কামরান সাহেব সিড়ি থেকে পড়ে গিয়ে সেন্সলেস হয়ে যায়। নিসার সাথে কামরান সাহেব কথা বলত না। তবুও নিসা বাবা বলে চিৎকার দিয়ে দৌড়ে এসে ধরল তাকে।
ওদিকে লাবীবা স্থির হয়ে বসে আছে। বাতাসি ওকে নিয়ে টানাটানি শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু যখন কামরান সাহেবের এমন অবস্থা হল তখন বাতাসির গগনবিদারী কান্না বাসার প্রতিটা দেয়ালে এসে আঘাত করলো। বাপ বলে বার চিৎকার দিয়ে কাঁদতে লাগলো। রেজওয়ান সহ বাসার সবাই এই দুই জনকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।
কামরান সাহেবের মাইল্ড এ্যার্টাক হয়েছে। ওনাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। লাইফ সার্পোটে রাখা হয়। একের পর এক বিপদ এসে আঘাত করেই চলছে কামরান সাহেবের পরিবারকে। নিসা বাসার বড় বৌ হিসেবে সমস্ত কাজ ও একা হাতেই তুলে নিয়েছে। নিসার বাঁচার কোন আশা ছিলনা কিন্তু পরিবারের এই বিপদ তাকে বাঁচার আশা জুগিয়েছে। কারন এখন নিসার মনে হচ্ছে কেউ তো একজন বসে বসে ঠান্ডা মাথায় এত সব কান্ড ঘটিয়ে চলেছে।
শাশুড়ির দেখাশুনা, শশুড়ের সেবা যত্ন সব একা হাতে সামলিয়ে চলছে। বাতাসি তো কামরানের কাছ থেকে এক পাও নড়েনা।
♦♦
মাহাদ তিনদিন হল পুলিশ কাষ্টারিতে আছে। মাহাদ এখনো জানেনা তাকে কেন এখানে রাখা হয়েছে। আসিফকে অনেকবার জিঙ্গাসা করা হয়েছে কিন্তু কোন লাভ হয়নি। আসিফের কাছে কয়েকবার অনুরোধ করেছে ওর ফোনটা দিয়ে শুধু একবার তিতিরের সাথে কথা বলবে। সেই আবদারও আসিফ রাখেনি। কারো সাথে দেখা অবদি করতে দিচ্ছেনা। আসিফের একটায় কথা, মাহাদ তোর ফোন অন্য মানুষ পায় কিভাবে? তোর মনে আছে লাষ্ট বার ফোনটা কোথায় রেখেছিলি?
মাহাদের একটাই উত্তর, বাসায় ফিরে ফোনটা ট্রি টেবিলের উপর রেখে শুধু নাস্তা করেছি। তারপর প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছিল তাই ঘুমিয়ে পড়েছি। তাহাজ্জুদ বা ফযরের কোন সালাতই আদায় করতে পারিনি। শেষে বাবার ডাকাতে জেগে উঠলাম। তারপরতো তুই সব কিছু জানিস।
আসিফ রাত-দিন এক করে আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যাতে মাহাদের রিমান্ড না মঞ্জুর হয়। কারন মিডিয়া সহ পুরো শিক্ষার্থীরা মাহাদের বিচার চায়।
প্রফেসার হামিদ আমযাদ সেই রাতেই তিতিরকে না পেয়ে মাহাদের বিরুদ্ধে মামলা করে। এতে পুরো স্টুডেন্ট সমাজ ফেটে পড়ে। প্রতিদিন এর বিচার চেয়ে মিটিং মিছিল তো চলছেই। মাহাদকে কেন রিমান্ডে নিচ্ছেনা প্রশাসন, সেটার জন্য আরো ফুঁসিয়ে উঠেছে তারা।
সমস্ত প্রুভ মাহাদের বিরুদ্ধে। তিতিরের ফোনের কল লিষ্টের লাষ্ট কল মাহাদের। কল রেকর্ড সার্চ করে দেখা গেছে মাহাদই ওকে নিচে নামতে বলেছে। তাছাড়া সেদিন মাহাদ কলেজ ক্যাম্পাসে সবার সামনে তিতিরের গায়ে হাত তুলে বলেছে, " তোকে আগে খুন করব তারপর অন্য মেয়ের কাছে যাব।"
আগেও দু-একবার মাহাদের সাথে তিতিরকে দেখা গিয়েছে। এসব বড় বড় বিজনেসম্যান গুলো মেয়েদের শিকার বানিয়ে নিজেদের কামনা বাসনা পুরুন করে তারপর এভাবেই ছুড়ে ফেলে। সমাজ আর কত সহ্য করবে এদের অত্যাচার।
আসিফ সহ ওর সমস্ত ফ্রেন্ড সার্কেল মাঠে নেমেছে। যদি কিছু একটা প্রুভ পাওয়া যেত মাহাদের পক্ষে তাহলে মাহাদকে বাহিরে নিয়ে আসা এক চুটকির ব্যাপার। এরা সবাই জানে মাহাদকে ফাঁসানো হয়েছে। কিন্তু কোথায় পাবে সেই প্রুভ। ভিকটিমের লাশও পাওয়া যায়নি। যেখানে এই হত্যাকান্ড হয়েছে সেই শশ্মানে কয়েক জায়গায় রক্তপাত ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায়নি। সবার ধারনা মাহাদই ঐ দুটা মেয়ের লাশ গুম করেছে। ওকে রিমান্ডে নিলেই সব তথ্য বের হয়ে আসবে।
কামরান সাহেব পাঁচদিন পর হসপিটাল থেকে ছাড়া পেয়েই ওনার সমস্ত পাওয়ার নিয়ে মাঠে নামলেন। একটা মেধাবী স্টুডেন্টের এভাবে গায়েব হওয়া কেউ মেনে নিতে পারছেনা। সমস্ত দেশের জনগন যেন ফুসে উঠেছে। তারা মাহাদের ফাঁসি চায়।
এভাবে ৭ টা দিন গেল। মাহাদকে কিছুতেই আর বের করা সম্ভব নয়। আসিফ সহ ওর ফ্রেন্ডদের আপ্রান চেষ্টা, ফুয়াদের ছোট ভাই হিসেবে, যে কিনা দেশের জন্য শহীদ হয়েছে , তাছাড়া মাহাদের অতীত রের্কড ভালো ছিল,
সে একজন স্পেশাল ফোর্সের স্কোয়াড কমান্ড অফিসার। ক্যাডেটে শিক্ষা জিবন শেষ করে সে সেখানে জয়েন্ট করেছিল। পরে আরও হায়ার এডুকেশনের জন্য এবং শারিরীক অসুস্থতার অযুহাত দিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে এসে হায়ার এডুকেশনের জন্য আপ্লাই করে ইংল্যান্ডে। তারপর কোন এক কারনে সে আর ইংল্যান্ডে পাড়ি জমায় নি। সম্ভবত সেই সময় তার জিবনে তিতিরের আগমন ঘটে। তাকে ছাড়তে চায়নি বলেই সেখানে সে তার শিক্ষাজিবনের ইতি ঘটিয়েছে। তাছাড়া সে একজন তরুন মেধাবী সফল উদ্যক্তা। দেশও এমন সফল বিজনেসম্যানকে এভাবে কেউ হারাতে চায়না। যার কারনে হাজার হাজার বেকার তরুন-তরুনীদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে এবং সরকারও এর মাধমে মোটা অংকের রাজস্ব আদায় করতে পারে।
এত ভালো ভালো রের্কডের জন্য উপর মহলও বিশ্বাস করতে চাইছেনা মাহাদ এমন ধরনের কাজ করতে পারে। মাহাদকে ফাঁসানো হয়েছে তাই তারা সহজে মাহাদের বিরুদ্ধে কোন এ্যাকশন নিতে চাচ্ছেনা।
প্রশাসনের এমন চুপ থাকাতে শিক্ষার্থীরা ক্রোধে ফেঁটে পড়ল। ক্লাস বর্জন সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভাংচুর করতে লাগল। রাস্তায় রাস্তায় মিছিল চলল। রাস্তা ব্লক করে ফেলল, রাস্তার সমস্ত যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করলো। এর মধ্য চান-চঞ্চল্য একটা ভিডিও প্রকাশ হল ইন্টারনেটে। তিতিরকে হত্যার সমস্ত ভিডিও ফ্রুটেজ বের হল। কতটা নির্দয় ভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে।
এবার আর বুঝি মাহাদকে রক্ষা করা গেলনা। সবার দেওয়া তথ্য মাহাদের বিপক্ষে গেল। মাহাদের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়ে গেল। কামরান সাহেব এবারও ব্যার্থ হলেন তার শেষ অবলম্বনকে রক্ষা করতে।
মাহাদকে যখন স্পেশাল রুমে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখনো মাহাদ জানেনা তিতিরের সাথে কি ঘটনা ঘটেছে। কেনই বা তাকে রিমান্ডে নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু মাহাদের বুকের ভিতর তুলপার শুরু করে দিয়েছে। এতদিন হয়ে গেল তিতির কি কিছুই জানেনা! তিতির ভাল আছে তো?
অন্ধকার রুম, মাহাদকে এই প্রথম প্রাথমিক জিঙ্গাসা বাদ শুরু করলো অন্য একটা অফিসার। আসিফ চেষ্টা করেও সে এই দায়িত্ব পায়নি।
"স্যার কেমন আছেন?"
সামনের অফিসারের মুখে এমন কথা শুনে মাহাদ একটু স্মিত হেঁসে বলল," আলহামদুলিল্লাহ্ আমি ভালো আছি।"
অফিসার মেহেদি হাসান একজন কঠোর পুলিশ অফিসার। আসামীর মুখ থেকে কথা কিভাবে বের করতে হয় সেটা তার খুব ভালো করে জানা আছে।
কিন্তু তার এই এত বছরের অভিঙ্গতার রের্কড নাই যে কোন আসামি রিমান্ড অবস্থায় এত শান্তশিষ্ট ভাবে স্মিত হেঁসে আল্লাহর প্রসংসা করেছে।
স্যার আপনি এই অবস্থায়ও আলহামদুলিল্লাহ্ বলছেন? স্ট্রেঞ্জ......
মাহাদ মুচকি হেঁসে বলল," আমার স্ত্রী তিতির এই জিনিসটা আমাকে শিখিয়েছে। আমরা যেই অবস্থায় থাকিনা কেন আল্লাহর নিয়ামত যেন না ভুলে যাই। আমাদের প্রতিটা কাজে আল্লাহ্ সুবহানাতালার প্রসংসা করা উচিত।"
অফিসার মেহেদী হাসান বিষ্ফোরিত চোখে বলল," তিতির ম্যাডাম কি আপনার স্ত্রী ছিল?"
" জ্বী, আমাদের বিয়ের বয়স এই সেপ্টেম্বর আসলে ৪ বৎসর পূর্ন হবে। যদিও আমাদের বিয়েটা গোপনে হয়েছিল। আমি এখান থেকে বের হলেই ইনশাল্লাহ্ আমাদের বিয়ের ব্যাপারটা সবার সম্মুখে আনব।"
"আপনার স্ত্রী কোথায়?"
"হয়ত এতদিনে আমার বাবা ওকে আমাদের বাসায় নিয়ে এসেছে। আমাদের বাসায় ওর থাকা কথা।"
মেহেদি হাসান দ্রুত চেয়ার থেকে উঠে চলে যেতেই মাহাদ বুঝল এই অফিসারকে তার ইচ্ছার কথা বললে হয়ত পুরুন করবে।
"এক্সকিউজ মি, আমার একটা হেল্প করতে পারবেন? আমি কি আপনার ফোনটি ব্যবহার করতে পারি?"
মাহাদের এমন কথায় মেহেদি হাসান থেমে গেল। পিছু ফিরে ভ্রু কুঁচকে বলল," ফোন দিয়ে কি করবেন?"
"আমার ওয়াইফের সাথে একবার কথা বলতাম। বোঝেন তো ভালবাসা মানুষকে বেহায়া পর্যন্ত বানিয়ে দেয়। আমার তার সাথে একটু কথা বলার প্রয়োজন।"
মেহিদী হাসান রুম থেকে বের হয়ে এলেন। এই মানুষটা কখনো তার স্ত্রীকে খুন করতে পারেনা।
না সে সব কাজ করেও নাটক সাজাচ্ছে নিজেকে নির্দোস প্রমান করতে। নানা চিন্তায় মগ্ন হয়ে গেল মেহেদী হাসান। কি করবে সে! যেহেতু রিমান্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে তাই তাকে টর্চার করতেই হবে। তবুও মেহেদী হাসান বসে চিন্তা করতে লাগলেন। নাহ্ আজকে সে বিবেকের কাছে পরাজিত হল তাই মাহাদকে রেখে সে চলে গেল। হাতে আরও চারটা দিন সময় আছে।
কিছু পুলিশ সদস্য মাহাদকে সেখান থেকে নিয়ে যায়।
♦♦♦♦
সন্ধ্যার পর,
আসিফ নিজের বাসায় বসে আছে। সামনে তার স্ত্রী।
আসিফ নানা চিন্তায় আছে কিন্তু কোন সমাধান তার কাছে নেই। হঠাৎ কলিংবেল বেজে উঠলো। নিপা যাওতো, দেখ কে এসেছে!
আসিফের স্ত্রী নিপা গিয়ে দরজা খুলে দেখলো, একটা লোক। কাকে চান?
"স্যার বাসায় আছেন? থাকলে একটু জলদি ডাকুন। আমার হাতে একদম সময় নেই।"
এই আসিফ এদিকে একটু আসতো বলেই নিপা ওর বরকে ডাকল। আসিফ সাথে সাথেই চলে আসল। কি সমস্যা বলতেই লোকটি বলল," স্যার এটা আপনার জন্য। খুব সাবধানে কাজ করবেন। আপনার বাসায়ও নজরদারী রাখা হয়েছে। "
না মানে এখানে আসার পথে সন্দেহ হল বলেই লোকটি দ্রুত চলে গেল।
আসিফ দরজা বন্ধ করে রুমে এসে চিঠির খামটি খুলে সব কিছু পড়ে দেখল। আসিফের চোখদিয়ে টপটপ করে পানি পড়ল। আসিফ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল," Truth triumphs in the long run."
আসিফ আর একমুহুত্ত্বও দেরি না করে নিসাকে কল করে বলল," নিসা যত দ্রুত সম্ভব হয়, আঙ্কেলকে নিয়ে থানায় চলে আয়। আমাদের মাহাদ আজ বাড়ি ফিরছে। ধর্মের কল বাতাসেও নড়ে বুঝলি?"
আসিফ অফিসে কল দিয়ে সেখান থেকে কিছু ফোর্স সহ ওর বাসায় আসতে বলল। তারপর গাড়ী এলে আসিফ জিপে চড়ে থানায় চলে গেল।
সেই রাতে সমস্ত তথ্য এটাই বলে যে, এতসব ঘটনার পিছু মাহাদের কোন হাত নেই। অবশেষে সত্যরই জয় হল।
এখন এটাই প্রশ্ন, কি ছিল সেই তথ্যতে!
রাঙ্গামাটি থেকে কুরিয়ার করা হয়েছে। আসিফ সেই চিঠিটা ওর স্যারের হাতে দিল। চিঠিটা ছিল তিতিরের হাতের লেখা। ঘটনার ১৩ দিন আগে এই চিঠিটা লেখা হয়েছে। চিঠিতে উল্লেখ করা তারিখ এটাই বলে।
" আমি জান্নাতুন তাজরীম তিতির বলছি,
আমার আরও একটা পরিচয় আছে। সেটা হল, মিসেস তিতির মাহাদ। আমি কিছুদিন যাবত অনুভব করছি আমাকে ফলো করা হচ্ছে। আমি যানিনা আগামী দিনগুলোতে আমার সাথে কি ঘটতে চলছে। তবে এটা আমি নিঃশ্চিত, আমার হ্যাসব্যান্ডের ক্ষতি করার জন্যই হয়ত শত্রু পক্ষ আমাকে বেছে নিয়েছে। জানিনা তারা কিভাবে আমাকে টার্গেট করল। কাল যদি আমি মারাও যাই, আর আমার ডেড বডি যদি আমার হ্যাসব্যান্ড মাহাদের পাশে, রুমে, গাড়ীতে বা যেখানেই পাওয়া যাকনা কেন এতে তার লেনদেন নেই। সে আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী থাকবেনা। তার আত্বঃমর্যাদা নষ্ট করার জন্য পরিকল্পনা অনুযায়ী শত্রুপক্ষ দ্বারা আমার ক্ষতি হবে। কেউ যদি মাহাদকে দোষারোপ করেও তাহলে সে ভুল কাজ করবে। "
এতটুকুই লেখা ছিল চিঠিতে। এই একই কথা অডিও রের্কড সহ আর একটা মেমোরি কার্ডও ছিল চিঠির মধ্য।
এতকিছু দেখে অফিসারের মুখ ফুটে একটা কথাই বের হল," সে মারা যাওয়ার আগে নিজের স্বামীকে হেফাযত করার একটা রাস্তা ঠিকি করে গেছে। আসলেই দেশ একটা মেধাবি শিক্ষার্থীকে হারাল।"
স্যার, ও এখানে থাকার যোগ্য নয়। ওর যা ক্ষতি আমরা করেছি তা কখনো শুধরে দিতে পারবোনা। আপনি কি করবেন জানিনা। যা কাগজপত্র ঠিক করার আছে তা কাল আপনি করেন। ওকে এখানে আর একমুহুত্ত্বও রাখবোনা। কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলল আসিফ।
মাহাদকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু আসিফ ওকে একা আর বাসায় যেতে দিলনা। মাহাদ এতবার বলছে সে একা যেতে পারবে কিন্তু আসিফ কিছুতেই ছেড়ে দিলনা। মাহাদের সময় আর শেষ হচ্ছেনা। যত দ্রুত সে এখান থেকে যাবে তত দ্রুত ও তিতিরকে কাছে পাবে। এতদিন হল ও দেখতে আসেনি মাহাদকে তার শাস্তিতো তাকে পেতেই হবে। এমন শাস্তি দিবে যাতে ও দ্বিতীয় বার এমন কাজ না করে ওর কাছে ছুটে আসে।
আরও ১৫ মিনিট পর নিসা কামরান সাহেবকে নিয়ে থানায় চলে আসলো। নিসা মাহাদকে দেখেই সবার সামনে ওকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল।
"নিসা কি হচ্ছে, বাবা আছে সামনে তাছাড়া আরো অনেকে আছে। সবাই কি ভাববে বল?"
নিসা মাহাদকে ছেড়ে দিয়ে বলল," মাহাদ দাড়ীতে তোকে আরও সুন্দর দেখাচ্ছে। এই অবস্থায় তোকে তিতির দেখলে মুগ্ধ হয়ে যেত।"
তিতিরের কথা উঠতেই মাহাদ সাথে সাথে বলল," তিতির কোথায় রে? ও আসেনি!"
মাহাদ এদিক ওদিক তিতিরকে চোখ বুলিয়ে খুঁজতে লাগল।
কামরান সাহেবের দম যেন বন্ধ হয়ে গেল। ছেলেকে এখন সে কি বলবে? গলা শুকিয়ে এল। এমন সময় আসিফ মাহাদের ঘাড়ে হাত দিয়ে বলল," তুই কেমন মানুষরে? বউকে থানায় আসতে বলছিস? থানা জায়গাটা কি খুব ভালো? বাসায় গিয়ে দেখা করিস। নিসা চল তোদের এগিয়ে দিয়ে আসি। "
সবার অজান্তেই সেদিন মাহাদ ছাড়া পেল। আসিফ ওদের সাথে বাসা অবদি গেল। তারপর মাহাদকে রেখে যখন বাসা হতে বের হয়ে গাড়ীর অপেক্ষা করছিল তখন কোথা থেকে এ বাইক আরোহী এসে আসিফের গলা তাক করে ছুড়ি বসিয়ে দিল। আসিফ গলায় হাত দিয়ে রাস্তায় পড়ে গেল।
মাহাদও সে সময় আসিফকে কিছু বলার জন্য বাহিরে এসেছিল। কিন্তু আসিফকে ঐ অবস্থায় দেখে মাহাদ দৌড়ে এল। রাস্তায় তখন লোকজন জড়িয়ে গেছে। মাহাদ ওর শার্টটা খুলে আসিফের গলায় চেঁপে ধরল। কে এমন তোর অবস্থা করল আসিফ! তুই কি চিনতে পেরেছিস? ঐ অবস্থায় আসিফকে কোলে নিয়ে একটা ট্যাক্সি দাড় করিয়ে পাশের হসপিটালে ছুটল। রাস্তায় মাহাদ একটার পর একটা কথা বলে আসিফকে জাগিয়ে রাখার চেষ্টা করছে।
এসব কি হচ্ছে! যে আমার কাছে আসছে তাকেই এভাবে শেষ করে দেওয়া হচ্ছে। আসিফকে নিয়ে হসপিটালে ঢুকল। আসিফের গায়ে পুলিশের ইউনির্ফম ছিল বিধায় চিকিৎসার কোন দেরি বা ক্রুটি হলনা। গলায় ৪ টা শেলাই দেওয়া হল। শত্রুরা চাইলে আরো বড় ক্ষতি করতে পারতো কিন্তু তা না করে মনে হয় সাবধান করে দিল।
মাহাদের মনে কি হল সেই জানে। আসিফের ফোন থেকে ওর কয়েকটা ফ্রেন্ডকে ফোন দিয়ে এখানে আসতে বলল তারপর বাসায় চলে গেল। আসিফকে যখন এরা ছাড়েনি তাহলে তিতিরকে ছাড়বে? কিছুতো একটা হয়েছে যে কথা এরা আমাকে বলছেনা।
বাসায় ঢুকেই দেখল ওর মা মাহাদের জন্য কান্নাকাটি করছে। মাহাদকে দেখে সবাই বলল," কই গিয়েছিলি? রাস্তার সামনে নাকি কাউকে গলায় ছুড়ি দিয়ে আঘাত করেছে? আমরা তো ভয় পেয়ে গেছি। আর কোথায়ও যাসনা।"
"বাবা তিতির কোথায়? আপনাকে তো ওকে আনার দায়িত্ব দিয়েছিলাম। তাহলে ও এখনো আমার কাছে এলোনা কেন?"
"মাহাদ আমার কথা শোন, আগে ফ্রেস হয়ে নে। ধীরেসুস্থে সব কথা হবে। এখন এত কথা বলিসনা। আগে রেষ্ট নে।"
"তিতির ভালো নেই বাবা। আমি আপনাকে আগেই বলেছি ওকে এখানে নিয়ে আসতে কিন্তু আমার কথা আপনি মানেননি।"
"দেখ, বাসায় তখন অনেক সমস্যা ছিল। তুই সব জেনেও কেন এমন করছিস! পাগলামি করিস না। সব ঠিক আছে।"
শশুড়ের কথা কেড়ে নিয়ে নিসা বলল," আরে এত চিন্তা করছিস কেন? তিতিরতো ওর বাবার কাছে গেছে।"
"চুপপপপ, আমি জানিনা! ওর বাবার সাথে তিতিরের কেমন সম্পর্ক! আমাকে কি বোঝাতে চাইছিস?
আমি ছোট বাচ্চা তাই আমাকে কাহিনী শোনাতে এসেছিস? আমি চিৎকার চেঁচামেচি করতে চাইনা। আমি জানতে চাচ্ছি তিতির কোথায়?"
"ভাইজান আপনি কিছু জানেন না! আপাকে খুঁজে পাওয়া যাইতেছিল না হের লায় আপনারে পুলিশ লইয়া গিছিল বলেই সাবিনা বোমা ফাটালো।"
"তিতির নিঁখোজ......! আর আপনারা আমাকে একটা কথাও জানানোর প্রয়োজন বোধ মনে করেননি? মাহাদ এই কথাগুলো বলতেই নিসা এসে ঠাস করে সাবিনার গালে ঠাটিয়ে একটা চড় মারে। এই তুই এত বেশি কথা বলিস কেন?
মাহাদ সাথে সাথে সাবিনাকে ওর কাছে এনে বলল," ওর সত্যি কথা বলার সৎ সাহস আছে কিন্তু তোদের তো সেই সাহসটুকুও নেই? আমি যেন দ্বিতীয় বার না দেখি ওর গায়ে হাত তুলেছিস।"
মাহাদ কথাগুলে বলেই দ্রুত ওর রুমে চলে গেল। পাগলের মত তিতিরের নাম্বার ডায়েল করতে লাগল। নাম্বার বন্ধ হইছে তো কি হয়েছে ইমু বা ওয়াট'স অ্যাপ খোলা আছে হয়ত। মাহাদ নেট অন করতেই একের পর এক মাসেজ এসে জমা হতে লাগল ওর ইনবক্সে। মাহাদের হাতের টার্চ লেগেই একটা মাসেজ অন হয়ে গেল। তিতিরকে কেউ পিছন থেকে আঘাত করছে আর তিতির ওর ঘাড়ে হাত দিয়ে ব্লাড দেখেই থরথর করে কেঁপে উঠেছে। তিতিরের শেষ বলা শব্দ ছিল মাহাদ।
এই দৃশ্য দেখে মাহাদ আর স্থির থাকতে পারেনি।
নিসা দরজায় দাড়িয়ে কাঁদছে। নিসাকে দেখে মাহাদ ঠান্ডা কন্ঠে বলল," নিসা আমি এ কি দেখছি! তিতির এত রক্ত সহ্য করতে পারেনা নিসা। কতটা যন্ত্রনা পাচ্ছে তিতির। নিসা ওর শেষ কথা ছিল মাহাদ! এটা কি হয়ে গেল নিসা? ওতো জানে ওকে আমি আঘাত করেছি। ওর এমন ঘটনার জন্য আমি দায়ী। আমি কিভাবে কি করলাম?"
আমার তিতির চাই নিসা বলেই মাহাদের হাত থেকে ফোনটা পড়ে গিয়ে ভেঙ্গে গেল আর মাহাদ সেন্সলেস হয়ে পড়ে যায়।
নিসার কলিজাটা মোচড় দিয়ে ওঠে। মাহাদ বলে ছুটে গেল। নিসার চিৎকারে লাবীবা সহ সবাই উপরে আসল। কিন্তু নিসা মাহাদকে রেখে তার আগেই সবাইকে বাহিরে রেখে দরজা বন্ধ করে আর্তনাদে চিৎকার দিয়ে কাঁদতে লাগলো। আল্লাহ্ আর কত পরীক্ষা নিবা। নিসা কাঁদতে কাঁদতেই সেখানে এম্বুলেন্স আসার জন্য কল দিল। এদিকে মাহাদের আর কোন রেসপন্স নেই। নিসা বসে থরথর করে কেঁপেই চলছে আর কাঁদছে। বাসার সবাই চিৎকার দিয়ে নিসাকে ডাকছে দরজা খুলে দিতে। না নিসা কিছুতেই দরজা খুলছেনা। শেষে এম্বুলেন্স এলে দরজা খুলে দিয়ে নিসা জোড় গলায় বলল,
" আজ যদি বাসার কোন মানুষ মাহাদের শরীর টার্চ করে তাহলে তাকে আমি আগে খুন করবো।"
৪ জন ছেলে এসে মাহাদকে দ্রুত নিয়ে গেল। কামরান সাহেব ক্ষেপে গিয়ে বলল," পাগল হয়ে গেছ তুমি। আমার ছেলের যদি কিছু হয় তাহলে তোমাকে আস্ত রাখবোন।"
বাবা আপনাকে আর আমি বিশ্বাস করিনা। আমি ফুয়াদকে বাঁচাতে পারিনি কিন্তু আমার জিবন থাকতেও আমি মাহাদের গায়ে কাউকে টার্চ করতে দিবনা।
নিজের ঘরের শত্রু আগে নির্মূল করুন তারপর ছেলেকে বাঁচাতে আসেন। নিসা সবাইকে বাসার ভিতর বন্দী করে বাহিরে ছিটকি লাগিয়ে মাহাদের সাথে চলে গেল। এরা ভিতর থেকে ধাক্কাধাক্কি করেই চলল কিন্তু কোন লাভ হলনা।
♦♦♦♦
পরেরদিন পুরো দেশে তিতিরের অডিও ক্লিপ সহ চিঠি ফাঁস করে দেওয়া হল। শত্রুরা বড় রকমের ড্রস খেল। তারা ভাবতে পারেনি তিতির আগেই এর ব্যবস্থা নিয়েছিল। কতটা মেধাবী আর স্বামীর ভালবাসার প্রতি বিশ্বাস থাকলে একটা মেয়ে এতবড় রিক্স নিয়ে জিবনের শেষ সময় অবদি কাটিয়েছে।
যতটা মাহাদের সম্মান নষ্ট হয়ে গিয়েছিল তার হাজারগুন ফিরে পেল। মাহাদ কোথায় আছে কেউ জানেনা একমাত্র নিসা ছাড়া। মাহাদের নিরাপত্তার জন্য ওকে কঠোর নজরে রাখা হয়েছে। বাসা থেকে প্রচুর চাপ এসেছে তবুও মুখ খোলেনি নিসা। ও জিবন দিবে তবুও মুখ খুলবেনা।
কামরান সাহেব হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়ে। তার দু'পা আর দেহের এক অংশ প্যারালাইজড হয়ে যায়। তাকে রাজনৈতিক পদ থেকে অবসর দেওয়া হয়। তার বদলে দল থেকে রেজওয়ানের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। সে দলে এতদিন ধরে আছে এবং অনেক অভিঙ্গ।
রেজওয়ান এই খুঁশিতে পুরো বাসায় মিষ্টির ঢল নামিয়ে দিছে। নিসা শুধু চুপ করে এদের কান্ডই দেখে। পেপারর্স জমার দিন রেজওয়ান ওর সমস্ত কাগজপত্র নিয়ে অফিসে হাজির হল। সবাই খুঁশি মনে তাকে গ্রহন করলো। কিন্তু এতে বিপত্তি ঘটালো সয়ং নিসা এসে। রেজওয়ান ওর পেপারর্স জমা দেওয়ার আগেই নিসা মাহাদের সমস্ত ডকুমেন্ট প্রধানের কাছে জমা দিয়ে বলল," সুযোগ্য সন্তান থাকতে অপর জন কেন ঐ চেয়ারে বসবে? দেওয়ান মো. কামরান আহনাফের ছোট ছেলে দেওয়ান মো. মাহাদ আহনাফ এই পদের একমাত্র যোগ্য প্রার্থী। সমস্ত আচার-বিচার করেই না হয় সঠিক সিদ্ধান্ত নিবেন আপনার। ও পার্রসোনাল কাজে দেশের বাহিরে অবস্থান করছে। শপথ নেওয়ার দিন ঠিকি হাজির হবে।
রেজওয়ানের বাড়া ভাতে ছাই দিল নিসা। রেজওয়ান কটমট করে নিসার দিকে তাকালো। নিসা সে দিকে পাত্তা না দিয়ে অফিস থেকে বের হয়ে মাহাদের কাছে এল। মাহাদ দেড় মাস হল কমায় আছে। নিসা জানেনা মাহাদ সুস্থ হবে না হবেনা। তবুও একরাশ স্বপ্ন নিয়ে নিসা আগামী সুন্দর ভোরের অপেক্ষায় আছে। একদিন মাহাদ ঠিকি সুস্থ হবে। মাহাদের যে সব ফ্রেন্ডরা বড় বড় পজিশনে আছে তাদের সহযোগীতায় মাহাদকে এতটা নিরাপত্তার মাধ্যমে রাখতে পেরেছে নিসা। ডাক্তার সবসময় ওকে পর্যবেক্ষনে রেখেছে। মাহাদের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল," তোর এই সমস্যার পিছনে যারা যারা আছে তাদের একজনের ব্যবস্থা আজকে আমি নিজ হাতে নিব মাহাদ। নিসা চোখের পানি মুছে চলে এল বাসায়।"
রাত ৮ টা বাজে,
নিসা বাসায় আসতেই রূপসা, বাতাসি আর রুপালী নিসার উপর চড়াও হল। মাহাদকে তুমি কোথায় রেখেছ! এক্ষুনি আমাদের সামনে মাহাদকে এনে দাও। তাছাড়া কিন্তু ভালো হবেনা। ইদানিং রূপসা এসে মাহাদদের বাসার থাকছে।
ভালো হবেনা! কি ভালো হবেনা? তাছাড়া কি করবেন? মাহাদের আজকের এই অবস্থার জন্য কে দায়ী? সব থেকে দায়ী ওর নিজেরই পরিবার। আপনাদের যা ইচ্ছা তাই করুন। আমার জিবন থাকতেও আমি মাহাদকে এখন বের করবোনা। যখন ওর সময় হবে তখন ও এমনিই নিজেকে সবার সামনে আত্বঃপ্রকাশ করবে।
নিসা এদের সামনে কিছু আর না বলে সোজা রেজওয়ানের রুমে গিয়ে দরজায় নক করলো। রেজওয়ান তখন রুমে বিশ্রাম নিচ্ছিলো। নিসা ওর কোমরে ওড়নাটা ভাল করে বেঁধে অনুমতি না নিয়েই সোজা রুমের ভিতর ঢুকেই রেজওয়ানের কলার চেঁপে ধরে হির হির করে টেনে বাহিরে নিয়ে এল।
ভাবী কি করছেন! ছাড়েন আমায় বলতেই নিসা কলার ছেড়ে সবার সামনে ঠাশঠাশ করে ঠাটিয়ে কয়েকটা চড় মারল রেজওয়ানের গালে। আমি কি করছি তুই জানিসনা? তোর জ্বীভটা টেনেই ছিড়ব আমি।
নিসা এক হেচকা টান দিয়ে ওকে নিচে নিয়ে এল।
ভাবী কি করছেন বলে মৌ এগিয়ে আসতেই ওকেও গোটা দুয়েক চড় মেরে নিসা বলল," স্বামী এত অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে আর তুমি তার পাশে রাতের পর রাত কাটিয়ে কিছুই টের পাওনি? শুনেছি কেউ কাউকে নিজের হাতে খুন করলে সাতদিন অবদি স্বাভাবিক থাকতে পারেনা। নাওয়া খাওয়া নাকি ভুলে যায়। তুমি কি এই নরপশুর মধ্য এতটুকুও চেঞ্জ দেখনি? না এই নরপশুটা সিরিয়াল কিলার?
এই নিসা তোমার এত সাহস কি করে হয় আমার ছেলের গায়ে হাত তোল! ওর মা এখনো বেঁচে আছে। আমার সামনে কিভাবে ওর গায়ে হাত তুলেছ বলে রেজওয়ানের মা নিসার কাছে এল।
আপনি বেঁচে আছেন শুধু নিজের ছেলেকে দিয়ে ভাইয়ের পরিবার শেষ করে দিতে।
আর মৌ......!
আমি শুনেছি তিতির এখানে যতদিন ছিল ততদিন নাকি রাতিশাকে ও নিজের মেয়ের মত মানুষ করেছে। এত কিছু করেও এই নরপশু তাকে মার্ডার করার হুকুম দিল কিভাবে বলেই আবার থাপ্পর মারল রেজওয়ান কে।
কি রেজওয়ান, তিতিরের মত আমাকেও তোর খুন করতে মন চাচ্ছে? তুই বাবাকে শেষ করে দিচ্ছিস, তুই মাহাদকে শেষ করেছিস, তুই ফুয়াদের অতীত জিবনের সমস্ত খবর ওর শত্রুদের কাছে লিগ করেছিস। তুই গোপনে বাজিমাত করবি আর ভাবছিস কেউ বুঝতে পারবেনা? তুই ফুয়াদের ছোট ভাই তাই তোকে ফুয়াদ মাফ করবে, তুই মাহাদের বংশের রক্ত তাই তোকে মাহাদ ছেড়ে দিবে আর বাবার কথা না হয় ছেড়েই দিলাম। সে তোকে নিজের সন্তানের মত মানুষ করেছে। তাকেও পর্যন্ত তুই ছাড়িসনি।
আর তিতিরতো শান্ত স্বভাবের তাই হয়ত সেও তোকে মাফ করে দিত কিন্তু আমি নিসা, তোর সাথে আমার না আছে রক্তের সম্পর্ক না আছে অন্য সম্পর্ক। তাই আমি তোকে ছাড়ব না।
রেজওয়ান নিসার হাত ঝিটকে সরিয়ে ফেলে বলল," থামান আপনার ভাষন। আপনি আমার ভাবী হোন। তাই আপনাকে সম্মান করি। তাছাড়া আপনি বিধবা মেয়েমানুষ, তাই আপনার অসম্মানও করতে চাইনা। আগে আপনি আপনার কথা প্রুভ করে দেখান তারপর আমাকে এসব বলতে আসেন। আপনি যেদিন থেকে ফুয়াদ ভাইয়ের জিবনে এসেছেন সেদিন থেকেই এরকম ঘটনা ঘটিয়ে চলেছেন।আমারতো মনে হয় এত সবকিছুর পিছনে আপনার হাত নেই তো? ঠাকুর ঘরে কে, আমিতো কলা খাইনি......... সে রকম অবস্থা আর কি!
অনেক আপনার নাটক দেখা হয়েছে, মাহাদকে যত শ্রীঘ্রই সম্ভব বের করে দিন। না হলে আমি আপনার ব্যবস্থা নিব।
নিসার কাছে কোন প্রুভ নেই। এবার রূপসা এসে নিসার চুলের মুঠি ধরে টানতে টানতে দরজার কাছে আনল। তুমি আর তিতির মিলে এই বাসার সব আনন্দ মাটি করে দিয়েছ। তোমাদের জন্য এত কিছু হয়েছে। মাহাদ কোথায় আছে এক্ষুনি বল। তাছাড়া তোমার হাল এমন করবো যে তুমি নিজেকে দেখে নিজেই চিনতে পারবেনা।
ওদিকে এত সব দেখে নিধি কেঁদেই চলছে মামুনি বলে। আর লাবীবা কামরান সাহেবের কাছে বসে চোখের পানি ফেলছে। তার হাতে আর কিছু নেই। সব হারিয়ে সে আজ পথে বসেছে।
রূপসা নিসাকে বাসা থেকে বের করে দিল। তোমাকে যেন এই বাসায় ২য় বার না দেখি। নিসা অত্যান্ত রাগী একটা মেয়ে তাই ফিরে আর ২য়বার তাকালোনা। শুধু নিধিকে ডেকে ওকে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেল। ওর কাছে মাহাদ আছে, এটাই যথেষ্ট। বাঁকি সব বানের জলে ভেঁসে যাক এতে নিসার যায় আসেনা।
নিসা বাসা থেকে বের হতেই গেটের সামনে একটা বিলাসবহুল গাড়ী এসে থামল। গাড়ীর ডোর খুলে প্রথমে ফুয়াদ বের হল। সাথে আরও ১১ জন পুলিশ অফিসার নামল গাড়ী থেকে। ফুয়াদ কেবল বাসায় ঢুকতে যাবে এমন সময় অনেক দুরেই নিধিকে দেখল দাড়িয়ে থাকতে। পাশে একজন মাথায় ওড়না দিয়ে সাদা পোশাকে দাড়িয়ে আছে।
ফুয়াদ নিসাকে এমন অবস্থায় কখনো দেখতে চায়নি। ফুয়াদ ওখানে দাড়িয়েই নিধি বলে জোড়ে ডেকে উঠল। সাথে সাথে নিধি ফুয়াদের দিকে তাকালো। নিধি এক ধানে ফুয়াদের দিকে চেয়ে রইল। ফুয়াদ ওখানেই হাটু গেড়ে দু'হাত প্রসারিত করেই বলল," মা আসো আমার কাছে?"
নিধি বিকট শব্দে চিৎকার দিল। বাবা, আমার বাবা বলেই ওর মায়ের হাত ছেড়ে দিয়ে এক দৌড়ে ফুয়াদের বুকে ঝাঁপ দিল।"
ফুয়াদ সাথে সাথে নিধিকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে পাগলের মত চুমা খেতে লাগল। আমার মা' টা কেমন আছে!
বাবা তোমার পরিবার একটুও ভালো নয়। মামুনিকে ওরা মেরেছে বলেই কাঁদতে লাগল নিধি। আমরা এখানে থাকবোনা। চল আমরা আমাদের বাসায় যাব।
নিসা ততক্ষনে ফুয়াদের কাছে চলে এসেছে। বিস্ফোরিত চোখে ফুয়াদকে দেখছে। এটা কিভাবে সম্ভব?
নিসা, আমি ফুয়াদ..... আমায় চিনতে পারছোনা? আমি তো তোমাকে এই সাদা পোষাকে কখনও দেখতে চাইনা নিসা?
ফুয়াদের কথায় নিসার হুস ফিরে এল। নিসা ওখানেই বসে পড়ল। তোমাকে আমার খুব প্রয়োজন ফুয়াদ। আমি আর পারছিনা। আমি ক্লান্ত হয়ে গেছি। আমাদের মাহাদ ভালো নেই ফুয়াদ। ওর তোমাকে প্রয়োজন বলে কেঁদে উঠলো নিসা।
ফুয়াদ নিসাকে তুলে বলল," এত চিন্তা করছো কেন নিসা! আমিতো এসে গেছি। সবার সব কাজের জবাব দিহিতার সময় এসে গেছে।"
"কার কত বিষের নেশা উঠছে" সেটা আজ মেরেই ছাড়ব বলে নিসা সহ সব পুলিশ অফিসারদের নিয়ে বাসায় ঢুকলো ফুয়াদ। মিডিয়া, প্রেস সহ আরো অনেককে ডাকা হয়েছে। আজ এই বাসায় সংবাদ সম্মেলন হবে। আর এই সম্মেলনেই ফুয়াদ তার তথ্যর বোমা ফাটাবে। যা দেখে উপর মহলের ভীত পর্যন্ত কেঁপে উঠবে।