অচেনা অতিথি - পর্ব ১০ - সিজন ২ - নাফিসা মুনতাহা পরী - ধারাবাহিক গল্প


এই নিস্তব্ধ রাতে শীতের কামড় যেন একটু বড্ডই বেশি....। গাছের পুরো রাতের কান্না শিশির হয়ে টপটপ করে ঝড়ে পড়ছে ধরিত্রীর বুকে। দুরে শেয়ালের ডাক শোনা যাচ্ছে। গভীর রাত্রির দিকে শীতের তীব্রতা একটু বেশিই বাড়ে।

এমন কনকনে ঠান্ডায় একটা নারী তার কেশ মেলে দিয়ে আহত স্বামীকে বুকে নিয়ে বার বার আল্লাহ্কে ডাকছে। তার অসুস্থ স্বামী নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছে স্ত্রীর বুকে....।

মাহাদ ওর বাম হাত দিয়ে তিতিরের হাত ধরে ঢোক চিপে বলল-

~" তিতির, তোমার কি খুব কষ্ট হচ্ছে? তোমার তো ঠান্ডা লাগছে, আমার গা থেকে কোট টা খুলে নিজে পড়ে নাও। ঠান্ডা লেগে গেলে শেষে অতিথীর ঠান্ডা লেগে যাবে। আমার কোন সমস্যা হবেনা।"

মাহাদের এমন স্পষ্ট কথা শুনে তিতির মাহাদের দিকে চেয়ে রইলো। অন্ধকারে মাহাদের মুখ তেমন একটা দেখা যাচ্ছেনা। অনুমানের উপর মাহাদের কপালে একটা কিস করে বলল-

~" কারো চিন্তা আপনাকে করতে হবেনা। আপনি আমাদের অক্সিজেন, আগে আপনার ঠিক হওয়া চাই।"

~" গোলাব কই!"

~" আমি জানিনা মাহাদ! সে তো আমার কথায় শুনতে চায়না। আমাকে রেখে সে চলে গেল।"

ওর চিন্তা তোমায় করতে হবেনা। মনে রেখ ও যা করবে সেটা আমাদের ভালোর জন্যই করবে। আচ্ছা তিতির, আমার কিছু হয়ে গেলে তুমি কি অন্য জায়গায় বিয়ে করবে! আমার কিন্তু খুব কষ্ট হবে এমনটা করলে।

আপনি পাগল হয়ে গেছেন! কেন কষ্ট দেন আমাকে! কথাগুলো বলে তিতির কাঁদতে লাগলো। কিচ্ছু হবেনা, আমরা আবার একসাথে হব ইনশাআল্লাহ্‌। আর যেন এসব কথা না শুনি বলেই তিতির মাহাদের গালে, কপালে ছোট ছোট কিস করতে লাগলো।

~" আহ্ শেষ পর্যন্ত আমার বউ এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্যেও রোমান্স জাগাতে পারে। মাহাদ, বউ একখান পাইছিস তুই! সময় অসময় দেখেনা। একা পাইলেই হল! বাঘিনীর মত একদম ঝাঁপিয়েই পড়বে। এটা বুঝি রোমান্স করার জায়গা?"

আমি একটু বেশিই আগ্রাসী, জানেন তো সে কথা। তাহলে আপনি সময়ে অসময়ে খোটা দিচ্ছেন কেন? কথাগুলো বলে তিতির মাহাদকে কপট রাগ দেখালো। কিন্তু কিস করা থামালোনা।

~" বাহ্ আমার বউ দেখি রাগতেও শিখে গেছে। এতো উন্নতি তোমার কবে থেকে হল! পেটে পেটে এই শিখছো?"

~" মোটেও না। আমি কি আপনার অবাধ্য হয়েছি নাকি?"

~" কতবার অবাধ্য হলা! গুনতে গেলে শেষ করা যাবেনা।"

মাহাদের কথা শুনে তিতির একটু রাগ করে নড়তেই মাহাদ আহ্ করে উঠলো। তিতির কি করছো! আমার কষ্ট হচ্ছেতো?

মাহাদের এমন কথায় তিতির ভয়ে কেপে উঠলো। কোথায় লেগেছে মাহাদ, আমাকে বলেন বলতেই মাহাদ বলল-

~" বুকের মাঝখানে লেগেছে। ওখানে একটু আদর করে দাওতো!"

মাহাদ যেখানে যেখানে বলছে তিতির সেখানে সেখানে ছোট ছোট আলিঙ্গনের আদর ভরিয়ে দিচ্ছে। আর মাহাদ বলছে, এভাবে না ঐ ভাবে করো। তিতিরকে একদম অন্যমনস্ক করে ফেলল মাহাদ। যাতে কিছু হয়ে গেলেও তিতির চট করে বুঝতে না পারে। যতটা পারছে থেমে থেমে তিতিরের সাথে কথা বলছে মাহাদ। কিন্তু আর বলতে পারলোনা। মাহাদ নিজের সেন্স ঠিক রাখার বার বার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলো। ঠান্ডায় মাহাদ একটু পরপর কেঁপে উঠতে লাগলো। তিতির নিজেও জমে গেছে। কিন্তু মাহাদের এমন অস্বাভাবিক নড়াচড়ায় তিতির ভয় পেয়ে গেল। একপর্যায়ে মাহাদকে আস্তে আস্তে নিচু গলায় ডাকতে লাগলো। মাহাদ, মাহাদ...........
গলার কন্ঠস্বর যেন গলা থেকে বের হতে চাচ্ছেনা। মাহাদ, মাহাদ,,,,,,  আল্লাহ্ সে এমন করছে কেন! এমনটা হওয়ার তো কথা না! আমিতো একনিষ্ঠ ভাবে আপনার উপরই নির্ভরশীল। আমার নিষ্পাপ সন্তানের দিকে চেয়ে হলেও তাকে সুস্থ করে দিন। আমি তাকে ছাড়া থাকতে পারবোনা প্রভু। আপনি আমার সব কিছু নিয়ে নেন, এর থেকে কঠিন বিপদ দিয়ে আমাকে পরীক্ষা করুন কিন্তু আমার স্বামীকে নিয়ে নয়। একদম নয়।  মাহাদ.......
আমি এখন কি করবো প্রভু! আমাকে সাহার্য্য করুন আমার প্রভু বলেই জোড়ে চিৎকার দিয়ে উঠলো তিতির.....। গোলাব কই তুই বাবা! তোর বাবা কেমন জানি করছে। আমি কি করবো। এই মাহাদ, মাহাদ ওঠো বলছি! চোখ খোলোনা...। এই সময় এমন আচরন কেউ করে! আমি তো ভয় পাচ্ছি মাহাদ।


গোলাবকে দেখে ফুয়াদ হাটু গেরে গোলাবের মাথা নাড়িয়ে দিয়ে কান্না কন্ঠে বলে উঠলো-

~" আমার ভাই কেমন আছে গোলাব! সে কোথায়? এবারও কি তুই তোর দায়িত্ব ঠিকঠাক পালন করতে পেরেছিস?"

ফুয়াদের কথার মাঝেই গোলাব কান দুটো খাড়া করে কিছু শোনার চেষ্টা করলো। তিতিরের অস্পষ্ট চিৎকার এসে ওর কানে যেন ধাক্কা মারলো। তার মা তাকে ডাকছে, তাকে আর কে আটকে রাখতে পারে! 
গোলাব আর দেরি না করে তিতিরের কাছে ছুটলো। সবাইকে ছেড়ে পিছন পিছন ফুয়াদও ছুটলো। গোলাব  গন্তব্যস্থলে গিয়ে পাগলের মত বড় বড় শ্বাস ফেলে মাহাদকে আলিঙ্গন করতে লাগলো। মাহাদের পায়ের কাছে কখনো যাচ্ছে আবার মাথার কাছে গিয়ে মুখ আর পা দিয়ে মাহাদকে বার বার ঝাকাতে লাগলো। মাহাদের কোন রেসপন্স নেই।

এমন সময় ফুয়াদ খানিকটা দুরে দাড়িয়ে মাহাদের নাম ধরে ডাকলো। সাথে সাথে তিতির সজাগ হয়ে গেল। ফুয়াদের কন্ঠ চিনতে পেরে একফোটা আশার আলো মনের ভিতর জেগে উঠলো। ততক্ষনে  ঠান্ডায় সে জমে গেছে। গলা বসে গেছে। কথা বলতে পারলোনা তিতির। ভাঙ্গা গলায় শুধু কেঁদে উঠলো। তারপর অনেক কষ্টে বলে উঠলো-

~" ভাইয়া মাহাদ।"

তিতিরের রেসপন্স পেয়ে ফুয়াদের বুকে যেন পানি এল। ছুটে গিয়ে তিতিরকে ঐ অবস্থায় দেখে থমকে গেল। তিতিরকে কখনো বেপর্দায় সে দেখেনি। আজ এমন একটা বিপদ ওদের উপর দিয়ে গেছে যার জন্য সে নিজেকে ঠিকও রাখতে পারেনি। 
ফুয়াদ সঙ্গে সঙ্গে নিজের জ্যাকেট আর শার্টটা খুলে তিতিরের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল-

~ " তিতির, আর ভয় নেই। তুমি এগুলো দ্রুত পড়ে নাও। বাঁকিটা আমি দেখছি। এখানে অনেকে আসছে।"

তিতির করুনমুখে ফুয়াদের দিকে চেয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল-

~" ভাইয়া মাহাদ! ওর শরীর ঠিক নেই? আমি ওকে ছেড়ে এক মুহুত্বও কোথায়ও যেতে রাজি না।"

তিতির পাগলামি করোনা। এখানে অনেক ছেলে মানুষ এসেছে। মাহাদ ব্যাপারটা পরে শুনলে কষ্ট পাবে। তুমি যাও আমি আছি বলেই মাহাদের কাছে গিয়ে ফুয়াদ ওর শরীরে হাত দিতেই তিতির দ্রুত উঠে আড়ালে গিয়ে জ্যাকেটটা পড়ে নিয়ে  চুলের খোঁপা করে শার্টটা মাথায় দিল কাঁপতে কাঁপতে। ততক্ষনে ফোর্স চলে এসেছে। ফুয়াদ ওর নিজের মত চেষ্টা করতেই মাহাদ যেন ঝিকে উঠলো। মাহাদ  ভিতরের দিক দিয়ে অত্যন্ত শক্তিশালী তাই দ্রুতই আবার সেন্স ফিরে এলো।
 ফুয়াদ সাথে সাথে চিৎকার দিয়ে বলল, এই মেডিসিনের বক্স কই। দ্রুত কাজ করো।

বড় ভাইয়ের কণ্ঠ শুনে মাহাদ অতি কষ্টে বলে উঠলো,

~" ভাইয়া গোলাব ঠিক আছে?"

ফুয়াদ মাহাদকে বুকে চেঁপে ধরে সবার সামনে কাঁদতে লাগলো শব্দ করে। গোলাব ঠিক আছে মাহাদ। শুধু তুই ঠিক নাই।

~" আমি ঠিক আছি ভাইয়া, আমার তিতির কই?"

সবাই ঠিক আছে মাহাদ। এই তোমাদের কতবার বলতে হবে মেডিসিন বক্স আনতে!
 দুর্জয় কই! ওকে এখুনি আসতে বল? তোমরা দেখতো পাচ্ছোনা, আমার ভাই ভালো নেই বলে চিৎকার দিয়ে উঠলো ফুয়াদ।

স্যার দুর্জয় পিছনে পরে গেছে। এই এক্ষুনি এলো বলে।

মাহাদ ফুয়াদের হাতটা চেপে ধরে ক্ষীন কন্ঠে বলে উঠলো-

~" ভাইয়া আগে তিতিরের টিটমেন্ট করো। ওর শরীরটা খুব খারাপ হয়ে গেছে। ওর উপর দিয়ে অনেক ঝড় গেছে।"

মাহাদের কথা আর বোঝা গেলোনা। ভাইয়ের বুকে চুপ হয়ে গেল। মাহাদ, মাহাদ বলে ঝাকাতেই সাথে সাথে দুর্জয় দৌড়ে এলো। তারপর মেডিসিনের বক্স খুলে দ্রুত চিকিৎসা দিতে লাগলো মাহাদকে। 
দ্যান হেলিকাপ্টারকে  সিগন্যাল পাঠাতেই হেলিকাপ্টার গাছের উপরে অবস্থান করে নিচে রশি ফেলে দিল। এবং উপর থেকে সড় সড় একজন দড়ি বেয়ে নেমে আসলো। তারপর মাহাদকে তুলে ফুয়াদের পিঠের সাথে মাহাদকে বেল্ট দিয়ে শক্ত করে বেঁধে দিতেই গোলাব এসে ফুয়াদের প্যান্ট কামড়ে ধরলো। কয়েকজন সদস্য গোলাবকে সরাতে চাইলে ফুয়াদ ওদের নিষেধ করলো। তোকেও নিব বাবা বলেই ফুয়াদ একজনকে ডেকে বলল-

~" জামান, ওকে নিয়ে তুমি আমার পিছে আসো। ওকে না নিলে ও হেলিকাপ্টারের পিছেই দৌড়ে যাবে।"

অবশেষে মাহাদকে নিয়ে হেলিকাপ্টার উড়াল দিল তার গন্তব্য স্থলে। তবে যাওয়ার আগে মহিলা পুলিশ রিতাকে দায়িত্ব দিল, তিতিরকে যেন সহিসালামতে তার বাবার কাছে পৌছে দেয়।


 চারদিকের তীব্র আলোয় তিতির দেখতে পেল তারা এতক্ষন একটা বটবৃক্ষের নিচে অবস্থান করছিল। এবং কিছুটা দুরেই মেইন রাস্তা। তারমানে তারা প্রায় রাস্তার কাছেই ছিল। 
তিতিরকে ধরে রিতা রাস্তায় আসতেই গাড়ী চলে আসলো। গাড়ী থেকে কামরান সাহেব বের হতেই তিতির আহত চোখে শশুরের দিকে চেয়েই ফিকরে কেঁদে উঠলো। রিতা তিতিরকে সহ গাড়ীতে উঠে পড়লো। সাথে কামরান সাহেবও উঠে পড়লো।
 কিন্তু গাড়ীর ভিতরের গরম আবহাওয়া তিতির আর নিতে পারলোনা। সেন্সলেস হয়ে পড়ে গেল রিতার শরীরে। কামরান সাহেব অস্থির হয়ে তিতিরকে ডাকতেই রিতা বলল-

~" স্যার বিচলিত হবেননা। এমন কেস আমরা অনেক পর্যবেক্ষন করেছি। একটু পরে উনি ঠিক হয়ে যাবেন।"

সেই রাতে বাঁকি ফোর্সগুলোকে খবর দিয়ে মিশন সেখানেই সমাপ্ত করা হলো। বাঁকি দলগুলোর কাছে ঐ সন্ত্রাসী দলের মোট এগারো জন ধরা পরে।

মাহাদের অবস্থা খারাপ হওয়ার জন্য পরেরদিন ওকে সিংগাপুরে পাঠানো হয়। সেদিনই অসুস্থ তিতির আর ওর সন্তানদের নিয়ে কামরান সাহেব ঢাকায় ব্যাক করেন। ঢাকায় এসে ফুয়াদ মাহাদের উপর হামলা হওয়ার জন্য মামলা দায়ের করে। এখন এদের পিছনের গড ফাদারদের টেনে হিচরে বের করা যাবে। 

রূপসার বাসার মেহমান বিদায় হতেই বাতাসি বিবি সবার সামনে রূপসাকে ধুয়ে দিলেন। অকথ্য ভাষায় কথা বলে লাষ্ট বার সাবধান করে দিয়ে সবাইকে নিয়ে বাসায় ফিরে আসলেন।


বাসায় এসে ৬ দিন হলো। মাহাদ এখন কিছুটা সুস্থ। সাথে গোলাবও গিয়েছে। ভিডিও কলে কথা বলছে সাদ। স্কীনে গোলাবকে দেখে সাদের চোখ ছলছল করে উঠলো। একটু হলে সে যেন কেঁদেই ফেলবে। 
আসসালামু আলাইকুম গোলাব ভাইয়া, আপনি কবে আসবেন? আপনাকে ছাড়া আমার কিছু ভালো লাগেনা।

মাহাদ গোলাবের সামনে ল্যাপটপটা সেট করে দিতেই গোলাব মাহাদের বুকের মধ্য গিয়ে চুপ করে রইলো। সাদের দিকে একবার তাকালোও না। মাহাদকে পেলে তার আর কিছুই চাইনা। বরং মাহাদের বুকে বার বার মুখ ঘষতে লাগলো।

বাবা গোলাব ভাইয়া কই বলে সাদ কেঁদে উঠলো ফিকরে।

মাহাদ ল্যাপটপটা নিয়ে ওর কাছে ট্রী টেবিলের উপর রেখে গোলাবের দিকে করে ওর মাথায় হাত বুলাতেই ও ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে সাদকে দেখলো। কিন্তু কিছু না বলে চেয়ে রইলো।

মা দেখেন, গোলাব ভাইয়া আমায় ভুলে গেছে বলে এবার শব্দ করে কেঁদে উঠলো সাদ।

এদের খুঁনশুটি দেখে মাহাদ বিপদে পড়ে গেল। একদিকে ছেলে কাঁদছে অন্য দিকে গোলাব আষ্টে-পৃষ্টে জড়িয়ে ধরে আছে তাকে। মাহাদ গোলাবের এক পা তুলে টা টা করে দেখিয়ে দিয়ে বলল-

~" সাদ দেখ বাবা, ভাইয়া তোমাকে টাটা বলছে।"

~" সে দেয়নি বাবা, আপনি তাকে জোড় করে টাটা বলাচ্ছেন।"

এমন সময় গোলাব সাদের দিকে চেয়ে আউ, আউ, আউ বলে ডাকতে লাগলো।

~" মা দেখেন, ভাইয়া আমার সাথে ঝগড়া করছে। মা......।"

সাদ কেঁদে কেঁদে এবার তার মাকে ডাকতে লাগলো। কারন তার বাবা কোন বিচার করছেনা। এমনকি করবেওনা। সে তার থেকে ভাইয়াকে বেশি ভালোবাসে। কিন্তু মা তার বিচার অবশ্যই করবে তাই মা একমাত্র ভরসা সাদের জন্য।

এই রে হল! আমার ছেলেটাকে কাঁদিয়ে দিলি তো বলে গোলাবকে একটা ধমক দিল মাহাদ। কিন্তু মাহাদের কথার তোয়াক্কা না করে গোলাব উল্টে পা সব মেলে দিয়ে মাহাদের কোলেই পলট দিতে লাগলো। এক পর্যায়ে পড়ে যেতে লাগতেই মাহাদ ওকে ধরে ফেলল। এই চুপ, আর একটু হলেই তো পড়ে যেতি। এমন করে কেউ?

গোলাব মাহাদের ধমক কানে না নিয়ে বরং মিষ্টি মিষ্টি বকাগুলো গায়ে মেখে মাহাদের সাথে মান অভিমানে মেতে উঠলো। বসা থেকে উঠে মাহাদের দু,ঘাড়ে পা তুলে দিয়ে নিজের গালের সাথে ওর গাল লাগিয়ে আদর করতে লাগলো। 
মাহাদও গোলাবকে আদর করতে লাগতেই তিতিরের শাসনে দুই বাপ-ব্যাটা চমকে উঠে ল্যাপটপের দিকে তাকিয়েই সামনের রনমূর্তিকে দেখে যেন নুয়ে পড়লো। আইছে প্রাইম-মিনিষ্টার শাসন করতে। তার ছেলের সাথে এরা দুই বাপ-বেটা যে অন্যায় করেছে সেটার কি আর ছাড় আছে এই নারীর কাছে!

গোলাব লাড্ডুর মত দু'টি চোখ পাকিয়ে কেবল ল্যাপটপের স্কীনে গিয়ে তিতিরকে ভালো করতে দেখতে যাবে এমন সময় তিতিরের ধমক খেয়ে একদম মাহাদের কোলের ভিতর ঠাই নিল। আর তিতিরের দিকে তাকালোইনা। ভয়েই চুপ করে রইলো।

এদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্য যখন এমন মান অভিমানের পালা চলতে লাগলো তখন রুমে নিসার আগমন ঘটলো। সাথে সাথে তিতির আর মাহাদ দু'জনেই চুপ হয়ে গেল। রুমে শুধু তিতিরই ছিলো। সাদ অভিমান করে আগেই রুম থেকে বের হয়ে গেছে। নিসা বুঝতে পারেনি মাহাদ নাইনে আছে। দরজাতে দাড়িয়ে থেকেই নিসা বলল-

~" স্বামী সবসময় এত বিপদে থাকে, তবুও এই অবস্থায় তোমার এত ফূর্তি আসে কোথা থেকে? বাবাকে নিয়ে এই রাতে কোথায় যেতে চাও? তোমার কি লজ্জা বলতে কিছু নেই? তোমার জন্য আর কত আমরা বিপদে পড়বো?  শুনেছিলাম তোমার মা নাকি তোমাদের পরিবারকে শেষ করে দিয়েছিল। তোমারও তো দেখছি একই স্বভাব হয়েছে। বাবাকে না মারলে কি তুমি দম নিবানা? তোমাদের মত মেয়েরা শুধু পরিবারের জন্য ঝামেলা ছাড়া কিছুই বয়ে আনেনা। আমার তো মনে হয় তোমার থেকে ডাস্টবিনের নোংরা ময়লারও দাম অনেক বেশি। বহুরুপী মেয়ে কোথাকার। মুখোশ পড়ে সবার সাথে ভালো ব্যবহার করে সবাইকে কব্জা করে নিয়ে বাড়ির লিডার হতে চাওনা! দাদীর মত মানুষকে অবদি তুমি বাগে আনিয়েছ। তুমি কি ব্লাক ম্যাজিক জানো তিতির! এত দ্রুত কেউ এভাবে নোংরা খেলায় সাফল্য পেতে পারে! চেহারা দিয়ে তো মাহাদকে ভুলিয়েছ, বাঁকিদের কি দিয়ে ভুলিয়েছ! আমাকেও শিখাও। ঘরের রাজনিতি আমিও একটু শিখি।"

নিসার কথা হয়তোবা আরও বলার বাঁকি ছিল। কিন্তু গোলাব মাহাদের কোল থেকে উঠে এসে এত জোড়ে খেকিয়ে চিৎকার করে উঠলো যে তার শব্দ নিসার কান গোড়ায় গিয়ে আঘাত করলো। নিসা ভয়ে সম্ভিত হয়ে গেল। কিন্তু এবারও বরাবরের মত তিতিরের ঠোটের কোনে এক চিলি হাসি ফুটিয়ে উঠলো। শত্রুকে আঘাত করার বড় অস্ত্র হলো তার কথার কোন জবাব না দিয়ে মুচকি হেসে সেখান থেকে সরে আসা। এটার লোডই সে নিতে পারবেনা.........

তিতিরের হাসিতে নিসা ক্ষেপে আগুন হয়ে গেল। কিন্তু ওর জন্য পরবর্তীতে মাহাদ ওর জন্য কি সারপ্রাইজ রেখেছে সে সেটার কল্পনাও করে রাখেনি। প্রতি বারই কি সে ছাড় পাবে নাকি?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন