অস্পষ্ট প্রেমাবেগ - পর্ব ০৪ - সুলতানা পারভীন - ধারাবাহিক গল্প


০৭!! 

কিশোর বেশ কয়েকটা কাজ গুছিয়ে নিয়ে গাড়িতে এসে বসলো। ঢাকায় ফিরবে নাকি বাড়ি ফিরে যাবে সেটা একটু চিন্তা করে নিলো। যদিও অফিসের বস, তবু অফিস সামলানো নিয়ে কিশোরের তেমন মাথা ঘামাতে হয় না। কিশোর থাক বা না থাক অফিসের স্টাফরা ইভেন ম্যানেজারও অনেক দক্ষ হাতেই কোম্পানিটা সামলায়। তবু অফিসে যাবে না কথাটা জানানোর জন্য ম্যানেজারকে কল করলো কিশোর। কল হওয়ার একটু পরই রিসিভও হলো।

-হ্যালো আসিফ?

-ইয়েস স্যার। গুড আফটারনুন স্যার। 

-হুম। শোনো আমি কয়দিন ঢাকার বাইরে আছি৷ তাই তোমরা একটু সামলে নিও---। আর্জেন্ট কিছু হলে কল দিও। 

-স্যার আপনি এখন কোথায়? বাড়িতে--? নাকি----।

-বাড়িতে আছি---। আমার নাম্বারে না পেলে বাড়ির ল্যান্ডলাইনে কল দিও। 

-ওকে স্যার। বড় ম্যাম আর দীপ্তি ম্যাম ভালো আছে স্যার?

-ইয়াপ---।

-ওকে স্যার। হ্যাভ এ গুড নাইট।

-ওকে।

আসিফের সাথে কথা বলা শেষ হলে গাড়ি চালানোয় মন দিলো কিশোর। আপাতত বাড়িতে থাকাটাই উচিত মনে হচ্ছে। সোলেমান শেখ লোকটার ব্যাপারে যতটুকু জেনেছে মন হয় না সে চুপ করে বসে থাকার মানুষ। কোন না কোনভাবে সে কিশোরের ঠিকানা জোগাড় করে বাড়িতে গিয়ে পৌঁছবেই। আপাতত কিশোর চাইছে লোকটা যেন তামান্নার সাথে আর কোন ঝামেলা না করতে পারে। যদিও তার অর্ধেক ব্যবস্থা কিশোর অলরেডি করেই ফেলেছে। তবু নিজে সশরীরে থাকলে চিন্তাটা অন্তত একটু কম হবে।

কিশোর বাসায় ফিরতে বেশ অনেক রাত হয়ে গেল আজও। চাবি দিয়ে বাড়ির মেইন ডোরের দরজা খুলে বাড়িতে ঢুকলো। তারপর এক পা দু পা করে এসে নিজের রুমের দরজার সামনে আসলো। যে রুমটায় দীপ্তি আর তামান্না আছে, সেটা কিশোরের রুম। কিশোর বাড়িতে বেশিরভাগ সময়ই থাকে না। তখন দীপ্তি থাকে রুমটায়। কিশোর বুঝতে পারছে না তামান্না ঘুমিয়ে গেছে কিনা। কি মনে হতে রুমের দরজায় নক করলো কিশোর। তামান্নার থেকে কয়েকটা কথা জেনে নিয়ে ওকে একটু সাবধান করতে হবে। যদিও কাজটা সকালেই করা যায়। তবু কিশোর কোন চান্সই নিতে চাচ্ছে না। 

আজ রাতেও দরজায় নকের শব্দ শুনে তামান্না শোয়া থেকে বিছানায় উঠে বসলো। দীপ্তির মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলো ঘুমিয়ে গেছে। গতরাতের মতো আজও কিশোর মদ খেয়ে মাতাল হয়ে এসে দরজা ধাক্কাচ্ছে কিনা সেটা ভেবেই তামান্না একটু ঘাবড়ে গেল। আজও চেঁচামেচি হলে মেয়েটার ঘুম ভেঙে গেলে ভয় পেয়ে কান্নাকাটি করবে। আবার জ্বর হবে বাচ্চাটার। ভেবেই কিশোরের উপরে রাগ লাগলো তামান্নার। পরে আবার খেয়াল হলো লোকটা তো দুপুরেই চলে গেছে। তাহলে এতোরাতে কে এলো!? তামান্না এসব ভাবতে ভাবতেই আবার একবার দরজায় নক হলো।

-মিস তামান্না? আপনি কি জেগে আছেন? দরজাটা একটু খুলুন। একটু কথা ছিল---।

কিশোরের গলার আওয়াজ শুনে তামান্না উঠে বিছানা থেকে নামলো। শাড়িটা ঠিক আছে কিনা দেখে নিয়ে দরজার সামনে এসে দাঁড়ালো। কিশোরের গলা শুনে মাতাল মনে হলো না তামান্নার। কিন্তু এতো রাতে তামান্নার সাথেই বা কি কথা থাকতে পারে লোকটার? তামান্না একটু সাহস করে দরজাটা একটু ফাঁক করলো। দরজার ছোট্ট ফাঁক দিয়ে উঁকি দিতেই দুজনের চোখাচোখি হয়ে গেল। আর তামান্নাও বেচারি থ হয়ে কিশোরের দিকে তাকিয়ে রইলো। দুপুরের সেই এলোমেলো চেহারাটা নেই মানুষটার। ধবধবে সাদা একটা শার্ট গায়ে কিশোরের। সেটার স্লিভটা ফোল্ড করা বেশ খানিকটা। গায়ের কোটটা কাঁধের উপর ঝোলানো। লোকটাকে মাঝরাতে এমন অবস্থায় দেখে তামান্নার কয়েকটা হার্ট বিট মিস হলো৷ আর হৃৎস্পন্দনের গতি এতোটা বেড়ে গেছে যে সেটা সম্ভবত খেয়াল করলে কিশোরের কানে গিয়েও পৌঁছবে। তামান্না কোনমতে চোখ বুজে সেটাই সামলানোর চেষ্টা করলো প্রাণপণে।

তামান্না রুমের দরজাটা খোলার সাথেসাথেই কিশোরও তামান্নাকে দেখে চমকে গেছে। দুপুরের শাড়িটা এখনো তামান্নার পড়নে। কমলা রঙা তাঁতের শাড়িটা সারদিন পড়নে থাকায় খানিকটা কুঁচকে গেছে। তামান্নাকে দেখে বিয়ের পর নতুন বউ হয়ে আসার পর সুপ্তির মতো লাগছে দেখতে। কিসের যেন এক অদ্ভুত মিল আছে দুজনের। চেহারায় কিসের একটা ঘনিষ্ঠতা আছে। কিশোর বুঝতে পারছে না এটা ওর মনের ভুল নাকি নিছক কল্পনা। তামান্না চোখ বুজে নিয়েছে দেখে কিশোরও নিজেকে সামলে নিলো। 

-আপনার সাথে একটা জরুরি কথা ছিল। সময় হবে?

-এখন! রাত তো অনেক হলো। সকালে বললে ভালো হতো না?

-সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করা সম্ভব হলে নিশ্চয়ই এতো রাতে এসে আপনার ঘুম ভাঙাতে আসতাম না?

-সরি--। জি বলুন--।

-বাইরে আসুন। দীপ্তি ঘুমাচ্ছে। কথা বলার শব্দ শুনলে ওর ঘুম ভেঙে যায়।

-আম--। আপনি এগোন আমি আসছি---।

-ওকে। আমি গার্ডেনের দিকটায় আছি। আপনি আসুন।

কিশোর চলে যেতেই তামান্না দরজায় হেলান দিয়ে বুক ভরে শ্বাস নিলো। এতো রাতে লোকটার সাথে গার্ডেনে যাওয়া উচিত হবে কিনা সেটা নিয়েও চিন্তা হচ্ছে তামান্নার। গতকালই তো এই মানুষটা প্রায় গলা টিপে মেরে ফেলতে চাইছিল তামান্নাকে। যদিও সেটা নেশার ঘোরেই। তামান্না ঢোক গিলে ভাবার চেষ্টা করছে। শেষে চিন্তা করলো একবার গিয়ে শুনে আসলেই তো হয়। কোন জরুরি কথা হতেও পারে। নইলে এতো রাতে নিশ্চয়ই মানুষটা আসতো না। আর জরুরি কথাটা নিশ্চয়ই ওকে নিয়েই। তামান্নার আবার মনে হলো। এতো রাতে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়ার জন্য ডাকছে না তো! পরক্ষণেই সেই চিন্তাটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললো। মানুষটাকে এতোটাও নির্দয় মনে হয় না। এসব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে তামান্না বাড়ির বাইরে বাগানের দিকে গেল।

তামান্না বাগানে এসে দেখলো কিশোর চুপ করে চাঁদের দিকে তাকিয়ে বসে আছে। বাগানে বসার জন্য ছাউনির মতো করে একটা জায়গা আছে। সেখান থেকে খুব সুন্দর করে চাঁদ দেখা যায়। সম্ভবত কেউ ইচ্ছে করেই ব্যবস্থাটা করেছে। কিশোর একবার চাঁদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে তামান্নার দিকে তাকালো। কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকেই আবার ফিরলো চাঁদের দিকে। গোল হয়ে চাঁদ উঠেছে আকাশে। সেই আলোর বন্যায় টলমল করছে চারিদিক। তামান্না দাঁড়িয়ে থেকে সেটাই দেখছে। 

-বসুন?

-না না। আমি ঠিক আছি--।

-দেখুন আমি আর্গুমেন্ট একদম পছন্দ করি না। কয়েকটা কথা জিজ্ঞেস করব আপনাকে। জাস্ট আনসার করবেন। তারপর রুমে চলে যাবেন। আর কোন মতলব নেই আমার। বুঝতে পেরেছেন?

-জি---।

-বসুন তাহলে।

-জি---।

কিশোরের ধমক খেয়ে কিশোরের থেকে একটু দূরে বসার জায়গায় বসে পড়লো তামান্না। কিশোর ওর দিকে না তাকিয়েই চাঁদের দিকে তাকালো। তামান্নাও তাকালো পূর্ণিমার গোল চাঁদটার দিকে। এতো আলো ঝড়ছে চাঁদের। মনে হয় খুশিতে খিলখিলিয়ে হাসছে চাঁদটা। এতো খুশি কেন আজ চাঁদের!?

-আপনি কোথায় বড় হয়েছেন?

কিশোরের প্রশ্নটা শুনে চমকে একবার কিশোরের দিকে তাকালো তামান্না। কিশোর ভাবলেশহীন মুখে চাঁদের দিকেই তাকিয়ে আছে।

-আম। দীপশিখা নামের একটা অনাথ আশ্রমে।

-বাবা মা কারো খোঁজ জানেন? উনারা বেঁচে আছে কিনা। বা কেন অনাথ আশ্রমে রেখে গেল। এসব?

-বাবা আছে কিনা জানি না। মা মারা গেছে জন্মের পরেই। আমার জন্মের কয়েকবছর আগে মায়ের একটা বেবি মিসক্যারেজ হয়ে যায়। তখন থেকেই মা ভিষণ অসুস্থ হয়ে পড়ে। আর বাবারও তখন উনার পি.এর সাথে একটা সম্পর্ক গড়ে উঠে। সেখানে নাকি একটা বাচ্চাও হয়। মা অনেক রাগারাগি করলে বাবা সব ছেড়ে দিবেন বলে ক্ষমা চান, ওয়াদাও করেন। মাও সরল মনে বাবাকে ক্ষমাও করে দেন। কয়েক বছর ভালোই কেটে যায়। আমার জন্ম হয়। আর জন্মের সময়ই মা মারা যায়। মা মারা যাওয়ার এক সপ্তাহের মাঝেই বাবা উনার সেই পি.এ কে বিয়ে করে নিয়ে আসেন। আর আমার জায়গা হয় অনাথ আশ্রমে।

তামান্না মাথা নিচু করে চুপ করে রইলো কিছুক্ষণ। কিশোরও তামান্নার দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে পারলো না। তামান্নার মুখের দিকে তাকিয়ে আর কিছু গলা দিয়ে বের হলো না কিশোরের। মেয়েটার কাঁদো কাঁদো মুখটা দেখে বুকের বাম দিকে চিনচিনে একটা ব্যথা হচ্ছে কিশোরের। কেন হচ্ছে কে জানে।

০৮!! 

তামান্না একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজেকে সামলে নিলো। নিজের ভাগ্যের পরিহাসগাঁথা চিন্তা করে আর কি লাভ হবে? যা হয়ে গেছে তা তো তামান্না আর বদলাতে পারবে না। তাহলে কষ্ট পেয়েই বা লাভ কি? কিশোর ওর কাছে কি জানতে চাইছে বা কি বলতে চাইছে আপাতত সেটা শোনাটাই উচিত বলে মনে হচ্ছে তামান্নার। তামান্না স্বাভাবিক হওয়ায় কিশোরেরও মনটাও একটু শান্ত হয়েছে।

-সরি---। আপনি ঠিক আছেন? আরেকটা প্রশ্ন ছিল। কর্মফরটেবল ফিল না করলে কাল কথা বলি এ ব্যাপারে?

-না না সমস্যা নেই। আপনি বলুন। কি জানতে চাইছেন?

-দীপশিখায় ঠিক কি হয়েছিল? অনাথ আশ্রম ছাড়লেন কেন? চাইলে তো আপনি ওখানেই জয়েন করতে পারতেন?

-কি বলুন তো আমি দীপশিখার কারণেই এতোদূর এসেছি। অনার্সের ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হতেই তাই আবার ফিরে গেছি আশ্রমে। মাস্টার্সে এডমিট হতে আরো কিছু সময় লাগতো। ততদিন আশ্রমের অফিসের দিকটা সামলাবো ভেবেছিলাম। বড় আপা আমাকে নিজের মেয়ের মতো করে ছোটবেলা থেকে মানুষ করেছিলেন। তাই আমি নিজের ইচ্ছের কথা বলায় অফিসের হিসেবের দিকটা দেখার ব্যবস্থাও করে দিলেন---।

-হুম। তারপর??

-আশ্রমের ওনার সোলেমান শেখ যে আশ্রম চালানোর সমস্ত ডোনেশনের টাকাটা নিজের পকেটে ঢুকাচ্ছে সেটা তখনই জানতে পারি। কি অদ্ভুত ব্যাপার না? উনার বাবা দাদারা আশ্রমটা বানিয়েছিলেন এতিম ছেলে মেয়েদের একটা সুন্দর স্বাভাবিক জীবন দেয়ার জন্য। আর উনি সেসব এতিমদের হকের অংশটা নিজের পকেটে পুরছে। হাস্যকর--।

-সোলেমান শেখের বিরুদ্ধে কোন স্টেপ নেন নি? পুলিশ কেইস?

-স্টেপ নেয়ার কি কিছু ছিল? উনার আশ্রম, উনি সেটার টাকা নিজের এ্যাকাউন্টে রাখছেন। এটা হলো পুলিশ অফিসারের মতামত। কেইস ফাইলই হয় নি--। থাকার বড় অফিসার কল করে সোলেমান শেখকে খবর দিলে উনি সেখান থেকেই টেনে হিঁচড়ে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন----।

-হোয়াট?? তা-তারপর!!

-তারপর আর কি---। প্রথমে লোভ দেখান। তারপর ধমক, হুমকি--। আর শেষে---। শেষে বলেন বিয়ে করে আমাকে নিজের বাড়ির রাণী করে রাখবেন---।

-ওই বুড়ো লোকটা!! আর ইউ সিরিয়াস?

-হা হা। বুড়োই বটে---। যা হোক। বিয়েতে রাজি হই নি বলে জোর করার চেষ্টা করছিল---। আমি কি করবো, কি করে মুক্তি পেয়েছি নিজেও জানি না। হাতের কাছে একটা চুনামাটির ফুলদানি পেয়ে সেটাই মাথায় বসিয়ে দিয়েছি লোকটার। সেখান থেকে বেরিয়ে কোথায় যাবো বুঝতেই পারছিলাম না। 

-কোথায় গেলেন ওই লোকের বাসা থেকে?

-বড় আপার বাসায়।

-সোলেমান শেখ তো বললো আপনি নাকি কিসের ক্যাশ পাঁচ লাখ টাকা চুরি করে---। আর আপনার বড় আপায় বাসায় ছিলেন, কেউ পেল না কেন!!

-চুরির কথা বলে মামলাও করিয়েছে বুড়োটা। পুলিশ তো সব জায়গায় খুঁজেছে। কিন্তু বড় আপার বাসা আশ্রম এরিয়ায় হওয়ায় ওটায় আর সার্চ করে নি। আমিও কোন ঝামেলা ছাড়াই এক মাস আপার বাসায়ই ছিলাম---।

-ওহ------।

-আপনি হঠাৎ এসব জিজ্ঞেস করছেন যে? আশ্রমে গেছেন নাকি? 

-হুম--। 

-ওহ আচ্ছা। তাই বলুন। তা কি ঠিক করলেন? সকালে পুলিশে খবর দিবেন? 

-মানে??

-না মানে-- একজন চোরকে নিশ্চয়ই বাসায় রাখার মতো রিস্ক নিবেন না। যখন আপনি নিজেই বাসায় থাকেন না৷ বা আপনার মা আর মেয়ে বাড়িতে একা থাকে তখন নিশ্চয়ই একজন অনাথের কথা বিশ্বাস করার চেয়ে আশ্রমের মালিকের মতো বড় কারো কথাই বিশ্বাস করবেন। 

-চুপ করুন তো।

-তাহলে কি সকালেই তাড়িয়ে দিবেন? না মানে আপনারা বড়লোকেরা তো পুলিশে খবর দিতে নাও চাইতে পারেন। পুলিশি ঝামেলায় না গিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিলে হয়তো-----।

-এখন থেকে তাড়িয়ে দিলে যাবেন কোথায়? হ্যাঁ? সেটা ঠিক করেছেন? 

-কোথায় যাবো? আসলে আশ্রম ছাড়া যাওয়ার জায়গা তো নেই--। সেখানে যাওয়াও সম্ভব না। তবে কয়েকটা দিন সময় পেলে হয়তো কোথাও থাকার----।

-অতিরিক্ত কথা বলবেন না তো। আমি কি আপনাকে একবারো বলেছি সকালে চলে যেতে? আশ্চর্য! এতো বেশি কেন বুঝেন?

-তাহলে কি পুলিশে----?

-উফফ। সেটা সকালেই দেখতে পাবেন। নাকি পুলিশের ভয়ে পালানোর প্ল্যান করবেন?

-পালানোর জায়গাই তো নেই। পালাবোই বা আর কোথায়??

-তাহলে চুপ থাকুন---। আর যে এতো অন্য কোথাও থাকার কথা বলছেন সেখানেও কোন বিপদ হবে না এটার শিউরিটি দিতে পারবেন? 

-এখন নিজেকে রক্ষা করার মতো ক্ষমতা আছে ইনশাল্লাহ ----।

-কি ক্ষমতা শুনি---।

-আছে আরকি--। প্রয়োজনে নিজেকে রক্ষা করার মতো কলা কৌশল রপ্ত করেছি গত এক মাসে৷ অন্তত এটা বুঝতে পেরেছি সম্মান নিয়ে এই কঠোর সমাজে টিকে থাকতে হলে আত্মরক্ষার কৌশল জানাটা কতোটা জরুরি----।

-তাই নাকি? আপনি শিউর আপনি নিজেকে নিজেই রক্ষা করতে পারবেন?

-জি অবশ্যই---। 

-ওকে---। লেটস চেক----।

-মানে!!??

তামান্না কিছু বুঝতে না পেরে কিশোরের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলো। কিশোর একটু একটু করে তামান্নার দিকেই এগিয়ে আসছে। লোকটার চোখে মুখে এমন কিছু একটা আছে যে তামান্না চাইলেও তার দিকে চোখ ফেরাতে পারছে না। কিশোরের এভাবে ওর দিকে এগিয়ে আসায় ভয় লাগছে না, কেমন একটা চাপা অস্বস্তি হচ্ছে তামান্নার। মানুষটা তামান্নার কোন ক্ষতি করবে না এই বিশ্বাসটা তামান্নার আছে। এই বিশ্বাস কবে, কি করে তৈরি হলো তামান্না জানে না। তবে ভরসাটা করতে পেরে কেমন একটা ভালো লাগা কাজ করছে তামান্নার।

তামান্না এসব চিন্তা করতে করতেই কিশোর তামান্নার হাতটা পিঠের দিকে শক্ত করে মুচড়ে ধরে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো৷ তামান্নার ঘোর কাটতেই নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে কিশোরকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো। হাতসহ সমস্ত শরীরটা কায়দা করে ঘুরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করতেই কিশোরও তামান্নাকে ঘুরিয়ে নিয়ে একেবারে নিজের সাথে পেঁচিয়ে জড়িয়ে ধরলো। তামান্না তবু হার না মেনে ছাড়ার জন্য ছটফট করতে লাগলো। শেষে ছুটতে না পেরে ভয় পেয়ে গেল। কোনমতে গলা দিয়ে শব্দ করার চেষ্টা করলো।

-স্যার---হাতে লাগছে---।

-লাগার জন্যই ধরেছি--।

-জি??

-একজন মাতালের হাত থেকে ছুটে আসা যতটা সহজ অন্য কারো হাত থেকে ছোটা ততটা সহজ নাও হতে পারে। একজন পুরুষ আপনার ক্ষতি করতে চাইলে সে কতোটা হিংস্র হতে পারে তার ধারণাও নেই আপনার। সামান্য আমার হাতের বাঁধন থেকেই ছুটতে পারছেন না। বাইরে এর চেয়েও আরো কত বড় বিপদে পড়তে পারেন ধারণা আছে? সেসব থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবেন বলে মনে হয় আপনার?

-সরি স্যার---।

-নিজেকে রক্ষা করতে পারবেন ভেবে অন্য কোথাও থাকার ব্যবস্থা করার কথা যেনো আর মাথায়ও না আসে। বুঝাতে পারলাম?

-জি স্যার---।

কিশোর হাতের বাঁধন হালকা করে ছেড়ে দিতেই তামান্না মুক্তি পেয়ে সরে এলে। কিশোরও আবার এসে আগের জায়গায় এসে বসলো। চাঁদটা মেঘের সাথে লুকোচুরি খেলছে। সেটাই দেখায় মন দিলো কিশোর। তামান্না অন্য কোথাও যাবে শুনেই মাথায় কি চেপেছিল কে জানে। নিজের কাছেই অদ্ভুত লাগছে কিশোরের। মেয়েটা কি ভাবলো সেটা ভেবে একটা অস্বস্তি হচ্ছে। তামান্নাও চুপ করে এসে আগের জায়গাটায় গিয়ে বসলো। কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না। কিশোরের কি বলার আছে নাকি রুমে চলে যাবে সেটা নিয়েও দোটানা চলছে তামান্নার মনে। কি করা উচিত এখন?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন