প্রিয়তা (পর্ব ০২)


দরজার সামনে দাড়িয়ে সবাই আয়াজের রুমের দিকে ভীত চোখে চেয়ে আছে।সবার মনে হচ্ছে এই বুঝি তুফান আসবে আর মেয়েটা কে উড়িয়ে নিয়ে যাবে।
আরশি কে আয়াজ নিজের বাড়িতে নিয়ে এসেছে একটু আগেই। আরশিট ছোট্ট মাথায় কিছুতেই ঢুকছিল না আয়াজ কেনো তাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে এসেছে। যখন আয়াজ বলল- আজ থেকে আপনি এখানেই থাকবেন মিস আরশি।"
তখন আরশি পুরো বোকা বনে গেলো।সে কেনো এই নায়কের বাড়িতে থাকবে আজব!!সে রাস্তায় থাকবে তবুও এই নায়ক ফায়কের বাড়িতে থাকবে না।

- আমি আপনার বাড়িতে কেনো থাকব?আপনি আমায় চিনেন নাকি?আমিও তো আপনাকে মিডিয়া জগতেই চিনি।আর পারসোনালি আপনি কেমন সেটা ও জানি না।আর আপনি বললে ও থাকতে বাধ্য না।

-আপনি থাকতে বাধ্য মিস আরশি। এখন কোনো কথা না বলে চুপচাপ ফ্রেশ হয়ে এসে রেষ্ট নিন।এতো উচ্চস্বরে কথা বললে আপনার মাথার ব্যাথাটা ও বেড়ে যাবে।

- আপনি কিন্তু বাড়াবাড়ি করছেন। এইভাবে একটা অপরিচিত মেয়েকে আটকে রেখে আপনি কি করতে চাইছেন? আগেই জানতাম নায়করা অসভ্য হয়।তাদের অনেক গুলো জিএফ থাকে।আজ দেখছি আপনিও অসভ্য মিষ্টার নায়ক।

কথাগুলো আওয়াজের কানে যেতেই তার চোখ দুটো লাল হয়ে এলো।সাথে সাথেই সে সবার মুখের ওপর দরজা লাগিয়ে দিল।আয়াজের ছোট বোন আনহা বিড়বিড় করে বলতে লাগল- "ভাইয়ার প্রিয়তা তুমি তো আজ ভাইয়ার হাতেই ক্ষতম"।

🌸

দরজা বন্ধ করতে দেখে ভয়ে কেঁপে উঠল আরশি।দরজা বন্ধ করে আয়াজ যখন সামনের দিকে ফিরল আয়াজের চোখ মুখ দেখে আরো ভীতু হয়ে গেলো আরশি।ভয়ে বিড় বিড় করতে লাগল--" মিষ্টার নায়ক হয়তো আমার ভালোই চাচ্ছিল।কেনো যে আগ বাড়িয়ে ওনার মাথায় আগুন জ্বালাতে গেলাম।লজ্জা হওয়া উচিত তোর আরশি!!কারণ, সবাই জানে ওনি খুব ভালো।অভিনয় ব্যাতীত কোনো মেয়ের কাছেই যায় না।এতো বছরের জীবনে তার একটাও জিএফ নেই। কোনো মেয়ের সাথে কখনও অসভ্যতামি ও করে নি।তাহলে কেনো এইসব জেনে ও নিজের পায়ে কুড়াল মারতে  গেলি আরশি!!!

আয়াজ কে নিজের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে ভয়ে পিছনের দেয়ালের মিশে গেলো আরশি।আরশির একদম কাছে গিয়ে সে কপালের চুলগুলো সরিয়ে কানের পিছনে গুজে দিলো।হঠাতই বুকের ধুকপুকানি টা বেড়ে গেল তার। ভয়ে আরশি চোখ দুটি বন্ধ করে ফেলল।সে ভাবছে এই বুঝি নায়ক সাহেব তাকে কয়েকটা চড় লাগিয়ে দিবে। আরশির চোখ বন্ধ করে রাখা মুখটা দেখতে আরও বেশও কিউট লাগছে।মুচকি হেসে আয়াজ মুখের উপর ফু দিল।আরশি যেনো ভয়ে আরও জমে গেলো।সাথে সাথেই সে গলায় কারো নরম ঠোঁটের স্পর্শ পেল।থমকে গেলো সে।স্পর্শ টা আরো গভীর হচ্ছে।খুব কষ্টে নিজের বাম হাতটা দিয়ে আটকাতে চেষ্টা করল গলায় স্পর্শ করা ঠোঁটের মালিক কে।আরশির বাঁধা পেয়ে আয়াজ আরশির হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় চেপে ধরে আরও গভীর ভাবে কিস করতে লাগল আরশির গলায়। আরশি একদম চুপ হয়ে গেলো। কিছুক্ষণ পর চিল্লিয়ে উঠল।গলায় নিজের হাত দিয়ে চেপে ধরল।আর উচ্চস্বরে বলে উঠল-""রাক্ষস আপনি মিষ্টার নায়ক""

আয়াজ একদম শান্তস্বরে বলল-"আমায় অসভ্য বলার শাস্তি। সবাই  জানে আমার ক্যারেক্টার খুবি ভালো।  কখনও অসভ্যতামি করি নি কিন্তু তুমি অসভ্য উপাধি দিলে তাই খুশি হয়ে একটু আদর দিলাম তোমায়।

আরশি সাথে সাথেই জবাব দিলো- সবাই ভুল জানে।নায়কদের চরিত্র আবার ভালো হয় নাকি।আর আমি ঠিকি জেনেছিলাম আপনি অসভ্য।

- সেইটা তুমি এখন থেকে প্রতিদিনই জানবে।আর তুমি একটা পিচ্ছি মেয়ে বয়স আর কতো হবে ১৮ বা ১৯। তাই তুমি বলেই সম্বোধন করলাম।আমার বয়স জানো?সাতাশ বছর।তাই বড়দের সাথে তর্ক করা তোমার মানায় না বেবী।

- আপনি অসভ্য, অসভ্য, অসভ্য। খারাপ লোক।একটা মেয়েকে জোর করে আটকে রেখে এমন করছেন তো আপনার চরিত্র তো খারাপই।

কথাটা বলতেই আয়াজ ঝড়ের বেগে এসে আরশির কোমরে হাত দিয়ে নিজের একদম কাছে টেনে নিল।হঠাত করেই এমন হামলায় কেঁপে উঠল আরশি। আয়াজের  নিশ্বাসের গরম উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ছে আরশির সারা মুখে।আয়াজ  আরশির কোমরে আরো জোরে চাপ দিয়ে আরশিকে আরো কাছে টেনে এনে রাগী স্বরে বলল---" মিস আরশি আমি তোমায় একদম বৈধভাবে ছুঁয়েছি।"

—————

নিজের হাতে বিয়ের রেজিস্ট্রি কাগজ নিয়ে বসে আছে আরশি।কাগজে কনের স্বাক্ষরের জায়গায় তার সাইন ভেসে উঠছে চোখের সামনে।আর বরের জায়গায় খুব সুন্দর করে আয়াজের স্বাক্ষর। কিছুই ঢুকছে না আরশির মাথায়। এই লোকের সাথে তার আবার কখন বিয়ে হলো?সে কখনও কাবিননামা তে সাইন করেছে বলেও মনে পড়ছে না।আর আয়াজের সাথে তো তার আজ সকালেই দেখা হলো তাহলে বিয়ে কিভাবে সম্ভব?নিজেকে পাগল পাগল লাগছে তার।কি হচ্ছে তার সাথে কিছুই বুঝতে পারছে না সে।

🌸

কিছুক্ষণ আগে আয়াজ যখন বলছিল আয়াজের স্পর্শ বৈধ।তখনি আরশি প্রশ্ন ছুড়ে-"আমি কি আপনার বিয়ে করা বউ নাকি?
সেই মুহূর্তেই আয়াজ কাগজটা আরশির দিকে ছুড়ে মারে।কাগজ টা হাতে নিয়ে দেখতেই আরশির চোখ ছানাবড়া।
প্রথমে আরশির কাছে মনে হলো কাগজ টা নকল।পরে আবার মনে হলো নকল তো না।আচ্ছা বিয়ে  কবে হয়েছে তারিখ তো নিশ্চয় দেওয়া আছে বলেই দেখতে নিলে আয়াজ এসে কাগজ টা কেড়ে নিল।

-কি হচ্ছে কি?আপনি কাগজ টা কেড়ে কেনো নিলেন মিষ্টার নায়ক?

-আর দেখতে হবে না।কোনো ডাউট যদি থাকে তবে আমায় জিজ্ঞেস করতে পারো।

-আমাদের বিয়ে কবে হলো?আমি তো আপনাকে সরাসরি আজ প্রথমই দেখলাম।

-সব জানতে পারবে একটু ধৈর্য ধরো।আর এতটুকু জেনে রাখো তোমায় চিনি আমি বহু বছর আগে থেকে।নিজের ছোট্ট মস্তিষ্কে চাপ দিয়ে আর মাথা ব্যাথা বাড়িয়ো না।

- কি বলছেন আপনি আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।কে আপনি নায়ক সাহেব?আপনাকে এতো রহস্যময় মনে হচ্ছে কেনো?কি সম্পর্ক আমার সাথে আপনার?

-স্বামী -স্ত্রীর সম্পর্ক"একদম শান্ত কন্ঠে বলে উঠল আয়াজ"

-বিশ্বাস করি না আমি।প্লিজ আমায় যেতে দিন।

-ঠিক আছে।বিশ্বাস করতে হবে না।সময় এলে সবকিছুই ক্লিয়ার হয়ে যাবে তোমার কাছে।কিন্তু কোথায় যাবে তুমি?ঠিকানা বলো আমি দিয়ে আসবো।আমার জানা মতে যাওয়ার মতো কোনো জায়গা তোমার নেই মিস আরশি।নানার বাড়ির সাথে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়েছে বহু আগে।আর বাবা মা নেই বছর খানেক কেটে গেছে।তো কোথায় যাবে?

আয়াজের কথা শুনে অবাকের শীর্ষ পর্যায়ে চলে গেলো আরশি।তার সম্পর্কে এতো কিছু কিভাবে জানলো আয়াজ?সে এতোক্ষণে বুঝে গেছে আয়াজের সাথে তার কোনো না কোনো সম্পর্ক আছে।হয়তো নেই। একদিনে কারো পক্ষে এতো ইনফরমেশন কালেক্ট করা সম্ভব না।আর নানুর বাড়ির সাথে বাবা মায়ের সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হওয়ার কথা কাছের মানুষ ছাড়া কেউই যানে না।কি করবে আরশি?একদম ভেবেই পাচ্ছে না।কে এই আয়াজ কিভাবে তার সম্পর্কে এতোকিছু জানে জানতে হবে তার।আরশির মনটা কেঁপে উঠল আয়াজের আরেকটি কথায় -

"তোমার বাবা মা তো খুন হয়েছিল তাই না?"আরশির সামনে দাড়িয়ে কথাটা বলল আয়াজ।

আরশি কাপা কাপা কন্ঠে জবাব দিল -" কি বলছেন?বাবা  মার খুন হবে কেনো?তারা তো এক্সিডেন্টে মারররাা গেছে।"

কথাটা বলেই ঢুকরে কেঁদে উঠল আরশি।আয়াজ নিজের রুমাল এগিয়ে দিল আরশির দিকে।আরশি নিজের কান্না থামিয়ে চোখ মুছে নিল।আয়াজের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল-"আপনি এমন অদ্ভুত কথা বলছেন কেনো নায়ক সাহেব?"

আয়াজ বাঁকা হাসি দিয়ে বলল-"তুমি আমায় নায়ক সাহেব,মিষ্টার নায়ক বলে ডাকছ কেন?কলিজায় লাগছে তো।"
আরশি ভ্রু কুঁচকে জবাব দিল -"অসভ্য লোক"।
 হেসে উঠল আয়াজ।এই মেয়েটার মুখে অসভ্য ডাক টা শুনতে ভীষণ ভালো লাগে তার।নিজের ওপর ও হাসি পাচ্ছে তার।কারণ গত চার বছরে নায়ক সাহেব একদমই হাসেন নি।গম্ভীরতা আর রাগ ছড়িয়ে থাকতো তার সারা মুখে।অথচ আজ এই মেয়েটা কে পেয়ে সে হাসছে।একটু পর পরই রাগের বদলে প্রশান্তি ছুয়ে যাচ্ছে মনের মাঝে।হয়তো নিজের প্রিয় কিছু ফিরে পাওয়ার প্রশান্তি। এই মেয়েটাকে বাঁচাতে চায় সে নিজের কাছে আগলে রাখতে চায়। সেটার জন্য যদি জোর করতে হয় তবে জোরই।

মিস আরশি তুমি ভাবতে থাকো থাকবে কিনা?যদি ভাবনা শেষে উত্তর না হয় তাতেও আমার সমস্যা নেই কারণ জোর করেই আটকে রাখব।- আরশির কাছে গিয়ে বাঁকা হাসি টেনে বলল আয়াজ।

আরশি এক কদম পিছিয়ে গেল এবং হাত তুলে বলল-
দেখুন,,,,
কথাটা সমাপ্ত করার আগেই আয়াজ হাত দেখিয়ে থামিয়ে দিল।ফোনের স্ক্রিনে ভেসে উঠল নিশাদের নাম।রিসিভ করতেই আয়াজের মুখে হাসি ফুটে উঠল।গম্ভীর কন্ঠে বলল-
"আ'ম কামিং"।
- তোমার কাছে একঘন্টা আছে মিস আরশি।মনোযোগ দিয়ে ভেবো।কিন্তু মাথায় বেশি প্রেশার দিও না।
কথাটা বলেই বের হয়ে গেলো আয়াজ। ভাইকে বের হয়ে যেতে দেখে আনহা আয়াজের রুমে এলো।এসে দেখল আরশি মাথায় হাত দিয়ে নিচু হয়ে বসে আছে।

 " আমার ভাইয়াটা এমনই। খুবি রহস্যময়।"
কারো মিষ্টি কথার আওয়াজে সামনে মাথা তুলে তাকালো আরশি।তাকিয়ে দেখল তার বয়সী খুব সুন্দর একটা মেয়ে। গায়ের রং একদম সাদা ঠিক মিষ্টার নায়কের মতো।খুব মিষ্টি দেখতে মেয়েটা।মেয়েটার কথায় আরশি ঠিক বুঝতে পারছে এইটা আয়াজের বোন।আনহা আরশির পাশে এসে বসল।হাত বাড়িয়ে বলল-"হাই ভাইয়ার প্রিয়তা আমি আনহা।এইবার মেডিক্যালে ভর্তি হয়েছি।আর তুমি?

আনহার প্রিয়তা ডাকায় ভ্রু কুঁচকে এলো আরশির। শুধু প্রিয়তা বললেই হতো কিন্তু ভাইয়ার প্রিয়তা বলল।তাই সে সরাসরি বলেই ফেলল--"প্রিয়তা আবার কে?আমার নাম তো আরশি।প্রিয়তা কেনো বললে?

ঘাবড়ে গেলো আনহা।তার ভাই বাহিরে যাওয়ায় সময় কঠোর  গলায় বলে গিয়েছে  আরশিকে যেনো উল্টা পাল্টা কিছু বলে প্রেশার না দেয়।আয়াজ যদি জানতে পারে তবে তার আর আজ রক্ষে নেই । তাই আমতা আমতা করে বলল-"আরে তুমি ভুল শুনেছ।আমি আমি তো ভাইয়ার গেস্ট বলেছিলাম। তুমি বেশি চিন্তা করে শুধু শুধু প্রেশার নিচ্ছ তাই তো এমন ভুল ভাল শুনছ"(কথাটা বলে হি হি করে হেসে উঠল আনহা।সত্য চাপিয়ে রাখা যে কতো কষ্ট বেচারি এখন হারে হারে টের পাচ্ছে।)

আনহার কথার ধরন দেখে আরশিও আনহার সাথে হেসে উঠল। মনে হচ্ছে দুজন দুজনের কতো চেনা। হেসে হেসে আয়াজ কে নিয়ে পরিবার নিয়ে বিভিন্ন আড্ডায় মেতে উঠল দুজন।এতো কম সময়েই ভাব হয়ে গেলো দুজনের। না হয়ে উপায় আছে কি?কারণ তারা দুজনেই তো অত্যাধিক মিশুক। 

-------------------

" আপনার সাহস কি করে হলো মিষ্টার আয়াজ আমাকে এইখানে তুলে আনার?সবার সামনে আমি আপনার মুখোশ খুলে দিবো।নায়ক সেজে সবার মন জয় করেছেন কিন্তু আপনার এই রহস্যময় চেহারা টা কয়জনই বা চিনে?আমি সবাই কে বলে দিবো আপনি একজন মাফিয়া। "

সাথে সাথেই আয়াজ লোকটির কপালে বন্ধুক তাক করে বলে উঠল-" বাচলে তো খুলবি?আমি যতক্ষণ না চাইব কেউ আমার নায়ক বা মাফিয়া হওয়ার কারণ জানতে পারবে না।

মুখে হাসি টেনে বলল-"পৃথিবীতে ভালো মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার আছে কিন্তু তোর মতো জানোয়ারের না যে আমার প্রিয়তা কে কেড়ে নিতে চায়।"

কথাটা বলেই গুলি চালিয়ে দিল লোকটির কপাল বরাবর। লোকটি চেয়ার নিয়ে ঢলে পড়ল।গুলি চালানোর সময় ও আয়াজের মুখে হাসি লেগেই ছিল।
 
এমন দৃশ্য দেখে কেঁপে উঠল নিশাদ।তিন বছর ধরেই দেখছে তবুও তার এই কাঁপা কাপি শেষ হয় না।কাঁপা কাপি নিয়েই বিড়বিড় করে বলল-" খুনননন করারর সময়ও হাসছে।নিশ্চিত স্যার কে মেয়েটা ভুত হয়ে ভররর করেছে।"

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন