৭৩!!
ঘুম ভাঙার পর চোখ খুলে মাথাটা ঝিমঝিম করছে মায়রার। চারিদিকে এতো ঘন অন্ধকার যে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। মায়রা চোখ থেকে ঘুমের রেশটা কাটানোর চেষ্টা করলো চোখ ডলে। সেই মূহুর্তে শপিংমলে কয়েক হাত দূরে সীমান্তের দাঁড়িয়ে থাকার দৃশ্যটা যেন মায়রার চোখের সামনে ফুটে উঠলো। মায়রা প্রায় আঁতকে উঠে শোয়া থেকে বসার চেষ্টা করতেই টের পেল এক হাত ওকে আলগা করে জড়িয়ে ধরে আছে। মায়রা ভয়ে, আতঙ্কে প্রায় ছিটকে বিছানা থেকে নেমে যাওয়ার চেষ্টা করতেই হাতে টান অনুভব করে আবার আগের জায়গায় পড়লো। ভয়ে মায়রার গলা দিয়ে টু শব্দ পর্যন্ত বের হচ্ছে না। এমন সময় হঠাৎ করেই চারদিকটা আলোয় ভরে উঠলো। সামনের মানুষটাকে দেখার সাহস মায়রার হলো না। শক্ত করে চোখ বুজে নিয়ে লোকটার হাত থেকে নিজেকে ছাড়ানোর প্রাণপণ চেষ্টা করতে লাগলো। পাশ থেকে মানুষটা যে ওর গালে হাত ছুঁইয়ে ডাকছে সেদিকে মায়রার হুঁশ নেই।
-মায়রা? কি হয়েছে? এই পরীটা? সোনাপাখিটা কি হয়েছে? তাকাও আমার দিকে? মায়রু? এই পরীটা--? শোনো না বাবা? দেখো আমি তো--। তোমার আয়ান---।
'আয়ান' নামটা কানে এসে পৌঁছাতেই মায়রা চোখ খুলে আয়ানকে দেখতে পেল। এবারে বাচ্চাদের মতোই কেঁদে ফেললো মায়রা। মায়রার বুকের কাছে মুখ লুকিয়ে হাতের ইশারায় কিছু একটা দেখানোর চেষ্টা করে করলো।
-ও এখানেও চলে এসেছে আয়ান। আয়ান-আমার ভয় করছে--। ওই যে ওখানে---। ওখানে দাঁড়িয়ে আছে----।
আয়ান মায়রাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে চুলে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করলো।
-মায়ু-- কেউ নেই এখানে বাবু। আমরা বাসায় চলে এসেছি দেখো?
-ও এখানেও চলে আসবে আয়ান। আমাকে---আমাকে নিতে এসেছে। আমি যাবো না প্লিজ----।
-শশশশশ। কেউ আসে নি সোনাপাখি। দেখি? আমার দিকে তাকাও? কেউ আসে নি ওকে ম্যাডাম?
আয়ান মায়রার মুখটা দুহাতে তুলে ধরে কথাগুলো বলছিলো। মায়রা কিছুতেই মানতে চাইছে না। জোরে জোরে মাথা নাড়ছে আর চোখ মোছার চেষ্টা করছে।
-তুমি বুঝতে পারছো না। ও এখানেই আছে----। আমাকে নিয়ে যেতেই এসেছে। ও আমাকে নিয়ে যাবে। সীমা-----।
আয়ান মায়রাকে কথাটা শেষ করতে দিলো না। মায়রার ঠোঁট জোড়া নিজের ঠোঁটের বাঁধনে আটকে দিলো। একটু পরে সরে এসে মায়রার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে মায়রার মুখটা তুলে ধরে চোখে চোখ রাখলো আয়ান।
-আমার কাছ থেকে তোমাকে চুরি করা কি এতোই সোজা লাজুক পরীটা? একবার তোমাকে হারিয়ে নিজেকেই হারিয়ে ফেলেছিলাম। কিন্তু এবারে আর না। তোমার দিকে কেউ চোখ তুলে তাকানোর চেষ্টা করলে তাকে খুন করে ফেলতেও এবারে হাত কাঁপবে না আমার---।
-আয়ান---। ও সত্যি-----।
-শশশশশ। যা হয়েছে ভুলে যাও। কেউ আসে নি। কিচ্ছু হয়নি। কাজের এতো প্রেশার নিচ্ছো যে ব্লাডপ্রেশার ফল করেছিল প্রচন্ড। কাল সকালে মা আর বাবার কাছে কি বকা খাও দেখবা তো। কাল থেকে টানা এক সপ্তাহ ছুটি---। বুঝতে পেরেছন ম্যাডাম?
-কিন্তু--। আমার স্পষ্ট মনে আছে---আমি-----।
-এই যে ম্যাডাম? বললাম না কোনো প্রেশার নিবা না। কোনো টেনশন করা যাবে না। শুধু আদর আর আদর হবে---। আমি ভাবছি এই দুর্বল শরীরটা আমার বেবিগুলোর ধকলটা নিবে কি করে! কি মুশকিল বলো তো? এভাবে হলে তো চলবে না। খেয়ে দেয়ে একটু গোলুমলু হও তো সোনাপাখি। দেখা যাবে আমার পিচ্চি বাহিনী আসলেও ওদের চেয়ে তোমাকেই কোলে করে ঘুরতে হবে বেশি--। ব্যাপারটা কেমন দেখায় না?
মায়রা রাগ করে আয়ানের শার্টের কলার খামচে চোখে চোখ রাখলো।
-তোমার পিচ্চি বাহিনীর খবর আমি জানি না। কিন্তু তখনও যদি আমাকে এভাবে কোলে না নাও তাহলে কিন্তু----।
-হুম---। তাহলে কিন্তু কি?
-খুন করে ফেলবো তোমাকে----। হুহ। আসছে আমাকে দুর্বল বলতে---।
-আমমমম। মায়রা? আমার একটা প্রশ্ন ছিল---।
-কি?
-আরে বাবা রাগ করছ কেন? শোনো না? না মানে বলছিলাম তখন বলতে কখন বউসোনা? না মানে কবের কথা বলছো জানা থাকলে একটু ভালো হতো আর কি। নইলে তো আবার খুন হয়ে যেতে পারি--বলা তো যায় না।
-হুম?
-কই লাজুক পরী? বলো? কখন আসবে সেই সময়টা। আমি অবশ্য প্লান করেই রেখেছি পিচ্চিদের তুমি কোলে নিবা। আর আমি পিচ্চিটাকে সুদ্ধ তোমাকে কোলে নিবো--। তাহলে চলবে তো ম্যাডাম?
মায়রা আয়ানের বুকে মুখ লুকিয়ে আলতো করে কিল বসালো।
-তুমি একটা খুব খারাপ।
-জি ম্যাডাম। জানি আমি। এখন চুপচাপ খেয়ে নিবেন উঠুন?
-উঁহু---। খাবো না। খিদে লাগে নি।
-মাইর চিনো? প্রেশার এতো ফল করেছে যে সে ঠিকমতো দাঁড়াতে পর্যন্ত পারছে না। আবার বলে খাবো না---। তোমাকে তো আমি---।
-এমন করো কেন? আচ্ছা খাবো। খাইয়ে দিবা বলো?
-সেটা আপনি না বললেও আমি জোর করেই খাইয়ে দিতাম। চলো আগে ফ্রেশ হয়ে নাও--।
-হুম---। এই কোলে---?
-পাগলি একটা।
আয়ান বিছানা থেকে নামতেই মায়রা বাচ্চাদের মতো দু হাত বাড়িয়ে দিল। আয়ান হেসে মায়রার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে পাঁজাকোলা করে তুলে নিলো। মায়রাও আয়ানের গলা জড়িয়ে ধরে কাঁধে মাথা রেখে অপলকে আয়ানকে দেখায় মন দিলো। মায়রাকে নিয়ে সোজা ওয়াশরুম এসে নামালো আয়ান। হাত মুখ ধুইয়ে শুকনো টাওয়ালে মুছে দিয়ে আবার পাঁজাকোলা করে রুমে এনে বিছানায় বসিয়ে দিলো। ২ মিনিটের মধ্যে রান্নাঘর থেকে খাবার নিয়ে এসে মায়রাকে খাইয়েও দিতে শুরু করেছে আয়ান। আর মায়রা অপলক চোখে তাকিয়ে আয়ানকে দেখলো কিছুক্ষণ। তারপর আয়ান ওর মুখের দিকে একটা লোকমা বাড়িয়ে ধরতেই হাতটা ঘুরিয়ে ভাতের লোকমাটা আয়ানের মুখেই পুরে দিলো। আয়ান হেসে এবারে মায়রাকে খাইয়ে দেয়ার সাথে সাথে নিজেও খেয়ে নিলো। আয়ান নিজের খেয়াল রাখার কথা ভুললেও এই পাগলিটা কখনো ভুলে না। কথাটা ভাবতেই একটা প্রশান্তি ছেয়ে গেল আয়ানের চোখে মুখে। আর এই তৃপ্তির হাসিটুকুই হয়তো মায়রার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া।
এদিকে আয়ান মায়রাকে নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হওয়ার পর সায়নাও সীমান্তের সাথে গাড়িতে উঠে বসলো। সীমান্তের গন্তব্য ঢাকার পথে। আর সায়নার? সায়না নিজেও জানে না এবার কি করবে। বাসায় মা বাবাকে জানায় নি ও এসেছে যে। আয়ান বলেছিল বাসায় যাওয়ার পথে ড্রপ করে দিতে পারবে সায়নাকে। সায়নার কেন জানি সীমান্তকে রেখে যেতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু এবার কি হবে? কিছুক্ষণ পরেই তো দুজনের পথ আলাদা হয়ে যাবে। তখন তো চাইলেও সায়না এই মানুষটাকে আটকাতে পারবে না। আর কি জন্যই বা আটকাবে!
-কিছু কি ভাবছেন?
-হুম? উঁহু---। আমমম। আপনি কি এখনই ঢাকায় ব্যাক করবেন?
-হ্যাঁ। কি আর করবো বলুন? যে হারে অফিস কামাই করছি কোনদিন বস রেগে গিয়ে পার্মানেন্ট ছুটি দিয়ে দেয়---।
-ওহ---। আচ্ছা? আমাদের কি আর ---আর যোগাযোগ হবে না?
সীমান্ত সায়নার কথাটার জবাব না দিয়ে হাসলো। সামনের দিকে তাকিয়ে ড্রাইভ করলেও সায়নার কৌতূহল চাহনি ঠিকই টের পাচ্ছে সীমান্ত। সাথে হয়তো মেয়েটার মনের না বলা কথাগুলোও।
-আপনাকে একটা প্রশ্ন করবো? যদি কিছু মনে না করেন---।
-করুন।
-আয়ান সাহেব কি কোনো কারণে আপনার উপরে রেগে আছেন? কেন জানি মনে হলো আমার---।
-একটা সময় পাগলের মতো ওর পিছনে ছুটেছি। আমার শৈশব কৈশোর তো কেটেছে আয়ানকে ঘিরেই। কখন ওকে পাওয়ার ভূত চেপে গেছিল মাথায় নিজেও জানি না। কারণে অকারণে অধিকার ফলাতে চেষ্টা করেছি ওর উপরে। ও যত ইগনোর করতো ততই আমি ওর দিকে চুম্বকের মতো আর্কষণ অনুভব করতাম। কত কিছু করেছি শুধু ওকে পাওয়ার নেশায়---। হাহ।
সায়না কথাগুলো শেষ করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলতেই সীমান্ত গাড়িটা আচমকা ব্রেক করে ফেললো। প্রায় ছিটকে পড়তে পড়তে সিটবেল্টের কারণে বেঁচে গেল সায়না। অবাক চোখে সীমান্তের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো কি চলছে লোকটার মনে। সীমান্তও সরাসরি সায়নার চোখে চোখ রাখলো।
-আমার কপালটাই খারাপ বুঝলেন। যাকে নিয়েই একটা সুখের স্বপ্ন দেখার চেষ্টা করি সেই দেখি এই আয়ান নামের ভদ্রলোকের জন্য পাগল--। মনে হয় এবারেও বিয়ের পর দেখবো বউ মাঝরাতে এই ভদ্রলোকের জন্য কেঁদেকেটে সাগর বানিয়ে ফেলছে---। শিট ম্যান!
সায়না থতমত খেয়ে সীমান্তের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। লোকটা এতো ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথাটা বলেছে যে সায়না কি বলবে বুঝতেই পারছে না। মানুষটা ওকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছে এটা জেনে খুশি হবে? সীমান্তের দেয়া খোঁচাটা গায়ে মাখবে নাকি খুশি হবে কিছুই স্থির করতে পারছে না বেচারি। এদিকে সীমান্ত বহু কষ্টে হাসি চেপে সায়নার ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। শেষে আর হাসি চাপতে না পেরে শব্দ করেই হেসে ফেললো। একটু করে সামনের দিকে ঝুঁকে এসে সায়নার চোখে চোখ রাখলো সীমান্ত। সায়নাও দুটো গভীর চোখের মায়ায় ডুবে যেতে লাগলো নিমিষেই।
-শুনুন ম্যাডাম। আগেরবার একজনকে ভালোবেসে আগলে রাখতে চেয়েও তার সুখের কথা ভেবে দূরে সরে গেছি। কিন্তু এবারে সেটা হবে না। সে পালাতে চাইলেও তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রাখবো নিজের সাথে। সে রাগ করুক, অভিমান করুক, ঝগড়া করুক, প্রয়োজনে দুজন মিলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রস্তুতি নিবো। কিন্তু এবারে কোনো ছাড়াছাড়ি হবে না। কতোটুকু আগলে রাখতে পারবো জানি না। কিন্তু আজ এই মূহুর্ত থেকে সম্পূর্ণ রূপে তার কাছে আত্মসমর্পণ করলাম। আশা করি এই অধমকে ফিরিয়ে দিবেন না। আর হ্যাঁ? এসব লঙ ডিস্টেন্স রিলেশনশিপে আমি বিশ্বাসী নই। কেউ রাজি থাকলে খুব শীঘ্রি তাকে নিজের করে নিয়ে যেতে চাই। কোনো তাড়া নেই। হাতে পাঁচ মিনিট সময় আছে। ভেবে নিন।
সীমান্তের কথাগুলো মন্ত্র মুগ্ধের মতো শুনছিল সায়না। কথা শেষ হতেই সীমান্ত আবার সামনের দিকে তাকিয়ে ড্রাইভ করছে একমনে। সায়না হা করে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। মানুষটার এতোগুলো কথার পর আসলেই কি কিছু বলার বাকি আছে কিনা সেটাই সায়না ভেবে পাচ্ছে না। পাঁচ মিনিটের মধ্যে ভেবে জবাব দিতে বলেছে লোকটা। কিন্তু কি জবাব দিবে সায়না? ও তো নিজেই বহু আগেই লোকটার কাছে আত্মসমর্পণ করেই আছে। লোকটা কি এটাও বোঝে না?
৭৪!!
ঘড়িতে ডং ডং করে বারোটা বাজার ঘোষণা দিলো। বারান্দায় দোলনায় আয়ানের কোলে বসে বুকে মাথা রেখে একদম গুটিশুটি হয়ে মিশে আছে মায়রা। মায়রার আবদারে ঘন্টাখানেক সময় ধরে দোলনায় মায়রাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নিয়ে বসে আছে আয়ান। অনেকক্ষণ চুপচাপ বসে থেকে আয়ান মায়রাকে পাঁজাকোলা করে তুলে নেয়ার চেষ্টা করতেই মায়রা বাচ্চাদের মতো হাত পা ছোড়া শুরু করেছে। আয়ান হেসে আবার দোলনায় বসলে মায়রার আবার আগের মতো শান্ত হয়ে আয়ানের কাঁধ জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা রেখে চুপ করে বসে রইলো। আয়ান হেসে এক হাতে মায়রার কোমড় পেঁচিয়ে ধরে অন্য হাতে মায়রার গালে হাত ছুঁইয়ে দিলো।
-এই যে লাজুক পরী? কি ব্যাপার বলুন তো ম্যাডাম? ঘুমাবেন না আপনি আজকে?
-উঁহু। না।
-কেন ম্যাডাম? রাত জেগে কি চোর পাহারা দিবেন নাকি? শরীরটা যে এখনও দুর্বল সে খেয়াল আছে?
-হুম---। দিবো তো। দুজনে মিলে।
-আহা! কত শখ! আমার অফিস নেই সকালে?
-তোমার অফিস থাকলে আমার কি! আমি তোমার কোলে বসে সারারাত চাঁদ দেখবো। চাঁদটা কতো সুন্দর দেখছ না?
-দেখছি তো চাঁদপরী। কিন্তু তুমি অসুস্থ তো বউসোনা? এখন দুষ্টুমি না করে ঘুমাবে চলো?
-উঁহু--। না। ঘুমবো না আজকে--।
-আচ্ছা ঘুমাতে হবে না। রুমে চলো? ঠান্ডা লাগবে এতোক্ষণ বারান্দায় বসে থাকলে---।
-না। রুমেও যাবো না। এখানে থাকবো আজকে। আর---।
-হুম? আর কি? শেষ করো কথাটা--।
-আর তোমাকে আদর দিবো---।
-ও আচ্ছা। তাই নাকি? কি সৌভাগ্য আমার! বউ আজকে নিজে থেকেই উদ্যোগী হয়ে আদর দিতে চাইছে। আমি খুশিতে না পাগল হয়ে যাই আজকে--।
-যাও তো। তুমি খুব পচা। আমি তোমাকে আদর করতেও পারবো না নাকি?
-আরে বাবা! সে কথা কখন বললাম? আমি তো বিশ্বাসই করতে পারছি না। তাই এক্সসাইটমেন্টে বলে ফেলেছি। আচ্ছা যাও। সরি।
-হুহ---। এক্সসাইটমেন্টে বলে ফেলেছি--।
-কই? কিছু করতে চাইছিলে তো?
-করবো না বললাম না?
মায়রা আরেকবার ঠোঁট বাঁকিয়ে সরে আসার চেষ্টা করতেই আয়ান শক্ত করে মায়রাকে নিজের দিকে টেনে নিয়ে চোখে চোখ রাখলো।
-আমাকে ইনসিস্ট করে এখন নিজে পালাতে চাইছ? তা তো হবে না ম্যাডাম। কাজটা কমপ্লিট করে লক্ষী মেয়ের মতো ঘুমাবেন আসুন? কোনো দুষ্টুমি না কিন্তু---। এখন কিন্তু 'পারবো না, করবো না' বলে টাইম নষ্ট করে লাভ নেই--।
মায়রা কিছু না বলে মিষ্টি করে হেসে আয়ানের মুখের দিকে ঠোঁট এগিয়ে আনলো। আয়ান ভাবতেও পারে নি মায়রা ওর চোখে চোখ রেখেই ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিবে এভাবে কামড়ে ধরবে। মায়রার মিষ্টি ঠোঁটের উষ্ণ স্পর্শে আয়ানের যেন ঘোর লেগে গেল। মায়রার কোমড় জড়িয়ে ধরে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে মায়রার ঠোঁটের স্বাদ নেয়ায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো আয়ান। বেশ কিছুক্ষণ পর মায়রা সরে এসে আয়ানের বুকে মুখ লুকিয়ে নিলো। আয়ানও মায়রার মাথায় চিবুক ঠেকিয়ে বড় করে নিঃশ্বাস নিলো কিছুক্ষণ। একটু আগে কি হলো সেটা আয়ানের বিশ্বাসই হচ্ছে না। একটু পরেই মায়রা লজ্জারাঙা মুখটা তুলে আয়ানের মুখের দিকে তাকালো। আয়ান হেসে মায়রার ঠোঁটে ছোট্ট করে একটা চুমু খেল।
-এই যে দুষ্টু বউটা কি চাইছো বলো তো?
মায়রা নিজের ঠোঁট কামড়ে একবার হেসে আয়ানের কানের কাছে ঠোঁট নিয়ে আলতো করে কামড় বসালো।
-একজন ভদ্রলোককে পাগল করতে চাইছি আর কি---।
-পাগলের পাগলামি সহ্য করতে পারবা তো শেষে? এভাবে কাছে ডাকলে কিন্তু আমিও ভয়ংকর পাগলামি শুরু করবো। অসুস্থ টসুস্থ কিচ্ছু মানবো না কিন্তু---। তখন বুঝবা ময়না পাগলামি কি জিনিস---।
-তাই নাকি? আমি তো আপনার ভয়ংকর পাগলামির অত্যাচার গায়ে মেখে আপনার রঙে নিজেকে রাঙাতে চাই। আর আমি অসুস্থ হলে কেউ আমার শরীর থেকে সমস্ত রোগের বিষটুকু শুষে নিলেও তো পারে। তাইলেই তো একদম সুস্থ হয়ে যাবো।
-তাই না? দাঁড়াও। শুষে নিচ্ছি তোমার শরীর থেকে সমস্ত রোগ, দুঃখ, কান্নার বিষ। তারপর আমিও দেখছি আমার ভালোবাসার রঙে কতো রাঙাতে পারো নিজেকে---। আজকে একটুও ছাড় হবে না। দাঁড়াও। মজা দেখাচ্ছি তোমাকে--।
-না না না। হবে না।
-কেন গো সোনাপাখি? এখন না বললে শুনছে কে?
-নাআআআ। আগে আমার শার্ট দাও। আমি পড়বো এটা--।
আয়ান ঠোঁটের কোণে দুষ্টু একটা হাসি ফুটিয়ে মায়রাকে নিয়ে রুমের দিকে এগিয়ে গেল। খুব ধীরে মায়রাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে নিজের পড়নের শার্টটা খুলে ছুঁড়ে ফেললো। মায়রা চমকে শোয়া থেকে ওঠার চেষ্টা করতেই আয়ান মায়রার উপরে নিজের শরীরের ভর ছেড়ে দিয়ে মুখোমুখি হলো। মায়রার চোখে মুখে রাজ্যের কৌতূহল দেখে আয়ান মায়রার নিচের ঠোঁটে আলতো করে একটা কামড় বসিয়ে মুখ তুললো।
-আমার রঙে নিজেকে রাঙাতে চাইলে তো একটা সূতাও এই মোলায়েম শরীরটায় এলাউড না ম্যাডাম। তোমার আদুরে শরীরের প্রত্যেকটা ইঞ্চিতে আমার নামের ছবি আঁকবো আজ। তোমার প্রত্যেক পরতে পরতে আমার ভালোবাসার রঙ তুলি দিয়ে আঁচড় টানবো। আজ যত গভীর হবে রাত তত গভীর হবে ভালোবাসা বাসি। তখন টের পাবে বউসোনা পাগলামি কাকে বলে।
আয়ানের বলা প্রত্যেকটা শব্দে মায়রার সমস্ত শরীর মন শিহরিত হয়ে কেমন ঘোর ঘোর লাগতে শুরু করেছে। কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে আয়ান আঙুল মায়রার গালে আলতো করে ছুঁয়ে দিচ্ছিলো। সেই স্পর্শেও মায়রা কেঁপে উঠছিলো বারবার। মায়রার এই আলতো কাঁপন আর ভারি উষ্ণ নিঃশ্বাস হাত বাড়িয়ে আয়ানকে নিজের দিকে টানছে। আয়ানও আর অপেক্ষা না করে মায়রাকে নিজের ভালোবাসার রঙে রাঙিয়ে দেয়ায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো। আকাশে থাকা ঝলমলে চাঁদটাও যেন লজ্জার রঙে নিজেকে রাঙিয়ে মেঘের আড়ালে লুকিয়ে পড়লো। দুজন ভালোবাসার পাগলের মিলনে চাঁদটাও বাধা হতে চায় না আজ।
এদিকে আরো দুজন ভালোবাসার কাঙালেরও আজ নির্ঘুম রাত কাটছে। ভিন্ন দুটি শহরে বলে একে অন্যকে ছুঁয়ে দিতে পারছে না ঠিকই। কিন্তু শব্দের আদরে কথা বলাবলি আর ভালোবাসাবাসি চলছে হরদম। ভিডিও কলের এক প্রান্তে থাকা ক্লান্ত সীমান্ত সায়নার ঘুমুঘুমু মায়াভরা মুখটার দিকে তাকিয়েই যেন লম্বা একটা জার্নির ক্লান্তিটা বেমালুম ভুলে গেছে। আর সায়না? ও তো এই মানুষটার চোখের গভীর মায়ায় ডুব দিতে রাজি সবসময়ই। সীমান্ত নামের ভদ্রলোকটি ওকে কি জাদু করেছে সেটাই বুঝে উঠতে পারছে না সায়না। আর বুঝতে পারে না বলেই হয়তো আরো খিঁচে চলে যায় তার দিকেই। এটা ভালোবাসা নাকি নিতান্ত ছেলেমানুষি আবেগ সেটা ভেবে পায় না মেয়েটা। কিন্তু এই লোকটার থেকে দূরে থাকা রীতিমতো শাস্তি সায়নার কাছে। লোকটা কি বুঝতে পারে না সেটা?
-সায়না?
-হুম?
-চুপ করে কেন? কিছু বলো?
-কি বলবো?
-ভালোবাসো? তখন তো বললে না কিছুই? দুষ্টু একটা হাসি দিয়ে পালালে। এসব কি ঠিক বলো তো? এভাবে অপেক্ষায় রাখতে হয় বুঝি?
-বলবো কেন? কেউ নিজে থেকে কি বুঝতে পারে না?
-পারি তো। তবু তোমার মুখে শুনলে যে আনন্দটা পাবো সেটা তো নিজে থেকে ভেবে নিলে পাবো না তাই না?
------------------------------
-কি গো? বলো?
-ভালোবাসি।
-আবার বলো?
-ভালোবাসি----।
-আবার----?
-ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি। তোমাকে খুব খুব খুব ভালোবাসি সীমান্ত।
-আই লাভ ইউ টু সায়না।
-লাভ ইউ থ্রি, ফোর, ফাইভ, সিক্স, সেভেন, এইট, নাইন, টেন এন্ড হান্ডেড। হি হি---।
সায়নার কথা শুনে আর ছেলেমানুষি হাসি দেখে সীমান্ত নিজেও হেসে ফেললো। ভালোবাসা জিনিসটাই হয়তো এমন। মনের কোণে জমে থাকা দগদগে ক্ষতগুলোকেও ধীরে ধীরে কেমন যেন ম্যাজিকের মতো সারিয়ে তুলতে পারে। কাউকে ভালোবেসে প্রতিদানে তার ভালোবাসা পাওয়ার মতো সুন্দর আর স্বর্গীয় অনুভূতি হয়তো আর কিছুই হয়নি। এই দুটো মানুষই সেটা জানে। তাই হয়তো নিজেদের অপূর্ণতাটুকুকে ভুলে গিয়ে নতুন করে নিজেদের পথচলা শুরু করেছে। এভাবেই হয়তো দুটো অপূর্ণ হৃদয় পরস্পরকে পূর্ণ করে তুলবে একসময়। অথবা পূর্ণতাটুকু ভালোবাসা হয়ে ওদের ঝুলিতে ধরা দিয়েছে।