ঢেকে রাখে যেমন কুসুম,
পাপড়ির আবডালে ফসলের ধুম
ডেকে রাখে যেমন কুসুম
পাপড়ির আবঢালে ফসলের ধুম।
তেমনি তোমার নিবিড় চলা ও
তেমনি তোমার নিবিড় চলা
মরণের মন পথ ধরে
আমার ভেতরও বাহিরে অন্তরে অন্তরে
আছো তুমি হৃদয় জুড়ে
আমার ভেতরও বাহিরে অন্তরে অন্তরে
আছো তুমি হৃদয় জুড়ে।
তুমি হৃদয় জুড়ে।
আমার ভেতরও বাহিরে
অন্তরে অন্তরে আছো
তুমি হৃদয় জুড়ে।
ভাল আছি ভাল থেকো,
আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখ
দিও তোমার মালাখানি
ও দিও তোমার মালখানি
বাউলের এই মনটারে।
আমার ভিতরও বাহিরে
অন্তরে অন্তরে আছো
তুমি হৃদয় জুড়ে।
আমার ভিতরও বাহিরে
অন্তরে অন্তরে আছো
তুমি হৃদয় জুড়ে।
গানটি ল্যাপটপে বাজতেছে। গানটির সাথে বার বার ভেসে উঠচ্ছে ইউসুফের সাথে কাটানো সেই স্মৃতি গুলো স্ক্রিনের মাঝে। ইউসুফ কুহুর স্মৃতি না থাকার সময় প্রতিটি মুহূর্তর ছবি তুলে রেখেছিল।তাই এড করে তার নিজের কন্ঠের গানের সাথে মিলিয়ে সেট করেছে।তাই শুনে যাচ্ছে কুহু জালানার পাশে দাড়িয়ে বাহিরের দিক তাকিয়ে,
আজ পাঁচটা বছর চলছে..! ইউসুফকে সে দেখে না কই আছে জানে না। কেমন আছে তাউ জানা নেই তার। সেদিন ইউসুফের দাদু শুধু এতটুকু বলেছিল ইউসুফ দেশ ছেড়েছে। এতেই ভেঙ্গে পরে কুহু। মনে পরতে থাকে হাজারটা স্মৃতি, কাটানো সময়, ঘুমন্ত ইউসুফের মুখ খানি। কুহুর চোখ পানি। পাঁচটি বছর কিভাবে কেঁটেছে শুধু কুহুই জানে। সত্যি ইউসুফ তার কথা রেখেছে চলে গেছে সে। কিন্তু..! কুহুর মন, শান্তি, সুখ সব নিয়ে গেছে।
---এখন বুঝতে পারচ্ছি ভালবাসায় কষ্ট এত কেন হয়? কেন সময় থাকতে বুঝতে পারিনি আমি আপনাকে ইউসুফ? খুব পুরাচ্ছে এই মন। আপনাকে দিয়া হাজারটা কষ্ট আমার মনকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।আর কখন কি দেখা মিলবে না? আর কত? এবার তো ফিরে আসুন?
এসব বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল কুহু। তখনি রুমে ঢুকলেন জবেদা হাতে তার শাড়ি। কুহু মাকে দেখে চোখের জল লুকালো। হাসি মুখে জবেদা বলল,
---নে মা পড়ে নে জলদি। তারা চলে এলো বলে!
কুহু ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করলো,,
---কারা আসবে মা? আর আমি কেন শাড়ি পরবো? পরবো না শাড়ি!
---তুই ভুলে গেলি? কাল রাতে তুই না রাজি হলি? তারা যে দেখতো আসবে!
---ওহো! আচ্ছা হচ্ছি।ভাবলেশহীন উত্তর করলো কুহু।
জবেদা যেতেই, শাড়িটিতে হাত বুলিয়ে বলতে লাগে কুহু,
---আপনার সাজে সাঁজতে চেয়েছিলাম কিন্তু তা হয়তো আর হবার নয়। মা-বাবার কসমের কাছে হেরে গেছি। তাইতো সাজতে যাচ্ছি অন্য কারো নতুন সাজে। হয়তো সত্যি আপনি আমার ভাগ্যে নেই...!
________________
পাত্র পক্ষের সামনে বসে আছে কুহু। একটি বারো মাথা তুলে তাকায়নি সে। যা যা জিগেস করছে উত্তর দিচ্ছে। তখনি একটি ছেলে বলে উঠে,
--মা আমার পছন্দ হয়েছে।
ছেলের কন্ঠটি পরিচিত মনে হতেই চোখ তুলে তাকিয়ে বড় বড় চোখ করে বিড়বিড় করে বলল,,
---আশিক!
আর এদিকে আশিক কুহুকে তাকাতে দেখে চোখ টিপ দিয়ে বাঁকা হাসলো।
_______________
কুহু আর আশিককে আলাদা কথা বলতে দেয়া হলো।
----কেন বিয়ে করতে চাইছেন?
---ভালবাসি বলে..!
কুহু অবাক চোখে তাকিয়ে বলল,,
---কি যা তা বলছেন?
---যাতা না কুহু আমি তোমাকে খুব ভালবাসি। কুহুর হাত দুটো ধরে বলে উঠলো।
কুহু হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,,
---আমি আপনাকে ভালবাসি না। আর না বাসবো। আমি শুধু ইউসুফকে ভালবাসি।
বলতেই আশিকের রাগ উঠে গেল। সাথে সাথে মুখ টিপে ধরে। দাঁতে দাঁত চেঁপে বলল,,
---চুপ..! আর একবার যেন আর ওর নাম না শুনি...! এখন তুমি আমার বাগদত্তা। আমার কথা ভাববে শুধু।পরপুরুষের কথা ভাবা তোমার জন্য পাপ। আর ইউসুফকে ভাবা মহাপাপ। আমার থেকেই হবে শুরু আমাতেই শেষ। আন্ডারস্ট্যান্ড।
বলে ধাক্কা দিয়ে চলে গেল। কুহু সেখানেই থম মেরে বসে পরল। চোখ দিয়ে গড় গড় করে পানি পড়তে লাগলো তার। এ কেমন রূপ আশিকের? আগে তো এমন কিছু দেখেনি এর মাঝে।
______________
সকালে ঘুমের মাঝে কল আসে কুহুর। বিছানা হাতরিয়ে ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে খুশিতে গদ গদ হয়ে বলে উঠলো তানিয়া।
---দোস্ত কই তুই? কখন বের হবি?আমি খুব এক্সাইটেড..! জানিস খুশির ঠেলায় ঘুমাইতে পারি নাই। আমার বর টাকেও ঘুমাইতে দেই নাই। সারা রাত চিন্তা করছি কি পিনমু? কেমনে সাজমু। রিইউনিয়নের জন্য।
কুহু ছোট করে উত্তর দিল,
---হুম।
---তুই রেডি হোস নাই? আচ্ছা এক কাজ করি আমি তোর বাসায় এসে পরি রেডি হয়ে একবারে যাবো।
---আচ্ছা আয়।
কুহু ফোন রেখে দিল। আজ ভার্সিটির ৬৩ বছর পূর্তি অনুষ্ঠান তাই সকল ব্যাচের স্টুডেন্টরা ইনভাইটেড। কিন্তু কুহুর বিন্দু মাত্র ইচ্ছে নেই যাওয়ার।সেখানে গেলে মন যে আরো পুড়বে সেই ব্যক্তিটির জন্য কিন্তু যেতে হচ্ছে অশিকের জন্য।ছোট শ্বাস ফললো এসব ভেবে তারপর রেডি হতে চলে গেল সে।
________________
ভার্সিটিতে পা রাখতেই একে একে ঝেঁকে বসচ্ছে সকল স্মৃতি ইউসুফকে ঘিরে। চোখে জল আটকানো যেন মুশকিল হচ্ছে তার। ভার্সিটির শেষ প্রান্তে সেই বটগাছটিতে বসে কান্না করছে কুহু। তখনি ভেসে এলো একটি কন্ঠের সুর। সাথে ধক করে উঠলো মন। মনে পরে গেল কিছু স্মৃতি।দৌড়ে চলে গেল সেদিকে।
স্টেজের উপর একদল ব্যান্ডের দল বাদ্যযন্ত্র বাজাতে ব্যস্ত। তার সামনেই মাথায় হেট পরে নিচে তাকিয়ে গান গাইছে, কুহুর সেই পরিচিত মুখ।যা দেখে থমকে গেছে কুহু। হাত পা নারাতে পারচ্ছে না সে। যেন অসাড় হয়ে আসচ্ছে শরীর এই বুঝি ঢলে পরবে সে। কিন্তু কুহু নিজেকে সামলে সেই ব্যক্তিটির দিক এগুতেই এক জোড়ারা হাত বাধ সাধে। সেদিকে তাকাতেই দেখতে পেল আশিকের লাল চোখ। কুহু চোখে জল ছেড়ে বলতে লাগে তখন,,
---যেতে দেন প্লীজ!
আশিক কুহুর হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল দূরের কক্ষে আর দেয়ালের সাথে চেপে ধরে বলতে লাগে,,
---খবরদার যদি ওর কাছে যাওয়ার ট্রাই করো? সত্যি বলচ্ছি এবার আর ছাড়চ্ছি না। জানে মেরে দিবো।
কুহু অবাক চোখে আশিকের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আশিক কুহুর কানের কাছে হিসহিস করে বলে উঠলো,
---জুবাইদের কথা মনে আছে কুহু? সে আমার ছোট ভাই ছিল। বুঝতেই পারচ্ছো আমি কি বুঝাতে চাইছি?? যদি ইউসুফের কাছে ফিরে যাও তাহলে এবার প্রাণ পাখিটা আর হয়তো থাকবে না তার।
—————
কুহু চুপ করে এক পাশে দাড়িয়ে চোখের শান্তি করছে।কুহুর ঠিক সামনেই ইউসুফ বসে গল্প করছে তার বন্ধুদের সাথে। আজ কতবছর পর এই লোকটিকে সামনে থেকে দেখচ্ছে সে।আগের থেকে একটু মোটা আর বডি সডি বানিয়েছে। চুল গুলো বড় করেছে। সুন্দর গালে দাড়ি রেখেছে সুন্দর কাটিং করে। সব মিলিয়ে আগে থেকে আকর্ষিত বেশী লাগচ্ছে তাকে।
এর মাঝে কুহু এ ও লক্ষ করেছে কুহুর দিক বার কয়েক তাকিয়েছে ইউসুফ। কিন্তু কোনো ভাবান্তর নেই তার মাঝে। কুহুকে আর বাকি সব কটা মানুষের মতোই দেখচ্ছে নয়তো ইগনোর করছে।তখন কুহুর মনে একটি কথা সাড়া দিল।
---সে কি আমায় ভুলে গেছে?
কথাটি মনে হতে বুক চিড়ে প্রাণ পাখিটা বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম। সাথে সাথে চোখে পানি গুলো দলা পাকিয়ে রেডি এই বুঝি টুপ করে পরবে বলে।
কুহু আর দাড়িয়ে থাককে না পেরে। ওয়াশরুমের দিক পা বাড়ায় তখনি আশিক এসে হাজির।
--কই যাওয়া হচ্ছে?
--ওয়াশরুমে যাচ্ছি। এখানেও যেতে পারমিশন লাগবে আপনার?? দাঁত কিড়মিড় করে বলল কুহু।
আর দাড়ালো না কুহৃ ওয়াশরুমে গিয়ে হাউ মাউ করে কেঁদে দিল কুহু।
_____________
অনুষ্ঠান প্রায় শেষের দিকে। তানিয়েও চলে গেছে। কুহু যেতে পারছে না আশিকের জন্য। আশিক কুহু হাত চেপে বন্ধুদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে তাকে, যে সে আমার বউ।
কথার মাঝে বার কয়েক কুহুর হাত চুমু খাচ্ছে। যা কুহুর বিরক্তির বড় কারণ। কুহু মনে মনে গালি ছাড়লো। আর বিড়বিড় করে বলল,,
---চিপকু পোলা..!
না চাইতেও সহ্য করছে তাকে আফটার অল হবু বড় সে, হক আছে তার। যত সব ফালতু।
দূর থেকে এসব তীর্যক নজরে লক্ষ করে যাচ্ছে কেউ। যা কুহু খেয়ালী করছে না। করলে হয়তো দেখতে পেত কেউ তাকে চোখ দিয়ে ভস্ম করে দিচ্ছে।
যা দেখে আশিক ঠিক খেয়াল করছো আর খুব ইনজয় করে যাচ্ছে। এক পর্যায় সে কুহুর কোমরে চেপে ধরতেই কুহু বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আশিকের দিক। নিজেকে ছাড়াতে চেষ্টা করতেই আরো খানিকটা চেপে ধরলো। এতে সামনে থাকা ইউসুফের মাথা রগ দাড়িয়ে গেল। বিলাই চোখ গুলো রক্ত ধারন করলো।
তখনি আশিক অপ্রত্যাশিত এক কাজ করে বসলো। সকলের সামনে কুহুকে গালে চুমু খেয়ে বসলো। আশিকের এহেন কাজে কুহুর চোখ বেড়িয়ে আসার উপক্রম। সে কিছু বলবে, তার আগেই ঝড়ের বেগে কেউ এসে পান্চ মারলো আশিকের মুখ বরাবর। সাথে ছিটকে পরে গেল সে। সব কিছু এত তাড়াতাড়ি হয়ে গেল যে কুহু সহ বাকিরা থ। তখনি ইউসুফ চেচিয়ে বলে উঠে,,,
---কুত্তা★ তোর সাহস কতো? তুই আমার বাবুইপাখিকে টাচ করিস? বলে বেধড়ক মারতে লাগলো।
আশিকের নাক মুখ ফেঁটে রক্ত পড়তে লাগলো। কুহুসহ বাকি সব ছাড়াতে ব্যস্ত। কুহু ইউসুফকে ধাক্কাতে লাগলো।
---ইউসুফ কি করছেন? ছাড়ুন মরে যাবে সে। ছাড়ুন বলছি।
এবার ইউসুফ কুহুর দিক চোখ রাঙ্গিয়ে তাকাতেই পিছিয়ে গেল কুহু। তখন আশিককে ছেড়ে কুহুর বাহু চেপে ধরে বলতে লাগে,,
--কেন ছাড়বো ওকে? কে সে? তোমাকেই কেন এভাবে টাচ করবে? এতো সাহস কে দিল তাকে??
ইউসুফের এমন ভাবে চেপে ধরাতে ব্যথায় কুকিয়ে উঠে কুহু।ছল ছল চোখে নিজেকে ছাড়ার বৃথা চেষ্টা করতে করতে বলল,,
--আমাকে ছাড়ুন ইউসুফ। আমার ব্যথা লাগচ্ছে।
---এতটুকু ব্যথা কেঁধে ভাসাচ্ছো? আমার আমার যে ব্যথা হচ্ছে আজ কত বছর। সে হিসেব কে দিবে শুনি? আর কি হে আশিকের সাথে কি তোমার?
---ও আমার হবু বর। মাথা নিচু করে কাঁপা কাঁপা করে বলে উঠলো কুহু।
তা শুনে ছেড়ে দিল ইউসুফ। মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো তার। তখনি মাটি থেকে উঠে নাক মুখের রক্ত মুচ্ছে কুহুর হাত ধরে ইউসুফের দিক তাকিয়ে বাঁকা হেসে বলে উঠলো আশিক,
--চল বউ লেট হচ্ছে আমাদের। মা-বাবা টেনশন করছে।
বলে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো কুহুকে আশিক। কুহু পিছনে ফিরে তাকিয়ে ছল ছল চোখে ইউসুফের দিক। যে এই মুহূর্তে চোয়াল শক্ত করে লাল চক্ষু নিয়ে তাকিয়ে।
_____________
গাড়ি ড্রাইভ করছে ইউসুফ। মাথা তখনকার কথা গুলো ভন ভন করে ঘুড়চ্ছে। আশিক ভাল দান খেলেছে বুঝতে বাকি নেই তার। পাঁচ বছর আগে সেই ব্লেকমেলিং, ডাক্তারকে খুন করে ইঞ্জেকশন গায়েব করা সব কিছুর পিছনে আশিক। জুবাইদের মৃত্যু প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে সে। এমন কি ইউসুফের এক্সিডেন্ট করিয়ে ছিল সে। সবাই ভেবেছিল মরেই যাবে ভাগ্যের জোরে বেঁচে ফিরেছে সে।সুস্থ হতে এতো সময় লেগে গেছিল তার। ভেবে ছিল আজকের দিন চমকে দিবে কুহুকে কিন্তু সে নিজেই চমকে গেছে। কিন্তু কিভাবে এসব হলো লোক লাগানো ছিল কুহু আশাপাশে ২৪ ঘন্টা। তার নিজের ঘরেই চোর।আর কুহু ওতো আমায় ভালবাসে এ পাঁচটি বছরে আমার খোঁজ করে নি এমন দিন কমি আছে। দাদুর কাছে কারণ দাদুকে সেই বলেছিল কুহুকে বলতে ইউসুফ দেশ ছেড়েছে। সে তো কুহুর মনে তার জন্য ভালবাসা তৈরি করতে চাইছিল। হলো তাই। তাহলে সে রাজি কিভাবে হয়ে গেল??এসব কিছু পিছনে নির্ঘাত কোনো কারসাজি আছে। সব বের করতে হবে তার।মাথা ফেঁটে যাচ্ছে রাগে। কুহু কষে দুটো থাপর দিতে ইচ্ছে করছে। এই মাইয়া এমন কেন? তার ফিলিংস গুলো সব সময় লুকায় কেন?আগে এরেই ধরবে পরে সব কিছু...!
_______________
রুমে বিছানর উপর গুটি শুটি মরে বসে কুহু ফুঁপিয়ে কাঁদচ্ছে। যার জন্য এত বছর ওয়েট কররো সে সামনে থাকতেও তাকে জড়িয়ে ধরতে বলতে পারলনা সে """ভালবাসি ইউসুফ ""
---এখন বলে দেও!
চমকে গেল কুহু পিছনে ফিরতে ১৮০ বোল্ডের শক্ড খেল। ইউসুফ পাশের সোফায় পা তুলে বসে, হাতে তার ছুড়ি। যা দেখে শুকনঁ ঢুক গিলে বলে উঠলো,,
---আপনি?
--এখনো ভয় পাও?
কুহু কিছু বলল না। ইউসুফ কুহু কাছে এসে গোল করে বসে পড়লো তার সামনে। কুহু ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে আছে।ইউসুফ কুহু ভয়ার্ত মুখটি চাকুর সাহয্য উপরে তুলে বলল,,
---আশিক জানি কই চুমু দিচ্ছিল? এখানে তাই না? (বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে স্লাইড করতে করতে বলল)
কুহুর ভয়ে কাঁপতে শুরু করে দিল। তখনি কুহুকে অবাক করে দিয়ে আশিক যেখানে চুমু খেয়েছিল সেখানেই কামোড় দিয়ে বসলো ইউসুফ।বেচারি কুহু হতভম্ব হয় গেল। তখনি ইউসুফ কুহুর কানের কাছে ফিসফিস করে বলে উঠলো,,
---কিভাবে ভাবলে! কায়নাত আমার বাবুইপাখিকে অন্যকারো হতে দিবো? বলে টুপ করে একটি চুমু খেল কানের মাঝে। আবার বলল,,
--তোমার সাথে অনেক বোঝা পড়া আছে আমার যা তুলে রাখলাম আপাদত। খুব তাড়াতাড়ি ঝাল তুুলবো তার।
বলেই বাম হাতটা তুলে সেখান থেকে আশিকের পড়িয়ে দেয়া রিংটি খুলে নিয়ে চলে গেল।কুহু এতখন যেন দম আটকে বসে ছিল। ইউসুফ যেতেই দম নিলো বড় করে। আর ইউসুফের যাওয়ার দিক ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। মনের মাঝে হাজারো প্রশ্ন ছিল কুহুর যা সে করতে চেয়েছিল কিন্তু পারলো না ব্যর্থ সে। বরাবরের মতো এবারো ব্যর্থ সে..!
কুহুর ভাবনার সুতা কাঁটে ফোনের টোনে। হাতে নিতেই দেখলো আশিকের কল। রিসিভ করতেই চেঁচিয়ে উঠলো ওপাশ থেকে আশিক।
--তোমার সাহস কত আমার উড বি হয়ে এখন ইউসুফের গা ঢলাঢলি করার। মানা করেছিলাম না! এবার দেখ কি হয় তার। আগের বার পা দুটো গেছিল এবার সে নিজেই দুনিয়া ছাড়বে।
বলে ফোন কাঁট করতে নিবে তখনি কুহু কান্না জড়িত কন্ঠে বলল,,
---প্লীজ এমন করবেন না। আমি আর যাবো না তার কাছে।
---আমি বিশ্বাস কিভাবে করি? তখনও এ কথা বলেছিলি বাট করলি তাই আবার।
---আমি সত্যি বলছি আর যাবো না তার কাছে।
---আচ্ছা এক শর্তে (বাঁকা হেসে)
---বিয়ে করতে হবে আমায়! তাও এখনি এই মুহূর্তে।
কুহুর মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। কি বলবে সো বুঝতেই পারছে না। তখনি আশিকের কন্ঠ শুনা গেল।
---কি হলো শর্তে রাজি? নাকি তোমার সাইকো আশিকের গাড়িতে যে বোম লাগিয়েছি তার রিমোট আমার হাতে এক চাপ দিলেই ভুম।
আত্মকে উঠলো কুহু।
--আপনি এতটা নিচ আগে জানা ছিল না আমার।
--এখন তো যেন গেছ বেবি? সো গেট রেডি।
______________
মধ্যরাতে নিজ ঘরে লাল টুকটুকে শাড়ি পরে বসে আছে কুহু। কিছুক্ষণ পর কাজি এসে ঢুকলো। কুহুর শক্ত হয়ে বসে আছে। কবুল বলার পরপরি
বাহির থেকে শুনা গেল গুলির শব্দ। চিৎকার চেঁচামেচি হচ্ছে খুব।কুহুকে রেখে জবেদা বাহিরে গেলেন।বাহির থেকে গুলির শব্দ আবার হতেই কুহু বের হয় গেল সাথে সাথে। সেখানেই থমকে গেল সে। সাদা পাঞ্জাবি রক্ত লাল হয়ে গেছে ইউসুফের। নাক মুখেও রক্ত।
ইউসুফ মাটিতে হাটু গেরে বসে। কুহুকে দেখে মুচকি হেসে বলে উঠলো,,
---বাবুইপাখি বড্ড ভালবাসি তোমায়। শেষ পর্যন্ত তোমার আর আমার নাম জুড়েই গেল। কিন্তু দূর্ভাগ্য এক হতে পারলাম না আমরা।তো কি হয়েছে পরকালে তোমার জন্য অপেক্ষা করবো। কাঁপা কাপা কন্ঠে বলতে লাগে ইউসুফ।।
কুহু যেন সেখানেই জমে গেছে। ইউসুফের দিক অপলক তাকিয়ে আছে। আজি বিয়ে হলো আর আজি তার শেষ দিন। তাকে যে কত কিছু বলার ছিল। বলতে চেয়েছিল তার কোলে মাথা রেখে ভালবাসি। সেই আগের দিন গুলোর মতো বাঁচতে চেয়েছিল তাকে নিয়ে এভাবে শেষ হয়ে গেল সব। ইউসুফ তখনো আধ আধ চেয়ে, ভাঙ্গা গলায় বলে উঠে,, বাবুইপাখি আমি মারা যাচ্ছি। আমাকে একটি বার জড়িয়ে বলবে ভালবাসি!
কুহু আর সইতে পারলো না চলে গেল ইউসুফের দিক এতখনের মৌনতা ভেঙ্গে কান্না করে উঠলো সে। ইউসুফের মাথাটা কোলে নিয়ে বার বার বলতে লাগে ভালবাসি ইউসুফ।
তখনি হাত টান পরে কুহুর সামনে তাকাতেই বলে উঠে আশিক,,
---এবার আর কোনো কাঁটা নেই তোমার আমার মাঝে। চল। আমি জিতে গেছি আর তুই হেরেগেছিস ইউসুফ।
বলে টানতে লাগলো। কুহুর হাত তখনো ইউসুফ ধরে। তখন ইউসুফের হাত গুলি করলো আশিক। সাথে হাত ছুটে গেল। আর ইউসুপের চোখ জুড়া বন্ধ হয়ে গেল। তা দেখে কুহু আশিকের গুলি নিয়ে নিজেকে শুট করে দেয়। আর ইউসুফের সামনে ঢলে পরে।আর ইউসুফের হাতটি শক্ত করে ধরে হেসে হেসে বলে উঠলো,,
---তোমার আমার দেখা হবে ওপারে।
তা দেখে চিৎকার করে উঠে জবেদা তারেক। আর ইউসুপের দাদু।তাদের ধরে আছে আশিকের লোকেরা। আশিক সেখানেই সটান দাড়িয়ে। সে তো কুহুকে নিজের করে পেতে চাইছিল। এভাবে কি হয়ে গেল?
তখনি পিছন থেকে আরেকটি গুলির শব্দ হতেই লুটিয়ে পড়ল আশিক। পিছন ফিরে শুধু অস্পষ্ট স্বরে বলল,,
---মা।
এদিকে আশিকের মা বন্দুক ফেলে মুখে আঁচল দিয়ে কান্না জুড়ে দিল।পুড়ো বাড়ি জুড়ে শুরু হলো মরা কান্না।আর বলে উঠল,,
---পাপ কাউকে ছাড়ে না।
সেদিন তিনটি জীবনের সেখানেই ইতি টানে।কারো পাপে তো কারো তাপে। কারো ভালবাসার তো আর কারো প্রতিশোধের।
***(সমাপ্ত)***