আমার একটাই যে তুই - পর্ব ০৩ - সিজন ২ - সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি - ধারাবাহিক গল্প


ওয়াশরুম থেকে মাথা মুছতে মুছতে বের হয়ে আসে ইউসুফ। কুহুকে রুমের মাঝে না দেখে বেলকনিতে উঁকি দিতেই দেখতে পায় কুহুকে। সে বাহিরের দিক মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে।হালকা  পিছন সাইড দেখা যাচ্ছে। ইউসুফ আর একটু সামনে যেতেই দেখলো কুহুর জামার চেইন পিঠ পর্যন্ত নেমে এসেছে। ভিতরের অন্তর্বাস দেখা যাচ্ছে। ইউসুফের চোখ কঁপালে। বাচ্চা বউটি তার এভাবেই ঘর থেকে হয়েছিলো নাকি? কুহুর দিক পা বাড়ালো। আরেকটু কাছে যেতেই ইউসুফ চোখে পড় পিঠ থেকে কিছুটা উপরে আর ঘাড় থেকে কিছুটা নিচে লাল হয়ে থাকা জম্ম দাগটি। এটি যেন ইউসুফের দুর্বলতা। এ দাগটির যতবার দেখে মুহূর্তেই তার যেন পুরো পৃথিবী উল্টে যায়। ইউসুফ তার অকপটেই কুহুর জামার চেইন লাগিয়ে দিল। জম্মদাগের স্থানটিতে গভীর ভাবে ঠোঁট বসালো।

 কুহু তখন ঘোরের মাঝে ছিলো। ফোনের ওপাশ থেকে কখন থেকে বলে যাচ্ছে নাম্বার টি বন্ধ আছে। বুকে তীব্র থেকে তীব্রতর ব্যথা অনুভব হচ্ছে তার। আর তখনি কারো ঠান্ডা ঠোঁটের স্পর্শে কেঁপে উঠে। সারা শরীর  লোম যেন দাঁড়িয়ে যায় তার। কুহু আবেশে চোখ বুঝে। ইউসুফ এবার গভীর ভাবে তাকে দুহাতে জড়িয়ে নেয়। ঠোঁটের স্পর্শ এবার যেন আরো গাড়ো হচ্ছে। 

কুহুর হুশ ফিরতেই ছিটকে দূরে চলে আসে। ইউসুফ আহত দৃষ্টিতে তাকায় কুহুর দিক। কুহ তখন চেঁচিয়ে উঠে,,

---" আপনার সাহস কত?  আপনি আমাকে স্পর্শ করছেন?"

ইউসুফ নিজের কাজে নিজেই বিস্মিত।সে বলল,,
---" রিয়্যাক্ট কেন করছি! আমি তোর হাসবেন্ড।  অধিকার আছে তোর উপর আমার। "

---"কিন্তু সেই অধিকার আমি আপনাকে দেই নি। না কখনো দিব! "

ইউসুফ চুপ রইলো। ব্যথাতুর  সুরে বলল,,

---" সরি!"

রুম থেকে বের হতে নিলো ইউসুফ তখনি তার কিছু একটা মনে পড়তেই সে পিছনে ঘুরে তাকালো। ভ্রু কুঁচকে গেল তার। কুহুর হাত তার ফোন। ইউসুফ সন্ধিহান দৃষ্টিতে চেয়ে বলল,,

---" আমার ফোন তোর হাতে কেন?"

কুহু এতক্ষণ বাঘিনী রূপে ছিলো। প্রশ্নটি শোনার পর ভেজা বিড়াল হয়ে গেলো সে। মুহুর্তেই রং পাল্টে গেলো মুখের। ইউসুফ  এগিয়ে এসে ফোন হাতে নিতেই। কুহু আমতা আমতা করে বলল,,

---" আম্মুকে কল করছিলাম!"

---" সত্যি বলছিস? তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ইউসুফের। 

কুহু মাথা নাড়ালো। ইউসুফ আবার বলল,,

---" মিথ্যা আমার সহ্য হয় না। তার জন্য কঠিন শাস্তি পেতে হয় সবাইকে। সে আমার আপনজন হোক বা কলিজা হোক কাউকে ছাড় দেই না।"

কুহু ঘামতে লাগলো। অস্বাভাবিক ভাবে কাঁপতে লাগলো। ইউসুফ কুহুর কাছে এসে দাঁড়ালো। কঁপালের বিন্দু বিন্দু ঘাম মুছে দিয়ে বলল,,

---" মানুষ তখন এভাবে ঘামে যখন সে মিথ্যা বলে!"

কুহু সাথে সাথেই ঘাম মুছলো। চাপা হেসে ববলার ট্রাই করলো,,

---" গরম লাগছে তো তাই ঘামচ্ছি!"

ইউসুফ জহুরি নজরে তাকালো কুহুর দিক। কুহু চুপসে যাওয়া মুখটি নতজানু করে ফেলে। ইউসুফের জেরা যেন সেখানেই শেষ হলো না সে আরো প্রশ্ন করবে তার আগেই ডাক পরে মনিশার। সে চেঁচিয়ে  বলে," আসচ্ছি খালামনি!"

বলেই পাশ কেঁটে বের হয়ে যায়।  রুমের বাহিরে এসে বড় বড় শ্বাস নিতে লাগে সে। মাঝে মাঝে ইউসুফকে তার জমরুদ মনে হয়। 
______________

----" আমার হাতের চিকেন তন্দুরি ইউসুফের খুব প্রিয় জানিস!"মনিশা উৎসাহের সাথে বলল।

তেলের মাঝে লেগ পিস  দিয়ে আবার বলল,,

---" বরাবর তার এই লেগ পিসটাই চাই। হাসলেন তিনি। আবার বললেন,,

---" ভাবচ্ছিস তোকে কেন বলছি? তাই না! "

কুহু হাসলো  শুধু। মনিশা বলল,,

---" ছেলেটি আমার খুব খাদুক প্রিয়। আমি তো থাকবো সারাজীবন তোরই দেখতে হবে আমার পাগলাটে ছেলেটাকে। তাই বলছি!"

কুহু পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো। মনিশার কথায় তার কান্না কান্না পেল। সে দুঃখী গলায় বলল,,

---" এমন বলো না খালামনি। তুমি কোথাও যাবে না।"

মনিশা বুকে জড়িয়ে নিলেন কুহু বড্ড আফসোস হলো তার।  এ পরিবারে সে আর বেশিদিন চেয়েও থাকতে পারবেন না। তার তো যেতেই হবে। এখন শুধু দায়িত্ব একটি তার এই বেপরোয়া ছেলেটি আর এ সংসার কুহুকে বুঝিয়ে দেয়ার। তারপর চিরো বিদায়।
___________

কুহু ভাবতে ভাবতে রুমে ঢুকলো। ইউসুফ চলে গেছে এতক্ষণে। এ ব্যক্তিটি যতক্ষণ সামনে থাকে ততখন যেন তার প্রাণ পাখি বের হয়ে যাওয়ার জন্য উথাল-পাথাল করে বেড়ায়। কিন্তু কুহুর ভাবনা শুধু ভাবনাতেই রইলো। রুমে ঢুকেই ইউসুফকে দেখে হকচকিয়ে গেল। ইউসুফ সোফার উপর পা তুলে বসে আছে। দু হাতের আঙ্গুলে তার ফোন খানা ঘুরাচ্ছে তার দিকে তাকিয়েই। তার দৃষ্টিও যেন কেমন।

----" ভয় পেলি যে!" ইউসুফের কন্ঠে কুহু তার দিকে তাকায়। চাপা হেসে বলে,,

---" ভয় পাবো কেন? আপনি বাঘ না ভালুক!"

----" এ মুহূর্তে তোর জন্য দুটোই।"কন্ঠ অতি মাত্রায় শীতল। 

কুহুর গলা শুকিয়ে কাঠ। সে বলল,,

---" ভয় দেখাচ্ছেন?"

---" ভয় দেখানোর মতো কোনো কাজ করেছিস?"

কুহুর এবার ভয়ঙ্কর রকমের ভয় করতে লাগলো। সে কিছুতেই বুঝতে পাড়ছে না ইউসুফের ভাবমূর্তি। তার অবলীলায় প্রশ্নের পিষ্ঠে প্রশ্ন করা কিছুতেই হজম হচ্ছে না। কুহু এ মুহূর্তে ঠিক কি করবে ভেবে উঠতে পারছে। তবুও সাহস করে বলল,,

---" আমি তো তেমন কিছু করিনি। "কন্ঠ নালির কাঁপণ স্পষ্ট।  

ইউসুফ বাঁকা হাসতে হাসতে উঠে আসতে লাগলো কুহুর দিক। বলল,,

---" তাই!"

কুহুর কি হলো সে দরজার কাছে চলে এলো। কিন্তু হায় দরজা বন্ধ। কিছুতেই খুলতে পাড়ছে না। লক হয়ে গেছে। 

---" ওটার সাথে লড়াই করে লাভ নেই। খুলবে না। লক আমি করে দিয়েছি!"

কুহু ভয়ে ভয়ে পিছনে তাকালো,,
---" কেন করেছেন?"

ইউসুফ কুহুর দু পাশে দু হাত রেখে তাকে বাহু ডোড়ে বন্ধ  করে নেয়। ফিসফিস করে বলে,,

---" আমাদের প্রাইভিসির জন্য!"

কুহু পিলে চমকে গেলো। ইউসুফ কি করতে চাইছে? 

---" যা ভাবছিস তাই!"

ইউসুফের কথায় চোখ বড় বড় করে তাকালো। লোকটি মনের কথা কেমনে বুঝলো। কুহুর যেন শ্বাস  নিতে কষ্ট হচ্ছে হাপনি রোগীর মতো ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছে। কন্ঠ নালিতে কথা গুলো আঁটকে যাচ্ছে। তবুও সর্বস্র শক্তি প্রয়োগ করে বলল,,

----" দূরে স্বরে দাঁড়ান।  আমাকে কাছে আসবেনা।!"

ইউসুফের এতক্ষণ দমিয়ে রাখা রাগ এবার ফুটলো যেন। দুহাতে কুহুর বাহু চেপে ধরে হিসহিসিয়ে বলে উঠলো,,

---" আমি তোর বর হয়ে তোকে ছুঁতে পারবো না কাছে আসতে পারবো না!  কিন্তু তুই পরপুরুষের সাথে পরক্রিয়ায় লিপ্ত হবি? তা সহ্য করবো? "

কুহু ইউসুফের কথায় বিস্ময় ব্যথার কথা ভুলেই গেলো।

---" আমি কারো সাথে পরক্রিয়া করছি না।"
---" তাই? বিয়ের পরও অন্য ছেলের সাথে কথা বলতে তোর বিবেকে বাজলো না?  ভুলে গেছিস? তুই আমার স্ত্রী।"
---" এ বিয়ে আমি মানি না!জোড় করে করেছেন আপনি। তাই আমার যা ইচ্ছে আমি করবো।" কুহুর ডর-ভয় উগে, কন্ঠে তেজ প্রকাশ পেলো!"

ইউসুফ  কুহুর চিবুকে চেপে ধরে বলল,,
---" আবার বল!"

কুহু আবার বলতেই ইউসুফ কুহুর গালে পাঁচ আঙ্গুলের দাগ বসিয়ে দিলো। কুহু ফুপিয়ে উঠলো। ঠোঁট কেঁটে রক্ত বেড়িয়ে এলো। কুহু এবার চেচিয়ে বলল,,

---" আমি আশিককে ভালবাসি! বুঝলেন? আপনি মারুন কাটুন যা ইচ্ছে করুন। আমার শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে শুধু ওর নামই লিখা আছে!"
 
কথাটি কর্ণপাত হতেই ইউসুফ হিংস্র হয়ে উঠলো। কুহুকে টেনে তুলে বলল,,

---" আজ থেকে এ শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে আমার দেয়া দাগ পাবি শুধু। বলেছিলাম মিথ্যা বলিস না শুনলি না তো? "

ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দিলো কুহুকে। কুহু হতবুদ্ধি কি হতে চলেছে তার সাথে। সে উঠতে নিতেই ইউসুফ তার উপর চড়ে বসে। কুহু গলায়, ঘাড়ে সহ বিরতিহীন ভাবে কামড়াতে শুরু করে। কুহুর চিৎকার শুধু ইউসুফের ঘরের চারদেয়ালে গুঞ্জন হতে থাকে। কুহুর কাছে ইউসুফকে হিংস্র পশু মনে হচ্ছে। সে যেন তার ইউসুফ ভাইকে এ ইউসুফের সাথে মেলাতেই পাড়চ্ছে না। ভয় হচ্ছে খুব। মনে হচ্ছে এটি যদি স্বপ্ন হয়! ভেঙ্গে যাক দেখতে চাই না দুঃস্বপ্ন। নিতে পারছে না আর কুহু। ইউসুফের প্রতিটা কামুরে মরণ যন্ত্রণা অনুভব করছে সে। ধীর ধীরে চোখ বুঝে ফেলল কুহু। হাড়িয়ে গেল গহীন অন্ধকারে।

—————

কারো কান্নার মৃদু ধ্বনি ভেসে আসতেই ঘুম ছুটে যায়  কুহুর। শরীরে তখন তার তীব্র মাত্রায় ব্যাথা। চোখ-ও জ্বালা করছে খুব। চোখ মেলে খুব কষ্টই তাকালো কুহু দেখতে পেলো, শুভ্র পাঞ্জাবিতে একটি সুদর্শন যুবক জায়নামাজের সিজদায় পড়ে কান্না করছে।কান্নার দমকেই তার পিঠ কেঁপে কেঁপে উঠছে ধীমি ধীমি আওয়াজে ভেসে আচ্ছে কিছু আওয়াজ।  কিন্তু তা কর্নপাত হচ্ছে না কুহুর। কুহু চোখ মুখ কুচকালো। বুঝতে বাকি নেই এ যে ইউসুফ। এত কঠোর মানুষ এভাবে কেন কাঁদচ্ছে বুঝতে পাড়ছে কুহু। কুহু ধীরে ধীরে উঠে ইউসুফের কাছে গেল। মনে খচখচানি দূর করতে না পেরেই সে ইউসুফকে ঢেকে উঠলো প্রথমবার। সারা নেই কোনো। দ্বিতীয় বার ডাকতেই। ইউসুফ তার দিক ফিরে। কুহুর বুক ধক করে উঠে। ইউসুফের চোখ ভয়ংকর লাল। চোখের কার্নিষ ঘেঁষে  টুপ করে তখন এক ফুটো মুক্ত দানা গড়িয়ে পড়লো। কুহু তাকিয়ে রইলো ইউসুফ বিলাই চোখ দুটোর দিক।এ লোকেরও এমন রূপ  আছে? বিয়ে না হলেতো জানতেই পাড়তো না সে। কুহু ঢুক গিললো কিছু বলার আগেই ইউসুফ গম্ভীর কন্ঠ বলল,,

---" আজান দিচ্ছে অজু করে আয়।  এক সাথে সালাত আদায় করি।"

কুহু আর কিছু বলতে পাড়লো না।  তার দাম্ভিক মুখখানা দেখে যেন কথা আটকে গেলো। ঘাড় কাত করে হে সম্মতি জানিয়ে ওয়াশরুমের দিক চলে গেল। কিছুক্ষণ পর নামাজের জন্য তৈরি হয়ে ইউসুফের পাশেই একটু দূরে বসে নামাজ আদায় করতে লাগলো।

নামাজ শেষ হতেই প্রতিটি মুহূর্ত ইউসুফের দাম্ভিক মুখ খানা তার চোখ বিরাজমান।  আজ অনেক দিন পর যেন শান্তি লাগেছে তার অশান্ত মনে। ইউসুফকে কেন জানি এ বেশে তার কাছে চোখ ধাধানো সুন্দর লাগচ্ছে। তখনি প্রশ্নটি উঁকি দেয় কুহুর মনে। প্রতিটি ছেলেরাই বুঝি আল্লাহর দরবারে হাজির হলো এতে অলৌকিক ভাবে তার শরীরে নূর ভেসে উঠে??

কিন্তু কই? আশিকে সে বহু বার নামাজ পড়তে দেখেছে, এমন নূর তার মুখখানায় দেখেনি কখনো। তাহলে?

আজ প্রথমবার কুহু ইউসুফকে নিয়ে এত গারো ভাবনায় লিপ্ত।  সেই সাথে তার শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ  খুটিয়ে খুটিয়ে  দেখায় ব্যস্ত। যত বার সে ইউসুফের চোখে তাকিয়েছে ততবার তার বক্ষস্থল দ্রিম দ্রিম শব্দে তবলা পিটাতে শুরু করেছে। কেন হচ্ছে এমন??

ইউসুফ মোনাজাত তুললো। ক্রোদন স্বরে আল্লাহ কাছে পানাহার চাইছে। কুহু শুধু চেয়ে দেখছে এই দাম্ভিক, গম্ভীর মানুষটির কমলতা। অথচ এই যুবকটি কাল রাতে কতটা অত্যাচার করেছে। শরীরে তার দেয়া দাগ গুলো দৃশ্য মান। কুহুর এবার সব এলোমেলো লাগতে লাগলো। এ রূপ দেখে কখনো কেউ বলতে পাড়বে না,  ইউসুফের একটি পৈশাচিক রূপ আছে। 

ইউসুফ মোনাজাত শেষ করলো। ডান কাতরে বসেছিলো কুহু। সেদিকে ঘাড় কাত করে কুহুকে আদেশ করলো,,,

---" যখন যা ইচ্ছে কর! পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ  আর কোরআন তিলাওয়াত করতে ভুলবি না কখনো। প্রতি এক পাতা হলেও কোরআন পড়বি!"

কুহু হা করে চেয়ে আছে ইউসুফের দিক! ইউসুফ তা দেখে হেসে ফেললো। কুুহু চেয়েই রইলো। ইউসুফ বলল,,

---" আজ কোরআন পড়তে হবে না তোর যা শুয়ে পড়। এমনিতেও তোর শরীর ভালো না।"

কুহু বলবে এ মুহূর্তে বুঝতে পাড়লো না। সে ইউসুফের কথা মতোই বিছানায় উঠে গেলো। ইউসুফের দিক মুখ করে শুয়ে রইলো। ইউসুফ তার দিক ফিরে মিষ্ট করে হেসে। কোরআন পড়তে শুরু করলো। কুহু এবার অবাকের শেষ চুড়ায়। কিন্তু যখনি গুন গুন শব্দ তুলে সুন্দর স্বরে কোরআন তেলাওয়াত করতে মগ্ন হলো ইউসুফ, কুহুর মনে হলো এর থেকে মধুর ধ্বনি বুঝি এ দুনিয়াতে নেই। তার কোরআন পড়ার সময়ও এত সুন্দর সুর উঠে না। কুহু চোখ বুঝে শুন্তে লাগলো। সেই সুর। শুন্তে শুন্তে কখন যে সে ঘুমের জগতে তলিয়ে গেছে বুঝতেই পারেনি।
___________

বর্ষাকাল শুরু হয়েছে আজ ১৫ দিন চলল। দু দিন যাবত বৃষ্টি থামার নাম নেই যেন। বর্ষার এই বর্ষণের ফলে ঘর বন্দি থাকে সকলেই।  তবে বেশির ভাগ মানুষ পেটের দায় বাদলা দিনেই ছুটতে হয় কাজের জায়গায়।  কিন্তু ইউসুফ চেয়েও যেতে পাড়ছে না আজ। বর্ষণের ফলে তাকে আঁঁটকে পড়তে হয়েছে ঘরে। কিন্তু কাজ থামেনি তার। খোলা জননার ধারে বসে গরম ধোয়া উঠানো কফি পান করতে করতে মিটিং চলছে তার। কিন্তু নিজ থেকে আসা ক্ষীণ শব্দ গুলো তার কাজে কি পরিমাণ ব্যঘাত ঘটাচ্ছে তা যতি তার বুঝতো? মুখ দিয়ে তখন বিরক্তিতে "চ" করে শব্দ বের হয়ে এলো। মিটিং কোনো রকম শেষ করেই  বিরক্তি নিয়ে নিচে নেমে এলো সে।

টেবিলে আজ গরম খিচুড়ি,  তার সাথে গোস্তো ভোনা, বেগুন ভাজা, ইলিশ মাছ। সাথে নানা রকম আচার।  মুখে যেন জল এসে যাওয়ার মতো। মনিশা সব সাজিয়ে রাখছে। কাল তার ননদের  দুই মেয়ে এসেছে কুহুকে দেখতে।  মনিশা আর যেতে দেয়নি দুটোই জমজ নাম নুশরা-বুশরা। তাদের পেয়ে কুহু,  মিশু ও যেন বাচ্চা হয়ে উঠেছে। ইউসুফ এরি মাঝে নিচে নেমে আসতেই।  মনিশা হেসে বলল,,

---" আয় বাবা,  খেতে বস। গরম গরম খিচুড়ি। "

ইউসুফ সেদিকে গেলো।কুহুদের সোরগোলের শব্দ আবার কানে আসতেই ধমকে উঠলো,, 

---" সব সময় খিখি না করলে চলে না,  না? এত কিসের কিলবিল তোদের? কাজ করেও শান্তি নেই। ঘরটা যেন মাছের বাজার।"

ইউসুফের ধমকে সব চুপ। মনিশা তখন তারা দিয়ে বলল,,

---" হয়েছে অনেক খেলাধুলা এবার আয় খেতে সব। আয় আয়!"

সকলেই চুপি সারে খেতে বসে গেলো। মনিশা আর কুহু মিলে সবার খাবার বেরে দিতে লাগলো। কুহু আজ গলার মাঝে ওড়নাটা মাপলারের মতো পেঁচিয়ে রেখেছে। তা নিয়ে কখন থেকে মিশু, নুশরা-বুশরা সন্ধিহান দৃষ্টিতে চেয়ে কি বলে হেসে যাচ্ছে মিটিমিটি।  কুহু তাতে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ছে। বার বার ওড়না টেনে ঠিক করছে। নুশরা তখন টিপনি কেঁটে বলে উঠলো,,

---" আপি তোর গলায় কিসের দাগরে?"

কুহু লজ্জায় পড়ে গেলো। ইউসুফও তখন সেদিকে তাকালো। মিশু সেই মুহূর্তে বলে উঠলো,,

---" মনে হচ্ছে তোকে কেউ কামড়েছে?

কুহুর যেন এবার নদীতে  ঝাপ দিতে মন চাইছে। ইউসুফ   তখন নির্বিকার ভঙ্গিতে খাচ্ছে। কুহু আড় চোখে তাকালো ইউসুফের দিক। তার জন্যই এতো লজ্জাতে পড়তে হচ্ছে আজ। নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরলো কুহু। থুতনি টা লজ্জায় বুকের সাথে  মিশিয়ে মিন মিন করে বললো,,

---" তেমন কিছু না আপু। মশা কামড় দিছিলো  আর কি? "

তখনি বুশরা বলে উঠলো,, 

---" মশাটা বুঝি বেশিই বড় ছিলো তাই আপি। তোমাদের বাসায় এত বড় বড় মশা হয়!"

কুহু যেন পড়লো মাইনকার চিপায়। এ অবস্থা  কি করবে বুঝে উঠতে না পেরে অসহায় ভাবে তাকালো ইউসুফের দিক। বেটা নিশ্চিন্ত  খাবার চিবুচ্ছে।  আর ফোন চাপচ্ছে। মনিশা তখন তার অবস্থা বুঝতে পেরে কপাট রাগ দেখিয়ে বলল,,

---" কি শুরু করেছিস তোরা? খেতে বসে এতো কিসের গল্প খা চুপ চাপ।"

সবাই চুপ-চাপ খেতে লাগলো। একটু যেন স্বস্তি পেল। মনিশাকে ধন্যবাদ আর ইউসুফকে বকতে বকতে রান্নাঘরে চলে গেল। মনে মনে বলল,,

---" অসভ্য লোক!"

খাবার শেষে ইউসুফ উপরে যেতেই।  কুহুও উপরে গেলো। ততখনে বৃষ্টি কমে গেছে। কবির এসে নিচে ওয়েট করছে।  ইউসুফ কাপড় পাল্টে বের হতেই কুহুকে কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকায়,, 

---" কি সমস্যা?  এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?"

কুহু কিড়মিড় করে বলল,,

---" কাজটি আপনি মোটটেও ভাল করেেন নি। আপনার জন্য কত বড় লজ্জায় পড়লাম সবার সামনে!"

---"তো" ইউসুফ নির্লিপ্ত কথা।

কুহু রেগে ফেটে পড়লো তখন। 
---"তো মানে? সবাই কিভাবচ্ছে আমাকে?"
---" সেটা তোর আগেই ভাবা উচিত ছিলো। "

কুহু রাগ দমাতে পড়লো না। বলল,,

---" ওহো! তাই? তাহলে একা আমি কেন এমন লজ্জা ফেইস করবো?"

ইউসুফ কুহুর কথায় ভ্রু কুচকে জিগ্যেস দৃষ্টিতে তাকালো আবার।

কুহু সেদিকে পাত্তা না দিয়ে ।দ্রুত ইউসুফের কাছে চলে আসে। পায়ের দু আঙ্গুলে ভর দিয়ে,  ইউসুফের মুখটি দু হাতে ধরে গালের মাঝে কুটুস করে কামোড় বসিয়ে দিলো। ইউসুফ যেন বিস্ময়ে হতভম্ব।  কি হয়ে গেলো এ মুহূর্তে!গালে হাত দিয়ে  কুহুর দিক ড্যাব ড্যাব করে তাকিয় হা করে চেয়ে রইলো।  কুহু এমন কিছু করতে পারে ভাবনার বাহিরে ছিল ইউসুফের।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন