বন্ধন - পর্ব ১০ - সুলতানা পারভীন - ধারাবাহিক গল্প


১৯!! 

সকাল বেলা মায়রা ঘুম থেকে উঠে কলেজে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে এমন সময় রুমের বাইরে কারো চেঁচামেচির শব্দ শুনতে পেল। তিয়াশ মায়ের সাথে কিছু একটা নিয়ে কথা কাটাকাটি করছে। মায়রা চমকে গিয়ে ভাইয়ার কথাগুলো শোনার চেষ্টা করলো নিজের রুম থেকে।

-দেখো মা--। তোমাকে সেই কবে থেকে বলছি মায়রাকে গেস্ট রুমটায় শিফ্ট করো---। রুমটা যথেষ্ট বড়--। ও এখন যেটাতে থাকে ওটা জাস্ট একটা স্টোররুম-। তুমি কেন বুঝতে পারছ না?

-তিয়াশ! এতো বেশি বকবক করিস কেন তুই আজকাল? ওই মেয়ে এতো বড় একটা ঘর দখল করে থেকে কি করবে! ওর জন্য ওই স্টোর রুমটাই উল্টো বিশাল---।

-বাজে বকো না তো মা। ওটাতে তুমি একটা রাত কাটাতে পারবা?

-তিয়াশ? তুই তোর মাকে কি বলছিস সেটা হুঁশ আছে?

তিয়াশের মায়ের সাথে তর্কাতর্কি শুনে তিয়াশের বাবাও বসার ঘরে এসে পড়েছেন। ছেলেকে সাধারণত কখনো উনারা বকাবকি করেন না। তাই ছেলেটা সবসময় নিজের মর্জি চালায়।

-তিয়াশ! এটা কেমন ধরনের বেয়াদপি? মায়ের সাথে এভাবে কথা বলে কেউ?

-তো কথাটা বলব কি করে বলতে পারো বাবা! গত এক সপ্তাহ ধরে একটা কথা বলছি। তোমরা কেউ আমার কথাটা কানেই তুলছো না--।

-ওই মেয়েকে এতো বড় রুমটা দিয়ে কি লাভ হবে তোর?

-ফার্স্ট অফ অল, ও কোন বাইরের মেয়ে বা কাজের মেয়ে টাইপের কেউ না। ও আমার নিজের মায়ের পেটের বোন, তোমাদের মেয়ে--। সেটা তোমরা মানো বা না মানো---। তোমাদের আজাইরা ইল্লজিক্যাল থিউরির জন্য ও কেন কষ্ট পাবে আজীবন--?

-তিয়াশ! বেশি আদর পেয়ে বাঁদর হয়ে গেছ তুমি--। বাবা মায়ের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় সেটাও ভুলে গেছো? 

-বাবা! মা! আচ্ছা বাদ দাও-। আমি সেসব নিয়ে মাথা ঘামাতে চাইছি না--। এতোদিন যেটার জন্য প্রতিবাদ করেছিলাম-সেটার আর প্রয়োজন নেই--। গত চারটা দিনে অন্তত আমার কাছে একটা জিনিস ক্লিয়ার হয়েছে--। মায়রা বিয়ের পরে অন্তত এই বাড়ির চেয়ে হাজার গুণে ভালো থাকবে---।

-তো--। থাকুক--। এখনই চলে যেতে বল না? ঘাড় থেকে বোঝাটা নামুক---।

-জন্ম যেহেতু দিয়েছো কিছু তো দায়িত্ব পালন করতেই হবে বাবা--। তাই না মা?

-হ্যাঁ দায়িত্ব ই তো পালন করছি--। নইলে সেই আঁতুড় ঘরেই লবণ খাইয়ে----।

-সেটাই ভালো করতে পারতে--। যাক গে--। 

-সেটা করাই ভালো ছিল--। এখন এই মেয়েকে ঘাড় থেকে নামাতে কত গচ্ছা যায় পকেট থেকে কে জানে!

-আয়ান ভাইয়ারা তো কিছু চায় নি বাবা। চেয়েছে কিছু তোমাদের কাছে?

-চায় না সেটাও তো বলে নি---।

-এতো নম নম না করে সোজা জিজ্ঞেস করলেই পারতে। হাহ--। শোনো। তোমাদের যত কাহিনীই মনে হোক না কেন বিয়েটা উনারা করাবেন এটা আমি সিউর--। আর মনে হয় না বেশি কিছু খরচ করতে হবে তোমাদের--। 

-তাহলেই তো বাঁচি---।

-হ্যাঁ সেটাই। তো এখন কথা শোনো? মেয়ের বিয়েটা কোন ঘরে হচ্ছে সেটা খেয়াল করে হলেও তো অন্তত ওর সাথে একটু ভালো করে ব্যবহার করতে পারো মা---। বিয়ের পর না হোক অন্তত বিয়ের আগে কয়েকটা দিন হুটহাট ওর ননদ বা শ্বশুরবাড়ির কেউ এলে ওকে ওই স্টোররুমে দেখে কি ভাববে?

------------------------------

-তোমাদের ব্যাপারে উনাদের যে ধারণাটা হবে সেটা কি খুব বেশি সম্মানজনক হবে তোমাদের জন্য?

-কি করতে হবে সেটা বল---।

-মায়রাকে গেস্ট রুমটায় শিফ্ট হতে বলো। বেশ গোছানো সুন্দর রুমটা। এ্যাটাচ বারান্দা আছে। আর ফাঁকাই থাকে৷ ওর শ্বশুর বাড়ির কেউ এলে অন্তত সম্মানটা বজায় থাকবে তোমাদের----।

-ঠিক আছে--। মায়রাকে বল ওই রুমে চলে যেতে আজই---।

-হু---। আর শোনো--। ওকে দিয়ে কাজের মেয়ের মতো কাজ করানোর অভ্যাসটা বদলে ফেলো। ওর বিয়ের পর কাজগুলো হয় তোমার নিজেকে করতে হবে--। বা সত্যি কোন কাজের মেয়েকে দিয়ে করাতে হবে। তাই আগে থেকে অভ্যেস করে নেয়াই ভালো---।

-তিয়াশ! বেশি বাড়াবাড়ি করবি না একদম---।

-বাড়াবাড়ির কি করলাম আজব! বিয়ের আগে কয়েকটা দিন ওকে ওর মতো করে ইনজয় করতে দাও-। এদিক সেদিক তো কোথাও আর যাবে না। গেলেও আয়ান অথবা তিথির সাথেই যাবে। হয় কেনাকাটা করতে নাহয় ঘুরতে। এখন অন্তত আর ওকে তোমাদের ওই সো কলড শৃঙ্খলার মধ্যে রাখতে যেও না---। যাদের সাথে সারাটা জীবন কাটাতে হবে তাদের মতো করে নিজেকে গড়ে তোলার সুযোগ দাও ওকে---। 

-তুই কি বলছিস বিয়ের আগেই ওই ছেলের সাথে যেখানে সেখানে ঘুরাঘুরি করলেও কিছু বলব না ওকে?

-না বলবে না--। ওদের দুজনের নিজেদেরও আলাদা করে একটু সময় কাটানো দরকার। উল্টা পাল্টা কিছু হলে হবে তোমাদের এই অহেতুক অতিচিন্তার জন্য---।

-কি বললি তুই তিয়াশ!

-ঠিকই বললাম---। তোমরা যেমন অভার প্রজেকটিভনেস দেখাচ্ছো না সেটার জন্য হয়তো আয়ান বিয়েটা না করতে চাইতে পারে--। হাতে ২০-২২ দিনের মতো সময় আছে--। আর তোমাদের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে ওরা নতুন নতুন প্রেম করে ধরা পড়েছে তোমাদের হাতে-। আশ্চর্য!

-ওই মেয়ের জন্য তুই আমাদেরকে তোর নিজের বাবা মায়ের সাথে এমন আচরণ করছিস তিয়াশ! এসব শিক্ষা দিয়েছিলাম তোকে!

-তোমরা যেমন আমার বাবা মা মায়রাও তেমনি আমার বোন। এটা কেন ভুলে যাও তোমরা বলো তো?

-আজ বোনের জন্য আমাদের এভাবে বলছিস-কাল বউ এলে তো অপমান করে তাড়িয়েই দিবি বাড়ি থেকে----।

-এসব বলে আর আমাকে আটকাতে পারবে না মা। কখনো না কখনো তোমাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে তো আমাকে কথা বলতেই হবে--। সেটা আমার বোনের জন্য হোক বা আমার বউয়ের জন্য--। অন্যায় সহ্য করে করে আরেকজনকে বিপদে ফেলার তো কোন মানে হয় না---।

তিয়াশের বাবা মা থতমত খেয়ে ড্রইং রুমে একে অন্যের মুখ চাওয়াচাওয়ি করছেন। ছেলেটার হুট করে এতো পরিবর্তনের কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না তারা। আর এতো বড় ধাক্কাটাও হজম করতে পারছেন না। তিয়াশের মা স্বামীর দিকে চোখ পড়তেই নাকি কান্না শুরু করলেন।

-ছেলের বাতাস লাগসে গো---। ছেলের বাতাস লাগসে। একবার মসজিদের ইমাম সাহেবরে খবর দাও---। একটু পানি পড়া দিয়া যাক----।

তিয়াশ এসব শুনে বিরক্ত হয়ে ড্রইং রুম থেকে বেরিয়ে এলো। মায়রার ছোট্ট রুমের দরজায় নক করলো। মায়রা এতোক্ষণ ভাইয়ার কথা শুনে নিজেই চমকে গিয়েছিল। এর আগে ভাইয়া ওর পক্ষ নিয়ে কথা বললেও একসময় চুপ করে যেত। আজ হঠাৎ তার এতো পরিবর্তন কেন!

-মায়রা? দরজাটা খোল---?

-জি ভাইয়া----।

মায়রা তাড়াতাড়ি দরজা খুলে দিলো। তিয়াশ একটু হাসার চেষ্টা করলো বোনের দিকে তাকিয়ে।

-মায়রু? আজকে কলেজে যাস না---। তোর জিনিসপত্র গেস্ট রুমে শিফ্ট কর---।

মায়রা তিয়াশের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো। কি করা উচিত সেটাই বুঝতে পারছে না বেচারি। ভাইয়ের কথায় বড় রুমে শিফ্ট করলে নিজের নজরে কতটা নিচে নেমে যাবে সেটার হিসেব করবে? নাকি সামনের দিনের হিসেব করে সত্যিই নিজের ছোট্ট খুপরি টাইপের রুমটা ছেড়ে বেরিয়ে আসবে! কি করা উচিত!

২০!! 

ড্রইংরুমে ঝোলানো দেয়াল ঘড়িটায় ডংডং করে ১০ টা ঘন্টা বেজে সময়ের জানান দিল। মায়রা নিজের ছোট্ট স্টোররুম থেকে নিজের জামা কাপড়, পড়ার বই খাতা, সব তিয়াশের সাথে গেস্টরুমটায় নিয়ে গেল। রুমটায় সুন্দর কাঠের একটা আলমারি আছে। তাই মায়রার রুমের পুরোনো আলমারিটা আর নিতে হয়নি। কিন্তু বুকশেলফটা নিতে হল। এক কোণার স্টোর রুমটা থেকে গেস্টরুমে বুকশেলফটা নিতে গিয়ে তিয়াশ আর মায়রা দুজনেরই বেশ অনেক সময় লাগলো। এই কয়টা ঘন্টায় মায়রা আর তিয়াশ দুজনে মিলে রুমটাকে একেবারে মায়রার থাকার জন্য রেডি করে ফেলেছে। বারান্দায় পাশের দেয়ালে বুকশেলফটা রেখেছে। যাতে বাইরের প্রকৃতি দেখতে দেখতে বই পড়া যায়।

তিয়াশ আর মায়রা রুমের মাঝামাঝিতে দাঁড়িয়ে ভাবার চেষ্টা করছে আর কি লাগবে রুমটা সাজাতে। বিশাল খোলামেলা রুমটা বেশ গোছানো যেমন লাগছে, আবার মাঝেমাঝে একেবারে খালি খালিও লাগছে। দু ভাইবোনে মিলে প্ল্যানিং করছে কি কি লাগতে পারে। আর কি কি রুমের জন্য লাগবে। তিয়াশ এতো প্ল্যানিংয়ের ফাঁকে ফাঁকেও মায়রার দিকে তাকাচ্ছে। কিছু বলতে চেয়েও বলছে না। মায়রা সেটা বুঝতে পারলেও ভাইয়াকে কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস পাচ্ছে না। তাই চুপ করে চিন্তা করছে। 

ফোনের রিংটোনের শব্দে মায়রার হুঁশ ফিরে। মোবাইলটা হাতে নিয়ে একটু চিন্তা করলো। নাম্বারটা সেইভ করা নেই। কার নাম্বার হতে পারে! তিয়াশকেও রুমে না দেখে মায়রা কলটা রিসিভ করলো।

-হ্যালো--? ভাবিইইইই---।

-তিথি? কেমন আছো আপু? 

-সেসব পরে হবে। বেয়াই সাহেবের নাম্বারটা দাও তো একটু। আর্জেন্ট-----।

-আর্জেন্ট! কেন কি হয়েছে?

তিথি কি বলছে শোনার সময়টাও পেল না মায়রা। এর মধ্যেই দেখলো তিয়াশ রুমে এসেছে। বেশ কাঁচুমাচু মুখ করে নিজের আঙুলগুলো মোচড়াচ্ছে এমনভাবে যেন একেবারে ভেঙেই ফেলবে।

-কি হয়েছে ভাইয়া? তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন? কিছু বলবা?

-আম-। মায়রা--? তিথির নাম্বারটা একটু দিতে পারবি?

মায়রা তিয়াশের কথা শুনে চোখ বড় বড় করে তিয়াশের দিকে তাকালো। একটু পর আপনাআপনিই ওর ভ্রু কুঁচকে গেল। মোবাইলটা কানে লাগানো তখন মায়রার।

-তোমাদের দুজনের কাহিনী কি বলো তো? ওদিকে তিথি তোমার নাম্বার চাইছে এদিকে তুমি তিথির? কি চলছে বলো তো ভাইয়া? এই তিথি? চুপ করে কেন? বলো?

- না মানে ভাবি----।

তিথি কিছু বলার আগেই তিয়াশই হড়বড় করে বলা শুরু করলো।

-আরে-। তোর আর আয়ানের বিয়েতে আমরা একটা সারপ্রাইজ দিবো প্ল্যানিং করেছিলাম বাগান বাড়িতে। আসার সময় তো তোর ননদ ঘুমিয়ে গেছে তাই আর নাম্বারটা নেয়া হয় নি--। পাত্রপক্ষ আর পাত্রীপক্ষের একটা কম্পিটিশনও ও আছে--। সেটার কিছু ডিসকাশন বাকি--।

-কিসের সারপ্রাইজ! কিসের কম্পিটিশন?

-সেসব তো বিয়ের সময় দেখবি---। এখন মোবাইলটা দে-।

-হুম----।

-আর শোন না? মা বলেছে স্টোররুমটা একটু পরিস্কার করে ঝাড়ু দিয়ে দিতে----।

-হ্যাঁ? হ্যাঁ যাচ্ছি---। 

মায়রা মায়ের ভয়ে স্টোররুমটা পরিস্কার করতে চলে যেতেই তিয়াশ কানে ফোন লাগালো।

-হ্যালো?

-আপনি একটা সাঙ্ঘাতিক খারাপ লোক---। একবারও আমার কথা মনে পড়ে নি? এখন আমি ভাবির কাছে কল করেছি শুনেই দরদ দেখাতে এসেছেন?

-আরে না রে পাগলি--। ছোট বোনের কাছে কি আর হুট করে এভাবে তোমার নাম্বারটা চাওয়া যায়? 

-যাবে না কেন! আমার ভাইয়া হলে তো এতোক্ষণে নাম্বার দিব না বললেও মাথায় গাট্টা মেরে মেরে ইয়া বড় ফুটবল বানিয়ে দিতো---।

-হা হা হা---। 

-হাসবেন না তো একদম--। অসহ্য---। 

-এই? দু মিনিট ওয়েট করো--। আসছি---।

-আরে?

তিথি কিছু বলার আগেই তিয়াশ কলটা কেটে মায়রার মোবাইল থেকে তিথির নাম্বারটা নিজের কল লিস্টে তুলে নিয়ে মায়রাকে মোবাইল দিয়ে এলো। তারপর নিজের রুমে এসে দরজা বন্ধ করে তিথিকে কল দিলো। প্রায় সাথেই রিসিভ করলো তিথিও।

-এটা কেমন ধরনের রসিকতা! কল কাটলেন কেন! কথা বলতে ইচ্ছে করছে না?

-আরে বাবা! এটা আমার নাম্বার--। মায়রার মোবাইলে আর কতক্ষণ কথা বলতাম---?

-ওহ-------।

-পাগলি একটা-----। খুব মিস করেছিলে?

-উহু---। মিস করব কেন? আমি তো এইমাত্র ঘুম থেকে উঠলাম। উঠে ভাবিকে কল দিলাম--।

-ও আচ্ছা----। তাহলে মিস করা হয়নি?

-উহু---। একটুও না-----।

-বাহ। তো ঘুম ভাঙতেই কল করলে কেন এতো তাড়াহুড়ো করে?

-কি জানি! ভাবলাম একবার খোঁজ নেই কেমন আছেন-। ভুলে টুলে গেলেন কিনা--।

-ওহ-----।

-আপনি তো দেখছি সত্যিই ভুলে গিয়ে বসে আছেন---। হুহ---।

-ভুলে গেছি বলেই সারাটা রাত দু চোখের পাতা এক করতে পারি নি--। আর মানুষ পড়ে পড়ে ঘুমিয়েছে কাল সারা রাস্তা। আর উঠেছেও এখন। আর বলছে আমাকে---।

-তো? একবারও তো চেষ্টাও করলেন না কথা বলার। আগেও তো নাম্বার নেয়ার কথাও মাথায়ই আসে নি?

-আপনারও তো আসে নি--। তাতে কি প্রমাণ হচ্ছে?

-প্রমাণ হচ্ছে কচু। আমি তো ছোট। আমার এতো কিছু মনে থাকে?

-হ্যাঁ এখন তো ছোট হবেনই। এমনিতে সারাদিন পন্ডিত হয়ে ঘুরে বেড়ান---।

-এই যান তো যান। আমার সাথে অযথা ঝগড়া করতে আসবেন না একদম। আর কথাও বলবেন না একদম------।

-কথা না বলে থাকতে পারবেন?

-পারবো না কেন? ১০০ বার পারবো। হাজার বার পারবো। আমার বয়েই গেছে আপনার এমন ত্যাড়া ত্যাড়া কথা শুনতে----।

-ওকে--। ঠিক আছে-। আর বিরক্ত করবো না। বায়।

-বায় বায় বায়-----।

তিথি রাগ করে কলটা কেটে দিলো। সারারাতে একটুও ঘুম হয় নি টেনশনে। কিসের টেনশন সেটা বুঝতেও পারে নি। তবে কেন জানি মনে হচ্ছিল মানুষটাকে আর ও খুঁজে পাবে না। চিন্তায়, রাগে কান্না এসে যাচ্ছিল তিথির। ভোরের দিকে একটু ঘুম এসেছে। তাই উঠতেও বেলা হলো। আর খারাপ লোকটা বলে কেমন মিস করেছো! খারাপ একটা লোক। ভিষণ খারাপ। তিথি রাগ করে আর কল না করলেও মোবাইলটা হাতে নিয়েই বসে রইলো। আর অপেক্ষা করতে লাগলো তিয়াশের কলের। 

তিথি কলটা কেটে দেয়ায় তিয়াশেরও রাগ হল প্রচন্ড। রাগ করেই মোবাইলটা সুইচ অফ করে দিলো। মেয়েটা আসলে ওর প্রতি জাস্ট এট্রাকটেড নাকি সত্যি ভালোবাসে সেটাই তিয়াশের মাথায় খেলা করছে। শুধু পাগলামি থেকে ও কখনোই পিচ্চিটাকে একটা বন্ধনে বাঁধতে পারবে না। একটা না একটা সময় পাগলামিটা কেটে যাবে। ঘোরটা কেটে যাবে। সেই সময় নিজেদের সিদ্ধান্তের জন্যই হয়তো আফসোস হতে পারে ওদের। তিয়াশ নিজের দিক থেকে বেশ ভালো করেই ক্লিয়ার যে সে আসলেই এই পিচ্চিটাকে ভালোবাসে। কিন্তু পিচ্চিটা! দূরে থাকার দহনটা যদি অনুভবই করতে না পারে তবে ভালোবাসে সেটাই বা কি করে বুঝবে তিয়াশ!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন