আমার একটাই যে তুই - পর্ব ১৭ - সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি - ধারাবাহিক গল্প


কুহু চোখে জল টুকু মুছে নেয়। পা বাড়ায় তিথির রুমের দিক। সেখানে তার ব্যাগ ফালিয়ে এসেছে। ভাগ্যিস সে হিজাব পড়ে এসেছিল। তার সাথে দুটো মাস্ক লাগানো।বুঝতে পারবে না কেউ! কুহু ধীরে পায়ে রুমে ঢুকতেই ইউসুফ,  তার মা, আর সেই পিচ্চিটিকে দেখতে পায়। তা দেখেই কষ্টে বুক ফেঁটে যাচ্ছে! তাও নিজেকে সামলে তিথির দিক তাকালো।  তিথি অসহায় ভাবে তাকিয়ে বলল,,

--" ও আমার বান্ধবী  কায়া!ও ডাক্তার। আমাকে দেখতে এসেছে!"

সবার দৃষ্টি এখন কুহুর দিক। এতে কুহুর খানিকটা ভয় ভয় করছে। তাও নিজেকে স্বাভাবিক রাখার ট্রাই করছে। সকলের দিক এক পলক তাকিয়ে কন্ঠ মোটা  করে বলল,,

--" আসসালামু আলাইকুম! "

সবাই কুহুর দিকে তাকিয়ে সালামের উত্তর দিল। নানান কথা বলল, জিগ্যেস করলো। এদিকে ভয়ে হাত পা কাপা-কাপি শুরু তার। কথার মাঝে আড় চোখে বার কয়েক ইউসুফকে লক্ষ করেছে সে। ইউসুফ নির্বিকার ভাবে তাকিয়ে ছিল কুহুর দিক। তার চাহনিতে বুক ধড়াস ধড়াস শব্দ করছে। বেশ কিছুক্ষণ কথা বলার পর কুহু চলে যায়। নিজের রুমে এসে দরজা আটকিয়ে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে থাকে সে। যেন বাঘের গুহা থেকে বেড়িয়ে এসেছে। সাথে সাথে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানায়।

এভাবে কেটে গেল ১০ দিন। তাদের যাওয়ার সময় ঘনিয়ে আসচ্ছে। এর মাঝে অনেক আজিব ঘটনাও ঘটেছে কুহুর সাথে। ইউসুফের সাথে কয়েক দফা দেখা হয়েছে গেছে। কিন্তু তা কাকতলীয় ভাবে নাকি ইচ্ছে করে বুঝে পায় না কুহু। মাঝে মাঝে মনে হয়েছে ইউসুফ বুঝে গেছে।  কিন্তু তার কথা বার্তায় তেমন কিছু প্রকাশ পায় নি। এই তো সেদিনের কথা চর কালিবাড়িতে ক্যাম্পিংয়ের আয়োজন করা হয়। সেখাই হুট করে উপস্থিত হয় এমপি সাহেব। কুহু তখন অন্য পেশেন্ট দেখছিল। পিছনে মুড়তেই ইউসুফকে দেখে হকচকিয়ে গেল। নিজেকে সামলে হালকা হাসার ট্রাই করে মোটা কন্ঠে বলে,

--" আপনি!"

ইউসুফ বাঁকা হাসলো। কুহুর খটকা লাগলো। ইউসুফ সে হাসি বহাল রেখে পাশের বেডে শুয়ে পড়লো। কুহু বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে রইলো। তা দেখে আবার হেসে দিল ইউসুফ। বাঁকা হাসি ঠোঁটে রেখে বলে উঠলো,,

--" ডাক্তার সাহেবা রোগী হয়ে এসেছি! চেকাপ করবেন না আমায়?"

কুহু কি বলবে বুঝলো না আমতা আমতা করে বলল,,

--" ক..কি সমস্যা হচ্ছে বলুন?"

ইউসুফ হেসে ফেললো। বলল,,

--" অনেক রোগ ডাক্তার সাহেবা! রাতে ঘুমাতে পাড়ছি না, খেতে পাড়ছি না, কাজে মন দিতে পাড়ছি না।পাগল পাগল লাগে হয়তো সত্যি পাগল হয়ে যাবো বেশী দিন বাকি নেই। কি করি বলুন তো?"

কুহু এবারো হতবাক হয়ে গেল।  আদ কি এমপি সাহেবের কোনো রোগ হয়েছে? তাও বলল,,

--"আ..আচ্ছা , আচ্ছা আমি দেখচ্ছি!"

বলে স্টেথোস্কোপ দু মাথা  কানে পুরে গোলমতো বস্তুটি দিয়ে এমপি সাহবের দিক ঝুকে তার  বুকে, পিঠে লাগিয়ে হৃদস্পন্দন শোনতে লাগে।এতে খুব অস্বস্তি লাগছে তার। ইউসুফের বুকে ডিপ ডিপ যেমন কানে লেগে মনে গিয়ে গিথে তার বুকেও হৃদছন্দ হচ্ছে।ঠিক তেমনি ইউসুফের নিশ্বাস কুহুর মুখে বাড়ি খেতেই কেঁপে উঠছে কুহু।এক পলক ইউসুফের দিক তাকাতেই বুঝতে পারে সামনের ব্যক্তিটি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিক। তখনি নজর ফিরিয়ে নিলো কুহু। তা দেখে ইউসুফ বলল,,

--"কি ইন্টারেস্টিং ব্যাপার ডাক্তার সাহেবা! আপনার চোখ গুলোর দিক তাকালো খুব পরিচিত কেউ মনে হয়।কেন?"

এমন কথায় কুহু চমকে গেল। সাথে সাথে চোখ নামিয়ে সরে এলো। ইউসুফ হাসলো। ব্লাড প্রেসার মাপতে গেল।  ইউসুফের হাতে তার স্পর্শ  লাগতেই ইউসুফ আবার বলল,,

--" ডাক্তার সাহেবা  আপনার স্পর্শও আমার কাছে খুব পরিচিত লাগচ্ছে?কেন?"

বলে হাসলো। এদিকে কুহু নার্ভাস  হয়ে গেল। হাত পা কাঁপতে লাগলো। কঁপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জড় হচ্ছে! ইউসুফ বাঁকা হেসে বললো,,

--" ডাক্তার সাহেবা! আপনি এভাবে কাঁপচ্ছেন কেন? আর ইউ ওকে??"

কুহু শুকনো ঢোক গিললো।  কাঁপা কন্ঠে বলল,,

--" হে হে আ..আমি ঠিক আছি!"

বলে চলে যেতে নেয়ে তখনি ইউসুফ কুহুকে হেচকা টান মেরে তার কাছে নিয়ে আসে। কুহু ভয়ে চোখ-মুখ খিঁচে বন্ধ করে আছে! ইউসুফ কুহুর কানের কাছে এসে কিছুটা স্মেল নেয়ার মতো ভাব করে  ফিসফিস করে বলল,,

--" কি আশ্চর্য!  আপনার শরীরের মাতাল করা স্মেলটাও খুব পরিচিত। "

কুহু সাথে চোখ খুলে ভয়ে তাকায় ইউসুফের দিক। বুঝে ফেললো নাতো সে কে? তা দেখে ইউসুফ ছেড়ে দেয় কুহুকে। কুহু  ভয়ে জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে! ইউসুফ তখন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,,

-- "আপনি ভয় কেন পাচ্ছেন ডাক্তার সাহেবা?আমি তো এমনটা বলি নি যে সেই পরিচিত ব্যক্তিটি আপনি!"

কুহু  এতক্ষণ নিচে তাকিয়ে ছিল। ইউসুফের কথায় চকিতে তাকালো। ইউসুফকে তার দিক তাকিয়ে থাকতে দেখে আর দাঁড়ালো না দৌঁড়ে বাহিরে চলে গেল। তা দেখে রহস্যময় হাসি হাসলো ইউসুফ।

এভাবে আরো দুটো দিন কেঁটে গেল। একদিন বিকেলে ডাঃ জয়ীতা আর ডাঃ প্রিজম এসে বলল,,

--" কায়া ইউ নো হোয়াট? ময়মনসিংহে নাকি প্রতিবছর বাণিজ্য মেলা হয়। তা অ্যারেঞ্জ করে ময়মনসিংহের মেয়র! আর আমাদেরকে তারা ফ্রী এন্ট্রি  দিচ্ছে। এই দেখ পাশ। আজকে সবাই যাচ্ছি। তুমিও চলো। তাড়াতাড়ি রেডি হও?"

--"জয়ী মেম! আমার শরীরটা ভাল না আপনারা যান আর ইনজয় করুন! "

জয়ীতা নাছোড়  বান্দা।  সে বললো,,

--"তুমি না গেলে আমরাও যাবো না। প্ল্যান ক্যানসেল। "

মুখ ভার করে বসে রইলো জয়ীতা। তা দেখে প্রিজম মুখ গম্ভীর করে হুকুমের সুরে বলল,,

--" কায়া! আমার ওয়াফি মন খারাপ করে আছে তোমার জন্য। তাই তোমার  মারকস আমি কাটবো। যদি তা না চাও তাহলে রেডি হয়! এখনি!"

এমন কথা শুনে কুহু যেন আকাশ থেকে পড়ল। অসহায় ভাবে বলল,,

--" আচ্ছা!"

কুহু রেডি হতে গেল। পিছন থেকে প্রিজম আর জয়ীতা হাসতে লাগলো কুহুকে ভয় দেখিয়ে।

মেলার গেটে আসতেই বড় করে পোষ্টারে মেয়র রাহুলের নাম দেখে চোখ ছল ছল করে উঠলো। রাহুল ভাই তার কতটা চেন্জ  হয়েছে। মুটু হয়েছে। কিন্তু সুন্দর লাগচ্ছে।

একে একে সবাই ভিতরে ঢুকে গেল।  কুহু পিছনে পড়ে গেল। সে ভিতরে ঢুকতেই পিছন থেতে কেউ তার ওরণা ধরে টান দিলো।ঘাবড়ে গেল কুহু।  পিছন থেকে ভেসে আসলো তখন কারো কন্ঠ।

--"আরে ডাক্তার সাহেবা যে!"

কুহু চোখ বড় বড় করে সামনের দিক তাকিয়ে রইলো। ভয় করছে তার। আজ সে হিজাব পড়ে নি। পড়ে নি বললে ভুল হবে! জয়ীতা পড়তে দেয়নি! এখন কি হবে ভেবেই হাতে থাকা মাস্কটা তাড়াতাড়ি মুখে দিয়ে দিলো।  ইউসুফ পিছন থেকে সামনে আসতেই গোল গোল করে তাকিয়ে রইলো তার দিক! তা দেখে ইউসুফ বলল,,

--" হোয়াট ইজ প্লেজেন্ট সারপ্রাইজ!  আপনি এখানে? "

কুহু সংকোচিত কন্ঠে বলল,,

--" ঘুরতে এসেছি! "

ইউসুফ তখন খপ করে তার হাত ধরে ফেললো শক্ত করে! বাঁকা হেসে বলল,,

--" তো চলুন ঘুরিয়ে দেখাই!"

কুহু হাত ছুটাতে ছুটাতে বলল,,

--" না না আপনার কষ্ট করতে হবে না। আ..আমি বাকিদের সাথে এসেছি! তাদের সাথে ঘুরবো!"

ইউসুফ আরো শক্ত করে ধরে কাছে টেনে এনে বলল,,

--" তা কি করে হয় বলুন আপনি আমার স্পেশাল গেস্ট। তিথির বান্ধবী বলে কথা। স্পেশাল সার্ভিস আপনার জন্য চলুন।"

কুহু এবার কেঁদে দেয়ার উপক্রম।  নির্ঘাত ইউসুপ তার সত্য যেনে গেছে। তাই এসব করছে। যেভাবেই হোক ময়মনসিংহ ত্যাগ করতে হবে।নয়তো সত্য তার কঁপালে শনি আছে। এভেবেই শুকনো ঢুক গিললো সে। তার পর কাঁদ কাঁদ কন্ঠে বলল,,

--"আমার স্পেশাল সার্ভিস লাগবেনা।  প্লীজ যেতে দিন!"

বলতেই ছেড়ে দিলো ইউসুফ। কুহু অবাক হয়ে চেয়ে রইলো কিছুক্ষণ তার দিক।ইউসুফ নিচের দিক তাকিয়ে আছে। তাকে দেখে কিছুই বুঝা যাচ্ছে না। কুহু চলে গেল। ইউসুফ চোখ মুখ শক্ত করে হাসলো। হাত দুটো মুঠ করে কুহু যাওয়ার দিক তাকিয়ে সে!

সেদিন হোস্টেলে ফিরে কুহু প্রচুর কাঁদে। ভালবাসার মানুষটিকে কাছে পেয়ে আপন করতে পারছে না সে। তার উপর তার দিন রাত এভাবে টর্চার করা আর সহ্য করতে পারছে না সে। এখন যত সম্ভব এ শহর ত্যাগ করবে সে।পরের দিন হাসপাতাল থেকে বের হতেই কুহুর মনে হলো কেউ এক জন পিছু নিয়েছে তার। শুধু আজ বলে না। বেশ কদিন এমন ফিলিংস হচ্ছে তার মনে হচ্ছে কেউ তার উপর নজর রাখছে।  মাঝে মাঝে মনের ভুল ভাবলেও ইদানিং স্ট্রং ফিলিং হচ্ছে।কুহু বার পিছনে তাকিয়ে কাউকে দেখতে না পেয়ে আবার সামনের দিক হাটা দেয়। তখনি কেউ  মুখ চেপে ধরে কুহুর। তারপর আর কিছু মনে নেই।যখন চোখ খুলে তখন নিজেকে অন্ধকার  একটি রুমে হাত-পা বাঁধা অবস্থায়  নিজেকে আবিষ্কার করে। ছুটাবার বৃথা চেষ্টা করছে পারছে না। ভয়ে ফুঁপিয়ে উঠছে সে।কথা বলার ট্রাই করেও পারছে না কথা বলতে মুখে কসটেপ লাগানো তার।তখনি সটান করে গেট খুলে যায়। বাহির থেকে আলোর প্রতিফলিত হয়। কুহু সেই আলোতে সামনের ব্যক্তিটিকে দেখে রুহু কেঁপে উঠে তার। গলা শুকিয়ে কাঠ। 

—————

ঘরটি ঘুট ঘুটে অন্ধকার।  বাহিরে স্টেডিয়াম লাইটের আলো বৃথা চেষ্টা করছে অন্ধকার গুঁজে  দেয়ার।কিন্তু ব্যর্থ। সামনের লোকটি হাসচ্ছে। এই অন্ধকারের মৃদু আলোতে তার বিদঘুটে হাসি দেখে গা জ্বলছে কুহুর। তাও ভয় ভয় তাকিয়ে আছে। লোকটি দু কদম এগিয়ে এলো। ডান পা দিয়ে একটি চেয়ার টেনে বসে চুটকি বাঁজাতেই ঘর আলোকিত হয়ে গেল। কুহুর দিক মুচকি হেসে বলল,,

--" কেমন আছো কুহু?সারপ্রাইজ কেমন লাগলো?"

কুহু কাঠ কাঠ গলায় বলল,,

--" অতি জঘন্য!  ঠিক আপনার মতো ডায়মন্ড ভাই! আমাকে তুলে এনেছেন কেন?"

ডায়মন্ড  এবার হো হো করে হেসে দিলো! কুহু বিরক্তি চোখে চেয়ে রইলো। ডর ভয়ের চ্যাপ্টার ক্লোজ হয়ে রাগের চ্যাপ্টার খুলে গেছে তার। ডায়মন্ড  বলল,,

--"কুহু তুমি আগের মতোই আছো। সেই আগের তেজ। আই লাইক ইট!"

কুহু জবাব দিলো না। তার এ মুহূর্তে এই লোকটির মুখে এক দলা থুতু মারতে ইচ্ছে করছে । না না ঠিক থুতু না। ওটা ওল্ড ফ্যাশন হয়ে  গেছে। এক দলা কাশি  মারতে পাড়লে ভাল হতো! সত্যি কি দিবে সে?  কিন্তু এখন তো কাশ আসচ্ছে না! গলা খাঁকারি দিলে আসলে আসতেও পারে? তার ভাবনার মাঝে ডায়মন্ড ভ্রু কুচকে বলল,,

--" কি ভাবচ্ছো?"

কুহু দাঁত কিড়মিড় করে বলল,,

--" আপনার অধঃপাতনের কথা! কতটা নিচে নেমেছেন আপনি!"

ডায়মন্ড  হো হো করে ভিলেন মার্কা হাসি দিলো। যেন কুহু কোনো মজার গল্প বলেছে। কুহু আবার বলল,,

--" আপনি হাসবেন না তো? হাসা বন্ধ করুন! আপনার হাসিতে গা জ্বলছে আমার! যেমন আপনি দেখতে বিশ্রী তেমনি আপনার হাসিও বিশ্রী। "

 কুহুর কথায় ধপ করে জ্বলে উঠলো চোখ দুটি। মুখে গভীরতার ভাব নিয়ে বলল,,

--" তুমি খুব বেশী কথা বলছো কুহু! বেশী কথা আমি পছন্দ করি না। আই ডোন্ট লাইক ইট! তুমি কি জানো তুমি কতটা বিপদের মাঝে আছো? সেটা নিয়ে ভয় পাওয়া উচিত তোমার?"

কুহু হাসলো বিদ্রূপের হাসি! তা দেখে ছোট ছোট চোখ করে ডায়মন্ড বলল,

--" হাসছো কেন?  তোমার কি মনে হয়? আমি মজা করছি?"

কুহু বলল,,

--" মোটেও না। আমি জানি আপনি অতি মাত্রায় জঘন্য   লোক! প্রতিটি মানুষের একটি ক্লাস থাকে আপনার নাই! আপনি ক্লাসলেস!"

ডায়মন্ডের রাগ উঠে গেল। তার কালো ফেইস আরো কালো হয়ে গেল। চোখ লাল টকটকে হয়ে উঠেছে! কুহু এতে ভয় পাচ্ছে ব্যাপক ভয়! কিন্তু তা তার ফেইস দেখে বুঝা যাচ্ছে না। সে মনে মনে আয়তুল কুরসী পড়চ্ছে! ডায়মন্ড শক্ত মুখে আগ্ঙুল তুলে বললো,,

--" কুহু কিপ কোয়াইট!"

কুহু চুপ রইলো না সে বলল,,

--" যারা খারাপ, ক্লাসলেস তাদের খারাপ কথা শুনতেই হবে!  এটাই নিয়ম। আপনি খারাপ তাই শুনচ্ছে! এখানে রাগ করার অধিকার আপনার নেই! একদম না! সো এই লাল লাল চোখ দেখিয়ে আমাকে দমাতে পারবেন না। সরি!"

ডায়মন্ড আরো রেগে গেল! বলল,,

--" তুমি সত্যি আমায় ভয় পাচ্ছো না?" 

--"মোটাও না! আপনি বাঘ না ভালুক ও না যে ভয় পাবো! অাপনি অতি মাত্রায় খারাপ মানুষ।  যাকে ভয় পেলেও আল্লাহ পাপ দিবেন!"

কুহুর কথায় নিস্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ডায়মন্ড।  কুহুও তাকিয়ে।  কুহু কিছু বুঝে উঠার আগেই প্রচন্ড চড় কষলো তার গালে। কুহু এর জন্য মোটাও প্রস্তুত ছিলনা। সে হাত-পা বাঁধা অবস্থাতেই চেয়ার নিয়ে ছিটকে মেঝেতো পড়লো। ব্যথায় কুকিয়ে উঠলো কুহু। ঠোঁটের কোন ফেঁটে রক্ত গড়িয়ে পড়তে লাগলো তার।ডায়মন্ড মেঝেতে কুহুর কাছে এক হাটু ঘেরে বসে,  কুহু গালে তিন আঙ্গুল দিয়ে চেপে ধরে সহজ গলায় বলল,,

--"এক ফোঁটা শরীরে এতো সাহস? আমার সাথে তর্ক করিস? তুই জানিস আমি তোকে কি করতে পাড়ি এখন? আমাকে খারাপ বলিস? খারাপ তো কিছু দেখিসি নি! তুই জানিস? তুই এখন কই আছিস? তুই এখন পতিতাপল্লিতে আছি! ভেবে দেখ তোর সাথে এখন কি কি হতে পারে?"

কুহু বিস্মিত চোখ তাকিয়ে আছে ডায়মন্ডের দিক! সে জানতো ডায়মন্ড খারাপ এতটা তার জানা ছিল না। কুহুর এবার ভয় করতে লাগলো। ভয়ের চোটে চোখে পানি চলে এলো। ক্ষীণ স্বরে বলল,,

--" আমাকে এখানে কেন এনেছেন? কি করেছি আপনাকে আমি?" 

ডায়মন্ড উঠে দাঁড়ালো। জানালার পাশে দাঁড়িয়ে বলল,,

--"তোর কোনো দোষ নেই কুহু সব দোষ তোর দিওয়ানার!"

কুহু অবাক হয়ে গেল। ডায়মন্ড তা দেখে হেসে ফেললো। বলল,,

--"তোর ইউসুফ ভাইয়ের জন্য সব হারিয়েছি আমি! তাই তোকে তার কাছ থেকে দূরে নিয়ে এলাম। আর আজকের পর তুই তার থেকে এতো দূরেই যাবি যে ঠিকানা আমিও জানবো না।"

বলে ঘর ফাটানো হাসি দিল। কুহুর এবার ভয় করতে লাগলো। ভয়ংকর রকমের ভয়।সে বলল,,

--"এমন কেন করছেন? প্লীজ আমাকে ছেড়ে দেন!"

--" কেন করছি গুড কোশ্চেন!  কারণ আমি দুটো জিনিস চেয়েছিলাম। এক- ময়মনসিংহের মেয়র হতে।  তোর ইউসুফ ভাই তা হতে দিলো কই? সে রাহুলকে মেয়র বানিয়ে দিল! জানিস মেয়র হবার জন্য কত কি করেছি আছি? খুন পর্যন্ত করেছি! তোর বড় মামার!"

বলে তাকালো কুহুর দিক! কুহু কান্না করছে! বুক ফেঁটে যাচ্ছে তার। চোখে সামনে ভেসে উঠছে বাবা সমতুল্য মামার মুখখানি।  সে বলল,

--" মামা আপনাকে কত ভালবাসতো নিজের ছেলের মত দেখতো আর আপনি!"

ডায়মন্ড হাসলো। বলল,,

--" রাজনীতিতে সব জায়েজ! "

কুহু এবার ঘৃণা মিশ্রিত কন্ঠে বলল,, 

--" আপনি কতটা নিকৃষ্ট!  ইউসুফ ভাই জানলে জানে মেরে ফেলবে আপনাকে!"

--" তোর ইউসুফ জানে! আর ওর জন্যই আজ আমি জেল পলাতোক আসামি! "

চোখ-মুখ শক্ত করে বলল ডায়মন্ড।  কুহু বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে রইল। ডায়মন্ড আবার বলল,,

--"হে!  যেদিন তুই ভেগে ছিলি! সেদিন সে আমাকে পুলিশে দেয়! আর আদালতে রায় আসে সারা জীবনের জন্য সশ্রম কারাদণ্ড!"

--" একদম ঠিক করেছেন উনি! আমি হলে আপনাকে পাথর নিক্ষেপ করে মারার হুকুম দিতাম!"

ডায়মন্ড রেগে তেড়ে এসে কুহুর চুলের মুঠি টেনে ধরে উঠায়। কুহু  ব্যথায় "আহ" করে চোখ-মুখ খিচে বন্ধ করে নেয়। ডায়মন্ড বলে,,

--" খুব তেজ না তোর শরীরে কুহু! এটা বরাবরই আমার পছন্দ.। জানিস ২ নাম্বার টা কি চেয়েছিলাম? তুই,  তোকে চেয়েছিলাম! তোকে বিয়ে করে তোর তেজ একে বারে ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিতে! কিন্তু হলো না। "

কুহু বড় বড় চোখ করে তাকালো। তা দেখে হেসে দিল ডায়মন্ড।  কুহুর চুল ছেড়ে ঝুঁকে কুহুর মুখের দিকে ফিসফিস করে বলে,,

--" তো কি হয়েছে! তখন পাইনি! আজ তো পেয়েছি? তাই না! আজ হবি তুই আমার বেড পার্টনার। তোর সব তেজ শেষ করবে এই বেডেই। তারপর...তারপর তোকে বেঁচে দিবো বিদেশের আগ্রহকদের কাছে। জানিস বাংলাদেশী মেয়েদের অনেক চাহিদা তাদের কাছে।  খুব বেশী!"

এসব কথা শুনে কুহুর ভয়ে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গেল। নিচে আবার ছুটাতে বৃথা চেষ্টা করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে ক্রোধের সাথে বলল,,

--" আপনি কিছু করতে পারবেন না। বুঝলেন? ইউসুফ ভাই তার বাবুইপাখিকে ঠিকি বাঁচিয়ে নিবে? আপনি কেন কেউ আমার কিছু করতে পারবে না! কেউ না! আল্লাহকে এখনো ভয় করুন! নয়তো ধ্বংস হয়ে যাবেন!"

ডায়মন্ড কোনো কথায় পাত্তা দিলো না কুহুর। সে তাচ্ছিল্যের হাসি  দিয়ে রুম ত্যাগ করলো। আর পাঠিয়ে দিল কত গুলো মেয়েকে। যাদের তাতে কাপড়, জুয়েলারি আরো কতকি!  কিন্তু কুহু সেদিকে পাত্তা নেই! সে নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা চালাচ্ছে। আর তার ইউসুফ ভাইকে সরণ করছে! সে কি আসবে তার বাবুইপাখিকে বাঁচাতে?
____________________________________________

সকাল থেকে কায়াকে পাওয়া যাচ্ছে না। খবর ছড়িয়ে গেছে পুরো হসপিটাল সহ ইউসুফের কান পর্যন্ত। সাথে সাথে মাথায় যেন আগুন জ্বলে উঠে তার। তখনি থানা থেকে কল আসতে ফোন তুলে ইউসুফ।  কানের মাঝে যখনি ভেসে আসে ডায়মন্ড পালিয়েছে। তখন আর বুঝতে বাকি নেই কায়া উরফে কুহু কোথায় আছে? সে শুধু বিড়বিড় করে বলে,,

--" আমার বাবুপাখির গায়ে একটি আচ আসলে তোরে আমি ছাড়বো না। আই কিল ইউ ডায়মন্ড!  আই কিল ইউ..!"

সকাল থেকেই ময়মনসিংহ  তন্ন করে খুঁজে ফেলেছে পুলিশ।  এখন সন্ধ্যা হতে চললো। কোথাও কুহু আর ডায়মন্ডকে পাওয়া গেল না। এদিকে ইউসুফ রাগ বেরে চলেছে। সে সব ভেঙ্গে তছনছ করে ফেলছে! নিজের উপর রাগটা তার প্রকট।  যেদিন সে বুঝে গেছিল কায়া তার বাবুইপাখি কেন সেদিন তাকে তার কাছে আনলো না। সে ভেবেই রাগ দিগুন বাড়চ্ছে! একবার শুধু সে ডায়মন্ড কে পায়! মাটিতে পুতে ফেলবে সে! নয়তো টুকরো করে কুকুরের খাবার বানাবে। তখনি একটি ফোন আসলো ইউসুফ রিসিভ করে বাঁকা হাসলো।  তারপর ঠোঁট নাড়িয়ে বলল,,

--" তোমার সময় শেষ!"
____________________________________________

কুহুকে জোড় করে একটি ওয়েস্টার্ন ড্রেস পড়ানো হয়েছে।সাথে শরীরে পুস করা হয়েছে অতি তীব্র মাত্রায় ড্রাগস। কারণ কিছুক্ষন আগেই পতিতালয়ের  পুষ্প নামের একটি মেয়ে সাহায্য পালিয়ে ছিল কুহু। মেইন গেট ক্রশ করতেই কেউ একজন তার পা বরাবর ছুড়ি মেলতেই ধুম করে নিচে পড়ে যায় কুহু। পা থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে তার। নিজেকে সামলে উঠতে চেষ্টা করেও উঠতে পারে না। তখনি পিছন থেকে একটি মহিলা কর্কশ কন্ঠে বলে উঠে,,

--" এই যে সুন্দরী!  এইড্যা কইল মায়ার এলাকা। এইহান থেইকা বাহির হোন এতো সোজা না বুছো মাইয়া চলো!"

বলেই মায়া নামের  মোটাসোটা মহিলা কোমরে দুলকি দিয়ে তাকে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো।কুহু  তখন কাকুতি মিনতি ব্যথাতুর কন্ঠে বলে,,

--" আম্মা আমাকে যেতে দিন? প্লীজ যেতে দিন!"

কুহুর কথায় মহিলাটি থেমে গেল। কুহুর দিক বড় বড় চোখ করে তাকালো। কুহু মহিলাম বড় বড় মোটা মোটা কাজল কালো চোখ দেখেই ঘাবড়ে গেল।  গলা যেন শুকুয়ে কাঠ তার। শুকনো ঢুক গিলে অতি বিনয়ের সুরে বলল,,

--" আম্মা আমায় যেতে দিন প্লীজ! আমার এত বড় সর্বনাশ করবেন না! আপনার মেয়ে হলে কি এমনটা করতেন? দয়া করুন আমার উপর!"

মহিলাটি তখন তপ্ত কন্ঠে বলল,,

--" আমার মাইয়া হইলে আমি নিজেই ধান্ধায় বসাই দিতাম। আমাগো জন্য টাকাই সব বুঝছোস মাইয়া। চল এবার!"

মহিলা আর কথা শুনলো না। টেনে নিয়ে ইনজেকশন পুশ করে দিল।  তারপর থেকেই কুহু ড্রাগসের ঘোরে।

কুহু এখন একটি রুমে শুয়ে আছে দু পাশে দু হাত তার বাঁধা। চোখের সামনে সব  ঝাঁপসা। কুহু সব বুঝতে পারছে কিন্তু কিছু বলতে পারছে না। না তার শরীর নাড়াতে পারছে।চোখ দিয়ে অনর্গল পানি পড়ে যাচ্ছে। তখনি খট করে দরজা খুলে গেল রুমের। কেউ একজন প্রবেশ করলো। কিন্তু কে? চোখে ঝাঁপসা দেখায় বুঝতে পারছে না সে। লোকটি ধীরে পায় তার কাছে আসচ্ছে। কুহুর টিৎকার দিয়ে বলতে ইচ্ছে করছে,,

--"প্লীজ আমাকে ছোঁবে না! আমাকে ছেঁড়ে দিন। আমাকে যেতে দিন? ইউসুফ ভাই আপনি কই? "

কিন্তু মুখ দিয়ে একটি বাক্য বের হলো না কুহুর। লোকটি কুহুর খুব নিকটে চেলে এসেছে! কুহুর এবার কি হবে? সে কি পারবে? তার সতীত্ব রক্ষা করতে?  নাকি এখানে তার সব বিসর্জন দিয়ে। দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বেঁচে থাকতে হবে?? 

কুহু চোখ বুজে নিলো। চোখের সামনে ভেসে উঠল ইউসুফের মুখখানা। সে হাসছে। আর বলছে। বাবুইপাখি তোকে যে খুব ভালবাসি!  আই লাভ ইউ! আই লাভ ইউ লট!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন