অচেনা অতিথি - পর্ব ১৮ - নাফিসা মুনতাহা পরী - ধারাবাহিক গল্প


"তিতির আজ তোমাকে আর বাতাসি দু'জনরেই সার্কাস দেখাবো। জাষ্ট ওয়েট এ্যান্ড সী বলে একটা শয়তানি হাঁসি দিয়ে দরজার দিকে তাকালো মাহাদ। এখন শুধু বাতাসি আসার অপেক্ষা..........।"

হুম কিছুক্ষন পরে বাতাসি হানতান করে রুমের ভিতর ঢুকলো। তিতিরকে দেখেই বাতাসির মুখ ছুটলো। ঐ বেহায়া মাইয়া তুই কি লাজ-লজ্জার মাথা খাইছিস! কোন সাহসে তুই মাহাদের ঘরে আসছিস? কিছু বলিনা বলে মাথায় উঠে গেছেস তাই না! আজ তোর একদিন কি আমার একদিন।

মাহাদ এতক্ষনে রুমের দরজা বন্ধ করে দিলো। বাতাসি গলা ফাটিয়ে চিৎকার করলেও বাহিরে কোন আওয়াজ যাওয়ার চান্স নাই। 

তিতির মাথায় উঠছে না তুমি মাথায় উঠছো? তুমি বৃদ্ধ হয়ে গেছ নামায কালাম নিয়ে থাকবা। আর সেটা না করে আমাদের পিছে লাগার যে একটা চাকরি নিছো সেটা আজ বুঝলাম। দাড়োয়ান হইছো, তাই সবার পিছে না লাগলে তোমার হয়না?

ঃ-" মাহাদ তুই আমায় দাড়োয়ান বললি? এতবড় কথা তুই কইতে পারলি?"

ঃ-" আমার রুমে এসে আড়ি পেতে আছো,  তোমায় দাড়োয়ান বলবোনা তো কী বলবো? দাড়োয়ান কেন! তোমাকে তো চৌকিদার,,,,,,,,,, না না বাতাসি দফাদার বলা উচিত।
তোমার লজ্জা বলে কিছু আছে? এই বয়সে এসে নাতীর রুম পাহাড়া দাও তুমি! "

ঃ-" আমি দফাদার, চৌকিদারি, দাড়োয়ান!  এতগুলা মোরে নাম রাখলি তুই!  তাও ঐ মাইয়ার জন্য?

 বাতাসি নিজেকে সামলাতে না পেরে হঠাৎ করেই তিতির কে গিয়ে ঠাটিয়ে একটা চড় বসে দেয়। একটাতে ক্ষান্ত হয়না বাতাসি পরে আর একটা চড় বসিয়ে দিল তিতিরের গালে। কুত্তার বাচ্চা  যেদিন থেকে আমার বাড়িতে আইছোস সেদিন থেকে অঘটন ঘটায়াই চলছোস বলে তিতিরে চুলের মুঠি ধরল বাতাসি।"

ঃ-" মাহাদ কল্পনাও করতে পারেনি বাতাসি এমন একটা কান্ড করে ফেলবে। বাতাসি বলে একটা চিৎকার দেয় মাহাদ। তোমার দেখছি আস্পর্দ্ধা বেড়েই চলছে। ছাড়ো ওকে বলেই বাতাসি কে টেনে আনে তিতিরের কাছ থেকে। 
তিতির মাথা নিচু করে আছে। চোখ দিয়ে টপ টপ করে  জল পড়েই চলছে।"

ঃ-" ছাড় আমাকে ছাড়। তুই কি ভাবছোস আমার গায়ে কোন শক্তি নাই? এখনো ওকে চড়িয়েই সোজা করবো। আমার সোনার সংসার ছাড়খার করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে আর আই ওরে ছাইড়া দিমু! কক্ষনো না বুঝলি......."

ঃ-" মাহাদ বাতাসিকে ছেড়ে দিয়ে তিতিরের কাছে গেল। গাল দুটো লাল হয়ে গেছে। স্যরি তিতির আমি তোমার হ্যাসব্যান্ড হয়েও তোমার নিরাপত্তা দিতে পারিনা। 

মাহাদ তিতিরের হাত ধরতেই তিতির মাহাদের হাত সরে দিল। তারপর চোখের পানি মুছে সেখান থেকে পা বাড়াতেই মাহাদ তিতিরকে ধরে ফেললো।
মাহাদ তোমাকে আর বাতাসিরে সার্কাস দেখাতে চাইলো না! সেটা না দেখেই তুমি চলে যাচ্ছো তিতির!

ঃ-" বাতাসি খেকিয়ে উঠে বলল, " ও যেতে চাচ্ছে ওকে যেতে দিচ্ছিস না কেন? মনে তোর এত পিরিত কইত থাইকা আসে!"

মাহাদ দাঁতে দাঁত চেপে বলল, " তিতির, বাতাসি তোমার আর আমার মাঝের রুমান্টিক  সো দেখতে আসছিলো সেটা থেকে তাকে বঞ্চিত করি কিভাবে।  ও যখন আমাদের মাঝে এসেই পড়েছে তাহলে ওকে শুধু শুধু বঞ্চিত কেন করবো বলো বলেই মাহাদ এবার সরাসরি তিতিরকে এ্যাটাক করলো। 

মাহাদ তিতিরের দুই গালে দুটো কিস করতেই তিতির মাহাদকে ধাক্কা দেয় কিন্তু মাহাদ সেখানেই দাড়িয়ে থাকে। মাহাদ বরং আরো আক্রোশে তিতিরকে জড়িয়ে ধরেই পিছন দিকে দু'হাত নিয়ে গিয়ে শক্ত করে চেঁপে ধরল। তিতির তুমি না আমার কাছে আসতে চাও মাঝে মাঝে সেটা আজ পুরুন করবো আর বাতাসিকে আমাদের রুমান্টিক সো টাও দেখাবো বলেই তিতিরের দুই ঠোট নিজের ঠোটের সাথে মিলিত করলো মাহাদ।"

ঃ-" উম,,,উম,,উম বলেই তিতির সেখানেই মাহাদের সাথে ধস্তাধস্তি করতে লাগল। তিতির যতই মাহাদের কাছ থেকে নিজেকে ছুটাতে চাইলো মাহাদ ততই তিতিরকে বুকের সাথে চেপে ধরল।

 মাহাদের সাথে পেরে না উঠে একসময় তিতির নিস্তেজ হয়ে গেল। চোখ দিয়ে কয়েক ফোঁটা পানি পড়ে গেল গাল বেয়ে তিতিরের। মাহাদের সেদিকে খেয়াল নেই। ও ওর মতো কাজ করছে তৃপ্তি সহকারে।

তারপর তিতিরের ঠোট টা ছেড়ে দিয়ে মাহাদ বলল, " তুমি যত আমায় বিরক্ত করবা ততটাই আমি আগ্রাসী হয়ে যাবো। তিতির তুমি মাহাদকে এখনো বুঝে উঠতে পারোনি।  তাই চুপচাপ থাকো.........বলে মাহাদ তিতিরকে ছেড়ে দিল।

ঃ-" বাতাসি কে দেখার মত ছিল। চোখ কপালে তুলেই কান কর্তাল ফাটিয়ে চিৎকার দিয়ে উঠল......
আস্তাগফিরুল্লাহ্... নাউযুবিল্লাহ্.... তওবা তওবা তওবা বলেই নিজের গাল চাপড়ালো। ও আল্লাহ্
ও ছিকো ও খোতে আই কি দেখলাম। আরে কি দেখাইলা আল্লাহ্। এদের লজ্জা সরম বলে কিছু নাই। ঘোর কলি যুগ আইছে। কিয়ামত হতে আর দেরি নাই। মুরব্বির বাচ বিচার নাই আল্লাহ্ কি দেখাইলা।

লুচ্চার জাতের ঘরে অ্যার বাপজান আরে বিয়া দিছে। ইমতিয়াজ চেয়ারম্যান লুচ্চা আর ওর নাতীটাও লুচ্চামি করে দেখালো! 
লচুয়ার ঘরে লুচ্চা জন্মিছে..........."

ঃ-" লুচ্চার জাত তোমার বংশ বাতাসি। শুনেছি তোমার বাপজান ৩ খান বিয়ে করেছে। তাও গরিবের ঘরের সহজ সরল মেয়েদের সর্বনাশ করে। সেই একই বাপের পথ ধরে তোমার ছোট ভাই বুদুনও হেঁটেছে। বাপ করেছে ৩ আর সে ৪ টা করে এক হালি পুরুন করেছে। নেহাত বউগুলো ছোট টারে মেনে নেয়নি বলে বুদুন ছোটটারে বাসায় তুলতে পারেনি। তোমার বংশের পরিসংখ্যা মাফিক তোমার ১৪ গোষ্ঠীতে কোন পুরুষের একটা করে বউ নাই। সেই ঘরের মেয়ে তুমি কতটা ভাল হবা। আমার দাদারে সারাজিবন গালাগালি করে কাটাইলা। তোমার সৌভাগ্য ওমন কুখ্যাত বংশে দাদা গিয়ে বিয়ে করেছে আর সারা জিবন তোমায় নিয়ে বসবাস করেছে। অন্য কেউ হলে কাউয়াও তোমার মত বাতাসি কাঠালরে খাইতো না। নিমোখারাম বাতাসি কৃতঙ্গতার স্বীকার কি জিনিস সেটাও তুমি জানো না। আমার তো মনে হয় তুমিই দাদার জিবন খুরমা বানাই দিছো। দাদা যদি কোন মেয়ের কাছে যেয়েও থাকে তাহলে বেশ করেছে। তোমার অত্যাচারেই সে ওখানে গিয়েছে।"

-" বাতাসির মুখ দিয়ে আর কথা বের হয়না। নিজের পুরুষদের কুখ্যাত কথা গুলো একটা অপিরিচিত মেয়ের সামনে এভাবে যে মাহাদ বলবে সেটা বাতাসি ভাবতেই পারেনি। মাঝরাতে নিজের কার্য সিদ্ধ করতে না পেরে বাতাসি রাগে চোখমুখ লাল করে মাহাদের রুমের দরজা খুলে গট গট করে বিহিরে চলে গেলো।  এই ৮০  বছরের জিবনে   কেউ বাতাসিরে এভাবে ধুয়ে দেয়নি। তাও আবার ওর নিজের গোনা গোষ্ঠী কে তুলে। 
নিজের রুমের ভিতর বাতাসি এসে ধপ করে বসে পড়ল। 

আর নিজের নাতী হইয়া আরে এই ভাবে  অপমান করতে পারলো? সব ঐ মাইয়ার জন্য হইছে। এর ব্যবস্থা আই কাল নিমু। এই বাড়িতে ওর জন্মের মত থাকামো।

♦♦♦♦

রুমের ভিতর তিতির চুপ করে বসে আছে। মাহাদও কোন কথা বলছেনা। হয়ত তার দাদীকে এতটা আঘাত দিয়ে কথা বলা ঠিক হয়নি। কিন্তু দাদী সবার সাথে যে অত্যাচার করে তাতে সবাইকে ন্যাস্তু হাল করে ছাড়ে। কেউ যে তার কথায় কষ্ট পাবে সেটা পর্যন্ত ভেবে দেখেনা। এরে এভাবে টাইট না দিলে ও আরো বেড়ে যাবে।

ঃ-" দাদীকে ওভাবে না বললেও পারতেন। উনি হয়ত মনে খুব কষ্ট পাইছেন।"

ঃ-" মাহাদ তিতিরের কথায় বিরক্ত হয়ে বলল, " তুমি কি মাটি দিয়ে তৈরি হুম! যে তোমাকে আঘাত দেয় তার সার্পোট পর্যন্ত তুমি নিতে ছাড়োনা। এতটা ভাল হওয়া ঠিক না। প্রতিবাদ করতে শিখো।"

ঃ-" আমি যদি আর অন্য দশটা মেয়ের মত হতাম তাহলে আপনি আমার জন্য এত পাগল কখনো হতেন না। এমনকি আমার দিকে ফিরেও তাকাতেন না। "

তিতিরের কথার কোন প্রভাব পড়লো না মাহাদের উপর।মাহাদ  ওর ওয়্যারড্রপটা খুলে একটা প্যাকেট বের করে তিতিরের হাতে দিলো।

তিতির চোখ উপরে তুলে বলল, এটা কি?

ঃ-" খুলেই দেখ কী ওটা........"

ঃ-" তিতির প্যাকেটটি খুলেই দেখলো খুব দামী একটা আনড্রয়েড সেট। তিতির মাহাদের দিকে বিশ্ময়ের সাথে তাকালো।"

ঃ-" মাহাদ ভ্রু উপরে তুলে বলল, কি পছন্দ হয়নি!"

ঃ-" মাহাদ আমার এত দামী সেট দরকার ছিলোনা। আপনি কেন টাকাগুলো নষ্ট করতে গেলেন। আর দিনকাল যা খারাপ। যদি আমি বিপথে যাই এই ফোনের জন্য!"

ঃ-" বিপথে গেলে সেদিন হতে তোমার জন্য এই পৃথিবীর আলো বাতাস নিসিদ্ধ হয়ে যাবে। তাই ভুলেও বিপথে যাওয়ার চিন্তা মনে এনো না।"

ঃ-" মাহাদ আপনার সাথে ঝগড়া করবো। আপনি আমার সাথে ঝগড়া করবেন?"

তিতির যে এমন একটা কথা চট করে বলে ফেলবে সেটা মাহাদের কল্পনা অতীত ছিল। কপাল জোড়া জড়িয়ে তুলে বলল, " হঠাৎ ঝগড়া করতে মন চাইলো কেন তোমার? "

ঃ-" আমার মন চাচ্ছে প্রচুর আপনার সাথে ঝগড়া করতে। 

তিতির এবার সাথে সাথে মাহাদের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে মারলো। মাহাদ, আপনি বাবার সাথে কথা বলেন না কেন?"

ঃ-" মাহাদ গম্ভীর মুখে বলল, " আমি এ বিষয়ে কোন কথা বলতে চাচ্ছিনা। তুমি এখন তোমার রুমে  যেতে পারো। আমি ঘুমাবো......."

প্রশ্নের উত্তর না পাওয়া অবদি আমি তিতির রুম থেকে যাবোনা। তাই আপনি আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য। বলেন বাবার সাথে কেন কথা বলেন না?

ঃ-" তিতির আমাকে রাগাইয়ো না। আর আমি তোমার প্রশ্নের উত্তর দিতে মোটেও বাধ্য না। যা জানোনা তা নিয়ে তর্ক করতে আসোনা। তর্ক করা আমার একদম পছন্দ না"

মাহাদের এমন বেপরোয়া জবাব শুনে তিতির নিলিপ্ত গলায় বলল, "আজ আমি আপনাকে একটা গল্প শুনাবো। মনযোগ দিয়ে শোনেন,

আমি ছোটবেলা থেকে খুব কষ্টে মানুষ হয়েছি। বাসায় সব সময় দুটা তরকারি রান্না হতো। ভালো তরকারিটা বাবা,মা আর দুই ভাই-বোন খেত। আর খারাপ তরকারিটা আমাকে খেতে হত। শুধু শুধু তরকারি সেখানে কোন মাছও থাকতোনা। এখন আপনার কাছে প্রশ্ন আমার থেকেও আপনার পরিবার আপনাকে নিশ্চয় ভালো রেখেছে?

আমি কি খেতাম না খেতাম আমার বাবা কখনো দেখতো না। এমনকি কোনদিন আমাকে বলেনি  আমার মা মারা যাওয়ার পর এই মায়ের ঘরে আমি কেমন আছি। মা সৎ হলেও বাবা কিন্তু আমার নিজের। আমার বাবার থেকেও আপনার বাবা নিশ্চয় উত্তম!

আমার পোষাক বছরে একবার দিতো।  সেটা এক সেট। আমার এমনও দিন গেছে গোসল করে উঠে আমি  কি পোষাক পড়বো! গোসল শেষ করে আমি রুমের ভিতর পুরনো নষ্ট হওয়া জামা পড়ে থাকতাম আর অপেক্ষা করতাম কখন আমার জামাটি শুখাবে আর আমি সেটা পড়বো। আমার মত পোষাকের কষ্ট  আপনি নিশ্চয় পাননি!

আমি বাসার ভিতর জোড়ে কখনো শব্দ করে কথা বলতে পারতাম না। জোড়ে একটু হাসলেও ঝাড়ি খেতে হতো বাবার কাছে। কেনো জোড়ে হাসলাম। আমি ছোট বেলা থেকে আমার বাসার ভিতর বন্দী জিবন-যাপন করেছি। মানুষের শৈশব -কৈশোরকাল অনেক আনন্দে কাটে কিন্তু আমার কান্নার কাল ছাড়া কিছুই ছিলোনা। সবাই বাহিরে খেলা ধুলা করতো কিন্তু আমি আমার জানালার গ্রীল ধরে তাদের খেলা দেখতাম আর কান্না-কাটি করতাম। আমার কষ্ট বোঝার জন্য কেউ ছিলনা। আমার নিজের বাবাও ছিলনা। একদিন মা আমাকে খুব মেরেছিল। সেদিন বাবার উচিত ছিল আমাকে একটু আদর করা কিন্তু বাবাও মায়ের উপর রাগ করে আমাকে মেড়েছিল।

আমি একটা মেয়ে মানুষ। আমার শারিরীক ও মানুষিক সমস্যা হতেই পারে কিন্তু আমি আমার কষ্টের কথা কাউকে বলতে পারিনি। আমার প্রথম যেদিন পিরিয়ড হয়েছিলো ভয়ে রুমের ভিতর দরজা বন্ধ করে চিৎকার দিয়ে কেঁদেছিলাম কিন্তু আমাকে আমার সমস্যার সমাধান কেউ করে দেয়নি। বাবাতো জানতো আমি বড় হয়েছি আমার কত কি প্রয়োজন লাগতে পারে। তবুও কোনদিন বাড়তি একটা টাকাও আমার হাতে দিয়ে বলেনি তিতির,  বড় হয়ে গেছিস তোর কত কি লাগতে পারে, এই টাকা দিয়ে কেনাকাটা করিস। আমি খুব কষ্টে মানুষ হইছি মাহাদ খুব কষ্টে বলে কেঁদে উঠলো তিতির।

মাহাদ আমি অন্য কারো জিবন কাহিনীর কথা বলি নাই, এটা আমার জিবন কাহিনী। আমি আমার নিজের বাবার নির্যাতন আর অবহেলার কথা বলছি। আপনার বাবা নিশ্চয় তার থেকেও ভালো!

আর মা! সে তো সৎ মা। তার থেকে আর কি ভালো আশা করবো। সে শুধু ব্যাথা দিতেই জানে। তিতির কামিজের খানিকটা তুলে পেটের বামপাশে একটা কাটা দাগ দেখিয়ে বলল, মাহাদ এটা আমার সৎ মায়ের ভালবাসা। আপনি যেদিন আমার উপর স্বামীর অধিকার ফলাবেন সেদিন এমন আরো ভালোবাসার ছাপ আমার শরীরে দেখতে পাবেন।

এই যে আপনি আমাকে ফোন দিলেন না! এই ফোন দিয়ে তবুও আমি আমার বাবার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করবো। আমি যদি বাবাকে ক্ষমা করে দিতে পারি আপনি আপনার এত ভালো বাবার সাথে কথা বলেন না কিসের অহংকারে!

ঃ-" মাহাদের নিজের চোখেও পানি চলে আসলো। তৎক্ষনাৎ নিজেকে কন্টোল করে বলল, " তিতির আমার কাহিনীটা ভিন্ন।"

ঃ-" তিতির চিৎকার দিয়ে বলল, " আপনার এই অহংকারই আপনার প্রিয় মানুষগুলো কে আপনার কাছ থেকে দুর করে দিয়েছে।"

মাহাদ তিতিরের কাছে এসে বলল," হঠাৎ কি হল তোমার! যে, আমার সাথে এমন দুর্ব্যবহার করছো?"

একদম আমাকে ছোবেন না বলে মাহাদের হাত ঝিটকানি দিয়ে ফেলে দিলো তিতির। আপনি মাকেও কথা বলতে ছাড়েন না। মা এর জন্য প্রচুর কান্না করে। দোষ কি শুধু মা-বাবার ছিলো না আপনি এবং ফুয়াদ ভাইয়া দুজনেরই ছিল?
ভাইয়া পারতোনা সেদিন নিজের রাগটা হজম করে বাবার কাছে ক্ষমা চাইতে! বাবা কি খুব খারাপ, যে সন্তান কে ক্ষমা করে দিতেন না! ইয়াং বয়স, শরীরের তেজই আপনাদের একটু বেশি। সেটা ফলাতে হবে না!

আপনাকে বাবা না হয় একটা থাপ্পড়ই মেরেছে, তাতে কি হয়েছে এমন? সন্তান অপরাধ করেছে বাবা শাসন করেছে। এই সামান্য কাজেই বাবার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিলেন! কেমন সন্তান আপনি? নিজেকে আয়নার সামনে দাড় করিয়ে এই কথাটা প্রশ্ন করবেন।
 

আর ভাবী! সে কি কোনদিন বাবাকে একটিবারের জন্যও কি বলেছে, বাবা আপনার নাতনী আপনার কাছে যেতে চায়। সেটা না হয় বাদই দিলাম। মেয়েকে কি দাদু ডাকটা শিখাইছে? না দাদী ডাকটা শিখাইছে।  বাবা-মা ত্যাগ শিকার করে সন্তান বড় করলো আর সেই সন্তান কে অন্য মেয়ে কেড়ে নিলে তারা সহজেই মেনে নিবে? আপনি নিজে হলেও তো মেনে নিবেন না। এটা কি ভাবী নিকৃষ্ট কাজ করেন নি? 
হ্যাঁ মানা যেত তখনই যদি ভাবী এই পরিবারের সাথে একবারও যোগাযোগ করার চেষ্টা করতো। আমার তো মনে হয় ভাবীর শুধু ভাইয়া কেই চাই,  ভাইয়ার পরিবার কে নয়।

ঃ-" কথাগুলো শেষ হতেই ঠাশশশ্ করে স্বশব্দে একটো চড় পড়লো তিতিরের গালে। মাহাদ যেন ক্রোধে ফেটে পড়লো। 

আমি বলিনি! আমাকে একদম রাগাবে না? তার ফলাফল ভালো হবে না!

 নিশার সম্পর্কে আর একটাও বাজে কথা শুনতে আমি চাই না। তুমি এই বাসায় কয়দিন আসছো!  তার জন্য সবার চরিত্রের সার্টিফিকেট তৈরি করছো? তুমি কতটুকু চিনো নিশাকে? তুমি কোনদিন নিশাকে দেখছো? না দেখে কিভাবে ওর বিরুদ্ধে এতবড় কথা বললে? আজ নিশার সাথে যা হয়েছে কাল যদি তোমার সাথে হয় তাহলে তুমি কি করতে! আমাকে ছেড়ে চলে যেতে?"

মাহাদের এমন ব্যবহারে তিতির যেন দুমড়ে মুচড়ে গেল। নিলিপ্ত গলায় বলে উঠল, আপনি ঠিকি বুঝছেন। আমি আপনাকে ছেড়েই যাবো এমন কিছু ঘটলে..............

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন