আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

মায়াবতী (পর্ব ১৯)


৩৭!! 

গত দুদিন ধরে মায়ার প্রত্যেকটা মুভমেন্ট অবজার্ভ করছে রাহাত। সকালে ঘুম ভাঙতেই রাহাতের আগেই বিছানা ছেড়ে উঠে যায় মেয়েটা। নাস্তা বানায়, খাওয়া হলে দুপুরের রান্না জোগাড়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। লাঞ্চ শেষ হলে একটু ঘুমায়, আবার উঠে রান্না--। এসবই চলছে গত দুদিন ধরে। রাহাত অনেক চেষ্টা করলেও মায়া দু-একটার বেশি জবাবও দেয় না। এই যে যেমন এখন। ঘড়িতে আটটা বাজে। দুজনেই খেয়ে নিয়েছে। আর মায়া অপর পাশে মুখ করে শুয়ে আছে। রাহাত এতো করে ডাকছে, কাছে টানছে কিছুরই জবাব দিচ্ছে না মেয়েটা। অথচ ওর কেঁপে কেঁপে ওঠা দেখে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে মেয়েটা জেগে আছে, আর কাঁদছে। রাহাত শক্ত করে মায়ার হাতটা টেনে নিজের দিকে ফিরালো।

-কেন করছ এমন? নিজেও কষ্ট পাচ্ছো আমাকেও কষ্ট দিচ্ছ! কেন মায়া? আবার কি নতুন করে শুরু করা যায় না সবটা?

-------------------------------

-আমি কি এতোটাই খারাপ মায়া? মানছি আমি সত্যিই ভিষণ খারাপ। তবুও একটা সুযোগ কি দেয়া যায় না?

-আবার কিসের সুযোগ চাও তুমি? হ্যাঁ? কিসের? আরেকবার ধোঁকা দেয়ার? সুযোগ তো ভাইয়ার বিয়ের সময়েও দিয়েছিলাম--। কিন্তু তুমি কি করলে? আবার সেই---।

-মায়া? কেন বিশ্বাস করছো না? ওটা আগের ঘটনা---। তুমি যেদিন সকালে বাড়ি থেকে চলে এসেছিলে---।

-বাহ! তার পরদিন থেকেই নাকি খুঁজতে শুরু করে দিয়েছিলে! তা কি যেন নাম মেয়েটার? ও হ্যাঁ--লিজা। কি এমন বুঝিয়েছে একরাতে তোমাকে! যে আমার প্রতি এতোটা দয়া উতলে উঠলো মনে? কি করেছিল? 

-মায়া? কি সব বলছ? তুমি যা ভাবছ তার কিছুই ঘটেনি সেদিন--। ইভেন বিয়ের পর অন্য কারো সাথেই ইন্টিমেট করি নি আমি----।

-ওয়াও! আচ্ছা বিয়ের আগে কি করেছ সে সব নাহয় বাদ দিলাম। কিন্তু ৫০০০০ টাকা দেয়ার পর, একটা মেয়ে অতো রাতে তোমার ফার্মহাউজের বিছানায় থাকার পরও তুমি তার সাথে ফিজিক্যালি ইনভলভড হও নি! এটা বুঝাতে চাইছো আমাকে?

-মায়া? একবার অন্তত বিশ্বাস করো?

-টাকাটা তুমি লিজাকে দাও নি রাহাত?

-দিয়েছি--। ওর টাকাটা খুব দরকার ছিল---।

-বাহ! একটা মেয়ের প্রয়োজনের এত বড় সুযোগ নিতে একটুও বাঁধলো না তোমার?

-মায়াবতী? প্লিজ ট্রাস্ট মি----।

-কেন চলে যাচ্ছো না তুমি আমার সামনে থেকে! আর কি চাই তোমার? মেরে ফেলতে চাও আমাকে? মেরেই ফেলো-। তবু প্লিজ মুক্তি দাও।

রাহাত উঠে বসে মায়ার মুখটা দু হাতে তুলে দিলো। 

-তুমি চাও আমি চলে যাই এখান থেকে?

-হ্যাঁ---।

-এখনই?

-------হুম---। এখনই---। 

-ঠিক আছে। আসছি--। সরি।  আসছি না। চলে যাচ্ছি মায়াবতী--। আর আসবো না জ্বালাতে-।

রাহাত বিছানা ছেড়ে নেমেই গাড়িতে গিয়ে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলো ফুল স্পিডে। মায়াকে আর ভুলেও কষ্ট দিবে না সে। তার জন্য ওর নিজের কিছু একটা করে ফেলতে হলেও----।

বেশ অনেকক্ষণ কাঁদার পর মায়ার হুঁশ হলো। রাহাত কি সত্যি সত্যি চলে গেছে? ওকে এভাবে একলা ফেলেই? মায়ার আবার ভিষণ কান্না পেল। তখন যে কি হয়েছিল বুঝতেই পারছে না মায়া। প্রচন্ড কান্না পাচ্ছিলো হঠাৎ করেই। আর রাহাতের কথাগুলো শুনে আরো মাথা খারাপ হচ্ছিল। রাহাতকে তো মাফ করতে চাইছেই ও। ভালোবাসে যে লোকটাকে ভিষণ। তবু সেদিনের প্রত্যেকটা শব্দ ওর কানের কাছে রেকর্ডারের মতো বেজেই যাচ্ছে কয়দিন ধরে। কিছুতেই ভুলতে পারছে না মায়া এসব। তবু লোকটাকে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে মায়ার। ভিষণ শক্ত করে বুকে লুকিয়ে বলতে ইচ্ছে করছে, আর কখনো এমন করলে একেবারে খুন করে ফেলবো--। 

আর কিছু না ভেবেই কোনমতে পার্সটা নিয়ে দরজায় তালা দিয়ে টলমলে পায়ের রাস্তার দিকে বেরিয়ে এলো মায়া। বেশ অনেকটা পথ হাঁটার পর গলাটা একেবারে শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে মায়ার৷ বড় জোর আধা ঘণ্টা হাঁটছে। তবু মনে হচ্ছে কয়েক যুগ ধরে এই রাস্তায় চলছে। তার উপরে একেবারে নিস্তব্ধ রাস্তা। মাঝে মাঝে ব্যাঙ বা ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক শোনা যাচ্ছে। একেবারে হাড় হিম করা পরিবেশ। তবু মায়ার ইচ্ছে করছে এই ধূলিভরা রাস্তায় শুয়ে পড়তে। মনে প্রাণে চাইছে রাহাতের কাছে একছুটে চলে যেতে। অথচ শরীর এক পা ও সামনে বাড়ার সায় দিচ্ছে না। এসব ভাবতে ভাবতেই পিছন থেকে কারো গানের গলা পাচ্ছে মায়া।

-"চুমকি চলেছে একা পথে
সঙ্গী হলে দোষ কি তাতে!
রাগ কোরোনা সুন্দরী গো
রাগলে তোমায় লাগে আরো ভালো
চুমকি চলেছে একা পথে

সঙ্গী হলে দোষ কি তাতে!
রাগ কোরোনা সুন্দরী গো
রাগলে তোমায় লাগে আরো ভালো
ও ও ও সুন্দরী চলেছে একা পথেএএএ...

মুখেতে গালি, মিঠা মিঠা হেয়ালি,

যত খুশি গালাগালি করোওওওও
লাগে ভালো...
মুখেতে গালি, মিঠা মিঠা হেয়ালি,
যত খুশি গালাগালি করোওওওও
লাগে ভালো...

আমাকে পাশে নিয়ে চলোনা
মিষ্টি করে তুমি বলোনা
তোমাকে যে আমি ভালোবাসিইইই হৈ হৈ হৈ

চুমকি চলেছে একা পথে
সঙ্গী হলে দোষ কি তাতে!
হার মেনেছে দিনের আলো
রাগলে তোমায় লাগে আরো ভালো ও ও ও ও
সুন্দরী চলেছে একা পথে...

ও টাঙ্গেওয়ালি, হাত করো খালি
চাবুক রেখে আমার হাত ধরোওওও
সেই ভালো...
ও টাঙ্গেওয়ালি, হাত করো খালি
চাবুক রেখে আমার হাত ধরোওওও
সেই ভালো...
একা একা এই পথ চোলোনা
আর কারো নজরে পোরোনা
তাহলে যে মরে যাবো আমিইইই
হৈ হৈ হৈ...
চুমকি চলেছে একা পথে
সঙ্গী হলে দোষ কি তাতে!
হার মেনেছে দিনের আলো
রাগলে তোমায় লাগে আরো ভালো ও ও ও ও
চুমকি চলেছে একা পথে
সঙ্গী হলে দোষ কি তাতে!
হার মেনেছে দিনের আলো
রাগলে তোমায় লাগে আরো ভালো ও ও ও ও
সুন্দরী চলেছে একা পথেএএএ..."

ভিষণ বিশ্রি কণ্ঠে গান গাইছে কয়েকটা লোক। তার সাথে খিলখিল করে হাসছে। হাসিটা শুনেই মায়ার আত্মা কেঁপে উঠার অবস্থা। হাঁটার গতি বেশ বাড়িয়ে দেওয়ার পর মায়া টের পেল লোকগুলোও ধুপধাপ পা ফেলে ওর দিকে ছুটে আসছে। বড় রাস্তায় উঠে যাওয়ার পরও লোকগুলো যেন আরো গতি বাড়িয়েছে। সামনে থেকে একটা গাড়ি এসে রাস্তা বন্ধ করে দেয়ায় মায়ার দাঁড়িয়ে যেতে হলো। আর লোকগুলোও ততক্ষণে মায়ার নাগাল পেয়ে গেছে৷ পিছন থেকে ঘিরে ফেলছে ৩- ৪ টা ২৬ কি ২৭ বছরের ছেলে। মায়া কি করবে ভেবে না পেয়ে চোখ বুজে ফেললো। লোকগুলোর কাছে আসাও টের পেল। কিন্তু এর পরে কারোর গলার শব্দে চমকে গেল মায়া।

-আমার মায়াবতীর দিকে বাজে নজরে তাকানো! খুন করে ফেলবো এক একটাকে---। ওর দিকে কোন সাহসে হাত বাড়ালি---?

মায়া চোখ খুলতেই দেখলো রাহাত দুটো ছেলেকে ধরে থাপড়াচ্ছে। আর রেগে লাল হয়ে গেছে চোখ জোড়া। মায়া আর কিছু না ভেবেই এক ছুটে রাহাতকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। রাহাত একটু চমকে উঠতেই ছেলেগুলো পালিয়ে গেল। রাহাত মায়ার হাত টেনে মায়াকে সামনে আনলো। তারপর চোখের পানি মুছে দিয়ে কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো। 

-সরি মায়াবতী--। তুমি চলে যেতে বলায় ভিষণ কষ্ট হচ্ছিল--। তাই চলে এসেছিলাম--। পরে খেয়াল হলো তুমি তো বাড়িতে একা---। তাই ফিরে যাচ্ছিলাম--। সরি? আর তুমিই বা এতো রাতে বের হলে কেন?

-------------------------------

-মায়াবতী? প্লিজ মাফ করে দাও না? জাস্ট লাস্ট টাইম--। আর কখনো কোন অভিযোগ করতে দিবো না গো পাগলি---।

-------------------------------

-মাফ করবে না পরী? প্লিজ? এই শেষ বারের মতো? কথা বলো না একটু? এই?

-রাহাত?

কথা বলতো বলতে রাহাত মায়ার থেকে সরে যাচ্ছিল। কখন রাস্তার মাঝে চলে এসেছে। মায়া তাকাতেই দেখলো সামনে থেকে আরেকটা গাড়ি আসছে। ঠিক রাহাতের দিকে। বেশ স্পিডেই। যদিও অনেকটাই দূরে তখনো৷ তবু মায়া এক ছুটে রাহাতকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল। কিন্তু নিজে সামলাতে না পেরে রাস্তার আইলাইনের উপরে ঢলে পড়লো মায়া নিজেই।

৩৮!! 

রাহাত এই মুহূর্তে বসে আছে মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে। কি করে মায়াকে নিয়ে এই হসপিটাল পর্যন্ত এসেছে রাহাত নিজেও তা জানে না। মাইক্রো বাসটা রাহাতের দিকে তেড়ে আসায় মায়া রাহাতকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলেও নিজে টাল সামলাতে না পেরে পড়ে যায়। তাও একেবারে রাস্তার আইলানের উপরে মাথাটা বেশ জোরে ধাক্কা লাগে মায়ার। রক্ত পড়তে থাকে কপালের বাম দিকটা থেকে। হসপিটালও বেশ অনেকটা দূর এগিয়ে পেয়েছে রাহাত। ততক্ষণে হাতের রুমাল দিয়ে মায়ার মাথাটা চেপে ধরে থাকলেও বেশ অনেকটাই রক্ত বেরিয়ে গেছে। ডাক্তাররাও জরুরিভাবে চিকিৎসার ব্যবস্থা করছে। ড্রেসিং করে দেয়ার পরও তেমন সুবিধা না বুঝে মায়াকে এ্যাম্বুলেন্সে করে পাঠানোর ব্যবস্থা হচ্ছে। রাহাত ফ্যালফ্যাল করে সব দেখছে। কি করবে কি বলবো কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। 

এ্যাম্বুলেন্সেও মায়ার হাতটা ধরে ঠায় বসে ছিল রাহাত। গাড়িটা সিলেটে হাসপাতালের সামনে পড়ে আছে। ঢামেকে নেয়ার পর পরই ডাক্তাররা তড়িঘড়ি করে চিকিৎসা শুরু করে দিলো। ঘন্টাখানেক পর অপারেশন থিয়েটার থেকে ডাক্তার বের হচ্ছে দেখে রাহাতের হুঁশ ফিরলো। ডাক্তারের দিকে এগিয়ে গেল রাহাত কাঁপা পায়ে। কি শুনতে হতে পারে সেটা ভেবেই বুকটা মুচড়ে উঠছে বারবার। তবু ডাক্তারের হাসি মুখটা দেখে একটু ভরসা পাচ্ছে কেন জানি। 

-মিস্টার রাহাত? রাইট? ইউর ওয়াইফ ইজ আউট অফ ডেন্জার নাউ--।

-মায়ার সাথে দেখা করা যাবে ডক্টর প্লিজ?

-উনাকে কেবিনে দেয়া হবে একটু পর--। তারপর যাবেন--। আর হ্যাঁ--। বেশ কিছুদিন ধরে সম্ভবত খাওয়ারের অনিয়ম করেছিলেন ম্যাডাম। প্রেশার সাংঘাতিক রকমের ফল করেছে--। ব্লাডের সাথে সাথে স্যালাইনও চলছে--। ঘুমেরও দরকার উনার--৷ তাই বেশিক্ষণ থাকবেন না। প্লিজ---।

-জি ডক্টর----।

মায়াকে কেবিনে দেয়ার পর রাহাত মায়ার বিছানার পাশে গিয়ে বসলো। মাথায় ব্যান্ডেজ, হাতে স্যালইন আর ব্লাডের নল লাগানো। নিজেকে প্রচন্ড রকমের অসহায় লাগছে রাহাতের। কেন জানি মনে হচ্ছে ওর পাপের শাস্তি মেয়েটা পাচ্ছে। ডাক্তার যদিও বলছে সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই মায়া সুস্থ হয়ে যাবে। তবুও রাহাতের সবটা অসহ্য লাগছে। এভাবে মায়াকে চুপ করে থাকতে দেখে, এভাবে নিথর হয়ে শুয়ে থাকতে দেখে মোটেও ভালো লাগছে না রাহাতের। নার্স এসে জানালো আর থাকা যাবে না। রাহাত তাই মায়ার কেবিন থেকে বেরিয়ে এলো। কি করবে এখন? কি ভেবেছিল আর কি হলো! রাতে মায়ার কথায় বেরিয়ে আসলেও আবার বাড়িতে ফিরে আসছিল রাহাত৷ মেয়েটার রাগটা তো বেঠিক নয়। রাহাত অন্যায় যখন করেছে সেটার মাশুল তো দিতেই হবে৷ আর এরকম একটু আধটু কথা তে মায়া তাকে শোনাতেই পারে৷ তাই মায়ার কাছে ফিরতে ফিরতে প্ল্যানিং করছিল রাহাত৷ বাড়ি ফেরার পর কি সারপ্রাইজ দেয়া যায় এসবই প্ল্যানিং করছিল। এর মধ্যে কি থেকে কি ঘটে গেল!

রাহাত মিহানের নাম্বারে কল করে মায়ার এক্সিডেন্টের কথাটা জানালো। মিহান, মা, দিয়া আর আজীজ সাহেব সবাই আধা ঘন্টার মাঝেই হাসপাতালে পৌঁছে গেল। রাহাতের বাবা ছাড়া সবাই রাহাতকে এটা ওটা বলে শান্তনা দেয়ার চেষ্টা করতে লাগলো। আজীজ সাহেব শুধু ছেলের সাথে একটাও কথা বললেন না। ডাক্তারের চেম্বারে চলে গেলেন কথা বলতে৷ 

 আরো আধা ঘণ্টা মতো পরে মায়ার হুঁশ ফিরলো৷ সবাই একে একে দেখা করে এলো। রাহাত যাচ্ছে না দেখে মিহান টেনে রাহাতকে মায়ার মাথার কাছে বসিয়ে দিয়ে সবাইকে নিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে এলো। মায়া স্যালাইন লাগানো হাতটা রাহাতের হাতের উপরে রাখলো।

-মায়া? আম সরি--। 

-সরি কেন বলছ? আর এমন কাঁদছ কেন? রাহাত? এই?

-আমার জন্য তোমার যদি কিছু হয়ে যেত!

-ভয় পেয়ে গেছ? ভেবেছ মরে টরে যাই কিনা--?

-মায়া?

-আরে? আমি তো এমনি বললাম--। মরে গেলে সত্যি সত্যি বিয়ে করো মিষ্টি একটা মেয়ে দেখে-। কেমন?

-মাইর দিবো ধরে--। আজাইরা কথা বলো কেন সবসময়?

-- আমার এই অবস্থায়ও তুমি মারবে আমাকে?

-এই না না--। সরি মায়াবতী? সরি সরি---?

-হি হি---। এখন যাও তো। বাসায় যাও--। ফ্রেশ হয়ে খেয়ে তারপর এসো--। সারা রাত এভাবে কাটিয়েছো? রক্ত টক্ত গায়ে লেগে আছে---। ছি--। 

-যত নাটকই করো তোমাকে রেখে এক পা ও নড়ছি না আমি---।

-এখন তো হসপিটালে আমি-। তার উপরে এই অবস্থা--। কোথাও চলে যাবো না--। নিশ্চিন্তে যাও--।

-মায়া?

-যাও না? শাওয়ার নিবা--। খাবা। আমার জন্য মায়ের কলাপাতা রঙা জামদানি শাড়িটা নিয়ে আসবা আসার সময়। হসপিটালের ড্রেস পড়বো না--। শাড়ি পড়বো---।

-উঠতে পারবে না সে নাকি শাড়ি পড়বে----।

-তুমি পড়িয়ে দিও প্লিজ? যাও না এখন---। উফ---।

-মায়া? কি হয়েছে? খারাপ লাগছে? ডাক্তারকে ডাকবো?

-এতো কথা বলাচ্ছো তুমি--। আমার কথা শুনছই না। জানো না রোগীর কথা শুনতে হয়?

-আচ্ছা বাবা-। যাচ্ছি---। 

মায়ার আলতো করে মায়ার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে বেরিয়ে এলো রুম থেকে। মায়ার মাকে মায়ার কেবিনে রেখে বাসায় ফিরলো রাহাত। মিহান দিয়াও রাহাতের সাথে বাড়িতে ফিরলো। মায়ার জন্য রান্না করে দিবে রাহাতের কাছে। রাহাতের অনেক অনুরোধের পর মিহানরাও রাহাতদের বাড়িতে উঠেছে। সিলেট থেকে আসার সময় ড্রাইভার উনাদেরকে রাহাতদের বাড়িতেই নিয়ে গিয়েছে। এই দুদিন মিহান, দিয়া আর মা তাই ওখানেই থাকছে।

বাসায় এসে রাহাত তড়িঘড়ি করে শাওয়ার নিলো। টিশার্টটায় মায়ার রক্ত লেগে আছে। সেটা ধুয়ে শুকাতে দিয়ে রেডি হয়ে নিলো রাহাত৷ তারপর মায়ার জন্য শাড়িটা নিতে আলমারি খুললো। অনেকক্ষণ খোঁজাখুঁজির পরে শাড়িটা পেল রাহাত৷ শাড়িটা নিতেই আরেকটা শাড়িও নিচে পড়ে গেল। শাড়িটা তুলেই হা হয়ে গেল রাহাত। সিলভার কালারের সুতোর কাজ জর্জেটের একটা শাড়ি। এই শাড়িটা মায়ার আলমারিতে কি করে এলো কিছুই বুঝলো না রাহাত। শাড়িটার কথা মনে হতেই কয়েকটা হার্ট বিট যেন মিস হয়ে গেল রাহাতের। এই শাড়িটা তো সেই মেয়েটার পড়নে ছিল সে দিন রাতে। মেয়েটাকে খুঁজতে খুঁজতে কত না বাজে পরিস্থিতিতে জড়িয়ে গেছে রাহাত! আর সেই শাড়ি মায়ার কাছে! কি করে! শাড়িটা আরেকটু ভালো করে দেখতেই রাহাতের চোখ পড়লো শাড়ির আঁচলের দিকে খানিকটা ছেঁড়া অংশের দিকে। সেদিন রাতে কি ঘটেছিল! আর শাড়িটাই বা ছিঁড়লো কি করে! কিছুই মাথায় আসছে না রাহাতের।

শাড়িটা দলা পাকিয়ে আলমারিতে রাখবে এমন সময় শক্ত কিছুতে হাত ঠেকলো রাহাতের। জিনিসটা বের করে চমকে উঠলো রাহাত৷ নীল রঙা একটা ডায়েরি। ডায়েরিটার প্রথম পেইজটা উল্টাতেই রাহাত আর মায়ার বিয়ের একটা ছবি। রাহাত আলতো করে ছবিটা ছুঁয়ে দিয়ে ডায়েরিটা নিয়ে খাটে বসে পড়লো। ডায়েরিটায় অনেক লেখা আছে। মায়া ডায়েরিতে কি এতো লিখেছে ভিষণ জানতে ইচ্ছে করছে রাহাতের।

প্রথম পেইজে মায়ার বাবা মারা যাওয়ার পর ঢাকায় আসার ঘটনা। তারপর রাহাতের বাবার সাথে পরিচয়, রাহাতের পি.এ হওয়ার ঘটনা, জুলি, দ্বীপ, রাহাতের প্রপোজ সব একে একে লেখা। রাহাত মায়ার লেখাগুলো পড়ে কখনো হাসছে, কখনো অবাক হচ্ছে। একটা পেইজে গিয়ে থমকে গেল রাহাত। বছর খানেক আগের ডেইট দেয়া পেইজটায়। লেখাগুলো কয়েকবার পড়লো রাহাত। পড়ে থমকে রইলো। 

"জানো? তোমার প্রজেক্টের কাজটা এতোদিন পর নতুন করে শুরু করবে শুনে ভিষণ খুশি লাগছিলো। বাবাকেও রাজি করিয়েছি প্রজেক্টে ফাইনান্স করার জন্য-। সবই ঠিক ছিল। কিন্তু ঝামেলা হলো জুলিকে নিয়ে। ওই মেয়েটা কেন তোমার প্রজেক্টে কাজ করবে? ভিষণ খারাপ লেগেছিল জানো? বড্ড রাগ হয়েছিল তোমার উপরেও। তুমি কি জানো না মেয়েটা কতো খারাপ? ও শুধু তোমার সম্পত্তির লোভে তোমাকে কাছে টানে। বুঝো না কেন তুমি? 

ইদানিং বিজনেস পার্টি, ক্লাব, প্রজেক্ট এসব নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেছ ভিষণ৷ তাতে আমার কোন আপত্তি নেই। কিন্তু সেখানেও এই মেয়েটা কেন?

ওই মেয়েটা আমাকে কল করেছিল রাতে। তুমি নাকি ওর সাথে রাত কাটাবা। শুনেই মাথাটা পুরো ব্ল্যাঙ্ক হয়ে গেছে জানো? ড্রাইভার চাচা যখন তোমাকে ছাড়াই ফিরলো তখন নিজেকে আরো বেশি অসহায় লাগছিলো। বারবার মনে হচ্ছিল তোমার মুখে না শুনে কিছুতেই বিশ্বাস করবো না। তাই তো এতো রাতেও ড্রাইভারকে নিয়ে জুলির ফ্ল্যাটে ছুটে গিয়েছিলাম৷ মেয়েটাও নির্লজ্জের মতো দরজা খুলে দিয়ে দেখালো তুমি বিছানায় শুয়ে আছো--। তখন ইচ্ছে করছিল মেয়েটাকে খুন করে ফেলি। তুমি শুধু আমার। তোমার ভাগ আমি কাউকে দিবো না। মেরে ফেলবো একদম। "

এতোটুকু পড়েই রাহাতের সারা শরীরটা যেন কাঁপানি দিয়ে উঠলো। এতো সব হয়েছিল! কখন! আর মায়াই বা কোন দিনের কথা বলছে! কিছুই মনে নেই রাহাতের। পরে কি হলো পড়ার জন্য পেইজটা উল্টালো রাহাত। কি হয়েছে সেটা জানা তার অনেক জরুরি।
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।