কুহু রুমে পায়চারী করছে। তখন তেমন কেন নাটক করলো? বুঝেই উঠতে পারছে না সে! পুড়োটাই বাংলা সিনেমার কাহিনী হয়ে গেছে। এবার তো ইউসুফ ওরে চিবিয়েই খাবে। ভেবেই কুল কুল ঘামচ্ছে।হয়তো ইউসুফ ভাই এসেই বলবেন,,
--"তখন নেকামি কেন করলি? যা বের হয়ে যা এবার আমার রুম থেকে! এমন ন্যাকামি মার্কা বউ কোনো প্রয়োজন নেই আমার সো গেট লষ্ট..!"
তখন কই যাবে কুহু?এসব ভাবার মাঝেই রুমে খাবার প্লেট হাতে প্রবেশ করে মিশু। মুখটি তার অন্ধকারে ছায়া।কুহু তাকে দেখে থেমে গেল। মায়া মায়া চোখে মিশুর দিক তাকিয়ে রইলো। এ মানুষটি এক কালে তার কত আপনি না ছিল?কত রাত কোলে মাথা পেতে ঘুমিয়েছে।কত গল্প করছে। ইউসুফ ভাইয়ার বকার হাত থেকে কত বার বাঁচিয়েছে হিসেব নেই। আর আজ সেই মানুষটি তার উপর রাগ-অভীমান করে! কি করবে সে? কান্না পাচ্ছে কুহুর খুব। সে যে চেপে রাখতেই পারছে না তার নয়নজল। কুহু আচানক ভাবে মিশুকে ঝাপটে ধরে হু হু করে কেঁদে উঠলো। মিশু হকচকিয়ে গেল।তার বুকেও ধক করে উঠলো। হুট করেই বিচলিত হয়ে বলল,,
--" কি হলো কুহু কান্না করছিস কেন? এনি থিং রং? ভাইয়া কি আবার কিছু বলেছে?"
কুহু মাথা তুলে ভাঙ্গা গলায় বলল,,
--" মিশুপি! প্লীজ আর রাগ করে থেকো না! আমি আমার সেই মিশুপিকে চাই। যার কোলে মাথা রেখে রাতের পর রাত জেগেছি।(মিশুর দু হাত তুলে সেখানে গাল ছুয়ে বলল)এ দু হাতে কত খাবার খেয়েছি। প্লীজ আপি সব ভুলে যাও। আবার নতুন করে শুরু করি। প্লীজ আমার সেই মিশুপিকে ফিরিয়ে দাও।জানো হস্টেলে যখন একা রাতে ঘুুমতে যেতাম তোমার কথা মনে পড়তো খুব মন চাইতো ছুটে চলে আসি তোমার কাছে। তোমার কোলে মাথা রেখে ঘুমোই একটু শান্তির ঘুম। কিন্তু তা সম্ভব ছিলোই না।"
কুহু হাউ মাউ করে কান্না করতে লাগলো।মিশুরো খুব খারাপ লাগচ্ছে। সেও মূলত্য সব ঠিক করতেই এসেছে। ইউসুফ ভাই তার ভুল আজ ভেঙ্গে দিয়েছে। কুহুর কান্নায় তারও আজ চোখের জল উপচে পড়ছে। সত্যি সে এই বাচ্চা মেয়েটির সাথে অন্যায় করেছে। যেখানে তার কোনো দোষ ছিল না। মিশু কুহুর মাথায় পরম যত্নে হাত বুলালো বললো,
--" কাদিস না। আমিও অনেক ভুল করেছিরে আমাকে ক্ষমা করে দিস"
মিশুও কাঁদতে লাগলো। দুজনে আজ একে অপরকে ঝাপটে ধরে কাঁদছে। আজ এত বছরের বিচ্ছেদ যেন ভেঙ্গে গুড়িয়ে চুরমার হয়ে গেল। তারা অনেক গল্প করলো। পেটের ভিতর যা ছিল একে ওপর সব ঝেড়ে ফেললো। মিশু নিজ হাত আজ কুহুকে খাইয়েও দিল। খাওয়া শেষে ওকে নিয়ে ইউসুফের রুমে বসিয়ে দিল। যাওয়ার আগে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,,
--" ভাইয়াকে পাঠাচ্ছি। ওল দ্যা বেষ্ট।"
বলে চোখ টিপলো মিশু। তা দেখে লজ্জায় লাল-নীল হয়ে উঠলো তার চাঁদমুখ খানা। কি লজ্জা? মিশু চলে গেল। কুহু গুটি শুটি মেরে খাটের এক পাশে বসে আছে। মনের মাঝে অচেনা-অজানা ভয় আঁকড়ে ধরছে। ইন্টারেস্টিং বিষয় হচ্ছে এ ভয় পেতে ভাল লাগচ্ছে। মন পাড়ায় হচ্ছে মিষ্টি মিষ্টি অনুভতি।
ইউসুফের ঘরে আগে বহুত এসেছে সে। কিন্তু আজ অন্য রকম লাগচ্ছে। জানলার নীলাভ পর্দা গুলো এলো মেলো ভাবে দোল খাচ্ছে।বারান্দা থেকে অপরিচিত কোনো ফুলের গন্ধে ঘর জুড়ে মো মো করছে। মাথার উপর ফ্যানটি ফুল স্প্রীডে ঘুড়চ্ছে। তারপরও কুলকুল ঘামছে সে। চারিদিকের সব কিছু যেন রোমাঞ্চকর হয়ে উঠেছে।তাতে যেন অস্বস্তি
বাড়চ্ছে কুহুর..!
কুহুর এসব ভাবনার মাঝে দরজায় খট খট শব্দ ভাবনার ফোড়ন কাঁটে। সে অধির আগ্রহ নিয়ে দরজার দিক তাকিয়ে আছে। এ বুঝি এলো তার ইউসুফ ভাই।ইউসুফ দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলো। তাকে দেখে কুহু বিস্মিত। তার চোখ কঁপালে উঠে গেছে। তনের মাঝে এক গাদা ভয় জমা হয়ে গেছে। এ ভয় মোটেও তখনকার মতো ভাল লাগার না। এটা সত্যি সত্যি বিড়াল দেখে ইঁদুর যেমন ভয়ে ছুটাছুটি করে? ঠিক তেমন ভয়! পার্থক্য কুহুর পা সেটে গেছে মাটির সাথে।কারণ কুহুর হাতে মোটা ধরি! কপ করবব সে দড়ি দিয়ে? তখনের ন্যাকামো করার জন্য বেঁধে-টেধে রাখবে না তো? কুহু শুকনো ঢুক গিললো। ইউসুফকে উদ্দেশ্য করে বলল,,
--" এটা কি?"
ইউসুফের ভাবলেশহীন উত্তর,,
--"দড়ি!(ভ্রুকুটি কুচকে বললো) জীবনে দেখিসনি?"
কুহু এবারো শুকনো ঢুক গিললো। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল,
--" কি ক--রবেন?"
ইউসুফ বাঁকা হেসে বলল,,
--" বাঁধবো!"
কুহু চোখ বড় বড় করে চকিতে বলল,,
--"কিহ্!"
ইউসুফ হেসে দু কদম পিছিয়ে গিয়ে খাটের এমাথা থেকে ও মাথা পর্যন্ত বেঁধে দিলো মাঝবরাবর দড়িটি! তারপর কুহুর ব্যাগ থেকে নানা রঙ্গের ওড়না বের করে মেলে দিলো দড়িতে। কুহু যেন বেয়াক্কেল বনে গেল। ইউসুফ তার কাজ শেষ করে ওপর প্রান্তে মুখ করে শুয়ে পড়লো। কুহু আশা হত হলো। সব ধরতে পেরে ইউসুফের পাশে বসে দুঃখী দুঃখী গলায় বলল,,
--" এসব কি?"
ইউসুফ সেদিক ফিরেই রইলো উত্তর দিলো না। কুহুর এবার রাগ লাগলো। খাঁটাশ বেঁটা একটা কি সুন্দর সুসজ্জিত রুমটিতে একটি ওড়না দেয়াল বানিয়ে দিলো। এটা কি ঠিক? আজ না তাদের বাসর রাত? এ রাতে প্রতি স্বামী-স্ত্রী কত না খুশুর ফুশুর করে গল্প করে? আর এ বেটা? কুহু রাগে ধাক্কাতে লাগলো ইউসুফকে। ইউসুফ রাগী রাগী মুখ করে আসন করে বসে বলল,,
--"হোয়াটস ইউর প্রবলেম? এম ধাক্কাচ্ছ কেন? হোয়াই?"
ইউসুফের রাগী মুখ দেখে কুহুর রাগ উবে গেল। সে অসহায় মুখ করে বলল,,
--"এমন করছেন কেন? আজ না আমাদের বাসর রাত! সবাই কত গল্প গুজব করে?"
কুহুর কথায় ইউসুফ কটমট করে তাকালো তার দিক। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,,
--" নিচে সেই তামাশাটা করার সময় মনে ছিল না? এমন ভাব করছিলি মনে হচ্ছিল গাব্বার সিং আমি। কারো বাসন্তিকে তুলে এনে বিয়ে করছি। সে কেঁদে কেঁটে গাঙ্গ ভাসচ্ছে। ননসেন্স!"
কুহু কাঁদো কাঁদো মুুখ করে বললো,,
--" আমি কি করবো? আমার ঠেলে ঠুলে কান্না আসচ্ছিল। এই যে এখনো আসচ্ছে। ভ্যাাাা।"
ইউসুফের রাগ সেই কখন ছু মন্তর হয়ে গেছে।কিন্তু সে কুহুতে জ্বলাবে ভেবেই এসেছে। কিন্তু এ মুহূর্তে কুহুর মুখ দেখে তার পেটে ফেটে হাসি পাচ্ছে। কিন্তু হাসলে চলবে না। সে নিজেকে সামলে ধমক দিয়ে বলল,,
--" একদম কাঁদবি না ছিঁচকাঁদুনে মেয়ে? চুপ চাপ ঘুমা আর আমাকেও ঘুমুতে দে। হুহ!"
বলে আবার ওপাশ ফিরে শুয়ে পড়লো। কুহু এবার নিঃশব্দে কেঁদে চলেছে। ইউসুফ আবার ধমকাতেই সে অন্যপাশে গুটিশুটি মেরে শুয়ে পড়লো। এবং কাঁদতে লাগলো। এবার শব্দহীন কান্না তার। এভাবে অনেকক্ষণ কেঁটে যাওয়ার পর ইউসুফ কুহুর দিক ফিড়লো সে। কুহুর শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছে। মানে এখনো কাঁদচ্ছে। ইউসুফ কুহুকে ঘুমের ভান করে ঝাপটে ধরলো। কুহু প্রথমে হকচকিয়ে গেল ইউসুফকে ঘুমন্ত দেখে বুঝতে পাড়লো সে ঘুমের মাঝে তাকে ঝাপটে ধরেছে। কুহু নড়লো না। তার দিক তাকিয়ে রইলো মায়া মায়া চোখে। লাষ্ট পর্যন্ত এই কিউট বিলাই চোখ ওয়ালা তার অর্ধাঙ্গ। ভাবতেই আনন্দে পটল তুলতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু এসব সে মোটেও করবে না। সে বাঁচতে চায়। এভাবেই ইউসুফের বুতে থাকতে চায়। জন্ম-জন্মান্তর। কুহু তার ডান হাতে আলতো করে ইউসুফের কাঁপালে ছড়িয়ে পড়ে থাকা হালকা কোঁকড়ানো সিল্কি চুল গুলো এলো মেলো ভাবে পড়ে আছে।তা ঠিক করে সেখানে আলতো করে চুমু খেলো। তার বুকে মুখ গুঁজে সেও গভীরতা ডুব দিল। এদিকে ইউসুফ ঠোঁটে কিঞ্চিৎ হাসির রেখা ফুটে উঠলো। সেও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল লাষ্ট পর্যন্ত তার বাবুইপাখি তার বুকে। ভেবেই শান্তি লাগছে তার।সেও ঘুম দিল। তলিয়ে গেল একে অপরের অতল গহ্বরে। ❤️
—————
শরীর ঝাঁকুনি দিয়ে উঠতেই ঘুম ছুটে যায় কুহুর।চোখ পিটপিট করে চারপাশে ভাল করে তাকাতেই নিজেকে আবিষ্কার করলো গাড়ীতে।বাহিরে তখন আলো ফুটেছে।রাস্তার দু ধারের ছোট বড় গাছপালা ফেলে এগিয়ে চলছে তারা। সূর্যের এক ফালি লাল আভা এসে পড়ছে ইউসুফের মুখ খানাতে কি অমায়িক না লাগছে তাকে।পড়নে তার ব্লেক প্যান্ট, হোয়াইট টি শার্ট তার উপর ব্ল্যাক জ্যাকেট যেন এক রাজপুত্র। কুহুর ঘুমের রেশ তখনো কাঁটেনি। সে আনমোনে গাড়ির সিটে হেলে ইউসুফের দিক তাকিয়ে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলল,,
--" আপনি এত সুন্দর কেন? কত হেন্ডস্যাম, কত কিউট!কত হট।খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে একদম।"
কুহুর কথা শেষ হতে না হতেই ব্রেক কসলো ইউসুফ খুব জোড়ে। এবার যেন কুহুর ঘুম পুড়ো পুড়ি ছুটে গেল। ইউসুফ তখন বিস্মিত চোখে তাকিয়ে কুহুর দিক। কুহু তখনের বুলি গুলো মনে পড়তেই জিব কাটলো। লজ্জায় অন্য দিকে তাকলো।নিজের অজান্তে বলা কথা গুলো ভেবেই গাল লাল হয়ে উঠলো তার। ইউসুফ তখন অবাক কন্ঠে বলল,,
--" কি বললি তুই?"
কুহু চুপ রইলো তা দেখে ইউসুফ কুহুর দিক ফিরে কানের কাছে মুখ নিয়ে রসিকতা করে বলল,,
--" আমাকে খাওয়ার কত শখ আহা!"
কুহু চেঁচিয়ে বলল,,
--" আমি তেমনটি বলি না।"
ইউসুফ ভ্রু কুচকে বাঁকা হেসে বলল,,
--"তো কেমনটি বলেছেন ডাঃ সাহেবা? "
কুহু লজ্জায় ভাল মতো পড়েছে। লোকটি তাকে লজ্জা আরো বেশি ফেলতে চাইছে বুঝতে বাকি নেই তার।তাই কথা পালটালো বলল,,
--" এত ভোরে কই যাচ্ছি?"
ইউসুফ বুঝলো কথা এড়িয়ে যেতে চাইছে। তাই মুচকি হেসে গাড়ি স্টার্ট দিলো। বলল,,
--"হাতির মাথা!"
কুহু বলল,,
--" মানে?"
ইউসুফ হেসে ফেললো। বলল,
--" তোমার হাত ধরে স্বর্গের সিঁড়ি যাবো!"
কুহুর দু হাত বেঁধে বলল,,
--" মশকরা করছেন আমার সাথে???"
ইউসুফ আবার হাসলো।রহস্যময় হাসি। বলল,,
--" জানতে পাড়বি।"
কুহু হতাশ হলো। এ লোকটা এমন কেন সব সময় রহস্য আর রহস্য। ধ্যাত!
_____________________________________________
গাড়ি এসে থামলো খাগড়াছড়িতে। তা দেখে কুহু চেঁচিয়ে উঠলো ,,,
--" আমরা খাগড়াছড়িতে কেন? আবার সাজেক যাবো?"
খুশিতে চকচক করে উঠলো কুহুর চোখ মুখ। তা দেখে হাসলো ইউসুফ। কুহুর মাথা টোকা মেরে বললো,,
--" নাহ্! হাতির মাথা যাবো!"
কুহুর এবার কপট রাগ দেখিয়ে বলল,,
--" ফাজলামো করছেন কেন? বলেন না? কোথা যাবো?"
ইউসুফ কুহুর কান্ডে মাথা চুলকে গাড়ি থেকে নামতে নামতে বলল,,
--" স্বর্গের সিঁড়ি যাব! "
কুহু এবার রাগে ফেটে পড়লো। লোকটা পেয়েছে কি তাকে কখন থেকে এক হাতি মাথা, ব্যাঙের মাথা এসব নিয়ে। কুহু এবার কিছু কঠিন কথা শুনবে বলে মুখ খুলবেই তখনি ইউসুফ বলল,,
--"গাড়ি থেকে এক পা নামবে না। আমি খাবার নিয়ে আসচ্ছি। খবরদার নামবে না কিন্তু।"
বলে সে একটি সুপার শপে ঢুকে গেল। এ দিকে কুহু গাল ফুলিয়ে বসে পড়লো। এই লোক ভারী সাংঘাতিক। নিজেরটাই বলে অন্যেরটা শুনে এর সাথে কথাই বলবে না। একদম না। হুহ!
ইউসুফ ১০ মিনিটের মাথায় কিছু খাবার আর কয়েকটা পানির বোতল নিয়ে ফিরে আসে। গাড়িতটে বসেই কুহুর হাতে একটি প্যাকেট ধরিয়ে দেয়। কুহু ভ্রু কুচকে চেয়ে থাকে ইউসুফের দিক।ইউসুফ পানি খেতে খেতে বলল,,
--" খাবারটা খেয়ে নেয়ে অনেক দূর যেতে হবে!"
বলে আবার গাড়ি স্টার্ট দেয়।কুহু যে রেগে আছে পাত্তাই দিলো না যেন। কুহুর মন ভাড় হয়ে গেল।
____________________________________________
অবশেষে ইউসুফ কুহুকে তার কাঙ্খিত জায়গায় নিয়ে এলো। কুহু হা হয়ে গেলো।কারণ সাইনবোর্ড বড় বড় করে লিখা হাতিমুড়া অর্ধাৎ হাতির মাথা স্বর্গের সিঁড়ি।
এবার তার লজ্জা লাগছে, সাথে খারাপো ও কেন বিশ্বাস করলো না ইউসুফকে? ইউসুফ তো মিথ্যে বলেনি সত্যি বলেছে। সে তার তাকালো না ইউসুফের দিক। ইউসুফ সব বুঝতে পারলো। সে কুহুর কোমর চেপে কাছে টেনে আনলো। এত কুহু কেঁপে উঠলো। কিন্তু তাকালো না ইউসুফের দিক। সে বলল,,
--" চল এবার তোমাকে নিয়ে স্বর্গের সিঁড়ি ভ্রমণ করে আসি!"
বলেই হাটতে লাগলো। কুহু বলল,,
--" আচ্ছা এটাকে হাতি মাথা বা স্বর্গের সিঁড়ি কেন বলে?"
ইউসুফ কুহুর হাত ধরে সেই হীম শীতল খাড়া লোহার সিঁড়ি একটি একটি করে পার করতে করতে বলল,,
--"পাহাড়টা দেখতে অনেকটা হাতির অবয়ব হওয়ায় স্থানীয়রা একে হাতির মুড়া বলেন। চাকমাদের কাছে এটি ‘এদো শিরে মোন’ এবং ত্রিপুরাদের কাছে ‘মাইয়োং কপা’ নামে পরিচিত। তবে দুটোর অর্থই হাতির মাথা পাহাড়। অনেকের কাছে এটি পরিচিত ‘স্বর্গের সিড়ি’ নামে। ওই যে দেখছো দূরের সেই উঁচু জায়গাটা হাতির মাথার মতো দেখাচ্ছে যে!"
কুহু অবাক হলো সত্যিই তো তাহির অবয়বের মতো! ইউসুফ তখন আরো বললো,,
--"এই সিঁড়ি ১৫ টি গ্রামে যাওয়ার যায়!"
কুহু বিস্মিত হলো। বলল,,
--" কি বলছেন? এই খাড়া পাহাড়ের খাড়া সিঁড়ি বেয়ে ১৫ টি গ্রামে যাওয়া যায়! "
ইউসুফ মাথা নাড়ায়। আবার বলে,,
--" জানো এক সময় এই পাহাড়ে গাছের গুড়ির উপর বাসিন্দারা আসা যাওয়া করত। বিকল্প পথ না থাকায় গাছের গুড়ি বেয়ে পাহাড়ের চূড়ায় উঠতে হত। এভাবে পাহাড় উঠতে গিয়ে কয়েকজন মারাও গেছে। "
কুহু আফসোসের সুরে বলল,,
--"ইশশ! কতই না কষ্ট ছিল তাদের!"
ইউসুফ কুহুর গাল টেনে বলল,,
--" তাই তো এই সিঁড়ি করা! চলো এবার অনেক উপরে যেতে হবে!"
দুজনে মিলে উপরে চলে এলো। পাহারের চূড়ায় আদিবাসীদের বসবাস। কি সুন্দর পরিবেশ। মুগ্ধা নয়নে দেখছে কুহু। আর কুহুকে দেখছে তার ইউসুফ ভাই। কুহুর চোখ খুশিতে চকচক করছে। যা সে দেখে ছিল সেই সাজেকে। আজ আবার দেখে বুক ভড়ে যাচ্ছে মনে শান্তি লাগছে। সত্যি ভালবাসার মানুষটির মুখে প্রশান্তির হাসি দেখা ভাগ্যের বিষয়। সেখানে আরো কিছুটা সময় পার করে তারা চলে আসে। দুপুরে খেয়ে নেয়। তার একটি কটেজ ভাড়া করে চেঙ্গী নদীর কাছে। রুমে বারান্দা দিয়ে চেঙ্গী নদী দেখা যায়। কুহু মুগ্ধ নয়নে দেখছে। আর ভাবছে,
--" কটা মানুষের ভাগ্যে এমন ভালবাসার মানুষ আছে? যে প্রতিবার প্রতি রূপে তাকে ভালবাসবে?"
ইউসুফ গোসল করে বের হলো। কুহুকে বারান্দা দাঁড়ানো দেখে কাছে গেল সে। কুহু এক ধেয়ানে নদীর দিক চেয়ে। ইউসুফের মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি এলো। সে তার ঠান্ডা হাত কুহুর ঘাড়ে স্পর্শ করলো। কুহু হকচকিয়ে তাকালো তার দিক। সাথে কাঁপচ্ছে সে। তা দেখে ইউসুফ হাসলো। কুহুকে টেনে কাছে আনলো। গলার সাইডের চুল সরিয়ে নাক ঘষতে লাগলো ম কুহু চোখ বন্ধ করে আছে। শরীরের কম্পন দ্রুত বেগে বাড়চ্ছে। শরীরে যেন বল হারিয়ে ফেলছে। ইউসুফ কুহুর গলায় গভীর চুমু খেলো। কুহু ইউসুফের হাত খামচে ধরলো। ইউসুফ এবার মুখ তুলে কুহুর দিক তাকলো তার বাবুইপাখি চোখ-মুখে খিঁচে বন্ধ করে ফেলেছে। হাসলো ইউসুফ কুহুকে ছেড়ে দিলো। বলল,,
--"যাও ফ্রেস হয়ে এসো!"
কুহু অবাক হলো। কিছু বলল না। ফ্রেস হতে চলে গেল। এদিকে ইউসুফ রুমে এসে কফির অর্ডার করে। ১০ মিনিটের মাথায় কফি দিয়ে যায়। ইউসুফ বারান্দায় দাঁড়িয়ে কফিতে চুমুক দিতেই কুহু বের হয়ে আসে। ইউসুফ বারান্দার রেলিং ঠেসে কুহুর দিক তাকায়। কুহু ঠান্ডায় থরথর করে কাঁপচ্ছে। পড়নের শাড়িটি ভিজে আছে অনেক জায়গা। টপ টপ করে চুলের পানি কুহুর গলা, ঘাড়, পিঠ বেয়ে পড়চ্ছে।ইউসুফ নেশাকাতর চাহনিতে দেখচ্ছে। সব চেয়ে বেশী কাঁপচ্ছে কুহুর সুন্দর ঠোঁট জোড়া। যা ইউসুফকে মাতাল করে দিছে। মনের মাঝে ইচ্ছে জাগচ্ছে এ ঠোঁট দুটোতে ডুব দিতে।
ইউসুফ এগিয়ে এলো। কুহু বুঝতে পেড়েছে সেই কখনি তার বিলাই চোখে দুটি তা আগেই জানিয়ে দিয়েছে। তারপরও কুহু মনে ভয় কাজ কারছে। সে ইউসুফকে এগিয়ে আসতে দেখে নিজেও পিছিয়ে যেতে লাগলো। কাঁঠের দেয়ালের সাথে লেগে গেল। ইউসুফ কুহুর মুখ মুখি দাঁড়াতেই কুহু চোখ বন্ধ করে নেয়। ইউসুফ কুহু শাড়ির আচঁলের ফাক দিয়ে পেটে স্পর্শ করে তার ঠান্ডা হাতে কুহু এক অসহ্যকর ভাললাগার অনুভূতি হয়। সে নিজের শাড়ি খামচ্ছে ধরে রাখে।কুহুর ঠোঁট জোড়া তখনো কাঁপছে। ইউসুফ তাকিয়ে সেই ঠোঁটে দিক। নিজেকে সামলাতে না পেরে। আঁকড়ে ধরে আবদ্ধ করে নেয় কুহুর ঠোঁট জোড়া। কুহু আবেশ ইইউসুফের মাথার চুল খিচে ধরেম এক পর্যায় নিজেো তাল মিলায়।
ইউসুফ কুহুর ঠোঁট ছেড়ে। কানে চুমু খায় আর ফিসফিস করে বলে উঠে,,
--" বাবুইপাখি! আই নিড ইউ! কেন আই?"
ইউসুফ মাদক কন্ঠে বললোম কুহুর শরীরে আলাদা অনুভূতি খেলা করলো। সে ইউসুফতে জড়িয়ে ধরলো। ইউসুফ বুঝে হেসে ফেললো। কিছুটা ঝুকে কুহুকে কোলে তুলে বেডে নিয়ে এলো। তারপর ডুব দিলো একে ওপরের মাঝে। ভালবাসার যেন নতুন এক পূর্ণতা পেয়ে গেল তারা। দীর্ঘ বছরের অপেক্ষা প্রহর ভেঙ্গে গুড়িয়ে এক হয় গেল তারা।