অচেনা অতিথি - পর্ব ২৫ - সিজন ২ - নাফিসা মুনতাহা পরী - ধারাবাহিক গল্প


বাতাসি বিবি পান ছেচে মুখে দিতেই একটা শর্ক খেয়েছে। সে সাথে সাথে গলা ছেড়ে একটা চিৎকার দিয়েছে। কারন তার মুখ সহ গলা ঝালে পুরে যাচ্ছিল। কুসুম দৌড়ে এসে বাতাসির মুখের দিকে চাইতেই বাতাসি গুম মেরে রইলো। 
বুড়ির মতিগতি ভালো ঠেকছেনা। তাই কুসুম কেবল আগ বাড়িয়ে বলল-

~" দাদী কি হয়েছে আপনার! পানি খাবেন?"

পানির কথা শুনে বাতাসি দাপিয়ে রুম থেকে বের হয়েই ডাইনিং টেবিলে বসে জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে ঢকঢক করে গিলতে লাগলো। ও লাবীবা, কুসুমরে কোতায় আছোস তোরা, অ্যার গলা জইলা কুটি কুটি হইলো। আই মনে হয় বাচুমনা। 

ঐ দিকে নিসার দাপাদাপি ১৪গুন বেড়ে গেল। শাড়ী কুচি করে আচল কেবল গায়ে দিয়েছে ওমনি সারা শরীর পাগলের মত চুলকাইতে লাগলো। জোড়ে একটা চিৎকার দিয়ে শাড়ী খুলে সেটা ফ্লোরে ছুড়ে ফেলল। ফুয়াদের সাথে নিসার কথা হয়না কিছুদিন হলো। সেদিন নিসার গায়ে হাত তোলায় আর কথা হয়নি দু'জনের মধ্য। নিসা ছটপট করতে করতে শেষে ফুয়াদের সামনে গিয়ে করুন মুখে দাড়িয়ে হাতের বাহু সহ পিঠ খচখচ করে চুলকাইতে লাগলো।

ফুয়াদ মুচকি হেঁসে সোফা থেকে উঠে আলমারি খুলে কিছু দরকারী ফাইলপত্র নিতেই নিসা এসে ফুয়াদের শরীরে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলল-

~" তুমি কেমন স্বামী! আমার পিঠ চুলকে আমি মরে যাচ্ছি আর তুমি শয়তানি হাসি দিচ্ছো!"

ফুয়াদ জ্বীভে কামড় দিয়েই বলল-

~" আমার এত্ত সাহস! তোমার কান্ড কারখানা দেখে আমি হাসবো! আর তুমি আমাকে ছেড়ে দিব! আমারে পাগলা কুত্তায় কামড় দেয়নি যে আমি এমন কান্ড করবো।"

শেষে ফুয়াদ ফাইলপত্র রেখে নিসার শরীরে হাত দিতেই নিসা চিৎকার দিয়ে উঠে বলল-

~" চুল্কে দিচ্ছো না উত্তেজনা বাড়ানোর জন্য মাঠে নেমেছো!"

~" আরে বাবা আমিতো ভালো করেই দিচ্ছি!"

নিকুচি করছি তোমার ভালো করে দেওয়ার! ফুয়াদ ভালো করে শুনে নাও, এই কাজে যদি তিতির জড়িত থাকে তাহলে ওর কি হাল করবো সেটা ও কল্পনাও করতে পারবেনা। ওর মিথ্যা পাগল সাজা বের করে দিব বুঝেছ!  কথাগুলো বলেই নিসা ওয়াসরুমে গিয়ে শাওয়ার ছেড়ে দিয়ে দাড়িয়ে রইল।

নিসার কথা শুনে ফুয়াদ খানিকটা ভয় পেল। এই মেয়ে যা, এরে কোন বিশ্বাস নেই বলে ফুয়াদ মাহাদের রুমে দ্রুত রওনা দিল। 


মাহাদ তিতিরকে টেনে ব্যালকোনিতে নিয়ে গেল। তারপর শাসিয়ে বলল-

~" দাদী আর নিসার সাথে তুমি কি করেছ! তুমি নিসাকে চিনো! ওকে ক্ষেপিয়ে তুললে ঠিক তোমার কি কি করতে পারে! কেন ওর সাথে লেগেছ?"

তিতির ঠোট উল্টিয়ে মাথা নিচু করে বলল-

~" আমাকে বকছেন কেন! আপনি জানেন সে আমার ছেলের সাথে কি কি করেছে! আর আপনার দাদী বাসপাতালি আমাকে দিনে হাজার বার শুধু পাগল পাগল বলে মুখ ছিটকায়! তাদের কিছু না বলে আপনি আমায় ধমকাচ্ছেন!"

অহ্ আমার আল্লাহ্ এরে নিয়ে আমি কি করবো! এতদিন শান্ত ছিল কিন্তু এখন সে দিনে দিনে বিচ্ছুর লিডার  হয়ে যাচ্ছে। আর কত দিকে সামলাবো আমি। এরে সৎ বুদ্ধি দাও আল্লাহ্।

মাহাদের কথা শেষ না হতেই তিতির ওর মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলল-

~" আপনিও আমাকে পাগল বলছেন! এমন করলে কিন্তু আমার ছেলেকে নিয়ে এখান থেকে চলে যাব হুম। তখন কারে পাগল বলেন দেখবো আমি।"

তিতিরের কথা শুনে মাহাদের চোখ ছলছল করে উঠলো। তিতিরকে ছেড়ে দিয়ে রুমে চলে আসল। এমন সময় ফুয়াদ রুমে আসতেই তিতির আধা দৌড়ে এসে মাহাদকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে কয়েকটা কিস করলো। এমন কান্ড দেখে ফুয়াদ আর মাহাদ দু'জনই এত্ত লজ্জা পেল যে কেউ কারো দিকে তাকানোর মত সাহস পেলোনা। ফুয়াদ মাথা নিচু করেই বলল-

~" মাহাদ পরে কথা বলবো। এখন আমি যাই।"

~" ভাইয়া আমার বর আমার উপর রাগ করেছে। বলেন তো আর কি কি করলে তার রাগ ভাঙ্গবে!"

ফুয়াদ মনে হয় এমন মাইনকা চিপায় কোনদিনও পড়ে নাই। তিতিরের ব্যবহারই বলে দিচ্ছে ও কতটা অসুস্থ। সজ্ঞানে তিতির এমন কাজ কোনদিনও করতোনা ফুয়াদের সামনে। তিতিরের এমন আচরনে মাহাদ কিছুটা ক্ষেপে গিয়ে বলল-

~" তিতির কি হচ্ছে এসব! সামনে ভাইয়া আছে দেখতে পাচ্ছোনা!"

এইরে বর মহাশয় তো আরও রেগে গেছে। তিতির মাহাদকে ছেড়ে দিতেই ফুয়াদ নরম কন্ঠে বলল-

~" দাদী আর তোমার ভাবীর সাথে কি করেছ তিতির!"

ফুয়াদের কথা শুনে তিতির ভয়ে চুপসে গেল। সে কি করে জানলো আমি এসব করেছি। তিতির কোন কথা না বলে মাহাদের হাত ধরে চুপটি করে দাড়িয়ে রইলো। মাহাদও সাথে সাথে বলল-

~" বড়দের কথা শুনতে হয় তিতির! ভাইয়াকে বল, তাদের সাথে কি কি করেছ!"

অনুমতি পেয়ে তিতিরের মুখ চললো। হেসে হেসে যেন গড়িয়ে পড়ার মত অবস্থা তার। শেষে মাহাদ শক্ত করে ওকে চেঁপে  ধরে চোখ গরম করতেই ও বলল-

~" বেশি কিছুনা ভাইয়া, কাউয়াতাসীর জদ্দায় গুড়া মরিচ আর আপনার কালডাকনীর শাড়ীতে সোয়াশগুড়ী মিশাই দিছি। একেবারে জায়গামত মাইর দিছি। না কাউকে বলতে পারবে না দেখাইতে পারবে।"

এ্যা বলে দুই ভাই একে অপরের দিকে চোখ বড় বড় করে চেয়ে রইলো কিছুক্ষন। এদের মুখ থেকে যেন কথায় বের হতে চাচ্ছেনা। তিতির রেগে গেলে কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে তার একটু নমুনা দেখাইছে তাদের কে। মাহাদ তিতিরকে ধমক দিতেই তিতির ছলছল চোখে তাদের জানিয়ে দিল, নিসা সাদের সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করেছ আর বাতাসির কথাতো বাদই দিলাম। বরং তার নামে অনেক অভিযোগ দিল। 

ফুয়াদ ঢোক চিপে তিতিরকে বলল-

~" তিতির যা করছ করেছ! আর এমন কাজ কখনো করোনা। তুমি কত ভালো মেয়ে বলতো! তোমাকে এসব ব্যবহারে একদম মানায় না। নিসার কাছ থেকে একটু দুরেই থেক। তাছাড়া তোমার শরীর ভালো নেই। আমার কথা বুঝতে পেরেছ!"

তিতির ঘাড় নাড়িয়ে শুধু হ্যাঁ বলল।

এইতো গুড গার্ল বলেই ফুয়াদ রুম থেকে বের হয়ে গেলো। ফুয়াদ চলে যেতেই মাহাদ রেডী হতে লাগলো অফিসের জন্য। তিতির ওকে এটা ওটা এগিয়ে দিচ্ছে কিন্তু মাহাদ ওর সাথে কথা বলছেনা। শেষে তিতির রাগ করে সাদের কাছে চলে গেল।


নিসা পুরো দিনে গবেষনা করে পুরো ব্যাপারটা বুঝে ফেলেছে। এমন কাজ তিতির ছাড়া কেউ করবেনা। কিন্তু হাতে কোন প্রমান নেই যে ওকে ধরা যাবে। সিসি ক্যামেরাতে তো ধরা যাবে। নাহ্ যে গেছো মেয়ে ও, দুতলা টপকাতে ওর বা হাতের ব্যাপার। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে নিচে ড্রয়িংরুমে এসে সোফায় বসে পড়লো। বাতাসি তো পানি গিলেই চলছে। একই দিনে একই সময় দু'জনেরই সমস্যা কি করে হয়। কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই দেখলো, মাহাদ সাদকে নিয়ে বের হয়ে গেল। মাহাদ ওর মা আর কুসুমকে তিতিরের দিকে ভালো করে নজর রাখতেও বলল।

মাহাদ চলে যেতেই তিতিরও এসে নিসার কাছ থেকে একটু দুরে সোফাতে বসলো। ওর মনে এখন কি চলছে  সেটা ও নিজেই ভালো জানে। কিছুক্ষন পরে ওর রং সবাইকে দেখাতে লাগলো। ওর টার্গেট যে বাতাসি সেটা ওখানকার সবাই বেশ ভালো করে বুঝতে পারলো। কারন বাতাসি যা যা করছে সেটা তিতিরও তাই অনুকরণ করে যাচ্ছে। বিষয়টি বাতাসি লক্ষ্য করেনি কিন্তু নিসার চোখে তা স্পষ্ট ধরা পড়েছে। কুসুম যতই তিতিরকে থামাতে চায় তিতির ততই বেশি বেশি করে বাতাসিকে কপি করতে লাগলো। এবার বাতাসির চোখ তিতিরের দিকে যেতেই ওর চোখ দুটো লাড্ডুর মত হয়ে গেল। এ্যা পাগলটা অ্যারে মুখ ভাসাইতাছে বলেই বাতাসি হাত সামনে দিকে উচু করে তুলে ধরে তিতিরকে পরীক্ষা করতে লাগলো। হুম সত্যেই তিতির বাতাসির মত করেই হাত সামনের দিকে উচু করে ধরলো।

বাতাসি ভ্রু জোড়া কপালে তুলে চিক্কুর ছেড়ে বলল-

~" ও কামু দেইখা যা বাপ, তোর ব্যাটার বউ অ্যার সাথ লাগচে। এইবার আই সত্যিই কব্বরে যাইয়া ডুক্কি মারুম। অ্যার এই জিবনে আই অার অত্যাচার সওয়া পারুম না।"

বাতাসির চিৎকারে তিতির হাত নামিয়ে এদিক ওদিক চাইতেই দেখলো নিসা ওর দিকে চেয়ে আছে। তিতির মাথা নিচু করে চুপ করে রইলো। কামরান সাহেব বাসায় ছিলেন না। তাই লাবীবা বেগম শাশুড়ীর কাছে আসতেই বাতাসি সব কথা খুলে বলল তার বৌমাকে। লাবীবা সব শুনে তিতিরের কাছে এসে নরম স্বরে বলল-

~" মা তুমি কি সত্যিই কাজগুলো করেছ!"

তিতির মুখে আঙ্গুল পুরে না না করলো। নিসা এসব দেখে ফোস করে উঠে বলল-

~" মা, ও একদম মিথ্যা বলছে। আমি নিজে দেখেছি ও দাদীকে কপি করছে। দাদীকে অপমান করছে। দেখেন, কত্ত বড় বিয়াদপ মেয়ে  যে, গুরুজনকে অসম্মান করছে।"

~" সাক্ষী পাইয়া গেছি! আই ঠিক কইছি লাবীবা। হেতি অ্যারে ভেঙ্গাইছে।"

নিসার এমন কথায় তিতির সোফা থেকে উঠেই নিসার দিকে আসতে লাগলো। তিতিরের এমন ভয়ঙ্কর চেহারা নিসা কোনদিনও দেখেনি। নিসা ভয় পেয়ে চুপসে গেল। তিতির একদম নিসার কাছে এসে থ্রেড দিল। আপনার মেয়ে যদি আমার ছেলের গায়ে আর এবার হাত দেয় তাহলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে। ফিহা যেন আমার ছেলের ধারে কাছে না আসে।

এই তোমার এত্তবড় সাহস! তুমি আমাকে থ্রেড দাও বলে নিসা চিৎকার দিয়ে উঠলো। বাতাসি আর লাবীবা দৌড়ে এদের দু'জনের কাছে চলে এলো। নিসাকে লাবীবা থামতে বলছে বার বার কিন্তু নিসা থামার পাত্রী না। শেষে তিতির এমন কথা বললো তাতে নিসার কথা বন্ধ হয়ে গেল। সাথে আসে-পাশের সকলের পিলে চমকে গেল। তিতির চেতে উঠে বলল-

~" আর একটা কথা যদি বলেছেন তাহলে আমার মেয়ে যেমন ঐ মাটিতে সুয়ে আছে ঠিক তেমনি আপনার মেয়েকেও মাটিতে শোয়ার ব্যবস্থা করে দিব। মাইন্ড ইট.....।"

কথাগুলো বলে তিতির গটগট করে উপরে চলে গেল। নিসাতো একদম শেষ। ডুকরে কেঁদে উঠে বলল-

~" মা শুনলেন আপনি! এতবড় কথা বলতে ওর একবারও বুক কাঁপলোনা! ও পেয়েছেটা কি! ও কখনোই পাগল না। বিয়াদপ অভদ্র মেয়ে, আমার মেয়েকে আর বাঁচতে দিবেনা। আমার সংসার টা শেষ করে ছাড়বে। বাবা আজ আসুক, এই কথাটা যদি না তুলেছি তার কাছে তো আমার নাম নিসা নয়। হয় ও থাকবে এ বাসায় না হয় আমি থাকবো। আর যদি এতই পাগল হয়ে যায় তাহলে পাবনাতে রেখে আসছেনা কেন আপদটাকে?"

বাতাসি বিবি কোন কথা বলেনি। তিতিরের এমন ব্যবহারে হেইও ব্যাপক ডউরে গেছে। সুড় সুড় করে নিজের রুমের ভিতর গিয়ে ছিটকি লাগিয়ে দিয়ে গুনগুন করে কাঁদতে লাগলো। আই যা যা করচি ওর সাথে হের যদি প্রতিশোধ নেয় তাইলে অাই আর বাচুমনা। ও কুসুমরে অ্যারে বাতাসা পড়া আইনা দে। আই আর বাচুমনা। ক্যালা ছাওয়ালক যদি ও না ছাড়ে তয় আই বাতাসিরেও ছাড়বোনা ও। ও আল্লাহ্ অ্যারে কোন মসিবতে ফেলাইলা!

বাতাসির ডুকরোন দেখে কুসুম আর লাবীবা গিয়ে দরজা ধাক্কাতে লাগলো। আম্মা কি হয়েছে! আপনি কাঁদছেন কেন! দরজা খুলে দেন। 

~" না লাবীবা, তোমার জিবনের মায়া নাই তাই বাইরে ঢ্যাং ঢ্যাং কইরা ঘুরতাছো। অ্যার জিবনের বহুত মায়া আছে। জিবন থাকতে অার বাইরে যামুনা। তোমার ব্যাটার বউরে পাগলা গারদেই পাঠাই দাও। হেই কুখ্যাত খুনি পাগলী হইছে। আই আর এ জিন্দেগীতে বাইর হমুনা ঘর থাইকা। "

বাসায় ঝড় বয়ে গেল যেন। নিসাতো সাথে সাথে ফুয়াদকে সব কথা জানিয়েছে। ভয়ে তিতিরের কাছে কেউ যায়নি। খাওয়ার কথাও বলেনি ওকে। তিতিরও রুম থেকে বের হয়নি। এভাবেই পুরোটা দিন কাটলো। 

বিকালের দিকে বাসায় রুমকি সহ ওর বর আসলো। রুমকির ছেলে এবং ওর শশুড়বাড়ী আরো কয়েকজন এসেছে। সাদের সম বয়সী একটা ছেলে আর ১বছর বয়সী একটা মেয়ে আছে ওর। ছেলের মুসলমানি করাবে তাই রুপালী আর রেজওয়ান এখান থেকেই করানোর কথা বলেছে। এমন কি এ নিয়ে একটা অনুষ্ঠানও রাখা হয়েছে। রেজওয়ান তো সবাইকে ইতি মধ্যে ইনভাইটও করে ফেলেছে।

সন্ধ্যায় সবাই নাস্তা করছে। রুমকির বর সম্রাট ওদের মেয়েকে নিয়ে করিডোরে হাটাহাটি করছে। মেয়েটা বড্ড কাঁদছে। রুমকি বাসায় নেই। ওর কিছু বান্ধবীদের ইনভাইট করতে গেছে। 
এমন সময় দরজার সামনে তিতিরকে দাড়িয়ে থাকতে দেখলো। তিতির এক নজরে মেয়েটার দিকে চেয়ে আছে। সম্রাট তিতিরের মানুষিক অবস্থার কথা জানে। তাই তিতিরের কাছে এগিয়ে গিয়ে বলল-

~" ভাবী, মেয়েটা কাঁদছে। আমি থামাতে পারছিনা। আপনি একটু ওরে কোলে নিবেন?"

এত উত্তম কথা আজকের দিনে তিতির শোনেনি। ও সাথে সাথে হাত বাড়িয়ে দিতেই সম্রাট ওর মেয়েকে তিতিরের কোলে দিয়ে বলল-

~" আমি ওর খাবার আনছি। আপনি ততক্ষনে ওরে দেখে রাখেন।"

তিতির শুধু মাথা নাড়িয়ে হাসি মুখে ওর রুমে ঢুকলো। একজন মাকে বলতে হয়না সে কিভাবে একটা দুধের বাচ্চাকে সামলিয়ে রাখতে পারে। সেটা তিতিরের বেলায়ও ব্যাতিক্রম হলোনা। সম্রাট আসার আগেই মেয়টার কান্না থামালো। এমনকি অতিথীর খাবার দিয়েও খাবার রেডী করে তাকে খাওয়াতে লাগলো।

একটু পর সম্রাট খাবার নিয়ে এসে দেখলো তার মেয়ে বসে খেলা করছে বিভিন্ন খেলার জিনিসপত্র নিয়ে। আর তিতির বাবুটার বড় বড় চুল রাবার দিয়ে ঝুটি বেঁধে দিচ্ছে। মন মত না হওয়াতে রাবার খুলে আবার চুল বেঁধে দিতে লাগলো তিতির। একটা সন্তান   হারানো মায়ের অনূভুতি গুলো মুগ্ধ হয়ে দেখতে লাগলো সম্রাট। এমন সময় রুপালী সম্রাটের কাছে এসে বলল-

~" বাবা, তুমি এখানে!"

সম্রাট মুচকি হেঁসে বলল-

~" মেয়েটা খুব কাঁদছিলো। ভাবীর কাছে যাওয়াতেই কেমন শান্ত হয়ে খেলছে।"

তিতিরের কোলে রুমকির মেয়েকে দেখেই যেন রুপালীর মাথায় বাজ পড়লো। ওর কোলে কেন বাবুটা! জামাইয়ের সামনে তেমন কিছু বলতে পারলোনা কিন্তু রুমে ফিরে আসতেই দেখলো, রুমকি বাসায় ফিরেছে। রুমকিকে টেনে নিয়ে গিয়ে কিছু কথা বলতেই রুমকি ক্ষেপে গিয়ে মাহাদের রুমে চলে গেল। এসে দেখলো সম্রাট সোফায় বসে আছে আর তিতির ওর মেয়েকে আদর করছে।

এই তোমার এতবড় সাহস কি করে হয় আমার বাচ্চার গায়ে হাত দেওয়ার। কথাগুলো বলেই ওর মেয়েকে তিতিরের কাছ থেকে কেড়ে নিল। তিতির করুন চোখে রুমকির দিকে চেয়ে রইলো। সম্রাট এসে বলল -

~" এ কেমন অভদ্রতা!  কারো কাছ থেকে কেউ এভাবে বাচ্চা কেড়ে নেয়!"

~" তুমি ওর বিষয়ে কি জানো! ওর কাছে বাচ্চা রাখাটাও একটা রিক্স। আর তুমি এই রুমে কি করছো! এই পাগল ছাগলের কাছে কেন বসে আছো! তুমি জানো, আজ ও ফিহাকে খুন করার হুমকি দিয়েছে! আর তার কাছে তুমি আমার মেয়েকে তুলে দাও!"

সম্রাটকে আর কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে রুমকি ওকে নিয়ে বের হয়ে গেল।
রুমকি চলে যেতেই তিতির ক্ষেপে গিয়ে ওর হাতের কাছে যা জিনিসপত্র ছিলো সব কিছু ফ্লোরে ফেলে দিয়ে ফিকরে কেঁদে উঠলো।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন