত তুলেছে।"
ফুয়াদ মকবুলকে এবার থাপ্পড় তুলতেই কোথা হতে লাবিবা এসে ফুয়াদকে ঠাস ঠাস করে কয়েকটা থাপ্পড় মেরেই চিৎকার দিয়ে বলল-
~" ছাড় বলছি ওনাকে ছাড়।"
লাবীবা বলে চোখমুখ শক্ত করলো কামরান সাহেব। কিন্তু আজ লাবীবা স্বামীকে তোয়াক্কা না করে ফুয়াদের দিকে চেয়ে চোখ গরম করে বলল-
~" আমি ছাড়তে বলেছি ফুয়াদ।"
~" মা আপনি জানেন সে কি করেছে?"
ফুয়াদের কথা শুনে লাবীবা বেগম তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে ফুয়াদকে সপাটে আরও একটা কষিয়ে চড় মেরে মকবুলের কলার থেকে হাত ছাড়িয়ে নিতেই মকবুল আলম বিশ্ব জয়ের হাসি দিয়ে তাচ্ছিল্য সহকারে কামরান সাহেবের দিকে তাকিয়ে প্রান ভরে মুচকি হাসি দিলেন। এই হাসি কামরান সাহেবকে নিচু দেখানোর জন্য যথেষ্ঠ ছিল। কিন্তু কামরান সাহেব হিতাহিত বোধ হারিয়ে ফেলে সবার সামনে জিবনের প্রথম স্ত্রীর গালে কষিয়ে একটা চড় মেরে রাগ ঝাড়লেন......।