অচেনা অতিথি - পর্ব ১১ - নাফিসা মুনতাহা পরী - ধারাবাহিক গল্প


-" মাহাদ তিতিরের রুমের দিকে পা বাড়াল। সাবিনাও মাহাদের পিছে পিছে চলে আসছে। মাহাদ তিতিরের রুমে গিয়ে নক করে বলল-" তিতির আমি মাহাদ দরজাটা খোল।"


-" তিতিরের গায়ে প্রচন্ড জ্বর আসছে। মাহাদের কথা শুনতে পাচ্ছে কিন্তু ওঠার শক্তি পাচ্ছেনা। "


-" ভিতর থেকে মনে হচ্ছে চাবি লক দেওয়া আছে। সাবিনা যা তো চাবিটা নিয়ে আয়। সাবিনা চলে যেতেই মাহাদ আরো কয়েকবার আস্তে আস্তে ডাকল কিন্তু তিতিরের কোন সাড়া শব্দ নাই।"


-" তিতির অনেক কষ্টে বেড থেকে ওঠে কিন্তু হাঁটতে গিয়ে ধপ করে পড়ে যায়। প্রচন্ড জ্বরে গা কাঁপছে মেয়েটার। খোঁপা থেকে চুল গুলো খুলে ফ্লোরে ছড়িয়ে আছে। ফ্লোর থেকে শরীরটাকে অনেক কষ্টে তুলে ফ্লোরে বসেই মাথাটা বেডে এলিয়ে দিল তিতির।"


-" সাবিনা এক দৌড়েই মাহাদের কাছে এসে বলল-" ভাইজান এই নেন চাবি। জানিনা আপা কেমন আছে?"


-" কথাগুলো কি আস্তে বললে হত না! একদম চুপচাপ দাড়িয়ে থাক বলে মাহাদ চাবি পুস করে দরজা খুলেই দেখল পুরো রুম অন্ধকার। 
মাহাদের বুকের ভিতর তোলপাড় করতে লাগল। দ্রুত লাইট জ্বালিয়েই দেখল তিতির ফ্লোরে ওভাবে পরে আছে।"


-" আপা কি হইছে বলেই সাবিনা এসে তিতিরের কাছে গিয়ে গায়ে হাত দিতেই চমকে উঠল। ভাইজান আপার তো সেই জ্বর। তিতিরের গায়ে ওড়না নাই তাই শরীরের কিছু দাগ মাহাদের চোখে এড়ালো না।"


-" সাবিনা গরম স্যুপ আর ঠান্ডা পানি নিয়ে আয় বড় কোন বাটিতে করে। ওকে জল পট্টি দিতে হবে। মাহাদ কিছুটা কৌশলেই সাবিনাকে সরাতে বাধ্য হল। সাবিনা চলে যেতেই দরজাটা বন্ধ করে তিতির কে তুলে খাটে সুয়ে দিল।"


-" তিতির আধা চেতন অবস্থায় নিজের ওড়না টা হাত দিয়ে বার বার খুঁজছে। মাহাদ বুঝতে পেরে ওর শরীরে ওড়নাটা দিয়ে কপালে হাত বুলিয়ে দিয়েই বলল-" তিতির জ্বর বাঁধালা কিভাবে?"


-" তিতিরের শরীরে প্রচন্ড উত্তাপে চোখ দুটি থেকে পানি পড়তে লাগল। নাক টেনে বলল-" মনে হয় বেশিক্ষন ধরে গোসল করার জন্য জ্বর চলে আসছে। সমস্যা নাই কাল সকালে ঠিক হয়ে যাবে বলে তিতির চোখ বন্ধ করে ফেলল।"


-" তিতির মিথ্যা কথা বলা আমি একদম পছন্দ করিনা। আমি তোমার কাছে সব সময় সত্য কথাই শুনতে আশা করি। তাই সত্যটা আমাকে বল কি হইছে! তোমাকে আমি সকালে ভাল রেখে গেছি আর বাসায় এসে দেখি গায়ে জ্বর। এটা তো আর এমনি এমনি হয়নি।"


-" তিতির মাহাদের হাতটা নিয়ে ওর গালে চেপে ধরল। তারপর কাঁপা কাপাঁ কন্ঠে বলল-

"স্যার..... আমি যদি মারা যাই আপনি কি আমাকে ভুলে যাবেন?"


-" কথাটা শুনে মাহাদের বুকটা যেন দুমড়ে-মুচড়ে গেল। নিজেকে কন্টোল করে বলল-" তিতির আমার কাছে তোমাকে নিয়ে এসেছি বিছিন্ন হওযার জন্য নয়। আমি তোমাকে কতটা ভালবাসি আর তোমার জন্য কি করতে পারি সেটা জানাতে। তাই এগুলো ফালতু কথা যেন না শুনি।"


-" দরজা খোলার আওয়াজ হতেই মাহাদ উঠে দাড়াল।  সাবিনা সবকিছু নিয়ে এসে বলল 
ভাইজান সব কিছু আনছি।"


-" ওকে স্যুপটা খাইয়ে দিয়ে জলপট্টি দিয়ে দে। তিতির তোমায় একটু কষ্ট করে ওঠতে হবে। সাবিনা যা এনেছে খেয়ে নাও ;আমি একটু পর আসছি আর এসে যেন দেখি তুমি সব কমপ্লিট করেছো। কথাগুলো  বলে মাহাদ রুম থেকে বের হয়ে ওর রুমে চলে গেল।"


-" আপা চিন্তা করেন না ভাইজান খুব ভাল মনের মানুষ। আপনার ভালকিছু ব্যবস্থা না করে ঘুমাবেনা। আমার একবার ডেংগু জ্বর হইছিল তখন ভাইজানই আমাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল। আই তো ভাবছি মইরা যামু কিন্তু আল্লাহ্ এহনো বাঁইচা রাখছে।"


-" তিতির উঠে চুলগুলো খোঁপা বাঁধার চেষ্টা করতেই সাবিনা সব রেখে তিতিরের চুল বেধে দিল। আপা মৌ ভাবী কি আপনার গায়ে হাত তুলেছে?"


-" কই না তো। স্যুপটা তিতির আস্তে আস্তে পুরোটাই খেয়ে ফেলল। তিতিরের এখন মনে হচ্ছে মাহাদ ছাড়া ওর পৃথিবীতে আর কেউ নাই। এই প্রথম মাহাদের হাত ওর গালে স্পর্শ করিয়েছে ও নিজেই। সেখানে একটা শান্তি কাজ করছে।

সাবিনা তোমার ভাইজান কখন আসছে বাসায়? আর উনাকে আমার কথা তুমি কেন বলছো!"


-" কি করবো বলেন! আমরা এই পরিবারের এমন একখান মানুষ যে জ্বরে পরে থাকলেও খোঁজখবর নেওয়ার কেউ থাহেনা। আইতো কাউরে কইতে পারি নাই ভয়ে। ভাইজান আন্নের কথা জিগাইতেই আই সাহস করে কথাটা কইলাম।"


-" তিতির খাটে সুয়ে পড়তেই সাবিনা জলপট্টি দিতে লাগল। ঠান্ডা পানির স্পর্শে তিতিরের শরীর বারবার ঝিকে উঠছে। সাবিনা তিতিরের গায়ে কম্বলটা এঁটিয়ে দিয়ে ওর কাজ করতে লাগল।"

♦♦♦♦♦♦♦♦

-" মাহাদ আবার তিতিরে রুমে চলে আসল মেডিসিনের বক্স আর ল্যাপটপ টা নিয়ে। এর মধ্য সাবিনা তিতিরকে স্যুপটা খাওয়ানোর পর জলপট্টি দিয়ে দিচ্ছিল।

ভাইজান,,,, কই ছিলাম না মৌ ভাবী আপারে মারছে! আপার শরীরে অনেক গুলো মোটা মোটা দাগ। আপা হয়ে চুপ করে আছে আমি হলে ভাবীর গালে দুইটা চড় বসাইতাম।"


-" তোকে যেদিন মৌ মারবে সেদিন তুই উল্টা জবাব দিস বলে থার্মোমিটার দিয়ে তিতিরে জ্বর মেপে কিছু মেডিসিন সাবিনার হাতে দিয়ে বলল -" ওকে এগুলো খাওয়াই দে। "


-" সাবিনা সব মেডিসিন তিতিরকে খাইয়ে দিয়ে বলল-" ভাইজান আপনাকে যে কি বলে ধন্যবাদ দিব ভাষা নাই। আমি ঠিক মানুষকেই আপার বিপদের কথা জানাইছি। সাবিনা আবার  জ্বল পট্টি দিতে লাগল। কিছুক্ষনের মধ্য তিতির ঘুমিয়ে পড়ল। রাত তখন প্রায় দুইটা বাজে।


-" মাহাদ সোফায় বসে ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করছিল আর বারবার তিতিরের দিকে তাকাচ্ছিল।

অনেক রাত হয়ে যাওয়ায় মাহাদ উঠে দাড়াল। সাবিনা হইছে আর দিতে হবেনা। এগুলো রেখে আয়।"


-" সাবিনা চলে যেতেই মাহাদ তিতিরের কাছে গিয়ে তিতিরের হাতটা  ওর নিজের গালে স্পর্শ করালো যেমনটা তিতির করেছিল । মাহাদের নিজেরও এখন খুব ভাল লাগছে। তিতিরের হাতে ছোট্ট একটা কিস♥ করে উঠে দাড়াল মাহাদ। 

মাহাদ দাড়িয়েই ওর হাত তিতিরের গালে  ছোয়াতেই তিতির ঘুমের ভিতরই অল্প একটু ঝিঁকে উঠল। মাহাদ লাইটটা অফ করে ড্রিম লাইট জ্বালাতেই সাবিনা চলে আসল।

সাবিনা আজ তুই আপার কাছেই ঘুমা। দরজাটা ভিতর থেকে লাগিয়ে দে বলে সবকিছু নিয়ে চলে গেল মাহাদ তিতিরের রুম থেকে।

মাজাদ প্রচন্ড রাগী কিন্তু ঠান্ডা মাথার মানুষ। ওর প্রতিটা কাজ মারাত্বক যার লোড যাই-তাই নিতে পারেনা। 

ওর তিতিরের গায়ে হাত উঠিয়েছে তার শাস্তি যে কতটা ভয়ানক এবার মৌ টের পাবে।
মাহাদ তিতিরের শরীরে অনেকগুলো   দাগ দেখেছে। সাদা পিঠে দাগগুলো বড্ড বেমানান ছিল যেটা মাহাদ কিছুতেই মেনে নিতে পারছেনা।
মাহাদ ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়ল। মৌয়ের আইডিতে ঢুকে কিছু পিক কালেক্ট করে ইডিট করতে মনযোগ দিল। 

একটু সময় নিয়ে কাজটা নিখুঁত ভাবে করে ফেলল।  তারপর সেই পিকগুলো রেজওয়ানের আইডিতে পাঠিয়ে দিল।

এবার মাহাদ চোখ বন্ধ করে বলল-" যতটা আঘাত তুমি তিতিরকে বিনা কারনে দিয়েছ তার ৩ গুন আঘাত পাওয়ার জন্য প্রস্তত থাকো। আশা করি কাল সকালেই কাজটা হয়ে যাবে।

মাহাদ সবকিছু কমপ্লিট করে রাত ৩ টার দিকে ঘুমিয়ে পড়ল।

♦♦♦♦♦♦♦♦

-" পরদিন সকালে রেজওয়ান ঘুম থেকে উঠেই ফোনটা চেক করতে গিয়ে দেখে কয়েকটা মাসেজ এসেছে।
সেগুলো চেক করতে গিয়েই চোখ উপরে উঠে গেল। মৌয়ের সাথে অন্য ছেলে! মৌ ছেলেটিকে জড়িয়ে ধরে গালে কিস করছে।

মৌ পাশেই সুয়ে ছিল। রেজওয়ান মৌ কে এক ঝটকান দিয়ে বিছানা থেকে তুলে বলল -" এগুলো কি?"


-" ঘুমের চোখে মৌ পিকগুলো দেখে ভড়কে গেল। এই পিক কই থেকে আসল?
রেজওয়ান বিস্বাস করো আমি কিছু জানিনা। এই পিক গুলো কই থেকে আসলো......"


-" আমি বাহিরে খেঁটে মরি আর তুই ফুর্তি করে বেরাস! রেজওয়ান মৌয়ের চুলের মুঠি ধরে বেড থেকে নামিয়েই পিটন শুরু করে দেয়। মৌয়ের কোন কথায় শোনে না রেজওয়ান।

তোকে তো আমি কোনদিনই বিয়ে করতাম না। তোর আর আমার সম্পর্কের কথাটা কে যেন মাকে বলে দিয়েছিল তাই বাধ্য হয়ে তোকে বিয়ে করেছি। 
নিজেকে কি মনে করিস? তোর রুপে আমি পাগল হয়ে বিয়ে করেছি!"


-" রেজওয়ানের কথা শুনে মৌ প্রচন্ড রেগে গেল। মৌ গায়ের শক্তি দিয়ে রেজওয়ান কে ধাক্কা মেরে বলল -" মুখ সামলে কথা বল। এমন কিছু করি নাই যাতে তোমার সম্মানে এতটুকু আঁচ পৌছে।"


-" মৌয়ের ধাক্কায় রেজওয়ান দুরে সরে যায়। রেজওয়ান প্রচন্ড রেগে গিয়ে বেল্ট দিয়ে এলোপাথারি মারতে শুরু করল মৌ কে। তোর সাহস কিরে হয় আমায় ধাক্কা দেওয়া। কারো সাহস নাই আমার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলার আর তুই আমায় ধাক্কা দিস! তোর সাহস এতই বেড়ে গেছে? রেজওয়ানের এতদিনের রাগ একসাথে ঝাড়ল মৌয়ের উপর।

মৌ তিতিরের শরীরে যত গুলো দাগ এঁকে দিয়েছিল তার থেকে বেশি আঘাত ইতিমধ্য মৌয়ের শরীরে পড়ে গেছে। 

মৌ আর কোন কথা বলতে পারেনি। শুধু নিঃশব্দে কান্না করে গেছে। শেষে রাতিশা ঘুম থেকে উঠে চিৎকার দিয়ে কান্না করে ওঠে তখন রেজওয়ান থামে।"


-" মৌয়ের শরীরে কিছু জায়গায় কেটে গিয়ে রক্ত বের হয়েছে। মৌয়ের চাপা কান্না চার দেয়ালেই সীমাবদ্ধ থাকে। "

♦♦♦♦♦♦

- " অনেক বেলা হয়ে গেছে। তিতিরের আর জ্বর নেই। ঘাম দিয়ে শরীরের জ্বর নেমে গেছে। সকালের নামাযটা কাযা হয়ে গেছে তাই ওযু করে এসে কাযা নামায পড়ে রুম থেকে বের হয়ে মৌয়ের রুমে চলে গেল। "


-" রাতিশা কান্না করেই চলছে। আর মৌ সুয়ে আছে অন্যদিক হয়ে। মেয়ে যে এত কান্না করছে এতে তার মাথা ব্যাথা নেই।। রেজওয়ান অনেক আগেই  অফিসে চলে গেছে। 
তিতির এসে রাতিশাকে কোলে নিয়ে বলল-" আপু ও কাঁদছে কেন?"


-" যা তো এখান থেকে বলেই চেঁচিয়ে উঠল মৌ। এই তোর লজ্জা করেনা! কাল ওত মাইর খাওয়ার পরেও এখানে আসছিস?
আমি হলেতো কখন এই বাসা ছেড়ে চলে যেতাম। আসলে তোর লজ্জা বলে কিছু নাই। বেলজ্জাহীন মেয়ে কোথাকার।"


-" তিতির কিছু না বলে রাতিশাকে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে এল। রুম থেকে বের হতেই সাবিনা এসে মৌ কে বলল-" ভাবী মাহাদ ভাইয়া আপনাকে ডাকছে। "


-" মাহাদ মৌ কে ডাকছে এই কথা শুনে তিতির ভয় পেয়ে গেল। নাজানি আবার কি ঘটে। এতদিনে মাহাদকে অনেকটা চিনে গেছে তিতির। আল্লাহ্ দেখ এমন কিছু অশান্তি যেন না হয়।


-" মৌ ও কিছুটা অবাক হয়ে গেল। এতদিন হল এই বাসায় ও এসেছে কিন্তু মাহাদ ওর সাথে কোনদিনও কথা বলে নি তাহলে আজকের দিনেই বা কেন ডাকছে ওকে। সাবিনা  তুই যা আমি আসছি বলে মৌ বিছানা থেকে উঠল। ব্যাথার মেডিসিনটা ভালোই কাজে লেগেছে। কিন্তু দাগগুলো কিভাবে লুকাবে!  মৌ শাড়ীর আচল দিয়ে নিজেকে ঢেকে নিল।

কিন্তু ঐ পিক গুলো রেজওয়ান কে দিল। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে মৌ মাহাদের রুমে চলে গেল। মৌ মাহাদ কে খুব ভয় পায়। কারন এর আগে মাহাদের অনেক কাজ নিজের চোখে দেখেছে।

অনেকটা ভয়ে ভয়েই বলল-" মাহাদ আসবো!"


-" মাহাদ ফোন চাপছিল। ফোন থেকে মুখটা তুলে মৌয়ের দিকে তাকিয়ে ভেতরে আসতে ইশারা করল।

মৌ রুমে এসে সোফায় বসে পড়ল।"


-" কেন ডাকছিলেন?"(মৌ)


-"  মৌয়ের কথায় মাহাদ আরো ক্ষেপে যায়। সোজা অ্যাকশন।

 আপনি আমার রুমে আসছেন তাতে কিছু দোষ নাই কিন্তু তিতির আসলেই সব দোষ ওর হয়ে যায় তাইনা?

আপনার সাহস কি করে হয় তিতিরের গায়ে হাত তোলা? কার হুকুমে ওর গায়ে হাত তুলেছেন বলে জোড়ে একটা ধমক দেয় মাহাদ।"


-" মৌ ভয়ে কেঁপে ওঠে মাহাদের ধমকে। একদম চুম হয়ে গেল। 

তিতির কি এসব কথা আপনাকে বলেছে!মৌ কথাগুলো প্রচন্ড রাগ নিয়ে বলল মাহাদকে। "


-" চুপপপ............. সকালে স্বামীর হাতে উত্তম মাধ্যম খেয়েও দেখছি আপনার লজ্জা হয়নি। আরও খাওয়ার ব্যবস্থা কি করতে হবে নাকি!
তাহলে রাব্বির সাথে  আপনার অন্তরঙ্গ যে সব পিক আছে সেগুলো আপনার স্বামীকে দেখানোর ব্যবস্থা করেই ফেলি। কি বলেন মৌ ভাবী!"


-" মৌয়ের কথাগুলো এবার ওর নিজের গলায় আটকে গেল। রাব্বির সাথে ওর গভীর একটা সম্পর্ক ছিল এটা মাহাদ কিভাবে জানলো। মৌ রিতিমত ঘামতে শুরু করে দিয়েছে। এসি রুমেও যে কোন মানুষ এত ঘামে সেটা মৌকে না দেখলে কেউ বিস্বাস করবেনা।

মৌ এসে অচমকায় মাহাদের পা ধরে বলল -" মাহাদ আমার সংসারটা নষ্ট করে দিবেন না। আমার একটা সন্তান আছে। ওর মুখের দিকে চেয়ে হলেও আমার এতবড় ক্ষতি করেন না প্লিজ। আমি আর ভবিষ্যতে রাব্বির সাথে যোগাযোগ করবো না। আমাকে ক্ষমা করে দিন।"


-" পা ছাড়ুন বলেই মাহাদ উঠে দাড়াল। আপনি দেখছি নিজের স্বার্থের জন্য অন্যর পা ধরতেও দ্বিধাবোধ করেন না। আমি ভাল করেই জানি আপনি এখনো পরোকিয়ায় লিপ্ত। ভাল হয়ে যান মেয়েটার কথা ভেবে। 

আর একটা কথা আপনি জানেন না কিন্তু আজ কথাটা শোনা আপনার খুব দরকার।

মিসেস রেজওয়ান আমিই আপনার সংসার জিবন শুরু করে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি তাই আমি নিশ্চয় চাইবোনা আপনার সুন্দর সাজানো গোছানো সংসার টা নষ্ট হয়ে যাক।

এখান থেকে ফিরে তিতিরের কাছে ক্ষমা চাইবেন। 

আপনি হয়ত জানেন না তিতিরের সাথে আমার 
সম্পর্ক ৩ বছর ২ মাস ১৮ দিন  কয়েক ঘন্টা চলছে। আপনি আপনার স্বামীর জিবনে আসার আগে আমরা  সম্পর্কে আবদ্ধ হয়ে গেছি। আর এই তিতিরের জন্যই আপনি এই বাসায় আসার সুযোগটা পেয়েছেন। ফুফুকে আপনাদের বিয়ের ব্যাপারে আমিই রাজি করিয়েছি। কাজটা কিন্তু মোটেও সহজ ছিলনা। সেদিন যদি আপনার বাসায় ফুফুকে না পাঠাতাম তাহলে হয়ত আপনি সুইসাইড করতেন। কারন আপনি ছিলেন তখন প্রেগন্যান্ট। 

এখন আপনি গাছেরও খাবেন তলারও কুড়াবেন সে তো আর হয়না। বিয়ের পর বহু বছরের প্রেমিককে আবার নিজের জিবনে আনতে যখন চাবেনই তাহলে রেজওয়ানের সাথে  ফিজিক্যালে কেন জরাইছিলেন! 

আপনার তো আবার লজ্জা শরম বলতে কিছু নাই।


-" মৌ এবার কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল। কান্না করতে করতে  বলল -"এত কথা আপনি কিভাবে জানেন?"


-" আপনি দেখছি ভালয়  ড্রামাবাজ। ড্রামাও চুটিয়ে করতে পারেন।

দেখুন.....কি ভাবে জানসি সেটা কোন বিষয় না; আমি কি করতে পারি সেটাই আসল বিষয়। তিতিরকে তো আমার কাছে নিয়েই আসতাম সেটা যেভাবেই হোক না কেন! 

আর একটা কথা আপনার বাবা তিতিরের সাথে যেটা করার চেষ্টা করেছে তাতে যে ওনাকে আমি মার্ডার করি নাই সেটা ওনার চৌদ্দ পুরুষের ভাগ্য। 
তাই আপনাকে আবার সাবধান করে দিচ্ছি তিতিরের গায়ে হাত তোলা মানে মাহাদের গায়ে হাত তুলছেন। হিংসা না করে কৃতঙ্গতা আদায় করতে শিখুন। যার জন্য আপনার এখানে স্থান হয়েছে তার সাথে না লেগে নিজেকে সংশোধন করুন। এতে আপনি এবং আপনার পরিবার দুটাই বেঁচে যাবে।

আপনি এখন যেতে পারেন। "


-" মাহাদ এতসব কথা আমার জানা ছিলনা। আল্লাহ্ চায়তো তিতিরকে নিজের বোনের মত রাখবো। আমাকে পারলে ক্ষমা করে দিয়েন বলে মৌ রুম থেকে বের হয়ে গেল।"


-" তিতিরের উপর শুধু মাত্র আমারই অধিকার রয়েছে। তিতির আমার গায়ের চাদর। এই চাদর নিয়ে যদি কেউ টানাটানি করে তাহলে তো তাকে আগুনের সুমুদ্রে সাঁতার কাটতেই হবে। মাহাদের এখন অনেকটা রাগ কমে গেছে।"

♦♦♦♦♦♦

-" দুই দিন পর মাহাদের পাশে তিতির খেতে বসেছে এমন সময় তিতির মাহাদের পায়ে ওর পা দিয়ে সুরসুরি দিতেই চমকে উঠে মাহাদ দাড়িয়ে পড়ল।"


- লাবীবা অবাক হয়ে গেল।  কি রে মাহাদ ওভাবে খাবার ছেড়ে লাফ দিয়ে উঠলি কেন? মাথা কি খারাপ হয়ে গেছে!
নেশা-টেশা করে আসছিস নাকি?"


-"  আমিই তো নিজেই কিছু বুঝতে পারছিনা মা.....
মা আমার মনে হয় ডাইনিং টেবিলের নিচে এনাকোন্ডা সাপ আছে। কিন্তু রাট্যাল  স্নেকের মত কামড় বসাচ্ছে কেন সেটাই বুঝতে পারছিনা বলেই তিতিরের দিকে তাকাল মাহাদ।
অনেকটা রাগের সাথেই মাহাদ খাবার ছেড়ে চলে গেল।
এদিকে তিতির মাথা নিচু করেই মুচকি হেঁসে উঠল"


-" তিতির মাহাদের প্রেমে পুরোই মজে গিয়েছে। ফাঁক বুঝে মাহাদের রুমে যায়। মাহাদের শার্ট বের করে নিজে পড়ে আয়নার সামনে দাড়িয়ে কথা বলা। মাহাদের বেডে সুয়েই গড়াগড়ি দেওয়া। মাহাদের পার্রসোনাল জিনিসে হাত দেওয়া। মাহাদ অগোছালো জিনিস পছন্দ করেনা তবুও মাহাদের গোছানো জিনিসপত্র অগোছালো করা। যতসব অত্যাচার মাহাদের সাথে।


-" মাহাদ সন্ধ্যার একটু আগে ছাদে হাটাহাটি করছে আর ওর ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছে এমন সময় তিতির এসে চারদিক চোখ বুলিয়ে কাউকে দেখতে না পেয়ে সেই সুযোগে মাহাদের গালে চটাস করে  করে একটা কিস♥ করে দৌড় দিতেই মাহাদ তিতিরের হাত ধরে ফেলল।

আমাকে তোমার ভয় করে না তিতির..........?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন