১১!!
কিশোরকে কাকভেজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তামান্নার হাতে ধরা পানির পাইপটা পড়ে গেল। কিশোরও তামান্নাকে গাছের সাথে কথা বলতে শুনে একটু এগিয়ে এসে কথা শুনছিল। হঠাৎ কি মনে হলো কিশোরের কে জানে। কিশোরের মনে হলো তামান্না ওর ব্যাপারেই কথা বলছে। আর সেটা খেয়াল হতেই তামান্নাকে হুট করে ঘাবড়ে দেয়ার ইচ্ছেটা দমাতে পারলো না কিশোর। তামান্নার ঠিক পিছনে দাঁড়িয়ে হুট করে কথাটা বলেছিল কিশোর। কিন্তু তামান্না এতোটা ঘাবড়ে গিয়েছিল যে চমকে পিছনে ফিরে গেল। আর তখন কাকভেজা ভিজে গিয়ে কিশোরের হুঁশ ফিরলো। নিজের কাজে অবাক হয়েছে তেমন, তেমনই তামান্নার মুখে 'খারুস' শুনেও তাজ্জব বনে গেছে বেচারা। একটু পর তামান্নার দিকে চোখ যেতে ভ্রু কুঁচকে এক পা এগিয়ে গেল কিশোর।
-আপনি কি বললেন মিস তামান্না? আমি খারুস? আপনার সাহস তো কম নয়----।
-না মানে স্যার---। আমি আপনাকে কিছু বলি নি। আপনি খারুস হতে যাবেন কেন? উহু--। আমি মোটেও আপনাকে বলি নি। সত্যি--। বিশ্বাস করুন---।
-তো কাকে বলেছেন?
-না মানে। ওই যে---। একজন আছে না??
-হুম হুম---৷ কে বলুন? এই বাড়িতেই থাকে, গুম হয়ে গাল ফুলিয়ে বসে থাকে--। আরো কি সব বলছিলেন যেন??
-না মানে--। আমি তো স্যার দুষ্টুমি করে ওদেরকে বলছিলাম--। আমরা বন্ধু হয়েছি তো--।
-গাছকে দুষ্টুমি করে বলছিলেন? বাহ!! তা আর কার সাথে এভাবে দুষ্টুমি করে এসব বলেন আপনি?
-না মানে স্যার---। আসলে---।
কিশোর কথা বলতে বলতে এগিয়ে আসছিলো আর তামান্না এক পা এক করে পিছিয়ে যাচ্ছিলো। পিছাতে পিছাতে একসময় তামান্না পা মচকে পড়ে যেতে লাগলেই কিশোর তামান্নার হাত ধরে টান দিলো। আর তামান্নাও ব্যালেন্স না রাখতে পেরে হুড়মুড়িয়ে কিশোরের বুকে গিয়ে পড়লো। ঘটনাটা এতো তাড়াতাড়ি ঘটলো যে কিশোর আর তামান্না দুজনেই থতমত খেয়ে গেল। না তামান্না সরে আসার কথা খেয়াল থাকলো, না কিশোর ওকে ছেড়ে দেয়ার কথা। দুজনেই একে অন্যের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো।
কিশোর অবাক হয়ে তামান্নার চোখ জোড়া দেখছে। কি যেন একটা অদৃশ্য শক্তি আর মায়া আছে মেয়েটার চোখে যার কারণে কিশোর চোখ সরাতে পারছে না৷ তামান্নাও এক ঘোরলাগা দৃষ্টিতে কিশোরকে দেখছে। মানুষটা দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে বুকের ভিতরে ধুকপুক করছে তামান্নার। তবু এই মানুষটার দিক থেকে চোখ ফেরানোর শক্তি জোগাড় করে তুলতে পারছে না। কিশোর ঠোঁটের কোণে মিষ্টি করে একটা হাসি ঝুলিয়ে তামান্নাকে আরেকটু শক্ত করে আঁকড়ে ধরলো নিজের সাথে৷ আর তামান্নাও কেঁপে উঠলো কিশোরের স্পর্শে।
-তা আপনার খারুস নাকি কিউট? সত্যি নাকি ম্যাডাম?
-জি??!!
কিশোরের ঠোঁটের কোণে হাসিটা দেখে তামান্না চোখ বুজে ফেললো। এই হাসি মুখটার দিকে তাকিয়ে থাকা ওর পক্ষে অসম্ভব। লোকটার এই হাসিটা তামান্নার ভিতরে যেন ভূমিকম্প উঠেছে। তবু কিশোরের থেকে সরে আসতে পারছে না বেচারি।
-স্যার? আপনার ঠান্ডা লেগে যাবে----।
-হুম??
-আপ-আপনি পুরো ভিজে গেছেন।
-ওপস---। সরি সরি---।
কিশোর এখনো তামান্নাকে ধরে আছে খেয়াল হতেই তাড়াতাড়ি ছেড়ে দিলো। তামান্নাও কিশোরের থেকে সরে এসে চোখ খুলে তাকালো।
-সরি স্যার আমি আসলে খেয়াল করি নি। আপনি তো পুরোই ভিজে গেছেন--।
-ভিজে তো আপনিও গেছেন৷ বাট আই এম নট সরি ফর দ্যাট৷ শাড়িটা বদলে নিবেন৷ ঠান্ডা লেগে যাবে নয়তো---।
-জি---।
-আমিও যাই--। ও আচ্ছা মিস তামান্না??
-জি স্যার??
-দীপ্তি কোথায়?? ওকে রুমে না দেখে বাগানে এলাম---।
-দীপ্তি তো স্কুলে গেল।
-একা??
-উমমম। ড্রাইভার সাথে গেল---।
-কাল থেকে আপনিও সাথে যাবেন দীপ্তিকে স্কুলে পৌঁছে দিতে।
------ওকে স্যার--।
-আর দয়া করে একা একা বাড়ির বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করবেন না--।
-জি স্যার??
-দুজন বডিগার্ড রাখার ব্যবস্থা করছি। বিশ্বাসী আর কাজে দক্ষ এমন লোক পাওয়া একটু টাফ। তাই কয়েকটা দিন সময় লাগবে। অন্তত গার্ড না পাওয়া পর্যন্ত কয়েকটা দিন বাসায় থাকুন৷ খুব আর্জেন্ট না হলে বের হওয়ার দরকার নেই---।
-স্যার আমি তো এমনিতেই কোথাও যাই না। যাওয়ার প্রয়োজনই হয়না-।
-সেটা পরে দেখা যাবে। আপাতত যেটা বললাম সেটা শুনুন।
-জি স্যার।
-এখন গিয়ে চেইঞ্জ করে নিন যান। আপনার গাছ বন্ধুদের সাথে পরেও আলোচনা করতে পারবেন--।
-জি স্যার---।
কিশোর বাড়ির ভিতরে ঢুকে যেতেই তামান্না যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। খারুসটা ওর সব কথা শুনে ফেলেছে কথাটা মনে পড়তেই হাসি পেল তামান্নার। যা হোক, খারুসটার হাসিটা জাস্ট অসাধারণ। তবু কেন যে লোকটা না হেসে গাল ফুলিয়ে বসে থাকে কে জানে! এই লোকের হাসি মুখটা দেখার জন্যই তো যে কেউ নিজের সমস্ত জীবনটাই উৎসর্গ করে দিতে পারে! আর ওই বোকা মেয়েটা কিনা এমন একটা মানুষকে, এতো লক্ষী একটা মেয়ে ফেলে চলে গেল! কি করে পারলো যেতে? মায়া হয়নি একটুও? একবারও মনে পড়ে না ওর স্বামী সন্তানের কথা! তামান্না এই মানুষগুলোর থেকে দূরে গেলে হয়তো মরেই যাবে। কথাটা ভাবতেই তামান্না ঢোক গিললো। কখনো সুপ্তি ফিরে এসে ওর সংসারটা বুঝে নিতে চাইলে কি হবে? কিশোর তো ওকে ভিষণ ভালোবাসে! সে কি সবটা ভুলে গিয়ে সুপ্তিকে মাফ করে দিবে! দীপ্তিও মাকে পেয়ে তামান্নাকে ভুলে যাবে? সুপ্তি ফিরলে তো আর তামান্নার প্রয়োজন থাকবে না কিশোরের সংসারে! তখন কোথায় যাবে তামান্না? আবার সেই নরকের আশ্রমে! সোলেমান শেখ কি ছেড়ে দিবে ওকে!!
এসব ভাবতে ভাবতেই তামান্না বিভোর হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো আগের জায়গাতেই। অনেকক্ষণ ভিজে শাড়িটা পড়নে থাকায় একটু পর হাঁচি আসছে তামান্নার। তবুও কোন হুঁশ নেই মেয়েটার। ভাবনায় এতো বিভোর হয়ে গেছে যে কিশোর আবার ফিরে এসেছে টেরই পায়নি একেবারে৷ কিশোরও শার্টটা পাল্টে আবার বাগানে হাঁটতে এসেছিল একটু। হাঁচির শব্দ শুনে তাকিয়ে দেখলো তামান্না এক কোণে থ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এখনো ভেজা শাড়িটা তামান্নার পড়নে দেখে বিরক্ত হয়ে তামান্নার নাম ধরা ডাকলো কিশোর। কোন সাড়াশব্দ নেই দেখে তামান্নার চোখের সামনে তুড়ি বাজাতেি চমকে উঠলো তামান্না।
-স্যার আপনি?? কিছু লাগবে?
-জি। একজন বেহুঁশ হয়ে গেছে। তার হুঁশ ফিরিয়ে আনতে হবে--।
-কার??
-কার আবার? আপনার।
-জি??
-কখন থেকে ডাকছি। কোন খবরই নেই আপনার। কোথায় হারিয়ে গেলেন?
-না মানে!!
-তা আপনাকে চেইঞ্জ করিয়ে দিতে কি কাউকে খবর দিতে হবে?
-না না স্যার--। আমি যাচ্ছি--।
-১২টা সাড়ে ১২ টার দিকে দীপ্তি স্কুল থেকে ফিরবে। আশা করি ততক্ষণে আপনি আপনার ভাবনার দুনিয়া থেকে বেরিয়ে চেইঞ্জ করে নিতে পারবেন---।
-------------------------------
-ইচ্ছে হলে এতো চিন্তার কারণটা শেয়ার করতে পারেন। হেল্প করতে পারবো হয়তো----।
-না স্যার তেমন কিছু না--। আসছি।
কিশোর একটু সরে দাঁড়াতেই তামান্না এক ছুটে বাড়িতে ঢুকলো। আর আরেক ছুটে সোজা নিজের রুমে এসে দরজাটা বন্ধ করে দিলো। দরজার সাথে পিঠ ঠেকিয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বুক ভরে শ্বাস নিলো তামান্না। আর কিছুক্ষণ লোকটার সামনে দাঁড়িয়ে থাকলে নির্ঘাত হার্ট অ্যাটাক হয়ে যেত। কেন যে মরতে বারবার ওকে এই লোকটার সামনেই পড়তে হয় কে জানে! আর এই লোকটাই বা কি! সব কথায় এমন খোঁচা কেন দিতে হয় তার? একটু ভালো করে বললে কি হয়? আসলেই আস্ত একটা খারুস লোকটা।
১২!!
তামান্না ভেজা শাড়িটা বদলে একটা শুকনো শাড়ি বের করলো আলমারি থেকে৷ দীপ্তি যেভাবে শিখিয়ে দিয়েছে সেভাবে সুন্দর করে শাড়িটা পড়ে নিলো। কুঁচিগুলো একটু অগোছালো হয়েছে তবে একা একাই শাড়ি পড়তে পেরেছে তাতেই তামান্না খুশিতে আটখানা হয়ে গেল। নিজে নিজে শাড়িটা পড়তে না পারলে বিশ্রি একটা কান্ড হতো এখন। যা হোক। শাড়িটা পড়ে ভেজা শাড়িটা বারান্দায় মেলে দিয়ে রান্নাঘরে এসে ঢুকলো তামান্না। নয়না মেয়েটা কিছু একটা করছিলো। তামান্নাকে দেখে দুপাটি দাঁত বের করে হাসি দিলো। তামান্না সেটা খেয়াল করে একবার ভ্রু কুঁচকে নিজেও একটু মুচকি হাসি দিয়ে কাজে মন দিলো। নয়নাও নিজের কাজ করা বাদ দিয়ে এটা সেটা এগিয়ে দেয়ার ছুঁতোয় তামান্নার কাজে সাহায্য করার পেছনে লাগলো।
-মিস নয়না? আপনি কি আমাকে কিছু বলবেন?
-না মানে ম্যাডাম। আমি দীপ্তি ম্যামের জন্য আজ স্যুপ বানিয়েছি-।
-আপনাকে তো কালই বারণ করলাম--। দেখলেন তো মেয়েটা খেতে চায় না এসব---।
-আমি আজকে অন্যরকম করে বানিয়েছি ম্যাডাম। অনেক মজা হয়েছে----।
-দেখুন। এই ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারবো না। ও নিজে খেতে চাইলে খাবে, না চাইলে খাবে না। সেটা ওর ইচ্ছে----। ও যেহেতু স্যুপ খেতে চাচ্ছেই না-----।
-আপনি একবার বললেই দীপ্তি আর একদমই আপত্তি করবে না ম্যাডাম --।
-দেখুন? আমি দীপ্তির জন্য রান্না করবো এখন। আর আপনাকে দীপ্তির খাবার নিয়ে ভাবতে হবে না। ওর খাবার, পড়া, ঘুম, খেলা সবটা আমি একাই দেখতে পারবো। এই ব্যাপারে কিছু বলার থাকলে আমি ম্যামকে বলবেন। আমাকে নয়। আমাকে আমার কাজটা করতে দিন--।
-জি ম্যাডাম---।
নয়নার ব্যাপারটা একদম পছন্দ হলো না সেটা তামান্না ওর মুখটা দেখেই বুঝতে পারলো। তবু সেটা নিয়ে মাথা ঘামালো না ও। আপাতত দীপ্তি স্কুল থেকে ফিরে কি খাবে আর দুপুরো কি খাবে সেটা জোগাড় করায় লেগে পড়লো। অযথা নয়নার সাথে কথা বলে সময় নষ্ট করে লাভ নেই৷ তামান্নার রান্না প্রায় শেষ হয়েছে এমন সময় দুটো ছোট্ট হাত পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। তামান্না মিষ্টি করে হেসে পিছনে ফিরতেই দীপ্তি তামান্নাকে আবার জড়িয়ে ধরলো।
-তমা মিস--। তুমি এখানে!! আমি আরো তোমাকে সারা বাড়ি খুঁজছি জানো?
-কেন দীপু? মিস ত তোমার জন্য রান্না করছিলো--।
-ওহ!! জানো মিস? আজকে কি হয়েছে? স্কুলে-----।
-দীপু??
-হুম----।
-স্কুল থেকে ফিরে কি করার কথা?
-কি??
-স্কুল থেকে ফিরে ড্রেস চেইঞ্জ করে হাত মুখ ধুতে হবে তো? তাই না??
-ওহ! আমি তো ভুলেই গেছিলাম। তোমাকে রুমে না দেখে---।
-মিস বলেছি না যাবো না বাবু?
-তবু যদি-----?
-মিসকে বিশ্বাস হয় না দীপু সোনার? তাহলে মিস আজই চলে যাবো। কেউ তো বিশ্বাসই করে না----।
- না না না। মিস। যেও না যেও না প্লিজ। আমি তোমাকে যেতে দিবো না কোথাও--। একদম না।
-ওলে বাবা লে। আমার লক্ষী দীপুসোনা। তুমি রুমে যাও। মিস এক্ষুণি রুমে এসে তোমাকে চেইঞ্জ করিয়ে দিচ্ছি--। কেমন??
-ওকে মিস---।
দীপ্ত তামান্নাকে ছেড়ে ছুটতে ছুটতে নিজের রুমের দিকে চলে গেল। তামান্নাও হেসে রান্নাটা শেষ করে রুমে এলো। এসে দেখলো দীপ্তি হাত মুখ ধুয়ে লক্ষী মেয়ের মতো খাটে বসে আছে। তামান্নাকে দেখে মুখ বাঁকালো দীপ্তি। সেটা দেখে তামান্না হেসে ফেললো। তামান্না দীপ্তির জুতোর ফিতে খুলে স্কুল ড্রেসটা খুলে বাসায় পড়ার একটা ফ্রক পড়িয়ে দিচ্ছে আর দীপ্তির রাগ করা মায়াবী মুখটা দেখছে।
-এই যে? কেউ কি আমার সাথে কথা বলবে না?
------------------------------
-নক নক---। কেউ কি আছেন?
-আমি কারো সাথে কথা বলবো না।
-ওমা! কেন?
-এতো দেরি করে কেন এসেছে? আমি একটা কথা বলতে চাইছিলাম তখন থেকে। কেউ আমার কথাটা শোনেই না।
-ইশ! কার এতো বড় সাহস বলো তো? আমার দীপু মামণির কথা শোনে না? কে বলো তো? ধরে আনি--।
-হুহ---। নিজে করে এখন আবার এসব বলে----।
-বলো এখন?
-নাহ! এখন খিদে লেগেছে। পরে বলবো---।
-ইশ! চলো চলো? মিস তোমার জন্য পাস্তা করেছি--। খাবে চলো?
-ইয়েএএএএএ।৷ কি মজা! পাস্তা!!
-হ্যাঁ তো বাবা! মজা। চলো??
-মিস?? কোলে কোলে??
-আচ্ছা এসো----।
দীপ্তি এক লাফে তামান্নার কোলে চড়ে খিলখিল করে হেসে উঠলো। তামান্নাও হাসছে দীপ্তির হাসিটা দেখে। এই বাচ্চা মেয়েটা কি করে যে ওর এতো আপন হয়ে গেছে সেটাই ভেবে পায় না তামান্না। কখনো ওর কাছ থেকে দূরে চলে যেতে হলে কি হবে কে জানে!
বিকেলে দীপ্তিকে খাইয়ে দিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিয়েছে তামান্না। দীপ্তি একেবারে তামান্নার বুকের মধ্যে সেঁধিয়ে এসে দুনিয়ার কথা বলছে। আর তামান্নাও শুনছে মগ্ন হয়ে। হঠাৎ কি মনে হতে তামান্নার বুকের উপর থুতনি রেখে দীপ্তি তামান্নার মুখের তাকালো। মেয়েটার হুট করে এমন ছটফটানি দেখে তামান্নাও একটু অবাক হলো।
-কি হলো দীপু?
-উফফ। তুমি তো আমার আসল কথাটাই শুনছো না মিস--।
-কি কথা? বলো মিসকে??
-আজকে স্কুলে কি হয়েছে জানো?
-কি?
-আজকে ওই যে ছবির মেয়েটা এসেছিলো স্কুলে। টিফিন টাইমে আমি তো টিফিন ফিনিশ করে গ্রাউন্ডে গেছি খেলতে--। তখন এসেছিল--। একদম চুপিচুপি এসেছে---।
-কোন ছবির মেয়ে??
-ওই যে? বাবাইয়ের কাছে আছে না? সুন্দর টুকটুকে মেয়ে বউটার ছবি--। মিস তুমিও ওর মতো করে টুকটুকে লাল বউ হয়ে সাজবে? আর আমাকে ও সাজিয়ে দিবে? আমরা একসাথে অনেএএএএএককগুলো ছবি তুলবো---।
-আচ্ছা দীম্মাকে বলে তোমাকে সাজিয়ে দিবো টুকটুকে বউ। এখন বলো তো। মেয়েটা কিছু বলেছে তোমাকে?
-উমমম। বলা যাবে না তো। সিক্রেট।
-মিসকেও বলা যাবে না?
-উমমম----।
-থাক বলো না। মিসকে বলতে হবে কেন??
-ও মিস? শোনো না? তোমাকে বলছি। তুমি কিন্তু কাউকে বলো না। কেমন? প্রমিস?
-ওকে বাচ্চা। প্রমিস।
-মেয়েটা জানো কি সুন্দর! একদম তোমার মতো দেখতে লাগছিলো ওকে। আমাকে কতোক্ষণ ধরে ধরে দেখেছে, আদর করেছে, চকলেট দিয়েছে কত্তোগুলো----।
-নিয়েছ তুমি?
-হুম। চকলেট তো আমার ফেভারেট--। কেউ দেয় না। আমি নিবো না?
-তুমি তো আন্টিটাকে চিনো না বাবু। এভাবে অচেনা কারো থেকে কিছু নিতে হয় না বাচ্চা। যদি ছেলে ধরা হয়? তোমাকে যদি চুরি করে নিয়ে যায়? মিস তোমাকে কোথায় খুঁজে পাবে তখন?
-আমি তো এটা ভাবি নি। এখন চকলেট কি করবো? কেউ তো আমাকে দেয় না এনে---।
-দেবে বাবু৷ বাবাই এনে দিবে, দিম্মা এনে দিবে, মিস এনে দিবো। কেমন?
-ইয়েএএএএ। আমি অনেকগুলো চকলেট খাবো৷ কি মজা!?
-কিন্তু দীপু? ওই আন্টিটার থেকে আর চকলেট নিবে না। কেমন? মনে থাকবে? আর কালকে দেখা হলে চকলেটগুলো ফিরত দিবে। ওকে?
-উমমমম। আচ্ছা মিস।
-আর কি বলেছে??
-জিজ্ঞেস করেছে আমি দীপু কিনা। অনেকগুলো আদর করেছে--। জানো কি ভালো আন্টিটা--। বলেছে----। আমি যেন ওকে মামনি বলে ডাকি---।
কথাটা বলতে বলতেই দীপ্তি তামান্নার বুকেই ঘুমিয়ে গেল। তামান্না অবাক হয়ে বেশ অনেকক্ষণ নড়তেও পারলো না। কে এসেছিল দীপ্তির কাছে? আর তাকে মামনিই বলতে বলবে কেন? দীপ্তির গায়ে একটা চাদর টেনে দিয়ে একটু জড়িয়ে নিলো চাদরে তামান্না। কথাটা ফালেহা চৌধুরীকে জানানো উচিত কিনা সেটাই ভাবছে তামান্না। হঠাৎ তামান্নার ভাবনায় ছেদ পড়লো দরজার সামনে থেকে কেউ সরে গেছে টের পেয়ে। কাউকে দেখতে না পেলেও মনে হলো কেউ এতোক্ষণ ধরে দীপ্তির আর ওর কথাগুলো শুনেছে। কিন্তু কে হতে পারে?